আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৪৩

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৪৩
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

সোলেমান চৌধুরী হঠাৎ এভাবে কোথায় নিরুদ্দেশ হলেন?তিনি এখন পর্যন্ত কুশানের মেয়েকে দেখতে আসলেন না।কুশান তার নানুর কথা জারিফ চৌধুরী কে জিজ্ঞেস করলে জারিফ চৌধুরী জানালো তিনি একটু ব্যস্ত আছেন।কিন্তু কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন সেটা আর বললেন না।কুশান নিজের থেকেও আর বেশি প্রশ্ন করতে গেলো না।কারণ তার নানু কারণ ছাড়া কখনোই এভাবে কোথাও যায় না।

দেখতে দেখতে তিন দিন পার হয়ে গেলো।সেজন্য আজ তোড়া আর কলিজার টুকরো মেয়েকে নিজের বাসায় নিয়ে যাবে কুশান।কুশানের বংশধর আজ তার বাসায় প্রথম পা দিবে ভাবতেই অনেক খুশি লাগছে কুশানের।তোড়ার মেয়েকে স্বাগতম জানানোর জন্য আজ বাসায় ছোটো খাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো।যে অনুষ্ঠানে নিকটতম সকল আত্নীয়স্বজন উপস্থিত থাকবেন।আর সপ্তম দিনে কুশানের মেয়ের আকিকা করা হবে সে ঘোষণাও দেওয়া হবে আজ।তবে কুশান এসবের কিছুই জানে না।ব্যাপার টা সারপ্রাইজ হিসেবে রাখলো বাড়ির লোকজন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কুশান বাসায় যাওয়ার আগে তার মেয়ের একটু চেকাপ করালো।সেজন্য সে শহরের একজন ভালো নামকরা শিশু ডক্টরের সিরিয়াল কাল নিয়ে রেখেছিলো।ডাক্তার সাহেব কুশানের মেয়েকে ভালো করে পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানালেন কুশানের ছোট্ট রাজকুমারী টা একদম সুস্থ আছে।
ডাক্তার সাহেব আরো অনেক উপদেশ দিলেন সদ্য মা বাবা হওয়া কুশান আর তোড়াকে।
ডাক্তার সাহেব বললেন,

আপনাদের মেয়ে সদ্য পৃথিবীতে এসেছে, সেজন্য তার যত্নে আপনাদের হতে হবে অনেক বেশি সচেতন। কেননা একটু ভুলভাল যত্নের কারণেই আপনাদের শিশুটি কিন্তু পড়তে পারে মারাত্মক কোনো অসুখে। নবজাতক শিশুদের কোনোকিছুই প্রাপ্তবয়স্কদের মতো নয়। সব অভিজ্ঞতা, সব ধরণের যত্ন-আত্তিই তার জন্য নতুন। তাই নবজাতকের যত্নে পালন করতে হবে বাড়তি সতর্কতা।বুঝেছেন?

কুশান আর তোড়া একসাথে মাথা নাড়লো।
ডাক্তার সাহেব হঠাৎ খেয়াল করলেন কুশানের মেয়ের শরীরে অতিরিক্ত পাউডার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে আবার কপালে বড় একটা কালির ফোটাও দিয়ে দিয়েছে।সেজন্য ডাক্তার সাহেব বললেন,

