অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ২৩

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ২৩
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

সুহাকে বেরিয়ে যেতে দেখে রিয়াজ ছুটে আসলো। মিঠু টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেটটি হাতে নিয়ে বলল,
“তুই থাক। আমি আসছি।”
অতঃপর বেরিয়ে গেল। সুহা বেশিদূর যায় নি। লম্বা কদম ফেলে তার পাশাপাশি এসে পথ ধরলো। ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি ধরে রেখে সুহার সামনেই বারবার সিগারেটের প্যাকেট ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছে। সুহা একবার গরম চোখে তাকিয়ে পায়ের গতি আরও দ্রুত করলো। মিঠু গলা ঝেড়ে বলল,

“টেস্ট করবেন?”
সুহার প্রচন্ড রাগ হলো। ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস নিচ্ছে। দাঁতে দাঁতে চেপে বলল,
“আপনার ফা*ল*তু সিগারেট আপনি টেস্ট করুন।”
মিঠু হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
“আমি তো সিগারেটের কথা বলিনি।”
তারপরই ধীর, গভীর গলায় বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমার প্রেম, একবার টেস্ট করে দেখুন। সারাজীবন মজে থাকতে ইচ্ছে করবে, ট্রাস্ট মি!”
সুহা দু-কদম পিছিয়ে গেল। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে কঠিন গলায় বলল,
“আপনার সে ইচ্ছে, ইচ্ছেই থেকে যাবে।”
মিঠু সিগারেটের প্যাকেট সুহাকে দেখিয়ে দূরে ছুঁ*ড়ে মা*র*লো। মৃদু হেসে বলল,
“এবার ইচ্ছে পূরণ হবে? আমি সিগারেট খাই না, ওটা রিয়াজের ছিল।”
“বললেই বিশ্বাস করতে হবে?”

মিঠু আরেকটু এগিয়ে এসে বলল,
“তাহলে কী করতে হবে? বলুন না, কী করলে বিশ্বাস করবেন!”
সুহা আরেকটু পিছিয়ে গিয়ে জড়ানো গলায় বলল,
“দূরে সরুন।”
মিঠু একই ভঙ্গিতে বলল,
“তাহলে আপনি আমায় বিশ্বাস করুন।”
“কী প্রমাণ আছে বিশ্বাস করার মতো?”

“একেবারে আমার কাছাকাছি চলে আসুন। রোজ নিজেই ইচ্ছে মতো চেক করতে পারবেন। প্লিজ!”
সুহা কটমট চোখে তাকিয়ে বলল,
“যান তো এখান থেকে।”
“দূরে কেন ঠে*লে দিচ্ছেন?”
“এমন পাগলামি আপনাকে মানায় না।”
“সবার জন্য করি না তো। শুধু আপনার জন্য।”
সুহা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল,
“কীজন্য ডেকেছেন?”

“আপনি বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন? সত্যটা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাইছি। কেউ আপনাকে ফোর্স করে রাজি করাক আমি তা চাই না। আমি চাই আপনি শুধু আমার জন্য রাজি হোন।”
সুহা শান্ত গলায় বলল,
“আমাকে কেউ জো*র করেনি।”
“সত্যি!”

“কিন্তু এখন আমি আর আপনাকে বিয়ে করবো না।”
মিঠুর কপালে ভাঁজ পড়লো। উত্তেজিত হয়ে শুধালো,
“কেন? কেন?”
“আমি সি*গা*রে*ট*খো*র পছন্দ করি না।”
“ওটা সত্যিই রিয়াজের ছিল। আচ্ছা আমার সম্পর্কে যা যা জানার, অরুকে ফোন করে জেনে নিতে পারেন। ও অন্তত আমার প্রশংসা করবে না, এটা নিশ্চিত! ও যদি বলে আমি সি*গা*রে*ট ফুঁকেছি কখনো, তবে আপনি যা বলবেন সেটাই হবে।”

সুহা বলল,
“নাম্বার দিন।”
মিঠু নাম্বার দিতেই সুহা সত্যি সত্যি অরুর নাম্বারে কল দিল। রিসিভ হতেই সুহা সালাম দিল।
অরু বলল, “কে?”
“আমি সুহা।”
“ওহ্ ভাবি! কেমন আছো?”
“ভালো। তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
“একটা ব্যাপার জানার ছিলো।”
“বলো না, কী বলবে!”

