শিমুল ফুল পর্ব ৪৫

শিমুল ফুল পর্ব ৪৫
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

শিমুল বাসাটা পাল্টে ভার্সিটির পাশে দুই রুমের একটা ফ্লাট নেয়।কিছু আসবাবপত্র কিনে।পুষ্প ফুটপাত থেকে এটা সেটা কিনে বাসাটা নিজের মতো সাজায়।পুষ্প এই রুম থেকে ওইরুমে প্রজাপতির মতো উঁড়ে উঁড়ে যায় আবার আসে।শিমুল পুষ্পর উচ্ছলতা দেখে হাসে।একদিন দুজনে মিলে রান্না করছিলো।পুষ্প গায়ের ওরনা কোমড়ে গুজে ভাতের মাড় ফেলছে।এই সামান্য ব্যাপারটা শিমুলের এতো ভালো লাগলো যে সে মুগ্ধ হয়ে তার বউকে দেখছে।এই ক’মাসে পুষ্প যেনো বেশ ঘরনী হয়ে গেছে।বিয়ের পরে যেনো পুষ্প আরো সুন্দর হয়ে গেছে একদম চোখে লাগার মতো।নাকি শিমুলের কাছেই এমন লাগে!তবে আজকে পুষ্পর মুখটা কেমন যেনো লাগছে।সে পুষ্পকে ডাকে,

“পুষ্প..”
পুষ্প ভাতের মার ফেলছিলো শিমুলের কথা শুনে তার দিকে তাকায়।শিমুল তরকারি নাড়া বন্ধ করে বলে,
“মুখটা শুকনো লাগছে কেনো?কোনো সমস্যা?”
পুষ্প শিমুলের দিকে ফিরে।হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে নাকের ঘাম মুছে।
“কিছুদিন ধরে এতো দুর্বল লাগছে!সারাক্ষণ মাথা ঘুরে।”
শিমুলের মাথায় যে চিন্তাটা প্রথম আসে সেটা হলো পুষ্প গর্ভবতী না তো!পুষ্পও মনে মনে এটাই ভাবে।দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুল বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“প্রেগন্যান্ট নাকি?”
“আমি কিভাবে জানবো?”
“তো কে জানবে?”
পুষ্প মুচকি হেসে বললো,
“যে জানার কথা।”
শিমুল প্রতিবাদী গলায় বললো,
“এটা অসম্ভব।”
পুষ্প তরকারির লবন ঠিক কিনা দেখে।মুখের হাসির দৈর্ঘ বাড়িয়ে দেয়।
“আমার মনে হয় কেউ চলে এসেছে।অনভিজ্ঞ লোক।”

শিমুল অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে।সে অনভিজ্ঞ লোক?এটাও শোনার ছিলো!আর এমনটা হবার কোনো চান্স নেই।সে পুষ্পর ব্যাপারে খুবই স/তর্ক।তার হয়তো বাবা ডাক শোনার বয়স হয়েছে কিন্তু পুষ্প?সে তো এখনো ছোট হ্যাঁ বাচ্চা হলে পালন করে বড়ো তো করতেই পারবে তবে এতে করে যদি তার স্বপ্ন পুরণ না হয়?শরীর খারাপ করে?তাহলে?এই সব ভেবেই তো শিমুল স/তর্ক।অন্যসব দম্পতির মতো তাদের পথটা সরল পথে চলেনি,তাদের পথটা দু/র্গম।জীবনে উজ্জ্বল আলোর কাছে যাওয়া যেনো তাদের জন্য একটা চ্যা/লেঞ্জ।শিমুল খানিক ভেবে বললো,

“চান্স নেই।”
“এতো কনফিডেন্সে?”
“জ্বী ম্যাডাম।”
“মান্থলি ডেট তিন দিন অভার কিন্তু!”
শিমুল থমকে যায়।তারপরেই বলে,
“মাঝে মাঝে এমন হতে পারে।নো চাপ বেবি।”
পুষ্প মানে না।নাছোড়বান্দার মতো বললো,
“কিন্তু আমার যে শরীর খারাপ লাগছে,প্রেগ্ন্যাসির সব লক্ষন আছে।”
“ম্যাডাম আপনার কেনো খারাপ লাগছে বিকেলে ডাক্তার দেখিয়ে আনবো।”
পুষ্প কি ভেবে মন খারাপ করে বললো,

“আচ্ছা ধরো আমার পেটে সোনামণি চলে এসেছে।বিকেলে গিয়ে পরিক্ষা করলাম যদি পজিটিভ আসে তাহলে কি করবে?”
শিমুল পুষ্পর মন খারাপের আঁচ পায়।পাত্তা না দিয়ে বলে,
“এসব কিছু হবেনা।কাজ করো।”
পুষ্প কাজ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,
“এভোরেশন করে ফেলবো?”

