প্রণয় পর্ব ১৫

প্রণয় পর্ব ১৫
তানিশা সুলতানা

“তানহা মন দিয়ে শোন।
সূচক নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে। তানহা বিরক্ত হয়। চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় সূচকের দিকে।
” তুই ছোট
“কে বলছে?

সূচকের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে তানহা।
” তোর টিকার কার্ড বলছে।
“আমি একটুও ছোট না। যথেষ্ট বড়। বিয়ে হয়ে গেলে এতো দিনে দুই বাচ্চার মা হয়ে যেতাম।
আমার দাদিমার মায়ের বারো বছরে বিয়ে হয়েছিলো। সেখানে আমি অনেক বড়। বিয়ের বয়স মোটামুটি পার হয়ো যাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুখ বাঁকিয়ে বলে তানহা। সূচক দুই হাতে নিজের চুল খামচে ধরে। কাকে কি বোঝাতে এসেছে?
” আমার কথা শুনবি তুই?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সূচক।
“নাহহ আগে আমার কথা শোনেন।

আমি আপনাকে ভালোবাসি। খুব বেশি। এতোটাই বেশি যে আপনাকে অন্য কারো পাশে সয্য করতে পারি না।
তো নেক্সট টাইম কেনো মেয়ের পাশে দেখলে হয় ওই মেয়ে বেঁ+চে থাকবে নয়ত আমি বেঁ+চে থাকবো।
মাথায় ঢুকেছে?

আপনার কথা বলতে ইচ্ছে হবে?
আমার সাথে বলবেন। আপনার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হবে আমার সাথে যাবেন। আপনার চুমু খেতে ইচ্ছে হবে আমাকে খাবেন।

সূচকের মাথায় গাট্টা মেরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা।
সূচক বড়বড় চোখ করে তানহার মুখের দিকে তাকায়। এতো পাকনা হলো কবে এই মেয়ে?
” আমার লাইফ, আমার ইচ্ছে, আমি যা খুশি করবো। সেটা বলার তুই কে?
আর তোকে কেনো
থাক বলবো না।

তানহা চুপসে যায়। সূচকের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। মাথা নত করে কাচুমাচু হয়ে বসে।
“আমি তোকে ডিরেক্টলি বলছি বাড়াবাড়ি করবি না।
এমন নয় যে আমি তোকে পছন্দ করি না। তুই আমাকে নিয়ে যা ফিল করিস আমিও তাই ফিল করি।

কিন্তু আমাদের বয়সটা পারফেক্ট না। এখন সময় লাইফ গুছিয়ে নেওয়া। পড়ালেখায় মন দেওয়ার সময়। ফিউচার ব্রাইট করতে হবে দুজনকেই। তবেই না এক হতে পারবো।
এই সব হাত ধরা চুমু খাওয়া সব একদিন পাওয়া যাবে। কিন্তু এখনকার যে পড়ালেখা করার সময়টা এটা আমর ফিরে আসবে না।

সূচক আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে। তানহার চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। তার মানে সূচকও ওকে ভালোবাসে?
তানহাকে আর পায় কে। ব্রেঞ্চের ওপর পা তুলে সূচকের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
সূচক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। একে বুঝিয়ে লাভ নেই।
“আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলি।

তানহা সূচকের হাতের ভাজে হাত ঢুকিয়ে বলে। সূচক একটু নরে চরে বসে তানহার মাথাটা কোলের ওপর রাখে।
তানহা মুচকি হেসে আরেকটা হাত বাড়িয়ে সূচকের চাপ দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে দেয়।
” বল
তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে সূচক।

“বলছিলাম আমাদের না এখনই বিয়ে করে নেওয়া উচিৎ।
সূচক চোখ পাকিয়ে তাকায় তানহার দিকে।
” আরে বাবা পুরো কথাটা আগে শেষ হতে দেবেন তো?
আগেই রেগে গেলে কেমন হয়?

মুখ বাঁকিয়ে বলে তানহা।
“হুমম শেষ কর।
মুখটা গম্ভীর করেই বলে সূচক।
” আমার ফিউচার প্লান অনেক লম্বা। মানে ধরেন পুরো একটা ফুলবল টিমের স্বপ্ন আছে আমার। তো সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে তো এখনই বিয়ে করা দরকার তাই না?

