অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৪০

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৪০
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

সবাইকে অবাক করে দিয়ে অরু আজ এ বাড়ির রান্নাঘরে রান্নার কাজে হাত লাগিয়েছে। ইরা তাকে ঠে*লে দিয়ে বলল,“যা তো। নতুন বউ এসেছে কাজের নামে ঢং করতে।”
অরু বাঁকা চোখে তাকালো। তীক্ষ্ণ খোঁচা মে*রে বলল,“এ বাড়িতে পারমানেন্ট হয়ে আসতে না আসতেই দেখছি কূটকচাল শুরু করেছো।”

ইরা চুপ রইলো না। সমানে সমানে সেও বলল,“কে কূটকচাল করার চেষ্টা করছে, সেটা কি আমরা বুঝি না? সবাইকে দেখাতে চাচ্ছে নতুন বউ দিয়ে আমরা বিয়ের পরদিনই কাজ করাচ্ছি। সবার চোখে মহান সেজে আমাদের ব*দ*না*ম করার চেষ্টা।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তরী চুপচাপ হেসে চলেছে। সে দু’জনের কাউকেই বাঁধা দিচ্ছে না। ইরা তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,“দু-বোন মিলে আমাকে জব্দ করার ফন্দি চলছে খুব। কী ভেবেছো? দু-বোন একঘরে বলে তোমাদের শক্তি বেশি?”
অরু ফিক করে হেসে বলল,“শক্তি বেশিই তো। তোমার বরটাও কিন্তু আমার দলে। দেখো না কেমন অরু অরু করে!”
ইরার মুখ চুপসে গেল। খানিক পর আফসোস নিয়ে বলল,“তোমাদেরই কপাল। দেখো বুইড়া জামাইটাও অন্যের বউয়ের নাম জপে!”

তরী এবার শব্দ করে হেসে বলল,“দুজনের ঝগড়া শেষ হয়েছে? দ্রুত হাত চালিয়ে নাস্তা বানাও তো। সবাই একটুপরই নাস্তা করবে।”
ইরা অরুর উদ্দেশ্যে বলল,“পেঁয়াজগুলো কে*টে দে তো অরু।”

অরু মুখ ভেংচি কে*টে বলল,“কাজ তো করাবেই। শুধু শুধু ভালো সাজার নাটক করার কী দরকার ছিলো? আমি কি বুঝি না মানুষের পেটে পেটে যে শ*য়*তা*নি বুদ্ধি।”
ইরা মুখ চেপে হাসলো। বলল,“মানুষের বিয়ের কাজ আমরা কেন করবো? নিজের কাজ নিজে বুঝে নিক।”
তরী বলল,“থামো তো দুজন।”

নামাজ পড়ে আবারও মিঠুকে ডাকলো সুহা। নড়েচড়ে ফের ঘুমের দেশে তলিয়ে যাচ্ছে সে। সুহা মিটিমিটি হেসে চিমটি কাটলো মিঠুর গালে। চোখমুখ কুঁচকে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে গেল মিঠু। সুহা দ্বিতীয়বার চিমটি কাটতে নিতেই তার হাত বাঁধা পড়লো। খপ করে চেপে ধরলো মিঠু। ক্ষীণ চোখের পাতা খুলে ঘনঘন পলক ঝাপটালো। ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি। সদ্য ঘুম ভাঙা গলায় বলল,“কাছে আসতে চাও?”

সুহার উদ্দেশ্য এমন কিছু না হলেও মিঠুর কথায় বেশ লজ্জা পেল৷ মেকি রাগ দেখিয়ে ঝাড়ি দিয়ে মিঠুর বাঁধন থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো৷ ফোঁস করে শ্বাস টে*নে বলল,“সময় চলে যাচ্ছে। দ্রুত উঠে নামাজ পড়ে নিন।”
চোখে রাজ্যের ঘুম। আজ কিছুতেই বিছানা ছেড়ে উঠতে মন টা*ন*ছে না। বিছানায় কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে উঠে পড়লো মিঠু। দশমিনিটে নামাজের জন্য তৈরি হয়ে জায়নামাজ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।

বাড়িতে অল্পস্বল্প মেহমান। তরী বা অরু কেউই নেই। সুহা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তাকে কয়েকবার দরজার ওপারে উঁকিঝুঁকি দিতে দেখা গিয়েছে৷ মিঠু নামাজ শেষ করে পেছন থেকে আলিঙ্গন করলো সুহাকে। সে ঈষৎ চমকে উঠলো। গভীরভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করলো মিঠু। বাঁ ভুরু উঁচু করে শুধালো,“কী নিয়ে চিন্তিত?”

