আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৪

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৪
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

ভোর রাত থেকে হঠাৎ করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে।সেজন্য ভীষণ ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো তোড়ার। যদিও সে কুশানের কোলের মধ্যেই চুপটি করে শুয়ে আছে তবুও তোড়া ঘুমের মধ্যেই কাঁপছিলো।
কুশান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে উঠে ফ্যানের সুইচ টা অফ করে দিলো।আর একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে তোড়াকে আবার কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

ভ্যাপসা গরমের মধ্যে এমন বৃষ্টি সবার মনে একদম প্রশান্তি এনে দিলো।ঝর ঝর করে বৃষ্টি পড়ছে,সে কি ছন্দ? টিনের চালে বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দ শুনতে কার না ভালো লাগে?কুশানের ভীষণ ভালো লাগছিলো।সে তখন আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো তোড়াকে।তবে কুশানের আর ঘুম ধরলো না।তবুও সে তোড়াকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে থাকলো।
কিন্তু তোড়ার এদিকে কোনো খেয়ালই নাই।সে একদম নিশ্চিন্তায় আরামে ঘুম পারছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তোড়ার এই আরামের ঘুম ভাঙলো একদম অনেক বেলায়।তবুও সে শুয়েই থাকলো।যেহেতু সে এখন তার বাবার বাড়িতে,সেজন্য কাজের কোনো চাপ নাই,আর সকালে ওঠার ও কোনো তাড়া নেই।একদম সেই অবিবাহিত মেয়ের মতো অনেক বেলা অবদি শুয়ে থাকলো তোড়া।যেমন টা সে আগে করতো।তবে মাঝেমধ্যে তার আম্মু একটু ডিস্টার্ব করতো খাবার খাওয়ার জন্য।তবুও দিনগুলো বেশ উপভোগ করেছে তোড়া।

বাহিরে এখনো বৃষ্টি পড়ছে।মনে হয় না আজ আর বৃষ্টি পড়া বন্ধ হবে?বৃষ্টি পড়া দেখে মনে হচ্ছে এখন বর্ষাকাল চলছে।
হঠাৎ কে যেনো দরজায় কড়া নাড়লো।তোড়ার যেহেতু এখনো পুরোপুরি ঘুম ভাঙেনি সেজন্য কুশান নিজে গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই চামেলি বেগম কুশানকে দেখে বললো, বাবা তুমি?
তোড়া কোথায়?

কুশান তখন বললো আম্মু ও এখনো ওঠেই নি?
চামেলি বেগম সেই কথা শুনে বললো দেখ তো কান্ড? কয় টা বাজে সে খেয়াল কি আছে তার?জামাইকে যে এখন নাস্তা খাওয়াতে হবে সেটাও ভুলে গেছে মেয়েটা।বাবা ওকে একটু ডেকে দাও না?
কুশান সেই কথা শুনে বললো আম্মু থাক না, ঘুমাতে দিন ওকে।নাস্তা ঘরেই দিয়ে যান।ও উঠলে একসাথে খেয়ে নিবো।
–ঠিক আছে বাবা।এই বলে চামেলি বেগম চলে গেলেন।

কিছুক্ষন পর চামেলি বেগম সকালের নাস্তা দিয়ে গেলেন রুমে এসে।পরোটা,সবজি,সিদ্ধ ডিম,এক গ্লাস দুধ আর নুডলস।
তোড়া সেই আগের মতোই শুয়ে আছে হাত পা ছড়িয়ে।চামেলি বেগম মেয়ের শোয়া দেখে মনে মনে হাসতে লাগলেন।আর ভাবতে লাগলেন বিয়ে যে হয়েছে তবুও তার অভ্যাস আর চেঞ্জ হইলো না।এখনো সেই আগের মতোই অভ্যাস আছে তোড়ার।

চামেলি বেগম চলে যাওয়ার সাথে সাথে কুশান তোড়াকে তার কোলের মধ্যে নিয়ে বললো, এই যে ম্যাডাম!কখন উঠবেন?বাহিরে যে কত সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে সে খেয়াল কি আছে?
তোড়া তখন তার ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি তো বৃষ্টির আওয়াজ।আমার না বৃষ্টি ভীষণ ভালো লাগে।আর বৃষ্টির দিনে কিছুতেই বিছানা থেকে উঠতে মন চায় না।

কুশান তখন বললো তা আর বলতে হবে না।নিজের চোখেই তো দেখছি।আজ মনে হয় না কেউ তোমাকে জাগাতে পারবে।
তোড়া এবার ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো আর বিছানায় উঠে বসলো।
কুশান তা দেখে বললো উঠলে কেনো?ঘুমাও।যতক্ষণ মন চায় ঘুমাও।
তোড়া তখন চোখ ডলতে ডলতে বললো,না আর ঘুমাবো না।ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
হঠাৎ তোড়ার টেবিলের দিকে চোখ গেলো।সে তখন কুশানকে বললো,আম্মু নাস্তা দিতে এসেছিলো?

