রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩২

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩২
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“আপু,তোমার দেবর কি বাসায় আছে?উনি আমার ফোন ধরছে না।কথা বলছেন না উনি আমার সাথে।”
গলার স্বর চিকন।কণ্ঠে বেদনা।আঁখিতে জলের মারাত্মক সর্দি।ফলস্বরূপ গলার আওয়াজ একেবারে মিহি,ভারী।নিঃশ্বাস নিতে হয় গালের মাধ্যমে।তাহুরা ওড়নার কিনারায় নাক মুছে। নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার জোগাড় নেই।নাক বন্ধ।চুপি ভঙ্গিতে আবার দরজার পানে দৃষ্টি দেয় তাহুরা।মা আসছে না।রান্নার কাজে ব্যস্ত এখন।সেই সুযোগে বোনের সাথে কিছু অনুভূতি আদান প্রদান করা দরকার।

উমাইর জিদ দেখালেও,টুকটাক খোঁজ নিয়েছে গতকাল।আর এখন বন্ধ,একেবারে বন্ধ।লোকটার আদেশ না মানায় এতো অভিমান?এইযে তাহুরা মারাত্মক কাশি,সর্দিতে আক্রান্ত,আজ ডাক্তারের কাছে গেলো লোকটার কি সেই হদিস আছে?জিদ দেখানো দরকার সবসময়?মনটা ভারী হয়,সাথে অশ্রুর বেগ বাড়ে আঁখি মালায়।
–“উমাইর ভাইয়ার কথা মেনে নে।কয়েকদিনের জন্যে আয়।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সুনেরা জানায়।সকালে তার ডাক্তারের নিকট যাওয়ার ফন্দি উমাইর কেটেছে, তা গোপন রাখলো দায়িত্ববান ভাবী। উমাইরের নির্দেশনায় তাহুরা বুঝে নিক,ছেলেটা ভীষণ রেগে।মনের রাণীকে কাছে রাখতে কতো না ছলনার আশ্রয় নিতে হচ্ছে উমাইরের!
–“কি বলছো?বাবা জানলে খারাপ ভাববে না বলো?বাবা কি জানে আমার বিয়ে হয়েছে?তোমার দেবর কিছু বুঝতে চায় না।হিংস্র জলদস্যু সত্যি।”
তাহুরা উত্তেজিত।

–“উহু,আয় তুই।কিছু হবে না।বোনের বাড়িতে বোন আসবে,বাবা বুঝবে সব।বেশি পাকনামি করছিস তুই!”
আপেল কামড় দিয়ে জবাব দেয় সুনেরা। বোকা মেয়েটা অযথা চিন্তা করে মাথা ব্যথা বাড়ায় নিজের।সম্মুখে বসা মেঘলা বেগমকে ইশারায় বুঝিয়ে বলছে তাহুরার কথা।মেঘলা মুচকি হাসে।ছেলের জন্যে মেয়েটার জর্জরিত অবস্থার কথা ভেবে আবার মনটা মলিন হয়।সরল মেয়েটাকে তার ছেলে বড্ড জ্বালায়।

–“আপু উনাকে…”
–“এই তাহু শুন।”
মায়ের কথায় অর্ধেক কথা থামে তাহুরার।পরপর ফোন কাটে সে।দ্রুত উঠে।যেনো চুরির পর বিরাট ধরা খাওয়ার সম্ভবনা। মা এসে সরাসরি দাঁড়ায়। হাতে টিস্যু ধরিয়ে জানায়,
–“ঐ বাড়ি যাবি আজ।কয়েকদিন থেকে আসবি।তোর বাবাকে বলেছি।তোর বাবা নিজেই বললো,বাসায় মন মরা না থেকে বোনের কাছে থেকে আয় কিছুদিন।”

তাহুরা নাকে টিস্যু চাপে ।খুশিতে নাকি উত্তেজনায় নাকি উমাইরের সম্মুখে থাকবে এই কয়দিন তার জন্যে অন্যরকম অনুভূতি,কিসের মাত্রা অনুভব করলো জানা নেই তার।মনটা কেবল জানিয়েছে, উমাইরের বাহুডোরে নিজেকে এলিয়ে দিবে আজ সে।লোকটার সুঘ্রাণ পেতে ভেতরটা মরিয়া।আবারও কি লাজে রাঙিয়ে দিবে উমাইর তার সকল সত্তা!
–“বাবা,কি সত্যি রাজি?”