অসহায় চোখে তাকালো সুহা। বলল,“কী করবো বুঝতে পারছি না। বাড়িতে মেহমান আছে, কিন্তু আপুরা কেউ নেই।”
মিঠুর কপালে ঢেউ খেলে গেল। চোখ ছোটো করে বলল,“আপুরা? তুমি অরুকে আপু বলছো কোন্ হিসেবে? সে তোমার ছোটো। এখন তো পারমানেন্ট এখানে থাকবে তুমি। নিজের চোখে যখন ওঁর কাণ্ডকারখানা দেখবে, তখন নিজ থেকেই ওঁকে ছোটো বলবে তুমি। আপু বলার আর সাধ থাকবে না।”

সুহা জড়তা নিয়ে বললো, “একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“করো।”
“এত দ্রুত অরুকে বিয়ে দিলেন কেন?”

মিঠু হাসলো। বলল,“ছোটো বলেছি বলে এই প্রশ্ন করছো, তাইনা? সবার আদরের তো। এখনো পরিপক্বতা আসেনি। মানুষের মাঝে পরিপক্কতা বয়স বাড়ার সাথে সাথে আসে না। পরিস্থিতি একজন পনেরো বছরের কিশোরীকেও অনেকটা বুঝদার বানিয়ে দেয়, আবার পঁচিশ পেরিয়েও অনেকে ছেলেমানুষ থেকে যায়। অরু অনেকটা ছোটো থাকতেই মা আমাদের ছেড়ে চলে যান। তখন আমিও আশপাশটা অতটা ভালো বুঝতাম না, চিনতাম না।

তখন আপু আমাদের আগলে রেখেছে মায়ের জায়গা থেকে। আমার বোনটা মায়ের জন্য খুব কাঁদতো। আমরা যতটুকু মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি, অরু ততোটা পায়নি। তাই সবসময় চেষ্টা করতাম আমার ছোট্ট বোনটাকে হাসিখুশি রাখতে। ওঁর সঙ্গ পেলে আমিও কেমন ছেলেমানুষী কাজকর্ম করে বসি। সবার চোখে অরু বড়ো হলেও আমার চোখে, আমাদের চোখে সে এখনো ছোট্ট অরুই আছে। নিজের কাজকর্ম শেষে যখন ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরতাম, আমার একাকীত্বের সঙ্গী হতো সে। রোজ আমার সাথে ঝ*গ*ড়া করে আমার মেজাজ ফুরফুরে করে ফেলতো।

একসময় অরু পড়ার জন্য হলে উঠলো। একা হয়ে গেলাম আমি। বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করতো না তখন। অরু যেদিন বাসায় আসতো, সেদিন আমার জন্য ইদের দিন হতো। মাঝেমাঝে আমার দুশ্চিন্তা হতো, অরুকে বিয়ে দিলে ওঁর শশুরবাড়ীর লোকজন কেমন হবে? আমার এই পাগলাটে স্বভাবের বোনটাকে সহজভাবে নেবেন তো তাঁরা? সবাই তো আর এমন চঞ্চল স্বভাব পছন্দ করে না।

