রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৭

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৭
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“তাহুরা,উনি তোমার আত্মীয় হয়।তোমার তো জানার কথা,উনার সাথে কলেজের ম্যাডামের সাথে কিছু চলছে কিনা?”
বিষাক্ত প্রশ্ন। এমন প্রশ্ন তাহুরার অন্তরে জ্বালা সৃষ্টি করে। ডিপার্টমেন্টের নতুন কিছু মেয়ের সহিত আলাপ হয়।সেই মেয়েগুলো যখন থেকে জেনেছে উমাইর তার আত্মীয়,এরপর হতে মাথা খাচ্ছে তারা।তাহুরা করুণ দৃষ্টিতে চৈতালির পানে চায়।মূলত এই মেয়েটা হাটে হাঁড়ি ভাঙে।তাহুরা কিভাবে বলবে,উমাইর কারো সাথে এনগেজড কিনা! উমাইরের তাকে বলা গোপন কথাগুলোতে জানে তাহুরা,উমাইর তাহুরাকে নিয়ে ভাবে।উমাইর কেবল তাহুরাকে যত্ন,ধমকাতে ব্যস্ত থাকে এবং তাহুরা সেগুলো সহ্য করতে।ডানে বায়ে মাথা দোলায় তাহুরা,

–“আমি জানিনা।”
–“যদি না থাকে,আমার চান্স করে দিও প্লিজ।আমি খুব সুন্দরী তাই না?”
নতুন মেয়ে লিপা বলে উঠে।
চৈতালি হাতে তালি বাজায়।হেসে বলে,
–“তাহুরা আর চান্স করে দিবে?উমাইর স্যারের সামনে সকলের অবস্থা টাইট হয়।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“তাও, স্যার দেখতে মারাত্মক।আমি আজ দেখে আজই ফিদা হলাম।”
লিপা পুনরায় জানালে তাহুরার মধ্যকার কষ্ট হানা দেয় প্রখর।আঁখি জোড়া যেনো এখনি ফেটে পড়বে কান্নার রোলে।প্রিয় মানুষের ব্যাপারে, তাকে দখলের ব্যাপারে কথা শুনলে কি ভালো লাগে?না লাগে না।তাহুরা কেনো প্রতিবাদ করতে জানে না?
পরক্ষণে নতুন অন্য মেয়েটা শুধায়,

–“উম,আমার মনে হচ্ছে সামনের লম্বা ম্যাডাম উমাইর স্যারের জন্যে বেস্ট।দেখো,ওরা দুজনই হাসছে।”
তাহুরার তনু কম্পিত।আঁখিতে জমানো জলগুলো টুপ টুপ গালে প্রবাহমান।মেঘলা আবহাওয়ায় পরিবেশ শীতল হলেও তাহুরার অন্তরে উষ্ণতা।প্রিয় মানুষটাকে অন্যের সাথে দেখলে বুকে জ্বলে,দম বন্ধকর অনুভূতি হয়।নরম সত্তার তাহুরার সহ্য করার শক্তি ক্ষীণ।জেনে শুনে কেনো এমন মরীচিকার দিকে হাত বাড়িয়েছিলো তাহুরা? একটাবার কি ভাবেনি, গুণবান সুদর্শন যুবকের জন্যে তেমনই একজন নারী দরকার।সে হিসেবে তাহুরা কেবল এক ছোট্ট পিপীলিকা।
তাহুরার মতো সরল মেয়েদের সমস্যা একটাই,অন্যের কথায় বেশি চিন্তিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

দ্রুত টিস্যুর সহিত গাল মুছে।প্রস্থান করে সেই জায়গা।দেখার ইচ্ছে নেই কিছু।ক্লাসে যাওয়া অবস্থায় তার মুখশ্রীর পরিবর্তন হয়।শুকনো মুখ ফুলে উঠে।ক্লাসে পৌঁছে মাথা বেঞ্চে এলিয়ে দেয়।চৈতালি আসলে প্রশ্ন করবে হাজারটা।তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় সে।ব্যাগ উঠিয়ে ক্লাস প্রস্থান করে।আর ক্লাস করবে না।বাড়ি ফিরবে। উমাইরদের বাসায়ও যাবে না।বাসায় গিয়ে বোনকে ফোন করবে। উমাইর নামটা মনে আসতেই দুচোখে জল জমে।জীবনের বহু বসন্তের পর যে লোককে মনে ধরেছে সেই লোক কেবল তার জন্যে মরুর বুকে বৃষ্টির মতো।