–হ্যাঁ।
–তা ডাকবে না আমাকে?
–তুমি যে শান্তির ঘুম দিয়েছো কিভাবে ডাকি?
তোড়া তখন বললো,নিশ্চয় আম্মু বকাবকি করেছে তাই না?
–না তো।আম্মু আরো বললো ওর যতক্ষন মন চায় ঘুমাক আজ।

তোড়া কুশানের মুখে এই কথা শুনে বললো, জীবনেও বলবে না আম্মু এমন কথা।নিশ্চয় তুমি বলেছো এই কথা।
কুশান তখন বললো তুমি কি এখন শুধু তর্ক করেই যাবে?না আমাকে একটু নাস্তা খাওয়াবে?যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি অপেক্ষা করছি।আমি আর খালি পেটে থাকতে পারছি না।খিদেয় আমার পেট একদম চো চো করছে।
তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো, তুমি খেয়ে নাও।আমার জন্য কেনো বসে আছো?

কুশান তখন বললো আমাদের বাড়িতে তো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দুইজন একসাথে বসে খেতে পারি না।তা আজ যখন তোমাদের বাড়িতে সেই সুযোগ টা পেয়েছি তখন সেটা কেনো হাতছাড়া করবো?দুজন একসাথে বসেই খাবো।কথা না বলে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।

তোড়া সেই কথা শুনে আর দেরি করলো না। এক লাফে বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আর তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিলো।কুশান অনেক আগেই ফ্রেশ হয়েছে।
কুশান এবার তার আম্মুকে কল দিলো।আর জিজ্ঞেস করলো তার আম্মু কি করছে এখন?খেয়েছে কিনা?
কামিনী তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,এখনো খাই নি বাবা।তুই চোখের সামনে না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না।তুই কি করছিস বাবা?খেয়েছিস?

কুশান তার আম্মুকে মিথ্যা কথা বললো যে সে খেয়েছে।তা না হলে এ নিয়ে আবার কামিনী বকাঝকা শুরু করে দিতো।
কামিনী এবার কুশানের আসার কথা জিজ্ঞেস করলো।
কুশান তখন বললো আম্মু আজ তো বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টি পড়া কমে গেলেই সাথে সাথে রওনা দিবো।

–ঠিক আছে বাবা।তাড়াতাড়ি আসিস।তোর মুখ খান আজ দেখি নি মনে হয় কত বছর ধরে দেখি না।
–ঠিক আছে আম্মু।এই বলে কুশান কল কেটে দিলো।তবে কামিনীর কথা শুনে ভীষণ মন খারাপ হলো কুশানের।তার আম্মু যে তাকে না দেখলে ভীষণ কষ্ট পায় তা সে নিজেও ভালো করে জানে।
তোড়া ফ্রেশ হয়ে আসার পর পরই দুইজন একসাথে বসে নাস্তা করে নিলো।তবে কুশান কিন্তু তার হাত দিয়ে কিছু খেলো না আজ।সে আজ পুরো খাবার তোড়ার হাতেই খেলো।

খাওয়াদাওয়া শেষ হলে তোড়া প্লেট বাটি গুলো রান্না ঘরে রেখে আসলো।
এদিকে চামেলি বেগম ওদের জন্য আবার কফি রেডি করছে।তোড়াকে দেখামাত্র চামেলি বেগম বললো,মা কফির মগ দুইটা মনে করে নিয়ে যাস।
তোড়া এদিক ওদিক তাকিয়ে তার দাদীকে দেখতে পেলো না।তখন তোড়া তার আম্মুকে বললো আম্মু দাদীকে দেখছি না যে?

