শর্ত পর্ব ১৯

শর্ত পর্ব ১৯
অনুসা রাত(ছদ্মনাম)

গভীর রাত!বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রাত।দৃষ্টি আকাশের চাঁদ টায়।শিশিরের মুখ থেকে তখন ভালোবাসার কথা শুনে রাত পাগল প্রায় হয়ে গেছিলো খুশিতে।তাই তো সেও আজ শিশিরকে নিজের মনে কথা বলে দিয়েছিলো। শিশিরকে নিজের স্বামীর অধিকার বুঝিয়ে দিয়েছে রাত।শিশিরের ভালোবাসার চাদর মুড়িয়ে নিয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে রাতের গাল লাল হতে আরম্ভ করলো। হঠাৎ কোমড়ে কারোর হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো রাত।কাঁপা গলাতেই বললো,

-“স্যার!”
শিশির পিছন থেকে রাতের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
-“শশশ!স্যার না। শিশির।”
-“উহুম।স্যার হবে।মাস্টারমশাই।”
শিশির রাতের কাঁধে আলতো চুমু দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“কল মি শিশির।”
-“হবে না আমার দ্বারা।”
-“হবে হবে।বলো বলছি।”
বলেই শিশির রাতকে আরেকটু চেপে ধরলো।রাত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
-“উফফো, হবে না বললাম তো।”
-“ট্রাই তো করো!”

রাত কিছুক্ষণ চুপ রইলো।আর শিশির রাতের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে রাতের মুখপানে তাকিয়ে আছে। রাত লম্বা করে কয়েকবার শ্বাস নিলো।কারণ তার তো শিশিরকে নাম ধরে ডাকার অভ্যাস নাই।একটু তো বলতে কষ্ট হবেই,সময় লাগবেই।শিশির ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“বলবে না?”
-“উফফ বলছি তো!”(বিরক্ত হয়ে)
-“থাক লাগবে না।”
বলেই সে রাতকে ছেড়ে দিয়ে দোলনায় বসে পড়লো।তখনই রাত বলে উঠলো,
-“রাগ কেন করছো শিশির!”

বলেই নিজের মুখে হাত দিয়ে দিলো।চোখ বড় হয়ে গেছে তার৷ শিশির খুশি হয়ে বললো,
-“খালি নাম ধরে ডাকতে বলেছিলাম।তুমি তো আপনি বলাটাও বাদ দিছো। ওয়াও!দ্যাটস গ্রেট।”
রাত পিছনে ঘুরে গেলো।মিটমিটি হাসতে লাগলো।শিশির আস্তে আস্তে আবারো রাতের পিছনে এসে দাঁড়ায়। শিশিরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছে রাত।অনুভব করছে শিশিরের প্রতিটি নিঃশ্বাস যা রাতের কাঁধে আছড়ে পড়ছে।শিশির ধীর কন্ঠে বললো,

-“রাত?”
-“হুমম!”
-“আবার বলবে প্লিজ?”
-“কি?”
-“ভালোবাসি।”
-“ভালোবাসি শিশির।”(মুচকি হেসে)
শিশির চোখ বন্ধ করে মুহূর্ত টা অনুভব করলো।নিজের প্রিয় মানুষের মুখে ভালোবাসি কথাটা হাজারবার শুনতেও কত্ত ভালো লাগে!শিশিরের মনে আনন্দের ঢেউ বইছে।
বেশকিছুক্ষণ পর রাত শিশিরের থেকে সরে এসে বললো,

-“আমি রুমে গেলাম।”
শিশির পেছন থেকে রাতের হাত আঁকড়ে ধরে বললো,
-“আমার টি-শার্ট পড়ে বসে আছো।আমি যে খালি গায়ে।”
রাত পিছনে ফিরতেই শিশিরকে খালি গায়ে দেখতে পেলো। এতক্ষণ সে এটা খেয়াল করেনি যে শিশির খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাত শিশিরকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-” বাহ রে!আমি কি ইচ্ছে করে পড়েছি নাকি। হাতের কাছে ছিল তাই।”
বলেই সে আবারো লজ্জায় লাল নীল হতে লাগলো।শিশিরের বেশ মজা লাগছে রাতকে জ্বালাতে।সে রাতের গাল টেনে বললো,
-“তাহলে এখন আমারটা আমায় ফেরত দাও।”
-“সেটা কিভাবে?”(অবাক হয়ে)
-“খুলে ফেলো।”
রাতের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।যেন এখনই কোটর থেকে বেড়িয়ে আসবে। শিশির বাঁকা হেসে বললো,

