রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩৪

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩৪
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“আমি কলেজে।তুমি আজ বাসায় থাকো।শরীর বেশি খারাপ লাগছে?”
মোবাইল হাতে নিলে প্রথমত মেসেজখানা নজরে আসে তাহুরার।নবীন অনুভূতির তাড়নায় জর্জরিত সে।কক্ষের আলো টিমটিম।পর্দা জড়ানো জানালায়।কঠোর রোদ সেই পর্দার বাহিরে অপেক্ষারত।উঠে বসে তাহুরা।ভারী ভাব তনুয় ।চুলের মাঝে ভেজা আভাস।মুচকি হাসি অধর জুড়ে।বিছানা হতে নেমে আড়মোড়া ভাঙে মেয়েটা।ধীরে বিছানা গোছায়।ঘড়িতে নজর বুলায় কাজের ফাঁকে।সকাল এগারোটা।বুকের মাঝে তীব্র শব্দ।কেউ এখন অব্দি ডাকতে আসেনি তাকে?নাকি এসেও ফেরত গেলো!কি ভাবছে বাড়ির সবাই?

লাজে পুরো সত্তায় কিঞ্চিৎ কাঁপন।আঁখিতে ভাসে গত রাতের মধুর স্মৃতি।উমাইরের সেই উন্মাদনায় নিজেকে তার নিকট ব্যক্ত করেছে সারাজীবনের জন্যে।
ঘড়ির পানে ফের নজর দিয়ে দ্রুত তৈরি হয় সে।ওড়নার আবরণে ঢাকে মাথা সহ গলা, ঘাড়।পিন দিয়ে আটকে নেয় কিছুটা।ভালোবাসার চিহ্ন এখনো তাজা।মন পিঞ্জিরার অস্থিরতা এখনো কমলো না।কেবল ভেতরটায় উথাল পাথাল আভাস।
ধীর কদমে হাঁটে।আফিয়ার সাথে দেখা হয় মাঝরাস্তায়।আফিয়ার মুখশ্রী অন্যরকম। কেঁদেছে কি?তাহুরা কিছু জিজ্ঞাসা করবে ভাবলো,এর পূর্বে সুনেরা ডাকে তাকে।ঐযে বোন দাঁড়িয়ে কিছুটা দূরে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“উঠেছিস?নাস্তা করবি আয়।”
–“আসছি আপু।”
তাহুরা উল্টো পথে হাঁটে।
বোনের নিকট গেলে তার কপালে হাত রাখে সুনেরা,
–“ঠিক আছিস এখন?উমাইর ভাইয়া কলেজ যাওয়ার আগে বললো তুই একটু অসুস্থ,তোর নিজ থেকে ঘুম ভাঙা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে।”

–“ঠিক আছি আপু।”
ভনিতা ছাড়া উত্তর দেয় তাহুরা।লোকটা পারেও বটে।
পথিমধ্যে সুনেরা নানান আলোচনা করে।তারা কাপ্তাই গিয়ে কি করবে,না করবে সব ঠিক করেছে বোন।তাহুরা বোনের সকল কথা উৎসুক ভঙ্গিতে শুনে।জবাব দেয়।সে ঘুরতে বেশ ভালোবাসে।
পরমুহুর্তে মনে পড়ে সে উমাইরের পাঠানো মেসেজের বিপরীতে জবাব দেয়নি কোনো।
ডাইনিংয়ে বসলে,মেঘলা তাকে নাস্তা এগিয়ে দেয়।মাথায় হাত বোলায়,

–“সব শেষ করতে হবে।”
–“জ্বী মা।”
হাসে তাহুরা।মাথা নিচু ভঙ্গিতে মোবাইলের কিবোর্ডে আঙুল চালায় সে,
–” ঠিক আছি।আপনি নাস্তা করেছিলেন সকালে?”
বার্তা পাঠিয়ে নিজের কাজে মন দেয় তাহুরা।বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে।নজর ঘুরিয়ে বোনকে প্রশ্ন করে,
–“কাল কখন ফিরেছিলে?”
–“দেরী হয়েছে।আমি ডাকতে চেয়েছিলাম তোকে,কিন্তু পরে আর আসিনি।”
সুনেরা জবাব দেয়।

