তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ২

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ২
সায়ারা জাহান

কারো সাথে খারাপ হলে সব দিক দিয়েই হয়,বাবা -মাকে দাফনের পড় এখন অব্দি তানিশা কে ওর বড় ফুপুর বাসায় রাখা হয়েছে। ছোট ফুপুর বাসায় নেওয়ার কথা উঠলেও বলা হয়েছে যখন তিনি কুমিল্লা যাবেন তখন নিয়ে যাবেন। তানিশা থেকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করছে না কেউ কারো মতামত নিচ্ছে না।

মায়ের দাফনের জন্য ওর বড় মামা আসছে যা কে বলা হয় সৎ মামা। তবে নিজের মামারা তো ভুলেও খোঁজ নেয়না এই মামার বাসায় বেড়াতে গেলে কত আদর ফোনেও কথা হয় তানিশার। উনি সবাইকে ড্রয়িংরুমে ডাকলেন কারণ একটু পড় ওনারা ঢাকা ফেরার জন্য রওনা দিবেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আমি একটা জিনিস বলতে চাচ্ছি যে আমি আর আমার স্ত্রী ঠিক করেছি তানিশা কে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো। আমার বোনের মেয়ে ও ওর দেখাশোনা করা আমাদের দায়িত্বে।
বড় ফুফি যেনো জ্বলে উঠলো মামার এই কথায়,আমি না ছোট ফুপি বুঝতে পারে নাই হঠাৎ ওনার এইভাবে রাগার কারণ। ছোট ফুপিও নারাজ এইরকম কাজে।

– আমার ভাইয়ের মেয়ে কেন অন্য বাড়িতে গিয়ে থাকবে। আমার ভাইয়ের মেয়ে আমার কাছে থাকবে।
– দেখেন আপা তানিশা আপনার ভাইজি লাগে তেমন আমারো ভাগ্নি আর আমি চাই ও কে আমার মেয়ের মতো আগলে রাখতে আপনি এভাবে কেন আটকাচ্ছেন আমাকে।

– আপনার ভাগ্মি কিভাবে ও বলেন ও আপনার বোনের সৎ মেয়ে আর সৎ কখোনো আপন হয় না।
বড় ফুপির কথায় আমরা সবাই আশ্চর্য হয়ে গেলাম কারন আম্মু বা ওনার বাপের বাড়ির কেউ আমাকে সৎ ভেবে ট্রিট করে নাই। মামার মুখে অন্ধকার ছেয়ে গেলো হয়তো যে বোন নাই তা কে নিয়ে এমন কথা তার সহ্য হয় নাই। পাশে দাঁড়িয়ে থালা দুলাভাই এর দিকে নজর গেলো আমার। উনার দৃষ্টি প্রচন্ড বাযে এখানে থাকা আমার জন্য মোটেও সুবিধার হবে না আমি জানি।অনেক ভেবে সবার সামনে বলে উঠলাম।

– আমি আমার মামা – মামির সাথে যাবো ওদের কাছে। যখন আমার বাবা বেচে ছিলো তখন এই বড় ফুপি আমাকে নানান অত্যাচার করেছে এখন তো আর আমাকে প্রটেক্ট করতে আমার বাবা নাই এখন কি করবে.কোন ভরসায় আমি থাকবো এখানে?

আমার কথায় বড় রক্ত চুক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকালো আমি ভয়ে অন্যদিকে তাকালাম। ওখানে উপস্থিত সবাই আমার কথায় সায় দিতে লাগলেন। শেষে আমাকে ছোট ফুপি যাওয়ার অনুমতি দিলেন তবে বললেন ওনাএ বাসায় ও যেকোনো মুহূর্তে আমি চলে যেতে পারি।ছোট ফুপিকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাদলাম উনি পরম মমতায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমাকে শান্তনা দিলেন।

আমি ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছিলাম তখন দুলাভাই আমার পিছ থেকে কানে কানে বললো।
– যেখানেই যাও পাখি আমি তোমায় ছাড়বো না একদিন একদিন আমার বিছানায় তোমাকে এনে ফেলবোই এবং এটা আমার প্রতিজ্ঞা।
উনার এমন কথায় গা ঘিন ঘিন করে উঠলো শুধু আজ এই অবস্থা দেখে কিছু বললাম না দ্রত পা চালিয়ে চলে গেলাম মামা-মামির সাথে।

মামা-মামির এক ছেলে সে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। শুনেছি বাসায় পড়ালেখায় ডিস্টার্ব হয় এই কারণে সে একা থাকে। এইদিকে তাদের বাসায় মামা-মামিও একা থাকেন ওনার আর কোনো সন্তান নাই। মামির জড়ায়ুতে টিউমার হয় জায়ান ভাইয়া হওয়ার পড় এইজন্য নাকি জরায়ুর নার কেটে ফেলে আর কন্সিভ করতে পারে নাই।

মামা-মামি আমাকে অনেক আদর করেন। এই মুহুর্তে এই দুইজন এর কাছে আমার অনেক নিরাপদ ফিল হচ্ছে। বাবা-মায়ের কথা মনে পড়তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আজ এই সময় আমাদের বাড়িতে থাকার কথা ছিলো সেই আগের মতো যেখানে পড়ার জন্য আম্মু বকা দিতো এরপর নাস্তা বানিয়ে নিজেই খাইয়ে দিতো। আম্মু আমাকে খাইয়ে দিতো তখন বাবা আমাকে বলতো।