পুষ্প কথা শুনে শিমুল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
“এমন কিছু না পুষ্প।খালি খালি টেনশন করোনা তো।”
“যদি হয় তাহলে করবে?”
শিমুল পুষ্পর দিকে এগিয়ে আসে।
“কি মনে হয়?”
পুষ্প কথা বলেনা।তার চোখ ইতোমধ্যেই পানিতে টলমল করছে।

“আমরা এতো সতর্ক থাকার পরেও যদি আল্লাহ কাউকে পাঠাতে চায় তাহলে আমরা আটকানোর কে?এবোরেশন করা গুনাহ।আর এতে মায়েরও ক্ষতি হয়।সবচেয়ে ক্ষতি হয় যে মেয়েটার প্রথম সন্তানের বেলায় এটা করে।মেয়েদের শরীর খুব নাজুক।বাচ্চা নষ্ট করতে এই পথ অবলম্বন করলে দেখা যায় পরবর্তীতে আর বাচ্চাই হয় না।তাহলে দরকার কি?”
পুষ্প শিমুলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে।শিমুল আবার বলে,
“পুষ্প তুমি এসব কেনো ভাবছো?কিছু হবেনা।”

বিকেলে দুজনে ডাক্তার দেখিয়ে আসে।ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে শিমুল হেসে খুন।বারবার পুষ্পকে রাগাচ্ছে।পুষ্পর কথা অনুযায়ী প্রেগ্ন্যাসি টেস্ট করা হয়েছে রিপোর্ট নেগেটিভ,রক্ত পরিক্ষা করা হয়েছে।ডাক্তারের ভাষ্যমতে পুষ্পর রক্তশূন্যতা তাই পিরিয়ড হয়নি।রক্তশূন্যতার কারনেই শরীর দূর্বল,মাথা ঘুরানো,বমি ভাব,শরীরে ক্লান্তিবোধ এসব হচ্ছে।ওষুধ লিখে দিয়েছে নিয়িমিত খেতে বলা হয়েছে।

পুষ্পর মন খারাপ।তার মনটা সারাদিনে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখে ফেলেছিলো।ছোট ফ্লাটে বাচ্চার কান্নার শব্দ কান পেতে শুনেছিলো,বাচ্চাটা কার মতো হবে সেটাও একটু ভেবে নিয়েছিলো কিন্তু এখন সব স্বপ্নই তো শেষ।বুকটা কেমন জ্বলছে।আচ্ছা সে কি মা হতে চাইছে?শিমুলের এতো দুষ্টামির কথায়ও যখন পুষ্প রাগ করেনা তখন শিমুল পুষ্পর মন খারাপের ভাগিদার হয়।

“কি হলো?”
“কিছুনা।”
শিমুল বুঝে গেলো প্রিয়তমার মন খারাপের কারণ।
“তুমি কি মা হতে চাইছো পুষ্প?”
পুষ্প সম্মতির চোখে শিমুলের দিকে তাকায়।শিমুল পুষ্পকে নিয়ে একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসে।
“তোমার না অনেক স্বপ্ন?অফিসার হবে না?”
“হুম।”

“তাহলে?এতো অল্প বয়সে পুচকি চলে আসলে কিভাবে হবে?প্রচুর পড়তে হবে তো।তোমার আরেকটু বয়স হোক তখন না হয় আমরা বাচ্চার প্লেন করবো।”
“বাচ্চা হলে কি পড়া যায় না?কতোজনেই তো বাচ্চা হলেও পড়ে।”
“পড়ে কিন্তু তুমি পারবেনা।”
“পারবো।”
শিমুল মাথা নাড়িয়ে বুঝানোর ভঙিতে বলে,

