যদি তুমি বলো পর্ব ১৯

যদি তুমি বলো পর্ব ১৯
আফনান লারা

ষোল মিনিট পার হতেই ইশান এক ঝটকায় তিথিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।তিথি মেঝেতে বসে ওর দিকে বোকার মতন তাকিয়ে আছে।ওর এমন তাকানো দেখে ইশান বললো ‘শাস্তির স্বাদ পেলি?’
তিথি কিছু আর বললোনা।ইশান তখন নিজের ফোন নিয়ে আবার গিয়ে বিছানায় বসেছে।তিথি এবার উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললো,’আমার ফোনটা তো ফেলে দিছেন।এখন আমি আম্মুকে কি করে কল দিবো?’
‘বাসায় গিয়ে একটা পেয়ে যাবি।এখন আপাতত তোর ফোনের প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি।নব বিবাহিত দম্পতিকে বিরক্ত করেনা সমাজ’

তিথি হনহনিয়ে এসে ইশানের হাত থেকে টান দিয়ে ফোন নিয়ে দূরে গিয়ে লক খোলার চেষ্টা করলো।কিন্তু কিছুতেই সে লকটা আর খুলতে পারে নাই।
ইশান শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে এবার,সে জানতো তিথি ওর ফোনের লক খুলতে পারবেনা।তিথি ওর দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ তার কি যেন একটা মনে পড়লো।ওমনি সে ফোনে পাসওয়ার্ড টা টাইপ করতেই লক খুলে গেছে।তিথি মুখে হাসি ফুটিয়ে তার মায়ের নাম্বারে কল করে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

ও লক খুলতে পেরেছে দেখে ইশান হাতের রিমোটটা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।
এটা অসম্ভব! ইশান তিথিকে সেই কত বছর আগে চামেলী সম্ভোধন করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো। তিথি এ কথা কিভাবে জানে!
ইশান চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে দেখে তিথি হাসতে হাসতে তার মাকে বলছে সে আজ দারুণ খুশি।
কোন হোটেলে তারা উঠেছে সেসবও বললো।এরপর ফোন রাখতেই ইশান ওকে প্রশ্ন করে সে কিভাবে জেনেছে পাসওয়ার্ডের কথা।

তখন তিথি ফোনটা ওকে ফেরত দিয়ে বললো,’আমাকে দেয়া সেই প্রিন্ট করা ছবিটার কোণায় লেখা ছিল,’চামেলী’
ইশানের মনে পড়ে যায় সে তিথিকে ওর একটা ছবি প্রিন্ট করিয়ে উপহার দিয়েছিল একবার,তাতে লিখিয়েছিল চামেলী।এ কথা তার মনে পড়লোনা কেন!আচ্ছা তিথির তো স্মৃতি ভুলে যাবার রোগ আছে তবে এটাই বা কি করে মনে রাখলো সে?
তিথি আরও কিছু বলবে তখনই দরজায় নক করে রুম সার্ভিসের একজন লোক।ওমনি ইশান সব ভুলে কেমন করে যেন তিথির দিকে তাকিয়ে গেলো দরজা খুলতে।

তিথির মনে ভয় আবারও সাড়া জাগালো।সে ইশানের আগে ছুটে নিজে গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছে এরপর লোকটার হাত থেকে সেই ঔষুধের প্যাকেটটা নিয়ে সে ফেরত ও চলে আসলো।
ইশান দরজাটা আবারও লাগিয়ে এসে বললো,’নিয়েই যখন নিছিস।খুলেই দেখ’

তিথি ভয়ে ভয়ে প্যাকেটটা ছিঁড়ছিল।তখন ইশান ওর ভয়ার্ত চোখ দেখে বলে,’তুই যেটা ভাবছিস সেটা নেই এখানে’
তিথি ব্রু কুঁচকে প্যাকেটটা আরও দ্রুত খুলে দেখে ভেতরে মাইগ্রেনের ঔষুধ আর গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ।
তখন সে দাঁত কেলিয়ে ঔষুধ গুলো সরিয়ে চুপচাপ বসে থাকে ভাল মেয়ের মতন।

