যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ৫

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ৫
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

আশিক হাউমাউ করে কাঁদছে। একটু পরপর রুমাল দিয়ে সে নাকের পানি চোখের পানি মুছে ফের কান্নায় মনোনিবেশ করছে। কী হয়েছে, কেন কাঁদছে তা কেউ জানে না। আর এজন্যই যেমন অস্থিরতা কাজ করছে তেমনই আবার বিরক্তও লাগছে। অর্ষা লম্বা দম নিয়ে বলল,
“ভাই, তুই কান্না থামা। কী হয়েছে আমাদের বল।”
আশিকের কান্নার গতি বেড়ে যায়। সে হাত-পা ছড়িয়ে আহিলের কোলে মাথা রাখে। ছোটো বাচ্চাদের মতো এবার সে হাত-পা ছোটাছুটি করছে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“আমার একি সর্বনাশ হয়ে গেল দোস্ত! এখন আমার কী হবে!”
“হয়েছে কী বলবি তো?”
আশিক এবার বাম হাতের শার্টের হাতা গুটিয়ে হাতটি সবার সামনে এগিয়ে দিল। সবার চোখ ছানাবড়া। আশিক হাত কে’টে স্মৃতির নাম লিখেছে। তবে বানান ভুল।
মুন বলল,
“তুই স্মৃতির নাম লিখেছিস তাও আবার বানান ভুল।”
আশিক চিৎকার করে কেঁদে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কাঁদছি তো আমি এজন্যই। স্মৃতিকে দেখালাম ওর মন গলানোর জন্য। স্মৃতিও ঠিক তোদের মতো শুধু বানান ভুলটাই দেখল। আমার ভালোবাসা দেখল না।”
অর্ষা থা’প্প’ড় বসাল আশিকের গালে। আশিক সোজা হয়ে বসে গালে হাত রেখে বলল,
“আমার এমন দুঃসময়েও তুই আমাকে মারতে পারলি?”
অর্ষা জবাব না দিয়ে আরেকটা থা’প্প’ড় দিল এবং কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“এরকম ছা’গ’লা’মি করার মানে কী? পছন্দ করিস ভালো কথা। তাই বলে হাত কে’টে নাম লিখতে হবে?”
“গাধাটাকে আরও দুটো থা-প্প-ড় দে তো অর্ষা।” বলল মুন।

“আমার সবচেয়ে বড়ো ভুল কি জানিস? তোদের মতো নির্দয় কতগুলো ছেলে-মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলাম। যারা না বোঝে মন, না মস্তিষ্ক। পারে শুধু কথায় কথায় মারতে।”
আহিল আড়মোড়া ভেঙে বলল,
“তোকে যে জানে মে’রে ফেলিনি এটাই তো অনেক। আরে বাপ! যার সোশ্যাল মিডিয়ায় গার্লফ্রেন্ডের অভাব নেই, সে কেন অন্যের জন্য হাত কা’ট’তে যাবে? তাও আবার নাম লিখে!”
আশিক দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

“তুই বুঝবি কী করে? তুই কি কাউকে ভালোবেসেছিস?”
“তোর বোধ-বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে নাকি মামা? নাকি স্মৃতির প্রেমে মজে গিয়ে আহিল-সকালের রসায়নের কথা ভুলে গিয়েছিস?” বলল দিদার।
আহিল সঙ্গে সঙ্গে অপ্রস্তুত হয়ে অর্ষার দিকে তাকাল। সেই সময়ও অর্ষাও কিছুটা রাগের সহিত দেখল আহিলকে। তবে আহিলের গোবেচারা মুখটা দেখে মনে মনে হাসলেও মুখে কিছু বলল না।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দিদার বলল,

“যা হওয়ার হইছে ভাই। এগুলা এখন বাদ দে। টিএসসিতে আসছি চা, ফুচকা খাওয়া। তারপর বাসায় চলে যাই।”
“এই শালা পেটুকের খাইদাই ছাড়া আর কোনো কথা নাই।”
“এইসব প্রেমে মজার চেয়ে খাওয়ায় মজে যাওয়া ভালো বুঝলি। শুধু চিল আর চিল!”
এমন দুঃসময়েও খাওয়ার বিলটা আশিকের থেকেই উসুল করে ছাড়ল সবাই। বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে আহিলকে নিয়ে বাপের বাড়ি এলো অর্ষা। আজকাল আহনাফ কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকছে। বাইরে বের হওয়ার জো নেই। বাবা সেই কবে থেকে অর্ষাকে বাড়িতে আসার জন্য ফোন দিচ্ছেন। সেলিনা বেগমও কেঁদেকেটে অস্থির। তাই ভাবল আজ যাওয়ার পথে একটু ঘুরেই যাক।

