প্রণয় পর্ব ১৩

প্রণয় পর্ব ১৩
তানিশা সুলতানা

সূচক চুপচাপ বসে খাচ্ছে। বৃষ্টিকে সাথে না নিয়ে গেলে মা কথা শোনাবে। রেগে যাবে। আর নিয়ে গেলে তানহা ঝাড়ু পেটা করবে। বেচারা পড়ে গেছে ফান্দে।
এখন কি করা যায়?

“এক সাথে যাবি। আবার সাথে করে নিয়ে আসবি। একটুও একা ছাড়বি না। বুঝলি?
সাদিয়া বেগম সূচকের প্লেটে দুটো রুটি দিয়ে বলে। তানহা ফুঁসে ওঠে। রুটি মুঠো করে ধরে। তোহা দাঁত কেলায়। ঈদ ঈদ লাগছে ওর।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” হুমম
সূচক ছোট করে বলে।
সাদিয়া বেগম তানহার দিকে এক পলক তাকায়।
“তাড়াতাড়ি খা।
বলেই সাদিয়া বেগম চলে যায়। সূচক ফোঁস করে শ্বাস নেয়। যেনো এতখন দম আটকে ছিলো।
তানহা দাঁতে দাঁত চেপে খাচ্ছে আর একটু পর পর সূচকের দিকে তাকাচ্ছে। রুটির বদলে সূচককেই চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে।

বৃষ্টি খাবে না। সে আরও সাজুগুজু করতে গেছে। সূচককে ইমপ্রেস করতে হবে তো।
ইরা এই ফাঁকে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। উদ্দেশ্য ইমনের বাড়ি যাওয়া। ইমনের সাথে কথা বলতে হবে।
ইমনকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না কিছুতেই।
তোহা খাচ্ছে তো খাচ্ছেই।

“তাড়াতাড়ি গিল
যেতে হবে তো।
তানহা ধমক দিয়ে বলে। তোহা নরে চরে বসে।
” খাওয়ার সময় বিরক্ত করছিস কেন? এখনো তো অনেক সময় আছে।
তোহা আবারও খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। তানহা ভেংচি কাটে।
সূচক আড় চোখে এক পলক তাকায় তানহার দিকে।

“মেচিং করে ড্রেস পড়া হয়েছে। কেনো রে? তোর কি কালো শার্ট ছাড়া আর কোনো শার্ট নেই। আর ওই ডাইনি টার কি কালো জামা ছাড়া আর কোনো জামা নাই? নিক নিক শুরু করে দিয়েছে দুজনে।
ইচ্ছে করছে মাথা ফাটাতে।
তানহা বিরবির করে বলে।

“তোহা বলছিলাম কি
ওই যে স্কুলের গেইটের সামনে রোগা পাতলা স্মার্ট একটা ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে না?
আমাকে রোজ রোজ ফুল দেয় কিন্তু আমি নেই না।
ভাবছি ওই ছেলেটার থেকে আজ ফুল নেবো।

তানহা একটু ভাব নিয়ে বলে। সূচকের খাওয়া থেমে যায়। তাকায় তানহার দিকে।
” তোকে তো কেউ ফুল দেয় না।মিথ্যে কেনো বলছিস? তোর দিকে তো ভালো করে কেউ তাকায়ই না।
তোহা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে। সূচক ঠোঁট মেলে একটু হাসে। তানহা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। এভাবে কেউ লজ্জা দেয়।

“ডাইনি তুই মিথ্যে বলছিস। একটা ছেলে আমাকে ফুল দেয়।
তানহা তোহার দিকে কটমট চাহনিতে তাকিয়ে বলে।
তোহা তানহার কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।এসব শোনার টাইম নাই।
” হুমম দেয় তো নিবি। এটা বলার কি হলো?

সূচক মুখে রুটি পুরে চিবতে চিবতে বলে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তানহার।
ঠাস করে উঠে দাঁড়ায়।
“আর জীবনেও আসবো না আপনার বাড়িতে। শা*লা হনুমান। মেয়ে দেখলেই নিকনিক করতে ইচ্ছে হয় না?
কর তুই নিকনিক। মুখটাও দেখবো না তোর।

বলেই ব্যাগ কাঁধে ওপর ফেলে হনহনিয়ে চলে যায়। তোহা তাড়াহুড়ো করে হাত ধুয়ে তানহার পেছনে দৌড় দেয়।
সূচক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” এতো পাগলী কেনো আমার ঢংয়ের রানী।

তোহা বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে কেউ একজন ওর মুখ চেপে ধরে। চোখ খুলে লোকটাকে দেখার চেষ্টা করে তোহা কিন্তু পারে না কারণ লোকটা রীতিমতো একটা কাপড় দিয়ে পুরো মুখটাই ঢেকে দিয়েছে তোহার।
চিৎকার করতেও কারতেও পারছে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে।

আচমকা লোকটা তোহাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর হাঁটতে শুরু করে।
হাত দুটো যে মুক্ত ওদিকে খেয়ালই নেই তোহার।
মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে।
কে লোকটা?

