তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৪

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৪
সায়ারা জাহান

– মামি আমার দ্বারা কোনো ভুল হলে আমাকে মাফ করে দিয়েন কিন্তু আমার সাথে কথা না বইলা থাইকেন না প্লিজ।
আমি কথাটি বলে কান্না করে দেই, আমাকে কান্না করতে দেখে মামি বলে উঠলো।

– থেমে যা পাগলি কান্না করতে নাই,আমি রাগ নাই তোর উপর। নিজের করা কাজের জন্য লজ্জিত বোধ করছিলাম তাই কথা বলি নাই। দেখ জায়ান আমার কথার অবাধ্য হয়না সামিয়া কে আনতে যাইতে পারলো না আবার একা অতদুর যাবে এটা ভেবে রাগ লাগছে। কিন্তু আমি তোকে আঘাত দিয়্ব কথা বলতে চাই নাই। এসব ভেবে বলি নাই তুই কান্না করিস না। সামিয়া কে ডেকে নিয়ে আয় আমি নাস্তা বানাচ্ছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– সত্যি মামনি তুমি আমার উপর রাগ নাই? জানো আমার কতো কষ্ট হচ্ছিলো এটা ভেবে যে তুমি আমার উপর রাগ আছো।
– না আমি রাগ করি নাই এবার সামিয়া কে নিয়ে আয় যা তোর মামাও চলে আসবেন।

আমি মামির কথায় খুশি হয়ে নাচতে নাচতে চলে যাই বই আনতে। আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মামি তাকিয়ে থাকলো ওনার মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছে আমি জানিনা। জায়ান ভাইয়া কে আমি নিজের বড় ভাই এর মতো ভাবি উনি আমার কাছে আমার বড় ভাইয়ের মতো। আজ ওনার কাজে ওনার প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা বেড়ে ওঠলো। আমার নিজের ভাই থাকলে হয়তো এমন কাজ করতো আমার জন্য।

খাবার টেবিলে বসে আমি নাস্তা করছিলাম তখন দেখি জায়ান ভাইয়া সদর দরজা দিয়ে ভিতরে আসলো। ভাইয়া কে দেখে অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছিলো ওনার দিকে এক পলক তাকিয়ে আমি নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেই।
– বাবা তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোর নাস্তা দিয়ে দিচ্ছি।
– না আম্মু আমি অনেক ক্লান্ত একটু ঘুমাবো,এক কাজ করো গাড়ির ডিকিতে তানের সব জিনিস কাউকে দিয়ে আনার ব্যাবস্থা করো।

– আচ্ছা বাবা কিন্তু কিছু একটু মুখে দিয়ে এরপর নাহয় ঘুমাস।
ভাইয়া মামির কথা শেষ হওয়ার আগেই চলে গেলো,মামি সেদিকে তাকিয়ে হতাশার নিশ্বাস ফেললো।
– সামিয়া মা যা তো জায়ান কে এই খাবার টা ওর রুমে দিয়ে আয়। আর তুই দাঁড়িয়ে ওর খাওয়া হলে প্লেট নিয়ে আসবি।
– আমি কিন্তু ভাইয়া যদি আমাক্র বকা দেয়।
– দিলে দিবে তবুও দাঁড়িয়ে থাকবি তুই এতো ভয় পাস কেন?

সামিয়া আপু জায়ান ভাইয়া কে ভয় পায় ওনার থেকে দুরেই থাকে। মামির কথায় আর কিছু না বলে সে খাবার নিয়ে জায়ান ভাইয়ার রুমের দিকে গেলো৷ আমি বসে বসে নিজের খাবারের দিকে মনযোগ দিলাম। খাওয়ার পর আমি বাড়ির বাহিরে গেলাম হাটতে৷ আমার পুরানো অভ্যাস খাবার খেয়ে হাটাহাটি না করলে পেটুতে ব্যাথা করে।

আমি মামিদের বাগানের দিকটায় হাটছিলাম। বাগানের এক কোনায় দেখি গাধা ফুল গাছ লাগানো। গাছ টায় কোনো ফুল নাই অবশ্য এটা ফুল ফুটার সিজন ও না। আমার কাছে গাধা,লাল গাধা ফুল অনেক ভালো লাগে। গাধা ফুল ভালো লাগার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ফুল গাছ থেকে আসা ঘ্রান।

আমি গাছ থেকে কয়েকটা পাতা ছিরে তা বাম হাতের তালুর উপর রেখে ডান হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ঘসলাম। এইবার পাতা গুলি ফেলিয়ে দিয়ে হাত মুখের সামনে নিয়ে গিয়্ব ধরলাম, আহ কি সুন্দর ঘ্রান পাগল পাগল লাগে। সবার মতো আমার, কাঠগোলাপ,গোলাপ,বা অন্যান্য ফুলের প্রতি কোনো আকর্ষন নাই শুধু গাধা ছাড়া। এই ফুল পছন্দ করার জন্য সবার কাছে কত কথা শুনেছি ব্যাকডেটেড,গাইয়া,খ্যাত তবুও আমার এটা ভালো লাগে কিছু করার নাই।

অনেকক্ষন হাটাহাটি করার পরে বাড়ির ভিতরে গিয়ে টিভি ছেড়ে বসলাম। নিকোলোডিয়ান চ্যানেলে এখন সিভা দেখাচ্ছে আমার প্রিয় কার্টুন। খুব মনযোগ দিয়ে আমি যখন কার্টিন দেখছিলাম তখন সামিয়া আপু আমার পাশে এসে ধপ করে বসে পড়লো তাকিয়ে দেখি আপু বসে আছে।

– আচ্ছা সামু আপু তুমি জায়ান ভাইয়া কে এতো ভয় কেনো পাও আমাকে একটু বলবা? উনি বাঘ না ভাল্লুক যে দেখলেই তুমি পালাই পালাই করো?
– তুই বুঝবি না ওনার অই দাবাং মার্কা হাতে জিবনে মাইর খাস নাই বুঝবি কেমনে?
– কি বলো তুমি ভাইয়ার হাতে মাইর খাইছিলা?