–“ওহহ।ভাইয়া অফিসে?”
–“হ্যাঁ।মাথা ব্যথা করছে তোর?চোখ ফুলে আছে অনেকটা।আয় ম্যাসাজ করে দিবো।”
মুশকিল।মহা মুশকিল।মাথার কাপড় পড়লে সর্বনাশ। সত্যি অর্থে তার মাথায় বড্ড পীড়া।তবে,সহ্য করে নিবে।নিজের লাজের কারণ বড় বোনকে দেখানো বড্ড বিব্রতকর হবে নিশ্চয়।
তাহুরা ডানে বামে মাথা নাড়ে,

–“উহু।ঠিক আছি।ঘুম কম হয়েছে তাই হয়তো এমন মনে হচ্ছে।”
–“আচ্ছা।”
বোনকে আরেকটা পরোটা এগিয়ে দেয় সুনেরা।তাহুরা বোনের পানে চায়।মুচকি হাসে বোন,
–“খেয়ে নে।তোর এনার্জি দরকার।”
এবার অট্টহাসিতে রূপ নেয় সুনেরার হাসি।তাহুরা ফ্যালফ্যাল চেয়ে রয়।ঘটনা বুঝে দমে খানিকটা।অতঃপর মুখ খুলে,
–“তুমি খাও।”

মুখ বাকায় তাহুরা। সুনেরার হাসি থামে না।বরংচ উঠে বোনকে জড়িয়ে ধরে।মাথার তালুতে আদুরে স্পর্শ করে,
–“বড় বোনেরা সব বুঝে।আমার তাহুরা বড় হয়ে গেলো।”
তাহুরা মিনমিন সুরে জবাব দেয়,
–“অনেক আগেই।”

দুপুরের খাবারের আয়োজনে সকলের সাথে টুকটাক কাজ করে তাহুরা।গরমের তাড়নায় অল্পতে ঘেমে অস্থির।ভোরে স্নান করলেও,এখন আবার স্নানের দরকার শতভাগ।ঘামযুক্ত জবজবে অবস্থা তার অত্যন্ত অপছন্দ।মেঘলাকে জানিয়ে সে রান্নাঘর হতে নিজ কক্ষে ফিরে।তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে গোসল সাড়ে।বালতিতে ভেজা কাপড় নেয়।বাসার সকল সহযোগী নিচ তলায়।অতঃপর সে সিদ্ধান্ত নেয় ছাদে নিজেই যাবে কাপড় শুকাতে দিতে।
যাওয়ার পূর্বে মোবাইলে নোটিফিকেশনের শব্দ হয়।বালতি রাখে মেঝেতে। উমাইরের মেসেজ স্পষ্ট,

–“পেইন হচ্ছে কোনো?আমি চারটা করে আসবো।লাঞ্চ করবো বাসায়।”
সঙ্গে সঙ্গে তাহুরা মেসেজের বিপরীতে পাঠায়,
–“আচ্ছা।”
–“প্রথম মেসেজ দেখো না মাথামোটা?চোখে সমস্যা আছে বলে মনে হয় না।”
তাহুরা কোমরের একপাশে হাত রাখে।লোকটার কোনো কথা উপেক্ষা করার জো নেই একদম।