হিসাব মিলতে না মিলতেই তোহাকে কোল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। কাপড় খুলে নেয় মুখ থেকে। পিটপিট করে চোখ খুলতেই সামনে ইমনকে দেখতে পায় তোহা।
আপনাআপনি কপাল কুঁচকে যায়।
“এটা কি ধরণের অসম্ভতামি?
চোয়াল শক্ত করে বলে তোহা।

ইমন আচমকা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তোহাকে। তোহা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
এরকম হাতির মতো লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার শক্তি তোহার নেই।
” ভাইয়া ছাড়ুন।
হচ্ছেটা কি?
তোহা দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

ইমন তোহাকে ছেড়ে দেয়। তোহার দুই গালে হাত দিতে গেলে তোহা ঠাটিয়ে চর বসিয়ে দেয় ইমনের গালে।
স্তব্ধ হয়ে যায় ইমন।গালে হাত দিয়ে তোহার দিকে তাকায়। তোহা রাগে জোরে জোরে শ্বাস টানছে।
“আমাকে ছোঁয়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাববেন না? আপনার নোংরা হাত আমাকে ছোঁয়ার জন্য না।
তোহা আঙুল তুলে বলে। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে যায় ইমনের। চোয়াল শক্ত করে ফেলে। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তোহার দিকে।

” খুব সাহস হয়েছে তোর না?
তুই আমার গায়ে হাত তুলেছিস?
ইমনকে থাপ্পড় মেরেছিস তুই?
মেঘের মতো গর্জন তুলে বলে ইমন। কেঁপে ওঠে তোহা। ভয়ে গুটিশুটি হয়ে যায়। কাচুমাচু হয়ে এক কোনে দাঁড়ায়। মাথা তোলার সাহস পাচ্ছে না।

ইমন তোহার সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজার পাশে দেয়ালের সাথে মিশে দাঁড়িয়েছিলো তোহা। ইমন এক হাতে তোহার পাশে রেখে অন্য হাত দিয়ে দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে দেয়। বিকট শব্দ হয়। সেই শব্দে আবারও কেঁপে ওঠে তোহা। দুই চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে। চোখ মুখ খিঁচে ফেলেছে।
“আমাকে যেতে দিন প্লিজ
দুই হাত এক করে অসহায় দৃষ্টিতে ইমনের দিকে তাকিয়ে বলে তোহা।

তানহা গেইটের কাছে পায়চারি করছে। তোহা কেনো আসছে না? তোহাকে ছাড়া তো ও যেতে পারবে না।
দারোয়ান হা করে ঘুমচ্ছে। তানহা বিরক্ত হয়ে গেইট খুলে বাইরে চলে যায়। জিসানের বাড়ি এদিকেই। রাস্তায় তানহাকে পায়চারি করতে দেখে ও দৌড়ে তানহার কাছে আসে।
জিসানও স্কুলে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে।

“কি রে তুই এখানে?
পেছন থেকে মাথায় গাট্টা মেরে বলে জিসান। তানহা মাথায় হাত দিয়ে কপাল কুচকে জিসানের দিকে তাকায়।
“এখানে আমার জামাই থাকে তাই।
বলে তানহা। জিসান উঁকি ঝুঁকি মেরে বাড়িটা দেখে।

” তোর জামাই তো দেখি হেব্বি বড়লোক।
ও বাবা আমার তোর সতীনও আছে??
সূচক আর বৃষ্টিকে বের হতে দেখে বলে জিসান। তানহা চট করে পেছনে ঘুরে। বৃষ্টি আর সূচক পাশাপাশি হাঁটছে। বৃষ্টির ঠোঁটে লেগে আছে অমায়িক হাসি।

প্রণয় পর্ব ১২

সূচক চোখে চশমা লাগাতে লাগাতে বের হচ্ছে।
“বাহ তোর সতীন তো দারুণ দেখতে। ক্রাশ খাইছি।
জিসান হা করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলে।
তানহা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে সূচকের দিকে।

প্রণয় পর্ব ১৪