শিমুল ফুল পর্ব ২০

শিমুল ফুল পর্ব ২০
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

শওকত হাওলাদারের চিৎকারে সারা বাড়ির মানুষ একসাথে এসে জড়ো হয়।শুধু আসেনা শিমুল।তিনি আবার ডাকে।শিমুল রুমে বসে আছে।তার আব্বার জ্বা/লাময়ী চিৎ/কার তার খুবই ভালো লাগছে।উনার সাধের স্বপ্নে পানি ঢেলে শিমুলের খুবই শান্তি লাগছে।ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

শিমুলকে দেখে শওকত হাওলাদার এগিয়ে আসে।কোন কথা না বলে শিমুলের উজ্জ্বল গালে পরপর তিনটা থা/প্পড় মা/রে।শিমুল থাপ্প/ড় খেয়েও হাসে।ফর্সা গালে বলিষ্ঠ হাতের ছাপ পড়ে গেছে।রাবেয়া ডুকরে কেঁদে দেয়।শওকত হাওলাদার শিমুলের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এমপি সাহেবের কাছে গিয়ে এসব না বললে হতো না?বেয়াদব।”
শিমুলের মুখে তখনো হাসি।
“মিজান চাচাকে আপনি এসব না বললেও পারতেন।”

শিমুলের হাসি মুখে মিজানের নাম শুনে শওকত হাওলাদারের রাগ যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ে।
“কিসের সাথে কিসের তুলনা?এমপি হাতে থাকলে আমাদের কতো সুবিধা হতো জানিস?”
“সুবিধা খুঁজে আমার তো লাভ নেই।আপনি তো আমার পছন্দ খুঁজেন নি।”

“এটা কোনো পছন্দ না।কই মিজান আর কই আমরা।লোকে কি বলবে ভেবে দেখেছিস?”
“লোকের কথা শুনার দরকার কী?জীবন কাটাবো আমি আমার ভালোটা আমিই ভালো বুঝি।”
“নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলি।কতো।সুবিধা পেতাম আমি।”
“আপনি খুব স্বার্থপর।”

শওকত হাওলাদার ঝাপিয়ে পড়ে শিমুলের উপর উনার শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে।কত স্বপ্ন দেখা শেষ আর এই ছেলে ওই ফকিন্নির বাচ্চার জন্য সব বরবাদ করে দিলো।শিমুলের গলা চেপে ধরে।শিমুল।পাল্টা আক্রমণ করতে পারছে না বিধায় উনি জোড়ে চেপে ধরে।শিমুলের বড় ভাই পলাশ কলেজ থেকে ঢাকা ট্রেনিং গিয়েছিলো

।সেখান থেকে কাল রাতে এসেছে।এসেই তার আম্মার কাছে সব শুনেছে।গভীর রাতে এসেছে বিধায় সে ঘুমিয়ে ছিলো শোরগোল শুনে পলাশ বেরিয়ে আসে।ছোট ভাইয়ের আর তার আব্বার অবস্থা দেখে ছুটে এসে শওকত হাওলাদারকে টেনে ধরে।

“আব্বা পাগল হয়ে গেছেন নাকি?এতো বড় ছেলেকে কেউ মা/রে?”
শওকত হাওলাদার শিমুলের দিকে তাকিয়ে রাগে রাবেয়াকে থা/প্পড় দিয়ে বলে,
“তুই তোর ছেলেকে এমন বানাইছিস।”

মায়ের গায়ে হাত তোলাতে শিমুল ক্ষে/পে যায়।ফুসে উঠে বললো,
“আমার মাকে মা/রেন কোন সাহসে?ছোটলোকের বাচ্চা ছোটলোক।”