–“একটু হচ্ছে।”
–“লাঞ্চ করে মেডিসিন নিও,বউ।ক্লাসে ঢুকছি এখন।”
–“জ্বী।সাবধানে আসবেন।”
তাহুরা উত্তর পাঠিয়ে আবারও আবৃত করে নিজেকে ওড়না দ্বারা। বালতি তুলে ছাদের পানে হাঁটতে আরম্ভ করে।
তীব্র রোদ গগণে। হলুদাভাবে চারিদিক চিকচিক।বাড়ির ছাদ বেশ পরিচ্ছন্ন এবং ফুলের গাছে সম্মুখ দিকের রেলিংয়ের অংশের দিকে আবৃত কিছুটা।তাহুরা রোদের প্রকোপ হতে বাঁচতে ঝটপট কাপড় ঝুলায় রশিতে।বালতি নিয়ে ফের ফিরতে নিলে আফিয়ার কণ্ঠ শুনতে পায়।
তার নাম ধরেই ডাকলো,

–“তাহুরা ভাবী,একটু আসবে এইদিকে?”
আফিয়ার মুখে ভাবী ডাক শুনে তাহুরা চমকিত,
বিস্মিত।আফিয়া ঠিক আছে তো?যদিও উমাইর তার সহিত কথা বলতে নিষেধ করেছে।কিন্তু, এমন অসহায় আবদার অবজ্ঞা করতে পারলো না তাহুরা।দ্রুত ছাদের অপর পাশে গেলে দেখতে পায় দোলনায় বসা আফিয়া।চোখমুখ বেশ রক্তিম।
তাহুরার নরম মন গলে পানি।সে আফিয়ার সম্মুখে থামে।পূর্বের কথা স্মরণে এলে তাকে সান্তনা দেওয়ার সাহস পায় না মেয়েটা।ভাঙা গলায় শুধায়,

–“আফিয়া আপু,আপনি ঠিক আছেন?এমন রোদে বসে আছেন কেনো?”
–“আমি খুব বাজে মেয়ে বুঝলে!নিজের কাজিনকে ভালোবাসা এক জিনিস,আর তাকে পাওয়ার জন্যে নষ্টামি করা অন্য জিনিস।আমি নষ্টামি করেছি।উমাইর ভাইয়াকে পাওয়ার লোভে আমি নিজেকে বাজে নেয় বানিয়েছিলাম।কিন্তু,সময়ের সাথে আমি পরিবর্তিত হলেও উমাইর ভাইয়াকে ভুলতে পারিনি।আমার জন্যে অনেক প্রস্তাব আসে, সবই আমি ওর জন্যে না করে দিই।জানো তাহুরা,একবার বাসায় কেউ ছিলো না।

আমি আমার বডি উপস্থাপন করে এমন বাজে কাপড় পড়েছিলাম শুধু উমাইর ভাইয়াকে আকৃষ্ট করতে, সেদিনও পারিনি আমি ওকে হাত করতে।উল্টো ওর মুখে বেহায়া, স্লাট শুনেছি।অথচ তুমি।কখনো অশালীন কি,কিঞ্চিৎ অগোছালো রূপে আমি তোমাকে দেখিনি।সেই তোমাতেই উমাইর ভাইয়া জান দিয়ে দেয়।ভালোবাসা পেতে লজ্জার আবরণ লাগে, নির্লজ্জদের কেউ পছন্দ করে না।”

আফিয়ার আঁখি ছলছল।
তাহুরা হতভম্ভ।আফিয়া এমন জঘন্য কাজ করেছে উমাইরকে পেতে?শরীর খানা ঝিমঝিম করছে।উমাইর কখনো তাকে এইসব বলেনি।এমনকি বাড়ির কেউই বলেনি। বলেও কি হবে?তাহুরা নিতান্তই শান্ত মেয়ে।আফিয়া উমাইকে পছন্দ করতো এতটুক জানে,কিন্তু এমন খারাপ কিছু করতে হয়েছে আফিয়ার কেবল উমাইরকে পাওয়ার আশায়?
রাগের বদলে তার করুণা হচ্ছে আফিয়ার জন্যে।