আরো দেরি করলে তো বাচ্চাদের বিশ্বকাপ দেখে মরতে পারবো না।
আহা কি দারুণ দৃশ্য
আমাদের এগারোটা বাচ্চা বিশ্বকাপ খেলছে। আমি আপনি আর আমাদের আরও কয়েকটা ছানাপোনা আমার আর আপনার কোলে বসে আছে।
সূচক বড়বড় চোখ করে তাকায়। কি বলে এই মেয়ে?

“তাহলে মোটমাট কতো গুলো হবে?
শুকনো ঢোক গিলে বলে সূচক।
” এই ধরে পনেরো বিশটা।
তানহা হাতের আগুল গুনে গুনে বলে।
সূচক সরে যায়। ধাপ করে তানহার মাথাটা ব্রেঞ্চে পড়ে যায়। আর ব্যাথা পায়। সূচক সেদিকে না তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করে।
তানহা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সূচকের পেছনে দৌড় দেয়।

“এভাবে ফেলে দিলেন কেন?
রাগী কন্ঠে বলে তানহা।
” স্বপ্ন দেখছিলি তাই স্বপ্ন ভেঙে দিলাম।
সোজাসাপ্টা বলে দেয় সূচক।
“আনরোমান্টিক একটা
বিরবির করে বলে তানহা।

” সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবি।
এবার তানহা সূচকের আগে আগে হাঁটতে থাকে। সূচক পেছনে মিটমিট করে হাসছে আর হাঁটছে। তানহার হাঁটার স্টাইল দেখছে। অতিরিক্ত রেগে গেছে মেয়েটা তাই কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা হাঁটছে। এমন কি মাটির দিকেও তাকাচ্ছে না।
বেশ লাগছে সূচকের।

স্কুলের মাঠে বসে আছে তোহা আর জিসান। দুজনেরই ক্লাস চলছে কিন্তু ক্লাসে যাচ্ছে না। তোহা কোনো কথাও বলছে না। ইমনের কথা ভাবছে। লোকটাকে ভুলে যেতে চায় তোহা। কিন্তু ভুলতে পারছে না। মনের মধ্যে গেঁথে আছে নামটা, মানুষটার ছবি। এতো সহজে কি করে ভুলবে?

ক্লাস টেন এর একটা ছেলে নাম আবির। তোহাকে খুব পছন্দ করে। পুরো স্কুল জানে বিষয়টা। ছেলেটা দেখতে কালো চোখ দুটো টেরা আর একদম রোগা। কিন্তু মনটা খুব ভালো। খুব সুন্দর ব্যবহার। কেউ একটা থাপ্পড় দিলে তাকে উল্টে সরি বলে চলে যাবে।

জিসান আর তোহার থেকে খানিকটা দুরে বসে আছে আবির। দৃষ্টি তোহাকে নিবদ্ধ।
জিসান খেয়াল করছে আবিরকে।
“তোহা আবির কিন্তু ভালো ছেলে।
জিসান তোহার দিকে আরও একটু ঘেসে বসে বলে। তোহা তাকায় এক পলক জিসানের দিকে। তারপর আবার ঘাসের দিকে তাকিয়ে ভাবনায় বিভোর হয়ে যায়।

অন্য দিন হলে আবির নামটা শুনলে জ্বলে উঠতো। কিন্তু আজ কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে বেশ অবাক হয় ইমন।
” তোর কি তাহলে আবিরকে পছন্দ?
গালে হাত দিয়ে বলে জিসান।
তোহা কিছুই বলে না।
তানহা সূচককে বকতে বকতে ওদের পাশে এসে ধাপ করে বসে পড়ে।

“এতোখন কই ছিলি?
জিসান জিজ্ঞেস করে।
” তোর নানির চাচাতো বোনের ফুপাতো ভাইয়ের খালার বাড়ি ছিলাম।
তাতে তোর কি?

প্রণয় পর্ব ১৪

তানহা ব্যাথ থেকে পানির বোতল বের করতে করতে ঝাঁঝালো গলায় বলে।
“তোরা থাক আমি ক্লাসে গেলাম।
তোহা ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ক্লাসের দিকে হাঁটা শুরু করে। তানহা আর জিসান অবাক হয়ে যায়।
ক্লাসের সামনে যেতেই কেউ একজন তোহার হাত ধরে ফেলে

প্রণয় পর্ব ১৬