শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৮

শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৮
রোকসানা আক্তার

বর্ষা গিয়ে শীতকাল এলো,এই বাড়ির একটা প্রাণীরও মনোঃবস্থার পরিবর্তন হলো না।বিশেষ করে সূবর্ণার বেশি।বেশিরভাগ সময়ই একা থাকে।নিজের রুমে চুপচাপ পড়ে থাকে।কখনো বা একটু ভালো লাগলে আমানের সাথে খেলাধুলা করে।আর কখনো বা হুটহাট একা একা ছাদে চলে যায়।সেবার সূবর্ণা এখানে আসার পর থেকে সূবর্ণার স্বামী আর যোগাযোগ করেনি।

এখান থেকে অবশ্যি অনেক চেষ্টা চালানো হয়েছে..লাভ বিশেষ হয়নি!এখন বিকেলে ছাদ বাগানে এসেছি।ফুলগাছগুলোতে পানি দিতে।পৌষ মাস চলে এসেছে তাই পানির খুব অভাব।বাসুতী ফুলের গাছ গুলো কিছুটা শুকিয়ে গেছে।গাদা ফুলের গাছগুলোও।আমি সেখানে পানি ভর্তি করতে সূবর্ণা ছাদে পা রাখে এমন সময়।বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“পানি দাও ভাবী?”
“হু।”
তারপর আর কিছু বললো না।আমি এবার পেছনে তাকালাম।দেখলাম সূবর্ণা অন্যদিক তাকিয়ে দাঁড়ুকা চুপচাপ কিছু ভাবতেছে!মন খারাপের ভাবনা হয়তো।বললাম,

“আমার সাথে পানি দিবি?”
“ভাল্লাগে না ভাবী।”
“আমান কোথায়?”
“মায়ের কাছে মনে হয়।”
আমার পানি দেওয়া প্রায় শেষ হয়ে যায়!দেখি সূবর্ণা সেই আগের জায়গায় ই দাঁড়িয়ে।আমি চলে যেতে দেখে বলে সূবর্ণা এবার,

“চলে যাচ্ছো?”
“হু।”
“খুব ঠান্ডা পড়তেছে না ভাবী?”
আমি হাসলাম।সূবর্ণা বলে,
“কি শুষ্ক সবকিছু না ভাবী?পরিবেশ টা দেখে কত সুন্দর! ভাবী?আমার না এই আকাশ,বাতাস, সবুজ প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে এখন খুব!মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষ না হয়ে যদি প্রকৃতি হতাম!”
আমি আর প্রসঙ্গটা টানলাম না।মন খারাপে বলতেছে সব তা বুঝতে পারতেছি।তাই অন্য প্রসঙ্গ টানলাম,

“খেয়েছিস?”
“মন চায় না ভাবী।ইদানীং না কোনোকিছুই মন চায়না।”
চুপ করে গেলাম!সূবর্ণা বলে,
“ভাবী একটা কথা বলি তোমাকে? ”
“হু,বল?”

“নিহাল ভাইয়ার অবস্থা জানো?উনি এখনো জেল থেকে ছাড়া পায়নি?
তাকিয়ে দেখলাম সূবর্ণার চোখের কোণা মলিন হয়ে আসতেছে সাথে সাথে!জবাব দিলাম,
” হয়তো ছাড়া পেয়েছে।হয়তো পায়নি।আমি সঠিক জানি না সূবর্ণা!”
সূবর্ণা ঠিক তখন আমার হাতে আলতো স্পর্শ করলো।গলার স্বর আরো।কিছুটা খাদে নামিয়ে বললো,
“ভাবী?খবর নিয়ে যদি জানতে?”

আমি হাসলাম এবার।হাসি মুখেই বললাম,
“ভুলতে পারিস নাই এখনো ওকে,না?”
“জানি না ভাবী!সে খারাপ।সে নোংরা।সে বখাটে।তারপরও কেনজানি ভাবী মনে পড়ে মাঝে মাঝে।আচ্ছা ভাবী মানুষ না বলে?খারাপ মানুষদের কথা সহজে মনে পড়ে না।তাহলে নিহাল ভাইয়ার কথা কেনো আমার বারবার মনে পড়ে?”
সূবর্ণার এই কথা জবাবও দিতে পারলাম না।ইদানীং সূবর্ণার অনেক কথারই জবাব দিতে পারি না।

“আমি আসি সূবর্ণা। আমানকে খাওয়াতে হবে।তুই যাবি নিচে?”
সূবর্ণা দু’পাশে মাথা নাড়লো।মানে যাবে না এখন।আমি চলে এলাম।নিচে এসে আমান দেখি শাশুড়ী মায়ের সাথে খিলখিল করে হাসতেছে।আমাকে দেখে বলে,
“আমান খুব চালাক!আমার এই তিলটা দেখে “ওয়াক” করে!”