–“আপু পুরাতন কথা ভুলে যান। কাঁদবেন না।”
আফিয়াকে মুখে সান্তনা দেয় তাহুরা।আফিয়া দোলনা হতে সরে।হাত টেনে নেয় তাহুরার,
–“হ্যাঁ আজ থেকে সব ভুলে যাবো।মায়ের অনুরোধে সকালে উমাইর ভাইয়া আমাকে নানান কথা বুঝিয়ে বলেছে সবার সামনে।উমাইর ভাইয়াকে নিয়ে আমার মনে কোনো বাজে চিন্তা নেই।সে কেবল আমার ভাই এখন।নিবরাসের মতো।উমাইর ভাইয়া আগেও বুঝিয়েছিলো,কিন্তু বুঝিনি আমি।তবে,আর না।তোমাদের সুখী সংসারটা আরো সুখের হোক।যে আমার হবে না,তাকে নিয়ে সব ভাবনা শেষ।সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরের বার ভালো প্রস্তাব পেলে ছেলের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করবো,কথা বলবো।”

চোখ টিপে আফিয়া।কান্না মুখে হেসে উঠে।
মন ভালো হয় তাহুরার।এইবার সে সাহস পায় আফিয়াকে মন খুলে কিছু বলার।ধীর স্বরে সে বলে উঠে,
–“আপনার ভাইয়া নিশ্চয় আপনার ভালো চায় আপু।আমি যদি কোনো ভুল করি তাহলে সত্যি মন থেকে সরি বলছি,আফিয়া আপু।”
আফিয়া উঠে বসা হতে।জড়িয়ে ধরে তাহুরাকে,

–“তুমি ভালো,লক্ষ্মী মেয়ে তাহুরা ভাবী।আমরা আবারও আগের মতো হয়ে গেলাম তাহলে।ঠিক আছে ভাবী?”
–“হ্যাঁ আপু।”
খুশি হয় মেয়েটা।এতদিন একটা চিন্তায় থাকতো কিভাবে আফিয়া তার সাথে স্বাভাবিক হবে!আর আজ সব চিন্তা আকাশে উড়লো।
বাঁধন ছুটে দুজনের।আফিয়া গাল টানে তাহুরার,

–“ভেতরে চলো।লাল হয়ে যাচ্ছে তোমার গাল।”
তাহুরা,আফিয়ার সহিত নিচে নামে।একত্রে তাদের নিচে নামতে দেখে সুনেরা,দিলরুবা এবং মেঘলা বড্ড অবাক হয়।আফিয়াই প্রথমে তাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
–“মুভ অন করার সময় এখন।খেতে দাও আমাকে।”
দিলরুবা মেয়েকে আগলে নেয়।যত্ন করে খেতে বসায়।মেঘলা তাহুরার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
–“সব ঠিকঠাক?”
–“হ্যাঁ, মা।”

উমাইর বিকালে আসবে তাই তাহুরা মেডিসিন খেয়ে আর উপরে গেলো না।নিচ তলায় উমাইরের জন্যে অপেক্ষা করে বসার ঘরে।সেথায় আগে থেকে উপস্থিত ছিলো নিবরাস এবং আফিয়া। নিবরাস কথা বলছিলো স্বাগতার সহিত।আফিয়ার পাশে নিঃশব্দে বসে তাহুরা প্রহর গুনে।কবে আসবে লোকটা?ভোর রাতে উমাইরের বক্ষদেশে বিভোরে ঘুমানোর পূর্বে দেখেছিলো,আর দেখা নেই লোকটার।কলেজে যাওয়ার পূর্বে ডেকে দিলে কি এমন হতো?

–“ভাই কখন আসবে রে?”
ফোন কাটে নিবরাস।
–“চারটার দিকে আসবে বললো।”
নিবরাসের কথার জবাব দেয় তাহুরা।
–“আজকে একটা জবরদস্ত ম্যাচ আছে।উমাইর ভাই না থাকলে একটুও জমবে না।ভাইয়ার প্রিয় শত্রুর দলের সাথে খেলা।”