“তোমার ভাইয়ের কি সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আছে?”
“না তো। কেন?”
“আমি দেখলাম, সেজন্যই জিজ্ঞেস করেছি।”
“কী বলো! ভাইয়ার এসব অভ্যাস নেই। ওর সবচেয়ে বড়ো বদঅভ্যেস ঘর অগোছালো রাখা। সিগারেট ছুঁলে তো ঘরেই জায়গা দিতাম না।”
“আচ্ছা, আমি বোধহয় ভুল দেখেছি। রাখছি।”
“ঠিক আছে।”

সুহা কল কে*টে সামনে তাকাতেই মিঠু ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কী বুঝলেন?”
“তুলসী পাতা।”
“তাহলে আমার কদর করা উচিত আপনার।”
সুহা আড়চোখে তাকালো। কিছু বললো না। মিঠু আজ সাহসের কাজ করলো। সুহার হাত নিজের মুঠোয় চেপে ধরলো। সুহা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। তবে সেটা ক্ষীণ সময়ের জন্য। পরক্ষণেই শান্ত হয়ে গেল। মিঠু বলল,

“অফিস শেষে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। আমি আপনাকে পৌঁছে দেব।”
“আমি একাই পারবো।”
“জানি। তবুও অপেক্ষা করবেন।”
“কেন এত অধিকার দেখাচ্ছেন?”
“কারণ, আপনি আমার হবেন। নিজের সবকিছুই আমি ভীষণ যত্নে আগলে রাখি। আমার যত্নে গড়া কিছু মানুষ আছে। আমার বোনেরা, বাবা-মা, বন্ধু এরা আমার বড্ড বেশিই প্রিয়। আপনিও তাদেরই একজন সুহা।”

সুহা অবাক চোখে দেখছে। আদতে এসব সত্যি হবে! যদি এসব স্বপ্ন হয়ে থাকে, তবে এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিক। এটা মনেপ্রাণে চাইলো সে। বহুদিন পর আবারও নিজের কথা ভাবলো।

অমি সারাবাড়ি চড়ে বেড়াচ্ছে। দাদুআপুর ঘরে গিয়ে স্থির হলো। ছোটো ছোটো পায়ে এগিয়ে আয়েশা সুলতানার বিছনায় উঠে পড়লো। আয়েশা সুলতানা আড়চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“কী জন্য এসেছো?”
অমি টুকটুক করে তাকিয়ে বলল,
“এটা আমার বাড়ি।”
আয়েশা সুলতানা বিরোধিতা করে বললেন,
“বললেই হলো? এটা আমার বাড়ি।”
অমি জেদ ধরে বলল,

“বাড়ি আমার, বিছানা আমার, ছেলেও আমার, মেয়েও আমার। সব আমার৷ তোমার কিছুই নেই।”
“ইশ! ছেলে-মেয়ে কোথায় পেয়েছো তুমি?”
“আমি হাসপাতাল থেকে কিনে এনেছি।”
“জন্ম দিলাম আমি। আর ছেলেমেয়ে তোমার হয়ে গেল?”
“যাও একটা মেয়ে তোমাকে দিয়ে দিলাম।”

“কোন মেয়েকে দিলে?”
“অরুকে।”
“অরুকে কেন?”
“অরু আমার সাথে ঝ*গ*ড়া করে। ভালো না।”
আয়েশা সুলতানা উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। বললেন,

“অরু তোমার সাথে ঝ*গ*ড়া করে?”
“হ্যাঁ, আমার চকলেটও খেয়ে নেয়। বলে ‘একটু দে’ তারপর পুরোটা খেয়ে নেয়।”
অরু বাড়ি ফিরে অমির খোঁজে এ বাসায় আসলো। তার হাতে চকলেট। আয়েশা সুলতানার ঘরে ঢুকে চকলেট দেখাতেই অমি অরুর কাছে চলে গেল। আয়েশা সুলতানা বললেন

“একটু আগে না বললে আমার মেয়ে ভালো না! তাহলে আমার মেয়ের কাছে কী?”
অমি অরুর গালে চুমু দিয়ে বলল,
“না, মিষ্টি মেয়ে অরু। তোমার রামি পঁচা ছেলে। ওঁকে নিয়ে যেও।”

অর্ধরাত্রি। অরু সব গুছিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখনই রামির কল। রিসিভ করে ফোন এক জায়গায় রেখে বইপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে অরু। রামি জিজ্ঞেস করলো,
“পড়া শেষ।”
“হুম।”

“আচ্ছা তাহলে ঘুমিয়ে যা। সকালে আবার উঠতে হবে তোকে।”
অরু জবাব দিলো না। বইপত্র গোছানো শেষ করে ফোন হাতে নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো। বলল,
“কথা বলতে না চাইলে এখন কল দিয়েছো কেন?”
“ভেবেছিলাম তুই পড়ছিস। তুই পড়লি আর আমি কলে থাকলাম। এখন তো পড়া শেষ তোর।”

“তো?”
“এখন ঘুমাবি না?”
“না।”
“কেন?”
“তোমার কি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না? কল দিয়ে বেঁচে যাওয়ার ফন্দি আঁটছো। তবেই না কাল বড়ো গলা করে বলতে পারবে আমি তো কল দিয়েছিলাম।”
রামি স্ক্রিনে এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে হাসলো। অরুর নাক-মুখ কুঁচকে কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে তাকে জ্বালানোর জন্য বলল,

