রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ৬

রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ৬
লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)

___” আরেহ অনু তুই এখানে?”
অয়নের কথায় ধ্যান ভাঙে আমার।মিশমির হাতটা অয়নের হাতের ভাজে ছিল।সেইদিক থেকে চোখটা সরিয়ে হালকা হেসে বললাম,
___” হ্যা।কেন বিরক্ত করলাম?”
অয়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফুপি বলে উঠলো,
___” আরে অয়ন!তুমিও এখানে?”
ফুপির কথা শুনে এবার সবাই এদিকে তাকালো। সাদি ভাইও। অয়ন মুচকি হেসে বললো,

___” আন্টি!ভালো আছেন?”
___” হ্যা ভালো তো আছি। তুমি এখানে কি করছো? পরিবার নিয়ে এসেছো?”
অয়ন না’বোধক মাথা নাড়ালো।হালকা লাজুক গলায় বললো,
___” না আন্টি। ফিয়ন্সেকে নিয়ে এসেছি। এইযে ও।মিশমি।”
মিশমিও হেসে ফুপিকে সালাম দিলো। এভাবেই টুকটাক কথা বলতে লাগলো ওরা। আমি কি ভেবে সাদি ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে। অয়ন হেসে বলছে,
___” আচ্ছা আন্টি। আপনারা ইনজয় করুন। ”
ফুপিও মাথা নাড়ালো।অয়ন আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

___” কি যেনো বলছিলি?”
আমি তাচ্ছিল্য হেসে বললাম,
___” না কিছু না। আর তোর আবার আমার কথা শোনবার সময় আছে নাকি!”
এটা বলে অয়নকে কিছু না বলতে না দিয়ে আমি ফুপির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম। আড়চোখে দেখলাম, অয়ন আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলো। আর সাদি ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি নিজের কান্না আটকে মনে মনে ভাবলাম,

___” ওকে ওর মত থাকতে দেয়া উচিত। যে যার মত আছে তাকে তার মতই থাকতে দেয়া দরকার।”
তারপর আমরা আমাদের মত ইনজয় করতে থাকলাম। তখনই দেখলাম চারিদিক হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেলো। শুধু পাশের বড় স্টেজটায় লাইট জ্বলে উঠলো।আমরা অবাক হয়ে সেদিকে তাকালাম। অয়ন হাঁটু গেড়ে মিশমির সামনে বসে আছে। হাতে একটা রিং।অয়ন বলতে লাগলো,
___” আই লাভ ইউ মিশমি। উইল ইউ মেরি মি?”
মিশমি কিছু না ভেবেই হেসে বললো,
___ “ইয়েস।”

চারিদিকে হাততালিতে ফেটে পড়লো। দুঁফোটা জল গড়িয়ে পড়লো আমার গাল বেয়ে।সাথে সাথেই সেটা মুছে বড় একটা হাসি দিয়ে হাততালি দিতে লাগলাম।অনুভব করলাম,কেউ আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি পাশে তাকিয়ে দেখি সেটা আর কেউ না।সাদি ভাই। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে উনি না’বোধক মাথা নাড়ালেন।আমি সেখান থেকে উঠে ছোট্ট জানালাটার দিকে চলে এলাম। এদিকটা ভীষণ সুন্দর আর নিরিবিলি। আমি জানালায় তাকিয়ে আকাশ দেখছি এমন সময় কেউ কাঁধে হাত রাখলো। পিছনে ফিরে দেখি সাদি ভাই। উনি গম্ভীর গলায় বললেন,

___” চলে এলি যে?”
___” এই দিকটা কি সুন্দর না?”(মুচকি হেসে)
উনি আমার দিকে কেমন যেন অবাক হয়ে তাকালেন। তারপর হেসে সায় দিলেন। আমি আকাশ দেখতে দেখতে বললাম,
___” কিছু মানুষকে নিজের মত থাকতে দেয়া উচিত। দেখা যাক কি হয়।”
সাদি ভাই মনে হয় শুনলেন না। একটু জোরেই বললেন,
___” হু?”
আমি কেঁপে উঠে ওনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। হাসতে হাসতে বললাম,