“আমার বাচ্চা নিবো কিন্তু তুমি আগে নিজে প্রতিষ্ঠিত হও।তুমি কি ভুলে গেছো তোমার পড়ালেখা নিয়ে আমাকে কতো কথা শুনতে হয়েছে?পড়ালেখার দোহাই দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।ভুলে গেছো সব?”
“ভুলিনি।”

“কখনো ভুলাও যাবে না।যারা তোমার পড়া নিয়ে কটুক্তি করেছে তাদের দেখিয়ে দিতে হবে পুষ্প খাঁটিসোনা।এখন যদি বাচ্চা নিয়ে সংসারে ব্যস্ত হয়ে সব ভুলে বসো তাহলে কিভাবে হবে?আমি চাই আর কয়েকবছর পরে বাবু নিতে।আর আমার বউকে অফিসার বানাতে চাই।কি! আমার স্বপ্ন পুরণ করবেনা?”
পুরোনো আঘাতগুলো শিমুল আবার মনে করিয়ে দিয়েছে।পুষ্প শিমুলের কাধে মাথা রেখে বললো,
“করবো।”
“শিমুল পুষ্পর কপালে চুমু খেয়ে বলে,

“মন খারাপ করেনা সোনা।আল্লাহ চাইলে আমাদের মিষ্টি একটা কুট্টুসপাখি আসবে অবশ্যই আরো বছর পাঁচেক পড়ে।”
পুষ্পর মন ভালো করতে শিমুল আর সে ঘুরে বেড়ায়।কতোক্ষন রিকশা করে ঘুরে তারপর টিএসসিতে যায়।সেখানে যে কতো মানুষ!অনেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে অনেক কপোত-কপোতী বসে সময় কাটাচ্ছে।অনেকে একা বসে আছে।শিমুল কিছুক্ষণ পুষ্পর হাত ধরে হাটে তারপর দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।

পুষ্প খেয়াল করে দেখে অনেক মেয়েই শিমুলকে দেখছে।দেখছে বললে ভুল হবে প্রায় চোখ দিয়ে গিলে নিচ্ছে।সে শিমুলের দিকে তাকায়।ভার্সিটির প্রফেসর হিসেবে নিজেকে বেশ শালীন আর মার্জিত রাখে।কালো শার্ট আর সাদা পেন্টে ফর্সা গায়ের শিমুলকে ফুটন্ত ফুলের মতো দেখাচ্ছে।মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল পরিপাটি করে গোছানো।মুখের মিষ্টি হাসি আর কথা বলার ভঙ্গিমা সবার নজর কাড়তে সক্ষম।উফ ছেলেটা এতো সুন্দর কেন?

পুষ্প ইদানীং ক্ষনে ক্ষনে শিমুলের প্রেমে পড়ে।ভেবেছিলো তার জীবনে একবারই প্রেমে পড়া হলো কিন্তু ভুল তার জীবনে সে হাজারবার প্রেমে পড়েছে।একটা পুরুষের প্রেমে যতোরকম ভাবে পড়া যায় সে পড়ে।আজকে শিমুলকে একটু বেশীই সুন্দর লাগছে কিন্তু মেয়েরা এভাবে তাকায় কেনো?জানেনা শিমুল বিবাহিত!মেয়েদের বিয়ে হলে শাড়ি,চুড়ি,নাকফুল পড়ে নিজের গায়ে বিবাহিতার ছাপ দেয় কিন্তু ছেলেরা?ছেলেদের বেলায় কেনো কোনো ছাপ নেই?কেনো বোঝার উপায় নেই বিবাহিত নাকি অবিবাহিত।প্রাণের পুরুষের দিকে মেয়েদের এমন চাহনি পুষ্পর ভালো লাগেনা।শিমুল বোধহয় মেয়েদের এমন চাহনি দেখেই মুচকি হাসে।

তার হাসি দেখে পুষ্পর রাগ আকাশ ছোঁয়।পুষ্প অভিমানী চোখে শিমুলের দিকে তাকিয়ে আছে।শিমুল তার ফুলানো গাল দুটো টিপে বললো,
“কি হয়েছে পাখিটার?গাল ফুলেছে কেনো?”
পুষ্প আবারো আশেপাশের মেয়েদের দিকে তাকায়।
“সব মেয়ে তোমাকে দেখে কোনো?”