সকাল কিছুক্ষণ আগেই কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরেছে। এখনো ইউনিফর্মও খোলেনি। ওভাবেই প্যাটিসকে পেটের ওপর বসিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। সেলিনা বেগম পাশের ঘর থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করে বারবার করে খাওয়ার জন্য ডাকছেন। উঠানে পা রাখতেই মায়ের গালমন্দ কানে আসে অর্ষা এবং আহিলের। রুমে প্রবেশ করতেই সেলিনা বেগম চমকে যান। তার চোখজোড়া খুশিতে চকচক করে ওঠে। বিছানা থেকে জলদি নেমে এসে অর্ষার মুখ ছুঁয়ে চুমু খেয়ে বলেন,
“অর্ষা! মা আমার।”

অর্ষা প্রসন্নতার হাসি হাসল। মাত্র এক সপ্তাহ্ হয়েছে দেখা হয়নি। তাতেই মনে হচ্ছে মা তাকে অনন্তকাল পরে দেখল। অর্ষা তাকে আলিঙ্গন করে বলল,
“কেমন আছো মা?”
“ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”
“আমিও ভালো আছি।”
মেয়ের দিকে নজর দিতে গিয়ে তিনি আহিলকে খেয়ালই করেননি। পরক্ষণে ভীষণ লজ্জিত হয়ে বললেন,
“দেখো দেখি কান্ড, আমি তো আমার ছেলেটাকে লক্ষ-ই করিনি। বসো বাবা বসো।”

“ব্যস্ত হবেন না আন্টি। বসেই তো থাকি সারাদিন।”
আহিল মিষ্টির প্যাকেটগুলো এগিয়ে দিল। সাথে কিছু ফলমূলও রয়েছে। আসার সময় অর্ষা অনিচ্ছা প্রকাশ করার পরও জোর করে নিয়েছে। হাজার হোক ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি বলে কথা। সেখানে কি খালি হাতে আসা যায় নাকি? তাছাড়া দু’দিন পর তো এটা তারও শ্বশুরবাড়ি হবে।
অর্ষা মায়ের পিছু পিছু খাওয়ার ঘরে যেতে যেতে প্রশ্ন করল,
“সকাল কোথায়?”

“কোথায় আবার? নিজের ঘরে। বাড়িতে আসলেই সারাক্ষণ ঐ বিড়ালটাকে নিয়ে পড়ে থাকে। বিড়ালসহ ওকে যদি আমি ঘর ছাড়া না করেছি তারপর বলিস। জ্বালিয়ে মারছে আমাকে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে শুধু বিড়াল নিয়ে আদিখ্যেতা।”
“আহা! রাগ কোরো না। ও তো এমনই। আব্বু আর ভাইয়া কোথায়?”
“রুহুল তো দোকানেই। তোর বাবাও একটু আগে দোকানে গেল। তুই যা তো মা ফ্রিজ থেকে লেবু আর ঠান্ডা পানি বের কর। আমি আগে শরবতটা বানিয়ে দেই ছেলেটাকে।”
“আমি দিচ্ছি। তুমি ব্যস্ত হয়ো না তো।”

অর্ষা মায়ের হাতে হাতে নাস্তা বানিয়ে আহিলকে দিয়ে এলো। সকালের রুমে গিয়ে দেখে সেভাবেই শুয়ে আছে। অর্ষাকে দেখে সে লাফিয়ে নেমে আসে। জড়িয়ে ধরতে গেলে অর্ষা দূরে সরে যায়।
“আগে চেঞ্জ করবি, ফ্রেশ হবি। তারপর জড়াজড়ি। যা জলদি ওয়াশরুমে যা।”
সকাল কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে,

“তুই এত নিষ্ঠুর কেন আপু? এতদিন পর দেখা হলো। তোর কি একটাবারও আমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে না?”
“আমার ইচ্ছে করছে না যে, আমার দেবর দেখুক তার বউ কতটা খাচ্চোর। এখনো ফ্রেশ হয়নি।”
“তোর দেবর মানে? কার কথা বলছিস? সে এসেছে?”
অর্ষা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে,
“জি। আপনার সে এসেছে। একা একা বোরও হচ্ছে। জলদি ফ্রেশ হয়ে তাকে গিয়ে সঙ্গ দিন।”
সকাল এবার ঝড়ের বেগে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। জামা-কাপড় নেওয়ার কথাও তার মনে নেই। দরজা একটু খুলে চিকনসুরে সে অর্ষাকে ডাকল। ইনোসেন্টের মতো মুখ করে বলল,