তারপরও না হওয়া প্রেমিকার মনে হরতাল হয়।খুব করে মনে করার চেষ্টায় উমাইরের মুখশ্রী।কিন্তু,ব্যতিক্রম ঘটনা হয়।বারংবার ভেসে আসছে ইমনের অবয়ব।প্রতিচ্ছবি উমাইরের কিন্তু ছবি ইমনের।এমনটা হওয়াতে তাহুরা আরো ভেঙে পড়ে।ইতিমধ্যে টেনশনের মাত্রা অতিরিক্ত হওয়ায় উল্টাপাল্টা ভাবতে শুরু করে তাহুরা।
রিক্সায় উঠলে কান্নায় ভেঙে পড়ে।বিড়বিড় করে আল্লাহ্ এর দরবারে আর্জি জানায়,
–“আল্লাহ্,আপনি তো জানেন আমি উমাইর স্যারকে কতো ভালোবাসি।আমার মনে কেবল তার প্রতিচ্ছবি ভাসুক,বাকি সব দূর করুন।মানুষটাকে আমার করে দিন আল্লাহ্।”

সরল মেয়েটা নিজেকে শান্তনা দিয়েও শান্তিতে নেই।আজ হুট করে কি হলো?অতি চিন্তায় উমাইর এর অবয়বে ইমনের প্রতিচ্ছবি কেনো ভাসছে?কিছুতেই হানা দিচ্ছে না প্রেমিক পুরুষের ছবি।মেয়েটা অল্পতে বেশি কষ্ট পায় বলে সৃষ্টিকর্তা কি তাকে আরো পীড়া দিচ্ছে?তাহুরার মস্তিষ্ক অচল।বাড়িয়ে সম্মুখে রিকশা থেমেছে অথচ তার হুঁশ নেই।রিক্সাওয়ালা এইবার কিঞ্চিৎ জোর গলায় শুধায়,

–“আপা,আপনার বাড়ির সামনে আইছেন।নামেন।”
তাহুরার শরীর দুলে।ভেজা দৃষ্টিতে রিক্সাওয়ালা মামাকে দেখে।পরক্ষণে ভাড়া মিটিয়ে নামে। দাঁড়ায় দরজার সম্মুখে।
ব্যাগ হাতড়ে চাবি বের করে। তালা খুলে ঢুকলে বুঝতে পারে উঠোন জুড়ে পাতার ছড়াছড়ি।ঝাড়ু না দেওয়ার ফলাফল।গলা তুলে পাশে দৃষ্টি ফেলে।পুকুর পাড়েও পাতার সমাহার।মা,বাবা,বোন সবার সহিত স্মৃতি নেড়ে উঠলে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে মলিন মেয়েটা।বাবার কথা,মায়ের কথা বড্ড মনে আসছে।

বাসায় আসছে না কেনো ওরা?আরো চারদিন বাকি আছে তাদের ফেরার।দিনের বেলা হওয়ার সুবাদে তাহুরার ভীতি এখন কম।এছাড়া মনের পীড়ার সাথে জগতের ভীতির তুলনা নেই।মনের পীড়ার নিকট সকল পীড়া তুচ্ছ।
তাহুরা ঘরের ফটকের তালা খুলে।সম্মুখের রুমে লাইট জ্বলছে।মা জ্বালিয়ে গিয়েছিল। আঁধার ঘর থাকা ভালো নয় বলে।তাহুরা ঘরের সকল জানালা খুলে। এপ্রোন সরায় শরীর হতে।বেসিনে মুখ ধোয়।পড়নে কাপড় পরিবর্তন করে ঘরে পড়ার সেই সুতির কামিজ নির্বাচন করে।একে একে ঝাড়ু দিতে থাকে রুম।ঘড়ির দিকে নজর বুলায়।ছুটি হওয়ার সময় বাকি এখনো।সময় গড়ালে বোনকে ফোন দিবে।