শিমুলের লাগামছাড়া কথায় সবাই অবাক।পলাশ কিছু বলার আগেই শওকত হাওলাদার আবার শিমুলের মা/রতে যায়।পলাশ তার আব্বাকে জাপটে ধরে কিন্তু শওকত হাওলাদার যেন না মে/রে শান্তি পাচ্ছে না হাত বাড়িয়ে শিমুলকে মা/রতে গেলে মা/রতে পারেনা কিন্তু উনার নখ লেগে শিমুলের গলা ছি/লে যায়।শিমুল গলায় হাত দিয়ে বলে,

“পুষ্পকেই বিয়ে করবো।দেখি কি করেন।”
“দেখবো কিভাবে বিয়ে করিস।”
শিমুল তার রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।শওকত হাওলাদার কতোক্ষন রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।পলাশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে মনে মনে ভাবে এমন প্রতিবাদ করতে পারলে তার নিধি তার পাশেই থাকতো,একবুক হাহাকার নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হতো না,সে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার আম্মার দিকে তাকায়।

রাবেয়া নিঃশব্দে কাঁদছে।পলাশের তাকানো দেখে নত মস্তিষ্কে জায়গা থেকে সরে দাঁড়ায়।রাবেয়ার খুব খারাপ লাগছে।আগে কথায় কথায় চড় থা/প্পড় দিতো তখন না হয় ছেলেরা বুঝতো না ছোটো ছিলো এখন তো ছেলেরা বড়ো হয়েছে।এতো বড়ো ছেলেদের সামনে তাকে মা/রাতে খুব লজ্জা লাগছে।চুপচাপ চোখের পানি ফেলে।

সারাজীবন শওকত হাওলাদারের রাগের তুপেই জীবন কাটালো,বিয়ের পরে তার আম্মাকে শওকত হাওলাদারের এমন ব্যবহারের কথা বলেছিলো।উনার মা বলেছিলেন পুরুষেরা একটু এমন হয়’ই বাচ্চা হয়ে গেছে মানিয়ে নে,সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখবি জীবন কেঁটে গেছে।এই মানিয়ে নিতে নিতে রাবেয়া ক্লান্ত।স্বামী হিসেবে শওকত কখনো রাবেয়ার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়নি।শুধুমাত্র একটা কথাই রেখেছেন,

তখন রাবেয়া প্রথম মা হয়েছে।ছোট হাত পায়ের সুন্দর বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে কেঁদে দেয়।স্বামীর কাছে আর্জি জানায় বাচ্চাটার নাম সে রাখবে। শওকত’ও তখন সম্মতি দিলে,রাবেয়া খুশী হয়।কোমল মনের অধিকারী রাবেয়ার ফুল ভীষন পছন্দ।ছোট্ট উজ্জল ছেলেটার নাম রেখে দিলেন পলাশ।তার দুই বছর পরে আবার ছেলে হলে নাম রাখে শিমুল।এই দু’টোর দিকে তাকিয়েই রাবেয়া সারা জীবন কাটিয়ে ফেলেছে।

পুষ্পর জ্বরের কথা সকালেই সবাই জানতে পারে।রোকসানা ছুটে আসে।মেয়ের অবস্থা দেখে টিউবওয়েল থেকে মাথায় দেয়ার জন্য বালতি ভরা ঠান্ডা পানি আনে।মিজান শেখ চুপচাপ বিছানায় বসে আছে।উনার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।মেয়েদের উপর হাত তোলার অভ্যাস তার কোনকালেই ছিলো না।

দুই মেয়ে তার খুবই আদরের।আর সেই আদরের পুষ্পকেই কিনা নিজ হাতে এতো মা/রলো?শওকত চেয়ারম্যানের কথাগুলো শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।কিন্তু এখন মেয়ের এই অবস্থা দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।তিনি তো তার মেয়ের ভালোই চায়,মেয়ে যে চেয়ারম্যান বাড়িতে ভালো থাকবেনা এটা জানা কথা।

