যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ২

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ২
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

পরপর তিন কাপ চা শেষ করে নড়েচড়ে বসল আহিল। তার সম্মুখেই রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে রয়েছে সকাল। তার চোখে-মুখে কাঠিন্যতা। আহিল এক ঝলক তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। ফের নড়েচড়ে বলল,
“এবার তাহলে আমি উঠি।”
সকাল যেন এবার রাগ প্রকাশ না করে আর থাকতে পারল না। বাড়িতে মানুষজন আছে। তাই সে কণ্ঠস্বর যথাসম্ভব খাদে ফেলে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“এই নিয়ে আপনি ২৬ বার এই কথাটা বললেন। অথচ একবারও যাননি। চলে যাওয়ার মতো কোনো আগ্রহও দেখতে পাচ্ছি না আপনার মাঝে।”
“আশ্চর্য! তুমি গুনেও রেখেছ?”
“রেখেছি।”
“আমি কি আসতে পারি না এই বাড়িতে?”
“অবশ্যই পারেন। কিন্তু সবসময় এমন হুটহাট কারণ ছাড়া চলে আসেন কেন?”
“এখন থেকে আমাকে কারণ নিয়ে আসতে হবে?”
“হ্যাঁ।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তুমি রীতিমতো আমাকে অপমান করছ।”
“আপনার মান আছে নাকি?”
“আমার মান নেই?”
“না, নেই। মান থাকলে তবেই না তাকে অপমান করা যায়। শুনুন, এক কাজ করুন আপনি। আজ থেকেই মানকচু খাওয়া শুরু করেন। তাহলে যদি একটু মান-সম্মান তৈরি হয়।”
“মান-সম্মানের জন্য এখন মানকচু খাব?”
“খাবেন কি খাবেন না আপনার ব্যাপার। আমার বলার দরকার তাই বললাম।”
“তুমি ভীষণ ইগো হার্ট করে কথা বলছ। চলে যাচ্ছি আমি।”

আহিল উঠে দাঁড়াল। সকাল চায়ের কাপগুলো হাতে তুলে নিয়েছে। ভাবলেশহীনভাবে সে বলল,
“এই কথাটিও আপনি ইতঃপূর্বে না হলেও ত্রিশ বারের উপরে বলেছেন। তাও কিন্তু আপনি এসেছেন।”
আহিল আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। এইটুকু মেয়ের কথার এত ঝাঁঝ থাকবে কেন? তবে, সকালের কথা মিথ্যে নয়। কিন্তু কী করবে? একটা অদৃশ্য চুম্বক যেন প্রতিদিন তাকে এই বাড়িতে আসার জন্য টানে।

নানান রকমের অজুহাত ধরে প্রথমে আসলেও এখন আসে কোনো রকম কারণ ব্যতীতই। মাঝে মাঝে সে কনফিউজড হয়ে যায়, এটা তার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি নাকি নিজের শ্বশুরবাড়ি! তবে আল্লাহ্ চাইলে এবং এই ঝাঁঝওয়ালি চাইলে এই বাড়িটা একদিন তারও শ্বশুরবাড়ি হতে পারে। সে গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিতে গিয়েও সম্ভব হলো না। প্রকাশ্যে চলে এলো। সকাল ভ্রুঁ কিঞ্চিৎ বাঁকা করে বলল,

“এত হতাশ কেন? বাড়িতে তো আসতে বারণ করিনি একেবারে।”
আহিল এ কথার কোনো উত্তর করল না। করুণস্বরে বলল,
“আসি আমি।”
উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে চলে যাচ্ছে। পেছন থেকে সকাল ডেকে বলল,
“রাগ করে চলে যাচ্ছেন নাকি?”

