শেষটা সুন্দর পর্ব ৪৩

শেষটা সুন্দর পর্ব ৪৩
জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা

স্ক্রিনের উপরে ভেসে উঠা নামটা দেখে সাদরাজ বেশ অবাক হয়। সে তার পি.এ’র দিকে চেয়ে বলল,
‘সূর্য আজ কোনদিকে উঠল বলতো? রাবীর খান আমাকে কল দিচ্ছে।’
তার পি.এ ও কথাটা শুনে বেশ অবাক হয়। সাদরাজ কল রিসিভ করে। হেসে বলে,

‘কলটা কি ভুলে চলে এসেছে নাকি খান সাহেব?’
রাবীর ও মৃদু হাসে। বলে,
‘খান সাহেব ভুলে কোনো কাজ করে না। যা করে ভেবে চিন্তে করে।’
‘আচ্ছা। তা, হঠাৎ কী ভেবে তোমার আমার কথা মনে পড়ল শুনি? উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই ভালো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার উদ্দেশ্য সবসময়ই ভালোই থাকে; কেবল কিছু মানুষ সেটা বুঝতে পারে না। যাকগে সেসব, তোমাকে ইনভাইট করতে কল দিয়েছি। কাল আমার আর মেহুলের রিসিপশন। তোমার ওয়াইফকে নিয়ে সেন্টারে চলে এসো।’
‘বাবা, রাবীর খান নিজে আমাকে ইনভাইট করছে! তাহলে তো যেতেই হয়।’
‘হ্যাঁ, তোমরা এলে আমিও খুব খুশি হব।’

সাদরাজ হেসে ফোন কাটে। পি.এ’র দিকে চেয়ে বলে,
‘রাবীর খান তার রিসিপশনের জন্য ইনভাইট করেছেন। তাহলে তো যেতে হবেই।’
পি.এ চিন্তিত সুরে বলল,
‘এমনি এমনি নিশ্চয়ই উনি কিছু করছেন না। উনার আবার অন্য কোনো ইনটেনশন নেই তো?’
সাদরাজ হাসে। বলে,

‘না না, রাবীর খান খুব ভালো করেই জানেন আমার হাতে এখন একটা দামি জিনিস আছে। উনি এখন আর কোনো চালাকি করবেন না। আর করলেও পাল্টা চাল তো আমি দিতেই পারব। আমার কাছে তো সেই অস্ত্র আছেই।’

মাগরিবের আযান হয়েছে কিছুক্ষণ হলো। মেহুল বিকেলের দিকে ঘুমিয়েছিল। এখন তার ঘুম ভেঙ্গেছে। তাই সে ফ্রেশ হয়ে এসে রাবীরকে সে কল দেয়। রাবীর কল রিসিভ করলে সে বলে,
‘হ্যালো, আপনি কখন আসবেন?’
‘এই তো রওনা দিয়েছি।’
‘আচ্ছা আসুন, রাখছি তাহলে।’
‘ঠিক আছে।’

রাবীরের সাথে কথা বলা শেষ করে সে নিচে রান্নাঘরে যায়। রান্নাঘরে তখন কেউ ছিল না। মেহুল ভাবছে কিছু একটা নাস্তা বানাবে। যদিও সে তেমন কিছু পারে না। ড্রয়িং রুম থেকে তখন হাসাহাসির শব্দ আসছিল। রাবীরের কাজিনরা বোধ হয় সবাই সেখানেই। সেও তাই ড্রয়িং রুমে যায়। ওদেরকে জিজ্ঞেস করে,

‘তোমরা নাস্তায় কী খাবে?’
সবাই বেশ উৎসুক হয়ে পড়ে তখন। একজন বলে,
ভাবি, আমি চিকেন ফ্রাই খাব। তো আবার আরেকজন বলে, ভাবি, আমি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। আবার অন্যজন বলে, ভাবি, আমার জন্য প্লিজ নুডুলস বানিও।
সবার এত এত খাবারের লিস্ট দেখে মেহুল অসহায়ের মতো ভাবে, “কেন যে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম।”
তাও সে হেসে বলে,