বিকালের দিকে পুষ্পর জ্বর কমে।বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বসে।রোকসানা ভর্তা দিয়ে ভাত মাখিয়ে আনে।পুষ্পর ভর্তা পছন্দ।জ্বরের মুখ ঝাল খেলে ভালো লাগবে।পুষ্পকে খাওয়াতে খাওয়াতে রোকসানা ভাবে পুষ্পকে মে/রে ধরে এই রাস্তা থেকে সরানো যাবে না,উল্টো বিপরীত হবে।লেবু বেশী চিপলে তিতা হয়ে যায়।

রোকসানা পুষ্পকে বলে,
“নিজের ভালোটা কেন বুঝিস না পুষ্প?”
পুষ্প মায়ের দিকে তাকায়।রোকসানাই আবার বলে,

“মানলাম শিমুল তোকে ভালোবাসে কিন্তু ওই বাড়ির কেউ তোকে চায় না।শিমুলের সাথে সংসার করলেও সারাদিন ঘরে থাকতে হবে।সারাদিন ঘরে শান্তি না পেলে যে কেমন লাগে সেটা তুই ধারনাও করতে পারবি না।তখন শিমুলের ভালোবাসাও ভালো লাগবে না।”
পুষ্প বললো,

“ঘরের মানুষ ভালো হতে হবে না।শিমুল ভালো হলেই হবে।”
রোকসানা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা শিমুল ছাড়া আর কিছুই বুঝার চেষ্টা করছে না।মা বাবার কষ্ট পুষ্পর চোখে পড়ছে না।
তারপরেও বলেন,

“অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে এর চেয়ে সুখে থাকবি।আম্মার কথা শোন।”
“কিভাবে জানো অন্য জায়গায় সুখী থাকবো?এমনো হতে পারে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে অশান্তিতে থাকতে পারি।অশান্তির জ্বালায় ম/রে যেতে পারি।”
“তুই এমন ছিলি না পুষ্প।কি মেয়ে কি হয়ে গেলো।”

রোকসানা গুনগুনিয়ে কাঁদে।মায়ের কান্না পুষ্পর ভালো লাগে না।সে মাকে দেখে,আজকে চলে গেলে আবার কবে দেখা হয় কে জানে।আজকে চলে যাবে ভেবে পুষ্পর চোখ ভরে পানি আসে।

শিমুল রাত এগারোটায় বাইক নিয়ে হিজল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।পুষ্প বের হতে পারলো কিনা সেই টেনশনে স্থির হয়ে থাকতে পারে না।এই দাঁড়ায় এই বসে।তার সব পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে।এখন সোজা ঢাকা যাবে ওখানে গিয়ে বিয়ে করে ভার্সিটির বন্ধু ফাহিমের বাসায় গিয়ে একদিন থেকে বাসা খুঁজে নিবে।

তারপর তার চড়ুইকে নিয়ে থাকবে।সারাক্ষণ পুষ্প তার সাথে থাকবে কোন ভয় দ্বিধা ছাড়াই পুষ্পকে ভালোবাসতে পারবে।সারাজীবনের জন্য পুষ্প তার হয়ে যাবে এটা ভেবেই শিমুলের খুশীতে শরীর শিরশির করে উঠছে।কিন্তু পুষ্প যে আসছেনা।বের হতে পারেনি?

বারোটার দিকে পুষ্প বিছানা থেকে উঠে বসে।আজকে তার এতো ঘুম পাচ্ছে কেন?ঘুমের ট্যাবলেট খেলে যেমন ঘুম পায় তার এমন লাগছে ইচ্ছা করছে বিছানায় শুয়ে যেতে।কিন্তু।শোয়া যাবে না।পুষ্প আস্তে করে উঠে বসে।মুন্নী আছে বিধায় হয়তো দরজায় তালা দেয়নি।গায়ে ওরনা দিয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

তারপর বেরিয়ে যায় নতুন জীবনের উদ্যেশ্যে।হিজল গাছের নিচে গিয়ে শিমুলকে পায়।দুজন দুজনকে দেখে আলতো হাসে।শিমুল এগিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে নেয়।পুষ্প দুই হাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।শিমুল পুষ্পর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“সব ঠিকঠাক?তুমি ঠিক আছো?”