– তানের আম্মু তানকে খাইয়ে দিচ্ছে কিন্তু আমার আম্মু আমাকে কেনো খাইয়ে দিচ্ছে না। বাবা আমাকে ভালোবেসে তান বলে ডাকতো।
– ইশ আম্মু দেখো বাবা টা কিভাবে আমার মতো মুখ ফুলাইছে দেখো দেখো।
– বুড়োটাএ জলছে বুঝছো তাকে তুমি খাইয়ে দেও।
– আম্মু তুমি আব্বুকে বুড়ো বললা?
-হ্যাঁ তো।

আমি আর আমার আম্মু হেসে ফেলতাম জোরে আর আব্বা রাগে চোখ বড় বড় করে তাকাতো আমাদের দিকে। আমি বাবাকে খাইয়ে দিলে বাবা হেসে ফেলতো। আমরা তো পারফেক্ট ছিলাম তারপড়েও আমাদের সাথে এমন কেনো হলো আল্লাহ।

পুরান কথা ভাবছিলাম আর চোখ বন্ধ করে কান্না করছিলাম।মামা গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মামি মামার সাথে সামনে বসেছে আমি একা পিছে। হঠাৎ অনুভব হলো আমার পাশের সীটে কেউ ধপ করে বসেছে। আমি চমকে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি এক লোক। আমি ডান হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে তাকালাম।

– আমার বিশ্বাস হচ্ছে না জায়ান আজ এতোদিন পড়ে মা-বাবার কথা মনে পড়লো তোমার।
মামি লোকটা কে উদ্দেশ্য করব কথা টা বললো। আমার পাশের লোক এবার মুচকি হেসে বললো।
– ইউ নো না আম্মু আমি কত ব্যাস্ত থাকি পড়া নিয়া ছুটি পাইনা। আজ সেমিস্টার শেষ হলো ১ মাসের বন্ধ পেলাম তাই যাচ্ছি তোমাদের সাথে ১ মাস আছি বি হ্যাপি।

মামি হাসলো আমার ঘুম পাচ্ছে তাই আমি আর ওনাদের কথায় কান না দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
-এই মেয়ে এই আর কত ঘুমাবা সেই কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছি ওঠো বাসায় চলে এসেছি।

বিরক্তি নিয়ে চোখ মেলে তাকালাম মাথা যন্ত্রনায় আমার ফেটে যাচ্ছে হয়তো কান্নার জন্য। আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম উনি বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। আমি এবার নেমে বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম। মামা-মামি আগেই সোফায় বসে রেষ্ট নিচ্ছে। আমাকে দেখে মামি বললো।

– কি ব্যাপার তান তোমার চোখ এতো লাল কেনো দেখাচ্ছে মা?
-মামনি আমাএ প্রচুর মাথা ধরেছে এইজন্য বোধয়।
-তাহলে তোমার রুম্ব গিয়ে ফ্রেশ হও আমি খাবার আর মেডিছিন পাঠিয়ে দিচ্ছি।

এই বাসায় আমার এক রুম আছে। রুম টা মূলত আমার না আম্মুর,আম্মু বিয়ের আগে এই রুমে থাকতেন। বাবার সাথে বিয়ের পড় যখন আমি এই বাসায় আসতাম তখন আম্মুর সাথে এই রুম্ব ঘুমাতাম। গুটি গুটি পায়ে হেটে রুমের দিকে আগালাম আমি শক্তি পাচ্ছিনা। রুমে ঢুকে কাধের ব্যাগ সাইডে রাখলাম।

রুম খুব সুন্দর ভাবে সাজানো আছে হয়তো কাজের মেয়্ব সব গুছিয়ে রেখে গেছে। আমি ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ফ্যান ফুল স্পিডে ছেড়ে সাইড থেকে কাথা নিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষন পড়ে মামি খাইয়ে দিয়ে মাথায় বাম দিয়ে মেসেজ করে দিতে লাগলেন। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম সারাদিনের ক্লান্ত হয়ে।

অর্ধেক রাত এখন তানিশা ঘুমে বিভোর আছে৷ তানিশার মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে,হলদে ফর্সা মুখ খানা তার মলিন হয়ে আছে এমন চঞ্চল মেয়েটা কে কেমন প্রান হীন লাগছে। অনেক্ক্ষণ ধরে বসে বসে দেখেই যাচ্ছে তানিশা কে সে। এইবার দুই আঙ্গুল দিয়ে খুব আলতো ভাবে যত্ন করে তানিশার কপালে মেসেজ করে দিচ্ছে সে।

তানিশা ঘুমের চোখে মামিকে ভেবে বালিশ রেখে অই মানুষের কোলে মাথা দিয়ে দিলো। ঘুমের মধ্যে সে এসব করছে কি হচ্ছে সে বুঝতেই পারছে না। তানিশার ঘন চুলে গুলোর দিকে তাকালো। এরপর হালকা ঝুকে দেখে তানিশা কি সত্যি ঘুমে না কি এভাবে পরে রয়েছে।

সুন্দর ভাবে তানিশা কে আবার বালিশে শুইয়ে দিয়ে সে ভালোভাবে কাথা গায়ে জড়িয়ে দিলো। তানিশার কপালে একটু চুমু খেয়ে নিলো সে। নিজেই আবার নিজেকে বকছে।

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ১

– ছিহ আজ এইভাবে এক ঘুমন্ত মানুষের সুযোগ নিলি কিভাবে আল্লাহ নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে । এখন চুপচাপ থাকা শ্রেয় তার জন্য।

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৩