রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩৩

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩৩
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“তুমি এমন অবস্থায় ঘুরতে যাওয়ার বায়না করছো আপু?সাথে আমাকে নিতে চাচ্ছো!বাবা জানলে বকবে।”
বোনের মাথায় তেল মালিশ করা অবস্থায় জবাব দেয় তাহুরা।মূলত সুনেরার তীব্র ইচ্ছা ঘুরতে যাবে দূরে কোথাও।তাই সে বোনকে আবদার জারি করলো।জুবায়েরকে রাজি করানো তার মিনিটের ব্যাপার।যতো সমস্যা করে সব তার ছোট বোন।তাই ইনিয়ে বিনিয়ে বোনকে রাজি করানোর চেষ্টায় সুনেরা।তবে,বাঁধ সাধে তাহুরা।মেয়ের মনে বাবার ভীতি।

–“ধুর,বাবা বকার কি?আফিয়া, নিবরাস,মা,বাবা,চাচা, চাচী সবাই যাবে আমার বিশ্বাস।”
সুনেরা বলে উঠে।
–“তোমার দেবর যেতে দিবে আমায়?”
প্রশ্ন করে তাহুরা।সাথে ঘড়ির পানে তাকায়।উমাইর আসার সময় এখন।আজ তাহুরার ছুটি হয়েছে দুপুরে।তাই সে আগে ফিরে।
বোনের বিরক্তির শব্দে তাহুরার দৃষ্টি নড়ে।শুনতে পায় বোনের কথা,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“উমাইর ভাইয়া যাবে।উনি ট্রিপ পছন্দ করে অনেক।আর আমরা যাবো কাপ্তাই। খুব কাছে।একদিন ঘুরতে গেলে দুনিয়া অশুদ্ধ হবে না।”
বোনের খিটখিট জবাবে তাহুরা হাসে।বোনের মাথার তালুতে আঙুল ঘষে,
–“আচ্ছা বেশ।আমার সমস্যা নেই।ঘুরতে যেতে আমি খুব পছন্দ করি আপু।তুমি কিন্তু জানো।শুধু মানুষগুলো আমার বেশ কাছের হওয়া প্রয়োজন।”
বোনকে মন খুলে উত্তর দেয় তাহুরা।
সুনেরা হাসে।আদরের বোনকে রাজি করাতে পেরে বড্ড খুশি সে।আহ্লাদিত সুরে বলে,

–“ইয়েস।সবাই যাবো,খুব মজা হবে।”
–“হ্যাঁ,আপু।”
তাহুরা বোনের মাথা মালিশের কাজ শেষ করে।হাত ধুয়ে ফের বিছানায় বসলে উমাইরের সুর ভেসে আসে,
–“তাহুরা…”
বোনের পানে দৃষ্টি তাহুরার। সুনেরা আলগোছে বলে উঠে,
–“যা।ভাইয়াকে কিন্তু এখন জানাবি ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে।”
–“আচ্ছা।”

মৃদু স্বরে জানায় সরল মেয়েটা।
মাথায় ওড়না চাপে তাহুরা।দ্রুত কদম ফেলে।কক্ষে প্রবেশ হলে অবলোকন করে উমাইরের থমথমে মুখশ্রী।তাহুরার উপস্থিতি টের পেয়ে উমাইর ইশারায় তাকে কাছে ডাকে।তাহুরা ইশারার পালন করে।
নিকটে এলে তাহুরার হাত টেনে ঠেকায় তার শার্টের বোতামে।রোজের ন্যায় তাহুরা শার্টের বোতাম খুলে দেওয়া অবস্থায় জিজ্ঞাসা করে,

–“নাস্তা এইখানে করবেন?নাকি নিচে?”
উমাইর সটান দাঁড়িয়ে।তাহুরার ঘোমটার আড়ালে বিদ্যমান ঘাড়ে হাত ছোঁয়ায়,
–“নিচে।মামী আসবে,মা আর মামী বেরুবে।মামীর সামনে নিজেকে অবিবাহিত দেখানোর দরকার নেই। রুমে বিনা দ্বিধায় আসবে।”
–“মামী জানলে আপনার সমস্যা…”