ঘরের প্রত্যেকটা রুম ঝাড়ু দেয় সে নানান কল্পনার মাঝে। সকল কক্ষের লাইট জ্বলছে। তখন আবেগে এইখানে এলে,এখন ভীতি বাড়ছে।ছমছম করছে শরীর।
এরমাঝে মেঘে গর্জন হলে তাহুরা প্রথমে বোনকে ফোন দেয়, জানায় সে এই বাড়িতে।সুনেরা বোনকে চিল্লায় বেশ।আসছে বলেও সম্বোধন করে।
হঠাৎ ঘরে অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ হলে মোবাইল রেখে দৌড়ে বাহিরে আসে তাহুরা।ফোলা আঁখিতে ব্যথা,সাথে ভয়।অন্য সকল চিন্তায় ভয় ভিড় করলে ঝাড়ু হাতে নেয়।দ্রুত উঠোন ঝাড়ু দিতে উদ্যত হয় সে।মনের বিরুদ্ধে একা সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন পস্তাচ্ছে মেয়েটা।

কিন্তু,এটাই সত্যি তাহুরার সাথে উমাইরকে কেউ মেনে নিবে না।ফের মনের মেঘের বৃষ্টি হয়।
টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা ধরণীতে হামলা দিচ্ছে।তাহুরা পণ করে বোন আসা না অব্দি ভেতরে ঢুকবে না। মেয়েটা একা বাসায় থাকেনি ইহকালে।আজ সব সিদ্ধান্তে ধিক্কার জানাচ্ছে সে নিজেকে।
তাহুরার সাইলেন্ট মুডে থাকা মোবাইলে উমাইরের ফোনের ঝড়।মেজাজ তার সপ্তম গগণে।সকালে বলেছিলো মেয়েটাকে তার সাথে ফিরতে বাসায়। কোথায় হাওয়া হলো।সমস্যা হয়েছে কোনো?উমাইর দ্রুত ফোন করে সুনেরাকে।মেয়েটা বাসায় চলেও যেতে পারে।

–“ভাবী,তাহুরা বাসায়?”
উমাইরের চিন্তিত সুর।
–“ভাইয়া ও আমাদের বাড়িতে।কি হয়েছে জানিনা।কেনো হঠাৎ সেখানে গেলো?একা বাসায় কখনো থাকেনি।আমি মাত্র বেরুচ্ছি সেখানে যেতে।”
সুনেরার স্বর ভেঙে আসছে।
–“আমি যাচ্ছি ভাবী।আপনি বাসায় থাকুন।”

মতামত জানিয়ে ফোন কাটে উমাইর।
তাহুরার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারলো না।আজ মেয়েটার সকল সাহস উদঘাটন করবে উমাইর।ক্রোধে উন্মত্ত হয় সে।শার্টের হাতা কুনুই অব্দি উঠায়।দ্রুত গতিতে বৃষ্টির মাঝে গাড়ি চালাচ্ছে।চারিদিকে বর্ষণের দরুণ আবছা পরিবেশ। অতি জলদি পৌঁছায় সে তাহুরাদের বাড়ির নিকট।
গাড়ি থামতে দেখে বৃষ্টির মধ্যে এগিয়ে আসে তাহুরা।বুঝলো বোন এসেছে।টুপটাপ বর্ষণে শরীর ভিজছে।
তৎক্ষণাৎ গাড়ি চিনলে চেহারায় মলিনতা ফুটে উঠে তাহুরার।

শব্দ করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে উমাইর।গাড়ি উঠোনে রাখেনি আজ। গেইটের বাহিরে রেখে আধ খোলা দরজা ঠেলে ভেতরে আসে।তাকে অবলোকন করে তাহুরা এক’দু পা পেছাতে থাকে।অস্ফুট শব্দে তাহুরা জিজ্ঞাসা করলো,
–“আপনি কেনো এসেছেন!”
–“কথা কানে যায়নি সকালে?একা একা বীর মহিলা সাজায় কারণ!”
গেইট লক করে উমাইর।বর্ষণের মাত্রা বাড়তে আরম্ভ হয় মিনিট একের মাঝে।
ভিজে যাচ্ছে দুই সত্তা।একজনের মনে শঙ্কা তো, অন্যজনের মনে দুশ্চিন্তা।
–“আপনি….আপনি চলে যান।”

তাহুরার কণ্ঠ কম্পিত।মুখশ্রী লালচে। ভেজা মুখে আরো আবেদনময়ী করে তুললো মেয়েটাকে।উমাইর হাত মুঠ করে।নিজ পানি মিশ্রিত চুল পিছনে ঠেলে,
–“একা একা থাকার কারণ?কেউ আসবে?বিশেষ কেউ?”
ক্রুড় হাসি উমাইরের অধরে। দুজনের অবয়ব ছোট উঠোনের মাঝে বৃষ্টির চাদরে আবৃত। উমাইরের কথা শুনে ভেতরটায় অস্থির অনুভব করে তাহুরা।ভাঙা সুরে আওড়ায়,
–“আপু আসবে।আপনি চলে যান।”