“এক সেট জামা দে না আপু প্লিজ!”
সকালের সামনে বিরক্তি প্রকাশ করলেও মনে মনে হাসল অর্ষা। প্রথম প্রেমে পড়ার কথা মনে পড়ে যায় তার। তখন কত রকমই না চাঞ্চল্য ভর করে। সকালকে জামা-কাপড়গুলো দিয়ে সে আবার মায়ের কাছে এলো।
সেলিনা বেগম ফ্রিজ থেকে মাছ-মাংস বের করছিলেন। তা দেখে অর্ষা যারপরনাই অবাক হয়ে বলে,
“এগুলো বের করছ কেন?”

“কেন বের করছি মানে? রান্নাবান্না করব না?”
“তোমাদের জন্য হলে করো। কিন্তু আমি আর আহিল কিন্তু আজ এখানে খাব না। একটু পরই চলে যাব।”
“চলে যাবি মানে? থাকবি না আজ?”
“না, মা। বাড়িতে বলে আসিনি।”
“এখন ফোন কর। আহনাফকেও বল অফিস থেকে যেন সরাসরি এখানে চলে আসে।”
“উঁহু মা। আজ নয়। আমি সকালকে নিতে এসেছি। ও কয়টা দিন আমার কাছে থাকবে।”
“নিতে এসেছিস নিবি। কিন্তু না খেয়ে যেতে পারবি না।”

“আজকে আর জোর কোরো না প্লিজ! বাসায় আম্মু একা। তার অবস্থার কথা তো জানোই। আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।”
সেলিনা বেগমের মনটা খারাপ হয়ে গেল। এতদিন পর মেয়েটা এলো। অথচ ভালো-মন্দ কিছু রান্না করে খাওয়াতেও দিচ্ছে না। তিনি ভীষণ অভিমানিসুরে বললেন,
“হু, এখন তো নতুন মা পেয়েছিস না!”
অর্ষা হেসে ফেলে। মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুমি না মা! দিনদিন বাচ্চা হচ্ছ।”

মেয়ের সাথে তিনিও হাসলেন। সকাল যখন শুনল ওকে নেওয়ার জন্যই অর্ষা এসেছে তখন রুমে গিয়ে খুশিতে দুই মিনিট নেচেছে। পরক্ষণে ধাতস্থ হয়ে চটজলদি জামাকাপড়ও গুছিয়ে নিয়েছে। বাসায় ফেরার পথে ভাই আর বাবার সঙ্গে দেখা করে যাবে। যাওয়ার সময় সকালের কোলে প্যাটিসকে দেখে অর্ষা বলল,
“বাড়িতে কি বিড়াল কম পড়েছিল যে, এটাকেও নিতে হবে?”
“ঐ দুইটা তো আমার বিড়াল না। এটা আমার বাচ্চা। আমার বাচ্চাকে একা রেখে আমি কোথাও যাব না।”
আহিল খুকখুক করে কাশল কতক্ষণ। এটা লক্ষ্য করেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল সকাল। অর্ষা বলল,
“হ্যাঁ, বাচ্চার খালা হয়ে বাচ্চাকে রেখে আর কীভাবে যাই? চল।”

এদের কান্ড দেখে সেলিনা বেগমও হাসলেন। তার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা প্রথমে বাজারে গেল রুহুলের দোকানে। সেখানেও কতক্ষণ থাকা আর খাওয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলল। কিছুতেই তারা খালি মুখে যেতে দেবে না। অর্ষা অনেক কষ্টে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে।
বাজার পেরিয়ে সে একাই রিকশায় উঠে আহিল এবং সকালের উদ্দেশ্যে বলে,
“তোরা গিয়ে ঘুরে আয় কিছুক্ষণ। সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরবি। মনে থাকে যেন।”
আহিল বেশ বড়োসড়ো চমক পেয়েছে অর্ষার কথায়। অর্ষা গম্ভীরকণ্ঠে বলল,