“প্রচুর পরিমাণে পাউডার বা তেল শিশুর ত্বকের জন্য কিন্তু ক্ষতিকর। অতিরিক্ত পাউডার ব্যবহারে শিশুদের ত্বকের রোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায় বলে সাধারণ শারীরিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এতে শিশুর ঘামাচি ও ন্যাপি র্যাশও হতে পারে।
আর এটা কি দিয়ে দিয়েছেন কপালে?আর কখনো কপালে বা পায়ে কোনোরকম কালির ফোঁটা দেবেন না। এতে শিশুর ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কুশান সেই কথা শুনে একটা টিস্যু পেপার দিয়ে দ্রুত কালির ফোটা টি মুছিয়ে দিতে দিতে বললো, এসব বাচ্চার নানীর কাজ।আমি কত করে বললাম দিয়েন না আম্মু ওসব।কিন্তু উনি বললেন,কালির ফোঁটা দিলে নাকি নজর লাগবে না কারো।কুশান এবার আলতো করে পাউডার গুলোও ওঠানোর ট্রাই করলো।
ডাক্তার সাহেব তা দেখে বললেন,নেক্সট টাইম আর ইউজ না করলেই হবে।আর কালির ফোঁটা দেওয়া এটা সম্পূর্ণ একটা কুসংস্কার কথাবার্তা।
তোড়া মাথিয়ে নাড়িয়ে বললো,জ্বি।

” শিশুকে কখনোই অতিরিক্ত রোদে নিয়ে বের হবেন না।শুধুমাত্র ভোরের মিষ্টি রোদ টাতে বের করবেন বাচ্চাকে।বাচ্চার সামনে হাঁচি-কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। শিশুকে সবসময় ঠান্ডা ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশে রাখবেন।
“জ্বি স্যার।”
“শিশু ঘেমে গেলে বারবার শুকনো নরম কাপড় দিয়ে গা মুছে দিবেন।আর অবশ্যই শিশুকে সুতির নরম ও আরামদায়ক পোশাক পরাবেন।শিশুর ঘর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন।
এবার ডাক্তার সাহেব তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

আপনাকে এখন থেকে প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার ও পানি খেতে হবে। এতে করে বুকের দুধ থেকে আপনার শিশু অনেক বেশি উপকৃত হবে।আর শিশুর রোগবালাই অনেক কম হবে।
তবে বাসায় যাওয়ার পর যদি কোনো প্রবলেম হয় তখন দ্রুত যেনো তাদের সাথে কন্ডাক্ট করা হয় সে কথাও বলে দিলো ডাক্তার সাহেব।
কুশান আর তোড়া ডাক্তার সাহেবের উপদেশ গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো।কারন ডাক্তার সাহেব যে যে নিয়মে চলতে বললো সব ভালোভাবে তাদের পালন করতেই হবে।একমাত্র মেয়ের যত্নে তারা কোনো ত্রুটি রাখতে চায় না।

তোড়াকে ধরে কুশান ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলো।যদিও তোড়া এখন একা একাই চলাফেরা করতে পারে তবুও ভালোবাসার বউকে কুশান একা হাঁটতে দিলো না।কুশানের এক হাত তোড়ার ঘাড়ে আর অন্য হাত দিয়ে তোড়ার কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে ধীরে ধীরে পা ফেলতে বললো কুশান।অন্যদিকে কুশানের মেয়ে তার নানীর কোলে আরামে ঘুম পারছে।কুশান ফাঁকে ফাঁকে মেয়ের দিকেও তাকাচ্ছে।আর তার শাশুড়ী কে বলছে,আম্মু ধীরে ধীরে পা ফেলেন।তাড়াহুড়ো করার কোনো প্রয়োজন নেই।আপনার কোলে কিন্তু আমার কলিজার টুকরো আছে।

চামেলি বেগম কুশানের কথা শুনে মিটমিট করে হাসলেও হেনা বেগম বললো,
তোর শাশুড়ী তো কোনো দিন বাচ্চা কোলে নিয়ে হাঁটে নি।এই প্রথম তোর মেয়েকে নিয়ে হাঁটতেছে।এজন্য তাকে শিখিয়ে দিতে হবে কেমন করে হাঁটবেন তিনি।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, এতোদিন যেসব বাচ্চা কোলে নিয়েছেন তার সাথে আমার মেয়ের তুলনা করছো দাদী?আমার মেয়ে হলো হীরার টুকরো। ওর সাথে অন্য কারো তুলনা চলে না।
তোড়া সেই কথা শুনে বললো, তাহলে আমরা কি কয়লা?তোমার মেয়ে যদি তোমার কাছে ডায়মন্ড হয় তাহলে আমরাও আমাদের বাবা মার কাছে ডায়মন্ড।শুধু নিজের মেয়ের প্রশংসা!সবাই সবার বাবা মার কাছে এক একটা হিরার টুকরো।বুঝেছো?