-“কি হলো?খুলো।”
রাত শিশিরের বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
-“ধূর! ”
রাত কিছু টা দূরে সরে গেলো।মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো।শিশির রাতের দিকে এগিয়ে এসে কোলে তুলে নিলো।রাত চেঁচিয়ে উঠলো,

-“একি করছো!”
শিশির মুচকি হেসে বললো,
-“তুমি খুলবা না তো আমারি খুলতে হবে।”
-“কিহহ!”
-“জ্বী।”
বলেঝ শিশির রাতকে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়।হয়তো আবারো পূনর্মিলন ঘটবে তাদের।ভালোবাসায় মেতে উঠবে দুটি আত্মা। শিশির ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবে রাতকে আর রাত সেই ভালোবাসা আগলে শিশিরকে আপন করে নিবে।

বেশকিছুদিন কেটে গেছে।সায়ানের তিন মাস বয়স হয়ে গেছে। রাতের যত্নের কমতি নেই।রাত আজকে ২ দিন পর কলেজ যাচ্ছে।গ্যাপ দিয়ে দিয়ে যায়।শিশির নামাজ পড়ে আবারো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আজকে যেন বেচারার ঘুম কাটছেই না। এদিকে এটা নিয়ে চরম বিরক্ত রাত।সে কি একা একা কলেজে যাবে নাকি?আপাতত সে সায়ানকে কোলে নিয়ে ফিডার খাওয়াচ্ছে। শিশিরকে ডাকতেও পারছে না।কিছুক্ষণ পর সায়ানকে বিছানায় শুইয়ে দিতে দিতে বললো,

-“ওয়েট আব্বাজান! আপনার বাপজানকে উঠাতে হবে।”
সায়ান কি বুঝলো কে জানে!খিলখিল করে হাসতে লাগলো।রাত শিশিরের মুখের সামনে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
-“শিশির কা বাচ্চা!উঠ যা!”
শিশিরের তো এই ডাকে জীবনেও ঘুম ভাঙার নয়। রাত এবার শিশিরকে এক নাগাড়ে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,
-“শিশির উঠ!উঠ।”
কিছুক্ষণ পর শিশির চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলো। রাগী গলায় বললো,

-“এই কি সমস্যা!ঘুমাতে দিচ্ছো না কেন?”
-“কয়টা বাজে? কলেজ যাবি না!”
-“আসতাগফিরুল্লাহ রাত। বরকে তুই-তুকারি করছো।আমি তো শুধু নাম ধরে ডাকতে বলেছিলাম।”
রাত বিছানা ঝাড়ু টা হাতে নিয়ে বললো,
-“তাত্তাড়ি উঠে ওয়াশরুমে যা।”
শিশির ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“সায়ান যদি তোমার থেকে এসব ভাষা শিখে তো খবর আছে।”

রাত শিশিরকে মুখ ভেঙালো। শিশির হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।রাতের একেকটা কারবার তার এত ফানি লাগে। এদিকে রাত বিছানা গুছিয়ে সায়ানকে কোলে নিয়ে বসে আছে। কারণ সারাদিন তো কাছে পাবে না তাই।শিশির ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে বললো,

-“তুমি রেডি হয়ে আমায় ডাক দিতা।”
-“আমার রেডি হতে বেশিক্ষন লাগে না।তোমার লাগে!”
-“মেয়েদের রেডি হতে বেশি সময় লাগে।”
-“তোমায় বলছে না?”(মুখ ভেংচি কেটে)
-“বলতে হয় না। এমনিই জানি। যাকেই জিজ্ঞেস করবে সেই বলবে।মেয়েদের রেডি হতে বেশি সময় লাগে।”
-“বুঝছি বুঝছি।রেডি হোন।”

