যদি তুমি বলো পর্ব ১৮

যদি তুমি বলো পর্ব ১৮
আফনান লারা

তিথি তামিয়ার শাড়ীটা পরে রুম থেকে বের হয়।এরপর সবার মাঝে এসে দাঁড়ালেও ইশান কাছে আছে তা জেনেও সে ভুল করেও ওর দিকে তাকায়নি।যেন সব রাগ তার হবার কথা।
ইশান ওর এই জেদে মোটেও পাত্তা দিলোনা।সে চুপচাপ টিভি দেখছিল।কিছু সময় বাদে ভাঁড়া করা প্রাইভেট কার সব আসতেই আত্নীয় স্বজন সবাই গাড়ীতে উঠা ধরেছে এক এক করে।

ইশান আর তিথি আলাদা গাড়ী করে যাবে।তিথি তাই রিদমকে বলেছিল তার সাথে গাড়ীতে উঠতে কিন্তু ইশান তামিয়াকে দিয়ে রিদমকে সরিয়ে ফেলেছে।তার আসলে অন্য প্ল্যান ছিল।
গাড়ীতে ওঠার পরেও তিথি ইশানের দিকে তাকায়নি।সে চুপ করে ফোন টিপছিল আর তানিয়াকে কল দেয়ার চেষ্টা করছিল।কেনো রিদম আসে নাই সেটা নিয়ে কথা বলার জন্য।
ইশান কমিউনিটি সেন্টারে না গিয়ে অন্য পথে চলেছে।তিথি তো আর এতসব কিছু জানেনা।
গাড়ী চালাতে চালাতে একটা সময়ে ইশান বললো,’আদিলের হাত ধরার খুব ইচ্ছা ছিল তোর তিথি?’
তিথি কিছু বলেনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

ইশান আবার বলে,’ওরে জড়িয়ে ধরতে মন চাইতো তোর?’
তিথি এবারেও কিছুই বলে নাই।ইশান এবার হঠাৎ গাড়ী থামিয়ে দেয়।তিথি ফোন টিপছিল দেখে রাগে সে ওর হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলো দিলো।তখন তিথি চোখ রাঙিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজেই গাড়ী থেকে নামতে নিতেই ইশান গাড়ীটা পুনরায় স্টার্ট দিয়ে ফেলে।তিথি তার ফোনটা নিতেই পারলোনা।এবার ওর ভীষণ রাগ হলো।চিৎকার করে বললো,’আপনার সমস্যা টা কি!’

‘সমস্যা?আমার সমস্যার অভাব আছে নাকি।কতবার কত কি জিজ্ঞেস করতেছি উত্তর দেয়া প্রয়োজন মনে করছিস না!’
‘আমার ইচ্ছা আমি উত্তর দিব না।এগুলা উত্তর দেয়ার মতন প্রশ্ন না।আমি আদিলের সাথে কি করছি,কি করতে চাইছি এসব জেনে আপনি কি করতেন?ধরুন,ওর সাথে রাত কাটাইছি।তাতে আপনার কি?’
এটা শুনে ইশানের মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে, সে গাড়ীটা থামিয়ে দেয় তখনই।
জায়গাটি ছিল হাইওয়ে তে।ইশান গাড়ী থেকে বের হয়ে তিথিকেও টেনে গাড়ী থেকে বের করালো। এরপর বললো,’এখান থেকে যাবার মতন কোনো রিকশা পাবিনা।এটা হাইওয়ে!হেঁটে হেঁটে রিসিপসানে আসবি’

এটা বলে ইশান গাড়ীতে উঠে চলে যায়।
তিথি মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কোনো উপায় না পেয়ে সে একাই হাঁটা ধরে।হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ যাবার পর সে একটা সিএনজির দেখা পায়।এরপর সেটাতে উঠতে নিতেই সিএনজির লুকিং গ্লাসে ইশানের কারের প্রতিচ্ছবি দেখে সে সিনএজি থেকে নেমে বললো,’আপনাকে আরেকজন পাঠিয়েছে তাই না?লাগবেনা আমার দয়া’

এই বলে তিথি নেমে যায়।ইশানই পাঠিয়েছিল এটা সঠিক।এবং সে নিজের চোখে দেখেওছে তিথি যে নেমে পড়লো।
তিথি সোজা হাঁটছে।হাঁটতে হাঁটতে সে হঠাৎ থেমে যায়।
আসলে সে রাগ কেন করছে?
ইশান তো তার সাথে এমন ব্যবহার করার কারণ হলো তার অতীতে করা দূর্ব্যবহার।ইশান তো আর এমনি এমনি এসব করেনা।

