এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৫

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৫
Fabiha bushra nimu

দীর্ঘ দুই বছর পরে নিজের দেশে পা’ রাখলো ইফাদ’।ঘড়ির কাটায় রাত দু’টো বাজে’।বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত চারটা বেজে যাবে’।নিজের জিনিস গুলো নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে আসলো ইফাদ’।বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে,গাড়ির দেখা মিলল’।গাড়িতে উঠে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিল’।
বাসার সামনে ব্যাগপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইফাদ’।এখন বাসার ভেতরে প্রবেশ করবে কিভাবে’।বাধ্য হয়ে চৈতালি’কে ফোন করলো’।দশবার ফোন করার পরে চৈতালি বিরক্ত হয়ে ফোন তুলল’।

–এখন ঘুমাচ্ছি’।সকালে ফোন দিবেন’।
–আমি ভেতরে গেলে তোর ঘুম আমি বের করে দিব’।তাড়াতাড়ি দরজা খুল’।
ইফাদের গলা শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো চৈতালি’।চোখ দটো ডলে ড্যাব ড্যাব করে ফোনের দিকে তাকালো’।না ঠিকি তো আছে,তার ভাইয়ের নাম্বার-ই তো’ এটা’।চৈতালি’র কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,ইফাদ আবার ধমকে উঠলো’।
–ভাইয়া তুমি আমার সাথে মাঝরাতে মজা করছো’।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–আমি তোমার ফ্রেন্ড লাগি’।মাঝরাতে তোর সাথে মজা করবো’।দরজা খুলবি নাকি,আবার চলে যাব’।
–না আমি আসছি’।কল কাটবে না কিন্তু’ আমার ভয় লাগে’।কথা বলতে বলতে চৈতালি বাহিরে এসে দরজা খুলে দিল’।ইফাদ’কে দেখে চিৎকার দিতে যাবে।তখন-ই ইফাদ চৈতালি’র মুখ চেপে ধরে’।
–আস্তে এই মাঝরাতে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করিস না’।
চৈতালি নিজের মুখ থেকে ইফাদের হাত সরিয়ে বলল’।

–তুমি আজকে আসবে বলো নি’ তো’।
–কেনো বললে,হাতি-ঘোড়া নিয়ে আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতি’।
–অবশ্যই থাকতাম।আম্মুকে ডেকে দিব’।
–কাউকে ডাকা লাগবে না’।অনেক দূর থেকে এসেছি।আমার ঘুমের প্রয়োজন’।আমি ঘুমোতে গেলাম।একদম আমাকে বিরক্ত করবি না’।ব্যাগ গুলো ঘরে এনে রাখ’।

–তুমি বাহিরে থেকে এসেছো’।ফ্রেশ না হয়েই ঘুমাবে’।
–আমি তোর মতো মুচি না’।শীত আসলে সাতদিন গোসল করিস না’।
–ভাইয়া ইফাদ দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো’।
–ভাইয়া তো’ রুমে গেলো’।ভাইয়া’র রুমে ভাবি থাকে’।দরজা খোলা থাকলেই হয়’।কথাগুলো ভাবছিল আর ব্যাগ গুলো এক কোণে রাখছিল’।

ইফাদ নিজের রুমের কাছে এসে দেখলো পুরো রুম অন্ধকার’।বিষয়টা ইফাদ স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে’।ফোনটা বের করে,ফোনের আলো দিয়ে বিছানায় গিয়ে টান হয়ে শুইয়ে পড়ল’।শরীর আর চলছে না।একটু শান্তিতে ঘুমাবে ইফাদ’।ফোনটা অফ করে দিল’।কেউ কল দিয়ে বিরক্ত করতে না পারে’।তানহা’কে কোলবালিশ ভেবে কাছে টেনে নিয়ে তানহা’র শরীরে’র ওপরে পা তুলে দিল ইফাদ’।

–আমার কোলবালিশ এত নরম হলো কিভাবে’।মা-কি’ আমার নতুন করে তুলো ভরে দিল নাকি’।অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ইফাদের’।না এটা কোলবালিশ হতে পারে না’।
একটু আগেই শাশুড়ী’র রুম থেকে এসে ঘুমিয়েছে তানহা’।ইদানীং রোকেয়া বেগমে’র শরীর ভালো যায় না’।তানহা নিজের সবটুকু দিয়ে রোকেয়া বেগমে’র সেবা করে’।সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হয় তানহা’র।হঠাৎ পেটে শীতল কিছু অনুভব করলো তানহা’।ইফাদের হাতের ওপরে হাত রাখতে-ই দু’জনে চমকে উঠলো’।