তাহুরা মায়ের হাত ধরে।শিউলি বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়।মেয়েটা তার ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে।শিউলি স্পষ্ট বললো তার বাবা রাজি,তাও মেয়ের একই প্রশ্ন।বিরক্ত হয় মহিলা,
–“সুন্দর থ্রিপিস নে সব।সন্ধ্যায় গাড়ি পাঠাবে বললো উমাইর।”
–“উমাইর!উনি ফোন করেছিলেন তোমাকে?”
তাহুরা অবাক হয়।

–“তুই যা শুরু করলি,আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে।ভাত খা।এরপর রেডি হবি।বিকাল হচ্ছে এখনো তার ভাতের খবর নেই।এরপর ঔষুধ খাবি।”
–“সামান্য কাশি,সর্দির জন্যে জোর করে ডাক্তার দেখানোর কি দরকার ছিল? ঔষুধ আমার ভালো লাগে না,মা।”
তাহুরা বিছানায় বসিয়ে পা ঠেকায় বুকের সাথে।
–“আজ পর্যন্ত তোর ভালো লাগলো কিসে?মেজাজ খারাপ করার আগে জলদি যা।”

শিউলি মেয়েকে মিছে রাগ দেখালেও অন্তরে তার শান্তি।মেয়েটাকে এক লক্ষ্মী ছেলের হাতে যে দিয়েছে।সারাজীবনের জন্যে।
শিউলি যেতেই তাহুরা আবারও মোবাইল হাতে নেয়। উমাইরকে ফোন দেয়।কিছুক্ষণ রিং বাজলে অপর দিকে হতে ভেসে আসে,
–“আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে।”
বাকিটা শোনার পূর্বে তাহুরা ফোন রেখে গটগট অক্ষরে মেসেজ পাঠায়,

–“বাসায় আসছি।অন্তত এখন ফোনটা ধরুন?”
মোবাইলের পানে দৃষ্টি তার চাতক পাখির ন্যায়। এখন বুঝি উমাইর ফোন করলো!কিন্তু আশা রইলো অপূর্ণ।
লোকটা মেসেজ দেখলো ঠিক,উত্তর দিলো না কিছু।
তাহুরা খুব কষ্ট পেলো অন্তরে খুব।কাশির সাথে চোখের পানি মানিয়ে নেয়।মোবাইল ছুঁড়ে বিছানায়।কেনো সে অভিমান করতে পারে না পাজি লোকটার সাথে!কেনো সামান্য কিছুতে লোকটার জন্যে অন্তর নড়ে উঠে!মানবকে বেশি ভালোবাসে তাই নিশ্চয়।
কক্ষ হতে বেরুনো অবস্থায় তাহুরা আপন মনে শুধায়,

–“জলদস্যু থেকে আমি কিভাবে মায়া দয়া আশা করি!আমি সত্যি মাথামোটা।”
কপালে আলতো চড় দেয় তাহুরা।মেয়েটা ভারী সরল।
ব্যাগ গোছানো শেষে তাহুরার বাবার কক্ষে যায়।বাবার পায়ে হাত ছোঁয়ালে মুন্সী জাগে।দোকান হতে ফিরে ভদ্রলোক বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।মেয়ের স্পর্শে সজাগ হোন।বিনয়ের সুরে আওড়ায়,
–“আম্মা,চলে যাচ্ছো?”
–“নাহ।গাড়ি আসেনি আব্বা।”

মুন্সী উঠে বসে।বুকের মাঝে হাত গুঁজে।মেয়েকে প্রশ্ন করে বিনয়ের সাথে,
–“উমাইর,ছেলেটাকে তোর ভালো লাগছে তো?আমি কিন্তু বিয়েতে শুধু ছেলের মত শুনে হ্যাঁ বলিনি।আমার কাছে খবর এসেছিলো তোরও পছন্দ উমাইরকে।”
মুন্সী সেদিনের হাসপাতালের কিছু কথা চেপে গেলো।কেবল প্রাণ জুড়িয়ে মেয়েকে দেখছে।উমাইর গোপনে,আড়ালে, সরাসরি মেয়েটার বড্ড যত্ন নেয়।শিউলি গল্প পাতে তাকে।সুনেরার সুখী সংসারের কথাও জানে মুন্সী।
–“আমি….খুশি..খুশি বাবা।”