পুষ্পর চোখ বেয়ে পানি পড়ে সাথে মাথা নাড়ে।শিমুল পুষ্পর দুই গালে হাত রেখে বললো,
“আর কাঁদতে হবে না জান।আমরা অনেক দূরে চলে যাবো।কষ্ট আমাদের ছোঁয়ে দিতে পারবেনা।তুমি দেখো।”
পুষ্প মাথা নাড়ে।তার কেন জানি কষ্ট হচ্ছে।শিমুল পুষ্পর হাত ধরে বললো,

“চলো তাহলে।”
পুষ্প শিমুলের সাথে হাটে।পুষ্পর চোখে তার আব্বা আম্মার কান্নাভেজা মুখটা স্পষ্ট ভেসে উঠে। সে দুই কদম গিয়ে থেমে যায়।শিমুল তাকিয়ে বলে,
“কি হলো?হাটতে কষ্ট হয়?”

পুষ্প বা হাত দিয়ে চোখ মুছে বললো,
“আমরা কি ঠিক করছি?”
শিমুল পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার কি মনে হয়?আমরা ভুল করছি?”
পুষ্প ফুপিয়ে বলে,

“আব্বা আম্মার জন্য মন পুড়াচ্ছে।কালকে জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে।”
শিমুল পুষ্পর চোখে চোখ রেখে বললো,
“উনারা তো কেউ আমাদের বুঝলো না।”
পুষ্প কিছু বলেনা এক হাতে শিমুলের টিশার্ট খামচে ধরে আছে।

শিমুল পুষ্পর মনের অবস্থা বুঝতে পারে।শিমুল যতো সহজে চলে এসেছে পুষ্প পারছেনা।শিমুল বললো,
“কি করবে তাহলে?”
“আমি বুঝতে পারছিনা।”

“কেউ তো রাজি না।পালিয়ে না গেলে তোমাকে আপন করে নিবো কি করে জান?”
পুষ্প পালিয়ে গেলে তার আব্বা আম্মা খুব কষ্ট পাবে।তার আব্বার হাই প্রেশার বেশী টেনশনে যদি স্ট্রোক করে ফেলে?আব্বার কিছু হয়ে গেলে পুষ্প নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা।তার মনে হয় তার আব্বা আম্মাকে আরেকবার বুঝালে যদি রাজি হয়।শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আব্বা আম্মাকে আরেকবার বুঝাই?”
শিমুল কিছু বলেনা।শিমুল চুপ করে আছে দেখে পুষ্প বললো,
“চুপ করে আছো কেন?”
“কি বলবো?”

“আব্বা আম্মাকে আরেকবার বুঝাই।আমার মনে হয় উনারা বুঝবে।”
“মা/র ছাড়া কোনো কথা নাই। তাদের বুঝালে বুঝবে বলে মনে হয়?”
পুষ্প বললো,
“উনাদের কষ্ট দিয়ে আমরা কি সুখী হবো?আব্বা আম্মার বদদোয়া
লাগবে না?”

শিমুল পুষ্পর দিকে তাকিয়ে থাকে।
“আচ্ছা।”
পুষ্প শিমুলকে আবার জড়িয়ে ধরে।
“কথা দিচ্ছি আব্বা আম্মাকে মানিয়েই তোমার হবো।”
শিমুল বললো,
“তাহলে আর দেরী করো না।বাড়ি যাও।”

পুষ্প আস্তে-ধীরে ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।যেতে যেতে পুষ্প বারবার ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে।পুষ্পর যাওয়ার পথে তাকিয়ে শিমুলের বুকটা জ্বলে উঠে।তার মনে হচ্ছে পুষ্প চলে গেলেই চিরতরে হারিয়ে ফেলবে।আর পাওয়া হবে না দেখা হবে না।