উমাইর নিজেকে সামলাতে পারে না।প্রখর রাগে তাহুরার আদ্র বাহু টেনে নিজ বক্ষদেশে ফেলে তাকে।তাহুরার কপাল শক্তপোক্ত উমাইরের বুকে জোরালো আঘাত পায়।সে শব্দ করে হালকা,
–“আহ্।”
–“শাট আপ! এতো তেজ দেখাচ্ছো কাকে তুমি?”
উমাইর তাহুরার গাল চেপে ধরে।
–“আপনার বাসায় যাবো না আমি।”

তাহুরা জানায়।হাত ছুটায় সে উমারের।কেনো যাবে সে?প্রেমিক পুরুষের মন পাবে না যেখানে,সেখানে গিয়ে লাভ কি?মাথামোটা তাহুরা উমাইরের সকল কথা ভুললো যেনো।
–“আমাদের বাসায় যাবে।চলো।”
উমাইর আবারও তার বাহু টেনে ধরলে,তাহুরা অস্ফুট কন্ঠে জানায়,
–“ধরবেন না আমাকে।”

এতটুকুই যথেষ্ট ছিলো উমাইরের ক্রোধের মাত্রা বাড়াতে।সাত পাঁচ না ভেবে তাহুরাকে ঘরের বারান্দায় ধাক্কা দিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরে উমাইর।বাঁ হাতে কোমর জড়িয়ে ডান হাতে কান টেনে ধরে তাহুরার।ততক্ষণে মেয়ের চক্ষু ভাসমান। নাক টকটকে লাল।ভেজা অবয়বের সুগন্ধে মাতোয়ারা উমাইর। বিপরীতে তাহুরা এই লোককে হারিয়ে ফেলবে বলে মরা কান্না জুড়িয়েছে।
–“তোমাকে ছোঁয়ার অনুমতি আমি নিবো না।তোমাকে আমি শুধু টাচ না,কি করি দেখো।তোমাকে ছুঁতে নিষেধ করার তুমি কে?”

মাতোয়ারা হওয়ার ভঙ্গিমায় কণ্ঠ জড়িয়ে আসে উমাইরের। সম্মুখে অবস্থানরত স্নিগ্ধ মেয়েটার বক্ষ দেশ হতে ওড়না সরলে উমাইরের দৃষ্টি থমকে যায়।ভেজা সুতির কাপড়ে মেয়েলি বক্ষ ভাঁজ স্পষ্ট দৃশ্যমান।উমাইর সূক্ষ্ম ঢেঁকুর গিলে।দৃষ্টি সরায়।তাহুরা দু হাত তুলে উমাইরের বুকে রাখে,
–“আপনি… ছুঁবেন না…।”
আরো ঘনিষ্ঠ হয় উমাইর।কথা থামে তাহুরার।তার ভেজা চুলের পানি ঘাড়ে বহমান তো আবার কিছু চুল কপালে ঝুলন্ত থাকায় সেথা হতে পানি তাহুরার গলায় পড়ছে।

–“বাঘের কাছে এসে,তাকে বলছো খেও না?”
পরপর উমাইর তার অধর ছোঁয়ায় তাহুরার গালে।পা বেঁকে আসে তাহুরার।কিন্তু নড়লো না সে।কারণ উমাইর তাকে শক্তভাবে আকড়ে ধরে আছে।
–“উমাইর… স্যার!”
তাহুরা আর্তনাদ করে খানিকটা।
তাহুরার চুলের গোছা নিজ মুঠোয় নেয় উমাইর।সেথায় জোরালো চাপ দেয়,
–“কল মি উমাইর। অনলি উমাইর।”

তাহুরা বড় দৃষ্টিতে নজর মেলালে উমাইর অধর গোলাকার করে চুমুর ভঙ্গিমা করে।তাহুরা আরো নুইয়ে পড়ে। ঘাড় ব্যথা হয়।তাও আজ মেয়েটা সাহস করে কিছু কথা আওড়ায়,
–“আপনার সাথে আমার যায় না, স্যার।আপনার যোগ্যতা আমাদের ম্যামদের সাথে।আজ যখন এক ম্যাডামের সাথে হাসছিলেন,তখন সবাই আপনার তারিফ করছিলো,স্যার।”