চামেলি বেগম তখন বললো তোর দাদী স্বর্ণাদের বাড়িতে গেছে।
তোড়া তখন কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললো এই বৃষ্টির মধ্যে কেনো গেছে ওখানে?যদি পড়ে যেতো?
চামেলি বেগম তখন তোড়ার হাতে কফির মগ দুইটা দিয়ে বললো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,তাড়াতাড়ি নিয়ে যা। আর তোর দাদী কি শখে গেছে ওই বাড়িতে?আজ ও তোর চাচা চাচীর মনে হয় ঝগড়া লেগেছে। এজন্য গেছে।

এই দুইজন লোক মনে হয় জীবনেও ভালো হবে না।এই বলে তোড়া কফির মগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।রুমে গিয়ে দেখে কুশান ঘরের জানালা খুলে দিয়ে বেডে বসে বৃষ্টি পড়া দেখছে।কারণ তোড়ার রুমের জানালা টা বেডের সাথেই।
তোড়া তখন কুশানের কোলে গিয়ে বসে কুশানের হাতে একটা আর তার নিজের হাতে একটা কফির মগ নিলো।তারপর চুমুক দিতে দিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো বৃষ্টি পড়া।

এমন ঘণঘোর বর্ষায়, কবির সেই মর্মবাণী মনে রেখে স্মৃতির সেই দিনে ফিরে গেলো তোড়ার মন।
তোড়ার কাছে বৃষ্টি যেনো এক আবেগের নাম।
আকাশ কালো করে চারদিক ভাসিয়ে নেয়া ঝমঝম বৃষ্টি তোড়ার খুবই পছন্দের । সেই পিচ্চকাল থেকেই অনেক মজাদার আর স্বপ্নীল স্মৃতি জড়িয়ে থাকার কারণেই হয়ত বৃষ্টির প্রতি তার এতো ভালোলাগা ।

যখন একেবারেই পিচ্চি ছিলো তোড়া তখন থেকেই বৃষ্টিস্নাত ঘনকালো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে অন্যরকম একটা অনুভূতি হতো তার। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতো ঝড়ো হাওয়ায় ভীষণ জোড়ে দুলতে থাকা গাছগুলোর দিকে ।তোড়ার কাছে মনে হত গাছগুলো যেন মনের আনন্দে নাচছে, আর সেও মনের আনন্দে গাছনৃত্য দেখতে দেখতে হারিয়ে যেতো তার মনের স্বপ্নরাজ্যে । কত আকাশকুসুম কল্পনাই না করতো ঐগুলো দেখতে দেখতে । যদিও মাঝে মাঝে বিদুৎচমকানো কে সে ভীষণ ভয় পেতো।

আজও সেই একই পরিবেশ।
তবে আজকের অনুভূতি টা সম্পূর্ণভাবে আলাদা।
আজ আর বিদুৎ চমকানো দেখে একটুও ভয় লাগছে না তোড়ার।কারণ আজ যে তার কাছে তার মনের মানুষ টিও আছে।
কুশানের কোলের মধ্যে চুপটি করে বসে আসে তোড়া।আর সেই আগেকার মতোই জানালার কাছে বসে বৃষ্টি পড়া দেখছে।বৃষ্টির দিনগুলো তো এমনিতেই ভালো লাগে তার, তারমধ্যে আজ আবার মনের মানুষ কাছে আছে।
এ যে এক অন্যরকম অনুভূতি।যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

আকাশে ঘন মেঘ,বাতাসে জলের ছোঁয়া, গাছের পাতায় পাতায় একটা আশ্চর্য তরতাজাভাব, সব মিলিয়ে তোড়া আর কুশানের রোমান্স যেন উপচে পড়ছে আজকের দিনে। এই মৌসুমে আলাদা করে রোমান্টিক পরিবেশ তৈরির জন্য কোনো পরিশ্রমই করতে হয় না।

বাইরে ঘন বৃষ্টি, ঠান্ডা আবহাওয়া আর তোড়া কুশান দুইজনের হাতেই এক কাপ ধূমায়িত পানীয়, অসাধারণ ভালো লাগার একটা মুহুর্ত! হাতে গরমাগরম হট কফির কাপ নিয়ে তোড়া খুলে বসেছে গল্পের ঝাঁপি।কুশানের সাথে ছোটোবেলার নানারকম কথা শেয়ার করছে সে।কুশান নিজেও চুপ নেই।সেও তার কিছু ভালোলাগার স্মৃতির কথা তোড়াকে বলছে।আজকের এই মুহূর্তটা সারাজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে তাদের দুইজনের কাছে।