ইশান টিভি অন করে বললো,’যারে দু চোখে দেখতে পারিনা তার সাথে কাটাবো সুন্দর মূহুর্ত?নিজেকে কি মনে করিস?তুই মেয়ে বলে তোর সব দোষ মাফ করে আমি তোর সাথে ওগুলা করবো?আমার আত্নসম্মান বোধ আছে।
তোকে আদর সোহাগ করার জন্য বিয়ে করিনি।ওসবের চিন্তা থাকলে এখনই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল’
তিথি গাল ফুলিয়ে রেখেছে কথাগুলো শুনে।ইশান ওকে কথা শুনানোর জন্য ইচ্ছে করে এমন নাটক করছিল তাহলে!

অর্ডার করা খাবার গুলো আসার পর তিথি আর খাচ্ছেনা।কারণ তখন তো সে খুধা পাওয়ার নাটক করেছিল।এখন কি করে খাবে।
ইশান তখন ওর কাছে এসে বসে খাবার চামচে তুলে বললো ‘সত্যি কিংবা মিথ্যা।খাবার যখন এসেছে তখন তোকে খেতেই হবে ‘

এই বলে সে তিথির গাল টিপে ধরে এক চামচ পোলাও খাইয়ে দিয়েছে।তিথি অনেক কষ্টে খাবারটা গিললো।এরপর ইশানের চোখে চোখ রেখে বললো,’আমি কি আপনাকে খাবার দিয়ে এমন কষ্ট দিয়েছিলাম?’
‘এইসব হিসেব করিস না।যদি সমান সমান হিসেব করতেই হয় তবে আজ তুই আমার স্ত্রী হতিনা।যাই হোক,ভাল মেয়ের মতন আবার হা কর দেখি’
তিথি মুখটা চিপে ধরে রেখেছে।আর এক চামচ খাবার খেলে তার বমি এসে যাবে, এদিকে এই ছেলের থেকে রক্ষা পাওয়া মুখের কথা না।

তিথি চামচটার দিকে চেয়ে বললো,’অন্য যেকোনো শাস্তি দিন,এটা বাদে।এটা অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছেনা?’
ইশান চামচটা সরিয়ে ফেললো।এরপর দুষ্টুমি করে বললো,’ওমা তাই?ওকে তোর কথাই রইলো তবে’
ইশান নিজের পাঞ্জাবির হাতা উঠিয়ে পোলাও মাখতে মাখতে বললো,’নিজের হাতে খাইয়ে দিবো তোকে’
তিথি চোখ বড় করে একটু পিছিয়ে বলে,’না না।আমার সত্যি খুধা নাই’

ইশান খিলখিল করে হাসছিল,সেইসময় ওর ফোনে কল আসে তামিয়ার।ইশান তিথিকে কলটা রিসিভ করতে বলে।তিথি কল রিসিভ করে স্পিকার দিতেই তারা দুজনে শুনতে পায় তামিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলছে মা নাকি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

এটা শুনে ইশান লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।দ্রুত হাত ধুয়ে এসে তিথিকেও বের হতে বললো।
গাড়ী দিয়ে যাবার সময় তিথি ইশানের দিকে ফিরে হঠাৎ করে বললো,’আন্টি আমায় পছন্দ করেন না জেনেও কেন বিয়ে করেছেন?আমার উপর প্রতিশোধ অন্যভাবেও নেয়া যেতো’
আসলে তিথি কল স্পীকারে দেয়ায় তামিয়ার কথা শুনেছিল।তামিয়া বলেছে ইশান তিথির করা সব ভুল জেনেও তাকে কেনো শাস্তুি না দিয়ে উল্টে ওকে নিয়ে ঘুরতে গেছে এসব বলতে বলতেই মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।তখন তিথির মাথায় আসলো সম্পূর্ণ ব্যাপারটা।

বাসায় ফিরে মায়ের কাছে এসে বসে ইশান জানতে চাইলো ওনার কি হয়েছে।তখন ওর খালা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন যা হয়েছে সব ইশানের দোষেই।ইশান তো তিথিকে এই শর্তে বিয়ে করেছিল যে,,,সে তিথির করা সব কাজের শাস্তি তাকে দিবে, তার মাকে করা সব অপমানের জবাব দিবে।কিন্তু এসব না করে সে তিথিকে নিয়ে ওদের বাসায় না ফিরে একটা হোটেলে ঘুরতে গেলো।এগুলা মায়ের সহ্য হয়নি বলেই!’

