রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ৮ (২)
ফারহানা চৌধুরী
অরু আকস্মিক ঘটনায় স্তব্ধ, বিমূঢ়। কেবল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কি হচ্ছে বুঝে আসতে সময় লাগলো ঢের। বুঝতেই হাত দিয়ে ঠেলে সরাতে চাইলো শুভ্রকে। বলশালী লোকটার শক্তির সামনে সে নিতান্তই চুনোপুঁটি ব্যতিত আর কিছুই না। হাজার ঠেলে-ঠুলেও যখন সরলো না তখন অরু শান্ত হয়ে এলো। পরপর সজোরে ধাক্কা মারল শুভ্রকে। শুভ্র অপ্রত্যাশিত ধাক্কা সামলাতে না পেরে পিছিয়ে গেলো ক’পা। অরুর দিকে চাইল অপ্রস্তুত ভঙ্গিমায়। অরু বিরক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে লাগেজে হাত দিল। ফের ফোনে কারো নাম্বার ডায়াল করতে করতে হাঁটতে গেলে টান খেলো। অরু আচমকা টানে দাঁড়িয়ে পড়লো। হতভম্ব ভাব চেহারায় ফুটিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে চায় শুভ্রর দিকে। শুভ্র তাকে ধরে সামনে এনে দাঁড় করায়। অরু ঝাড়া মেরে হাত সরালো। শুভ্র দাঁতে দাঁত পিষে তাকালো তার দিকে। আক্রোশ প্রকাশ করে বলল,
-“না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছো কোন সাহসে?”
অরু ভ্র উঁচিয়ে চায়,
-“সাহস? সিরিয়াসলি?”
তাচ্ছিল্য করে হাসলো অরু। আবারও ব্যাগ টেনে চলে যেতে চাইলে শুভ্র আবারও আটকালো তাকে। অরু এবার চেঁতে গেল,
-“সমস্যা কি? গায়ে পড়ছেন কেন? খুব তো অপমান করছিলেন। এখন আবার নাটক কেন করছেন?”
শুভ্র তিরিক্ষি মেজাজে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“তুমি মায়ের কাছে নালিশ করেছো আমার নামে?”
-“আজব! আমি এতো ঠেকা নিয়ে রাখি নি যে, যার তার নামে নালিশ ঠুকতে যাবো। যদি সে নিজে নিজেকে না শোধরায়, তো লোকে চেঁচাতে চেঁচাতে মরে গেলেও কোনো কিছু এসে যায় না তার।”
-“আশ্চর্য, তুমি ঝগড়া কেন করছো যেচে পড়ে? ”
অরু নিজের দিকে আঙুল তাক করে। অবিশ্বাস্য গলায় শুধায়,
-“আমি?”
পরপর মুখ কুঁচকে কেমন করে হাসে৷ শুভ্র পরিস্থিতি বুঝে শান্ত শিষ্ট কন্ঠে বলে,
-“বাড়ি চলো। আমি রাস্তায় সিনক্রিয়েট চাই না।”
অরু মুখ কুঁচকে নিল। অসম্ভব রকমের ত্যক্ত মেজাজে লাগেজে টান বসিয়ে সামনে হাঁটতে লাগলো হনহনিয়ে। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে। বাচ্চাদের মতো বিহেভিয়ার করছে না মেয়েটা? আশ্চর্য! অসম্ভব রকমের বেয়াদব তো এই মেয়ে। বিন্দুমাত্র সম্মানটুকুও করতে জানে না। কি দেখে মা তাকে বিয়ে করিয়েছিলো এই মেয়ের সাথে। গড!
