লীলাবালি পর্ব ২

লীলাবালি পর্ব ২
আফনান লারা

-‘আমার মেয়েটার বিয়েতে তো আর কোনো কিছু বাদ রাখোনি।ইচ্ছামত আনন্দ করেছিলে,তা ওরা যে বাড়ির মুরব্বীদের কত সুন্দর শাড়ী দিলো সেটা দেখতে আসছো না কেন?আমি সকাল থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম কখন বুবু আসবে।তুমি আসছোনা দেখে আমিই চলে এসেছি।তিনটা শাড়ী এনেছি সঙ্গে করে।তোমার যেটা ভালো লাগে রেখে দাও।সানিমের আম্মা দিছেন এগুলো আমাকে।আমি রিমির দাদিকে একটা দিছি।বাকিগুলো নিয়ে তোমার কাছে চলে এলাম’

অর্ণবের আম্মা ভাত বসাচ্ছিলেন।তার বোন রুবাইতার কথা এতক্ষণ শুনছিলেন তিনি।ভাত বসানোর কাজ সেরে হাত মুছতে মুছতে সোফায় বসলেন উনার সামনে।শাড়ীগুলোতে হাত বুলিয়ে আশ্চর্য হয়ে গালে হাত রেখে বললেন,’ওমা এসব তো দেখি আজকালকার যুগের মেয়েদের শাড়ী।পরলে তো শরীরেই থাকবেনা’
-‘বুবু কি যে কও!!সানিমের আম্মার পছন্দে কেনা।তুমি তো জানোই তিনি সব মর্ডান পছন্দ করেন’
-‘আচ্ছা আমি এই লালটা রাখি,আমার কুসুমের জন্য’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘তোমার কুসুম মানে?ওহহ মনে পড়েছে।ঐ কুসুম??এখনও মনে রেখেছো তার কথা?আমি তো ভুলেই গেছিলাম প্রায়’
-‘ভুলবো কিরে?মেয়েটা কি ভোলার মতন??তোর দুলাভাই সেই মেয়ের কথা আবার লাটে উঠাবে দেখিস’

পরিষ্কার নদীর পানি।ছোট ছোট ঢেউ বেয়ে চলেছে সেকেন্ডের সঙ্গে পালা দিয়ে।কিণারায় বসে হাত দিলে নিচ থেকে শ্যাওলা ছোঁয়া যায় সহজেই।নদীর দুপাশ খালি।বিশাল জায়গা জুড়ে খোলা মাঠ।সেই মাঠে গরু আছে, ছাগল আছে।তারা তাদের নিত্যদিনের কাজ করতে ব্যস্ত।ঘাস খাওয়া আর প্রকৃতিকে উপভোগ করা।তাদের আর কাজ কি?
মাঝে মাঝে নদীতে নেমে মালিকের সাহায্যে গোসল করা।
খোলা মাঠটার মধ্যিখানে একটা বটগাছ আছে।বয়স অনেক বেশি।এই ধরুন ১৪০বছর।দোলনা লাগানো একেবারেই কঠিন কাজ।ঢালগুলো অনেক উপরে।তাই কেউ চাইলেও এত সুন্দর একটা জায়গায় দোলনার ব্যবস্থা করতে পারেনা।

বাতাস অনেক আজ ভোর থেকে।আকাশে মেঘ জমেছে।হয়ত এখনই হালকা ঝড় শেষে বৃষ্টির পালা শুরু হবে।বট গাছটায় দোলনা লাগানোর চেষ্টা সবাই করেছে ঠিক কিন্তু তাদের দলের একজন আছে যে কিনা হাজারবার ব্যর্থ হবার পরেও দোলনা লাগাতে প্রতিদিন আসে।একদিন ঠিক সে দোলনা লাগাতে পারবে।আজও সে এসেছে তার সেই আত্নবিশ্বাস নিয়ে।হাতে মোটা দড়ি।গাছটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল বলে ঘাঁড় ব্যাথা হয়ে গেছে।দড়ি ফেলে ঘাঁড় ডলতে ডলতে গাছটার চারিদিকে একবার ঘুরে আসলো মেয়েটা।তারপর দড়িটা নিচ থেকে তুলে গাছে উঠতে চেষ্টা করলো।কিন্তু তার কপাল।সে তো গাছে উঠতে জানেনা।উঁচুতে গেলে তার শরীর খারাপ হয়।মাথা ঘোরে।দড়িটার শেষ প্রান্তে একটা পাথর গিট্টু দিয়ে লাগিয়ে ছুঁড়ে মারলো ঢালের দিকে।ঢালটা এত উঁচু যে দড়িটা সেখান পর্যন্ত পৌঁছালোই না।দশ পনেরো মিনিট ধরে চেষ্টা করেও না পেরে সে দড়ি নিয়ে আবার চললো বাড়ির দিকে।

-‘কুসুম বোন!দাঁড়াও আমার জন্য’
-‘হ্যাঁ??কলি এসেছিস?’
-‘পারলেনা তো!!আমি জানতাম তুমি পারবেনা।’
-‘ইস্কুলের ছুটি হয়েছে তোর?আজ এত তাত্তারি?’
-‘আজ বৃহস্পতিবার তো।ভুলে গেলে?’
কুসুম মাথা চুলকে দড়িটা কলির হাতে দিয়ে চলতে চলতে বললো,,’আমার ছোট মাথায় ওতো সব থাকে নাকি?আজ বিসকুট দেয়নি?’