শিমুল তার চুলে হাত ভুলিয়ে মুচকি হাসে।প্রেয়সীর বুকের জ্বলন বেশ টের পায়।পুষ্পকে রাগাতে এতো ভালো লাগে তাই বললো,
“দেখার জিনিস তো দেখবেই।”
পুষ্প সাথে সাথেই শিমুলের গা ঘেষে দাঁড়ায়।নাক ফুলিয়ে অধিকারের সাথে বললো,
“তুমি আমার জিনিস।শুধু আমার।”

শিমুল হাসে।মেয়েটা তাকে এতো ভালোবাসে!
“হ্যাঁ তোমার কিন্তু ওরা তো আর জানে না।”
“জানিয়ে দাও।”
“কি দরকার?আমাকে এভাবে প্রেমপ্রেম চোখে দেখছে ভালোই তো লাগছে।”
“খুব শখ!একেই বলে পুরুষ মানুষ!প্রেম করলে জান প্রাণ বিয়ের পরে সরে দাঁড়ান।”
শিমুল মুচকি হেসে একহাতে পুষ্পকে তার দিকে চাপিয়ে নেয়।

“সরে দাঁড়াতে হবে না রে বউ।সারাজীবন কাছে রাখার জন্যই তো এতো সং/গ্রাম।”
শিমুলের কথায় পুষ্পর অভিমান কমে।শিমুলের শার্টের বোতামে হাত ভুলিয়ে বলে,
“তোমাকে কেউ দেখলে আমার ভালো লাগে না।কেমন য/ন্ত্রণা লাগে।”
তারপর বুকে হাত দিয়ে বললো,

“এখানে ব্যা/থা করে জান।”
পুষ্প আদুরী গলায় কথাগুলো শুনে শিমুলের মুখে হাসি ফুটে উঠে।আস্তে করে বললো,
“তাই?”
“হ্যাঁ।কোনো মেয়ে যখন দেখে তখন আমার এতো খারাপ লাগে।”
শিমুল মুগ্ধ চোখে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে থাকে।পুষ্প আলতো গলায় বলে,
“তোমায় প্রেম চোখে দেখার অধিকার শুধু আমারই থাক।
অন্য কেউ প্রেমচোখে দেখার আগে আমার ম/রণ হোক।”

শিমুল সাথে সাথেই জোড়ে চিৎকার করে বললো,
“সবাই শুনেন আমি বিবাহিত।এই মিষ্টি মেয়েটা আমার বউ।”
পুষ্প মুখে হাত চেপে দাঁড়িয়ে থাকে।সে এতোটা কল্পনা করেনি।আশেপাশের সবাই হতভম্ব হয়ে তাদেরকে দেখছে।অনেকে ভাবছে ছেলেটা পা/গল নাকি?বিবাহিত ভালো কথা এভাবে জোড়ে জোড়ে বলতে হবে?শিমুল পুষ্পর মুখ থেকে হাত সরায়।টোপ করে চোখ মেরে বললো,

“সবাইকে জানিয়ে দিলাম পুষ্পরানী।আপনার কি আর কোনো ইচ্ছা আছে?থাকলে এই প্রজাকে বলে ধন্য করুন।”
শিমুলের কাজটা হয়তো সামান্য কিন্তু এই সামান্য কাজটা পুষ্পকে যে কি খুশী দিয়েছে এটা প্রকাশ করার মতো না।অনেকের কাছে হয়তো পাগলামি মনে হতে পারে কিন্তু শিমুল জানে মাঝে মাঝে প্রিয়তমার মনে খুশীর ফোয়ারা বয়িয়ে দিতে এমন পাগলামির দরকার আছে।পুষ্প হেসে বললো,

“পাগল নাকি?”
“পাগলই তো।আজকে বুঝলে?”
পুষ্প হাসে।ছেলেটা এতো সহজ স্বীকারোক্তি করে যে পুষ্প এই ছেলের কথাগুলোর প্রেমেই পড়ে যায়।পুষ্প দূরে একজোড়া শালিক পাখির দিকে তাকিয়ে বললো,
“পড়ে গেছি।”
“কোথায়?”
“তোমার প্রেমে।”
শিমুল আহ্লাদী গলায় বললো,