আহিল এ কথারও জবাব দিল না। কুঁচকানো ভ্রুঁ আরও কিছুটা কুঁচকে গেল সকালের। সে বিড়বিড় করে বলল,
“ঢং!”
চায়ের কাপগুলো রান্নাঘরে রাখার আগে বাবা-মায়ের রুমে একবার উঁকি দিল সকাল। তারা এখনও ঘুমাচ্ছে। সে নিজের রুমে চলে গেল। কলেজ থেকে এসে একটুও বিশ্রাম নেওয়া হয়নি।

অর্ষার সাথে আহনাফের ঝগড়া হয়েছে। আহামরি কোনো কারণ নিয়ে নয়। তবুও মনোমালিন্য এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, অর্ষা সর্বদাই মুখ গোমড়া করে থাকে। এমনকি আহনাফকে রাগ ভাঙানোর সুযোগটুকু পর্যন্ত সে দিচ্ছে না। দেখা হলেই দৌঁড়ে কখনও রেনুর রুমে তো কখনও বাবা-মায়ের রুমে ঢুকে যায়। ওখান থেকে তো আর ডেকে নিয়ে আসা যায় না। লাজ-লজ্জা বলতেও তো একটা কথা আছে। শুধু এখানেই সমাপ্ত নয়।

অর্ষা তাকে সবকিছু থেকে ব্লকও করে রেখেছে। দু’দিন হলো রাতে ঘুমায় রেনুর রুমে। একই বাসায় থেকেও কীভাবে ইগনোর করা যায় সেটা অর্ষার থেকে শেখা উচিত।
অর্ষা রাগ করে কথা বলছে না বলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে আহনাফের। সে নানান রকম কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছে। অবশেষে সুযোগ পেয়েও গেছে। পাঁচটায় অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে জানতে পারে অর্ষা এখন রাফিকে পড়াচ্ছে। সে রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে আগে ফ্রেশ হয়ে নিল। এরপর রাফির রুমে এসে বলল,

“আজও কি রেণুর রুমে থাকবে?”
অর্ষা কোনো উত্তর দিল না। আহনাফ নিজে থেকেই ফের বলল,
“তুমি মনে হয় আমার রুমে কিছু ফেলে এসেছ।”
অর্ষা ভ্রু কুঁচকে অনিচ্ছা সত্ত্বেই বলে,
”না তো!”

”টেবিলের ওপর একটা ভাঁজ করা কাগজ দেখলাম। তোমদর নাম লেখা ওপরে তাই অনুমতি ছাড়া খুলে দেখিনি।”
অর্ষা চিন্তিত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। এমন কোনো কাগজ তার ছিল বলে মনে পড়ছে না। আবার থাকতেও পারে। কেননা সে অনেক সময় অনেককিছু নোট করে রেখে দেয় ব্যাগে। হয়তো রাফিই নিয়ে ঐ রুমে রেখেছে। অস্বাভাবিক কিছু না। এর আগে সে অনেকবার অর্ষার ফোন, পার্স একেক জায়গায়, রুমে লুকিয়ে রেখেছে দুষ্টুমি করে।
”গিয়ে দেখে আসো তোমার কিনা।”

বলে আহনাফ ড্রয়িংরুমের দিকে চলে গেল। রাফিকে পড়তে বলে অর্ষা আহনাফের রুমে যায়। টেবিলের কাছে গিয়ে কাগজটি খুঁজতে থাকে। তবে টেবিল তো ফাঁকা। ভাঁজ করা কোনো কাগজই নেই। আচমকা পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আহনাফ। ভয়ে হকচকিয়ে যায় অর্ষা তবে এটা বুঝতেও অসুবিধা হয় না যে এই মানুষটা কে! এতদিনে সে খুব ভালো করেই এই মানুষটির পারফিউমের ঘ্রাণ, গায়ের গন্ধ চেনে।
আহনাফ অর্ষার গালে গাল ঠেকিয়ে বলল,

”কী হয়েছে তোমার? আমার সাথে কথা বলছ কেন?”
অর্ষা কোনো উত্তর না দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে আহনাফের শক্তির কাছে তার চেষ্টা নস্যি। উপরন্তু হাতের বন্ধন আরও শক্ত করছে আহনাফ। সে পূর্বের তুলনায় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
”চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।”
”আপনি আমাকে ছাড়েন।”

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ১

”কেন ছাড়ব? একটুখানি না হয় ঝগড়াই হয়েছে তাই বলে তুমি আমার সাথে কথা বলবে না?”
”আমি ছাড়তে বলেছি!”
”ছাড়ব না। কী করবে তুমি?”
আহনাফের হাতে কামড় বসিয়ে দেয় অর্ষা। ব্যথা পেলেও আহনাফ ছাড়ল না। হেসে বলল,
”যত খুশি ব্যথা দাও। তবুও তো আমি তোমায় ছাড়ব না। ইহজন্মেও নয়, পরজন্মেও নয়।”

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ৩