‘আচ্ছা, আমি বানিয়ে দিচ্ছি।’
পরে সে রান্নাঘরে চলে আসে। রান্নাঘরে গিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে সে দাঁড়িয়ে থাকে। বিরক্ত হয়ে বলে,
‘ধুর, আমি এতকিছু পারি নাকি? এসব তো রিতা পারতো। ও যে কত রকমের নাস্তা বানাতে পারে। ইস, তখন যদি একটু ওর থেকে শিখে নিতাম তাহলে আজ আর আমার এই অবস্থা হতো না।’

মনে মনে ভীষণ আফসোস করে মেহুল কিছু আলু আর ফ্রিজ থেকে একটা মুরগী বের করে আনল। চিকেন ফ্রাই করতে পারবে কিন্তু, এই মুরগী কাটতে পারবে না। সে অসহায় ভাবে মুরগীর দিকে চেয়ে আছে। তখনই খালা রান্নাঘরে আসেন। মেহুলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করেন,

‘কী খালা, কিছু রানবেন?’
মেহুল খালাকে দেখে খুশি হয়। বলে,
‘জি, আমাকে কি তুমি একটু মুরগীটা বানিয়ে দিতে পারবে?’
‘হ, এক্ষুনি দিতাছি।’
মেহুল যেন তখন হাফ ছেড়ে বাঁচে।

মেহুল রান্না করছিল আর গুনগুন করে গান গাইছিল। যদিও সে খুব একটা খেয়ালে গান গাইছে না। রান্নার প্রতি মনোযোগে সে নিজেও বুঝতে পারেনি সে যে গান গাইছে। হুট করেই তখন পেছন থেকে তার শাশুড়ি এসে বলেন,
‘সব জায়াগায় গান গাওয়া ঠিক না।’
মেহুল চমকে পেছনে তাকায়। শাশুড়ি মা’কে দেখে সে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। বিনয়ের সুরে বলে,
‘না মা, আসলে বুঝতে পারিনি।’
তার শাশুড়ি মা শক্ত গলায় বললেন,

‘ভবিষ্যতে যেন আর এমন কিছু না হয়। আর, তোমাকে রান্নাঘরে আসতে হবে না। বাড়িতে কাজের লোক আছে। পরে আবার আমার ছেলে দেখলে বলবে যে আমি তার বউকে সারাক্ষণ খাটাই।’
‘না মা, আমি তো নিজে থেকেই এসেছি। আসলে সবার জন্য একটু নাস্তা বানাচ্ছিলাম।’
‘আজকে বানিয়ে ফেল। তারপর আর বানানোর দরকার নেই। যা লাগবে খালাকে বলবে, করে দিবে।’
মেহুল মাথা হেলিয়ে বলল,

‘আচ্ছা মা।’
শাশুড়ি মা চলে যাওয়ার পর মেহুল মন খারাপ করে আবার রান্না আরম্ভ করে।
মেহুল সব রান্না করে সুন্দর করে সাজিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যায়। সবাই তো তার রান্না দেখে অবাক। সবাই হাতে হাতে যার যার প্লেট নিয়ে বসে। মেহুল বলে,

‘খেয়ে দেখো তো কেমন হয়েছে। আমি আবার রান্নায় খুব একটা পারদর্শী না।’
কিন্তু সবাই খাবার খেয়ে তার বেশ প্রশংসা করে। মেহুল মনে মনে খুশি হয়। বলে, “ভাগ্যিস, ইউটিউব ছিল। নাহলে আজকে তার কী হতো কে জানে।”
একজন বলে উঠে,

‘ভাবি, ভাইয়া এসেছে তো। যাও ভাইয়াকেও নাস্তা দিয়ে এসো।’
‘ওমা, উনি কখন এলেন?’
‘কিছুক্ষণ আগে। তুমি তখন রান্নাঘরে ছিলে।’
‘আচ্ছা, আমি আগে মা’কে দিয়ে আসি।’
‘না না ভাবি, মামি এসব খান না। ডাক্তারের বারণ রয়েছে।’

‘তাহলে মা সন্ধ্যার নাস্তায় কী খান?’
‘এক কাপ রং চা আর দুটো বিস্কিট।’
‘আচ্ছা, আমি এগুলো বানিয়ে আগে মা’কে দিয়ে আসি।’
শাশুড়ি মায়ের জন্য নাস্তা নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখে রাবীরও সেখানেই। মা তখন বলেন,