সে থেমে যাওয়ায় ইশান ও তার কারটা থামিয়ে নেয়।
অনেক ভেবে তিথি সোজা গিয়ে সিএনজিটাতে উঠে পড়লো আবার।কিছু আর বললোনা।
সবাই ওদের দুজনের অপেক্ষাতেই ছিল।
তিথিপরে এসেছে,ইশান আগেই এসে গিয়েছিল।
তিথিকে তার মা বকাবকি করছিলেন দেরি হওয়ার জন্য।কেউ আসলে জানেনা তিথি কিভাবে আসলো।সবার ধারণা তিথি কার থেকে নেমে আসতে দেরি করেছে।

সে স্টেজে উঠে ইশানের পাশে বসতেই ইশান বললো,’তোর বোঝা উচিত দেমাগ আসলো কার দেখানো যুক্তিযুক্ত ‘
এই বলে সে সরে বসে।দূর থেকে তিথির বাবা মা দারুণ হাস্যজ্জ্বল চোখে চেয়ে চেয়ে দুজন দুজনকে বলছেন তাদের মেয়েকে অবশেষে যোগ্য পাত্রের হাতে তারা তুলে দিতে পেরেছেন।
তিথি চুপ করে বসে ছিল।হঠাৎ ভীড়ের মাঝে সে আদিলকে দেখে।আদিল কাছে এসে ইশানকে জড়িয়ে বললো,’স্যার,,, ভাবী কিন্তু সেই!’

এই কথা শুনে তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।সব কিছু কেমন করে যেন স্বচ্ছ কাঁচের মতন মনে হচ্ছে।আদিল কি তাহলে ইশানেরই লোক!
তিথির ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ইশান বলে ফেললো আদিল তার অফিসের একজন কর্মচারী।সে ইশানের কোম্পানিতে বাংলাদেশের এজেন্ট হয়ে কাজ করতো।
তিথি সবেমাত্র মনে এসে গেলো আদিল ও কোনো একটা নুডুলসের ফ্যাক্টরির কঘা বলেছিল।
সব খোলসা হচ্ছে একের পর এক।

তিথি কিছুই বলেনা।মনে মনে সব হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সে।
রিসিপশানের সব কাজ শেষ হবার পর ঠিক হলো ইশান আর তিথি আজ তিথিদের বাসায় যাবে,এটাই নিয়ম।
কিন্তু ইশান বেঁকে বসলো।সে নাকি চায় তিথিকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে।
তিথির বাবা মা এ কথা শুনে তারা আরও মহা খুশি হলেন।
কিন্তু খুশি হতে পারলোনা তিথি।কারণ সে বেশ জানে ইশান মোটেও তাকে ভালবাসায় ঘোরাতে নিচ্ছেনা।বরং নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে নিচ্ছে।

তিথির চাহনি দেখে ইশানের শুধু দুষ্টু হাসিই পাচ্ছে।এর বাহিরে কিছুই না।
তিথি হঠাৎ করে বলেই দিলো তার শরীর খারাপ করছে।সে বাসায় ফিরবে।কিন্তু তার কথায় বাধা দিয়ে ইশান ও বলে দিলো ঘুরতে যাবার আগে হসপিটাল হয়ে তারপর যাবে।

মানে সে কিছুতেই তিথির কথা রাখবেনা।এদিকে পরিবারের বাকিদের চাপে পড়ে তিথি আর কোনো বাহানাই দিতে পারলোনা।অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যে যার মতন চলে যাবার পর ইশান তিথিকে নিয়ে চললো অন্য এক অজানা পথে।তিথি গাল ফুলিয়ে শুধু সামনে তাকিয়ে দেখছে পথটা আসলে কোন দিকে যায়।
অনেকটা পথ পাড়ি দেবার পরেও যখন সে দেখলো ইশানের কার থামছেনা তখন সে মুখ ঘুরিয়ে বললো,’জেলে নিচ্ছেন আমাকে??’

‘এত শান্তির জায়গায় কেন নিবো বল?’
‘ওহ!তার মানে জেলের চাইতেও নিকৃষ্ট কোনো জায়গা আছে?’
ইশানের ঠোঁটের কোণায় হাসির আভা দেখা গেলো।পাঁচ তারকা হোটেলের গেট দেখে তিথি হাঁপ ছেড়ে বেঁচে যায়।যাক তাহলে আজ আর তাকে টর্চার করা হবেনা।

সে খুশি হয়ে ইশানের পিছু পিছু চললো।ম্যানেজারের কাছে হোটেল রুম নেয়ার সময় ইশান বারতি টাকা আর একটা প্রেস্ক্রিপশান দিয়ে বললো তারা যেন এগুলো এনে রুম সার্ভিসের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়।কথাটা খুব ধীরে ধীরে বলেছিল।তাও তিথি একটু একটু শুনেছে যে ওগুলো ফার্মেসীর দোকান থেকে আনার জন্য বলছে ইশান।
তিথি চোখ বড় বড় করে ঢোক গিলে ওখানকার সোফায় বসে পড়ে।সে কিছুতেই ইশানের সাথে একা রুমে যাবেনা।তার স্বামী হলেও, কেমন যেন মনে হয় আজকে ইশান ওকে একা পেয়ে উল্টো পাল্টা কিছু করবে।