কথা পূর্ণতা পাওয়ার পূর্বে তাহুরার অধরের দখলদার উমাইর হয়।সাধ পূরণ হলে সেথায় উমাইর আরো দুখানা প্রেমময় স্পর্শের বিচরণ ঘটায় আবারও,
–“আমার বউ আমার সুখ।সমস্যা না।”
পরক্ষণে কপালে টোকা দেয় সে,
–“নাস্তা দাও।”

তাহুরা উমাইরের কোমরের দিকে শার্ট খিঁচে রয় তখনও।হুটহাট আক্রমনে অভ্যস্ত হলেও সামলানো দায় তার।লোকটার স্পর্শ ভারী স্পর্শ।
উমাইর হাসে।মোলায়েম ভঙ্গিতে প্রেয়সীর গালে হাত রাখে,
–“লজ্জা পেলে,লজ্জা ভাঙার উপায় বলবো?”
তাহুরা বুঝে।দু’কদম পেছনে আগায়।দ্রুত দরজার পানে ছুটে,

–“আমি নাস্তা দিচ্ছি।নিচে আসুন।”
উমাইর চেয়ে দেখে তার বউয়ের প্রস্থান।কক্ষের বাহিরে যাওয়ার সময় ঘোমটা টানতে ভুললো না তাহুরা। ঘাড়ে হাত বুলায় উমাইর।নিঃশব্দে অন্তর আওড়ায়,
–“আমার আদুরে।”

জাফরানের আগমনে ঘরের ভেতরকার অবস্থা রমরমা।সে এক দৌড়ে একূল,ঐকূল ছুটে যাচ্ছে।সাথে আছে তাহুরা।সে না দৌড়ালেও,জাফরানের সঙ্গে বেশ ভাব জমিয়েছে।কাজ সেরেছে মেঘলার সমেত।তাহুরাকে এই বাসায় দেখে নম্রতা অবাক হয়ে বেশ প্রশ্ন করলো। যার অনেকটা জবাব মেঘলা দেয়।মেঘলা তাকে সাবধান করে উমাইরের সম্মুখে যেনো তাহুরা এই বাড়িতে আসার ব্যাপারে কিছু না বলে।নম্রতা সব স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় মেনে নেয়।

উমাইর ড্রইং রুমে মামার সাথে নিউজ দেখতে ব্যস্ত।টুকটাক আলোচনা করছে তারা নানান বিষয়ে। আড় দৃষ্টিতে অবশ্য সে তাহুরার অবস্থান বুঝে নিচ্ছে নিভৃতে।তার বউ জাফরানের সহিত যেনো আরেকটা বাচ্চা।দুষ্টু,নরম বাচ্চা।অধরে ভেসে উঠে তির্যক হাসি।এর মাঝে লক্ষ্য করে জুবায়ের আসে সেথায়।তৈরি সে পরিপাটি।মামার সাথে আলাপের সমাপ্তিতে ভাইকে শুধায়,

–“বাহিরে যাচ্ছি তোর ভাবীর সাথে।তাহুরা আর তুই যাবি?”
উমাইর মাথা নাড়ায় দুদিকে।গম্ভীর মুখে জবাব দেয়,
–“যাবো না ভাই।কলেজের কাজ আছে কিছু।”
–“তাহুরাকে দিবি আমাদের সাথে?”
জুবায়ের আবারও জিজ্ঞাসা করে।
–“নাহ।বাসায় থাকুক।”

উত্তরের সমাপ্তিতে আবারও উমাইর টিভির পানে মনোনিবেশ করে।
–” তোকে আমি কাপ্তাই ট্রিপের কথা বলেছি,সেখানে যেতে হবে অবশ্যই।”
ভাইয়ের কথায় উমাইর জবাব দেয়,
–“একবার বলেছি যখন যাবো,তখন অবশ্যই যাবো ভাই।”
উমাইর সহসা বলে উঠে।
–“তাহু আপু, সরি সরি।আর পানি ফেলবো না।”

জাফরানের আদো বুলিয়ে মনোযোগ ভাঙে উমাইরের। বসার ঘর হতে দৃষ্টিতে আসে তাহুরা জাফরানকে কোলে নিয়ে সম্মুখে এগিয়ে যাচ্ছে।কামিজের ডান পাশ ভিজে।তার অপর হাতে আবার পানির গ্লাস।তার চলনের গতিতে উমাইর বিরক্ত হয়।হাঁটতে তার অস্বস্তি হচ্ছে।মামার পাশ হতে উঠে পড়ে সে আলগোছে।
তাহুরা,জাফরানের সমেত পৌঁছে ডাইনিং এরিয়ায়।