বলেই রাত সায়ানকে কিছুক্ষণ আদর করে রেডি হতে চলে গেলো।শিশিরও সায়ানকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।সেও তো সারাদিন বাচ্চাটাকে পাবে না।
সায়ানকে চৈতী বেগমের কাছে দিয়ে রাত আর শিশির বেড়িয়ে পড়ে কলেজের উদ্দেশ্যে।রাতের এইচএসসি পরীক্ষার বেশিদিন বাকি নেই।শিশির তো ভেবেই নিয়েছে যে এরপর আর কলেজে আসতে দিবে না। বাসায় বসে পড়াশোনা করবে।হেল্পের জন্যে তো শিশির আছেই।
রাতকে ক্লাসের সামনে দিয়ে শিশির বললো,

-“ছেলেদের সাথে কম মিশবে।”
-“না কোলে উঠে বসে থাকব।”
-“আবার ত্যাড়া কথা।”
শিশিরের চোখ রাঙানো দেখে রাত ঢোক গিললো। জোরপূর্বক হেসে বললো,
-“আপনার কোলে উঠব। এটা বলেছি।”
শিশির হেসে ফেললো। রাতের গাল টেনে বললো,
-“ক্লাসে যাও।”

রাত শিশিরকে টাটা দিয়ে ক্লাসে ঢুকলো।শিহাব আর নিপা এগিয়ে এলো।কিন্তু রিসাবকে দূরে কলে কথা বলতে দেখে রাত শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“দেখলি?আগে আমারে আসতে দেখলেই পারলে কোলে উঠে যায়। আর এখন কি করতেছে দেখলি? শালারে খাড়া ধরতাছি।”

বলেই রাত রিসাবের দিকে এগিয়ে গেলো।রিসাব তখনো আস্তে আস্তে ফোনে কথা বলছে। একদম নিচু স্বরে। রাত গিয়ে রিসাবের কাঁধে হাত দিলো,
-“পরে আসতাছি শিহাব। যা তো বা*ল। দেখিস না? তোর ভাবীর সাথে কথা বলতেছি।”
-“এহেম এহেম।তাই নাকি?”
রিসাব রাতের গলা শুনে তাড়াতাড়ি করে কলটা কেটে দিলো।জোরপূর্বক হেসে রাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

-” হে হে হে!এমনিই আরকি।”
রাত রিসাবের কান ধরে মুচরে দিয়ে বললো,
-“এমনই তাই না?আমার ননদের সাথে প্রেম করে আমার থেকেই লুকানো হচ্ছে? ”
রিসাব রাতের হাত সরিয়ে অবাক হয়ে বললো,

-“কেয়া তোর ননদ?”
-“জ্বী। আর নাম্বারটা আমিই দিছি।”
বলেই রাত হাসতে লাগে।রিসাব মাথা চুলকে বললো,
-“তাইলে তো তুই আমার ভাবী। ভাবীজান।”
-“তুইও আমার নন্দাই।”

রাত আর রিসাব মজা করতে থাকে। একটু পর শিহাব আর নিপাও এসে যোগ দিলো।রাতের মুখে সায়ানের কথা শুনে তো সবাই সায়ানের সাথে দেখা করার জন্যে পাগল হয়ে যাচ্ছে।রাতও কথা দিলো যে একদিন সবাইকে দাওয়াত করে সায়ানের সাথে দেখা করাবে।এটা হবে রাত আর শিশিরের বিয়ের দাওয়াত!যেটা রাতের বন্ধুরা পায়নি।

কলেজ শেষ করে টিচার্স রুমের দিকে পা বাড়ায় রাত।তার পাশে নিপা। দুজন গল্প করতে করতে যাচ্ছে। হঠাৎ পাশ থেকে কেউ বলতে লাগে,
-“এই তুমি রাত না?”
রাত দাঁড়িয়ে গেলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো তারই কয়েকজন ক্লাসমেট দাড়ানো।তারমধ্যে রাতের পরিচিতও কয়েকজন।কিন্তু সবচেয়ে পরিচিত হলো ক্লাসে টপ করা স্নেহা।স্নেহাই কথাটা বলেছে।রাতের সাথে আগে কখনো কথা হয়নি। আজই ডাকলো।রাত মুচকি হেসে বললো,