কুশান আর কোনো তর্কে গেলো না।কারন এখন তর্ক করা মানে তোড়া গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।এই খুশির দিনে অযথা কোনো ঝগড়া ঝাটি নয়।
কুশান সবার প্রথম তোড়াকে গাড়িতে বসালো।তারপর মেয়েকে কোলে নিয়ে চামেলি বেগমকে বললেন,আম্মু!এবার আপনি ওঠেন।চামেলি বেগম ওঠার পর কুশান উঠে বসলো গাড়ির ভিতর।হেনা বেগম অনেক আগেই বসেছেন।
ড্রাইভার আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিলো।কুশান পুরো রাস্তা শুধু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই পার করে দিলো।কখন যে তারা বাড়ি পৌঁছে গেলো বুঝতেই পারলো না কুশান।

বাসায় পৌঁছে ড্রাইভার গাড়ির হর্ন দিতেই কামিনী, ইরা,মিরা,লিরা,সোনিয়া,স্বর্না,সুমন সবাই একদম দৌঁড়ে চলে এলো গাড়ির কাছে।স্বর্ণা যেহেতু এখনো দেখে নি তোড়ার মেয়েকে সেজন্য সে প্রথম দৌঁড়ে গিয়ে কুশানের কোল থেকে কেড়ে নিলো বেবিকে।আর বললো, মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ, কি কিউট হইছে তোর মেয়েটা আপু?একে আমি নিয়ে যাবো আমাদের বাড়ি।
এই বলে স্বর্না তোড়ার পাশে এসে দাঁড়ালো।

তোড়া স্বর্ণার কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো, একটু বড় হলে নিয়ে যাস।এখন ও মাকে ছাড়া কিছুতেই তোর কাছে থাকবে না।
“থাকবে থাকবে।তুই শুধু নিয়ে যাওয়ার পারমিশন দে।”
কুশান সেই কথা শুনে বললো, তোমার বোন পারমিশন দিলেও আমি কিন্তু দিবো না পারমিশন। আমার মেয়েকে ছাড়া আমি আর এক সেকেন্ড ও থাকতে পারবো না।

এদিকে স্বর্ণার হাত থেকে সোনিয়া বেবিটাকে কেড়ে নিয়েই বাসার ভিতর চলে গেলো।
“এই,এই।কি করলি এটা সোনিয়া?”
সোনিয়া তখন পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো,কুশান ভাইয়ার মেয়েকে দেখার জন্য বাসার মধ্যে সবাই অপেক্ষা করছে।
স্বর্না এবার তোড়াকে জিজ্ঞেস করলো আপু তোর শরীর কেমন আছে?তুই পুরোপুরি সুস্থ আছিস তো?

“হ্যাঁ ভালো আছি।তুই একাই এসেছিস? চাচী আসে নি?
“হ্যাঁ,আমরা সবাই এসেছি।”
“সায়ক ভাইয়াও এসেছে?”
“হুম।”

তোড়া সায়কের কথা শুনে কুশানের কানে কানে বললো, আজ যখন সবাই এসেই গেছে, সায়ক আর সোনিয়ার কথা টা নানুকে বলে দিও।আর গোপন করে কি লাভ?
কুশান সেই কথা শুনে বললো, নানু থাকলে তো বাসায়?এখন পর্যন্ত নানু আমার মেয়ের মুখ দেখলো না।বুঝতে পারছি না কিছু।নানু যে কোথায় হারিয়ে গেলো এভাবে?আব্বু বললো খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছেন তিনি।