তিথি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল।ইশান ঘাঁড় বাঁকিয়ে ওর দিকে তাকাতেই ও চলে যায় তখনই।
ইশান এবার খালার দিকে চেয়ে বলে,’হ্যাঁ,শাস্তি অবশ্যই সে পাবে।কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাকে আমি দূরে রাখবো।যেহেতু বিয়ে করেছি,সেহেতু সে আমার সাথে থাকাটাই তো স্বাভাবিক।’

খালা মুখ বাঁকিয়ে বললেন,’আমি কি জানি বাবা!এতদিন তো মেয়েটাকে খুব ভাল মনে করেছিলাম।কিন্তু আপার থেকে সব শুনে আমি তো অবাক।এরকম একটা মেয়েকেই তোর বউ করে আনতে হলো?মুনিয়া কি এতই খারাপ?তুই জানিস? তোর শোকে মুনিয়া আজ কতদিন হলো অসুখে ভুগছে?’

‘না সে খারাপ নয়।সে যথেষ্ট ভাল মেয়ে।কিন্তু আমি তো তিথিকে ভালবাসতাম এবং বাসি ও।মুনিয়াকে ছোট বোনের চোখে দেখেছি শুরু থেকেই।ওর সাথে তুলনা দেয়ার কি আছে?’
‘তুই ভালবাসিস সেই মেয়েকে যে মেয়ে তোর মাকে কাঁদিয়েছে?বাহ!বেশ সাধু ছেলে!’
‘খালা!আমি আমার মাকে অনেক সম্মান করি।আমার মাথায় আছে মাকে করা অপমানের কথা।তার মানে এই নয় যে আমি ওকে….’

ইশান আর কিছু বললোনা।উঠে বাহিরে এসে একজন ডাক্তারকে ফোন করতে লাগলো।
তিথি সেসময় ইশানের রুমে বসেছিল।আর ভাবছিল এতদিন যা খালারা একটু আদর দরদ দেখিয়েছেন,আজকের পর থেকে মনে হয় তারাও দৃষ্টিকটু হিসেবে দেখবেন তাকে’

তিথির কিছু ভাল লাগছেনা।মন চাইছে উঠে চলে যেতে কোথাও একটা।এ বাসার প্রতিটা মানুষকে দেখে ওর গা গুলাচ্ছে।বারবার মনে হয় এই বুঝি কেউ না কেউ আসবে আর খোঁচা দিবে নয়ত ঝাড়ি দিবে!’
হঠাৎ দরজায় কারোর ঠকঠকানোর আওয়াজ পেয়ে তিথি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।ওপারে ইশান।
সে ভেতরে ঢুকে গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলে একটা টিশার্ট পরতে পরতে বললো,’যা আমার মায়ের কাছে গিয়ে বসে থাক।’
‘আমাকে বকবে সবাই’

যদি তুমি বলো পর্ব ১৮

‘দোষ করলে অবশ্যই বকা খেতে হয়।যেটা বলছি ওটা কর।শাড়ী এটা বদলে তারপর যা’
ইশান দ্রুত টিশার্ট পরে মায়ের কাছে গিয়ে ঐ রুমে থাকা সবার দিকে লক্ষ্য করে বললো,’তিথি মায়ের কাছে এসে বসবে।কেউ তাকে কিছু বলবেনা।সে আমার ক্ষতি করেছে তার শাস্তি আমি তাকে দিবো।তার মানে এই না যে গোটা গুষ্টি শুদ্ধ তাকে কষ্ট দিবে!’
এই বলে সে চলে গেলো ডাক্তারকে গেট থেকে নিয়ে আসতে।

যদি তুমি বলো পর্ব ২০