আফিয়া এবং তার মা উমাইরকে আসতে দেখে অন্যদিকে যায়। মা চায় না,আফিয়া উমাইরের রাগী ভাষার শিকার হোক।তার ভাবভঙ্গি কঠোর।হয়তো এখন তাহুরাকে না সে বকে বসে। দিলরুবার আবার তাহুরার প্রতি মায়া আছে।সেই মেয়েটা যে নিতান্তই শান্ত এক পক্ষী।

–“সমস্যা নেই বাবু।কিছু মনে করিনি আপু।”
জাফরানকে চেয়ারে নামিয়ে কপালে চুমু দেয় তাহুরা।কিঞ্চিৎ হাঁপিয়ে সে।জাফরানের স্বাস্থ্যর উন্নতি হয়েছে পূর্ব হতে।
–“পানি খাও মাথামোটা।মেজাজ কেনো বিগড়াও আমার?হাঁপাচ্ছো কিভাবে!”
পেছন হতে হুমকি আসাতে নড়ে উঠে তাহুরা। উমাইরের অবয়ব স্পষ্ট।টিশার্ট এবং ট্রাউজারে আবৃত মানব বড্ড মোহনীয়।ফুলে থাকা বাহু কেমন আর্জি জানাচ্ছে সেথায় লুটিয়ে পড়তে!
পলক ফেলে তাহুরা।উমাইর তাকে বকছে আর সে অত্র লোকের রূপে মোহিত।
বুকে হাত রাখে মেয়েটা। হাঁপিয়ে জবাব দেয়,

–“আমি ঠিকাছি।”
–“দেখছি কতো ঠিক আছো।জাফরান বেবি তুমি কেনো আমার বউকে কষ্ট দাও?”
উমাইর গাল টানে জাফরানের।
জাফরান যেনো চকমিত।সে পরপর আওড়ানোর চেষ্টা করে,
–“বউ!”
–“পঁচা বাচ্চা।”
উমাইর নাক টানে জাফরানের।
–“কামিজ চেঞ্জ করো যাও।”
উমাইর নির্দেশনা দেয় তাহুরাকে।মেয়েটা দাঁড়ালো না আর এক সেকেন্ড। হতদন্ত পায়ে ছুটে।পেছন হতে উমাইর আবারও চেঁচায়,

–“আস্তে যাও।”
বুকের গতি অস্বাভাবিক।ধকধক শব্দে আলোড়িত।কেমন হুংকার করে লোকটা।কামিজ পরিবর্তন করে তাহুরা নতুন সুতির কামিজ জড়ায়।মিনমিনে সুরে শুধায়,
–“জলদস্যু শুধু চেঁচায়।”
পরক্ষণে আয়নায় নিজের বুকের উপরের দিকে দাগ নজরে এলে লাজে আড়ষ্ট হয়।সেই জলদস্যুর কিঞ্চিৎ ছোঁয়া,যত্ন,ভালোবাসার জন্যে তো মেয়েটার মন প্রাণ ছিন্ন হয় সর্বক্ষণ।রক্তিম হয়ে থাকা গালে হাত বুলায় সে।আপনমনে বলে,

–“আপনি আমার প্রাণপ্রিয় জলদস্যু,উমাইর।”
দরজায় ঠকঠক শব্দ হলে,উমাইর ভেবে তাহুরা দরজা খুলে জিজ্ঞাসা না করে।সম্মুখে মামীকে অবলোকন করলে আঁধার নামে তার মুখে।নম্রতা বেশ অবাক যেনো।মূলত মেঘলার কক্ষ হতে সে উমাইরের কক্ষে এসেছে একবার চেক করতে,জাফরান উমাইরের সাথে এই রুমে কিনা।তাহুরাকে এমন অবস্থায় লক্ষ্য করে নম্রতা প্রশ্ন করে,

–“তুমি কি করছো এই রুমে?উমাইর,জাফরান আছে?”
মেয়েটা কেবল মাথা নাড়ে। মিথ্যে বলতে সে জানে না।কি জবাব দিবে!
–“বলো তাহুরা,তুমি একা এই রুমে কি করছো?”
–“আমার বউ,আমার রুমে থাকবে না তো কই যাবে,মামী?”
উমাইরের সহজ জবাব।জাফরান তার মায়ের কোলে যায়।নম্রতার অবাক হওয়ার ভঙ্গি আকাশ স্পর্শী।যেনো বিশ্বাস করতে বিরাট কষ্ট,