–“উনার শত্রু?”
তাহুরা অবাক হয়।
–“হ্যাঁ।মুরাদ হাসান।জানে দুশমন না আবার।ওদের ভার্সিটি লাইফ থেকে মুরাদ ভাইয়ের সাথে উমাইর ভাইয়ার একটু ঝামেলা লেগে থাকতো আরকি।”
–“ওহহ।”
তাহুরা ছোট্ট সাস ফেলে।
–“তোরা দেখতে যাবি আজকের খেলা?আপু যাবা?”
প্রশ্ন করে নিবরাস।

–“উমাইর ভাইয়া নিবে? ওর শত্রুর সাথে ম্যাচ হবে,সেই ম্যাচ ভাবীকে দেখাতে নিবে? বাহ,কি লজিক।”
হাসে আফিয়া।
হাসি ফুটে তাহুরার অধরেও।একবার এমন খেলা দেখতে গিয়ে বড্ড বিপদ হয়েছিলো। উমাইরের ধমকে কি কেঁদেছিলো সরল মেয়েটা!
–“আমি বাবা এইসব খেলা দেখায় নেই।বলতে গেলেও তোর উমাইর ভাইয়া আমাকে ফুটবল বানিয়ে ফেলবে।”
তীব্র হাসিতে বসার ঘর আলোড়িত।তাহুরার গালে পীড়া হয় হাসির দরুণ।
–“এতো হাসির কি?”
গম্ভীর সুরে আওড়ায় উমাইর।মুহূর্তে হাসি থামে তিনজনের।তাহুরা উঠে দাঁড়ায়।গত রাতের পর তাহুরা এখন দেখলো তার প্রিয় মানবকে।শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত বটানো।চুলের অবস্থা পরিপাটি।ভ্রু জোড়া সমান্তরাল।নজর মিললে তাহুরা দৃষ্টি সরায়।

–“আরে কিছু না ভাই।তোমাকে মিস করছিলাম আমি।”
নিবরাস বলে।
–“অসভ্য।”
উমাইর হালকা হেসে জবাব দেয়।
–“ভাই,আজকে কিন্তু ম্যাচ আছে।মুরাদ ভাইয়ের টিম।তুমি ছাড়া জমবে না।”
–“অফকোর্স আমি খেলবো। ম্যাচ শুরুর আগে চলে আসবো।”
উত্তর দিয়ে পরপর উমাইর তাহুরার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
–“খাবার দাও।”
–“দিচ্ছি।”

উমাইরের পিছে হাঁটে তাহুরা।পরক্ষণে খেয়াল করে উমাইর স্থির।ততক্ষণে তাহুরা তার স্থানে আসে,
–“ফ্রেশ হয়ে নিন।”
তাহুরা ঘাড় উচুঁ করে। উমাইর আশপাশ কি যেনো পরখ করে।অতঃপর হুট করে ঝুঁকে তাহুরার গালে অধর ছোঁয়ায়,
–“পেইন কমেছে?”

–“আরে…কেউ দেখলে?”
তাহুরা কিঞ্চিৎ দ্বিধায় ভুগে।
–“উত্তর যেটা জানতে চায়,সেটা দিলে বেশি ক্ষতি হয়?”
গাল চেপে ধরে সে তাহুরার।
তাহুরা ভ্রু কুঁচকায়।মাথা নাড়িয়ে বলে,
–“হু।”
–“গুড,মাথামোটা।”
তির্যক হাসে উমাইর।দ্রুত পায়ে অগ্রসর হয় সম্মুখে।

তাহুরাকে বাড়ির সাহায্যকারী বাকি কাজ সেরে নিবে বলে জানান দেয়।উমাইর তার অপেক্ষায় ছিলো ডাইনিং এ।তাকে আসতে দেখে এগিয়ে যায়। হাতের মুঠোয় নেয় প্রেয়সীর নরম হাত।নিজেদের কক্ষে পৌঁছালে তাহুরা ঘোমটা সরায়।চুলগুলো ছড়িয়ে দেয় পিঠে।উমাইর অফিস ব্যাগ হতে কিছু বের করে।উল্টো হেঁটে বউয়ের নিকট আসে।হাঁটু গেড়ে বসে তার সামনে।
হাতের ছোট বাক্স এগিয়ে দেয়,