তারপর যখন জানলাম রামির মনে অরুর জন্য অনুভূতি আছে, তখন থেকে আমি নিশ্চিন্ত হলাম। কারণ, বলতে গেলে আপুর শাশুড়ির কাছেই আমরা বড়ো হয়েছি। তিনি চাইলেই আপুকে আমাদের বাসায় আসতে বাঁধা দিতে পারতেন। তিনি অরুকে অনেক স্নেহ করতেন। তাছাড়া তাদের বাসার সবাই অরুকে স্নেহ করে। সাদাদ ভাইয়া তো সুযোগ পেলে এখনো ক্ষেপায়। খুব বেশি বলে ফেলেছি। আসলে অরুর ব্যাপার আসলে আমি সহজে সবটা হজম করতে পারি না।”

সুহাকে বিচলিত দেখালো। সে অস্থির গলায় বলল,“আপনি আমায় ভুল বুঝেছেন। আমি তেমনভাবে বলিনি।”
সুহার শুকনো চোখমুখ দেখে হেসে ফেললো মিঠু। ফিসফিস শব্দ হলো হাসির। সুহার নাক টে*নে দিয়ে বলল,“জানি। আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম। বড়ো ভাইয়ের সাথে যেমন সম্পর্ক থাকা উচিত, অরু তার বিপরীত। আমাদের মধ্যে কখনো তেমন সম্পর্ক ছিল না। দু’জনই পিঠাপিঠি ভাই-বোনের মতো একে অপরের পেছনে লেগে পড়ি। আমাদের দুজনকে দেখে তোমার যেন মনে না হয়, অরু আমাকে সম্মান দেয় না। সহজভাবে সবটা নেবে। আগে থেকে জানিয়ে রাখা ভালো নয় কি?”
সুহা অপরাধী গলায় বলল,“আমি সত্যিই তেমন কিছু মিন করিনি।”

“এত বিচলিত হচ্ছো কেন তুমি? ঝটপট আমাকে একটা চুমু খাও তো। চাপ কমে যাবে।”
সুহা চট করে মিঠুর দিকে তাকিয়ে দেখলো তার ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি। মাথানিচু করে গাল বাড়িয়ে দিয়ে তাড়া দিল মিঠু।
“তাড়াতাড়ি। নিয়ম করে সকাল, বিকাল, রাতে বরকে চুমু খেলে দু’জনেরই হার্ট ভালো থাকবে।”

সুহা এদিক-ওদিক তাকিয়ে দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করলো। তার কান গরম হয়ে এলো। মিঠু হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজে মুখ বাড়িয়ে দিল। দু-হাতে আঁজলা করে মুখ তুললো সুহার। বেশ সময় নিয়ে ডান গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। একইরকম বাঁ গাল, কপাল, থুতনি ছেড়ে চোখের পাতায় গভীরভাবে অধর চেপে রাখলো। সুহার বন্ধ চোখের কম্পন স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে মিঠু। চোখজোড়া ছেড়ে দাঁড়ালো সে।

“বউ হার্টের চিন্তা করে না। আমি তো আর এত বড় দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারি না।“
বলেই ওষ্ঠ জোড়া চেপে ধরলো।

বাসায় সব এগিয়ে অরু আর ইরার উপর বাকিকাজের দায়িত্ব দিয়ে তরী ছুটে এলো বাবার বাসায়। সুহা নতুন এ বাসায়। কী থেকে কী করবে মেয়েটা? এসেই রান্নাঘরে ঢুকলো। সুহাকে দেখে বলল,“তুমি রান্নাঘরে কী করছো? ও দিকে সবটা সামলে দিয়ে আসতে আমার দেরি হয়ে গেল। নাস্তা আমি বানাচ্ছি। তুমি বরং পাশে দাঁড়িয়ে দেখ। দুদিন পর নিজের সংসার তোমার নিজেকেই সামলাতে হবে।”

সুহা মৃদুস্বরে বলল,“চা করেছি আমি। সবাইকে আগে দিয়ে আসি?”
তরী মিষ্টি হেসে বলল,“যাও।”
সবাইকে চা দিয়ে একেবারে শেষে তরীর বাবার কাছে গেল সুহা। চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলল,“বাবা আপনার চা।”
খবরের কাগজ নামিয়ে নিলেন তরীর বাবা। সুহার দিকে তাকিয়ে চমৎকার হেসে বললেন,“দাও।”