কফির- ধোঁয়া উড়ছে আর দুইজন প্রেমিক প্রেমিকা একসাথে জড়াজড়ি করে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছেন। বিষয়টি ভাবতেই মন জুড়ানো অনুভূতি আসে।
কিছুক্ষন পর হেনা বেগম আসলো তোড়ার রুমের সামনে।আর তোড়া তোড়া বলে ডাকতে লাগলেন।তোড়া তার দাদীর কন্ঠ শোনামাত্র কুশানের কোল থেকে বের হয়ে গেলো।দরজা খুলেই দেখে তার দাদী তেল মাখানো মুড়ি, সাথে পেঁয়াজ আর মরিচ কাটা, আর সাথে বাদাম চানাচুর দিয়ে একদম মেখে এনেছে।

তোড়া কিছু বলার আগেই দাদী বললো নাতি জামাইকে খেতে দে এগুলো।আর কখন কি খেতে চায় একটু কষ্ট করে বাহিরে এসে তোর মাকে বলে যাস।তোর মা বার বার এভাবে আসতে চায় না।
এই বলেই দাদী চলে যেতে ধরলো।

এদিকে কুশান দাদীর কন্ঠ শুনে নিজেও চলে এলো।আর বললো দাদী রুমে এসো।আগেই যাচ্ছো কেনো?এসো একসাথে বসে গল্প করি।
দাদী তখন হাসতে হাসতে বললো আমি সাথে থাকলে যে তোদের রোমান্স করা হবে না।কাবাবের হাড্ডি হওয়ার শখ নাই ভাই।তোরা এনজয় কর।এই বলে দাদী চলে গেলো।

কুশান তখন বললো দাদী আমাদের বড়ই রোমান্টিক।
কিন্তু তার নাতনী হইছে সম্পূর্ণ আলাদা।খালি ঝগড়া আর তর্ক করে।
রোমান্টিকের র ও বোঝে না।
তোড়া তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো এতো বুঝে লাভ নাই।এই বলে সে মুড়ির বাটিটা নিয়ে আবার জানালার কাছে গিয়ে বসলো।

এখনো বৃষ্টি পড়ছে।তোড়া আর কুশান জানালার পাশে বসে হেনা বেগমের সেই স্পেশাল মুড়ি মাখা খাচ্ছে আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এখনো বৃষ্টি পড়া দেখছে।মাঝেমধ্যে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা তাদের শরীর স্পর্শ করে যাচ্ছে।হঠাৎ তোড়ার খুব ইচ্ছে করতে লাগলো বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা হাত দিয়ে স্পর্শ করতে,আর সেই অনুভূতি টা নিতে।কিন্তু এই ইচ্ছার কথা যে সে কখনোই কাউকে বলতে পারবে না।

কারন তাকে যে কেউই বৃষ্টির পানিতে ভিজতে দেবে না।তার যে একটু ভিজলেই জ্বর টা ফ্রি থাকে সবসময়।তোড়া তবুও সাহস করে কুশানকে বলেই ফেললো,কুশান!চলো না আজ একটু বৃষ্টি তে ভিজি?
কুশান তোড়ার কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠে বললো,পাগল হইছো তুমি?বৃষ্টি তে ভেজা আর সাথে সাথে তোমার জ্বর চলে আসা।তখন কি হবে?

তোড়া তখন বললো প্লিজ কুশান।প্লিজ।এটা না আমার অনেক দিনের একটা স্বপ্ন।যে তোমার সাথে আমার বিয়ে হলে প্রথম যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিন দুইজনে আমরা একসাথে ভিজবো।দেখো ভাগ্যের কি পরিহাস!আজকেই বৃষ্টি পড়ছে।সুতরাং এখন আমাদের ভিজতেই হবে।

কুশান অবাক হয়ে বললো,সত্যি তুমি এইরকম কোনো ইচ্ছা করেছিলে?কই আমাকে তো একদিনও বলো নি?
তোড়া তখন বললো কথাটা আমি আমার মনের মধ্যেই রেখেছিলাম।আর এসব কথা আগেই বলা হয় না কাউকে।
কুশান তখন বললো তুমি তাহলে একটা চরম লেভেলের মিথ্যাবাদী মেয়ে।

তোড়া এই কথা শুনে কুশানের কোল থেকে উঠে বসলো।আর বললো,মিথ্যাবাদী মানে?
–হ্যাঁ তুমি একটা মিথ্যাবাদী। এরকম যদি ইচ্ছা তুমি করেই থাকো তাহলে বিয়ের দিনই তো আমাদের বৃষ্টি তে ভেজার কথা।সেদিন রাতেও তো বৃষ্টি হয়েছিলো।

তোড়া তখন বললো,তখন তো তোমার উপর আমার প্রচন্ড রাগ জমে ছিলো।সেদিন তো ইচ্ছা করছিলো তোমাকে নিজের হাতে খুন করে ফেলি।সেদিন কি আর বৃষ্টিতে ভেজার মুডে ছিলাম নাকি?
কুশান সেই কথা শুনে তোড়ার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বললো,
এখন তাহলে কিসের মুডে আছো তোড়া?