শুভ্র তাকায় অরুর যাওয়ার দিকে। খুব একটা দূরে এখনো যেতে পারেনি অরু। সে বড় বড় পা ফেলে অরুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাঁটায় বাঁধা পেয়ে অরু কপাল কুঁচকে তাকায় সামনে। শুভ্রর পাশ কাটাতে চাইলে সে অরুর হাত টেনে ধরে। অরু ক্ষেপে গেল। কি হয়েছে এর? মায়ের কথায় বউয়ের প্রতি দরদ কি উপছে পড়ছে এখন? খুব দেখাতে চাইছে, বউয়ের কতো কদর করে সে? তার চেয়েও বড়ো কথা, সেকেন্ডে সেকেন্ডে তাকে ছুঁচ্ছে এই লোকটা! কতোটা সাংঘাতিক। অরু হাত ছাড়াতে চাইলে শুভ্র এমন করে চেপে ধরলো, যেন মনে হচ্ছে হাতের হাড্ডি গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবে তখুনিই। কত্তো খারাপ! কত্তো খারাপ! অরু কটমট করে তাকালে, শুভ্র তার হাত চেপে কাছে টেনে ধরলো। দাঁতে দাঁত পিষে, চোখে-মুখে নিরব হুমকি নিয়ে বলল,
-“বাড়াবাড়ি করো না। রাস্তার মাঝখানে একটা তামাশা অলরেডি চলছে। নাউ এন্ড ইট। বাসায় চলো, ভালো করে বসে কথা বলি। এসব সিনক্রিয়েট করো না আর।”
অরু হাত ছাড়ালো বহু, বহু কষ্টে। হাত সরিয়েই বড় করে শ্বাস ছাড়লো। তার দিকে তাকিয়ে ভ্র উঁচিয়ে বলল,
-“আপনি না আমাকে কিছুক্ষণ আগে বলেছিলেন, বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাও; হ্যান-ত্যান কতো কি? এখন কেন সাধছেন বাড়িতে নিয়ে যেতে।”
-“তুমি এখানে আমার দায়িত্বে আছো। এন্ড রিমেম্বার, আমি আমার দায়িত্বে বিন্দুমাত্রও হেলাফেলা করি না।”
অরু অবিশ্বাসের সাথে চায়,
-“আমি আপনার দায়িত্ব? স্রেফ?”
শুভ্র জবাব দেয় না। চেয়ে থাকে নিভৃতে। অরু তার চোখে তাকিয়েই কেমন কেঁপে উঠল। বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো। নিজেকে এতো ছোট লাগছে বলার বাইরে! আত্মসম্মানহীন একটা কিট মনে হচ্ছে। ভেতরের সব উগরে আসতে চাইলো৷ নিজেকে সামলে নিয়ে অরু কাঠকাঠ গলায় বলল,
-“আমি… যাবো না।”
অরু চলে যেতে হাসফাস করতে লাগলো৷ অসম্ভব বিরক্ত লাগছে তার এই শুভ্রকে। এতোটা, এতোটা বাজে কেউ কি করে হয়? কি করে? অরুর ভীষণ অদ্ভুত লাগছে। তার সামনে এমন করে জায়গা দখল করে লকটা দাঁড়িয়ে, অরু যাওয়ার বিন্দুমাত্রও জায়গা পাচ্ছে না। এতোটা জঘন্য লাগলো ব্যাপারটা অরুর। শুভ্র কপাল কুঁচকে চেয়ে আছে তার দিকে। প্রশ্ন করে,
-“যাবে না?”
শক্ত কন্টে জবাব আসে,
-“না।”
-“শিওর?”
অরু নাক কুঁচকে তাকায়। এখানে শিওর না হওয়ার কি আছে? সে আত্মবিশ্বাস প্রকাশে ব্যস্ত হলো খুব,
-“থাউজেন্ড পার্সেন্ট।”
শুভ্র ফিচলে হাসে,
-“দেন, এখন যা হবে; ইউ আর দ্য ওয়ান, হু ইজ গোয়িং টু বি রেসপন্সিবেল ফর দ্যাট।”
অরু কপাল ভীষণ করে কুঁচকে নিলো। মুখ ফুটে বলতে চাইলো, “মানে?” তবে বলার পূর্বেই ঘটলো আশ্চর্য রকম কিছু। শুভ্র বড় বড় পা ফেলে তার সামনে এসে, আচমকা তাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। অরু চমকে উঠলো। বিস্ময়ে চোখের আকার হলো মার্বেল সমান। কি হলো কেবল, বুঝতে সময় নিচ্ছে তার ছোট্ট মস্তিষ্ক। বুঝে এলেই হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে চেঁচামেচি লাগিয়ে দিলো। শুভ্র তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালেও, বিশেষ কিছু হলো না। অরু নতুন উদ্যমে চেঁচামেচি জুড়ে দিলো। আশেপাশে লোকজন নেই বলে শুভ্র মান ইজ্জত রসাতলে গেলো না কেবল।
রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ৮
সে অরুকে ফ্লাটে গিয়েই নামিয়ে দিলে, অরু এক ছুটে বেড়িয়ে যেতে নিলো। শুভ্র তার মতো চুনোপুঁটিকে একহাতে তুলে ভেতরে নিয়ে এলো। ধরাম করে দরজা আটকালো। এতো আওয়াজ তুললো যে অরু কেমন চমকে তাকালো। রাগ তার তিরতির করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। শুভ্র তার সদ্য করা ব্যবহার নিয়ে কিছু বলতে দু’কদম সামনে আসতেই অরু ভয়ানক একটা কাজ করে বসলো। সপাটে চড় বসিয়ে দিলো শুভ্রর গালে।