–“কালকের জন্যে গিফট।কালকে দিতে পারিনি কিছু।”
তাহুরা বাক্স নেয়।খুলে সেটা।সুন্দর একটা আংটি।উমাইর নিজেই তাকে পড়িয়ে দেয়।ওষ্ঠ ছোঁয়ায় আঙ্গুলে,
–“পছন্দ হয়েছে?”
তাহুরা আবেগপ্লুত।দুহাত এগিয়ে জড়িয়ে নেয় তার অর্ধাঙ্গকে,
–“এত্তগুলো পছন্দ হয়েছে।”
–“কোনো অস্বস্তি হচ্ছে তোমার জান?”
উমাইর পিঠে হাত রাখে মেয়েটার।

–“নাহ।চিন্তা করবেন না।”
উমাইরের চুলের ভাঁজে আঙুল দ্বারা বিলি কাটে সে।
–“এক মিনিট,তাহু।”
উমাইর ফের তার অফিস ব্যাগ হতে আবারও জরুরী জিনিস নেয়।পানির গ্লাস হাতে তাহুরার নিকটে আসে।বলে উঠে,
–“সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট কাজটা ভুলে গিয়েছি।”
তাহুরা ভ্রু নাড়ায়,
–“কি কাজ?”
উমাইর তাহুরার মুখে ট্যাবলেট রাখে।পানি এগিয়ে দেয়,

–“খাও।”
পানি দ্বারা ট্যাবলেট গলধঃকরণ করে তাহুরা প্রশ্ন করে,
–“কি এটা?”
–“মুন্সী আঙ্কেল যেনো ডিসেম্বর পর্যন্ত জেনে থাকে,উমাইর বেশ ভদ্র ছেলে।এক কথার মানুষ।”
তাহুরা বুঝে উঠতে সক্ষম না হলেও,মিনিট এক বাদে বুঝতে পেরে কুঁকড়ে উঠে।মুখে হাত দিয়ে হাসে,
–“আপনি এমন ফাজিল!”
অট্টহাসির শব্দ হয় উমাইরের।

–“মুন্সী আংকেলের মেয়ের জন্যে,উনাকে দেওয়া কথাটা রাখতে পারলাম কই? ধেত!”
উমাইর তার টিশার্ট খুলে হ্যাঙ্গরে রাখে।মেয়েটা বুঝতে পারে উমাইর ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।সকালে ঘুমিয়েছে কই?
তবে মেয়েটার মন ভঙ্গুর হয়। উমাইরের পিঠে নখের ছাপ।তাহুরা নিজের নখের পানে তাকায়।জ্বলছে কি উমাইরের পিঠ?
–“শুনুন?আপনার পিঠে…”
–“আই’ম ফাইন,বউ। ডোন্ট প্যানিক।”

তাহুরাকে থামিয়ে জবাব দেয় উমাইর।বিছানায় উঠে। হাত টেনে তাহুরাকে নিজের বক্ষ পিঞ্জিরায় জড়িয়ে নেয়।দৃষ্টি তার লাজে আড়ষ্ট প্রেয়সীর পানে।ধীর ভঙ্গিমায় তাহুরার কামিজের আড়ালে অবস্থান নেয় উমাইরের হাত।দুজনের দৃষ্টি মিললে উমাইর হালকা ভঙ্গিমায় অধরে অধর ছোঁয়ায়,

–“আফিয়া কোনো খারাপ কিছু বলেছে?”
তাহুরা আঁখি বুঁজে।প্রিয়তমের সন্নিকটে সুখ অনুভব করে,
–“উহু,আপু বললো উনি এখন বিয়ের জন্যে প্রস্তুত।”
–“যাক,পাগলের পাগলামি থেমেছে এটাই ইনাফ।”
উমাইর হাসে।তাহুরা আলতো চড় দেয় উমাইরের পিঠে,
–“এভাবে বলবেন না।”
–“ওকে ওকে,জান।”
তাহুরা অনুভব করে তার প্রিয়তমের মোলায়েম স্পর্শ। এতো প্রশান্তিতে তারও চোখ বটে আসে যেনো।