“হা করে তাকিয়ে না থেকে যা তাড়াতাড়ি। খবরদার, দূরে কোথাও যাবি না। আর মনে রাখবি, এটা তোর গার্লফ্রেন্ড হওয়ার আগে আমার বোন হয়। বুঝেছিস?”
আহিল খুশিতে অর্ষার গাল টানতে গেলে অর্ষা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে মুখ সরিয়ে নেয়। সকালও তখন ঠাস করে আহিলের পিঠে কি’ল বসায়। আহিল বোকার মতো হেসে বলে,
“সরি! অতি খুশিতে পাগল হয়ে গেছিলাম।”
“বেশি পাগল হলে একদম পাবনায় পাঠিয়ে দেবো। আসছি।”

বাড়িতে ফিরে অর্ষা আগে ফ্রেশ হয়ে নিল। আমেনা বেগমের রুমে গিয়ে দেখে তিনি ঘুমাচ্ছে। সে কী করবে এখন? আহনাফকে একবার ফোন করবে? অফিস টাইম বিজি থাকবে ভেবে আর ফোন করল না সে। একটা উপন্যাসের বই নিয়ে বসল। বাইরে প্রচণ্ড রোদ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে অনেকক্ষণ। তবুও রোদ কমার নাম নেই। এমন গরমে মানুষ বাইরে কীভাবে কাজ করে! একটু বৃষ্টি হলে হয়তো ভালো হতো। সে জানালা দিয়ে কতক্ষণ রোদ্দুরে ঝলমল করা নীল আকাশ দেখল। পরক্ষণে খুলল বইয়ের পাতা।

তবে পড়া আর হলো না। আহনাফ এসেছে ঘেমেনেয়ে। সে জলদি বইটা বন্ধ করে উঠে গেল। আহনাফ ততক্ষণে শার্টের টপ দুটো বোতাম খুলে বিছানায় বসেছে। অর্ষা ঠান্ডা পানি এনে দিলে আহনাফ এক চুমুকে পানিটুকু শেষ করল। ঠোঁটের ওপর লেগে থাকা পানিটুকু মুছল সে অর্ষার ওড়নায়। এটা রোজকার রুটিন। খাওয়ার পর অর্ষা কাছে থাকলে সে ওড়না অথবা শাড়ির আঁচল দিয়েই মুখ মুছবে। মাঝে মাঝে তো তার ইচ্ছে করে যদি পারা যেত অর্ষার একটি ওড়না অফিসে নিয়ে যেত। দুপুরের খাবারটা যেহেতু অফিসেই খেতে হয়, সেহেতু অর্ষার সঙ্গে তো তখন সাক্ষাৎ ঘটে না।

অর্ষা এগিয়ে এসে ওড়না দিয়ে আহনাফের মুখের ঘাম মুছে দিল। আহনাফ এক হাত দিয়ে অর্ষাকে আরেকটু কাছে আনল। বলা যায়, ভীষণ সন্নিকটে। অর্ষাও আহ্লাদী হয়ে আহনাফের গলা জড়িয়ে ধরল।
“এইযে গায়ে ঘামের গন্ধ, বিরক্ত লাগে না?” জানতে চাইল আহনাফ।
অর্ষার সরল স্বীকারোক্তি,
“না।”

“কেন? আমার নিজেরই তো বিরক্ত লাগে। পারলে প্রতিদিন মনে হয় একটা করে পারফিউমের বোতল খালি করে ফেলি।”
“আমি যখন রান্না করে ঘরে ফিরি তখন তো আপনিও আমাকে কাছে টানেন। বারণ করার পরও জড়িয়ে ধরেন। তখন আপনার ঘামের গন্ধ নাকে লাগে না?”
আহনাফ শব্দ করে হাসল। বলল,
“তুমি অনেক চালাক হয়ে গেছ।”
“এখানে চালাকির কী হলো? আমি যাকে ভালোবাসি তাকে সব অবস্থাতেই ভালোবাসি। যেমনটা আপনি ভালোবাসেন।”
“আচ্ছা সরি। কথায় কথায় এত রেগে যাও কেন?”
“আপনি রাগান কেন?”