ইশান কার্ড দিয়ে টাকাটা পে করে এসে তিথিকে বললো চলতে।তখন তিথি বললো,’আমার খিধে পেয়েছে।আগে খেয়ে নি?’
ইশান তখন বললো সে খাবারের অর্ডার দিয়েছে।খাবার রুমে এনে দিবে।
এটা শুনে তিথির গলাটা আরও শুকিয়ে গেলো।সে সোফাকে আঁকড়ে বসে আছে আর মনে মনে ভাবছে ইশান ওকে কেটে টুকরো টুকরো করবে আর সেগুলোতে স্যাভলন,ব্যান্ডেজ লাগাবে তাই ওসব অর্ডার দিয়েছে।
তিথির হাত পা কাঁপছে দেখে ইশান একটা ধমক দিয়ে বললো নাটক না করে যেন রুমে আসে।মানুষ অন্য কিছু ভাববে এখন।

তিথি বললো ইশানকে চলে যেতে।সে কিছু সময় পর আসবে।ইশান ও আর দাঁড়ালোনা।চলে গেলো।তখন তিথি চুপিচুপি ম্যানেজারের কাছে এসে বললো,’আমার হাসবেন্ড আপনাকে কি এনে দিতে বলেছে?’
ম্যানেজার মুচকি হাসি দিয়ে বললো এগুলা বলা পলিসির মধ্যে নেই।তখন তিথি রেগে বললো,’আশ্চর্য! আমি ওনার ওয়াইফ হই।আমাকে বলতে কি সমস্যা? ‘

‘বলা যাবেনা ম্যাম’
‘আপনাদের কাছে স্প্রে আছে?’
‘কিরকম?’
‘বডি স্প্রে’
‘নেই ম্যাম।তবে হোটেল রুমে আছে’
তিথি ঠিক আছে বলে চলে গেলো ইশানের পিছু পিছু।ইশান ততক্ষণে রুমে ঢুকেও গেছে।তিথি ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকতেই ইশান বললো দরজা লক করতে।

এটা শুনে তিথি আরও ভয় পেয়ে যায়।কিন্তু নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোলে রেখে সে ভিতরে ঢুকে।
ইশান টিভি অন করে শুয়ে আছে,তিথি ওকে আড় চোখে দেখে নিয়ে দূরে একটা চেয়ারে বসলো।এরপর হাতের চুড়ি গুলো ধরে দেখতে যাবে তখন ইশান দুমদাম আওয়াজ করে বিছানা ছেড়ে উঠলো।ওর এমন ব্যবহারে তিথি ভয় পেয়ে হাত লুকিয়ে ফেলেছে।ইশান যেন ওর কারণেই উঠেছে।উঠে সোজা তিথির সামনে এসে দাঁড়ালো সে।
তিথি তো ভয়ে শেষ,এই বুঝি জ্ঞান হারাবে।

ইশান তখন পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে বললো,’মনে আছে?তোমায় জড়িয়ে ধরে ছিলাম বলে কি করেছিলে?’
তিথি ঢোক গিললো।ইশান ওকে জড়িয়ে ধরায় সে ওকে তিনটা থাপ্পড় মেরেছিল।ওগুলা মনে করে তিথি নিজেই নিজের গাল ধরে রাখলো ভয়ে।এটা দেখে ইশান বললো,’চড় মারবোনা,তোমার শাস্তি এবার কি হতে পারো নিজেই ভেবে নাও’
তিথি গাল থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।এরপর বলে,’এখন কি তবে জড়িয়ে ধরতে হবে?’

যদি তুমি বলো পর্ব ১৭

ইশান হাতের ঘড়িটা উল্টে দেখে বললো,’উমমমম পাক্কা ষোল মিনিট।তোমার চড়ের জ্বালা ষোল মিনিট ছিল’
তিথি বিরক্তি নিয়ে কাছে এসে ইশানকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে রাখে।ইশান এক মিনিটের জন্য ভুলে গিয়েছিল তিথি তার সঙ্গে কি কি করেছে।সে তিথির গায়ের উষ্ণতায় হারিয়ে তিথিকে আরও মজবুত করে ধরে নিয়েছিল।তিথির ও মনের ভয়টা দূর হয়ে ভাল লাগা কাজ করছিল কিছু সময়ের জন্য।

যদি তুমি বলো পর্ব ১৯