যদি তুমি বলো পর্ব ১৭

যদি তুমি বলো পর্ব ১৭
আফনান লারা

কিছু সময়ের মাঝেই রিদম এসে হাজির হয় সেই ব্যাগটা নিয়ে।ইশান ওকে তিথির রুমে দিয়ে আসতে বলে ব্যাগটা।
রিদম দরজা খুলতেই দেখে তিথি তেড়ে আসলো কিসব বলতে বলতে।একটা লাইন ও রিদম বোঝেনি।শেষ লাইনটা বুঝতো কিন্তু ইশানের জায়গায় রিদমকে দেখে তার মুখ বন্ধ হয়ে যায়।

রিদম ব্যাগটা এগিয়ে ধরে বলে,’আমি কার্তিক আরিয়ান বলছি।এই নিন আপনার ব্যাগ’
তিথির হাসি আসলোনা।মনের ভেতরের চাপা কষ্টটা তাকে হাসতে দিচ্ছেনা।তার পরেও সে জোর করেই মুচকি হাসলো।যাতে রিদম কিছু টের না পায়।
সত্যিই রিদম টের পেলোনা।তিথির কাছ থেকে এসে সে ইশানের পাশে বসে পড়ে।
বিয়ের গেট সাজালেও রিসিপশান হবে কমিউনিটি সেন্টারে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

রিদম ইশানের পাশে বসে নিজেকে কেমন যেন গরীব মনে করছিল।ইশানের চোখের সামনে ভেসে উঠলো রিদমের ছোটকালের কথা।ইশান যখন তিথিকে প্রথম প্রথম চিনতো তখন রিদম ছিল চার বছরের শিশু।প্রতি বিকেলে ওকে কোলে নিয়ে তিথি ক্ষেতের মাঝ দিয়ে হাঁটতো।সেই সময়টা ইশান নিজের কলিজা ঠাণ্ডা হওয়া অবধি তিথিকে দেখতো।
রিদম ছিল নাদুসনুদুস বাচ্চা।তিথির সাথে ওকে দেখলে ইশানের হাসি পেতো।কারণ রিদমের চেহারাটাই ওরকম ছিল।পুরো তিথির কপি,জাস্ট জেন্ডার আলাদা।

ইশান সোফায় হাত মেলে বসে বললো,’এখন আর তিলের খাঁজা খাও?’
রিদম চোখ বড় করে ইশানের দিকে তাকালো।মা বলতো ছোট থেকেই নাকি সে তিলের খাঁজা খেতে পছন্দ করে।এই বড়বেলায় এসেও সে তিলের খাঁজা খায়।কিন্তু এ কথা ইশান ভাই জানলো কি ভাবে?তিথি বলেছে নাকি?
রিদমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশান তার একটা লোককে ডেকে রিদমের জন্য এক বক্স আনিয়ে রাখা তিলের খাঁজা টেবিলের উপর রাখতে বলে।

রিদম তো মহা খুশি।এতই খুশি যে সে ইশানকে ধরে চুমুই দিয়ে দিলো।
তখন ইশান একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,’শালাবাবু। এর বিনিময়ে তোমায় যে একটা কাজ করতে হবে’
‘কি বলুন।করে দিবে অবশ্যই’
তখন ইশান একটা নেটের ওড়না রিদমের দিকে ধরে বলে,’তোমার আপুকে সারপ্রাইজ দেবো বলে আর দেয়া হয়নি।দিয়ে আসবে?খবরদার আমার নাম নিবেনা।’

রিদম এক সেকেন্ড ও দেরি না করে ওড়নাটা নিয়ে তিথির কাছে চলে আসলো।তিথি শাড়ীর কুচিতে সেফটিপিন লাগাচ্ছিল।রিদম দরজায় টোকা দিয়ে বলে,’টুকু আমি।দরজা খুলো।কাজ আছে’
তিথি আঁচলটা পরে,কাছে এসে দরজা খুলতেই রিদম ওর হাতে একটা ওড়না ধরিয়ে দেয়।এরপর বলে,’এই ওড়নাটা আপুরা বাহিরে রেখেছিল,আলাদা প্যাকেট।নাও ধরো,দিতে ভুলে গেছিলাম’

