প্রণয় পর্ব ১৪

প্রণয় পর্ব ১৪
তানিশা সুলতানা

“ইমন হচ্ছেটা কি?
ইরিন চিৎকার করে বলে। সাথে সাথে ইমন ছিটকে দুরে সরে আসে। তোহা থরথর করে কাঁপছে।
চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। ইমন যেভাবে ঝুঁকে ছিলো ওর দিকে। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি সব শেষ।
ঠিক সময়ই এসেছে ইরিন।

” কি করছিলি তুই?
ইরিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ইমনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলে। ইমন ইরিনকে কখনো এতোটা রেগে যেতে দেখে নি। মনে মনে ভয় পাচ্ছে।
“ও আমাকে থাপ্পড় মেরেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইমন দাঁত কটমট করে মাথা নিচু রেখে বলে।
ইরিন তোহার দিকে এক পলক তাকায়। মেয়েটা চোখ বন্ধ করে ব্যাগটা খামছে ধরে কাঁপছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।

” থাপ্পড় খাওয়ার মতো কাজ করেছিস তাই মেরেছে। আমারই তো ইচ্ছে করছে তোকে থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দিতে।
ইরিন কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে। ইমন মাথা নিচু করে ফেলে।
“আপু তুই আমাকে কেনো বলছিস?
আমি ওর সাথে জাস্ট কথা বলতে চাইছি। আর ও এমন ভাব নড়িতেছে যেনো তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলছি। স্টুপিট
ইমন শান্ত গলায় বলে।

” আআমি শুনতে চাই না। স্কুলে যাবো আমি। তানহা অপেক্ষা করছে।
আর আমার শোনানোর মতো কোনো কথা ওনার থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
তোহা টেনে টেনে বলে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না। ইমনকেও ইচ্ছে মতো কথা শোনাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কি লাভ? তোহার জানা আছে। কুকুরের লেজ কখনো সোজা হবে না।
ইমন হাতের মুঠ শক্ত করে ফেলে।

“স্কুলে যাওয়ার থেকেও বেশি ইমপটেন্ট আমার কথা। বোঝা ওকে?
এমন ভাব কেনো নেবে ও? আরে রিলেশনশিপ এ এরকম ছোটখাটো ঝামেলা হয়েই থাকে।
ওই ইডিয়েট এটা কেনো বুঝতে পারছে না।
আবারও চিৎকার করে বলে ইমন।

” স্টপ ইমন।
চেঁচাচ্ছিস কেনো? ওই ঘরে এক টুকরো রক্তের দলা শুয়ে আছে। যার তোর চিৎকার গ্রহণ করার মতো হ্মমতা হয় নি।
তোর একেকটা চিৎকারে কেঁপে উঠছে ও।
ইরিন ইমনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে। ইমন স্বাভাবিক হয়ে যায়। মনে মনে নিজেকেই নিজে গালি দিতে থাকে। একবারও বুঝতে পারে নি বাবুটার কষ্ট হবে।
ইমন চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টানে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

“ওকে বল কথা বলতে।
ইমন ইরিনকে বলে।
” তোহা তুমি কথা বলতে চাও?
ইরিন তোহাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
“একদমই না।
তোহার সোজাসাপ্টা জবাব।

হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে। ইমন ভ্রু কুচকে তাকায়। তোহা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। চোখের পানি মুছে নিজেকে পরিপাটি করে নেয়। ইরিন সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। ইমন জোরে জোরে দুটো শ্বাস টেনে দরজা খুলে দেয়।
দরজার সামনে ইরাকে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেজাজটা আবারও চটে যায় ইমনের।

“তুমি এখানে?
কপালে তিনটে ভাজ ফেলে জিজ্ঞেস করে ইমন।
ইরা ইমনকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ইরিন সরু চোখে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা কেনো এসেছে বোঝার চেষ্টা করছে। তোহা শুকনো ঢোক গিলে ইরাকে দেখে।
ইরা তোহাকে দেখে রীতিমতো শকট।