তাহুরা জানায়।বদ মেজাজ ছাড়া,উমাইর বাকি সবকিছুতে সেরা।কেবল,তাহুরাকে বিনা কারণে অতিরিক্ত কাঁদায় লোকটা।মেঘলা থেকে জানে তাহুরা,উমাইর যতো বদ মেজাজ সব তাহুরার জন্যেই বরাদ্দ।অন্য ব্যাপারে উমাইর বিরাট হাঙামা করে।অথচ,তাহুরা এমনটা দেখলো না কখনো।কেবল জানে,লোকটার সম্মুখে গেলে তাহুরা,লোকটা মিইয়ে যাবে।বুকের মধ্যিখানে আটকে নিবে।তার সন্নিকটে আসার জন্যেই তো উমাইরের এতো রাগ, গোস্সা।

–“শান্তি পেলাম,আম্মা।জলদি ফিরে আসবে।আসার সময় বোনকে আনবে।দুইবোন আমার ঘরকে আবারও আলোকিত করবে,আম্মা।ঠিক আছে?”
মুন্সী সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।তাহুরা মাথা নাড়ায়।তখনই আসে শিউলি।আঁচলে হাত মুছে। তাড়া দেয়,
–“গাড়ি এসেছে।আয় জলদি।”
বাবাকে সালাম করে তাহুরা।বাবার হাতে হাত বুলায়,

–“উঠো না তুমি। ঐ বাড়িরই গাড়ি।বিশ্রাম নাও।পৌঁছে মাকে ফোন করবো আমি।”
মুন্সী মানেনি তাও।মেয়েকে গাড়ি অব্দি উঠিয়ে দেয়।
তাহুরা বাবা মাকে বিদায় জানিয়ে মোবাইলের নোটিফিকেশন চেক করে ফের।পাষাণ লোকটার কোনো হদিস নেই।ক্রোধ আসে না কেনো মেয়েটার অন্তরে?এখনো আঁখি ভরে আসছে।উফফ,মেয়েটা এমন সরলবতী হওয়া খুব দরকার ছিলো?
প্রশ্নটা উমাইর যদি শুনতো,তাহলে অবশ্যই বলতো,
–“হ্যাঁ।মেয়েটা সরলবতী।কেবল উমাইরের আদুরে সরলবতী।”

ঐ বাড়িতে পৌঁছালে দুয়ারে দাঁড়ানো মেঘলাকে দেখতে পায় তাহুরা।ঠিক সেই সময় মোবাইলে মেসেজ আসে।তাহুরার ইচ্ছে করলো না দেখতে।সে বুঝে নেয়,অন্য কোনো বেদরকারি মেসেজ নিশ্চয়।তার পাষাণ জলদস্যু তো মেসেজ দিবে না!
মেঘলা আগ বাড়িয়ে এগিয়ে আসে।জড়িয়ে নেয় তাহুরাকে। খুঁক খুঁক কাশছে মেয়েটা।মেঘলা তার চিবুকে হাত রাখে।নরম ভঙ্গিতে আওড়ায়,
–“অসুস্থ লাগছে?”
–“নাহ,আন্টি….মা।একটু কাশি।”
তাহুরা উত্তর দেয়।

মেঘলা হাসে।উমাইর এমন লক্ষ্মী মেয়েকে নিজের জন্যে নির্বাচন করে সবচেয়ে ভালো কাজ করেছে।মেয়েটাকে দেখলেই প্রাণ জুড়ায় মেঘলার।
–“জলদি ভেতরে আসো।একটা সুখবর আছে কিন্তু।”
–“সুখবর?কি সুখবর?”
তাহুরা উৎসুক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে।
–“বড় বউমা বলবে।বিরাট সুখবর।”

মেঘলা কাঁধ জড়িয়ে ভেতরে নেয় তাহুরাকে।নিচের ফ্লোরে সকলে উপস্থিত।কেবল নেই তার জলদস্যু,জুবায়ের আর বোন।একে একে সকলের সহিত কুশল বিনিময় শেষে দো-তলায় যায় তাহুরা।মেঘলা নিয়ে এসেছে তাকে।
বোনকে বিছানায় ক্লান্ত অবস্থায় দেখে বিচলিত হয় খানিকটা।জুবায়ের মাথায় হাত দিয়ে মালিশ করছে তার।বোনকে অবলোকন করলে সুনেরা হাত এগিয়ে দেয়।তাহুরা ধীরে সে জায়গা দখল করে,

