অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৩৮

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৩৮
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

“বউ নিয়ে এসে গিয়েছে” বলে হৈচৈ লেগে গেল। তরীর দায়িত্ব বেশি। সে কোনদিকে যাবে? ওদিকে ভাইয়ের যে দায়িত্ব নেওয়ার মতো সে ছাড়া আর কেউ নেই। আয়েশা সুলতানা হয়তো বুঝলেন। তিনি তরীকে বললেন,“ওদিকটা গিয়ে সামলাও। এখানে ইরা আছে, আমি আছি।”

তরী মনে মনে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেেও ঠোঁটে টানলো স্বচ্ছ হাসি। পরনের ভারী শাড়ি বদলে নিয়ে হালকা একটা জামা পরে নিলো। অমি এখানেই রইলো। অরুকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো রামি। অরু উসখুস করছে কিছু বলার জন্য। কিন্তু সবাই সামনে থাকায় বলতে পারছে না। রামি অরুকে পর্যবেক্ষণ করে কন্ঠ খাটো করে শুধালো,“কোন সমস্যা হচ্ছে?”
অরু রামির দিকে তাকালো না। সামনে তাকিয়ে থেকে সে-ও চাপা স্বরে আবদার করে বসলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমার তো একটা মাত্র ভাই। তাঁর বিয়ের নিয়মকানুন সব আমাদের বাসায় হচ্ছে আর আমি এখানে। আমার না যেতে ইচ্ছে করছে!”
রামি কিছু বললো না। চুপচাপ উঠে গেল। অরুর অল্পস্বল্প অভিমান হলেও তা আর পাত্তা দিলো না। সে-ও তো নতুন বউ। এভাবে সবাইকে এখানে রেখে নিজের বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করাটাও বেমানান। রামিরই বা এখানে কী করার আছে! মনকে উপরি উপরি যতই বুঝ দিক না কেন, ভেতরে ভেতরে নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য ছটফটিয়ে উঠলো। রামি সোজা গিয়ে ইরার পাশে দাঁড়ালো।

“কীরে, কিছু বলবি?”
“হ্যাঁ, অরুর মাথাব্যথা। ওখানে অনেক মুরব্বিরা আছেন। আমি কিছু বললে হয়তো নেতিবাচকভাবে নেবেন। অনেকে মনে কষ্ট নিয়ে বসবেন। তুমি বরং অরুকে নিয়ে চেঞ্জ করিয়ে দাও।”
“আচ্ছা তুই যা। আমি অরুকে নিয়ে আসছি।”

মুরব্বিদের মাঝ থেকে কৌশলে অরুকে নিয়ে এসেছে ইরা। এজন্য কম প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়নি। অরুকে রামির ঘরে নিয়ে একটা সুতি শাড়ি বের করে নিলো। শাড়ির পিন খুলতে সাহায্য করে ইরা বলল,“মাথাব্যথা বেশি হচ্ছে? তুই কিছুক্ষণ শুয়ে থাক। আমি চা নিয়ে আসছি।”
মাথাব্যথা এখন খুব একটা নেই। তবুও অরু চুপ করে রইলো। ইরা চলে যেতেই দরজা চাপিয়ে সুতি শাড়িটি শরীরে জড়িয়ে নিলো। এখন অনেকটা হালকা লাগছে। কিছুক্ষণের মাঝেই ইরা চা দিয়ে গেল। চা খেয়ে মনে হচ্ছে মাথাব্যথা পুরোটাই সেরে গিয়েছে। রামি ঘরে ঢুকলো। তার গায়ে পোশাক পরিবর্তন করা। হয়তো অরু ঘরে আসার পূর্বেই পালটে নিয়েছে।
রামি বলল,“চল।”