___” না কিছু না।”
___” বেশি হাসছিস মনে হচ্ছে.. ”
বলে নিজেও হাসতে লাগলো।
___” তাহলে আপনি কেন হাসছেন?”
___” বোকা মেয়ে!জানিস না? একজনকে হাসতে দেখলে অটোমেটিক আরেকজন হাসা শুরু করে।”
এটা শুনে কেন যেন আমার হাসি পেল। আমি হো হো করে হাসতে লাগলাম। সাদি ভাইও মাথা চুলকে হাসতে লাগলেন। ইশশ!ওনার হাসিটা এত প্রাণবন্ত কেন?হঠাৎ আমি চুপ হয়ে গিয়ে বললাম,
___” হুহ। ঠিক তেমন একজনকে সুখে থাকতে দেখে আরেজনেরও নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিয়ে সুখে থাকতে শেখা উচিত।”
উনি কি বুঝলেন জানি না। আমার দিকে একটু ঝুঁকে বললেন,

___” আইসক্রিম চলবে?”
আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কথাটা বুঝতে সময় লাগলো কিন্তু আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে ওনার সময় লাগলো না। উনি আমার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যেতে লাগলেন। আমি অনুভব করলাম, একটা রাগী দৃষ্টি আমাকে নিজের চোখ দিয়ে দেখে চলেছে…

সকাল সকাল উঠেই হালকা পাতলা রেডি হয়ে নিলাম আমি।আজ থেকে ভালোমত কলেজে যাব এন্ড ক্লাস এটেন্ড করবো।কে কি বললো কে কি করলো,আই ডোন্ট কেয়ার।প্রতিদিনের মত আজকেও সাদি ভাই আমাকে পৌছে দিলেন।কিন্তু প্রতিবারের মত আজও চুপচাপ।কোনো কথা নেই।কলেজে গিয়েই প্রান্তিকে দেখে বললাম,
___” হেই বেবস,কি করিস!”
প্রান্তি আমাকে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লো। আমার কপালে গালে হাত দিয়ে বললো,

___” তুই আজকে এখানে?”
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
___” তাহলে আমার কই থাকার কথা?সর জায়গা দে বসবো। নাহলে রুশ আসলে কিন্তু ওর সাথেই বসবো।”
প্রান্তি আমার ব্যাগ নিয়ে নিজের পাশে রেখে বললো,
___” আমি তো ভেবেছিলাম তুই আজকে আসবি না।”
___” কেন? আমার আবার কে মরলো?”
___” আরে গতকালকের ঘটনার পর….”
থামিয়ে দিলাম আমি। হাত উঁচু করে শান্ত গলায় বললাম,

___” ওইখানেই থেমে যা।আর কিছু বলার দরকার নেই। যে যার মত আছে তাকে তার মতই রাখা উচিত নয়কি?”
প্রান্তি মাথা নাড়ালো। আমি হেসে বললাম,
___” ও যদি ওর প্রিয় মানুষকে নিয়ে ভালো থাকে তাহলে আমি সেখানে কেন বাঁধা দিবো?”
প্রান্তি আমার দিকে ছলছল চোখে তাকালো। আমি চোখের কোণে থাকা পানিটা মুছে নিলাম। ও ভাঙা গলায় বললো,
___” গতকাল সন্ধ্যায় অয়ন পাবলিকলি ওকে রেস্টুরেন্টে প্রপোজ করেছে।”
আমি আটকে আসা গলায় বললাম,

___” হ্যা জানি।”
___” তুই তারপরেও কিভাবে মেনে নিচ্ছিস?আমরা গ্রুপের সবাই জানি যে তোর আর অয়নের মধ্যে কিছু একটা আছে।আর মূলত অয়নই তোকে পছন্দ করে।”
___” বাদ দে। ভালো লাগছে না।মনটা খরাপ করে দিস না। ওরে ওর মত থাকতে দে।”
___”তুই যা ভালো বুঝিস।”

কলেজ শেষ করে ক্যান্টিনে বসলাম আমি। অয়ন আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে।ওর সামনে যেতে ইচ্ছে না করলেও যেতে হলো।কারণ আমাকে সবটা স্বাভাবিক রাখে হবে।দূর্বল হলে চলবে না।ওর সামনে তো মোটেও না। আমার হাতের বেন্ডেজটা দেখে সবাই প্রশ্ন করেছে শুধু অয়ন বাদে। হয়তো চোখে পড়েনি। পড়লে তো পুরো কলেজ মাথায় তোলার কথা ওর। আগেও তো কত জেদের বশে হাত কেটেছি। আর অয়ন চড়ও দিয়েছে। যাক!ভাবতে ভাবতে অয়নের সামনে বসে পড়লাম আমি।ওর ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বললো,