একদিন পর,
–“বাবা তোকে বাড়ি ফিরতে বলছে।”
সুনেরা অকপটে জবাব দেয়।
–“হঠাৎ?কাপ্তাই যাওয়ার কথায় বাবা কি রাজি হয়নি?”
তাহুরা প্রশ্ন করে।ফিরে যাবে সে বাড়িতে?উমাইর বন্ধুদের সহিত বাহিরে গেলো এখনো আসেনি।তার ফিরতে দেরী হবে।সন্ধ্যায় উমাইর তাকে নিয়ে বেরিয়েছিলো মার্কেটে।কাপ্তাই যাওয়া উপলক্ষে কিছু কেনাকাটা করেছে।বিয়ের পর একসাথে ঘুরতে যাবে কোথাও,তাই উমাইর বেশ খুশি।অথচ তাকে কিনা ফিরতে হবে?

–“বলিস না আর।মা ফোন করেছে। ঐ শয়তান জাফর তোকে আর উমাইর ভাইয়াকে মার্কেটে দেখেছে একসাথে।এই নিয়ে বাড়িতে তার মাকে বুঝিয়ে বলে,একসাথে আমাদের বাড়ি আসে তারা।বড্ড কথায় শোনায় তারা বাবা,মাকে।”
সুনেরার জবাবে তাহুরার আঁখি বিস্ফোরিত হবে এমন ভাব।বাবা ঠিক আছে তো?
আঁখিতে কালো মেঘ জমে।তাহুরা বোনের হাত ধরে,

–“বাবা ঠিক আছে আপু?”
–“আছে।বাবা ওদের সাথে শক্ত ভাষায় কথা বলেছে।এও জানিয়েছে তোর আর উমাইর ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করা আছে।তাও ওরা নাকি মন্দ কথা বলছিলো।বাবা জানিয়েছে তোকে এখনই পাঠিয়ে দিতে।মা জাফরের মাকে আগে বললেও তোদের কথা, তাদের আক্কেলের বড় অভাব।”
সুনেরার জবাবে মুখে হাত চাপে তাহুরা,

–“ওদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।তাও কেনো আমাদের জীবনে ওরা…”
আর জবাব দিতে পারলো না সরল মেয়েটা।কেঁদে অস্থির।মেঘলা শান্ত করে তাহুরাকে,
–“আমি উমাইরকে ফোন করছি।তাহুরা তুমি উমাইরকে বলো বাসায় এসে যেনো তোমাকে দিয়ে আসে।আমি বললে আমাকে হাজারটা প্রশ্ন করবে।তুমি ওকে বুঝিয়ে বলো।”
তাহুরার অন্তর কাঁপে।লোকটা তার কান্নারত কণ্ঠ শুনলে মোটেও শান্ত থাকবে না।তাহুরা কিছু বলার পূর্বে উমাইরকে ফোন করে মেঘলা,

–“বাবা,তাহুরার সাথে কথা বল।”
তাদেরকে কথা বলার সুযোগ করিয়ে দিয়ে মেঘলা বেরিয়ে যায় সুনেরাকে নিয়ে।
অন্যদিকে উমাইর “হ্যালো,হ্যালো” করলেও উত্তর দিচ্ছে না তাহুরা।কান্নার দরুণ মেয়েটার গলা কম্পনরত। নাক টানার শব্দ বুঝলে উমাইর তেতিয়ে উঠে,
–“কি হয়েছে জান?প্রবলেম হচ্ছে কোনো?”
–“বা..বা বলেছে এখন বাসায় ফি..রতে।আপনি আসুন বাসায়।আমাকে দিয়ে আসবেন?”
থেমে জবাব দেয় তাহুরা।