তিথি ওড়নাটা নিয়ে বিছানার উপর রাখে।এরপর শাড়ী সম্পূর্ণ পরা শেষ করে মাথায় সেই ওড়নাটা পরে নেয়।আয়নায় নিজেকে দেখে হাসিমুখ নিয়ে সে রুম থেকে বের হয়।কিছুদূর যাবার পর ওর গলার দিকটায় চুলকানি শুরু হয়।শুরুতে সে ভেবেছিল নতুন শাড়ী পরায় এত অস্বস্তি লাগছে।কিন্তু তার এই অস্বস্তি এখন অসহ্যকর হয়ে উঠেছে।সে রুমে আবার ফেরা ধরতেই ইশানের আত্নীয় যারা ওখানে উপস্থিত ছিলেন তারা তিথিকে চেপে ধরলো।
তিথি হাত দিয়ে বারবার গলার দিকটা চুলকাচ্ছে,পিঠের দিকটা চুলকাচ্ছে।এরই মাঝে সেই দিকগুলো লাল টুকটুকে হয়ে গেছে।

ইশান সোফায় বসে বসে তিথির এমন করুণ দৃশ্য দেখছিল।
ইশানকে খুবই খারাপ লোক মনে হলেও আজ থেকে কত গুলো বছরআগে ইশানের থেকে মুক্তি পাবার জন্য তিথি ঠিক একই কাজ করেছিল।
ইশান সেগুলো মনে করে হাসতে হাসতে টিভি দেখছে।
তিথির রজনীগন্ধা ফুলে এলার্জি আছে।

আর ইশান সেটার পারফিউমই ওড়নাটাতে মাখিয়ে দিয়েছিল।
একটা সময়ে আর থাকতে না পেরে সবার সামনে থেকেই তিথি ছুটলো ইশানের রুমের দিকে কিন্তু ওর পথ আটকে দাঁড়ায় মিসেস আরাফাত।তিনি রাগী চোখে চেয়ে থেকে বললেন,’সবাই তোমায় দেখে গিফট দিবে।এসেই এত পালাই পালাই করছো কেন?যাও ইশানের পাশে বসো’

তিথি আর যেতেই পারলোনা।ইশানের পাশে এসে বসলো তাই।কিন্তু তার গলা পিঠ যেন এলার্জি নিয়ে চলে যাবে।বারবার হাত দিয়ে চুলকাচ্ছিল সে।সবার আগে ইশানের ফুফু রত্না হানিফ এসে তিথির গলায় মোটা স্বর্ণের চেইন একটা পরিয়ে দিতে গিয়ে দেখলেন তিথির গলায় লাল রঙের মোটা দাগ।

দাগটা এলার্জির জন্য হলেও তিনি অন্য কিছু মনে করে মুচকি হেসে চেইনটা পরিয়ে সরে গেলেন।
এরপর আসলেন ইশানের ছোট দুষ্টু একটা ফুফু।তিনি তিথির গলায় একই দাগ দেখে সবার সামনে বলে উঠলেন,’ইশান!তোর কি বিবেক নাই?বৌভাতের দিন বউয়ের গলা প্রতি টা মানুষ দেখে,বিশেষত মহিলা কমিটির সবাই।এমন করে কেউ দাগ রাখে?’

এই শুনে ইশানের চোখ কপালে।সে চট করে তিথির দিকে তাকায়।তিথি তখনও গলা চুলকাচ্ছিল।ইশান ওর গলায় দাগ দেখে চমকে যায়,আর চুপ করে থাকে।ফুফু নিজের কাজটা করে চলে গেছেন।এদিকে তার কথা নিয়ে সবাই খিলখিল করে হাসছে।
তিথি আর থাকতে না পেরে উঠে চলেই গেলো।তখন ইশানের মা রেগে রেগে বললেন,’তুই না ওরে দু চক্ষে দেখতে পারিস না?

তাহলে এইসব কি?তুই বোকা নাকি আমিই আসলে বোকা!’
এই বলো তিনিও চলে গেলেন হনহনিয়ে।ইশান কোনো পাত্তা দিলোনা কারোর কথায়।কারণ সে তো জানে সে তেমন কিছুই করে নাই।এটা যে এলার্জির কারণে হয়েছে তা ইশান বেশ ভালমতন বুঝতে পেরেছে।
তিথি রুমে এসেই তড়িঘড়ি করে শাড়ীটা বদলে নেয়।মাথার ওড়নাটাকেও সরিয়ে ফেলে।এরপর ছুটে শাওয়ারের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়।তার সারা শরীর চুলকাচ্ছে। রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধ তার নাকে এসেছিল কিন্তু সে ভাবলো সেই ফুল তো ধারের কাছে কোথাও নেই।হয়ত ভু্ল হচ্ছে।