–বৃষ্টিতে ভেজার।এই বলেই তোড়া কুশানের হাত ধরে টেনে পিছন দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো বাহিরে।কারন বাড়ির কেউ দেখলে ভীষণ রাগ করবে।তাকে কখনোই বৃষ্টি তে ভিজতে দেবে না।
তোড়া বাহিরে গিয়েই হাত দুটি মেলে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটার অনুভূতি নিতে লাগলো।আজ খুব খুব খুব বেশি ভালো লাগছে তোড়ার।প্রিয় মানুষ টির সাথে সময় কাটানো যে কত টা আনন্দের যারা এরকম দিন উপভোগ করেছে তারাই বুঝবে এর মর্ম।

তোড়া এবং কুশান দুইজনই ভিজে একাকার।তোড়া বৃষ্টির ফোঁটার সাথে খেলা করছে আর কুশান শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে তোড়ার দিকে ।তোড়ার এইরকম রুপ টা সে আগে কখনো দেখেনি।একদম ছোটো বাচ্চাদের মতো বৃষ্টি উপভোগ করছে তোড়া।আজ আবার নতুন করে তোড়ার প্রেমে পড়ে গেলো কুশান।ভেজা চুলে তোড়াকে অনেক বেশি সুন্দর আর আকর্ষণীয় লাগছিলো।প্রকৃতির সাথে যেনো মিশে যাচ্ছে তার এই সৌন্দর্য। কুশান তোড়ার দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হরিনী ডাগর কালো চোখ দুটি যেনো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করছে।এ ভালোবাসা যেনো শেষ হবার নয়।

হঠাৎ কুশান এসে জড়িয়ে ধরলো তোড়াকে।তারপর তাকে এক ঝাটকায় কোলে তুলে নিলো।আর ঘরের দিকে এগোতে লাগলো।
তোড়া তা দেখে বললো,এই? আরেকটু থাকি না?বৃষ্টি তে ভিজতে তো ভালোই লাগছিলো।
কুশান তখন তোড়ার চোখে চোখ রেখে বললো হাজব্যান্ডের চোখ দেখে যদি তার স্ত্রী বুঝতেই না পারে সে এখন কি চায় তাহলে সে কখনো উত্তম স্ত্রী হতেই পারে না।

তোড়া কুশানের কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে
বললো,কুশান এখন কিন্তু ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে আগে।তুমি না বলো ভেজা পোশাকে আমি অসুস্থ হয়ে যাবো?
–সেই জন্যই তো কোলে ওঠালাম।তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে তোমার।আর তুমি চেঞ্জ করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।আমি করে দিলে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।

এই বলে কুশান তোড়াকে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে গেলো।
আর তোড়া লজ্জায় কুশানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
এমন রোমাঞ্চকর মুহুর্ত কে না চায়?এই রকম মুহুর্ত সবাই ধরে রাখতে চায় সারাজীবন।এমন সৌভাগ্য কিন্তু সবার হয় না।ভাগ্যগুনে দু একজনের কপালে এরকম সুখ লেখা থাকে।

আজ পুরো পৃথিবী যেনো থেমে আছে তোড়া কুশানের এরকম ভালোবাসার কাছে।কারন একজনের প্রতি আরেকজনের ভালোবাসা যে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।তাদের জীবন এখন একই সুঁতোয় বাঁধা।এই ভালোবাসা আর হারিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনায় নাই।