ইফাদ বুঝতে পারলো এটা কোলবালিশ হতেই পারে না’।তানহা ইফাদে’র দিকে ঘুরে বোঝার চেষ্টা করছে’।এটা কে হতে পারে’।চৈতালি নাকি তার শাশুড়ী’।কারন মাঝে মাঝে চৈতালি না হলে তার শাশুড়ী তানহা’র সাথে ঘুমায়’।তানহা অন্ধকারে হাতিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে এটা কে’।আম্মা বা চৈতালির শরীর এত শক্ত না’।তাহলে তাদের শরীর এত শক্ত হলো কিভাবে’।ইফাদ বালিশে’র নিচে থেকে ফোন বের করে’।ফোনের আলো জ্বালিয়ে দিলো’।দু’জন দু’জনকে দেখে একসাথে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো’।

চৈতালি সবেমাত্র কম্বলের মধ্যে ঢুকেছে’।ইফাদের রুম থেকে চিৎকার শুনে দৌড়ে বাহিরে আসলো’।ইফাদের রুমের দিকে যাওয়ার আগে রোকেয়া বেগমে’র সাথে দেখা হলো চৈতালি’র।
–তুই এখানে তানহা’র সাথে ঘুমাস নি’।মেয়েটা’র কোনো বিপদ হলো না তো’ আবার’।
–আমি আজকে ভাবির সাথে ঘুমোয়নি’।ভাবি তোমার রুমে ছিল,তাই নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম’।
রোকেয়া বেগম কথা না বাড়িয়ে’ তানহা’র রুমের দিকে গেলো’।রোকেয়া বেগম চলে যেতে-ই চৈতালি’র মনে হলো’ ইফাদ-ও রুমে গেছে’।আল্লাহ জানে দু’জন কি করছে’।

তানহা দ্রুত উঠে রুমের আলো জ্বালিয়ে দিল’।ইফাদ ভ্রু কুঁচকে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে’।ইফাদ মনে মনে ভাবছে’।আমার রুমে মেয়ে আসলো কোথায় থেকে’।কিছুক্ষণ পরে মনে হলো,দুই বছর আগে সে’ বিয়ে করেছিল’।ইফাদ কিছু মুহুর্তের জন্য থমকে যায়’।এত সুন্দর মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছে’।মেয়েটা চাইলে চলে যেতে পারতো’।না গিয়ে কোনো তার জন্য অপেক্ষা করছে’।ইফাদ’কে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানহা বলল’।

–আচ্ছা অসভ্য মানুষ তো’ আপনি’।অন্ধকারে’র মধ্যে মেয়ে মানুষ দেখলেই টেনে ধরতে ইচ্ছে করে’।
তানহা’র কথায় ইফাদ রাগী দৃষ্টিতে তানহা’র দিকে তাকালো’।পরক্ষনে দুষ্টু হেসে বলল’।
–টেনে-ই তো’ ধরেছি’।বাসর তো’ আর করি নাই’।ঘরে এত সুন্দর বউ আছে জানলে’।কবেই দূর প্রবাস থেকে চলে আসতাম’।

–কি নির্লজ্জ লোক রে বাবা’।দুই বছর পরে আসছে। বউয়ে’র খোঁজ নিতে’।আপনি কিভাবে জানলেন আমি আপনার বউ’।আপনার তো’ স্বামী হবার কোনো যোগ্যতা নেই’।বিয়ে করে রেখে গেছেন’।বউয়ে’র ভরনপোষণ,খোঁজ-খবর কিছু নেননি’।বেঁচে আছি নাকি,মরে গেছি কখনো জানতে চাননি’।দুই বছর পরে নাটক করতে আসছেন’।
–আমি তোমাকে বলে ছিলাম’।আসো আমাকে বিয়ে করো’।তুমি কোনো আমাকে বিয়ে করতে গেলে’।এসব কই থেকে আম্মু ধরে নিয়ে আসছে আল্লাহ জানে’।

