কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৩

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৩
সাবিকুন নাহার নিপা

সুরমা বেগম সবগুলো আইটেম নিজ হাতে রান্না করেছেন। দীপা আর শাওন টুকটাক সাহায্য অবশ্য করলো। চিংড়ির দোপেয়াজা, রুই মাছের ঝোল, মুরগির কোর্মা, গরুর ঝাল ভুনা, লালশাক ভাজি, পটল দিয়ে কাতলা মাছের ঝোল সঙ্গে কয়েক পদের ভর্তার আইটেম। সবগুলো রিশাবের মা দিলুর ভীষণ পছন্দের। সঙ্গে মালপোয়া, পায়েশ, পিঠা তো আছেই। শাওন সবগুলো আইটেম একটু একটু করে সরিয়ে রাখলো।

মা যখন মেহমান দের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে তখন ও বেরিয়ে যাবে। পলাশ ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। বেচারা নিজেও আসছে না। বলছে শরীর খারাপ। কী জানি, অসুখ বিসুখ বাঁধালো কি না। পলাশ ভাইয়ের আবার দুদিন পর পর জ্বর হয়। অবশ্য সে আবার অনিয়ম করে খুব।
শাওনের ভীষণ মায়া হয়। পলাশ টা কেমন অগোছালো। ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়াও করে না। অথচ ছেলেটা বাসার খাবার খেতে খুব ভালোবাসে।
দীপা ফ্রিজে বক্স রাখতে এসে দেখলো শাওন রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আনমনে কী যেন ভাবছে। মুখ টা একটু শুকনোও লাগছে। দীপা জিজ্ঞেস করলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“কি হইছে আপু?”
শাওন ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে। কোন সময় যেন চোখে পানিও এসে গেল, খেয়ালও করে নি। দীপা অবাক চোখে দেখছে। শাওন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। বলল,
“আরে কিছু না। এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম। দমকা হাওয়া টা চোখে লাগলো। ”
ভর দুপুরে এমন দমকা হাওয়া অন্য কেউ আর দেখে নি শাওন ছাড়া। দীপা জানে শাওন কেন কষ্ট পাচ্ছে। তবুও প্রশ্ন করে না। নরম গলায় বলে,
“তুমি ঘরে গিয়ে বসো আপু।”
শাওন হঠাৎ কাতর গলায় বলে ওঠে,

“আজ আমি একটু বেরোবো দীপা। মা যে সময়টাতে ভীষণ ব্যস্ত থাকবে তখন।”
দীপা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। শাওন চোখ নামিয়ে নিলো। এই একটা বিষয়ে শাওনের ছেলেমানুষী দেখে ও অবাক হয়। তখন মনে হয় কলেজ পড়ুয়া কোনো মেয়ে।

দিলশাদ চৌধুরী শক্ত মনের মানুষ। ছেলেমেয়েরা হয়েছে তার উল্টো। সবগুলো ছেলেমেয়েই বাবার ধাত পেয়েছে। এদের হৃদয় খুব নরম। দিলশাদ চৌধুরী নরম মনের মানুষ না। তার পুরোনো বান্ধবী কে খুঁজে পাওয়ার খবর শুনে খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে রইলেন। তারপর বললেন,
“ভেরি গুড। আমি খুশি হয়েছি। কিন্তু এটা এমন কী ব্যাপার? সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে খুঁজে পেয়েছ। তোমরা কষ্ট তো আর করো নি। ”

রিশাব নিভে গেল। ও ভেবেছিল মায়ের উচ্ছ্বাস দেখবে। রিতিও ভাইয়ের দিকে তাকালো। দিলশাদ চৌধুরী মৃদু হেসে বললেন,
“তোমরা এমন শক্ত মুখ করে আছ কেন? আমি খুব খুশি হইছি। এবং এক্সাইটেডও অনেক। ”
রিশাব একটু হাসার চেষ্টা করলো। রিতি তখনও ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। দিলশাদ চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ছেলেমেয়ে গুলো ভাগ্যিস বাবার মতো হয়েছে।

ওরা এলো বিকেলের দিকে। হালকা নীল রঙের গাড়িটা এসে থামলো শাওন দের দোতলা বাড়িটার সামনে। শাওন দৌড়ে গেল। প্রথমে রিশাব নামলো। শাওন জিজ্ঞেস করলো,
“হাই কেমন আছেন?”
রিশাব জবাব দেয়ার সুযোগ পেল না। তার আগেই শাওন দৌড়ে গেল দিলশাদ চৌধুরীর দিকে। গিয়ে বলল,
“আন্টি আমি শাওন। আমার সুন্দর নাম টা আপনি রেখেছিলেন।”
দিলশাদ চৌধুরী শাওন কে দেখলেন। শাওন! কি সুন্দর দেখতে হয়েছে! একদম ওর মায়ের মতো! দিলশাদ চৌধুরী শাওনের গালে আলতো হাত রাখলেন। মৃদু হেসে বললেন,