–“কি বলছো?আমি জানিনা কেনো?আপা কিছু বলেনি আমাকে।আপাও কি জানে না?উমাইর এইসব কি ঠিক?”
–“মা থেকে ঘটনা জেনে নিবেন মামী।অ্যান্ড, আই হোপ,আপনি কথাটা নিজের মাঝে রাখবেন।ডিসেম্বরে এইভাবেও অনুষ্ঠান হলে তখন সবার জানা হবে।”
উমাইর মামীর উত্তরের অপেক্ষা করে না।সোজা কক্ষের ভেতর আসে।
নম্রতা অবাকের পাশাপাশি খুশি হয়।তবে,অভিমান করে মেঘলার উপর।কিভাবে এতোবড় সুখবর সে জানালো না তাকে!নম্রতা তার ব্যাগ হতে হাজার টাকার নোট বের করে।গুঁজে দেয় তাহুরার হাতে,

–“আপাতত এটা রাখো আমাদের উমাইরের বউ।আমি মেঘলা আপার সাথে হিসাব কষবো বাহিরে।এখন চুপ করে থাকি।”
নম্রতা হাসিমুখে জবাব দিয়ে প্রস্থান ঘটায়।
তাহুরা অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে।মামী ব্যাপারটা কিভাবে নিলো তার আয়ত্বে এলো না।দরজা খোলা রাখলো।টাকাটা উমাইরের দিকে এগিয়ে দেয় সে,

–“মামী দিলো।”
–“খাও।”
উমাইর তার কিছু শিটস বের করছে ব্যাগ হতে।
তাহুরা টাকা নিজের পানে ফেরায়,

–“টাকা কিভাবে খাবো?”
তাহুরা হাসে।ভাবলো বিনিময়ে উমাইর হাসবে।কিন্তু হাসলো না।বরং শক্ত ভঙ্গিতে তার গাল চেপে ধরে,
–“পরের বার যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে এই রুমে কি করছো তুমি,উত্তরে যেনো আমি আজ যেটা বলেছি সেটা শুনি।নয়তো ভালো হবে না।”
পরপর উমাইর হাত সরায় মুখ হতে।তাহুরা ছলছল নয়নে চেয়ে রইলে আগমন হয় সুনেরার। উমাইরের শেষ বাক্য শুনেছে সে।

–“তাহু,আমি বেরুচ্ছি তোর ভাইয়ার সাথে।তোকে এতো করে বললাম যাচ্ছিস না।”
সুনেরা জানায়।
–“যা..ও আপু।সাবধানে থেকো।”
উমাইর ততক্ষণে শিট নিয়ে স্টাডি রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটে।
সে যেতেই সুনেরা বোনকে বলে,

–“তুই নিজের কথাগুলো অন্যকে সাহস নিয়ে জবাব দিবি।ভাইয়া তোকে কতো শেখায়।আর শুন,জুবায়ের উমাইর ভাইয়াকে ট্রিপের কথা জানিয়েছে।আমরা উনার সুবিধা মতো বৃহস্পতিবার বিকালে রওনা দিবো।আমি বাবা থেকেও মায়ের মাধ্যমে পারমিশন নিয়ে ফেলবো কাল।আমি অনেক হ্যাপি।”
বোনের খুশিতে ভরা আঁখিতে হাসির ঝিলিকের দেখা মিলে তাহুরার।সবকিছু ভুলে সে বোনকে জড়িয়ে ধরে,
–“তোমার খুশিতে আমার খুশি আপু।”

রাতের খাবারের সময় উমাইর স্টাডি রুম হতে বেরুলো না। দিলরুবাকে সে জানালো পরে খাবে।তাহুরা বেশ কয়েকবার ঘুরঘুর করলো স্টাডি রুমে।উমাইর তার প্রশ্ন তৈরিতে ব্যস্ত।চশমায় আড়ালে প্রিয়তমাকে পরখ করলো ঠিক।অধরে লেপ্টে থাকা হাসিটা আবছায়ায় রাখলো প্রেয়সীর সম্মুখে।আজ মেয়েটা বড্ড অধিকার দেখাক!
ঘড়িতে রাত এগারোটা। উমাইরের কাজ শেষের পথে।তাহুরার উপস্থিতি বুঝতে বেগ পেতে হলো না তার।মেয়েটা তার পিঠ বরাবর দাঁড়িয়ে।অবশেষে কাঁধে স্পর্শ অনুভব করে সে। ঘাড় বাঁকিয়ে ফিরলে তাহুরার নিষ্পাপ মুখশ্রী ভেসে উঠে।
মেয়েটা নরম সুরে প্রশ্ন করে,