রোকেয়া বেগম দরজার কাছে এসে দু’জনের ঝগড়া দেখে থেমে যায়।মুখে আঁচল চেপে হাসছেন’।চৈতালি এসে মায়ের পেছনে দাঁড়ায়’।
–ভাইয়া তোমার ভাগ্য ভালো বুঝছো’।ভাবির মতো মেয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে’।এখনো তোমার সংসারটা’কে আগলে রেখেছে’।

–এত বড় বড় কথা বলছিস’।তোর ভাবিকে নিজেই বিয়ে করে নিতি’।
–আমি ছেলে হলে,তাই নিতাম’।রাত করে ঝগড়া করো না’।আম্মু অসুস্থ চিৎকার করো না’।
–এই মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে যা’ আমার রুম থেকে’।
–দেখ ইফাদ আমাদের বিশাল বড় রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি না’।যে,তুই বলবি তানহাকে অন্য রুমে থাকতে।তানহা অন্য রুমে গিয়ে থাকবে’।আমাদের বাসায় তিনটাই রুম এখন তানহা তোর সাথেই থাকবে’।আমি আর কোনো কথা শুনবো না’।চৈতালি চলে আয়’।বলেই চলে গেলেন রোকেয়া বেগম’।চৈতালি-ও মায়ের পিছু পিছু চলে গেলো’।
ইফাদ তানহার দিকে তাকালো’।

–দেখুন সিনামার মতো আমাকে নিচে ঘুমাতে বলবেন না’।আমি নায়িকাদে’র মতো এত মহান হতে পারবো না’।এই শীতের মধ্যে নিচে শুইয়ে অসুখ বাধাতে পারবো না’।আম্মার শরীর খারাপ’।চৈতালির সকালে কলেজ আছে’।সকালে উঠে আমাকে রান্না করতে হবে’।আমি ঘুমিয়ে গেলাম’।একদম বিরক্ত করার চেষ্টা করবেন না’।তাহলে মাথার চুল একটা-ও থাকবে না’।একদমে কথাগুলো বলে শুইয়ে পড়ল তানহা’।

ইফাদ হতভম্ব হয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে’।আমার বাড়িতে থেকে আমার সাথে-ই মেয়েটা মেজাজ দেখাচ্ছে’।আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কেনো’।আমি বা’ মেয়েটা’কে কিছু বলছি না কেনো’?কথা গুলো গলায় এসে আঁটকে যাচ্ছে’।ইফাদ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তানহা’র পাশে শুইয়ে পড়ল’।মাঝখানে বালিশ রেখে,দু-চোখ বন্ধ করলো’।এখন ঝগড়া করার সময় নেই’।শরীর’টা বড্ড ক্লান্ত লাগছে’।একটু ঘুমের প্রয়োজন’।কিছুক্ষণের মধ্যে ইফাদ ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো’।

ভোরের আজান কানে আসতে-ই তানহা উঠে বসলো’।অজু করে এসে নামাজ পড়ে নিল’।রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে তানহা’।চৈতালি,রোকেয়া বেগম দুজনেই উঠে পড়েছেন’।তানহা’কে রান্না ঘরের দিকে যেতে দেখে রোকেয়া বেগম বললেন’।
–তানহা আজ আমি রান্না করবো’।ছেলে আমার কতদিন পরে দেশে আসলো’।নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াতে চাই’।
–আমি আপনাকে সাহায্য করি আম্মা’।
–কোনো সাহায্য লাগবে না’।তুমি প্রতিদিন করো’।একদিন আমি করলে কোনো ক্ষতি হবে না’।তুমি চৈতালি’র সাথে গল্প করো’।

–আচ্ছা আম্মা’।কিছু দরকার পড়লে আমাকে ডাকবেন’।বলেই চৈতালি’র পাশে বসলো’।আজকাল মেয়েটা’কে বড্ড উদাসীন দেখায়।সারাক্ষণ মন মরা হয়ে থাকে’।
–আমাকে বলবে না কি হয়েছে’।
–আম্মু আছে,জানলে আমাকে জানে মেরে ফেলবে’।
–আচ্ছা তোমার রুমে যাই চলো’।তারপরে দু’জন মিলে চৈতালি’র রুমে আসলো’।
–এখন কি হয়েছে বলো’।