” তোহা তুই এখনে?
ইরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। তোহা চোরের মতো চোখ নামিয়ে এদিক সেদিক তাকায়। কি উওর দেবে ভাবছে?
“বাবু
হ্যাঁ এই বাড়িতে একটা বাবু আছে তাকেই দেখতে আসছিলাম।
তোহা হাসার চেষ্টা করে বলে। ইমন চোয়াল শক্ত করে ফেলে। ইরিন চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে।

” আসসালামু আলাইকুম আপু
ইরা মিষ্টি হেসে সালাম দেয় ইরিনকে। ইরিন সালামের জবাব দেয়।
“আমি আসি
তানহা অপেক্ষা করছে।
বলেই তোহা এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। ইমন ডাকতে গিয়েও পারে না।

জিসানের পাশে তানহাকে দেখে মেজাজ চটে যায় সূচকের। তবুও শান্ত থাকে। তানহা এদের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনকে মানিয়েছে ভালোই। কিন্তু মানালেই কি?
সূচক তানহার। আর তানহারই থাকবে।

” হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
সূচক তানহার কাছাকাছি এসে বলে।
তানহা গাল ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“আপনাকে কেনো বলবো? হু আর ইউ?
তেজি গলায় উওর দেয় তানহা।

” এই মেয়ে বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?
বৃষ্টি বলে ওঠে।
“আই এম সরি টু সে
আপনাদের চিনতে পারছি না আমি। তো ভদ্রতা শেখার প্রশ্নই উঠে না।
জিসান বেবি চলো

তানহা জিসানের চুল গুলো মুঠো করে ধরে বলে।
জিসান ব্যাথায় কুঁকিয়ে ওঠে। সাথে সাথে ছেড়ে দেয় তানহা। হাত ধরতে গিয়ে চুল ধরে ফেলছে।

” সরি সরি সরি জান
হাত ধরতে গিয়ে চুল ধরে ফেলছি।
জিসানের গাল টেনে দিয়ে বলে তানহা।
“এই রিকশা দাঁড়াও
সূচক রিকশা দাঁড় করায়।

” বৃষ্টি রিকশায় ওঠো। তোমাকে একদম ভার্সিটিতে নিয়ে নামিয়ে দেবে।
সূচক বলে।
“তুমি যাবে না?
বৃষ্টি মুখটা কালো করে বলে।
” তুমি যাও আমার কাজ আছে।

বলেই তানহার হাতটা মুঠো করে ধরে হাঁটা শুরু করে।
জিসান আর বৃষ্টি হা করে তাকিয়ে থাকে। এটা কি হলো?
তানহা সূচকের মুখের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। মনের মধ্যে সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে। ইসসসস এভাবেও কেউ নিয়ে আসে? নিজেকে সুখী মনে হচ্ছে। ভীষণ সুখী।

সূচক সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে তো হাঁটছেই। তাকাচ্ছেও না। কথাও বলছে না। মুখটাকে গম্ভীর করে রেখেছে। যার ফলে বোঝা যাচ্ছে না রেগে আছে না কি খুশি হয়েছে।
“ও গো
পাবনা যাবেন?
তানহা চট করে বলে ওঠে। সূচক দাঁড়িয়ে যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় তানহার দিকে।
তানহা এক গাল হাসে।
“খুব বেড়েছিস তুই।

সূচক চোয়াল শক্ত করে বলে আবারও হাঁটতে শুরু করে। তানহার আর কোনো কথা বলার সাহস হয় না। চুপচাপ মিটমিট হাসতে হাসতে হাঁটতে থাকে।
স্কুলের পাশের সেই পার্কে এসে একটা ব্রেঞ্চে বসে পড়ে সূচক। তানহাও সূচকের পাশ ঘেসে বসে।
” কি শুরু করেছিস তুই?

সূচক চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দুটো শ্বাস টেনে বলে।
“আমি আবার কি করলাম? গুড গার্ল হয়ে থাকি তো।
তানহা সূচকের হাতের ভাজে নিজের হাতটা পুরে বলে।
সূচক তাকায় তানহার দিকে।

প্রণয় পর্ব ১৩

” তোকে কিছু বলতে চাই আমি।
“আমিও শুনতে চাই।

প্রণয় পর্ব ১৫