অরু কৌতুহল নিয়ে শুধালো,“কোথায়?”
“আমার শশুর বাড়ি।”
অরুর ঠোঁটে হাসি ফোটে। বিষন্ন মনটা ফুরফুরে লাগছে। রামির বাহু আঁকড়ে বলল,“সত্যি?”
প্রত্যত্তরে হাসলো রামি। মুহূর্তেই অরু দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করলো,“কেউ কিছু বলবে না?”
“সেসব আমি দেখবো। তুই চল তো।”

অরুকে আবারো প্রাণবন্ত দেখালো। রামি তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। আয়েশা সুলতানা দেখলেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো তিনি বাঁধা দিলেন না, কোথায় যাচ্ছে প্রশ্ন করলেন না! বরং বললেন ‘তাড়াতাড়ি চলে আসিস’। রামিও সায় জানালো।
অরু বিস্ময় প্রকাশ করলো। গেট পেরিয়ে আসতেই চেপে ধরলো রামিকে।

“মা কিছু জিজ্ঞেস করলেন না কেন?”
“সেসব নিয়ে তোকে মাথা ঘামাতে হবে না।”
বলে অরুর হাত পাকড়ে হাঁটলো রামি। একটু আগে সে মায়ের ঘর থেকে বেরিয়েছে। অনেক কষ্টে মাকে বুঝিয়ে সফল হয়েছে সে।

সুহার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। মিঠু তাকে কোলে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। আপাতত তরীর নির্দেশে অরুর ঘরে শুইয়ে দিয়েছে তাকে। সুহাকে কোলে নিতেই সকলে হৈহৈ করে উঠলো। হাতে পানি নিয়ে ছিটিয়ে দিলো সুহার মুখে। কোন সাড়া নেই। তরী হাতে একটুকরো লেবু নিয়ে এলো। সুহার ঠোঁট ফাঁক করে লেবু চিপে দিতেই চোখমুখ কুঁচকে এলো মেয়েটার। ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো। তাকে ঘিরে সকলে বসে আছে। মিঠুও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সুহার চোখে চোখ পড়তেই জিজ্ঞেস করলো,“এখন কেমন লাগছে?”

লজ্জা পেল সুহা। একজন মশকরা করা বলল,“তুই এখান থেকে যা তো মিঠু। এসব জিজ্ঞেস করার জন্য আমরা আছি।”
তরী চোখে ইশারা দিলো। মিঠু আর দাঁড়ালো না। লম্বা কদম ফেলে দ্রুত ঘর ছাড়লো। সামনে পড়লো অরু আর রামি। মিঠু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রামি বলল,“কী করবো বল? তোর বোনের জন্য মাকে ম্যানেজ করে এসেছি।”
মিঠু সরু চোখে তাকিয়ে অরুকে বলল,“বিদায় করতে না করতেই আমার বারোটা বাজার জন্য চলে এলি? একটা ঘন্টাও অপেক্ষা করতে পারলি না?”

অরু দুপাটি দাঁত দেখিয়ে হাসলো। বলল,“তোমার বউকে কান পড়া দিতে এসেছি। সাথে এটাও শিখিয়ে দেব কীভাবে তোমাকে দৌড়ের উপর রাখা যায়।”
মিঠু অরুর মাথায় একটা থাপ্পড় মা*র*তে*ই গর্জে উঠলো রামি।
“তুই আমার বউকে মা*র*লি কোন সাহসে?”

চোখ সরু করে তাকালো মিঠু। খানিক সময় নিরব থেকে বলল,“তোর বউ হওয়ার আগে আমার বোন হয়।”
“তোর বোন পরে। আগে আমার বউ, পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র বউ।”
“ঠিক আছে, মা*র*লা*না। তবে একটা কথা, আমার বোন যদি একবার তোর বাসা থেকে চোখে পানি নিয়ে এ বাসায় আসে, আমি ভুলে যাব তুই কে।”

রামি করুণ গলায় বলল,“বোনের জন্য বন্ধুকে ভুলে যাবি?”
“আমি আগে বোনের চোখে পানি দেখবো, আর বোন জামাইকে বেধড়ক পে*টা*বো। তারপর বন্ধুর জন্য দরদী হয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠাবো।”
অরু আগে মিঠুর পেটে ঘু*ষি মে*রে প্রতিশোধ নিলো। তারপর বলল,“তোমাকে লাগবে না। আমার সাথে সাতপাঁচ করলে ধরে ছাদ থেকে ফেলে হাত-পা ভেঙে দেব।”