–“এখন কেনো?কি সমস্যা?”
উমাইর ঝাঁঝালো সুরে আওড়ায়।
–“কিছু না।আপনি দিয়ে আসবেন প্লিজ?”
তাহুরা চোখ মুছে।
–“তোমার যাওয়ার দিন আজ না।আজকে যাওয়ার কারণ বলো।”
উমাইর নাছোড়বান্দা।

–“আমি…কিছু না,উমাইর।আপনি আসুন না।”
–“বুঝলাম অহেতুক কারণে কাদঁছো মাথামোটা।আসছি বাসায়।কারণ বলবে আগে।কারণ যদি আমার পছন্দ হয়,তবে বাসায় দিয়ে আসবো।আর যদি না হয়,তাহলে মুন্সী আংকেলের সাথে একটা বিরাট বৈঠকে বসতে হবে।”
তাহুরা হেঁচকি তুলে। উমাইরের মেজাজ বিগড়েছে বেশ বুঝলো সে।তাহুরা কিছু বলার পূর্বে শুনতে পায় উমাইরের সতর্ক বার্তা,
–“কান্না বন্ধ করো,মাথামোটা।সত্যিটা বলার সাহস করো আমি আসা অব্দি।”

আমার এই গল্প নিয়ে খুবই তোড়জোড় চলছে শুনলাম।আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর অভিযোগ,আমি গল্পে যা বিবরণ দিচ্ছি সেটার নেগেটিভ মিনিং বের করছে অন্যরা পোস্ট করছে,যেটার সাথে গল্পের মিনিংয়ের কোনো মিল নেই।আমাকে স্ক্রিনশটও দেখিয়েছে।আফিয়া,উমাইর এর একটা অংশ নিয়ে খুব বাজে কথা লিখেছে অন্যরা,যেটা মিন করে আমি কিছুই লিখিনি,অতটা জঘন্য লিখা আমি আমার গল্পে দিবো কখনো?নাহ জীবনেও নাহ।যারা আমার গল্প পড়ে না,এক দুই পর্ব নিয়ে মাতামাতি করে ওদেরকে বলার আমার কিছুই নেই।আমি আমার পেইজ,গ্রুপ আমার এই ছোট্ট দুনিয়ায় বেশ খুশি আছি।বাকি দুনিয়ায় কি হচ্ছে এটা আমার জানার বিষয় না।

আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমার জন্যে চিন্তা করছেন এটাই আমার জন্যে সৌভাগ্য।
একটা কথা কি জানেন,আমি যদি তিল লেখি,আর সেটাকে কেউ তাল বানায় আর অন্যরা যাচায় না করে তাদের সাথে মত দেয়, এটাতে আমার কোনো অভিযোগ নেই।আমি জানি আমি কি লিখছি তার মিনিং,আমি আর আমার পাঠক সমাজ জানলেই হবে।

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩৩

আজকে সত্যিকার অর্থে আমি মন্তব্যের আশা করছি এই গল্প নিয়ে,যারা ১-৩৪পর্ব পর্যন্ত পড়েছেন এই গল্পটা।এটার কিছু পর্বে এডাল্ট কনটেন্ট থাকবে এই কথা গল্পের শেষে বা পোস্ট করেও বলেছি আমি।আজকে সাইলেন্ট রিডার্সদের মন্তব্যও আশা করছি আমি।খুব শখের লিখা আমার এই #রেখেছি_তারে_মন_পিঞ্জিরায় গল্পটা।
অন্যের নিন্দা করে কেউ খুশি থাকলে,আল্লাহ্ তাকে হাজারো খুশি দিক।
অনেক সম্মান,শ্রদ্ধা আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের।বিশ্রী ভাষায় কেউ কমেন্ট করলে রিপ্লাই ছাড়া ব্যান করা হবে।
আমার রিডার্সরাই শুধু আমার প্রায়োরিটি।

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩৫+৩৬