পুষ্পর ফিরে তাকানো মায়া মায়া দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে এই মায়াবী চোখ আর কখনো দেখা হবে না,মায়ায় পড়া হবে না।শিমুলের গভীর চোখ থেকে টুপটাপ পানি গড়িয়ে পড়ে।অসহ্য জ্বলন পুড়ানে দেহ কেঁপে ওঠে।ছুটে গিয়ে পুষ্পকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

হঠাৎ বলিষ্ঠ দেহের আলতো ধাক্কাতে পুষ্প সামনের দিকে হেলে পড়ে পরক্ষনেই শিমুল হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে।শিমুল এই প্রথম পুষ্পর সামনে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়।পিছন থেকেই কাধে গাল রেখে বলে,
“আমার খুব ভয় হচ্ছে জান।মনে হচ্ছে তোকে হারিয়ে ফেলবো।”

পুষ্পর মনটা কেঁপে ওঠে।সবাইকে মানিয়েই তো সে শিমুলকে চায়।কিন্তু শিমুলের এমন চোখের পানি ঝরিয়ে না।শিমুলই আবার বলে,
“তোকে ছাড়া আমি মরে যাবো।এক মূহুর্তও বাঁচতে পারবো না।”

পুষ্প শিমুলের দিকে ফিরে।শিমুল জড়িয়ে নেয় বুকে।শক্ত করে ধরে রাখে।যেন এটাই শেষ কাছে আসা।শিমুল পাগলের মতো কাঁদছে।শিমুলের এমন কান্না দেখে পুষ্পও কেঁদে দেয়।
“আমি বাড়ি যাবোনা।তোমার সাথে যাবো।চলো।”
শিমুল কথা বলেনা।পুষ্প শিমুলের প্রসস্থ বুকে নাক ঘষে।মাথাটা উপরে তুলে শিমুলের থুতনিতে চুমু খায়।শিমুল তাকালে বলে,

“চলো।”
পুষ্প যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিমুল সেটাই রাখবে।পুষ্প চায় বাবা মাকে মানিয়ে তার হতে,কাউকে কষ্ট না দিয়ে কবুল করতে।এখন শিমুলের জন্যই আবার সিদ্ধান্ত বদলে নিচ্ছে।শিমুল চাইলেই পুষ্পকে নিয়ে যেতে পারে কিন্তু এতে করে সারাজীবন পুষ্পর মনে হবে আরেকবার বুঝালে বাবা মা বুঝতো।তাই শিমুল পুষ্পকে বুঝানোর সময় দিবে।মাথা নেড়ে বললো,
“বেশি খারাপ লাগছে তাই জড়িয়ে ধরেছি।তুমি যাও।”

পুষ্প মাথা নেড়ে না বলে।যাওয়ার পথে শিমুলকে টানতে টানতে বলে,
“চল পালাই।”
“না আব্বা আম্মাকে আরেকবার বুঝাও।যাও।”
পুষ্প শিমুলের কাতর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।চোখে এখনো পানির আনাগোনা।পুষ্প শিমুলের কাছে এগিয়ে আসে।গভীর গলায় বললো,

“পুষ্প বেঁচে থাকলে তোমার আর যদি বেঁচে থাকতে অন্য কারো হতে হয় তাহলে পুষ্প বাঁচবে না।সইচ্ছায় মরে যাবে।”
শিমুল কথা বলেনা।পুষ্প শিমুলের চুলে হাত রেখে বললো,
“আমার কলিজাটাকে খুব ভালোবাসি।খুব বেশি।”

শিমুল পুষ্পর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কোমড়ে হাত রেখে টেনে বুকে মিশিয়ে নেয়।কপালে চুমু খেয়ে পুষ্পর কোমল ঠোঁটের ভাজে মিশিয়ে দেয় নিজেকে।শিমুলের ভয় হচ্ছে চুম্বনরত অবস্থায়ই চোখ বেয়ে পানি পড়ে।তা বুঝতে পেরে পুষ্প শিমুলকে নিজের দিকে আরো টেনে নেয়।শিমুল পুষ্পর গালে গাল ঘসে বললো,

“আমি তোকে খুব ভালোবাসি।”
“আমিও।”
পুষ্প গুটিগুটি পায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।শিমুল সেদিকে তাকিয়ে থাকে।তার বুকটা এতো পুড়ছে কেন?আবার দেখবে তো তার জানপাখিকে?