মিঠু রামির দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসলো।
“দেখলি কার বোন? রক্ত কথা বলে।”
রামি অতিষ্ঠ হয়ে বলল,“তোরা তো রা*জা*কা*রে*র বংশধর। জেনেটিক্যালি সেই স্বভাবটা রয়ে গিয়েছে। শুধু পার্থক্য হলো তার আদিকালের আর তোরা ডিজিটাল রা*জা*কা*র।”

অরু তেজী গলায় বলল,“এখান থেকে বের হই একবার। তারপর তোমাকে রা*জা*কা*রে*র নমুনা দেখাবো।”
“ভাই-বোন শুধু আমাকে মা*রা*র হুমকিটাই দিতে পারবি।”
অরু দুজনকে রেখে ভেতরে চলে গেল। একটু আগে তর্কে জড়ানো দুই বন্ধু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেরিয়ে গেল। অরু সবকিছুর তদারকি করছে। দ্রুত বাসরঘর সাজানো কমপ্লিট করতে বলেছে। তার হাতে সময় কম। তরীকে বলল,“আপু, ভাইয়া আর ভাবিকে ঘরে ঢুকিয়ে দাও।”

তরী অবাক হয়ে বলল,“মাত্র তো নয়টা বাজলো। এত তাড়াতাড়ি? তাছাড়া রাতের খাবারটাও এখনো কেউ খায়নি।”
অরু বলল,“ওঁদের খাবার ঘরে দিয়ে দিও। দুজন একটু গল্পগুজব করবে। ভাবিকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। কতক্ষণ এই ভারী পোশাক পরে থাকবে?”
“তুই এত তাড়া দেখাচ্ছিস কেন?”

অরু কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,“আমাকে ওই বাসায় চলে যেতে হবে একটু পর। তাই আমি থাকতেই সবটা দেখে যেতে চাচ্ছিলাম।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, যা।”
অরু খুশিতে লাফিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরলো তরীকে। রামি বাইরে থেকে এসেই অরুকে বলল,“এবার চল। মাকে বলেছি তাড়াতাড়ি ফিরবো।”
অরু আহ্লাদী স্বরে বলল,“আর একটুখানি প্লিজ!”
“আর কী করবি?”

“কাজ আছে। তুমি ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসো। তাকে আর ভাবিকে ঘরে ঢুকিয়ে তারপর যাবো।”
“এত তাড়াতাড়ি?”
অরু খেঁকিয়ে উঠে বলল,“এত কথা বলো কেন? ভাইয়ার কাছ থেকে টাকা নেব। এমনি এমনি বাসর ঘরে ঢুকতে দেব না-কি?”

রামি কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় খুঁজে পেল না। অরুর হাত চেপে ধরে বলল,“টাকা তোকে আমি দেব। চল, বড়ো ভাইয়ের বাসর ঘরের সামনে তোকে দাঁড়াতে হবে না।”
অরু হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,“কীসের বড়োভাই? মিঠুর বাচ্চা মিঠু কি আমাকে ছোটোবোন বলে দুই টাকার দাম দেয়? যেন আমাকে সত্যি সত্যি ড্রেন থেকে তুলে এনেছে, তেমনভাবে ট্রিট করে।”
রামি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“এখন আমাকে কী করতে হবে?”