‘তোমার বউকে বারণ করেছিলাম কিছু করতে। কিন্তু সে নাকি নিজের হাতে আমাদের জন্য নাস্তা বানাবে। তাই আর না করতে পারিনি। দেখি, আমার চা দাও। খেয়ে দেখি আমার ছেলের বউ কেমন চা বানায়।’
মেহুল মৃদু হেসে চায়ের কাপটা মায়ের হাতে দেয়। তিনি চুমুক দিয়ে বলেন,
‘ভালোই হয়েছে, তবে চিনিটা আরেকটু কম হলে আরো ভালো হতো।’
‘আচ্ছা মা, পরেরবার থেকে খেয়াল রাখব।’
‘ঠিক আছে। এখন রাবীরকে নিয়ে রুমে গিয়ে তোমরাও নাস্তা করো। যাও।’

রাবীরের সামনে নাস্তা রাখতেই সে জিজ্ঞেস করে,
‘এত নাস্তা আপনি বানিয়েছেন?’
‘জি। খেয়ে দেখুন কেমন হয়েছে।’
রাবীর অল্প অল্প করে সবগুলো ট্রাই করল। তারপর বলল,
‘সবগুলোই কিন্তু বেশ ভালো হয়েছে।’

মেহুল হেসে বলল,
‘সত্যি?’
‘হ্যাঁ, সত্যি।’
মেহুলও খায়। তার কাছেও বেশ ভালো লাগে। রাবীর পরে উঠে গিয়ে অনেকগুলো বেলি ফুলের মালা এনে মেহুলের কোলের উপর রাখল। বেলি ফুল দেখে মেহুল প্রচন্ড অবাক হয়ে বলে,
‘আপনি এনেছেন?’
‘হ্যাঁ। আসার সময় সিগন্যালে দেখলাম একজন বিক্রি করছেন তাই আপনার জন্য নিয়ে এলাম।’
মেহুল হেসে বলে,

‘মনে হয় উনার কাছে যা ছিল সব নিয়ে এসেছেন।’
রাবীরও তার কথা শুনে হাসে। মেহুল বলে,
‘এবার এতগুলো আমি কী করব? কালকেই তো সব নষ্ট হয়ে যাবে।’
‘হয়ে গেলে আবার এনে দিব। সমস্যা কোথায়।’
‘এতগুলো আনতে হবে না। দুটো আনলেই হবে।’

‘আচ্ছা বাবা, দুটোই আনব।’
‘এখন তাহলে আমায় পরিয়ে দিন।’
রাবীর দুটো মালা নিয়ে দুইহাতে পরিয়ে দিল। মেহুল নাকের কাছে নিয়ে ফুলগুলোর ঘ্রাণ নিয়ে বলল,
‘আহহ, শান্তি।’
রাবীর তার দিকে চেয়ে মুচকি হাসে। মেহুল তাকিয়ে বলে,

‘আচ্ছা, কাল তো আপনি আমাকে এত দামি একটা গিফ্ট দিলেন আজও এত সুন্দর উপহার আনলেন; আপনার আমার তরফ থেকে কিছু লাগবে না?’
রাবীর বলে,
‘আপনি আমার কাছে আছেন, পাশে আছেন, আমার জন্য সেটাই অনেক বড়ো উপহার।’
মেহুল মৃদু হেসে বলে,

‘তাও আমি আপনাকে কিছু একটা উপহার দিতে চাই।’
‘আপনি দিতে চাইলে আমি অবশ্যই নিব।’
মেহুল তখন রাবীরের দিকে একটু এগিয়ে যায়। আরেকটু এগুতেই রাবীর ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘কী ব্যাপার?’
মেহুল বলে,
‘কিছু না।’

এই বলেই সে টুপ করে রাবীরের গালে একটা চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। রাবীর তো তার এই কাজে পুরো বোকা বনে যায়। সে বড়ো বড়ো চোখে মেহুলের দিকে চাইতেই মেহুল লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে,
‘এত অবাক হওয়ার কী আছে? আপনি আমাকে এত উপহার দিয়েছেন তাই আমিও আপনাকে ছোট্ট একটা উপহার দিয়েছে, ব্যস এইটুকুই।’

শেষটা সুন্দর পর্ব ৪২

রাবীর কিছু একটা বলতে চাইছিল, মেহুল সেটা না শুনেই দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সে জানে এখানে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে রাবীর তাকে লজ্জা দিতে দিতে মেরে ফেলবে …

শেষটা সুন্দর পর্ব ৪৪