পাগলের মতন ছুটে গোসল করতে আসার পথে কিছুই তো আনা হলোনা।এদিকে দরজাও মনে হয় খোলা।
তিথি পানির নিচে দাঁড়িয়ে এসব নিয়েই ভাবছিল। অনেক ভেবে দরজাটা একটু খুলে সে বাহিরে তাকাতেই দেখে ইশান তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে কিসের যেন কাগজ নিচ্ছে। তিথি ওকে আচমকা দেখে ভয় পেয়ে আবারও দরজা লাগিয়ে দিলো।কি করে সে এখন বের হবে!

পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হবার পর তিথি আবারও দরজা একটু খুলে।
এবার দেখে ইশান কোথাও নেই।কিন্তু তামিয়ার যে শাড়ীটা ইশান ওকে এনে দিয়েছিল সেটা বিছানার উপর গুছিয়ে রাখা।
তিথি দেখলো দরজাটাও টেনে গেছে ইশান।

সে খুশি হয় তাতে।চটজলদি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আগে দরজাটা লাগিয়ে সে দ্রুত শাড়ী পরে নেয়।এরপর চুলগুলো মুছে এলার্জির জায়গায় ভেসলিন লাগিয়ে সে রুম ছেড়ে বের হতেই মুখোমুখি হয় মিসেস আরাফাতের।উনি রেগেই ছিলেন কিন্তু এত মানুষের ভীড়ে তো কিছু বলা যায়না।তার পরেও বললেন,’এইবার আবার মুখ ডুবাইও না।ভাল করে পিঠ কাঁধ ঢেকে যাও।আমার শ্বশুর বাড়ির অনেক লোক এসেছে ।’

তিথি মাথা নাড়িয়ে ওদিকেই যায়।ইশান কোথাও ছিল না।
যেতে যেতে তিথির হঠাৎ সেইদিনের কথা মনে পড়ে যায় যেদিন সে ইশানের এলার্জির একটা ফুল ওকে উপহার দিয়েছিল।সেদিন ইশানের যে হাল হয়েছিল!তিথি খুব খুশি হয়েছিল সেদিন।তার সেই অট্টহাসি আজ তাকে সবার সামনে ছোট করলো।

‘আচ্ছা এটাতে কি ইশানের হাত আছে?
ওড়না তো রিদম দিয়ে গেছিলো।ইশানের হাত থাকবে কি করে!’
তামিয়ার নতুন শাড়ীটাতে তিথিকে অনেক ভাল লাগছিল।সবাই এবার ভাল করে ওর প্রশংসা করছে।
ইশান গালে হাত রেখে টিভিই দেখছে শুধু।তখন তামিয়া এসে ওর পাশে বসে।এরপর বলে,’মাহফুজুর রহমানের গান তুই দেখছিস?নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিনা।এটা সত্যিই নাকি বউকে দেখে হীতাহীত জ্ঞান হারিয়ে বসে আছিস?’
এ কথা শুনে ইশান বললো,’হাসবেনা।উনি আসলেই সুন্দর গান করেন।জীবনের মায়া চলে গেলে, উনার গান শুনে সে মায়া বাপ বাপ বলে ফিরে আসে।একবার শুনে দেখো’

‘তোর তো জীবনের মায়া ফিরে এসেছেই।তাহলে কেন শুনছিস?’
‘খুশিতে।তুমি যাবে?’
তামিয়া হাসতে হাসতে চলে গেলো।
ইশানদের রান্নাঘরে সেই সব খাবার আছে যেগুলো খাওয়ার জন্য রিদম প্রতিদিন মাটিতে গড়াগড়ি খায়।
সে আর দেরি না করে সব নিয়ে এক এক করে খেয়ে চলেছে সেজন্য।

যদি তুমি বলো পর্ব ১৬

তখন একজন কাজের লোক এটা দেখে ওকে বললো,’এইসব হাবিজাবি খেয়ে যেন পেট না ভরায়।কারণ বৌভাতের খাবারে আরও ভারী আয়োজন করা আছে এগুলো খেলে আর দুপুরের খাবার সে খেতে পারবেনা।

যদি তুমি বলো পর্ব ১৮