“তোমাকে রাগাতে আমার খুব ভালো লাগে। সবসময় রাগ তো নাকের ডগায় লেগেই থাকে।”
“আমি বুঝি না, সবারই কি আমাকে রাগাতে ভালো লাগে?”
“আর কে রাগায়?”
“সবাই। আগে আব্বু আর ভাইয়া রাগাত। আমি জানতাম যে, আমাকে রাগানোর জন্যই কথাগুলো বলছে। তবুও আমি রেগে যেতাম। এছাড়া আহিল, আশিক, দিদার ওরা তো আছেই। সেই সঙ্গে আবার আপনি। শুরু থেকে এখন অব্দি সুযোগ পেলেই রাগিয়ে দিচ্ছেন।”
আহনাফ অর্ষার নাকে চুমু খেয়ে বলল,

“সারাজীবন রাগাব। আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করব। তাতে তোমার কী? ইচ্ছে করলে এখনই আমি…”
আহনাফ ঝুঁকে কাছে যেতেই অর্ষা ধাক্কা দিয়ে সরে গেল। কড়াস্বরে বলল,
“এখন কোনো ফাইজলামি চলবে না। গোসল করে আসেন।”
“তুমি এত আনরোমান্টিক!”
“এই গরমে আমার রোমান্টিসিজম আসে না। আপনি ওয়াশরুমে যান। আমি কাপড় দিচ্ছি।”
আহনাফ মুচকি মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেল। নির্ঘাত মনে মনে কোনো ফন্দি আঁটছে। অর্ষা আর না ঘাঁটিয়ে কাপড় দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। খাবার টেবিলে রেখে আহনাফকে ডাকতে আসার সময় দেখে ক্যাথিওন দরজার সামনে বসে আছে। ওর মুখে একটা লাল গোলাপ। অর্ষার জামা খামচে ধরে সে মুখ দিয়ে ফুলটা বাড়িয়ে দেয়। অর্ষা ভয়ে চোখ-মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে।

আহনাফ গোসল করে সবে বেরিয়েছে মাত্র। অর্ষাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খিলখিল করে হেসে ওঠে। হাসির শব্দ শুনে অর্ষা চোখ মেলে তাকায়। চোখ-মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে। দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“হিহি না করে আপনার হতচ্ছাড়া বিড়ালটাকে সরান!”
“কেন? সুন্দর লাগছে তো। তোমার জামা ধরে বেচারা একটু দোল খাচ্ছে। খাক। এমন করছ কেন?”
“প্লিজ সরান! অ্যানিওন দেখলে ও-ও চলে আসবে।”
আহনাফ হাসতে হাসতে গিয়ে ক্যাথিওনকে কোলে নিল। ফুলটা বাড়িয়ে দিল অর্ষার দিকে।
“ও তো তোমাকে ফুল দিতে গেছিল।”
“আমার ফুল লাগবে না।”
“তুমি ক্যাথিকেও প্রত্যাখান করছ?”

“ওকেই তো আমার বেশি ভয়। নিশ্চয়ই আপনি ওকে ফুল দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।”
“আমি কিছু জানিনা।”
কিছু জানে না বললেও যে আহনাফই সব করেছে এটা বেশ ভালো করেই জানে অর্ষা। সে কিছু বলল না। চোখ গরম করে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। এরপর খাওয়ার জন্য আসতে বলল।
আহনাফের খাওয়া শেষ হওয়ার কিছু সময় বাদেই ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। ধুমসে বৃষ্টি নামবে। আহিল, সকাল এখনো বাড়িতে ফিরেনি। দুশ্চিন্তায় কাঠ হয়ে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে অর্ষা। ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে। সে দ্রুতপদে রুমে আসে ফোন করার জন্য। এসে দেখে ওর ফোন নিয়ে আহনাফ কথা বলছে। অর্ষা ইশারায় জানতে চাইল,

“কে?”
আহনাফ ফোন কেটে দিয়ে বলল,
“আহিল ফোন করেছিল। বলল মুনের বাসায় আছে।”
“মুনের বাসায় কেন?”
“ওর বাসার সামনে দিয়েই আসছিল। ঝড় দেখে আর আসেনি। মুনের বাসায় গেছে।”
“দেখি ফোনটা দিন, আমি মুনকে একটা কল করি।”
আহনাফ ভ্রুঁ বক্র করে বলে,
“তুমি আহিলকে সন্দেহ করছ?”
“হ্যাঁ, করছি। কারণ সাথে আমার বোন রয়েছে। ঘুরতে যেতে দিয়েছি মানে তো আর এই নয় যে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে বসে থাকব সব কথা।”
আহনাফ বেশ অবাক হওয়ার ভঙ্গি ধরে বলল,