“তুমি প্রেমে পড়ো উঠো।কিন্তু আমি যে সেই পিচ্ছির প্রেমে পড়লাম আর উঠতেই পারি না।ক্ষনে ক্ষনে ডুবে ম/রি।”
“ইশ।এমন একটা কাজ করেছো।সবাই কিভাবে দেখছে।”
“দেখুক।লজ্জা পাচ্ছো?”
এতো এতো লোকের মাঝেই পুষ্প পায়ের পাতায় ভর দিয়ে উঁচু হয়ে শিমুলের গালে তার নরম ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দেয়।ফিসফিস করে বললো,
“বাসায় যাবো।সবাই দেখছে।আমার খুব লজ্জা লাগছে।”
“চুমু টুমু দিয়ে এখন লজ্জা?”

পুষ্পর পরিক্ষার আর মাত্র দুইদিন বাকি।পুষ্প তার আব্বার বাড়িতে থেকে পরিক্ষা দেবে।বাবা মা যতোই যা বলুক ছেলে মেয়ে কি রাগ অভিমান করে থাকতে পারে?পুষ্পও পারেনি হয়তো মনের গহীনে দাগটা দগদগে হয়ে আছে কিন্তু উপরে শান্ত।পুষ্পকে শিমুল দিয়ে আসবে।

একমাস তেরো দিন লাগবে পরিক্ষা শেষ হতে।এতোদিন শিমুলকে ছেড়ে থাকতে হবে বিধায় পুষ্পর মন প্রচন্ড খারাপ।বারে বারে চোখের কোনে পানি জমছে।ওরনা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চোখের বর্ণ লাল আকার ধারন করেছে।শিমুল সুক্ষ্মভাবে সব পর্যবেক্ষণ করছে।পুষ্পর নিঃশব্দে কান্না দেখে বলতে পারেনা আমারো কষ্ট হচ্ছে পুষ্প।হঠাৎ পুষ্প শিমুলের গলা আঁকড়ে ধরে বললো,

“তুমি আমার সাথেই থাকবে তা না হলে আমার পরিক্ষা ভালো হবে না।”
শিমুল আস্তেধীরে পুষ্পকে নিজের বাহুডোরে আটকে বললো,
“আমার ভার্সিটি আছে না?তা না হলে থাকতাম।তুমি মন দিয়ে পরিক্ষা দিয়ো।আমি প্রতি শুক্রবারে যাবো।”
পুষ্প কান্না গলায় বললো,
“আমি না থাকলে তুমি আবার তিহা টিহার সাথে প্রেম ট্রেম করবে না তো?”
শিমুল হতভম্ব হয়ে বললো,
“এতো সন্দেহ?”

“উহু।এটা সন্দেহ না ভ/য়।তোমাকে হারিয়ে ফেলি কিনা তার ভ/য় পাই।বিশ্বাস করো তোমাকে হারালে আমি ম/রে যাবো।আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাবে।”
শিমুল স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।এতো ভালোবাসা হারানো যায়?যায় কিনা জানা নেই কিন্তু শিমুল হারাতে দিবে না।রাত আট’টা নাগাদ শিমুল আর পুষ্প তাদের বাড়িতে আসে।এবার পুষ্পদের বাবা মায়ের ব্যবহার পুরো বদলে গেছে।

শিমুল ফুল পর্ব ৪৪

সেবার মুন্নীর শশুড় বাড়িতে শিমুলের প্রতি যে অবজ্ঞা অবহেলা ছিলো তার কোনো রেশ নেই এবার সবটা জুড়ে আদর,আপ্যায়ন।প্রফেসর জামাই বলে কথা!পুষ্প অবাক হয়ে দেখে,
জীবনে টাকাই কি সব?টাকা না থাকলে মানুষ দাম দেয় না আর টাকা থাকলে মাথায় করে রাখে।অথচ মানুষ কিন্তু একজনই ভিন্নতা শুধু টাকায়।তাহলে কি টাকাই সব?

শিমুল ফুল পর্ব ৪৬