___” কিছু খাবি?”
___” নাহ।খিদে নেই।”
___” আচ্ছা।”
অবাক হলাম আমি। এমন কখনো হয়নি যে অয়ন আমাকে খিদে না পেলেও জোর করে খাওয়ায় নি। ওর আবারো ফোন ঘাটতে লাগলো। আমিই বলা শুরু করলাম,
___” আমাকে কেন ডাকলি?”
___” কেন ডাকতে পারি না?”
___” অবশ্যই না। তোর আর আমাকে কিসের প্রয়োজন?”
অয়ন একদফা হাসলো। তারপর বললো,

___” তোর সাথে কি আমার প্রয়োজনের সম্পর্ক নাকি?”
___” আমার তো তাই মনে হলো!”
(তাচ্ছিল্য হেসে)
___” তুইও না!পাগল।”
___ “তুই তো আগে বলিস নি যে তোর গার্লফ্রেন্ড আছে অয়ন!”
কথাটা বলার সময় গলাটা ধরে এলো আমার। তবুও নিজেকে সামলে হাসিমুখে কথাটা বললাম আমি। অয়ন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো,
___” হ্যা তো থাকতে পারে না?আমি তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই বলিনি।”
আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম,
___” তোর কি মনে হয় আমি সারপ্রাইজড হলাম?”
অয়ন হাসতে হাসতে বললো,

___” আরে না হওয়ার কি হয়েছে। তুই তো খুশিও হয়েছিস।তাই না রে?”
আমি ছল ছল চোখজোড়া নিয়েই ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললাম,
___” হুম হয়েছি তো।ভীষণ খুশি হয়েছি আমি। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের মনের মানুষ আছে। আর আমি খুশি হবো না বল?”
___” হ্যা সেটাই।তোর থেকে এটাই আশা করেছিলাম।”
আমি চোখ মুছে বললাম,
___” তাহলে আমাকে যা বলেছিলি সেসব কি ছিলো?”
অয়ন ফোন ঘাটতে ঘাটতে বললো,

___” কোনসব?”
___”ফোনটা রাখ!পরে বলছি।(দাঁতে দাঁত চেপে)
অয়ন ফোনটা রেখে হাতের উপর হাত ভাজ করে বললো,
___” হ্যা বল!”
আমিও রাগটা ধরে রাখতে না পেরে বললাম,
___” এতদিন আমাকে এতকিছু বলার মানে কি ছিলো?এইযে আমার বর হবি,আমাকে বউ বানাবি।ভালোবাসিস।”
অয়ন হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে রক্তবমি হওয়ার মত অবস্থা। অসহ্য লাগছে আমার। ওর হাসির শব্দ আমার শরীরে কাটার মত বিঁধছে। অয়ন কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললো,

___” আমি তো এতদিন মজা করেছি। তুইও না!এগুলোকে সত্যি ভেবে বসে
আছিস?”
কেমন যেন অপমান বোধ হলো আমার।পরিস্থিতি সামলানোর জন্য জোরপূর্বক হেসে বললাম,
___” নাহ। একদম না।আমি তো এটাকে মজা হিসেবেই নিয়েছি। আর আমি চাইও যেন তোরা সুখী হোস।”
অয়ন উঠে দাড়ালো। সাথে আমিও। আমাকে জড়িয়ে ধরতে নিয়ে বললো,
___” এই না হলে আমার বেস্টি।”

ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠলো। আর অয়ন আমায় জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরতে পারলো না।আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বড় বড় করে লেখা,
“সাদি ভাই”
আমি কলটা পিক করে কানে ধরে বললাম,
___” বলুন!”
___” কই তুই?”
___” কলেজে আমি।আসছি বাসায়।”
___” আমাকে মিথ্যা বলার শাস্তি তোকে পেতে হবে অনন্যা।মনে রাখিস।”

আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম। তাড়াতাড়ি কল কেটে বেড়িয়ে যেতে নিলাম।তখনি অয়ন হাত ধরে বললো,
___” এত ভয় পাস কেন তোর সাদি ভাই কে?”
আমি হাতটা ছাড়িয়ে জোরপূর্বক হেসে বললাম,
___” তুই বুঝবি না।”
___” বুঝতেও চাই না। চলেই যাচ্ছো তাহলে আমাকেও #রাঙিয়ে দিয়ে যাও।”
আমি আর কিছু না বলে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসলাম। আর চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে লাগল। মনে মনে ভাবলাম,

রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ৫

___” তুই তোর মনের মানুষ নিয়ে সুখে থাক অয়ন।শুধু এই দোয়াটা করিস যেন আমিও একদিন কাউকে বলতে পারি যে,আমাকে #রাঙিয়ে দিয়ে যাও।”

রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ৭