তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৫

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৫
সায়ারা জাহান

ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আমি মাগরিবের আজান দিলো কিছুক্ষন আগে। খোপা করা চুল গুলো খুলে মেলে দিলাম আমি। শরীরের মধ্যে ঠান্ডা এক বাতাস এসে লাগলো। শরীর ঝাকি দিয়ে উঠলো আমার। চুল গুলো ছেড়ে দিলাম আমি, আমার সেই পা অব্দি যত্নে বড় করা চুল গুলো আজ পিঠ পর্যন্ত। চুলের কথা মনে আসতেই অশ্রুতে চোখ টইটম্বুর। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে চোখ দিয়ে অশ্রকনা বইতে লাগলো। আবারো সেই শরীর হিম করা ঠান্ডা বাতাস এসে লাগলো শরীরে।
– আজ কি প্রকৃতির ও আমার মতো মন খারাপ? যেমন ঠান্ডা আমার মন হয়ে আছে তেমন ও কি প্রকৃতির হয়েছে?

আমি একা একা কথা বলেই যাচ্ছি নিজের মতো। চারোদিকে অন্ধকার হয়ে আছে তাই আমি নেমে গেলাম ছাদ থেকে। মন খারাপ আর কান্নার জন্য ভয় একফোটাও লাগে নাই আমার। আমি নিচে গিয়ে সোজা পড়তে লাগলাম ড্রয়িংরুমে বসে আর জায়ান ভাইয়া আমাকে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছিলো। পড়ার মাঝে মামা মামি দ্রুত বাড়িতে প্রবেশ করলেন। মামি আমার দিকে ৩ টা ব্যাগ এগিয়ে দিলেন। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। মামি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-তানিশা আজ আর পড়া লাগবে না উঠে রুমে গিয়ে সামিয়া কে রেডি করে দে। সামিয়া আর ওর মা- বাবা আসছে।
মামা আর মামির কথায় জায়ান ভাই অবাক হয়ে যায় এরপর নিজেকে সামলে নেয়।
– সামিয়া কে কেনো রেডি করাবা আর খালামনিরা সবাই আসছে কেনো আজ?
– সামিয়া কে দেখতে আসছে যেহেতু সামিয়া আমার আদরের একমাত্র মেয়ে তা কে আমি আমার মতো করে দেখাবো।
– হোয়্যাট আম্মু আর ইউ ক্রেজি? সামু মাত্র এস এস সি দিলো আর তোমরা তা কে এখন বিয়ে দিতে চাচ্ছো?
– হ্যাঁ চাচ্ছি বিয়ের পড় যত ইচ্ছা পড়াশুনা করুক জামাই না পারলে আমরা পড়াবো তবুই বিয়ে দিবো। যাতে কলেজ গিয়ে প্রেম না করতে পারে।

মামির যুক্তি দেখে আমার মাথা ঘুরানো শুরু হলো হায় আল্লাহ। যাতে সামু আপু প্রেম না করতে পারে তার জন্য এতো আয়োজন। আর ভাইয়া কি সাংঘাতিক রেগে গেছে। আমার যে হাসি পাচ্ছে আপুকে যদি বলি আপু তো কেদেই দিবে।
– এই তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন যা সামুকে রেডি করিয়ে নিয়ে আয় খাবারের আয়োজন হয়ে গেছে সব রেষ্টুরেন্ট থেকে এনেছি।
– যাচ্ছি মামি।

আমি মামির ধমক খেয়ে দিলাম দৌড় আল্লাহ আমার এতাও শখ নাই বকা খাওয়ার। এক দৌড়ে সামু আপুর রুমের সামনে এসে দাড়ালাম। সামু আমাকে এভাবে আসতে দেখে আমার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো
– কি ব্যাপার তান এভবে দৌড় মারলা কেন?
– আসলে আপু আমি আসছি মামির বকা খেয়ে। এই নেও এগুলা পইড়া রেডি হয়ে নেও।

– আমি এসব পড়ে রেডি কেনো হবো আজব?
– আজকে তোমাকে দেখতে আসতেছে রে আপু তাড়াতাড়ি করো মামি আইসা যদি দেখে তুমি রেডি হও নাই তাহলে সে দিবে আমাদের ধুয়ে।

আপুর রিয়েকশন একদম বাজে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমি কোনো ভুত তাকে খেয়ে দিবো এইজন্য এভাবে তাকাচ্ছে আশ্চর্যজনক ভাবে।
– আমাকে দেখতে আসবে আমি জানি না? আমার থেকে কেউই আমার মতামত জানতে চাইলো না ব্যাপার টা আজব লাগছে না তান। আমার ইচ্ছার কি কোনো মূল্য নাই। আমি মাত্র এস এস সি দিলাম কলেজে উঠবো এখন ই বিয়ে।

– এটাই প্রব্লেম কলেজে উঠে প্রেম করবা এরথেকে ভালো বিয়ে করে জামাইর সাথে প্রেম করবা এটা মামির ইচ্ছা।
– আচ্ছা জায়ান ভাইয়ার রিয়েকশন কি ছিলো রে?
– ভাইয়া তো প্রচন্ড রেগে গেছে এসব শুনে আমি তো দৌড়ে এসে গেছি মামির বকা খেয়ে। তুমি চেঞ্জ করে আসো হেল্প করি রেডি হতে ঠিক আছে?