সুহা যাচ্ছে না। ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে রইলো। মূলত সে জানতে চাচ্ছে উনার চা কেমন লেগেছে? তরীর বাবা হয়তো বুঝলেন ব্যাপারটা। সন্তান, স্বামী, বাবা, সবগুলো পর্যায় অতিক্রম করে এসেছেন তিনি। তাই সুহার দাঁড়িয়ে থাকার কারণ ধরতে সময় লাগলো না। প্রথম চুমুক দিয়ে শুধালেন,“তুমি বানিয়েছো?”
সুহা দ্রুত উপর-নিচ মাথা দোলালো।

তরীর বাবা আবারও হেসে বললেন,“বেশ ভালো চা বানিয়েছো।”
সুহা জড়তা নিয়ে বলল,“আপনাকে চা করে দেওয়ার দায়িত্বটা কি আমি পেতে পারি?”
“শুধু চা নয়, এই বুড়ো বাবাটাকে যত্ন করে চা করে দেওয়ার দায়িত্বটা এখন থেকে তোমার।”

সুহার ঠোঁটে হাসি খেলে গেল। তার চোখমুখ চকচকে দেখাচ্ছে। দারুণ উৎসাহে হেসে বলল,“ঠিক আছে বাবা।”
সুহার নিজেকে এখন বেশ সহজ লাগছে। অনেকদিন পর তার আবারও মনে হলো আল্লাহ উত্তম কিছু দেবেন বলেই আমাদের কিছু জিনিস থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। এই মানুষগুলোর সাথে তার মিষ্টি সম্পর্ক হবে বলেই হয়তো অনিক আর তার পথ ভিন্ন হয়েছিল।

বিয়ের ঝামেলা চুকে গিয়েছে। এতদিনে বই ছুঁয়ে দেখা হয়নি। প্রচুর পড়া জমেছে তার। অথচ এখনো মাথা থেকে আনন্দের ভূত নামেনি। ভালো ফলাফল করতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু পড়তে ইচ্ছে হয়না। মনের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মস্তিষ্কের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে কোমর বেঁধে পড়তে বসলো। সবাই ঘুমাচ্ছে। অথচ অরু জেগে আছে পড়ার জন্য। তার সাথে রামিকেও জেগে থাকতে হচ্ছে। ঘুমালেই বিপদ। দেখা গেল সকালে ঘুম থেকে উঠলেই দেখবে তার বউ বাঁকা হয়ে আছে, কথা বলছে না।

অপরাধ বউকে একা রেখে সে কেন ঘুমিয়ে পড়লো! অরু পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে চেয়ারে ভর ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। পড়া বাদ দিয়ে গান ধরলো সে। পড়ার চাপে অতিষ্ঠ হয়ে বিরহের গান নয়, বেশ মুড নিয়ে রোমান্টিক গান গাইছে। রামি হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,“বাইরের কেউ যদি আমাদের বিয়ের ঘটক হতো, তাহলে তাঁকে দো*ষ দিতে পারতাম, কোন পা*গ*লে আমাকে এই পা*গ*ল ধরে দিয়েছে। আমি নিজেই তো পা*পি। স্বেচ্ছায় পা*গ*ল ধরে এনেছি।”
অরু চোখ খুলে ফেললো। বলল,“এখন কি আমায় চলে যেতে বলছো? চলে যাব?”

“এখন আর পড়তে হবে না। সকালে উঠে পড়িস।”
“কথা ঘোরাচ্ছ?”
“আচ্ছা চলে যাবি বুঝলাম। কোথায় যাবি?”
অরু বলল,“তুমি বললেই কি আমি চলে যাচ্ছি না-কি? এই সুযোগই তো খুঁজে বেড়াচ্ছো। আমি চলে গেলেই আবার বিয়ে করতে পারবে। সরো ঘুম পাচ্ছে।”

