শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৭

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৭
তাসনিম জাহান রিয়া

ইভা নিতুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,
এই তুই আমাকে আটকালি কেনো? ওরা মেয়েদের অপমান করছে। কত বড় সাহস।
দোস্ত একটু থাম। আমার কথাটা একটু শোন।

তোর কী কথা শুনবো? এক মিনিট এক মিনিট তুই এমন লজ্জায় লাল, নীল হচ্ছিস কেনো? আমি একটা বিষয় খেয়াল করেছি তুই ফুয়াদ-টুয়াদকে বার বার আড়চোখে দেখছিলি। কাহিনী কী?
আমার না উনাকে ভালো লাগে। দোস্ত কী এডিটিউট দেখছিস? আমি তো ফিদা। কথা বলতে বলতে যখন মুচকি হাসে না, তখন সেই হাসিটা একদম বুকে গিয়ে লাগে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমার সামনে ঐ ছেলের প্রশংসা করলে লাথি মেরে একদম ক্যাম্পাসের বাইরে বের করে দিব। ঐ ছেলে আমাদের অপমান করে গেলো। আর তুই ঐ ছেলের হয়ে সাফাই গাইছিস।
এই তোরা ঝগড়া করছিস কেনো?
এই তন্ময় জানিস কী হয়ছে?
না বললে জানবো কী করে?

দেখ মিহান একদম ফাজলামো করবি না। মাথা এমনিতেই গরম আছে। আমি ক্যান্টিনে গিয়েছিলাম কফি খেতে। এসে দেখি তিনটা ছেলে নিতুকে থ্রেট করছে। নিতু নাকি ফুয়াট না টুয়াদকে প্রোপোজ করছে আর মিহি নামের একটা মেয়েকে র্যাগ দিছে। ছেলে তিনটার সাথে যখন আমার কথা কাটাকাটি হচ্ছে তখন ঐ ফুয়াদ এসে আমাকে অপমান করে চলে গেছে। আমি যখন ঐ ছেলেকে পাল্টা জবাব দিতে যাচ্ছিলাম তখন নিতু আমাকে আটকে দেয়। সে নাকি এই ছেলেকে পছন্দ করে।
ইভার কথা শুনে তন্ময়ের মুখটা অন্ধকার হয়ে গেছে। তন্ময় নিতুর হাত দুটো ধরে বলে,

তুমি আমার সাথে এমন করতে পার না জান। তুমি জান না কলিজা আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে পছন্দ করতে পার না।
মিহান তন্ময়ের বুকে হাত দিয়ে বলে,
ভাই অনন্যা জানলে তোর বুক থেকে কলিজা বের করে তোর পাছায় এমন লাথি দিবে প্লেইন ছাড়া উগান্ডা চলে যাবি।
অনন্যার কথা মনে হতেই বুকে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।

ঢং বাদ দে প্রিয়ন্তি এখনো আসছে না কেনো? মুহিব আর শ্রেয়সীর কী হয়েছে?
শ্রেয়সীর জেঠু আসছে। মুহিব তার বোনের বাসায় গেছে আর প্রিয়ন্তি শপিং করতে গেছে।
আমগোর মিহানের কাছে এমন কোনো খবর নাই যেটা থাকে না। জাতির সিসি ক্যামেরা তুই। এখন ক্লাসে যাই চল।

সময়টা বিকাল। সূর্য পশ্চিম আকাশে অস্ত যাচ্ছে। রাস্তা থেকে রিকশা চলার টুংটাং আওয়াজ আসছে। খেলার মাঠে কিছু ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে। কিছুক্ষণ পর পর হই হই করে ওঠছে। শ্রেয়সী ফুলগাছে পানি দিচ্ছে।পাশের বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে একটা ছেলে উচ্চস্বরে গান গাইছে,
আইতে দেখি, যাইতে দেখি, দেখি সারাক্ষণ।
তোমায় না দেখিলে ভালো লাগে না।
ওহ ওহ পাড়াতো বোন।
ছেলেটাকে শ্রেয়সী চিনে না। ছেলেটার বয়স ১৪-১৫ হবে।

আমারও তোমাদের মতো ছেলেদের পিঠাতে ভালো লাগে। হকি স্টিক দিয়ে পিঠাতে আরও বেশি ভালো লাগে।
অনুপমের কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই শ্রেয়সী তড়িৎগতিতে পিছন ঘুরে তাকায়। শ্রেয়সী অনুপমের পিছনে থাকায় অনুপমের মুখ দেখতে পেলো না। ছেলেটি অনুপমের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
আপনি কে? হুট করে কোথা থেকে চলে এলেন বলুন তো? সামনে থেকে সরুন তো। আমি আপনার জন্য আমার সুন্দরীকে দেখতে পাচ্ছি না।

এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব। বয়স কতো তোমার? হাফ প্যান্ট পড়ার বয়সে মেয়েদের টিজ করছো। সাহস তো কম না। তুমি জানো আমি কে? এই ছেলে তোমার বাবার নাম কী?