-‘না দেয়নি।চলোনা আমি সহ চেষ্টা করি।দোলনাটা যদি একবার লাগাতে পারি তাহলে কেল্লা পথে’
-‘নাহ।আমি এতক্ষণ বহুত কষ্ট করেছি পারিনি।কাল আবার চেষ্টা করবো।তোকে তাই তো বলি গাছে ওঠা শেখ।তুই যেদিন গাছে ওটা শিখবি সেদিন দোলনাটা লাগাতে পারবো আমি।’
দুজনে পথ চলতে চলতে মেইন রোডে এসে থেমে উল্টো পথে দূরের দিকে যতদূর চোখ গেলো ততদূর পর্যন্ত তাকিয়ে থাকলো কুসুম।কলি ও তাকালো বোনের দেখাদেখি। তারপর কুসুমের হাত টানতে টানতে বললো,’দেখবে এই ঈদেই আসবে’

-“প্রত্যেক বছর বলিস,কিন্তু আসেনা তো।আচ্ছা একটা কথা বল তো কলি,সবসময় ঈদ আসলেই কেন বলিস যে উনি আসবেন?’
-‘আমি শুনেছি,চাচি বলছিল।তিনি নাকি শুধু ঈদের সময় বাড়ি ফেরেন।’
-‘অথচ কতগুলো ঈদ কেটে গেলো তাইনা?
আমার কিছু মনে থাকেনা।আচ্ছা তাঁর নাম কি ছিল যেন?’
-‘হইছে আর ফুটানি করতে হবেনা।সব ভুলতে পারো,কিন্তু তার নাম তুমি ভুলতে পারবেনা তা আমার জানা আছে।আম্মার কাছে বলবো তোমার এমন ফুটানির কথা’
কুসুম জিভে কামড় দিয়ে দৌড় দিলো।কলি পিছু পিছু যেতে যেতে বললো,’আল্লাহ যেন আমার বোনের মুখে এমন হাসি চিরকাল রাখেন।’

ক্লাস শেষ হবার পর জুথি যখন বান্ধুবীদের সাথে চলে যাচ্ছিলো সেসময়ে একটা ইন্টার পড়ুয়া ছেলে ছুটে এসে জুথির সামনে দাঁড়ালো পথ আটকে।ছেলেটা একটা গোলাপ এগিয়ে ধরতেই তার বাকি ক্লাসমেটরা হাততালি দেওয়া শুরু করে দিলো।ছেলেটা ওদের ধমকিয়ে বললো,’আরে আমি প্রোপোজ করতে আসিনি।অর্ণব ভাইয়া বলছে আপুটাকে দিতে’

এবার বাকিরা আরও জোরে হাততালি দেওয়া শুরু করে দিলো।ছেলেটা আবার ধমকিয়ে ওদের থামিয়ে বললো,’ফুলটা নাকি আপুকে দেয়নি রাগ করে।এখন দিতে বলেছে আর আপনাকে বলতে বলছে ভাইয়া আপনাকে ক্ষমা করে দিছেন’

জুথি ফুলটা ঐ ছেলের হাতে আবার ধরিয়ে দিয়ে বললো,’তোমার ভাইয়াকে বলিও আমি তার কাছে ক্ষমা চাইনি।তাহলে কিসের মাফ করলেন উনি?কাঁটা সহ গোলাপ উনার মুখে পুরে দিও যাও!!’
কথাটা বলে জুথি চলে গেলো বাসার দিকে।একটা মেয়ে এসে ফুলটা ছেলেটার হাত থেকে নিয়ে বললো,’ধন্যবাদ ভাইয়া এই নিয়ে আজকে আমি ফুল তিনটা পেলাম’

ছেলেটা মেয়েটার পিছন পিছন ছুটে গিয়ে ফুল কেড়ে নিয়ে বললো,’গোলাপের দাম জানেন?স্যারের কাছে নালিশ করবো একদম।কি আজব ডিপার্টমেন্ট!! কেউ গোলাপ একটার জায়গায় তিনটা নিচ্ছে,কেউ নিচ্ছেই না।কেউ দিচ্ছেনা,আবার দিচ্ছে তাও আমাকে বাহন বানিয়ে।উহ!! আমি পাগল হয়ে যাবো নির্ঘাত’
অর্ণব ক্লাসে এসে বসেছে।এবার তাদের ক্লাস।বইয়ের পাতা উল্টে একটা কবিতা পড়ছে বিড়বিড় করে।মৃদুল বাউল গীতি শুরু করেছে।স্যার এখনও আসেননি।হঠাৎ আদিল ছুটে এসে গোলাপটা অর্ণবের সামনে রেখে বললো,’ভাইয়া ঐ আপু তো গোলাপ নিলোনা’

অর্ণব বইটা বন্ধ করে মৃদুলের হাসি শুনে ওর মুখের দিকে তাকালো।
মৃদুল ফুলটা নিয়ে হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বললো,’এই অর্ণবের হাতের ফুল নিতে মেয়েরা অপেক্ষা করে আর ঐ মেয়েটা কিনা ইগনর করলো?ভাবা যায়??’

লীলাবালি পর্ব ১

অর্ণব ফুলটা নিয়ে বললো,’আগে ইগনর আমি করেছি,পরে সে ইগনর করলো।নেক্সট বার ইগনর করার সময় আমার আসবে।ফুলটা আমার কাছেই থাকুক।মরা হলেও এই ফুল আমি ঐ মৃন্ময়ীর ব্যাগে পৌঁছাবো।’
মৃদুল হাসতে হাসতে বললো,’কি যেন বলছিল?আদর করে জুথি ডাকতে।হাহাহা’
অর্ণব ফুলটাকে বইয়ের পাতায় রেখে বইটা বন্ধ করে বললো,’আমি আদর করে তাহাকে বরং ক্ষতি ডাকবো।’

লীলাবালি পর্ব ৩