রামিকে ঠে*লে বইপত্র না গুছিয়ে অরু গিয়ে শুয়ে পড়লো। রামি বই বন্ধ করে গুছিয়ে রেখে বিছানায় এসে বসলো। অরু চোখ বন্ধ করে আছে। নড়চড় নেই। রামি ভাবলো ঘুমিয়ে পড়েছে সে। কম্বল ঠিক করে দিয়ে অরুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। অরু হুট করে প্রশ্ন করলো,“তুমি আমাকে বিয়ে করেছো কেন?”
রামির চোখটা লেগে এসেছিল। অরুর আচমকা প্রশ্নে খানিকটা চমকে ঘুম ছুটে গেল। অরু ঘুরে রামির দিকে মুখ করে শুলো।

“বলো।”
রামি বলল,“জানি না।”
“জানো না কেন?”
“এখন ঘুমা।”
“না, আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। নয়তো তোমাকেও ঘুমাতে দেব না।”
“কী করবি?”

“দেখাচ্ছি” বলে রামির চোখের পাতা দু-আঙ্গুলে টে*নে ভুরুর সাথে ঠে*লে ধরে রাখলো। বাধ্য হয়ে চোখ খুলে ফেললো রামি। অরু হেসে তাকিয়ে আছে। বলল,“দেখেছো তো আমি কী করবো!”

রামি করুণ চোখে তাকিয়ে আছে। কীভাবে নিজের পায়ে কুড়াল মা*র*তে হয়, তা লোকের তার কাছ থেকে শেখা উচিত।
রামি আবারও চোখ বন্ধ করে অরুকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরলো। লম্বা সময় নিরবতার পর মৃদু হেসে বলল,“জানি না কেন তোকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম আমি। তবে আমি সেসময় অনুভব করেছি, সাঁতার জানা আমিটাও ভীষণ বাজেভাবে প্রেমনদীতে ডুবে যাচ্ছি। বাঁচতে হলে অবশ্য তোকে লাগবে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করলাম।”

অরু কিছুই বলছে না। না নড়াচড়া করছে। রামি সন্দেহী চোখে তাকালো অরুর দিকে। সে ঘুমিয়ে গিয়েছে। অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে মাথা দোলালো রামি। অরুর ঘুম এখনো ভারি হয়নি। সে সবটা শুনলেও চোখ খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। গুটিসুটি মে*রে রামির সাথে আরেকটু মিশে গেল।

অরুরা দু-বোনই আজ বাবার বাসায়। মিঠু বিয়ের পরই আবার কাজে লেগে পড়েছে। এখন অবশ্য বেশি রাত করে ফেরে না। আজ দশটায় ফিরলো বাসায়। একসাথে বোন, বোন জামাই, বাবা আর স্ত্রী নিয়ে রাতের খাবার খেলো। খাওয়া শেষে অরু তাকে চেপে ধরলো।

“সেদিন আমাকে টাকা না দিয়েই কে*টে পড়েছিলে। এখন আমার টাকা দাও। ফিফটি ফিফটি।”
মিঠু তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,“কীসের টাকা? আমার কাছে কোন টাকাপয়সা নেই। জমা দিয়েছিস নাকি?”
অরু রামিকে সাক্ষী করিয়ে বলল,“দেখেছো? তুমি না সেদিন দশ হাজার টাকা দিলে? হিসেব মতো পাঁচ হাজার আমার। অথচ এখন কেমন পল্টি খাচ্ছে!”

মিঠু গা ঝেড়ে বলল,“আমি কোন টাকা-পয়সা দিতে পারবো না।”
“দেবে না?”
“না।”

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৩৯

অরু থুতু ছুড়ে মা*র*লো। ছিঁটকে সরে গেল মিঠু। আবারও অরু এগিয়ে আসতে নিলে মিঠুও পাল্টা আক্রমণ করলো। এবার পিছিয়ে গেল অরু। সুহার চোখ চড়কগাছ। মিঠুকে সে সবসময় একরকম দেখে এসেছে। আজ মনে হচ্ছে বয়সের তুলনায় সে ছোটো হয়ে গিয়েছে। কেমন অরুর সাথে লেগেছে! দিন দিন নতুন করে জানছে মানুষটাকে।

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ শেষ পর্ব