তবুও তোমাকেই ভালোবাসি গল্পের লিংক || সায়ারা জাহান

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ১
সায়ারা জাহান

তানিশা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তার দুলাভাই সাদাব। হঠাৎ এমন হওয়ায় সে পিছে তাকিয়ে দেখে এটার তার ফুফাতো বোনের জামাই। ঘৃনায় চোখ-মুখ কুচকে গেলো তানিশার
– আমাকে ছেড়ে দিন দুলাভাই লজ্জা লাগেনা নিজের ছোট বোনের বয়সি এক মেয়ের সাথে এমন নিচ আচরণ করতে। আমি কিন্তু বাধ্য হবো বাসায় সবাইকে জানাতে।

তানিশা সাদাব কে এসব বলছিলো আর মোচড়াচ্ছে ছুটার জন্য। কিন্তু একজন পুরুষ মানুষের শক্তির সাথে কি আর পারা যায়।
– এইরকম করছো কেন তানিশা তোমার এই কোমড় সমান খোলা চুলের প্রেমে পড়ে গেছি আমি। তুমি চাইলে অই মিতুকে আমি ডিভোর্স দিবো অই কালির যোগ্যতা নাই এই সাদাব খানের বউ হওয়ার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-ছিহঃ দুলাভাই ছিহ আপনি এতো নিচ আপনার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃনা লাগছে।
তানিশা এবার নিজের শরীরের সব শক্তি খাটিয়ে ঘুরে সাদাবের হাত থেকে নিজের হাত ছুটাবার চেষ্টা করছিলো আর তখন তার ফুপির আগম হয়৷ সাদাব তা আগে থেকে লক্ষ করে আর তানিশার হাত মুঠো করে ধরে রাখে।

– এ কি করছো তানিশা আমি তোমার বড় বোনের জামাই,তুমি কিভাবে এই কাজ আমার সাথে করতে পারো। তুমি জানোনা আমি মিতুকে কতো ভালোবাসি। ছাড়ো আমার হাত লজ্জা নাই কিছু তোমার মধ্যে ছিহ।
সাদাবের হঠাৎ পালটে যাওয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না তানিশা। বোকার মতো তাকিয়ে আছে।
– এসব কি বলছেন দুলাভাই আপনি আমার কথা শুনেন।

তানিশা নিজের কথা শেষ করার আগেই ওর বড় ফুপি বাড়ির ছাদে চলে আসে। আর তাকে দেখে সাদাব হাত ছেড়ে দেয়।
– মা জানেন এই অসভ্য মেয়েটা আমার সাথে অসভ্যতা করছিলো মিতুকে তালাক দিয়ে ও কে বিয়ে করতে বলে।
– আপনি মিথ্যে কেনো বলছেন দুলভাই, ফুপি দুলাভাই নিজে আমাকে এসব কথা বলছে।

তানিশা কে ছাদেই তার ফুপি মা-রা শুরু করে, মারতে মারতে নিচে নিয়ে যায়। চিল্লাচিল্লি করে সবাইকে বাড়ির ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসে। সবাই আসার পড়ে যেই মিথ্যে সে দেখেছে তাই সে সবাইকে বলে। তানিশার মা-বাবা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। সাইড ড্রয়ার থেকে কেচি নিয়ে তানিশার মা-বাবার সামনে তানিশার হাটু সমান চুল কেটে পিঠ অব্দি করে দিলেন ফুপি। তানিশা কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না চোখ দিয়ে পানির ঝর্না ধারা বয়ে যাচ্ছে। এতেও ফুপি ক্ষ্যান্ত হয় নাই সে তানিশার গালে জোরেশোরে এক থাপ্পর বসিয়ে দেয়।

– লজ্জা করে না তোর বড় বোনের স্বামীর দিকে কু নজর দিতে তোর লজ্জা করে না?
– ফুপি আমার কোনো দোষ নাই বিশ্বাস করো দুলাভাই মিথ্যে বলছে তোমাদের।
তানিশার কান্না কারো চোখে পড়ছে না এই বাড়ির কত্রী সাজিদা জাহান যখন এসব বলেছে তখন তো সবাই বিশ্বাস করবেই। তানিশার ফুপির ছোট জাল তখন মুখ ঝামটা মেরে বলে।

– আগেই বলেছিলাম ভাবি এতো বড় ঢিঙ্গি মেয়ে বাড়িতে রেখো না এখন দেখো তোমার মেয়ের সংসারের দিকেই কু-দৃষ্টি দিয়ে বসে আছে। আরো ভাই আর ভাইয়ের পরিবার কে নিয়ে মাতামাতি করো।
সবার এমন কথায় লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয় তানিশা এসব কথা সে তো আর নিতে পারছে না।

– দেখলি আজিজ দেখলি তোর মেয়ের কাজ এতো অন্যায়ের পড়েও কিভাবে সবার সামনে দৌড়ে গেলো। আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি যে মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারিস নাই তুই।

– আপা তুমি এভাবে কেন বলছো আজ সকালেই আমরা এ বাসায় এসেছ তুমি ডেকেছো তাই। নাহলে আমরা ভুলেও তোমাদের বাসায় আসার সিদ্ধান্ত নিতাম না। আমি আমার মেয়ের সামনে তোমাকে কিছু বলি নাই এই কারণে যে তুমি আমার বড় বোন মেয়ের সামনে অসম্মান হবে। এইজন্য তুমি এসব কথা শুনাতে পারো না।