সকালে পুষ্পর ঘুম ভাঙ্গে অনেক মানুষের কথাবার্তায়।পুষ্প চোখ খুলে দেয়াল ঘড়িতে দেখে দশটা বাজে।চমকে উঠে বসে।এতো বেলা করে ঘুমানোর মানে কি?সে তো এতো বেলা অবধি ঘুমায় না।গায়ে ওরনা জড়িয়ে বের হয় মায়ের রুমে গিয়ে শুনে তার আম্মা মুন্নীকে বলছে “তুই কয়টা ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিস?এখনো উঠেনা কেন?”
মুন্নী বললো,

“একটাই তো দিয়েছি।”
পুষ্পর দুনিয়া ঘুরে উঠে।ঘুমের ওষুধ কেন খাওয়াবে?তার জন্যই কি রাতে এতো ঘুম পাচ্ছিলো?পাশের রুমে অচেনা মানুষের কথা শুনে পুষ্প সেদিকে পা বাড়ায়।সেখানে দেখে সাফিন পাঞ্জাবি পরে বসে আছে সাথে তার বাবা মা সহ আরো দশ বারোজন মানুষ।

পুষ্প মূহুর্তেই বুঝে নেয় আজকে কি হতে যাচ্ছে।কোনদিকে না তাকিয়ে তার রুমের দিকে দৌড় দেয়।রোকসানা আর মুন্নী দেখে ফেলে পিছু পিছু ছুটে।পুষ্পর সারা শরীর কাঁপছে।পেছনের দরজা দিয়ে বের হতে নিলেই রোকসানা আর মুন্নী টেনে রুমে নিয়ে যায়।পুষ্প জোড়ে জোড়ে বলে,

“তোরা বেইমান,তোরা খা/রাপ।আমারে বাঁচতে দিলি না।শিমুল আমি ভুল করেছি।অ- শিমুল।”
রোকসানা মুখে চেপে ধরে বললো,

“যদি একটু সাউন্ড হয় আর সাফিনরা শুনতে পায় তাহলে তোর আব্বা আর আমি বি/ষ খেয়ে ম/রে যাবো।”
পুষ্পর মুখে রোকসানা হাত চেপে ধরে রাখে।পুষ্পর বোবা কান্নায় চোখ ফেটে পানি পড়ে।আহা কি ভুল করলো।এই জীবনে শিমুলকে পাওয়া হলো না!অহ শিমুল আমার শিমুল।

শিমুল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়।রাতে ঘুমাতে দেরী করেছিলো বিধায় আজকে বেশীই ঘুমিয়েছে।দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা খুলা যাচ্ছে না।বাহির থেকে লক করা।শিমুল কয়েকবার ডাকে কেউ সারা দেয় না অথচ শিমুল স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে কাছেই কেউ দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

শিমুল ফুল পর্ব ১৯

হঠাৎ করেই বুদ্ধিমান শিমুল বুঝে যায় তাকে আটকে রাখা হয়েছে।কয়েকবার তার মাকে ডাকে,ফুলিকে ডাকে।কেউ সারা দেয় না।শিমুলের গলা শুকিয়ে যায়,জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।অনুমান করা ভ/য়ে বুকটা কাঁপছে।মা মা করে আরো কয়েকবার ডাকে কিন্তু কেউ সারা দেয় না।শিমুল দরজায় জোড়ে জোড়ে আঘাত করে সেখানে দাঁড়িয়েই কেঁদে দেয়।

শিমুল ফুল পর্ব ২১