সকল আত্নীয় স্বজন এক এক করে কুশানের মেয়েকে কোলে নিতে লাগলো।সবাই বেবিকে দেখে ভীষণ খুশি হয়েছে। কামিনী এবার তার নাতনীকে নিজের কোলে নিলো।আর হাত দিয়ে চুমু খেতে খেতে বললো, কই আমার বুবু টা?আমার বুবু টা আজ তার নিজের বাসায় এসেছে।কত সুন্দর করে সাজিয়েছি তোমার ঘর।চলো দেখবে চলো।
কামিনীর গল্প করা দেখে কুশানের মেয়ে শুধু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।সে হয় তো ভাবছে এসব কি বলছে তার দাদিমনি?হঠাৎ কুশানের মেয়ে তার দাদীর গল্প করা দেখে ফিক করে হেসে দিলো।
আর সাথে সাথে সবাই হই হই করে উঠলো।আর বলতে লাগলো,

দাদীর গল্প শুনে নাতনী কি সুন্দর হাসছে।কেউ বলতে লাগলো কামিনী এখন একজন গল্প করার লোক পেয়ে গেলো।
কামিনী এবার কুশানের মেয়েকে নিয়ে সোজা কুশানের বেড রুমে নিয়ে গেলো।
এদিকে কুশান তোড়াকে ধরে ধরে বাসার মধ্যে প্রবেশ করলো।বাসায় প্রবেশ করতেই কুশানের চোখ একদম ঝালাপালা হয়ে গেলো।তার মেয়ের আগমন উপলক্ষে বাসাটা যে সুন্দর করে সাজানো হবে সত্যি সে ভাবতেই পারে নি।আরো সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যের বিষয় হলো সকল আত্নীয় স্বজন দিয়ে ভরে গেছে বাসা।বাসাতে এমন জাকজমক আয়োজন দেখে কুশান তোড়ার দিকে তাকাচ্ছে আর তোড়া কুশানের দিকে।এদিকে আত্নীয় স্বজনরা কেউ তোড়ার কাছে ছুটে এলো আর কেউ বা তার মেয়ের কাছে।সবাই তোড়ার ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

কুশান তোড়াকে নিয়ে যেই তার বেডরুমে ঢুকেছে তার চোখ একদম ছানাবড়া হয়ে গেলো।কারণ কুশান নিজের রুম নিজেই চিনতে পারছে না।এটা কার রুম?কোনো কালে যে এই রুম টা তার ছিলো বিশ্বাসই হচ্ছে না তার।কারণ রুমের ডেকোরেশন পুরাই চেঞ্জ করে ফেলেছে কামিনী।

রুম টা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা একটা শিশুর জন্য সাজানো গোছানো পরিপাটি রুম।
উঁচু বক্স খাটের জায়গায় নিচু খাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে কুশানের মেয়ে হঠাৎ পড়ে গেলেও ব্যথা যেনো না পায়।রুমের সব আসবাবপত্রও চেঞ্জ।শুধু তাদের রুমের ড্রেসিং টেবিল আর আলমারি টা আছে।আর পুরো ঘর কুশানের মেয়ের জন্য নতুন নতুন আসবাব পত্র বসানো হয়েছে।

যেহেতু শিশুদের জন্য প্রচুর আলো বাতাস এবং ধুলাবালি তুলনামূলক কম ঢোকে এমন ঘর নির্বাচন করা উচিত সেহেতু কুশানের বেডরুম টাই তার মেয়ের জন্য বেস্ট হবে ভেবে কামিনী এই রুমটাই তার নাতনির জন্য নির্বাচন করেছে।ঘরে একদম উজ্জ্বল সাদা জ্বলানো। ঘরের বিভিন্ন কোণে স্পটলাইট, ওয়ার্ম ফোকাস লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।আর রাতে অল্প আলোর জন্য হালকা নীল আলোও লাগানো হয়েছে।

কুশানের মেয়ের ড্রেস, খেলনা ইত্যাদি রাখার জন্য একটি গোলাপি রঙের ওয়ারড্রোব, মিনি সোফাও বসানো হয়েছে।
অফ হোয়াইট, পিঙ্ক, হলুদ লাল রঙ ব্যবহার করা হয়েছে দেয়ালে।মানে দেয়ালের কিছুটা অংশ পিংক কিছুটা অংক হোয়াইট আবার কিছুটা অংশ হলুদ আর কিছুটা অংশ লাল,যাকে বলে রঙ বেরঙ এর দেয়াল।ঘরের বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা সব কিছুতেই শিশুবান্ধব নকশা, রঙ-বৈচিত্র্য রাখা হয়েছে।আর বাবুর জন্য একটা দোলনাও টাঙানো হয়েছে।আর সেই দোলনা সুন্দর সুন্দর কিছু বেলুন দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে সবাই।পাশে কিছু খেলনা রাখা।নতুন নতুন কিছু ড্রেস ছোট্ট একটা র‍্যাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

তোড়া এসব সাজসজ্জা দেখে কামিনীর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো, আম্মু এসব কি করেছো?কখন করেছো?এতো কিছু এই শর্ট টাইমে করলে কিভাবে?
কামিনী তখন বললো আমি কি একাই করেছি নাকি?বাসার সকল সদস্য মিলেই করেছি এসব।আমাদের সবার আদরের কথার জন্য এই সামান্য আয়োজন তো কিছুই না।
“কথা?” নাম ও ঠিক করেছো আম্মু?

“হ্যাঁ।” আমি রেখেছি কথা।এখন যার যেটা মন চায় সেটা রাখতে পারো।কামিনীর আদরের নাতনি কথা মনি।কুশানের একমাত্র রাজকন্যা কথামনি।”আমি কথামনি বলেই ডাকবো।
কুশান কামিনীর এমন আবেগমাখা কথা আর এতো আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখে সত্যি সে একদম কেঁদেই ফেললো।তার মেয়ে এই দুনিয়ায় আসায় সবার মনে যে আনন্দের বন্যা বইছে এটা বোঝাই যাচ্ছে।

কুশান মেয়ের সাথে গল্প করছে।মেয়ের কচি কোমল হাত দুটি স্পর্শ করছে আর মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছে আমার একমাত্র রাজকন্যা তুমি।তোমাকে পেয়ে আমার জীবন টা একদম পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।কই ছিলে এতোদিন তুমি?কুশানের মুখচোখে হাসি যেনো ঝলমল করছে।এই বাবা হওয়ার অনুভূতি টা সত্যি অনেক চমৎকার।নিজের সন্তান থেকে এক মুহুর্তের জন্যও তার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।

তোড়া গোসল শেষ করে চুল গুলো ঠিক করতে করতে নিজেও মেয়ের কাছে আসলো।আর কুশানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
বাবা মেয়ের গল্প করা কি এখনো শেষ হয় নি?
কুশান সেই কথা শুনে তার মেয়ের মুখে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে বললো,”বাবা মেয়ের গল্প কখনো শেষ হওয়ার নয়।আমাদের গল্প করা দেখে কি হিংসা হচ্ছে তোমার?

“কি?হিংসা হচ্ছে মানে?কুশান,খবরদার আবোল তাবোল কথা বলবা না।”এই বলে তোড়া রাগ করে চলে গেলো।
কুশান তখন দৌঁড়ে গিয়ে তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, মজা করলাম একটু।তোমার ধৈর্য্য কবে হবে তোড়া?আমি কি একটু ফান করে কথা বলতেও পারবো না?
তোড়া তখন বললো, ছাড়ো আমায়।তাড়াতাড়ি করে গোসল করে নাও।বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে।আম্মু অনেক আগেই যেতে বলেছে।এখন যদি এসে দেখে আমরা রেডি হই নি তখন রাগ করবেন কিন্তু।

” রেডি হবো কেনো?”কই যাবো আমরা?”
“কোথাও যাবো না।আজ নানু ভাই আসবে বাসায়।ওনার সাথে কিছু অতিথিও আসবে।এজন্য।
এই বলে তোড়া আলমারি থেকে নতুন একটা শাড়ি বের করলো।
কুশান তখন তোড়ার হাত থেকে শাড়ি টা রেখে নেশাময় চোখে তাকিয়ে বললো,
তোড়া?আমার না ভালো লাগতেছে না।

তোড়া তখন বললো, ওভাবে তাকিয়ে লাভ নাই।আর এভাবে ডেকেও কোনো লাভ নাই মিস্টার হাজব্যান্ড।অপেক্ষা করতে হবে।ধৈর্যের পরীক্ষা এটা তোমার।বাবা হওয়া এতো সহজ না।যাও গোসল করতে যাও।এই বলে তোড়া মুচকি একটা হাসি দিয়ে কুশানকে ওয়াশরুমের দিকে ঠেলে দিলো।
কুশান তখন তোড়ার হাত ধরে টেনে ওর নরম ঠোঁট দুটি স্পর্শ করতে করতে বললো,
আর তো দেরি সহে না,
মন তো আমার মানে না।
তোমার ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেতে চায় মন।
আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে,,,,?

এরই মধ্যে কুশানের মেয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।মেয়ের কান্না শোনামাত্র কুশান তার রোমাঞ্চকর জগত থেকে ফিরে এসে মেয়ের কাছে ছুটে গেলো।আর বললো,
আমার সোনা পাখি টা কাঁদে কেনো?কে বকা দিয়েছে আমার মেয়েটাকে।ক্ষুধা লাগছে তোমার?
মেয়ের কান্না তবুও থামাতে পারছে না কুশান।
তোড়া হাসতে হাসতে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে কান্না শুনে কামিনী বাহির থেকেই চিৎকার করে বললো,তোড়া?কথামনি কাঁদছে কেনো?ওকে বাহিরে নিয়ে এসো।
তোড়া তার শাশুড়ীর কথা শোনামাত্র মেয়েকে কোলে করে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো।কামিনী তখন তোড়ার কোল থেকে নাতনিকে নিয়ে বললো,
কই আমার কথামনি?কথামনি কাঁদে কেনো?আম্মু বকা দিয়েছে তোমায়?
সাথে সাথে কথামনি চুপ হয়ে গেলো।কামিনী এবার তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
তুমি মাত্র গোসল করলে?তোমাকে না অনেকক্ষন আগে গোসল করার কথা বলেছি।এখন থেকে ১২ টার মধ্যেই গোসল করে নিবে।দেরি করে গোসল করলে কিন্তু আমার কথামনির ঠান্ডা লেগে যাবে।

“” জ্বি আম্মু।”
“আর তুমি তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নাও।” কুশান কই?ও কি রেডি হয়েছে।”
“হচ্ছে রেডি।”
“আচ্ছা।” এই বলে কামিনী কথামনিকে নিয়ে চলে গেলো।

সোলেমান চৌধুরী প্রবেশ করলেন বাসায়।ওনার সাথে শহিদুল সাহেব,লাবুনি বেগম,শ্রাবণ আর জারাও আছে।আরো দুই একজন অচেনা মানুষ।
সোলেমান চৌধুরী বাসায় প্রবেশ করেই চিৎকার করে কুশান কে ডাক দিলেন।কুশান তার নানুর ডাক শোনামাত্র দ্রুত বের হয়ে এলো।আর কাছে এসে বললো,
কই গিয়েছিলে নানু ভাই?

“আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম রে।” তোর সাথে পরে কথা বলছি।এখন আগে আমার পুতনিকে দেখা।কই সে?যাকে দেখার জন্য ছুটে এলাম আমি।”
কামিনী তখন কথামনি কে নিয়ে এগিয়ে এসে বললো, খালি হাতে আমি আমার নাতনীর মুখ দেখতে দিবো না বাবা।কি নিয়ে এসেছো ওর জন্য সেটা আগে দেখাও।
সোলেমান চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,

যা আনার এনেছি।গোপনে দিবো ওকে।তোদের কাউকে দেখতে দেবো না।আগে দেখা আমার পুতনির চাঁদ মুখখানা।এই বলে সোলেমান চৌধুরী নিজেই কোলে নিলেন কথামনিকে।তার পর দেখে বললেন, মাশাল্লাহ, দেখতে যেনো একদম জান্নাতের টুকরো।আমি এর নাম জান্নাত রাখলাম।জান্নাত বলে ডাকবো আমি।
কামিনী সেই কথা শুনে বললো আমার আর কুশানের নামের সাথে মিল রেখে আমি কথামনি রেখেছি বাবা।আমি কিন্তু কথামনি বলেই ডাকবো।
এদিকে শ্রাবণ আর জারা কুশানের সাথে গল্প করতে লাগলো।জারার ছেলেটাও অনেক বেশি সুন্দর হইছে।কুশান জারার ছেলেকে কোলে নিয়ে বললো,

কি নাম রেখেছো এর?
“আমি রেখেছি জয়,আর ওর বাবা রেখেছে শুভ।”
“নাইস নেম।”আর দেখতেও অনেক সুন্দর হয়েছে। এই বলে কুশান জারার ছেলেটাকে আবার ওর কোলে দিলো।
জারা তখন বললো,ভাইয়া,আপনার মেয়েও কিন্তু মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে।তোড়া ভাবি কই?ওনাকে দেখছি না যে?
” ও রুমে আছে।ডেকে দিচ্ছি আমি।”
“না,ডাকতে হবে না।আমি যাচ্ছি রুমে।” এই বলে জারা নিজে চলে গেলো তোড়ার রুমে।

হঠাৎ সোলেমান চৌধুরী কুশানকে আলাদা ভাবে ডেকে নিলো।আর বললো তোর সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে কুশান। কথাগুলো শোনার পর তোর মনের অবস্থা কেমন হবে জানি না,তবে নানু হয়ে তোর হাত ধরে বলছি,তুই প্লিজ কষ্ট পাবি না কুশান।তোর কষ্ট কিন্তু আমরা কেউই সহ্য করতে পারবো না।
“কি কথা নানুভাই?তুমি এভাবে বলছো কেনো?”

“আজ এই খুশির দিনে আমি কখনোই চাই নি তোর মনে আঘাত দিতে।আমি সবসময় তোর মুখে হাসি দেখতে চেয়েছি।কিন্তু ব্যাপার টা আর গোপন রাখতে পারলাম না।
কুশান তার নানুর কথা শুনে হা হয়ে গেলো।তার নানু এভাবে বলছে কেনো?
হঠাৎ সোলেমান তখন বললো, তোর আম্মু কামিনী আর তোর নানি মনি যে কাজটা করেছে সত্যি আমি তার জন্য অনুতপ্ত। আমি অনেক বেশি সরি,আমাকে ক্ষমা করে দিস এজন্য।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, নানুভাই আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি।আমি সবসময় একটা কথাই ভাবি আমার ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে।এজন্য আমি কাউকে দায়ী করি না।আর কাউকে দোষারোপও করতে চাই না।আমি আমার নানী মনিকে যথেষ্ট ভালোবাসি।তার ভালোবাসা,আদর কখনোই ভুলতে পারবো না।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৪২

উনি যেহেতু মারা গিয়েছেন সেজন্য সবসময় ওনার জন্য দোয়াই করি।ভুল করেও কখনো ওনাকে আমি গালমন্দ করতে পারি না।আর আমার আম্মু তার সাথেও কখনো আমি খারাপ আচরণ করতে পারবো না।তুমি আর এসব নিয়ে মাথা ঘামিও না।আর তোমাকে এর জন্য অনুতপ্ত ও হতে হবে না।যা বলার তুমি একদম ক্লিয়ার করে বলে দাও।কারণ এখন আমি সবধরনের কথা শোনার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি।
সোলেমান চৌধুরী এবার কোনো সংকোচ ছাড়াই বললেন,জামিলাই তোর নিজের আম্মু হয়।আর জারা তোর নিজের আপন বোন।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৪৪