আমি হাসলাম।একটা কথা তো বলতে প্রায় ভুলেই গেলাম!সেদিনের পর থেকে শাশুড়ী মা অনেকটা নরম হয়েছেন!আগের সেই জেদ-রাগ,চিল্লাপাল্লা এখন চর নেই উনার।আমানকে আগে কোলে নিতেন না।এখন প্রায়শই দেখলে কাছে টেনে নেন।আদর করেন।আমার সাথেও দু-একটা কথা বলেন,যেমন আজকে বললেন।আমি আমানকে নিয়ে এলাম রুমে।তারপর খাওয়াতে বসলাম।এমন সময় বাবা কল করলেন।

বাবার সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম।কথা বলার মাঝখানে বাবা বলেন, গিয়ে বেড়িয়ে আসতে।অবশ্যি আমারো যেতে খুব ইচ্ছে করতেছে! সূবর্ণাকেও নিয়ে যাবো।মেয়েটা একা,মনখারাপ, এই সময়ে ওকেও ঘুরিয়ে আনলে কিছুটা হলেও ভালো লাগবে।তাই আকাশ রাতে এলে কথাটা বলি।শোনার পর আকাশ প্রথমে চুপ করে থাকে।গম্ভীর একটা শ্বাস ছেড়ে তারপর বলে,

“সূবর্ণা যাবে?”
“আশা করি যাবে।”
আকাশ চুপ করে থাকে।তার পঞ্চাশ সেকেন্ডস পার হতে,
“ও গেলে আমার সমস্যা নেই।”

আমি হেসে উঠি মুহূর্তে। আমার বিশ্বাস ছিল আকাশ নাখোশ করবে না।এই পুরুষটাকে সেই প্রথম থেকেই আমি চিনি।খুব ভালো করেই চিনি।হুট করে কেনজানি এখন আদর করতে ইচ্ছে হলো…!তাই পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।ভাবলাম সেও তাই করবে।কিন্তু সে কি তার কথা,

“এতটা দিন যে অবলা মানুষটা আদরের জন্যে হাহাকার করেছিল তখনতো ফিরেও তাকাওনা।এখন আদর চাই না।”
এ বলে বাথরুমে ঢুকে যায়।বুঝলাম অভিমান করেছে।করাটাই স্বাভাবিক। সূবর্ণার ওসবকিছু নিয়ে আর ওতটা সময় দেওয়া হয়নি তাকে! তাই হয়তো মন খারাপ।হাসলাম মনে মনে কিছুক্ষণ।

পরদিন সূবর্ণা কে নিয়ে বাড়িতে আসি।মা-বাবা দেখে খুব খুশি হোন।আমানকে পেয়ে তো আরো খুশি!অনেকক্ষণ কথা বলেন আমার সাথে,সূবর্ণার সাথে।তারপর আবার রাধতে যান।আমিও মাকে রান্না কাজে সাহায্য করি।আর সূবর্ণা আমানকে মাঝে মাঝে রাখে।দুপুরে খাওয়া শেষ হলে হঠাৎ বাসায় কলিংবেল বাজে।বাবা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেন!দরজা খুলতেই বাবাকে কেউ সালাম করে উঠে,

“আসসালামু আলাইকুম,মামা?”
আমরা সবাই সেদিকে তাকাই।নিহাল বাবাকে সালাম করেছে!খুবই অবাক হই নিহালে দেখে।আর সবথেকে বেশি অবাক হই বিহালের বেশভূষা দেখে।খুবই পরিবর্তন হয়ে গেছে নিহাল।আগের আর কিছুই নেই।আগে হাতে ট্রায়ালের মতন চিকন সরু একটা পিতলের চুঁড়ি হাতে ঝুঁলানো থাকতো,গলায় চেইন থাকতো।চুলগুলো বড় বড় থাকতো খুব,কিন্তু আজকে তার কিছুই নেই।পড়নে ফর্মাল ড্রেসাপ!চুলের কাটিংও ফর্মাল!আর চোখমুখে ভদ্রতার আভাস!আমি চোখমুখ সরু হয়ে এলো কিছুটা।সূবর্ণা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে!নিহাল বাবাকে বললো,

“ভেতরে আসতে পারি মামা?”
“হ্যাঁ,আসো।”
মা বলে,
“কিরে নিহাল কত মাস আগে শুনলাম জেল থেকে ছাড়া পেলি!একবারও এলি না বাসায়।আজ এতমাস পর আমাদের কথা মনে পড়লো? ”
নিহাল হেসে বলে,

“আসলে সময় হয়নি।জবের প্রেশার তো…।”
“তুই জব করিস এখন?”
“হ্যাঁ,কেনো বাবা তোমাদের বলে নি কিছু?”
“নাহহ,জবের ব্যাপারে কিছু বলে নি।”
আমি পাশ থেকে বলে উঠলাম,
“তুইতো অনেক চেইঞ্জ হয়ে গেছিস দেখি!”

শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৭

“সময়,পরিস্থিতি মানুষকে খুব পরিবর্তন করে দেয়,সুপ্রভা!যাইহোক তুই কবে এলি?”
“আজকেই এলাম।”
এবার নিহাল সূবর্ণার দিকে তাকায়।কিছু বলে নি আর।মা-বাবার সাথে আবার কথাতে যোগ দেয়।সূবর্ণা তখন বলে,
“ভাবী আমি উঠি।”
বলে চলে যায় সূবর্ণা!

শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ১৯