-“জ্বী।”
স্নেহা রাতের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-“সো স্যাড। তোমার জন্যে অনেক খারাপ লাগছে গো।”
-“কেন?”(অবাক হয়ে)
-“শেষ অবধি এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে করতে হলো?”
রাতের রাগ উঠে গেলো।আশেপাশে তাকাতে লাগলো। নিপা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এসব কি বলছো তোমরা?”
স্নেহা আবার বললো,

-“ঠিকই তো বললাম। কেন রে রাত?তোর কি পাত্রের অভাব হয়েছিলো।বিয়ে হচ্ছিলো না বুঝি।নাকি শিশির স্যার বড়লোক বলে ঝুলে পড়লি!”
বলেই সবাই অট্টহাসি হাসতে লাগলো।রাত হাসলো।স্নেহার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-“হচ্ছিলো তো।বিয়ের প্রচুর প্রস্তাব আসছিলো।তাইতো শিশির স্যারের মত বড়লোকও প্রস্তাব দিলো।”
-“আচ্ছা তাই?এসব কোনো বিষয় না। এসব আমাদেরও আসে। আমাদের আসলে অবশ্য আমরা পাত্তা দিতাম না। আমি তো আরো দিতাম না। এক বাচ্চার বাপকে…এ্যাউউউ!”

রাত কিছু বলতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে শিশির বলে উঠলো,
-“আমি যতদূর জানি শিশির স্যার তোমায় প্রস্তাব দিবে না কখনো।”
রাত অবাক হয়ে পিছনে তাকালো।সবার হাসি বন্ধ হয়ে গেল। শিশির এসে রাতের পাশে দাঁড়ায়। স্নেহা জোরপূর্বক হেসে বললো,

-“স্যার আমি তো এমনিই মজা করছিলাম। ফ্রেন্ডস তো।”
-“এ ধরণের মজা আমি পছন্দ করি না। আর আমার ওয়াইফের সাথে এধরণের মজা হলে নেক্সট টাইম আমি কাউকে ছেড়ে দেবো না। হোক সে টপ করা কোনো মেয়ে।”
শিশিরের গম্ভীর কন্ঠ শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেল।তবুও স্নেহা সাহস করে বললো,
-“স্যার,কতজনকে চুপ করাবেন আপনি?আমাকে চুপ করিয়ে তো লাভ নাই। আরো কতজনই বলবে আপনাদের কীর্তি নিয়ে।!
রাত এবার মুখ খুললো,

-“কিসের কীর্তী?কি করেছি আমরা?ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে করে সুখে থাকতে চেয়ে শিশির স্যার কোনো অন্যায় করেননি।আর আমি ওনার পাশে থেকেও কোনো অন্যায় করিনি।কে কি বললো না বললো তা নিয়ে রাত আর শিশির চৌধুরী ভাবে না। আমরা বিবাহিত। অন্তত বিয়ে আগেই তো ঘুরছি না বা পরকীয়া করছি না।আমরা একটা পবিত্র সম্পর্কে রয়েছি।আর সারাজীবন আমরা আমাদের পাশে থেকে যাব।লোকে কি বললো সে আমাদের দেখার বিষয় না।আর আমাদের পিঠপিছে যারা বলবে তারা যে খুব ভালো এমনটাও কিন্তু নয়। খোঁজ নিলে দেখা যাবে তারা আরো বড় অপদার্থ। যাদের কুটনামি ছাড়া কাজ নেই।”

শর্ত পর্ব ১৮

বলেই রাত দম নিলো।শিশির রাতের দিকে তাকিয়ে আছে।সবাই চলে গেলো।কি আর বলবে তারা?রাতের কথা শুনে সবাই ই চুপ।নিপাও বিদায় দিয়ে চলে গেলো।শিশির রাতের হাত ধরে বললো,
-“এভাবেই পাশে থাকবে তো রাত?”
-“আজীবন।”(মুচকি হেসে)

শর্ত পর্ব ২০