তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৩

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৩
সায়ারা জাহান

আজানের শব্দ কানে আসতেই তানিশার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠে মাথায় ওরনা দিয়ে বসে থাকে। আজান শেষ হলে সে নামাজ পড়বে৷ কিন্তু কাল তো তার গোসল করা হয় নাই আর তার এই অবস্থায় নামাজ কিভাবে পড়বে। তানিশা ব্যাগ থেকে একটি কালো রঙের থ্রিপিস বের করে গোসলে চলে যায়।

গোসল করে এসে নামাজ আদায় করে নেয়। তার মন চাচ্ছে কুরাআন পড়ে বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করতে কিন্তু এই রুমে তো কোরাআন শরিফ নাই। অগত্যা উঠে গিয়ে মামা-মামির রুমের দরজা নক দিলো। মামা ও টুপি নিয়ে মাত্রই বের হচ্ছিলো মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমাকে দরজায় দেখে বললো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– মামনি এতো সকালে এখানে কিছু কি লাগবে?
-আসলে মামা আমার একটা কুরআন শরিফ লাগবে দিতে পারবেন?
-ও আচ্ছা দাঁড়াও তো।

মামা কোরআন শরিফ এনে আমাকে দিয়ে মসজিদে চলে গেলেন চুপচাপ। আমিও রুমে গিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করলাম কিছুক্ষন এরপর দীর্ঘ এক মোনাজাতে বাবা-মার জন্য দোয়া করলাম।
এই বাসায় নামাজের পড়ে সবাই ঘুমিয়ে থাকে আর উঠে ১০ টার পড়ে তাই আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। শুধু বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ছে কান্না পাচ্ছে কিন্তু কান্না করলে তো বাবা আর আম্মু কষ্ট পাবে তাই কান্না করা যাবেনা।

১০ঃ৩০ এ আমার ঘুম ভাঙ্গে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি মামি নাস্তা দিচ্ছে আর মামা চা খাচ্ছে।
– তান আম্মু গিয়ে দেখ তো জায়ান ঘুম থকে উঠেছে না কি না উঠলে ডাক দিয়ে নাস্তা করতে আসতে বলিস।
– আচ্ছা মামনি আমি যাচ্ছি।
ভাইয়ার রুম আমার রুমের কিছুটা দূরে তাই চলে গেলাম রুমের সামনে। রমের দরজা নক করলাম।

– ভাইয়া আপনাকে মামনি নাস্তা করতে যাইতে বলছে।
– আচ্ছা আমি আসছি তুমি যাও।

আমি চলে গেলাম ডাইনিং ওনাকে ডাকতে বলা হইছে আমাকে তা আমি দরজা থেকেও করতে পারি প্যারা নাই চিল। যেতে যেতে মাথায় ওরনা ভালোভাবে পেচিয়ে নিলাম আমি। আমার চুলগুলা দেখলে অই নোংরা চেহারার লোকের কথা মাথায় আসে। ডাইনিং এ গিয়ে বসতেই মামি আমাকে নাস্তা দিলো।

আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম কারণ মামা আর মামি জায়ান ভাইয়া আসা ছাড়া শুরু করবে না তাহলে আমি একা খাবো ব্যাপারটা অনেক খারাপ দেখায় না। কিছুক্ষন পড়ে ভাইয়া এসে আমার পাশের চেয়ারে বসলো আর খাওয়া শুরু করলো সবাই। খাওয়ার মাঝেই আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

– তান তুমি কি করবে এখন যেহেতু এখানে থাকবে তাহলে তোমার উচিত বই গুলা এখানে আনা। আর আব্বু তুমি তানের স্কুলে কল দিয়ে কথা বলে বলো তান শুধু এক্সাম দিতেই যাবে ক্লাস করতে পারবেনা। আর আমরা তান কে এখানের এক কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেই৷ ওর পড়াশোনার ব্যাপারে ভাবতে হবে ও এবার এস এস সি দিবে।
– আমি তো এসব ভাবতাম শুধু ওর মন খারাপ হবে এসব ভেবে তাই বলি নাই জায়ান।

– আব্বু ও পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে সারাদিন মন খারাপ করে থাকলে তো আর ফুপি বা ফুপা কেউ আসবে না তাইনা? এখন উচিত ওকে নিজেকে সামলে নেওয়া।
– আমি এক কথা বলি বাবা ও কে জিজ্ঞেস কর ও কি আর পড়তে চায় কি না?
– আম্মু তুমি জানোনা ফুপি তানের পড়াশুনা নিয়ে কতোটা সিরিয়াস ছিলেন? ফুপি চাইতেন তান যেনো ভবিষ্যতে ডাক্তার হন আর আমাদের উচিত তান কে হেল্প করা তাই না?