–“খাবেন না?”
–“না খেলে সমস্যা আছে?”
উমাইর পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে।
–“আমিও খাইনি।”
তাহুরা জবাব দেয়।
–“আমি খেতে নিষেধ করেছি?”
–“খাইয়ে দিই?”

সহজ আবদার।কিভাবে নিষেধ করবে উমাইর?
মেয়েটা উমাইরের দূর্বল স্পট ধরতে সক্ষম।
কাঁধে রাখা তাহুরার হাত ধরে সে।নিজ গালে স্পর্শ করে তার তুলতুলে হাত,
–“রুমে নিয়ে আসো।আমি রুমে যাচ্ছি।”

তাহুরা বড্ড খুশি হয়।তার হাসিতে উমাইরের ভেতরকার সত্তা নড়ে।পুরুষালি মনোভাব আঁকড়ে ধরে।মেয়েটার হাসি নেশাক্ত।নিজেকে সামলায় উমাইর।
তাহুরা অপেক্ষা করে না আর।দ্রুত ছুটে।

ভাতের প্লেট নিয়ে রুমে আসে তাহুরা।দুজনের জন্যে একই প্লেটে খবর আনে সে।উমাইর সোফায়।সকল কাগজ, শিট,প্রশ্ন ঠিক করে ব্যাগে রাখছে।সেথায় যায় তাহুরা।হাসিমুখে খাবার শেষ করে দুজনে।আজিমকে ডাকলে উমাইর,উনি এসে প্লেট-গ্লাস নিয়ে যায়। তাহুরা হাত ধুয়ে কাজে লেগে পড়ে। উমাইরের কিছু শার্ট ব্যালকনি হতে এনে গুছিয়ে কাবার্ডে রাখে।
মেয়েটা তার হেয়ালি ভাবনায় খেয়াল করছে না,সোফায় বসা লোকটা বিভোর হয়ে তাকে দেখছে।

সুতির কামিজ উমাইরের বউয়ের তনুয় লেপ্টে।ওড়না পড়ে রয় বিছানায়।মেয়েটাকে এখন ছোঁয়াটা ঠিক হবে না।দৃষ্টি সরায় উমাইর।মোবাইলে মন দিতে চায়।হচ্ছে না।নজর আজ বেসামাল।মেয়েটার বুকে, ঘাড়ে তার দেওয়ার চিহ্ন।তাকেই যেনো ডাকছে।

হঠাৎ শব্দ হয় বাহিরে।অনেকটা বাজির ফুটার তীব্র আওয়াজ।তাহুরা মাত্র সোনালী রঙের বাতি জ্বালিয়ে বিছানায় যাচ্ছিলো।সেই শব্দে তার আত্মা বাহির হওয়ার জোগাড়।বেখেয়ালি তাহুরা এক দৌড়ে সোফায় বসে থাকা উমাইরের কোলে বসে।দুপা গুঁজে লেপ্টে যায় তার বুকে।জোরালো সুরে আওড়ায়,

–“কিসের শব্দ হলো?”
জবাব আসেনি কোনো।
উল্টো অনুভব করলো অন্য আকর্ষণ।উমাইর তার হাত ধরে মিশিয়ে নেয় নিজ সত্তায়।সোনালী আলোয় কক্ষের পরিবেশ উত্তাল।চারিদিকে কেমন রশ্মি ছড়াচ্ছে।সেই আলোয় উমাইর বিভোর হয় প্রেয়সীর মোহনীয়তায়।তার বউয়ের অবয়বে হারিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

–“কন্ট্রোল করছিলাম।কিন্তু,তুমি শেষ করলে সব।”
উমাইরের গলার স্বর পরিবর্তিত।এমন গভীর মোলায়েম শব্দে তাহুরার শিরদাঁড়া বেয়ে নতুন অনুভূতির স্রোত নামে।সে দ্রুত মাথা উঠায়।বুঝতে পারে উমাইর তার পানে নতুন নজরে চেয়ে।দুই বক্ষদেশের মিলন ঘটে।তাহুরার হাত অস্থির। কাঁপছে কি?হ্যাঁ। বুকটায় হরতাল শুরু।
তাকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় উমাইর।আতংকে তাহুরা তার ঘাড় খাঁমচে ধরে।শব্দ করে বলে,