“কেমন আছ?”
“খুব ভালো। আসুন আন্টি।”
শাওন রিতিকে দেখলো সবার শেষে। রিতি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“হ্যালো আপু, আমি রিতি।”
“এসো রিতি।”
বসার ঘরে ঢুকতেই সুরমা বেগম দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন দিলশাদ চৌধুরী কে। কোনো কথা নেই, ভাব বিনিময় নেই। একজন আরেকজন কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছু সময়।
রিশাব দূরে দাঁড়িয়ে দেখলো। আড়চোখে শাওন কেও দেখলো। শাওনের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হলো ওর মায়ের না, ওর বন্ধু এসেছে।

“সুহাস মনে হয় পুরোই ওর বাবার মতো হয়েছে?”
সুরমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এই টুকু সময়ে দিলু ঠিক বুঝে গেল। তবুও বলল,
“না না। শুধু একটু গম্ভীর ই। ”
“শাওন কিন্তু তোর মতোও হয় নি। ”
সুরমা বেগম হাসলেন। দিলশাদ চৌধুরী রান্নাঘরে বসেই কথা বলছেন। সুরমা বললেন,
“তুই কী এখনো আমার উপর রেগে আছিস?”
“কী মনে হয়?”
“জানিনা।”
“আছি একটু।”

“সেজন্যই বোধহয় যোগাযোগ করলি না আর। বাড়িতে গেলে আমি সবসময় তোর খোঁজ নিতাম।”
“একদিনে এতো আয়োজন কেন করতে গেলি?”
“অল্প অল্প করে খাবি। ছেলে মেয়ে দুটো খাবে তো?”
“নিশ্চয়ই খাবে। ”
“যাক বাবা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল!”
“তুই ভালো আছিস তো?”
সুরমা হতবিহব্বল চোখে তাকালেন। কী বলবেন! মিথ্যে তো আর বলা যায় না। দিলশাদের দিকে তাকিয়ে শুধু একটু হাসলেন।

সেই সময়ে শাওন এসে হাজির হলো। কানে দুল পড়তে পড়তে বলল,
“মা আমি একটু বেরোচ্ছি। তুবাদের বাসায় যাব। তুবার পরীক্ষা আছে, না গেলেই নয়। আন্টি আমি আসব আর যাব। তোমরা আবার চলে যেও না যেন।”
সুরমা বেগম বুঝতে পারলেন। শাওন আজও শাড়ি পরেছে। হাতের ব্যাগটাতে টিফিন ক্যারিয়ার টাও দেখা যাচ্ছে।
দিলশাদ বললেন,

“কোথাও যাবে? ড্রাইভার কে বলি ও নামিয়ে দিয়ে আসুক।”
শাওন না বলতে গিয়েও থেমে গেল। তারপর বলল,
“থ্যাংক ইউ আন্টি। আমার অনেক টা সময় বেঁচে যাবে।”
দিলশাদ হাসলেন। শাওন গাড়িতে যখন উঠবে তখন দিলশাদ চৌধুরী বললেন,
“শাওন এক কাজ করো, রিশু কে নিয়ে যাও। ”
কয়েক সেকেন্ডের জন্য শাওনের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলেও মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।

দীপা খানিকটা সংকোচ নিয়েই ঘরে ঢুকলো। সুহাস ল্যাপটপে কিছু একটা দেখছিল। দীপাকে দেখে নড়েচড়ে বসলো। দীপা বলল,
“আপনাকে খেতে দিয়ে দেব? গেস্ট দের খেতে আরও সময় লাগবে।”
“না। তুমি বসো। তোমাকে অন্য কারনে ডেকেছি।”
দীপা খাটের এক কোনায় বসলো। এই ঘর টাতে ও এর আগেও থেকেছে। তবে এই বিছানায় ঘুমায় নি। সবসময় মেঝেতে বিছানা পেতে ঘুমাতো।
সুহাস আলমারি থেকে শাড়ির প্যাকেট টা বের করে দীপার হাতে দিতে দিতে বলল,
“এটা রাখো।”

দীপা শাড়ির প্যাকেট টা উল্টেপাল্টে দেখলো। জিজ্ঞাসু চোখে একবার তাকালোও সুহাসের দিকে। সুহাস বলল,
“আসলে এটা কিনেছিলাম আমার এক কলিগ কে গিফট করব বলে। ওর বার্থডে ছিলো তাই। কিন্তু ওর অন্য গিফট পছন্দ বলে দেয়া হয় নি। এখন এই শাড়ি তো ফেরতও দেয়া যায় না। আর নিজের কাছে রেখেই বা কী করব। তুমি নিয়ে যাও।”

দীপা বিস্মিত চোখে শাড়িটার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর চলে গেল। কোনো কথাও বলল না।
সুহাস ইচ্ছে করেই এতগুলো মিথ্যে কথা বলেছে। এই শাড়িকে কেন্দ্র করে দীপার মনে অন্য কোনো ভাবনার উদ্বেগ হোক সেটা ও চায় না। দীপা দূরেই থাকুক।

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ২

(আজকের পর্ব টা ছোট হবার জন্য দু:খিত। পরের পর্ব টা একটু বড় করে দেবার চেষ্টা করব।)

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৪