–“আপু,কি হয়েছে?ঠিক আছো?”
–“আছি তাহু।একটা গুড নিউজ হচ্ছে,তুই খালামনি হচ্ছিস।”
সুনেরা আত্মহারা খুশিতে।তাহুরা বোনের পানে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায়।বিশ্বাস করতে দুমিনিট লাগলো।তার আপন বোনের বাচ্চা আসতে চলেছে।বড্ড আদুরে হবে না সেই বাচ্চাটা!
ইস,কি আনন্দ!তাহুরা স্বাভাবিক গলায় খুশির বহিঃপ্রকাশ করে,

–“আলহামদুলিল্লাহ্ আপু।”
দুবোন মেতে উঠে খুশি ভাগাভাগিতে।
বেশ খানিক পর মোবাইল বেজে উঠে তাহুরার।মাত্র নাস্তা শেষ করে উমাইর তথা নিজ কক্ষে যাচ্ছিলো তাহুরা। উমাইরের নাম্বার দেখে এক সেকেন্ড সময় নেয়নি সে ফোন রিসিভ করতে।কিছু বলার পূর্বে ভেসে এলো উমাইরের কঠোর শব্দ,
–“মেসেজ দিয়েছি দেখোনি কেনো?শরীর ভালো লাগছে এখন?”
–“আপনি..আপনি কবে মেসেজ দিলেন?”

তাহুরা খানিক দূরে গিয়ে কথা বলে।মানুষের সামনে তো আর নিজের বকা শোনার কাহিনী দেখাবে না সে!
–“মেসেজ চেক না করে আবার বড় কথা?মোবাইল ইউজ করো কেনো তুমি,মাথামোটা?”
–“সারাদিন শরীর খারাপ আমার,তখন মেসেজ দেননি।খবর নেননি।”
তাহুরার অভিমান শব্দ আকারে প্রকাশিত হয় ধীর গতিতে।
–“মা থেকে জিজ্ঞাসা করো ডাক্তার দেখানোর জন্যে জোর করা, কার কথায় করেছে উনি!আমি তোমাকে এইসব বলছি কেনো?এই মাথামোটা,নাস্তা করেছো?মেডিসিন এনেছো সব?”

উমাইর খেঁকিয়ে উঠে।
–“তার মানে আপনি মাকে ডাক্তার দেখানোর…”
–“একশোটা প্রশ্ন করলে তার জবাবে শুনতে হয় সেই প্রথম কথারই।শেষ বার বলছি,শরীর কেমন এখন?মেডিসিন সব এনেছো?না আনলে আমি নিয়ে আসবো।”
তাহুরাকে থামিয়ে বলে উঠে উমাইর।
–“জ্বী এনেছি।আর শরীর এখন ভালো।”

কথার মাঝে বেশ কয়েকবার কাশে তাহুরা।খুব বাজে ভঙ্গিতে গলা খারাপ হয়েছে তার।
–“ওকে।রেস্ট করো।আমি মাত্র কলেজ থেকে বেরিয়েছি। বিকালে ডিপার্টমেন্টের মিটিং ছিল।ফুটবল খেলতে যাচ্ছি।বাসায় ফিরতে দেরী হবে।”
উমাইর ফোন কাটে।মেয়েটার উত্তর শুনেনি আর।লোকটা এমন কেনো?যত্ন নিয়েও প্রকাশ করে না।ধমকির সাথে যত্ন।কি অদ্ভুত যত্ন এটা!
তাহুরা আলগোছে হাসে।

উমাইর ফিরে রাত তখন বারোটার কাঁটায়।তাহুরা মেঘলার সহিত বসে ছিলো।মূলত মেঘলা সুনেরার যত্নদি শেষে ফের উমাইরের কক্ষে আসে।তাহুরা ভীত সুরে এক দুবার বলেছিলো মেঘলাকে কক্ষে ফিরতে।কিন্তু,মেঘলা যায়নি।তাহুরার সাথে গল্প জুড়েছিল ঢের।ছেলের প্রবেশে মা টুকটাক আলাপের অন্তিম ঘটিয়ে বেরিয়ে যায় কক্ষ হতে।
উমাইরের পড়নে হাঁটু সমান স্পোর্টস প্যান্ট,এবং প্লেইন জার্সি।সেথায় ক্লাবের নাম লিখা।
দুজনের দৃষ্টি মিলে সরাসরি।তাহুরা মাথার ঘোমটা টানে আরো প্রগাঢ়।হাতে বিদ্যমান ব্যাগের সাথে শপিং ব্যাগ এগিয়ে দেয় সে তাহুরার পানে,