অনুপম আগে গম্ভীর কন্ঠে কথা বললেও এবার অনুপমের কন্ঠে রাগের আভাস স্পষ্ট। তাকে টিজ করায় অনুপম রেগে যাচ্ছে এটা ভাবতেই আনমনে মুচকি হাসে শ্রেয়সী। হুট করে ছেলেটা দৌড়ে চলে গেলো। অনুপম এবার শ্রেয়সীর দিকে তাকাল। শ্রেয়সী অনুপমকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অনুপম আজকে মেরুন রঙের শার্ট পড়েছে। হাতে একটা চামড়ার বেল্টের গড়ি। অনুপমের গায়ের রং শ্যামলা। উচ্চতা মোটামুটি পাঁচ ফুট সাত থেকে আট ইঞ্চি হবে। অনুপমের কানের পাশে পর পর দুইটা তিল। অনুপম ধীর পায়ে হেঁটে শ্রেয়সীর সামনে দাঁড়ায়। অনুপম হালকা কেশে বলে,

এই যে জ্ঞান হারানোর মেয়ে আপনার কী জ্ঞান হারাতে ইচ্ছে করছে?
শ্রেয়সী অনুপমের কথায় পাত্তা দেয় না। অনুপমের দিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বলে,
আপনি কী জানেন মেরুন রঙে আপনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে? এতটাই সুন্দর লাগে যে আপনার দিক থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে যায় ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব।

ওহে জ্ঞান হারানো মেয়ে আমার প্রেমে পড়বেন না। আপনার ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব অন্য কারো ব্যক্তিগত পুরুষ। আমার প্রেমে পড়ে কিছুই পাবেন না ভাঙা হৃদয় ছাড়া।
আপনার প্রেমে পড়তে আমার বয়েই গেছে। দেশে ছেলের অভাব হয় নাই যে আপনার প্রেমে পড়বো। আমি তো জাস্ট ট্রায়াল দিচ্ছিলাম। আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করি। সেই ছেলেটাকে কীভাবে বলবো সেটাই ট্রায়াল দিচ্ছিলাম।

সেই ছেলেটা আমি নই তো জ্ঞান হারানো মেয়ে।
আপনাকে পছন্দ করতে আমার বয়েই গেছে। এই শ্রেয়সী যাকে তাকে পছন্দ করে না।
শ্রেয়সী সামনে চুল হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে দিয়ে মুখ ভেংচি কেটে হেলেদুলে হাঁটতে শুরু করে। অনুপম মুচকি হেসে বলে,
চুর চুরি করে কখনোই স্বীকার করে না যে, আমি চুরি করেছি।
আমি চুরি করি নাই যে স্বীকার করবো।

মুহিব সোফায় বসে আছে। তার চোখ দুটো কার্পেটের ওপর সীমাবদ্ধ। মুহিবের ঠিক সামনেই বসে আছে মুহিবের দুলাভাই আলী সাহেব। আলী সাহেব মুহিবের বড় বোনের স্বামী। পেশায় একজন আর্মি অফিসার। উনি জীবন যাপন করেন খুব হিসেব করে। উনি আত্নীয়দের সাথে এতো ঘনিষ্ঠতা পছন্দ করেন না। মানুষের সাথে এতো বেশি কথাও বলেন না।

সেই কারণে মুহিবের সাথে তেমন সম্পর্ক নেই। মুহিবের বড় বোনের বিয়ে হয়েছে প্রায় ১৬ বছর। এই ১৬ বছরে খুব বেশি হলে তিন থেকে চার বার এখানে এসেছে মুহিব। একই শহরে থেকেও কখনো নিজের বড় বোনকে দেখতে আসে না আলী সাহেবের জন্য। মুহিব আজকেও আসতো না যদি না জরুরি দরকার বলে আলী সাহেব মুহিবকে না ডাকতেন।

আমি যা বলার স্পষ্ট ভাবেই বলতে পছন্দ করি। আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো না। আমিও যে তোমাকে খুব বেশি পছন্দ করি তেমন কিন্তু না। তুমি খুব পরিশ্রমী একটা ছেলে। এই বয়সে টিউশনি করিয়ে পড়াশোনা প্লাস সংসারের খরচ চালাচ্ছো। এই বিষয়টা আমার ভালো লাগে।

যা করবে নিজের যোগ্যতায়। অন্যের কাছে হাত পাতার অভ্যাসটা আমার কাছে বিশ্রী লাগে। তোমার লাফাঙ্গা বন্ধুদের আমার একদম পছন্দ নয়। বন্ধুত্ব করতে হয় স্ট্যান্ডার্ড দেখে। যাইহোক তোমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। তোমার ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে তোমাকে কিছু বলবো সেই সম্পর্ক আমার আর তোমার মাঝে নেই। যেহেতু তোমার বাবা বেঁচে নেই সেহেতু ঐ বাড়ির কর্তা তুমি। তাই তোমাকেই বলতে হবে কথাটা।
জ্বী বলুন।

তুমি আমার সম্পর্কে খুব বেশি না জানলেও এটা অবশ্য জানো অহেতুক মানুষের সাথে মেলামেশা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। তোমার ছোট আপার জন্য আমার এক কলিগ তার বড় ভাইয়ের ছেলের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। ছেলে তোমার ছোট আপাকে ভার্সিটি দেখেছে। পরে নিজের বাসায় জানায়। উনারা খোঁজ করতে করতে আমার কাছে এসেছে। তাদের চাওয়া পাওয়া কিছু নেই শুধু তোমার ছোট আপাকে চায়। ছেলে কলেজের প্রফেসার।

এই বিষয়ে আপনাকে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারছি না। জীবনটা যেহেতু ছোট আপার সেহেতু সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারটাও ছোট আপার। আম্মার সাথে আলোচনা করার আছে। ছোট আপার মতামত জেনে আপনাকে জানাব। বড় আপা বাড়িতে নেই?

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৬

না। তোমার বড় আপা মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেছে। আমি এখন বের হবো। তুমি যদি তোমার বড় আপার সাথে দেখা করতে চাও তাহলে অপেক্ষা কর। নাহলে আসতে পার।
বড় আপার সাথে দেখা করার সময় নেই। আমার একটা টিউশনি আছে। আসি তাহলে।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৮