তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৬

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৬
সায়ারা জাহান

মা আমি আর সাদাবের সাথে সংসার কর‍তে পারবো না মা। আমাকে কথায় কথায় মারে। আমার শরীরের এমন কোনো অংশ বাদ নেই যে উনি আমাকে মারে নাই। আমি আর কত সহ্য করবো তুমি আমাকে বলো?
– স্বামীর সংসারে থাকতে হলে এমন টুকটাক ঝামেলা লাগতেই পারে তার জন্য সংসার কেনো করবি না তুই?
ফুপির কথা শুনে মিতু আপু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । একজন মা কিভাবে সব জেনেও এতোটা নরমাল আছে। এইসব তার কাছে সামান্য বিষয় মনে হচ্ছে।

– মা এটা কিভাবে বলতে পারলা তুমি? আমার মা হয়ে তুমি আমার কষ্ট বুঝতে পারছো না। তোমার কাছে তোমার মেয়ে থেকে টাকা পয়সার দাম বেশি? তাহলে কি আমি বলবো তুমি আমাকে বিয়ে নয় টাকার জন্য সাদাবের কাছে বিক্রি করে দিছো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– মিতু দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস তুই। মায়ের মুখের উপর তর্ক করিস। ঢং করিস না। শশুর বাড়ি তে একটু কাজ করলে বা স্বামী একটু শাসন করলে কিছু হয় না। তিল থেকে তাল করোস কেন তুই?
– এতোবড় ব্যাপার যার কাছে সামান্য লাগে তাকে আমার কিছু বলার নাই মা। তুমি একদিন অনেক পস্তাবা মা সেইদিন বেশি দূরে নাই। আমি বুঝেছি আমার অই সংসারে থেকেই জিবন বিষর্জন দেওয়া লাগবে।

– এতো বড় বড় কথা কিভাবে বলিস বিয়ের এতোগুলা বছর গেলো এইটা বাচ্চা পয়দা করার ক্ষমতা রাখিস না আবার লেকচার দিস। একটা বাচ্চার মুখ দেখাতে পারলি না জামাই রে বাবা ডাক শুনাতে পারলি না। তো অই সংসারে কি তোর চেহারা দেখবে তারা। তোকে যে ওখানে রাখছে তোর সাত পুরুষের ভাগ্য।
নিজের মায়ের মুখের এসব শুনে মিতুর পুরো দুনিয়া ঘুরতে লাগলো। নিজের মা এমন কথা কিভাবে বলে। মা তো সন্তানের পাশে থাকে, সব খারাপ পরিস্থিতিতে সন্তান কে সঠিক রাস্তা দেখায়। মিতুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

– আজ আমি তোমার মেয়ে হয়ে মা তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ করলাম। আজ থেকে তুমি আমার মা নও আর না আমি তোমার মেয়ে। যেহেতু আমার ওখানেই সংসার করা লাগবে তাই আমি আশা রাখবো আমার শশুর বাড়ি কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা তুমি করবে না।

ফুপি কে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো মিতু আপু। মেয়েদের আশ্রয়স্থান ও ভরষার যায়গা তার মা হয়। সব বিপদে আপদে সবার আগে মায়ের কথা মাথায় আসে আর সেই মা যদি এমন হয় মেয়ে কই যাবে। মিতু শশুর বাড়িতে যাওয়ার পর ওর শাশুরি ডেকে ওকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। শাশুরি মেঝেতে বসে পান বানাচ্ছেন ।

– আজ তোমার ননদ আর তার স্বামী আসবে এটা তুমি জানতে?
– আম্মা আমি শুনেছিলাম যে রেহানা আর জামাল ভাই আসবে তা আজকেই আসবে এটা আমি জানতাম না।
– আজ আসবে এই খবর জানতে না মানে বাবু তোমাকে কিছু বলে নাই?
– না মা আপনার ছেলে আমাকে কিছুই বলে নাই, যদি জানতাম তাহলে আজ আর আমাদের বাসায় যেতাম না।
– যাও আজকে,পোলাও,রোষ্ট,চিকেন ফ্রাই,গরুর কালাভুনা, পায়েস আর বিরিয়ানি রান্না করবা। এখন ৬ টা বাজে ১০ আগে যেনো সব রান্না হয়ে যায়। রেহানা রা কিন্তু চলে আসবে আর এখানেই ডিনার করবেন।
– জি আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

মিতু নিজের কপালকে দোষ দিতে দিতে রান্নাঘরে যাচ্ছে। এই বাড়ির যাবতীয় কাজ আর রান্নাবান্না সব মিতুর করা লাগে। বাসায় কাজের লোক রাখা হয় নাই। এতো টাকা থালা সত্যেও সব কাজ মিতুকে দিয়ে করানোর জন্যই কাজের লোক রাখে নাই। মিতু একা হাতে সব করার চেষ্টা করছে এতো অল্প সময়ে কি আর এতো পদ রান্না করা যায়। আর আসবেউ দুইজ৷ মানুষ এদের জন্য এত পদ রান্না না করলেও হয়।

–অন্যদিকে—
জায়ান ভাইয়ার আর মামির কথায় বুঝত্র পারলাম উনি রাদ, মামির বোনের বড় ছেলে আর সামু আপুর বড় ভাই। ভাই কে দেখে সামু দ্রুত বেগে গিয়ে ভাইয়ের হাত জরিয়ে কান্না করতে লাগলো। সামুপু কে কান্না করতে দেখে রাদ ভাইয়া সামুপুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