–“অফিসের কাপড় বের করো।ব্যালকনিতে রাখো।”
তাহুরা কথা শুনে উমাইরের।ফিরে এসে পায়নি উমাইরকে।বাথরুমে নিশ্চয়।দরকার দিকে নজর যায় মেয়েটার।দুইখানা কঠোর লক তাদের ঘরে বন্ধী।

উমাইর রাতে খাবে না?ভাবনায় মশগুল সে বিছানার কিনারায় বসে।একটু নড়লে যেনো মাটিতে বসবে।
বাথরুমের দরজার খট শব্দ হলে বুক ভার হয় তাহুরার।উমাইর তার কাপড় ধুয়েছে।সেটা নিয়ে ব্যালকনিতে যায়।
উমাইর রুমে এলো তাওয়াল মাথায় চালিয়ে।উদোম শরীরে কেবল ট্রাউজার পড়নে।তাহুরা মুখ খুলতে চাইলো কিন্তু পারলো না উমাইরের কথার জন্যে,

–“ঘোমটা আরেকটু টেনে মুখ ঢেকে ফেলো।”
তাহুরা চমকিত, হচকিত।বুকটা ধড়াস শব্দ করে।তাহুরা অধর কাটে দাঁত দ্বারা,
–“জ্বী?”

উমাইর দ্রুত হাঁটে।ভ্রু কুঁচকে চায় মেয়েটার পানে।এক ঝটকায় পুরো ঘোমটা সহ ওড়না টেনে খুলে,
–“রুমে আমার সাথে একাকী থাকলে ঘোমটা কেনো, ওড়নাও যেনো না থাকে।পরের বার আমি খুললে কিন্তু ব্যাপারটা ভালো দেখবে না তুমি।”
তাহুরা পিছনে যায় কিঞ্চিৎ।দু ভ্রু সমান করে মলিন ভঙ্গিতে তাকায় উমাইরের পানে।কি নিষ্পাপ ভঙ্গি!বুকে দাগ পড়ে উমাইরের।উমাইর হাত ধরে তাহুরার।সোজা দাঁড় করায় মেয়েটাকে। ক্লিপে আটকানো চুল খুলে।মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে কেশরাণীরা।

–“এই যে,রাতে খাবেন না?”
তাহুরা প্রশ্ন করে।দৃষ্টি হারিয়ে যাচ্ছে সম্মুখে দাঁড়ানো লোকটার অবয়বে।মারাত্মক আকর্ষণীয়।হালকা ভিজে আছে এখনো।পানির কণাকে হিংসে হয় তাহুরার।লোকটা কেবল তার।এই অবয়বে কেবল তাহুরা আটকে থাকবে।পানির কণার কাজ কি?তাহুরা হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেয়,মুছে দেয় বিন্দুকণাকে।সেই স্পর্শে মাতোয়ারা হয় দুই হালাল কপোতযুগল।
উমাইর হাত ধরে তাহুরার।অধর স্পর্শ করে সেথায়,

–“খেয়েছি,জান।”
এক ঢিলে দুই পাখির হত্যা করে উমাইর।তাহুরা লাজুক ভঙ্গিতে আড়ষ্ট।সর্দিতে বড্ড মাথা ব্যথা হলেও লোকটার নিকট সকল ব্যথা যেনো কই উবে যায়।তাহুরার কাশি বাড়ে।
উমাইর চিন্তিত হয় ঢের।বিছানায় বসায় তাকে।গলার ভাঁজে হাতের স্পর্শের জানান দেয়,

–“মেডিসিন খেয়েছো?”
–“হুম। মা খাইয়েছে।”
তাহুরা জবাব দেয়।
–“গুড গার্ল।”
উমাইর অধর ছোঁয়ায় তাহুরার ললাটে।