–আমি একজন’কে ভালোবাসি’।এক বছর ধরে তার পেছনে ঘুরছি।কিন্তু সে,আমাকে পাত্তা দেয় না’।সে, নাকি এক নারীতে আসক্ত’।তার মনের রাণী আছে’।তার রাজত্বে তার রাণী ছাড়া’ অন্য রাণীর প্রবেশ নিষিদ্ধ’।
–এটা কিন্তু ঠিক না চৈতালি’।সে,অন্য কাউকে ভালোবাসে’।তাহলে তুমি কেনো এমন ছেলের পেছনে ঘুরবে’।দেশে কি ছেলের অভাব পড়েছে’।
–কিন্তু স্যারের রাণীর বিয়ে হয়ে গেছে’।স্যার আর কতদিন সঙ্গী হীন থাকবে’।স্যারের তো’ বয়স হচ্ছে নাকি’।আচ্ছা স্যারের কি বিয়ে করতে ইচ্ছে করে না’।

–আল্লাহ মেয়ে করছে কি’।তুমি কোন স্যারের প্রেমে পড়লে’।
–আমাদের কলেজে’র দেখতে মাশাল্লাহ’।তুমি দেখলে তুমি’ও ফিদা হয়ে যাবে’।
–উনি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড় হবে চৈতালি’।এসবে’র মধ্যে যাওয়া’র দরকার নেই’।আমি থাকতে তোমার জীবন নষ্ট হতে দিব না’।আর একবার যদি এসব কথা বলেছো’।তাহলে আমি আম্মাকে বলে দিব’।
–তুমি না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড’।তুমি’ও বড়দের মতো কথা বলতে শুরু করে দিলে’।

–দেখো চৈতালি আমি তোমার ভালো চাই’।আজকালর ছেলেপেলে খুব একটা ভালো হয় না’।আমি কাউকে বিশ্বাস করি না’।রিলেশন করলে তুমি কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবে না’।তোমার যদি বিয়ে করতে ইচ্ছে হয়।আমাকে বলো আমি আম্মাকে বলছি।দেখেশুনে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিব।
–না আমি আবির স্যারকে-ই বিয়ে করবো’।
–আবির’।
–হ্যাঁ আবির স্যার’।নতুন এসেছে আমাদের কলেজে’।
–দেখতে কেমন’।
–অনেক সুন্দর’।তোমার দেখে কাজ নেই’।তোমার বিয়ে হয়ে গেছে’।

–তোমার যদি ভালো লেগে থাকে’।সে,যদি তোমাকে গ্রহণ করে আমাকে বলবে।আমি আম্মাকে জানাবো’।একটা কথা মনে রেখো চৈতালি।জীবন কিন্তু একটাই’।ভুল মানুষের পাল্লায় পড়ে নিজের সুন্দর জীবন নষ্ট করো না’।
আবির কলেজে’র দিকে যাচ্ছে’।আজকে কি মনে করে বাসায় বাইক রেখে আসছে’।সকালে’র মিষ্টি রোদ এসে আবিরে’র শরীরে পড়েছে’।এই মিষ্টি রোদটা আবিরে’র সুন্দর্য দিগুন বাড়িয়ে তুলেছে’।হঠাৎ পেছনে থেকে কেউ বলে উঠলো’।
–স্যার আই লাভ ইউ’।

আবির দ্রুত পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো’।কাউকেই দেখা যাচ্ছে’।আবির বেশ বিরক্ত’।তাকে প্রতিদিন এভাবে কেউ আড়াল থেকে বিরক্ত করে’।আবিরে’র মুখে গম্ভীর্য ভাব’।সামনে ঘুরে নিজের গন্তব্যের দিকে যেতে লাগলো আবির’।
চৈতালি গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়ল’।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৪

একটা বছর ধরে এভাবে আবির’কে বিরক্ত করে যাচ্ছে চৈতালি’।ভয়ে সামনে আসার সাহস হয় নাই কখনো’।কলেজের সময় হয়ে আসছে দেখে’।দৌড়ে কলেজে’র মধ্যে প্রবেশ করলো চৈতালি’।আবির অফিস রুমে এসে ভাবছে’।কে’? তাকে এভাবে প্রতিদিন বিরক্ত করে’।কালকে আমি এর শেষ দেখেই ছাড়বো’।বলেই ক্লাসের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেলো’।

এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব ৬