– তান তোমাদের বাড়ির চাবি দিয়ো আমাকে আমি একটু পড়ে বের হবো আর যা যা লাগবে তা এক কাগজে লিখে দিও আমি সব নিয়ে আসবো।
– জ্বী আচ্ছা আমি ভেবে লিখে রাখবো।
মামি কে দেখে মনে হলেন তিনি একটু অসুনতুষ্ট হলেন। মামির মুখ ট ভার ভার ঠেকলো।

– আমি তোকে যখন বললাম কাল গিয়ে সামিয়া কে নিয়ে আসিস সেটা তুই পারবি না আর আজ তুই কিভাবে ঢাকা থেকে ফরিদপুর যাবি?

– আম্মু তুমি এইভাবে কেনো বলছো? সামিয়া আসবে বেড়াতে ড্রাইভার পাঠাইলেই আসতে পারে এখান থেকে ২০ মিনিটের দূরত্ব। আর আমি যদি তান কে পাঠাই বই আনতে এতো দূর ও কিভাবে একা যাবে। আমি বুঝি না আম্মু তোমার মনে চলে টা কি ও কে রাখতে না চাইলে বলো ওকে আমি ওদের আত্মীয়ের বাসায় রেখে আসবো। এক মেয়েকে তোমরা নিজে যেচে আনবা আর এইরকম বিহেভ করবা ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু লাগে। এমন না যে ওর থাকা খাওয়ার অভাব পড়বে।

– তুই আমার সাথে এইভাবে কেনো কথা বলছিস জায়ান? আমি মা হই আমি এতো কিছু ভেবে তো বলি নাই।
– তোমার মুখের লক্ষন দেখলেই আমি বুঝে যাই তোমার মনে কি চলে কারণ আমার জন্মদায়িনী মা তুমি। তোমার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক মা।

– থাক এই বিষয়ে আর কোনো কথা আমি চাই না। নাজমা তুমি এইটা ঠিক করো নাই। সামিয়া কে আনতে আমাকে বলতে পারতে অফিস থেকে ফিরে আসার সময় নিয়ে আসতাম। আর জায়ান যাইতে চাইছো গিয়ে নিয়ে আসো। তুমি আমার ছেলের তোমার সিদ্ধান্তেত উপর আমি চোখ বুঝে ভরসা করতে পারি যে খারাপ ভাববা না।

– ধন্যবাদ আব্বু আমার একটু কাজ আছে আমি বাহির থেকে আসি।
– আচ্ছান যাও।
সবার কথা মাথা নিচু করে শুনে যাচ্ছি আমি। আমার এই নিয়ে কিছু বলার নাই। দুলাভাইয়ের থেকে বাচার জন্য আমার মামা মামির সাথে আসার কথাই মাথায় এসেছে প্রথমে।

আমি একা একজন মেয়ে নিজেদের বাড়িতেই বা কিভাবে থাকবো? কিন্তু আমার জন্য এমন হবে আমি ভাবি নাই। জায়ান ভাইয়ার কি দরকার মামিকে এইভাবে বলার উনি কষ্ট পাইছেন। মামা আর জায়ান ভাইয়া উঠে চলে গেলেন। মামি টেবিল গুছাচ্ছেন আমার আর খেতে ইচ্ছে হলো না।

মামিকে সরি বলতে ওনার দিকে আগালাম আমার আগানো দেখে উনি প্লেট নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেলেন। আমি স্পষ্ট বুঝেছি আমাকে ইগনর করলেন। কি আর করার রুমে গিয়ে এক খাতা কলম নিয়ে প্রয়োজনীয় সব কিছুর নাম লিখে দিলাম।

আমি একদিন ফিরে যাবো আমার বাসায় যেদিন আমি এতোটা স্ট্রং হবো নিজের খেয়াল রাখার আমি সেদিন ফিরে যাবো। লিখার পড় আমি কাগজ ভাইয়া আসলে ওনাকে দিয়ে দেই। আমার সারাদিন রাত কাটলো সুয়ে বসে হেটে। কিছু করার নাই। সামিয়া নামের মেয়েটি কে হয় মামিদের আর বেড়াতে আসবে।

আচ্ছা আমাকেই বা কিভাবে নিবে। মামির কথা শুনে মনে হলো মামির খুব কাছের কেউ মেয়েটি। বিকালের দিকে মামা সামিয়া কে নিয়ে আসলেন। শুনলাম খালামনির ছোট বোনের ছোট মেয়ে সামিয়া। সামিয়া আপু আমার সিনিয়র এবার এস এস সি দিলেন। আপুর এক্সাম শেষ হওয়ার সুবাধে এখানে এসেছেন বেড়াতে।

সামিয়া আপু খুব ভালো মনের মানুষ আসার পড় আমার সাথে একপ্রকার আড্ডায় মেতে উঠলেন। কত কথা কত কিছু মনেই হয় নাই এই মেয়েটার সাথে আমার কিছুক্ষণ আগে পরিচয় হয়েছে। রাতে খাবার খেয়ে আমরা রুমে এসেছি সামিয়া আপু আমার সাথে ঘুমাবে। আমার ঘুম আসছে না।

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ২

জায়ান ভাই সকালে বের হইছেন এখোনো আসছেন না মামি ছেলের চিন্তায় আছেন। আমার সাথে কথা বলেনা যখন আমাকে ইগনর করে খুব কষ্ট হয় কান্না পায় আমার।

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৪