দমবন্ধ অনুভূতি।তাহুরা কথাগুলো কেবল উমাইরের ভেতরকার খবর জানতে বলে।বাহিরে তীব্র ঝড়েও উমাইরের শক্তভাব কমলো না বরংচ উষ্ণতায় উমাইরের শরীর ঝাঁকি দেয়।মেয়েটা উলটপালট কথা ভাবে কিভাবে?
–“ব্যস,কথা বলা শেষ?তুমি মাথামোটা সারাজীবন মাথামোটা থাকবে।আমার সাথে কে যায়,কে যায় না,আমাকে কার সাথে মানাবে সেটা আমি জানি।তোমার এতো চিন্তা কিসের।”

উমাইর এখনো চুল ছাড়েনি।তাহুরার ঘাড় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। লোকটা লম্বা হওয়ায় চোখে চোখ রাখাটাও দায়।তাহুরা উমাইরের বুকে ঠেলে।কিন্তু লাভ হয়নি এক দণ্ড।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
তাহুরা পলক ঝাপটিয়ে বাহিরে তাকায়।অনুভব করে উমাইর তার চুলের গোছা ছাড়ছে।মেয়েটা হাঁফ ছাড়ে অনেকটা।উমাইর আজ মাতালের মতো ব্যবহার করছে।তাহুরা বামে মুখ ফিরিয়ে বলে,
–“স্যার…সবাই হাস…”

উমাইর এইবার অদ্ভুত কান্ড করে।তাহুরার কোমর চেপে তাকে নিজ বুকের সহিত আলগিয়ে তুলে।ব্যালেন্স রাখতে তাহুরা আতংকে তার পা জোড়া পেঁচিয়ে ধরে উমারের কোমরে।দুজনের দেহ মিশে একাকার। মেয়েলী নরম বক্ষদেশের ছোঁয়া উমাইরের শক্ত বুকে লেপ্টে। খেয় হারাচ্ছে উমাইর।পরপর তার বিদ্ধস্তরুপী ভ্রু কুঁচকে লজ্জা নিবারণ করার চেষ্টায় থাকা প্রেয়সীর গলায় ঠোঁট ছুঁয়ে বিড়বিড় করে উমাইর,
–“আমার সাথে যাকে মানাবে তার কাছেই আছি।কল মি উমাইর,জান।”

উমাইরের ঘাড়ে রাখা তাহুরার হাত শীতল হয়ে আসে। জ্ঞান হারায় সরল মেয়েটা।
উমাইর জিহ্বা দ্বারা তাহুরার গলার স্বাদ নেয়।অমৃত মেয়েটা।তাহুরার জ্ঞান হারানোর ব্যাপারটাতে হাসে উমাইর। অথচ,এতক্ষণ যাবত কি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছে সে!

উমাইর ঠিকভাবে কোলে নেয় তাহুরাকে।গাড়িতে তুলে।বৃষ্টির কারণে আশেপাশে উঁকি দেওয়ার মানুষ নেই।ফ্রন্ট সিটে ঠিকভাবে বসিয়ে উমাইর ঘরের ভেতরে আসে।লাইট,দরজা সব ঠিক করে পুনরায় গাড়িতে বসে সে।ভেতর হতে তাহুরার কক্ষে খাটের উপর পাওয়া তাওয়াল, এপ্রোন,ব্যাগ এবং মোবাইল নিয়ে ফিরে সঙ্গে।আলতো করে তাওয়াল দ্বারা মেয়েটাকে জড়িয়ে নেয়।তাহুরার মাথা ঠেকায় সে নিজ উরুতে।
উবু হয়ে তাহুরার কপালে অধর স্পর্শ করে,

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৫

–“জান ডাক শুনে কেউ অজ্ঞান হয়,
মাথামোটা?”
পরপর উমাইরের অধর প্রসারিত হয়।গাড়ি সম্মুখে চলছে।বাহিরে তীব্র বর্ষণ, কোলের উপর আদুরে প্রিয় মানুষ। উমাইরের সত্তায় ভালোবাসার আগুন জ্বলে।তাহুরার ভেজা চুলে আঙুল বুলায়,
–“উমাইর কিন্তু খুব নির্লজ্জ তোমার বেলায়।তোমায় সহ্য করতে হবে সব।অজ্ঞান হওয়ার সময়টুকু পাবে না তখন,জান।”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৮