বৃষ্টির সঙ্গে তোড়া আর কুশানের রোমান্স তো হচ্ছেই আরো যে ব্যাপারটা জুড়ে রয়েছে, তা হল খাওয়া-দাওয়া।সেটাও কিন্তু থেমে নেই।তোড়া আর কুশান তো একদম পুরোদমে উপভোগ করছে আজকের এই বৃষ্টির দিন টা।অন্যদিকে বৃষ্টির দিনে যে খিচুড়ি ছাড়া চলে না তা চামেলি বেগম ভালো করেই জানে।তিনি বৃষ্টির সঙ্গে মিল রেখে খিচুড়ি রান্না শুরু করে দিলেন।সঙ্গে মাংসের ভুনা,ইলিশ মাছ ভাজা,বেগুন ভাজা আর শুটকি মাছ ভর্তাও করছেন।

দুপুর পার হয়ে যাচ্ছে।কুশান আর তোড়া রোমান্টিক সময় পার করে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেরাও জানে না।
অন্যদিকে চামেলি বেগম দুপুরের খাবার রেডি করে
তোড়া আর কুশানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে স্বর্নাদের বাড়ি চলে গেলো।তিনি আর ডাক দিলেন না তোড়াকে।বার বার ডাক দিলে যদি মেয়ে আর মেয়ের জামাই বিরক্ত হয়ে যায় এজন্য।অন্যদিকে গোলাপ সাহেব এখনো ফেরে নি বাসায়।হেনা বেগম তো আবার স্বর্নাদের বাড়ি চলে গেছে।

বৃষ্টি এখনো পড়ছে।বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ ই নেই।
হঠাৎ কে যেনো আবার দরজা ধাক্কাতে লাগলো।বৃষ্টি পড়ার ঝুপঝাপ শব্দের সাথে দরজা ধাক্কানোর শব্দটা বেশ বিরক্তিকর ঠেকছে তোড়ার কাছে।কারন কুশান আর তোড়া যে এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

তোড়া দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে ধীরে ধীরে কুশানের কোল থেকে বের হয়ে আসলো।এদিকে এখনো কেউ একজন দরজা ধাক্কাতেই আছে। অনেকক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে তোড়া অতিষ্ঠ হয়ে চিৎকার করে বললো,
যাচ্ছি বাবা।দরজার কাছে তো যেতে হবে?

তোড়া চিৎকার করে বলার পর দরজা ধাক্কানোর শব্দ থেমে গেলো।
তোড়া দরজা খুলতেই দেখে একদল মহিলা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।এদিকে তোড়ার চোখ থেকে এখনো ঘুম চলে যায় নি।
তোড়া যদিও তাদের দেখে নি কোনো দিন?তবুও সকল মহিলাদের দেখে বললো, ভালো আছেন সবাই?
–হ্যাঁ মা ভালো আছি।আমাদের কে চিনছো মা?
তোড়া তখন বললো না।

তখন মহিলাগুলো বললো,আমরা তোমাদের গ্রামেরই।তোমার আম্মু আর দাদী আমাদের ভালো করেই চেনে।বৃষ্টির দিনে কোনো কাজকর্ম নাই বিধায় ভাবলাম একটু ঘুরে আসি।
শুনলাম তুমি এসেছো এজন্য দেখতে আসলাম তোমাকে আর তোমার জামাই কে।
তোড়া তখন বললো উনি তো ঘুমাচ্ছে।

–একটু ডেকে দাও না।দেখে যাই একটু।আর কবে আসবে না আসবে?আমরাও তেমন একটা সময় পাই না।
তোড়া সেই কথা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগলো কেমন মহিলা এরা?ঘুমাচ্ছে শুনেও ডাকতে বলছে।
তোড়া তো এখন পড়ে গেলো মহা বিপদের মধ্যে।তার আম্মু বা দাদী থাকলে হয়তো পড়ে আসতে বলতো।কিন্তু সে কিছু বলতে পারলো না।সে বরং মহিলা গুলোকে বললো,আচ্ছা,আপনারা একটু বসেন।আমি ডেকে দিচ্ছি ওকে।এই বলে তোড়া কুশানকে ডাকতে গেলো।

কিন্তু কুশানকে ডাক দিতে ভীষণ মায়া লাগলো তোড়ার।কারণ কুশান একদম মনের শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।
তবুও এক প্রকার বাধ্য হয়েই ডাক দিতে হলো তাকে।কারণ এই মহিলারা কুশান কে না দেখা পর্যন্ত যাবেও না।
তোড়া কুশানের গা ধরে টেলা দিতে দিতে বললো, কুশান?একটু উঠবে?

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৩

কুশানের কোনো সাড়াশব্দই নাই।
তোড়া আবার ডাক দিলো, এই কুশান?একটু উঠবে?

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ২৫