“ভাইয়াকে নিয়ে এসো।”
রামি বাধ্য হয়ে মিঠুকে নিয়ে ফিরে এলো। অরু আর কিছু কাজিন মিলে আগেই সুহাকে বসিয়ে রাখলো ঘরে। মিঠু এসে দাঁড়াতেই সবগুলো তার পথ আটকে দাঁড়ালো। বাঁ ভুরু উঁচিয়ে তাকালো মিঠু,“কী?”
সবার আগে অরু হাঁক ছাড়লো।

“আমাদের সম্মানী দেওয়া ছাড়া ভেতরে যেতে পারবে না।”
“কত চাই?”
“দশ হাজার।”
মিঠু রামির দিকে ধারালো চোখে তাকালো।
“তুই এখনো এখানে কী করছিস? তোর আপদটাকে নিয়ে যাচ্ছিস না কেন? দেখলি তো কীভাবে আমার ঘাড় মটকাতে চাইছে।”

রামি ভাবলেশহীন হয়ে বলল,“সে আমি কী জানি! তোরা ভাই-বোন।”
মিঠু ক্রুর হেসে বলল,“আসছি, একটুপর আমিও তর কাছে আসছি।”
রামি ঢোক গিললো। কোন কুলক্ষণে যে সে বাঘের গুহায় পা দিতে গেল! ভাইটা ঠিক ছিলো। মাঝখান থেকে বোনটাকে বিয়ে করে চরম ফাঁসা ফাঁসলো। মনে হচ্ছে দুই ভাই-বোন দুদিক থেকে ক*রা*ত দিয়ে তার ঘাড় থেকে টে*নে মাথাটা আলাদা করে ফেলছে। অরুর হাত ধরে বলল,“তোর দোহাই লাগে অরু, চল! তুই এখানে থাকলেই তোর ভাই বড়ো দান মে*রে আমার পকেট ফুটো করবে।”

অরু ত্যাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মিঠু পকেট থেকে দুই টাকার কচকচে বান্ডিল বের করে বলল,“বাচ্চা মানুষ তোরা। এগুলো দিয়ে চকলেট কিনে খাস। এখন আমার রাস্তাটা ছেড়ে দে।”
অরু পথ ছাড়লো না। বলল,“কোন দুনম্বরী চলবে না। দেখা গেল টাকা না দিয়ে ভেতরে ঢুকলে, আর বিছানার উপর বউ দেখতে পেলে না!”

“টাকা আমার পকেটে নেই। ড্রয়ারে আছে। কিন্তু তারজন্য তো আমাকে ভেতরে ঢুকতে হবে।”
অরু বলল,“ঠিক আছে। চল, আমিও যাই।”
অরু সত্যি সত্যি মিঠুর সাথে ভেতরে ঢুকলো। টাকা নিয়ে তবেই সে ক্ষান্ত হলো। সবার মাঝে ভাগাভাগি শেষে অরুকে নিয়ে রামি ফিরে এলো বাসায়। আয়েশা সুলতানা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন। সব বি*প*দ ব*খা*টে ছেলেদের মতো তার দিকেই হা করে তাকিয়ে থাকে। কখন তার ঘাড়ে এসে টপকাবে সেই অপেক্ষায় থাকে। দেরি হলো অরুর জন্য। অথচ জবাবদিহি করতে হবে তাকে।

মিঠু দরজা লক করে বিছানার কাছে এগিয়ে গেল। সুহা সালাম দিলো কাঁপা স্বরে। মিঠু শান্ত গলায় সালামের উত্তর দিয়ে পাশে বসলো। দু’হাতে ঘোমটা তুলতেই লজ্জা আর শঙ্কায় জড়োসড়ো একখানা মুখ দেখতে পেল। চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। মিঠু হাসলো। আওয়াজ হলো খুবই ক্ষীণ, হিসহিস শব্দ। সুহা চোখ খোলার সাহস করলো না। তার হৃৎপিন্ড তড়িৎ বেগে লাফাচ্ছে। সেদিনের মতো আজও নেশাতুর গলায় ডাকলো মিঠু,“মাদকতা!”