সামিয়া আপু বড়দের সাথে কখোনোই তর্ক করে না। আপু চুপচাপ তাই রেডি হয়ে আসলো মামিকে সে এভাবেই ভয় পায় তাই আরকি। আপুকে সুন্দর করে শাড়ি পাড়িয়ে দিলাম। লাল রঙের এক বেনারসি ছিলো। আচ্ছা আপুকে দেখতে আসলে বেনারসি কেনো পড়ানো হলো। বেনারসি তো বিয়েতে পড়ে তাই না? আচ্ছা বিয়ে দিয়ে দিবে না তো আজ। আপুকে সব গয়না দিয়ে বউদের মতো সাজালাম আমি। আমার মাথায় একটা শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে আর তা হলো আপুকে দেখতে আসবে না এসেই বিয়ে করবে। মামা মামিরা কি সব আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে।

– আমাকে দেখতে আসলে সব বউদের জিনিস কেন দিলো তান? তারা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে না তো আজ।
– আরে আপু এতো চিন্তা কইরো না চুপচাপ থাকো দেখে যাও কি হয়।
আপুকে রেডি করানো হলে আপুকে নিয়ে নিচে গেলাম দেখলাম জায়ান ভাই চুল মুঠো করে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। মামি সামিয়া আপুর দিকে তাকিয়ে বলে।

– মা শা আল্লাহ আমার মেয়েকে তো খুব সুন্দর লাগছে রে কারো নজর না লাগে।
মামির কথায় জায়ান ভাই মাথা উচু করে তাকালো সামিয়া আপুর দিকে। ভাইয়ার দৃষ্টির মানে আমি বুঝি নাই উনি কাকে দেখছিলেন। ভাইয়ার ওমন ভাবে তাকানোর মধ্যে কিছু হয়তো ছিলো যা আমাকে কিছু বলতে চায়। আমি আবার নিজের মনের ভুল ভেবে চুপচাপ থাকি। মামি এবার আমার দিকে তাকিয় বলে।

– তান আমি তোমাকেও জামা দিয়েছি তা পড়নি কেনো আর সবসময় এভাবে মাথায় কাপড় দিয়ে রাখো কেন। তোমার চুল গুলো মা শা আল্লাহ কত বড় অইগুলা নিজে একা আচরাতে পারিস?
– আসলে মামি আমার চুল আর বড় নাই সব কেটে ফেলে দিছে ফুপি তাই এখন আর সমস্যা হয় না। আচ্ছা আমি চেঞ্জ করে আসি।

আমি মামির ওখান থেকে চলে আসলাম। চুলের কথা মনে পড়লেই সেই কান্না পায় আমার তাই পালিয়ে আসলাম। রুমে গিয়ে মামির দেওয়া কালো থ্রিপিস টা পড়ে সুন্দর করে ওড়না পেচিয়ে বে হলাম আমি। আপু সোফায় পুতুলের মতো বসে আছে পাশেই ভাইয়া। তখন কলিং বেল বাজলো আমি গিয়ে দরজা খুললাম।

দরজা খুলার সাথে সাথে এক লোক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। লোকটা কে দেখে আমি চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেলাম। এই প্রথম আমি কোনো পুরুষের দিকে এভাবে গভির দৃষ্টিতে তাকালাম। কালো পাঞ্জাবি পড়া হাতা গোটানো। বাম হাতে ঘড়ি লাগানো আর দু হাতে মিষ্টির প্যাকেট। আমাকে সামনে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্তিয়ে চোখ মুখ কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমজ ভ্যাবলার মতো তাকেই দেখছি। লোকটা আমাকে কিছু বলতেও পারছে না। তখন মামি আমাকে ডাক দিলো।

– কে এসেছে তান এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন।
মামির ডাক কানে আসতেই আমি সরে দাড়ালাম আমার প্রচন্ড লজ্জা লাগতে শুরু করলো। আমি চুপচাপ এক কোনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন আগের করা বদলামি মনে করতে লাগলাম।
– এই নেও খালামনি তোমার মিষ্টি,তোমরা দুই বোন আমাকে এতো জালাও কেন বলোতো? বাসায় তো জায়ান ও আছে তাকে দিয়ে করাতে পারো না কিছু কাজ।

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৪

– আর কি বলবো তোকে রাদ এই ছেলে আমার কথা শুনে বাসায় ই তো থাকে না রে বাবা। আর তুই ছাড়া কি আ কেউ আছে যে আমার কষ্ট বুঝবে?
– কি ব্যাপার জায়ান বাসায় আসিস না আবার খালামনি কথা শুনিস এমন কবে থেকে হইলি বুঝলাম না।
– আসলে ভাইয়া তেমন কিছু না আমি পড়াশুনা নিয়া ব্যাস্ত আছিলাম। এখন আসছি আম্মু তো আমাকে চিনেই না বুঝলা?

তবুও তোমাকেই ভালোবাসি পর্ব ৬