আমি অবাক হয়ে সামিয়া আপুকে জিজ্ঞেস করলাম এটা, দেখলাম উনি কাদো কাদো ফেইস বানিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বুঝলাম আমি সত্যি উনি মাইর খাইছেন বাট কেনো?
– জানিস তখন আমি অষ্টম শ্রেনির ছাত্রী ভাইয়া ও তখন ছুটিতে আসছিলো আমি ওনার কাছে পড়তে আসতাম তখন। খালামনি নিজে গিয়ে নিয়ে আসতো পড়তে। একদিন পড়া পারি নাই দেখে ব্যাত দিয়ে যেই পিটুনি দিয়েছিলো আমাকে।

– তুমি পড়া পারো নাই দেখে মারছে তোমাকে?
– হ্যাঁ।
আপু হ্যাঁ বলার পড়ে আমি জোরে জোরে হাসতে থাকি। আমাকে হাসতে দেখে আপু অবাক হয়ে যায় যে আমি এতো হাসতেছি কেন? আমি হাসির জন্য বলতেও পারছি না কিছু।

– সিরিয়াসলি সামু আপু তুমি পড়া না পারার জন্য মাইর খেয়ে জায়ান ভাইয়া কে ভয় পাও?
– না আরো অনেক কাহিনী আছে অন্যদিন বলবো নে,আর এতো হাইসো না সোনা হাসির পড়ে কপালে কান্না থাকে।
আমাদের কথার মাঝে খেয়াল হলো জায়ান ভাই সামনে দাড়ানো। জায়ান ভাই কখন এলেন আর টিভির সামনেই বা এইভাবে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে কেন।

– ভাইয়া আপনি এইভাবে টিভির সামনে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? সরে দাড়ান আমি দেখতে পাচ্ছিনা।
– কি বললা তুমি আমি খাম্বা?
দূর কি বলতে কি বলে ফেলি আল্লাহ ভালো জানে। সামু আপু দুই হাত তার মুখে চেপে ধরে চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সামিয়া আপু উলটো হয়ে বসায় ভাইয়ার দিকে আপুর পিঠ দেওয়া। আপুর মুখ আটকে ধরার মানে হলো উনি যেকোনো সমউ বেফাস কথা বলে ভাইয়া কে রাগিয়ে টুস করে মাইর খায়।

– আসলে ভাইয়া সরি স্লিপ অফ টাং হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করবেন।
– যাইহোক যা বলতে আসছি আমি এখানে এক মাসের মতো আছি আর এই একমাস তান তুমি বিকেলে আমার কাছে রোজ পড়তে যাবে। একদিনেও যেনো ভুল না হয়। আর তুই সাম এক্সাম শেষ দেখে হাত পা তুল্ব বসে থাকিস না এডমিশন টেষ্টের প্রস্তুতি শুরু কর নাহলে কোনো কলেজে চান্স পাবি মা।

– আমি কি করবো তা আব্বু বলে দিবে আপদত আমি চিল করতে আসছি এখানে এখন চিল করবো।
– তোর চিল আর কাউয়া আমি বের করবো দেখিস একবার এডমিশন টেষট যাক।

আমি উনা কে দেখে যাচ্ছি পড়াশোনা নিয়া উনি এতো সিরিয়াস কেন সবসময় আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। আমি শুনেছি ভাইয়ার যেকোনো কাজিন এই বাসায় বেড়াতে আসলে জায়ান ভাইয়া থাকা কালীন অই সময় সবাই কে শুধু পড়ায় আর না পারলে শাস্তি দেয়। এইজন্য ওনার কোনো কাজিন ভয়ে এই বাসায় আসেনা ভাইয়া যতোদিন বাসায় থাকে।

ভাইয়া চলে গেছেন আমি গালে হাত দিয়ে ভাবছি না জানি কপালে কত মাইর আছে আমার। আমাকে ভাবতে দেখে সামু আপু বললো,
– বলেছিলাম না তান পাখি বেশি হাইসো না কাদবা পড়ে এখন বুঝো কোথায় যে যাচ্ছো তা পর টের পাবা। তোমার জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করবো যাতে ভাইয়া আবার বেশি মাইর না দেয় তোমাকে।

– তুমি আমাকে সাহস দিচ্ছো না কি ভয় দেখাচ্ছো আপু?
-অন্যদিকে-
– মেয়েটার কোনো খোঁজ পেয়েছো তোমরা?
– না স্যার মেয়ের কোনো খোঁজ পাই নাই, আমরা আপনার প্লেন মতো ট্রাক দিয়ে গাড়িটি চাপা দেই কিন্তু মেয়েটি কিভাবে বেচে গেলো বুঝতে পারছি না।

– কেনো পারবা একেকটা গাধার দল একটা বাচ্চা মেয়েকেও মারতে পারলা না আমি তোমাদের টাকা দিয়ে কেনো পুষছি?
– সরি স্যার আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি মেয়েটার খোঁজ পেতে ।
– চেষ্টা না পেতে হবে খোঁজ এট এনি কষ্ট,নাই গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার।

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৩

গার্ড গুলো চকে যাওয়ার পড় লোকটা একা একা হাসে আর কতোদিন বাচতে পারবা বাচ্চা তোমাকে তো মরতেই হবে আজ না হোক কাল। কে বাচাবে তোকে দেখে নিবো আমি।

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৫