শিউরে উঠলো সুহা। ধীরে ধীরে চোখের পাতা স্বাভাবিক করলো। ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বিছানার উপর। আচানক মিঠুর আক্রমণে ভড়কে গেল সে। কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই ওষ্ঠদ্বয় আঁকড়ে ধরলো মিঠু। চিনচিন করে উঠলো অধর। দু’সেকেন্ডের মাঝেই ছেড়ে দিয়ে বসলো মিঠু। তবে দূরত্ব বাড়ালো না। মাথা ঝুঁকিয়ে রেখেই উৎফুল্ল মেজাজে বলল,“আমি নেশাক্ত মাদকতা! আমার এই নেশা সারাজীবনেও কাটবে না। সব দো*ষ আপনার। আপনি কেন নে*শা ধরালেন?”

সুহা শক্ত হয়ে জমে রইলো। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। হুট করে সুখের দেখা পেয়ে শব্দ হারিয়ে ফেলেছে সে। মিঠু কিছুক্ষণ নিরব থেকেও কোন জবাব পেল না। তাই নিজ থেকেই দূরত্ব বাড়িয়ে দিল। বিছানা থেকে নেমে জামাকাপড় বের করলো। পাঞ্জাবির বোতামে হাত রেখে উপরের দিকের দুটো বোতাম খুলে এক টা*নে পাঞ্জাবি খুলে ফেললো। স্বর পাল্টে গেল তার। এতক্ষণের মোহাবিষ্ট স্বর মুহুর্তেই গম্ভীর হয়ে উঠলো।

সুহার উদ্দেশ্যে বলল,“আপনি এখনো আমার সাথে সহজ হতে পারেন নি। নিজেকে সহজ করুন। আমি অপেক্ষা করবো।”
মিঠুর কথায় কিছু একটা মেশানো ছিলো সূক্ষ্ম অভিমান টের পেল সুহা। মিঠুর সম্পূর্ণ মনোযোগ হাতে থাকা টি-শার্টের উপর। সুহা নিজেকে বোঝাতে পারলো না মিঠুর কাছে। সে ব্যর্থ। মিঠু তাকে ভুল বুঝলো। ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে নেমে গিয়ে মিঠুর ঠিক পেছনে দাঁড়ালো। মিঠু নিজের পিঠে কিছুর উষ্ণ ছোঁয়া পেল।

অনুমান করলো একজোড়া পাতলা ঠোঁট তার পিঠের ক্ষ*ত ছুঁয়ে দিচ্ছে গভীরভাবে। নড়াচড়া করলো না সে। খানিক সময় পর একজোড়া হাত পেছন থেকে তার বুকে এসে বাঁধলো। শক্ত করে জড়িয়েছে তাকে। পিছে মাথা রেখে দাঁড়ালো। একটু পর মিঠু অনুভব করলো তার পিঠ ভিজে যাচ্ছে। ঝট করে সামনে টে*নে আনলো সুহাকে। নজরে পড়লো তার অশ্রুসিক্ত চোখজোড়া। মিঠু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো৷ সুহা মিঠুর দৃষ্টির পরোয়া করলো না। তার বুকে হামলে পড়লো। কান্নামাখা গলায় বলল,“আপনি আমাকে ভুল বুঝে বসে থাকেন কেন? একটু ঠিকভাবেও তো বুঝতে পারেন।”

মিঠু নিটোল হেসে শান্ত গলায় শুধালো, “আচ্ছা ঠিকটা কী?”
“এই যে আমি আপনাকে….”
এতটুকু বলে আর বাকিকথা সম্পন্ন করলো না সুহা। এখন তার ভীষণ লজ্জা হচ্ছে। যেভাবে মিঠুর বুকে হামলে পড়েছে, ঠিক সেভাবেই ঝট করে দূরে সরে গেল। কথা কাটানোর জন্য বলল,“আমার ঘুম পাচ্ছে।”

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৩৭

মিঠু সরল চোখে তাকিয়ে রইলো। তার ঠান্ডা কন্ঠেও কেঁপে উঠলো সুহা।
“আমায় অনুভূতির সাগরে ফেলে পালাতে চাইছেন সুহা? আজ যে আপনার ছুটি নেই।”

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ৩৯