– তানিশার আব্বু ঠিক বলেছে আমি তানিশা কে বকাঝকা ঠিকেই করি তবে তা ওর ভালোর জন্য যাতে খারাপ পথে না যায়। আমি তানিশা কে লালন পালন করেছি আর আমি জানি আমার মেয়ে কেমন তাই আপা আগে আপনি সাদাবের খবর নিন। অইদিন তো দেখলাম আপনার মেয়েকে মে*রে সে কি অবস্থা নাই করেছিলো।

অথচ এগুলা বলে আপনাকে লাভ নাই আপনি আপনার মেয়ের ভালো থাকা দেখেন নাই দেখেছেন টাকা সম্পত্তি যা আপনাকে আপনার বড় মেয়ের জামাই দিচ্ছে। সাবধান হন এসবের জন্য না মেয়েকে হারাতে হয় আপনার।
– শিলা এতো বড় সাহস তোমার আমার মুখের উপর কথা বলছো তুমি?

– কিভাবে কথা না বলে থাকি আপা আমার মেয়ের ছোট থেকে যত্ন নেওয়া চুল যা তার সবথেকে প্রিয় তা আপনি কেটে দিলেন? আপনার সাহস ও তো কম ছিলো না। আমার মেয়ে অন্যায় করেছে আপনি আমাদের বলতে পারতেন আমরা তার বিচার করতাম কি না দেখতেন এরপর নাহয় আপনি নিযে এসব করতেন। ছিহ আপা আপনার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাধে।

এতোক্ষন তানিশা চুপচাপ তার বাবা-ও সৎ মায়ের কথা শুনে যাচ্ছিলো। এই মানুষ টা কে বকতো তাই তানিশা ভাবতো তাকে ভালোবাসে না। অথচ আজ তার হয়ে কথা বলছে বুঝাই যাচ্ছে যে সে কতোটা ভালোবাসে তানিশা কে। হুহু করে কেদে যাচ্ছে তানিশা এই চুল ই ছিলো তার ভালোবাসা৷ তানিশার মায়ের ও এমন লম্বা ঘন চুল ছিলো তাই তো ছোট থেকে বাবা-ও সৎ মা সবসময় তার চুলের যত্ন নিতো।

– তানিশা মা বেড়িয়ে আসো আমরা এখানে আর এক মুহুর্ত থাকবো না আজ বাড়িতে রিটার্ন করবো। তোমার না সামনে এস এস সি পরিক্ষা বাসায় গিয়ে পড়তে হবে।

মায়ের কথায় তানিশা চুপ চাপ অই রুম থেকে বেরিয়ে আসে আর কারো থেকে কিছু না বলে তারা বের হয়ে যায়। তানিশার বাবা গাড়ি ড্রাইভ করছে আর তানিশার মা তানিশা কে শান্তনা দিচ্ছে। তানিশা একদম তার মায়ের বুকের সাথে মিশে আছে।
হঠাৎ এক অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস ঘটে গেলো তাদের সাথে,কেউ কি কল্পনা করেছে এমন হবে।

হাইওয়ের রাস্তায় তানিশাদের গাড়ির ওপর এক ট্রাক উঠে যাচ্ছিলো তানিশার বাবার কথায় তানিশার না তানিশা কে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। দ্রুত এসব ঘটে যাওয়ায় তানিশা কিছু বুঝে উঠতে পারে নাই। চারোদিক তার অন্ধকার হয়ে আসছে মাথা শুন্য প্রায় তার৷ আশেপাশের লোকজনের চিৎকার শুনতে পাচ্ছে।

যখন জ্ঞান ফিরে তানিশার তখন নিজেকে হাসপাতালের চার দেওয়ালের মধ্যে আবিষ্কার করে। বেড থেকে নেমে যায় সে আশেপাশে তার বাবা- মা কে খুঁজতে লাগে।
– মা- বাবা তোমরা কোথায়, আমার একা ভয় লাগছে।

রুম থেকে বের হয়ে দেখে ওর বড় ফুপু ছোট ফুপু বসে হাস্পাতালের করিডোরের বসে কাদছে। ওখানে তানিশা যেতেই তানিশা কে দেখে ওর বড় ফুপি বলতে লাগলো।
– এই অলক্ষি আমার ভাই আর ভাইয়ের বউ টা কে খেয়ে নিলো। আজ এই অলক্ষির জন্য আমার ভাই আর ভাইয়ের বউ দুনিয়াতে নাই। তুই বাইচা আছোস কেন বাপ- মা রে খাইলি।

– আহ আপা মেয়েটার অবস্থা ভালো না এভাবে এখন ও কে গালমন্দ করো না তুমি।
– তুই জানোস আজ ওর জন্য আমার সাথে ঝগড়া করে আজিজ বাড়ি থেকে বের হইছে আজ যদি ওরা না বের হতো তাহলে আমদের ভাই আমাদের ছেড়ে যেতো না।

শান্তি হইছে এবার নিজের ছোটবেলায় নিজের মা টাকে খাইলি আর এখন বাপ আর সৎ মা টারেও। রাক্ষসি তুই ম-রো-স না কেন।স্তব্দ হয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে তানিশা কি বলবে সে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। কান্না ও ভুলে গেছে আজ সে।

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ২