প্রণয় পর্ব ১৬

প্রণয় পর্ব ১৬
তানিশা সুলতানা

“সিক্সের ক্লাসে যাচ্ছো কেনো?
ভ্রু কুচকে তোহার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে বিজয় স্যার। উনি এই স্কুলের গণিত টিচার।
তোহা এক পলক স্যারের দিকে তাকায় তারপর ক্লাসের দিকে তাকায়।
নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে ফেলে।
সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছে। দুই তালায় নাইনের ক্লাস।

” সরি স্যার খেয়াল ছিলো না।
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় তোহা।
“আর ইউ ওকে তোহা?
চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে স্যার।
” এই এম ওকে।
বলেই তোহা চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বিজয় স্যার তোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। চঞ্চল মেয়েটা হঠাৎ এরকম চুপচাপ হয়ে গেলো কেনো?
এটাই ভাবছে উনি।
জিসান আর তানহাও অবাক তোহার ব্যবহারে।

কেটে গেছে তিন মাস।নাইনের ফাইনাল এক্সাম এর রেজাল্ট দিয়েছো আজকে।
তানহা তিনটে সাবজেক্ট এ ফেল করেছে। তোহা দুই টাই।
সেই দিনের পরে আর যাওয়া হয় নি সূচকের বাড়িতে। সূচকের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছে তানহা। কিন্তু সূচক ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেছে। এটা নিয়ে পাহাড় সমান অভিমান তানহার মনে।

সূচকের ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শেষ হয়ে গেছে। সে এখন মামার কোম্পানিতে মেনেজার পদে চাকরি নিয়েছে।
ফেল করা নিয়ে তানহা বা তোহাকে কেউ কিছু বলে নি।
তোহা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ইমনের সাথে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয়। প্রথম প্রথম ইমন কথা বলতে আসতো। তোহা এড়িয়ে যেতো। এখন আর আসে না।

তোহারও আগে খারাপ লাগতো এখন লাগে না। ইমনকে দেখলে বিরক্ত লাগে। ইমন ইরার সাথে সম্পর্কটা ঠিক করে নিয়েছে। দুজন এখন রিলেশনশিপ এ আছে।
ইরা তোহাদের বাড়িতেই থাকে।
সারা রাত ফোনে কথা বলে। তোহার ভেতরটা পুরে যায়। কিন্তু স্বীকার করতে নারাজ।
ইরাকে ইমন সম্পর্কে কিছু বলেও না।

তানহা এসবের কিছুই জানে না। তোহা জানাতে চায় না। ইমন তোহার চোখে খারাপ। তাই বলে কি তানহার চোখেও খারাপ করে দেবে?
কখনোই না।
কথায় আছে না
“এতো ভালোবাসার পরেও তাকে পাই নি
তাই বলে কি তার বদনাম করবো?
কখনোই না

তাকে ভালোবেসেছি
বদনাম করার জন্য না।”
তানহা ইমনকে খুব ভালো জানে। অবশ্য সে হয়ত ভালোই। তোহা ওর জন্য পারফেক্ট ছিলো না। এমনই হবে হয়ত।
আজকে বাবা আর কাকা ঢাকায় যাচ্ছে। কয়েকদিন থাকবে সেখানে।
দুপুরের খাবারটা সবাই এক সাথে খাবে। তারপরই ওনারা বেরিয়ে যাবে।
তানহার ঠান্ডা বেরে গেছে। টিস্যু হাত থেকে সরাতেই পারছে না। গতি কাল বৃষ্টিতে ভিজে ছিলো। যার জন্য আজকে নাক থেকে পানি সরছেই না।

তোহা আর তাজ নাক সিঁটকাচ্ছে। আগেই তোহা বলে দিয়েছে আজকে তানহার সাথে ঘুমবে না। সারা রাত নাক টানার শব্দ একদম সয্য করবে না।
তানহা চুপচাপ বাবার পাশে গিয়ে বসে। নাকটা লাল হয়ে গেছে। চোখ দুটো টলমল করছে। নাক টানতে টানতে নিজেও বিরক্ত।
“বাবা তোমার মেয়েকে ডাক্তারের কাছে রেখে আসো। ওর নাক টানা জাস্ট বিরক্ত লাগে। নাক কেটে তারপর বাড়ি নিয়ে এসো।

তাজ মুখে নুডলস পুরে বলে।
“বাবা কিছু বলবে না তুমি?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তানহা।
” তাজ চুপচাপ খাও। তুমি যখন ছোট ছিলে তোমার তানহার থেকে বেশি সর্দি থাকতো।
ধমক দিয়ে বলে তাহের।
“আমিই তো এখন ছোট।

তাজ এক গাল হেসে বলে। তোহাও হেসে ওঠে।
তানহা কান্না করে ফেলে।
” আমাকে একটা ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারো না বাবা?
তাহের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ভাত মেখে মুখে পুরে দেয়।
” আজকে বাবু আসবে একটু পর। তারপর তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।
তমাল বলে। তানহার কান্না থেমে যায়। সূচক আসবে?

“ভাবিও আসবে মিয়া ভাই?
তানহার মা খুশিতে গদগদ হয়ে ওনার পাতে রুই মাছের পেটি দিতে দিতে বলে।
তমাল মুচকি হাসে।
” হ্যাঁ এতোদিনে ভুত নামছে ছেলের মাথা থেকে।
“কিসের ভুত?
তাহের জিজ্ঞেস করে।

” সেটা বলার মতো না।
মাকে দেখছি না যে?
তমাল তমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে।
“মা আর বাবা একটু আগেই ইরাকে নিয়ে ওদের বাড়ি গেছে। বিকেলে নিয়ে আসতে বলেছে।
তাজকে ভাত খাইয়ে দিতে দিতে বলেন উনি।
” তানহাকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে মা বাবাকে নিয়ে আসতে বইলো।
তমা বেগম মাথা নামায়।

তাহের মাছ বেছে বেছে তানহার পাতে দিতে থাকে আর তানহা খাচ্ছে।
তোহা গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
“আমার কাছে এসো।
তমাল মুচকি হেসে ডাকে তোহাকে।
তোহা দাঁত কেলিয়ে প্লেট নিয়ে বাবার পাশে বসে।

আজকে আরেকটা ফোন এনেছে তমাল। তোহা আগেই বলে দিয়েছে নতুন ফোন তোহাই নেবে। পুরোনো টা এখন পুরোপুরি তানহার। এতেই খুশি তানহা।
সোফার ওপর চানাচুরের বাটি রেখে ফ্লোরে বসে চানাচুর খাচ্ছে তানহা। ভাত খেয়ে পেট ভরে নি। এভাবে নাক টেনে টেনে খাওয়া যায় না কি?

কলিং বেল বেজে ওঠে। তোহা রুম থেকে দৌড়ে এসে দরজা খোলে। সাদিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে। সূচক কেনো দিন না তাকিয়েই ভেতরে ঢুকে পড়ে। তানহা সেদিকে না তাকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। এতোদিন অনেক ইগনোর করেছে। ফোন দিলে ধরে নি। দেখা হলেও মুখ ঘুরিয়ে চলে গেছে। এবার তানহা তাকাবে কেনো? একদম তাকাবে না?
তমা বেগম এক মুহুর্তের জন্য বাচ্চা হয়ে যায়। সাদিয়া বেগমকে দেখে এক দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে।
বাইশ বছর ধরে এই বাড়িতে এসেছে। এসে থেকেই বড় বোনের মতো কাছে পেয়েছে সাদিয়া বেগমকে। দুজন জা হলেও বোনের মতো।

সূচক হাতের ব্যাগটা রেখে তানহার চানাচুরের বাটিটা তানহার সামনে রেখে বসে পড়ে।
তানহা টিভির দিকে মনোযোগ দেয়। গোপাল ভাড় দেখছে।
“শুনলাম ফেল না কি করেছিস?
সূচক তোহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
” হুমম করছি।
তোহা তানহার থেকে চানাচুর নিয়ে মুখে পুরে বলে।
“লজ্জা করছে না বলতে?

দাঁত কটমট করে বলে সূচক।
“ধুররর শান্তিতে টিভিও দেখতে দেবে না।
আজাইরা ভাষণ জাস্ট বিরক্ত লাগে
বলেই চানাচুরের বাটি হাতে নিয়ে রুমের দিকে চলে যায় তানহা।
সূচক চোয়াল শক্ত করে তানহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

তানহার মা বার বার তানহাকে তাড়া দিয়ে যাচ্ছে রেডি হওয়ার জন্য। তানহা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে গুন গুনিয়ে যাচ্ছে।
মোটকথা ও সূচকের সাথে যাবে না।
” কাকিমা হলো ওর?
সূচক শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে তানহার রুমে ঢুকে বলে।
“যাবে না বলছে।

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টিস্যু ঝাড়ু দিয়ে ঝুড়িতে তুলতে তুলতে বলেন উনি।
সূচক ভ্রু কুচকে তাকায় তানহার দিকে। ঠাটিয়ে দুটো চর বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে গালে।
” যাবে না বললেই হলো না কি?
সূচক তানহার কান থেকে টান দিয়ে হেডফোন খুলে নেয়। তানহা মুখের ওপর বালিশ দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে শয়।
“একে তুই নিতেই পারবি না।
বলে চলে যায় উনি।

উনি বেরিয়ে যেতেই সূচক ধাপ করো তানহার পাশে বসে পড়ে।
বালিশটা টেনে সরিয়ে নেয়।
তানহা চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে।
” ড্রামা কুইন
কপালে হাত বুলাতে বুলাতে বলে সূচক।
“যাবি না?

তানহার চুল ধরে টান দিয়ে বলে সূচক। ব্যাথায় চোখ কুঁচকে ফেলে তানহা।
” আপনি কে ভাই? এখানে এসে নিকনিক শুরু করছেন কেন?
লাফ দিয়ে উঠে বসে কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে তানহা।
“ইডিয়েট একটা

সূচক উঠে আলমারি খুলে তানহার জন্য একটা ড্রেস বের করে এনে তানহার সামনে রাখে। তানহা এক পলকের জন্যও তাকায় নি সূচকের দিকে।
” এটা পড়ে জলদি রেডি হয়ে আয়।
“আমি যাচ্ছি না, যাবো না, আমাকে কেউ নিতে পারবে না,
এজ এ ক্লিয়ার?

প্রণয় পর্ব ১৫

ফোনটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলে তানহা।
“থাপ্পড় খেতে ইচ্ছে করছে বললেই হয়।
এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার কি হলো?
বলেই ঠাস করে একটা…………

প্রণয় পর্ব ১৭