– কি ব্যাপার বনু এভাবে কান্না করা লাগে? কান্নাই বা করছিস কেন।
-তুমি জানোনা ভাইয়া আমার সাথে কি হচ্ছে কেউ আমাকে কিছু বলে নাই আমার থেকে জিজ্ঞেস ও করে নাই।
-এই ব্যাপার আরে গাধি কান্না বন্ধ কর আগে , আমি বলছি তোকে সব।
রাদ ভাইয়া নিজের হাতে সামুপুর চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।সামুপুর এক হাত ধরে সোফায় নিজের পাশে বসালো।

– তান ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন একা এখানে আমাদের সাথে বস।
– না সামুপু আমি এখানে একদম ঠিক আছি তুমি বসো।
-তান আবার কেমন নাম সামু? আমি জানি তান ছেলেদের নাম। আমার সামনে আস্ত এক মেয়ে মানুষ দাঁড়ানো।
-দূর ভাইয়া মজা করো না তো ওর নাম তানিশা রহমান তান। আর ও হলো।
– জানি ওর সম্পর্কে আমার থেকে ভালো কে জানবে?
-মানে কি বলছো তুমি?
– আব কিছুনা, এই মেয়ে তুমি এখানে এসে বসো।

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। এই লোক আমার নাম নিয়ে মজা করলো আল্লাহ, একটু আগে আমি এর উপর ক্রাশিত হইছিলাম। ভাবতেই নিজেরে দুখানা চ*র দিতে ইচ্ছা করে।
আমি নিচে রাখা খাবারের সব প্যাকেট গুলো মিয়ে মামির কাছে রান্না করে চলে গেলাম। আমি মামির হাতে সব দিতেই মামি প্যাকেট খুলে সব খাবার পরিবেশন করতে লাগলো। আমার বোরিং লাগছে।

– মামি তোমার মোবাইল কই আমাকে একটু দেও তো?
– মোবাইলে তো চার্জ নাই জায়ানের টা নে ওর থেকে চেয়ে যা।
– ভাইয়া দেখো এমনি রেগে আছে আমি যদি কিছু বলি তাহলে আরো রেগে যাবে। আমাকে যদি নান দেয় মোবাইল।
– আরে এতো না ভেবে চেয়ে নে যা দেখ যা এইভাবেই দিবে তোকে।
আমি মামির কথামতো ড্রয়িংরুমে গিয়ে ভাইয়ার সামনে দাড়ালাম। আমাকে সামনে দাড়াতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো।

– ভাইয়া আমাকে আপনার মোবাইল টা একটু দিবেন?
– কি করবি তুই মোবাইল দিয়ে এখন?
– আমার এখানে একদম ভাল্লাগছে না আমি ইউটিউবে ডরিমন দেখবো।

আমি ভুল কিছু বলছি নাকি আল্লাহ জানে৷ সবাই আমার দিকে এভাবে কেন তাকিয়ে আছে। সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমি ভুল কিছু বলে ফেলছি। ভাইয়া উঠে দাড়ালেন আমার হাতের কব্জি মুঠো করে ধরলেন। আমার এইভাব হাত ধরাতে আনকামফরটেবল হচ্ছে। সামিয়া আপুর দিকে তাকালাম উনি অসহায় ভাবে জায়ান ভাইয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে ভাইয়া আমার হাত কেন ধরলো?

– কি হচ্ছে জায়ান এইভাবে ওর হাত ধরলি কেন?
– কিছু না রাদ ভাইয়া তোমরা এখানে থাকো আমার তানের সাথে জরুরি কিছু কথা ছিলো আমি তা বলে আসি।
কাউকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তান ভাইয়া আমাকে নিয়ে সোজা চলে আসলো ছাদে। ভাইয়ার আজকে কি হইছে আল্লাহ জানেন ভালো। ভাইয়ার মনে কি চলে আমি বলতে পারছি না। তবুও আমি নিজের মধ্যে অনেকটা সাহস জাগালাম আর ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করলাম।

– ভাইয়া আপনার কি কিছু হয়েছে এমন অস্থির অস্থির লাগছে কেনো?
ভাইয়া আমার প্রশ্ন শুনে আমার হাত ছেড়ে দিলো। হাত ছেড়ে দিয়ে উনি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো৷ ছাদের পাশের রেলিং এ নিজের হাতের সব ভর ছেড়ে দিলো। আমি শুধু তাকিয়ে দেখে যাচ্ছি কি বলবো বুঝতে পারছি না।

– আচ্ছা তান আমাকে বল তো আমার কি করা উচিত?
– আমি কিছু বুঝলাম না তোমার কথা ভাইয়া কি নিয়ে কি বলবো তোমাকে আমি?

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৫

– আমি কোনো দিল খুজে পাচ্ছি না জানিস। আমার খুব অসহায় লাগছে রে। আমি নিজের মনের সাথে যুদ্ধে হেরব যাচ্ছি। একদিকে আমার ভালোবাসা অন্যদিকে আমার দায়িত্ব আমি কাকে বেছে নিবো। আমি না পারব আমার ভালোবাসা কে ছেড়ে দিতে আর না পারবো আমার দায়িত্ব কে অবহেলা করতে। আমি ফেসে গেছি যা থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজে পাচ্ছি না। এসবের মধ্যে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছি প্রতিনিয়ত।

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৭