“তুমিই ঘুরতে যেতে দিয়েছ? আবার তুমি সন্দেহ করছ? কী আশ্চর্য!”
“এখানে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? আহিল আমার খুব ভালো বন্ধু। খুব মানে খুব। আমি ওকে যথেষ্ট বিশ্বাস করি। কিন্তু এটাও তো মনে রাখা জরুরী যে, ও আমার বোনের সঙ্গে রিলেশনে আছে। একজন বোন হিসেবে সত্য -মিথ্যা যাচাই করাটা কি আমার কর্তব্য নয়?”
“অবশ্যই, অবশ্যই। আপনি কল করুন মহারানি।”
অর্ষা বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুনকে কল করল। আহিল মিথ্যা বলেনি। ওরা দুজনই মুনের বাসায় এখন। মুন ফোন রাখার আগে বারবার করে বলল,

“তুই টেনশন করিস না। আমি আছি তো। দুলাভাই তো বাসায় তাই না? তুই গিয়ে রোমান্স কর যা।”
“ফালতু কথা! রাখছি আমি।”
ফোন রাখার পর আহনাফ জানতে চাইল,
“কী হলো? ওরা যায়নি মুনের বাসায়?”
“গিয়েছে।”
“তাহলে রাগ করলে কেন?”
“মুন কেমন ধরণের কথা বলে জানেন না?”
“জানি। কিন্তু এখন কী বলল?”
“কিছু না। বাদ দিন।”
“আচ্ছা দিলাম। এদিকে আসো বৃষ্টি দেখি।”

অর্ষা আহনাফের পাশে গিয়ে বসল। দুজনে জানালার কাছে। জানালার গ্লাস হালকা খোলা। ফাঁকা জায়গা দিয়ে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে দমকা হাওয়া-ও প্রবেশ করছে। কয়েক ফোটা বৃষ্টিবিন্দু অর্ষার মুখের ওপর পড়তেই চোখের পাতা বন্ধ করে ফেলে সে। হাত বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করতে গেলে আহনাফ তার দু’হাত আটকে ফেলে। পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“থাকুক।”
“ভিজে যাচ্ছি।”
“ভেজো। এত সুন্দর ওয়েদার। একটু ভিজলে কিছু হবে না।”
অর্ষা দমে গেল। দুজনে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর আহনাফ বলল,

“সারাদিন তীব্র রোদের পর এখন বৃষ্টিটা কেমন লাগছে?”
“শান্তিইইই!” বাচ্চাদের মতো টেনে বলল অর্ষা।
আহনাফ হেসে ফেলে। বলে,
“আমার জীবনে তুমিও ঠিক এরকম এক পশলা বৃষ্টি। ধু ধু মরুভূমির উত্তপ্ত বালি আমি, আর তুমি সেই বালির বুকে ঝরে পড়া এক পশলা বৃষ্টি।”

অর্ষা মুচকি হাসল। লজ্জা পেয়েছে সে। মুখে কিছু বলল না। আহনাফের আঙুলের ফাঁকে আঙুল রেখে আরেকটু গুটিসুটি হয়ে আহনাফের বুকের সাথে লেপ্টে রইল। মনে মনে স্বগতোক্তি করে বলল,
“আর আপনার বুক যে আমার পরম শান্তির স্থান সে তো আপনি জানেন না। পথিক যেমন রোদ নাই, বৃষ্টি নাই, সময়ে-অসময়ে পথে পথে ঘুরে ক্লান্ত হয়, তৃষ্ণার্ত হয় আমিও ঠিক তেমনই এক তৃষ্ণার্ত নারী; যার তৃষ্ণা নিবারণ হয় আপনার বুকের শান্তি দ্বারা। আপনি আমার শান্তির স্থান।”

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ৪

বিঃদ্রঃ কতদিন ধরে যে এই পর্ব লিখেছি নিজেও জানিনা। একদিন একটু লিখেছি তো, আরেকদিন লিখিনি। আসলে রাইটিং ব্লকে পড়ার দরুণ লেখার প্রতি কেমন একটা অনিহা চলে এসেছে। ভালো লাগে না রোগে ধরেছে। তবে এটা ঠিক হয়ে যাবে ইন-শা-আল্লাহ্। তো কথা হচ্ছে, অনেকদিন বাদে ওদের নিয়ে লিখলাম, তার ওপর আবার রাইটিং ব্লক সব মিলিয়ে লেখাগুলো খাপছাড়া প্রাণহীন লাগতে পারে। ছন্দপতনও ঘটতে পারে। পাঠকদের পড়ায় হয়তো বিরক্তিও আসতে পারে। এমনটা হলে আমি খুবই দুঃখিত! ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।]

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ৬