“এখানে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে বুঝলি?”
অরু চোখ রাঙিয়ে বলল,
“তুমি সুন্দরী মেয়ে দেখতে গিয়েছো না-কি ডিউটি করতে?”
“এক ঢিলে দুই পাখি আরকি।”
“তুমি সুন্দরী মেয়ে দেখ। বাড়িতে আসবে না বলে দিলাম।”
বলেই অরু খট করে লাইন কে*টে দিল।
রামি পরপরই আবার কল দিল। রিসিভ করে অরু বলল,

“ডিস্টার্ব করো কেন?”
রামি মৃদু হেসে বলল,
“বউ দেখতে।”
“না তুমি সুন্দরী দেখ গিয়ে।”
“আমার বউ তো সবার চেয়ে বেশি সুন্দরী। সে ছাড়া আর কোন সুন্দরীকে দেখবো?”
অরু সূঁচালো চোখে তাকিয়ে বলল,

“কথা ঘোরানোর চেষ্টা করছো?”
“মোটেই না।”
“আমি এখন ঘুমাবো।”
“এখন ঘুমানো যাবে না।”
“বললেই হলো?”
“আমি যখন বলেছি, তখন অবশ্যই হবে।”
“আমার উপর কথা বলো যে, তোমার বুক কাঁপে না?”
“তুই কী এমন যে, বুক কাঁপবে?”

“কী বলতে চাও? আমি কিছু না? বুঝবে একদিন, যেদিন আমি থাকবো না।”
রামি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,“কোথায় যাবি তুই?”
“ঘুরতে চলে যাব কোন দেশে। তখন আমার অভাব বুঝবে।”
রামি হেঁয়ালি করে বলল,“এমন ভাব ধরলি, আমি তো ভেবেছি আমার জীবনটাকে শান্তিময় করে দিয়ে কোন দিকে চলে যাবি।”

“কী ভেবেছো কী চান্দু? তোমাকে আমি এতো সহজে ছেড়ে দেব? এখনো তোমাকে কড়াইয়েই দিলাম না। ভাজা ভাজা করা এখনো বাকি।”
“তোকে কি এমনি এমনি আমি সাং*ঘা*তি*ক বলি? কী অনায়াসে আমার জীবনের সূত্র মিলিয়ে বসে আছিস। মনে হচ্ছে মান হাতে পেলেই টপাটপ অঙ্ক কষে ফেলবি! বে*য়া*দ*ব হচ্ছিস দিন দিন। আদবকায়দা কিছু শেখ আমার কাছ থেকে। ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েরা তোর কাছ থেকে কী শিখবে?”

“আমার কাছ থেকে শেখার অনেক কিছুই আছে। কিন্তু তোমার কাছ থেকে কী শিখবে?”
রামি বুক ফুলিয়ে বলল,
“আমাকে দেখেই তো শিখবে। তোর কাছ থেকে তো শেখার মতো কিছুই নেই।”
অরু হো হো করে হেসে বলল,
“কীভাবে শ*য়*তা*নে*র পেছনের কু*ড়া*ল মা*রা যায় সেটাই শিখবে।”
রামি মাথা চুলকে বলল,

“আসলেই তো। আমাদের কাছ থেকে কী শিখবে?”
একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। দুজন ফোনের দু-পাশ থেকে হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে।
রামি নিজের হাসি থামিয়ে বলল,
“ভালো হয়ে যা অরু। ভালো হতে পয়সা লাগে না।”
“তুমি কাকে জ্ঞান দিচ্ছে? আগে নিজে তো ভালো হও।”
“আমার মধ্যে খা*রা*পে*র কী আছে?”
“সেটা কি বলবো এখন?”
রামি বলল,

“কে যেন আমার হোয়াটসঅ্যাপে একটা ভিডিও পাঠিয়েছিল! সেটা কি পাঠাবো?”
অরু চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“এটা ডিলিট করো বলছি।”
রামি দাঁত কেলিয়ে বলল,
“করবো না ডিলিট।”
“ভালো হচ্ছে না কিন্তু। ”
“ডিলিট দেব। একটা শর্ত আছে।”
“কী শর্ত?”

“আমি যদি ভিডিও ডিলিট দিই, তাহলে আমি কী পাব?”
“যাও, সব জায়গায় দুনম্বরি। ডিলিট দিতে হবে না।”
“সত্যিই ডিলিট দিতে হবে না?”
অরু করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ২২

“এমন করো কেন? ডিলিট করে দাও না।”
“তোর ঘুমাতে দেরি হচ্ছে। ঘুমিয়ে পড়। আমি আবার ফ্রি হলে কথা হবে।”
বলে রামি লাইন কে*টে দিল। অরু তবুও অসহায় চোখে স্ক্রিনে তাকিয়ে রইলো। ফোন রেখে সে ভাবলো ভবিষ্যৎ বাচ্চা-কাচ্চা তাদের দুজনের কাছ থেকে কী শিখবে!

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ২৪