–“ঘুমাবো এখন।সকালে ক্লাসে যেতে হবে।ডেকে দিও।আজ এলার্ম দিলাম না।বউ আছে, এলার্মের দরকার কি?”
উমাইর নির্দেশ দেয়।তাহুরা মাথা নাড়ায়।পেছন ফিরে ওড়নায় হাত দিতে গেলে,আবারও হাত সরায়।উমাইর এসে ওড়না নিয়ে যায় ঠিক।নেওয়ার সময় চোখ টিপে চুমুর ভঙ্গিমা দিতে ভুললো না।
লোকটা তার সম্মুখে এলে অন্যরূপে আসে।আর তাহুরা বাসায় থাকলে,তখন লোকটা যেনো সকল ক্রোধ তাহুরার উপর প্রকাশ করে।

হাসে তাহুরা।অধরে হাত রাখে। যেমনই হোক, মানবটা।এই মানবেই তো তাহুরা নিঃশেষ হয় সর্বক্ষণ।
সেইবার একসাথে ঘুমালেও অনুভূতি ছিলো অন্যরকম।আর আজ একেবারে ভিন্ন। উমাইরের বুকে আটকে তাহুরা।দুইজনের দেহের মাঝে নেই কোনো স্পেস। উমাইরের এক হাত তাহুরার কামিজের গভীরে।সুন্দর রোমান্টিক এক মুহুর্ত।অথচ,তাহুরা স্থির নেই।তার কাশি যেনো বিরাট বাঁধা।তাহুরা সরতে চায়।কিন্তু, উমাইরের আবরণ হতে মুক্তির হদিস নেই।লোকটার ঘুমে সমস্যা হচ্ছে নিশ্চয়!

তাহুরা উমাইরের উদোম বুকে হাত রাখে।ধীরে বলে,
–“আমি একটু দূরে ঘুমাই? আমার কাশিতে আপনার অসুবিধে হচ্ছে।”
তাহুরার কথায় উমাইর চোখ খুলে নির্বিঘ্নে।অধর জোড়ার মিলন ঘটায়।জ্বলছে অধরের চামড়ায়।ঘুমানোর পূর্বে উমাইর তার ভালোবাসার প্রদান ঘটায় সল্প পরিসরে।এখন আবার এহেন স্পর্শ!উমাইরের হাতের নৃত্য অস্বাভাবিক।তাহুরা নিজেকে সামলানোর জো নেই।তার নখ বিঁধে যাচ্ছে উমাইরের পিঠে।জ্বলছে কি?হ্যাঁ।তবে এখন সেই অনুভূতির হিসেব কষা নিষেধ তার।তাহুরার চুলের আবরণ তার হাতের মুঠোয় বিদ্যমান।উমাইর আরো ঘনিষ্ঠ হয়।তাহুরা তাকে থামায়।কেশে উঠে ফের।
উমাইর গাল চেপে ধরে তাহুরার।ক্ষিপ্ত সুরে বলে,

–“আরামের ঘুমের জন্যে আনিয়েছি তোমাকে।দূরে শুয়ে শোক পালন করতে না।”
মিটমিট আলোর মোলায়েম কক্ষে উমাইরের রাগে ভস্মিত চেহারা স্পষ্ট।তাহুরা ভীতু দৃষ্টিতে চায়।লোকটার এলোমেলো চুলের গভীরে নিজ হাতের জানান দেয় মেয়েটা। নাক টেনে বলে,
–“অনেক কাশি আমার।আপনার ঘুমে সমস্যা হচ্ছে,তাই…সরি..উমাইর…”

উমাইর তাহুরার পিঠের নিচে হাতের প্রবেশ ঘটায়।মিশিয়ে নেয় মেয়েটাকে নিজ বক্ষ দেশে।চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
–“কাশি হলেও সমস্যা নেই,জান। জাস্ট তুমি কাছে থাকো আমার।”
–“সরি বলতে হবে না রে বউ।শুধু আমার সাথে লেপ্টে থাকো।চুমু খাও আমাকে।”
উমাইর আলগোছে হাসে।অনুভব করে বুকের উপরিভাগে মেয়েটার নরম অধরের গরম ছোঁয়া।পুরুষালি সকল অনুভূতিরা কক্ষ জুড়ে বিচরণ করে।আঁখি তুলে তাকায় তাহুরা।খুন হয় উমাইর।

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩১

পরপর কেশে উঠে আদুরে প্রেয়সী।সকল অনুভূতি দমিয়ে রেখে তাহুরার কানে আলতো কামড় দেয় উমাইর,
–“আজ তোমার কাশির জন্যে বেপরোয়া হয়েও হলাম না,জান।খুব বেশি কি সমস্যা হবে একটু বেপরোয়া হলে?”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ৩৩