–“আল্লাহ্,আমি পড়ে যাবো।”
উমাইর হাসে।তবে,আঁখির ভাষা অন্যরকম।আসক্তির প্রকোপে ছেলেটার আঁখি নিভু নিভু।
–“পড়তে দিবো না,জান।”
উমাইর তার গলার গভীর ভাঁজে স্পর্শ করে।জিহ্বার ছোঁয়ায় মাতাল করে তার শুভ্র প্রেয়সীকে।তাহুরার হাত পৌঁছে উমাইরের চুলে।সেথায় টানলে উমাইর অস্পষ্ট শব্দ করে,

–“আহ্,নিজেই আমাকে প্রভোক করছো,বউ।”
–“আপনি আমাকে নামিয়ে দিন না।”
নজর মিলে দুজনের।ভালোবাসার চাহিদায় হালাল প্রেমিক যুগল মাতোয়ারা।উমাইর তাকে নামায় না,বরং অধরের সহিত অধরের নতুনত্বের লীলা শুরু করে।তাহুরা বেহাল।উমাইরের এহেন ভঙ্গিমা তার সহ্যের বাহিরে।ছেলেটার হাত আজ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে যেনো।পীড়ায় মেয়েটার আঁখিতে অশ্রুর আগমন।

তাহুরার পিঠ ঠেকে বিছানায়।বস্ত্রের অবস্থা নাজুক।উমাইর নিজ টিশার্ট খুলে।স্পর্শ করে মেয়েটার সত্তা।বক্ষদেশের পীড়ায় তাহুরা কেঁদে উঠে গভীর সুরে।উমাইর থামে,নিজ গাল দ্বারা স্পর্শ করে অশ্রু নিঃসরিত বউয়ের গালে,
–“আজ থেকে এইসবই হবে।সহ্য করো প্লিজ জান।”

–“ভ….য় করছে উমা…ইর।”
উমাইর নিজেকে সামলানোর কথা ভুলেছে।সে আরো এগিয়ে আসে।অধর ছোঁয়ায় তাহুরার আঁখির উপরিভাগে,
–“কিসের ভয়?আমি সব সামলে নিবো বউ।”
–“আমার খুব..।”

–“হুম জান?তুমি মানা করলে হবে না কিছু।কিন্তু,আমি শেষ হবো আজ।জান…বেবি…”
উমাইর কপাল ঠেকায় তাহুরার কপালে।ভারী নিঃশ্বাসের সবটা তাহুরার মুখে বিচরণ করে।মিষ্টি সুবাসে তাহুরার মস্তিষ্ক ভার হয়।হাত বুলায় উমাইর তাহুরার চুলের গভীরতায়। উমাইরের ব্যাকুলতা তাহুরা বুঝে।সম্পর্ক তাদের হালাল।শরীরের চিনচিন ব্যথার বদলে,প্রিয়তমের সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করার ডিসিশন নেয় তাহুরা। নাক টানে সে। উমাইরের পিঠে হাত রাখে আলগোছে।

ফ্যাচফ্যাচ সুরে সে বলে,
–“ভালোবাসি উমাইর।”
প্রিয়তমার ইশারায় উত্তর বুঝে উমাইর।মাথা সরায় না সে।আরো কিছুক্ষণ সময় সেভাবেই রয় সে।পরক্ষণে পূর্বের অবস্থায় ফিরে প্রেমিক পুরুষ।প্রেয়সীর অধরে দীর্ঘ চুমুর আলিঙ্গন শেষে কোমরে হাত পেঁচিয়ে নেয় সে।অস্থির জড়িত কন্ঠে বলে উঠে,
–“আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙানোর শাস্তি পাও বউ। আই লাভ ইউ,বেইবি।”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩২

আমি বেঁচে থাকলে গল্প পাবেন।দেরী করে গল্প দিই সবাই জানেন।অনেক কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,কিন্তু কিছু বললাম না।মনের কথাগুলো মনে থাক।
পূর্বের পর্ব ভুলে গেলে আবারও পড়ে নিন।

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩৪