প্রণয় পর্ব ১৭

প্রণয় পর্ব ১৭
তানিশা সুলতানা

গালে হাত দিয়ে চোখ দুটো বড়বড় করে সূচকের দিকে তাকিয়ে আছে তানহা। এই লোকটা সত্যি সত্যি ওকে চর মারলো?
দাঁত গুলো মনে হয় নরে গেছে। কেমন ব্যাথা করছে। গালটা গরম হয়ে গেছে।
শ্যামলা গালটা লাল হয়ে গেছে।
অভিমান বেরে যায় তানহার।

চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে তানহার।
কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।
সূচককে পেছন ঘুরে বসে পড়ে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
“এবার যা জলদি
সূচক ঠাক করে তানহার পাশে শুয়ে পড়ে বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আমি যাবো না তোর সাথে।
বাজে ছেলে, হনুমান, বদমাশ, গু*ষ্ঠি কিলাই ভালোবাসার।
চিৎকার করে বলে তানহা। রাগে হাত পা থরথর করে কাঁপছে। হাতের কাছে থাকা বালিশ সূচকের দিকে ছুঁড়ে মারে। বালিশটা সূচকের মুখের ওপর এসে পড়ে।
“আস্তে কথা বল।

সূচক মুখের ওপর থেকে বালিশ সরিয়ে দুই হাতে কান চেপে ধরে বলে।
” কানের পোকা মেরে ফেলবি তো।
“আমি তো তোকেই মে*রে ফেলতে চাই।
হাতের ফোনটা সূচকের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে। সূচক ফোনটা কেচ ধরে ফেলে।
তমা বেগম দৌড়ে আসে খুন্তি হাতে নিয়ে।
“কি হয়েছে? চিল্লাচিল্লি করছিস কেনো?

চোখ পাকিয়ে বলেন উনি। মাকে দেখে তানহা আরও জোরে কান্না শুরু করে দেয়।
” মা এই ছেলে আমাকে মেরেছে।
গাল দেখিয়ে বলে।
“এমনি এমনি তো মারে নি। কথা শুনিস নি তাই মেরেছে।
তমা বেগম বলে। তানহার কান্না থেমে যায়। ফ্যাল ফ্যাল করে মায়ের দিকে তাকায়।
” কখন থেকে বলছি রেডি হতে। কথাই শুনছে না।

বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে সূচক। তারপর তানহার ফোন ঘাটতে শুরু করে।
“তা শুনবে কেনো? ডাক্তার দেখালে তো সর্দি সেরে যাবে। তাই যাবো না। বারো মাস নাক টানতে টানতে তো ওর অব্ভাস হয়ে গেছে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলেন উনি।

তানহা গাল ফুলিয়ে ফুঁপাতে থাকে। এটা নাকি ওর মা। একবারও মেয়ের দিকটা ভাবলো না।
” এখনি জামা পাল্টাতে না গেলে খুন্তির বাড়ি খাবি তুই।
জামা তানহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন উনি।
“এই লোকটাকে কবে জানি আমি খু*ন করে ফেলবো বলে দিলাম।
রাগে গজগজ করতে করতে জামা নিয়ে অন্য রুমে চলে যায় তানহা।
সূচক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আস্ত একটা ঘাড় ব্যাকা মেয়েটা।

কাকিমা চলে যায়। সূচক এখনো দাঁড়িয়ে আছে তানহার রুমে। কারণ ওর জানা আছে এখনি তানহা চলে আসবে।
কেনোনা জামা নিয়েছে শুধু তার সাথে প্রয়োজনীয় কিছুই নেয় নি।
সূচকের ভাবনাকে সত্যি প্রমাণ করে তানহা হাজির হয়।
” থাপ্পড়ের জন্য ধন্যবাদ দিবি জানি। তাই আগে থেকেই ওয়েলকাম বললাম।
আর হ্যাঁ থাপ্পড়টা ফেসবুক আইডি খোলার জন্য।

বলেই চলে যায় সূচক। তানহা ভেংচি কাটে।
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে রেডি হয়ে আসে তানহা। সূচক এতোখন অপেক্ষায় ছিলো তানহার। তানহাকে রুম থেকে বের হতে দেখে হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়ায়।
“মা আসছি বলেই হাঁটতে শুরু করে।
তানহাও পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে।

বাড়ির সামনে খুব সুন্দর একটা বাইক দেখে রীতিমতো হা হয়ে যায় তানহা। ছোট বেলা থেকেই সূচকের খুব ভালো একটা বাইক কেনার ইচ্ছে। কিন্তু বড় বাবা কিনে দেয় নি। ইচ্ছে করে দেয় নি এমন নয়। সামর্থ্য হয় নি।
সূচক বাইকে বসে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে হেলমেট পড়ে নেয়। তানহা মুচকি হাসে। এতখনে সূচকের বাড়ি ফিরে আসার কারণ বুঝতে পারলো। বাইক কিনে দিয়েছে বলেই ফিরে এসেছে।

“দাঁড়িয়েই থাকবি?
সূচক জিজ্ঞেস করে। তানহা নিঃশব্দে সূচকের কাঁধে হাত দিয়ে বাইকে বসে।
” আমাকে শক্ত করে ধরে বসবি বুঝলি?
“হুমমমম
সূচক বাইক চালানো শুরু করে। দারুণ লাগছে মুহুর্তটা।

তোহা আজকে একা একা ঘুরতে বের হয়েছে। তানহা বাসায় নেই। একা একা বিরক্ত লাগছে। তাজকে বলেছিলো সে কার্টুন দেখবে।
আজকে খুব করে ইমনদের বাড়ির ওই রাস্তার দিকে যেতে ইচ্ছে করছে তোহার। কয়েকদিন দেখে না ইমনকে। হয়ত বিজি।
কানে হেডফোন গুঁজে পছন্দের একটা গান প্লে করে রাস্তার পাশ ঘেসে হাঁটছে।
একা একা থাকলেই ইমনের কথা খুব করে মনে পড়ে যায়। মানুষটার প্রতি দুর্বলতা কমে না তোহার। হয়ত এটাই ভালোবাসা

কিন্তু ওই মানুষটা কি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?
কখনোই না।
হঠাৎ করে ফোনটা কেঁপে ওঠে। ভাইব্রেশনে করা রেখেছিলো। স্কিনে ইমন নামটা জ্বল জ্বল করছে। ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকায় তোহা। এতোদিন পরে ওই মানুষটা? কেনো?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোনটা রিসিভ করে তোহা।

“কান থেকে হেডফোন খোলো।
হেলো বলার আগেই কথাটা ভেসে আসে। তোহা হেডফোন খুলে এদিক ওদিক তাকায়।খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। সামনেই ইমন ইরিন আর পিচ্চিটাকে দেখতে পায়। পিচ্চিটা ইমনের কোলে। ইরিন এক গাল হেসে হাত নারিয়ে যাচ্ছে।
তোহাও আলতো হাসে। ওদের দিকে এগিয়ে যায়।
“কতোখন ধরে ডাকছি তোমায়।
ইরিন তোহাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে।

” সরি আপু কানে হেডফোন ছিলো।
তোহা সৌজন্যের হাসি দিয়ে বলে।
“ইটস ওকে
দেখো আমার রাজকন্যা কতো বড় হয়ে গেছে। নাম দিয়েছি তুলতুল।
তোহা বাবু টার দিকে তাকায়। সত্যিই বড় হয়ে গেছে। একদম পুচকে দেখেছিলো তোহা। একটু হেসে বাবু টার হাত ধরে তোহা।

” চলো তোহা। ওই দিকে বসি। তোমার সাথে কথা আছে আমার। আমরা তোমাদের বাড়িতেই যাচ্ছিলাম।
তোহা ইরিনের সাথে যায়। রাস্তার পাশে ফুসকার দোকান। বাবুকে ইরিনের কোলে দিয়ে ইমন তিনটে চেয়ার নিয়ে আসে।
“তোহা কি করছো এখন? মানে পড়াশোনা?
ইরিন জানে বোকার মতো প্রশ্ন করে বসেছে তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখে।
তোহা মুচকি হাসে।

বাড়ি থেকে অনেকটা দুরে চলে এসেছে ওরা। মেইন রোড পেরিয়ে গ্রামের দিকে। কাঁচা রাস্তা দুই ধারে নদী। একটা বড় গাছের নিচে বাইক থামায় সূচক। তানহা নেমে যায়।
সূচক হেলমেট খুলে চুল ঠিক করতে করতে নামে।
” তানহা আমায় বিয়ে করবি?

সূচকের কথায় চমকে ওঠে তানহা। বড়বড় চোখ করে তাকায় সূচকের দিকে।
সূচক সানগ্লাস খুলে শার্টের সাথে রেখে তানহার ডান হাতটা টেনে নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেয়।
“আমরা এখন এই মুহুর্তে বিয়ে করবো তানহা।

কাউকে বলবো না বিষয়টা। শুধু আমি তুই আর আমার বন্ধুরা জানবে।
বিশ্বাস কর তানহা আমি খুব ভালো রাখবো তোকে। দুনিয়ার সব সুখ তোর পায়ের কাছে এনে দেবো আমি।তুই শুধু আমার হয়ে যা।

প্রণয় পর্ব ১৬

হবি আমার?
খুব ভালোবাসবো তোকে। সুখের চাদরে মুরিয়ে রাখবো।

প্রণয় পর্ব ১৮