শেষটা সুন্দর সিজন ২ পর্ব ৩৮

শেষটা সুন্দর সিজন ২ পর্ব ৩৮
জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা

সারাজ নিচে এসে দেখল পুতুল বেশ আয়েশ করে সোফার উপর দুই পা ভাঁজ করে বসে আছে। কোলের উপর একটা বড়ো থালা। এক হাতে টিভির রিমোট। অন্যহাতে একটু করে পরোটা ছিঁড়ছে আর মুখে পুরছে। সারাজ দুদিকে মাথা নাড়ায়। বিড়বিড় করে বলে,

‘একে দেখলে কেউ বলবে, এ এই বাড়ির নতুন বউ?’
সে গিয়ে দাঁড়াল পুতুলের সম্মুখে। এমনভাবে দাঁড়াল যে, পুতুলের টিভি দেখায় বিঘ্নিত হলো। ভ্রু কুঁচকে সারাজের মুখের দিকে চাইল পুতুল। ক্ষিপ্ত সুরে বলল,
‘দেখছ না টিভি দেখছি, সরো সামনে থেকে।’
নড়ল না সারাজ। পুতুল চেঁচিয়ে উঠল ততক্ষণাৎ,
‘মামনি, তোমার ছেলে দেখো না কী করছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রান্নাঘর থেকে ছুটে এল রিতা। কপাল কুঁচকে চাইল ছেলে আর ছেলের বউয়ের দিকে। অতঃপর প্রশ্ন করল,
‘কী হয়েছে, পুতুল?’
পুতুল কিঞ্চিৎ ক্রোধ নিয়ে বলল,
‘মামনি, তোমার ছেলে আমাকে টিভি দেখতে দিচ্ছেন না। উনাকে সামনে থেকে সরতে বলো।’
রিতা সারাজের দিকে তাকাতেই সারাজ উল্টো আরো ক্ষোভ দেখিয়ে বলল,
‘জানো আম্মু, তোমার এই আদরের মেয়ে কী করেছে?’
‘কী করেছে?’

রিতা প্রশ্ন করে। সারাজ পুতুলের দিকে এক পলক চেয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
‘সে এখনও আমাকে ভাই বলেই ডাকছে। তুমিই বলো নিজের হাজবেন্ডকে কে ভাই ডাকে?’
রিতা বড়ো বড়ো অক্ষি মেলে পুতুলের দিকে চাইল। জিজ্ঞেস করল,
‘তুই এখনও ওকে ভাই ডাকিস, পুতুল? এটা কেমন কথা হলো?’
উঠে দাঁড়াল পুতুল। বসে বসে তর্কে জেতা সম্ভব না। রিতার নিকটে দন্ডায়মান হয়ে বলল,

‘ভাই কি আর সাধে ডেকেছি? তোমার ছেলে কী করেছে দেখো; ক্লিন শেভ করে একদম ছিলা মুরগী সেজে এসেছে। ওহ! তুমি তো মুরগী হবা না, মোরগ হবা। স্যরি।’
পুতুলের কথা শুনে রিতা শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে হাসে। অন্যদিকে ক্রোধে ফেটে পড়ে সারাজ। এইটুকু একটা মেয়ে তাকে এত বড়ো একটা অপমান করল। রাগে নিশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। তেড়ে আসে পুতুলের দিকে। পুতুল চট করে রিতার পেছনে লুকিয়ে বলে,

‘মামনি, তোমার ছেলেকে সাবধান করো। আগে বোন ছিলাম বলে যখন তখন এসে ঠাস ঠুস মেরে দিয়েছে। এখন মারতে আসলে কিন্তু একদম মামলা ঠুকে দিব।’
সারাজ তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘আম্মু, তুমি কিছু বলছো না কেন?’
কোনোরকমে হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখে চাইল রিতা। অতঃপর বলল,

‘খারাপ কী বলেছে পুতুল? তোকে ক্লিন শেভে কেমন লাগছে!’
‘তাই বলে ও আমাকে ছিলা মুরগী বলবে?’
বাজখাঁই শোনাল সারাজের গলার স্বর। পুতুল আঙ্গুল নাড়িয়ে বলল,
‘না না, ওটা মোরগ হতো; ভুলে মুরগী বলে ফেলেছি।’
‘পুতুল!’

ধমকে উঠল সারাজ। পুতুল পাত্তা দিল না সেসবে। সে রিতার পেছনে দাঁড়িয়ে দিব্যি তার শাড়ির আঁচল দিয়ে আঙ্গুল পেঁচিয়ে যাচ্ছে। সারাজ ফোঁস ফোঁস করতে করতে নিজে থেকেই বলল,
‘আম্মু, ওকে বলে দিও, ওর মুখে যেন আমি আর একবারও ভাই ডাক না শুনি।’
পুতুল মাথাটা একটু এগিয়ে বলল,
‘আচ্ছা সারাজ ভাই, মনে থাকবে।’
সারাজ ফের জ্বলে উঠে বলল,

‘এবার তুই সত্যিই আমার হাতে মার খাবি, পুতুল।’
রিতা গর্জে উঠে বলল,
‘ওকি সারাজ, তুই পুতুলকে “তুই” বলে সম্বোধন করছিস কেন? বউকে কেউ তুই বলে?’
পুতুল তাল মিলিয়ে বলল,
‘হ্যাঁ, তাই তো। নিজে তুই বললে সমস্যা নেই, আর আমি ভাই বললেই যত সমস্যা।’
সারাজ উঁচু আওয়াজ তুলে বলল,

‘অবশ্যই সমস্যা। বউকে “তুই” বলে সম্বোধন করলে সম্পর্ক পাল্টে যায় না। কিন্তু জামাইকে “ভাইয়া” বলে সম্বোধন করলে সম্পর্কে গোলমাল লাগে। তাই আজকের পর থেকে “ভাই” শব্দটা মুখেও আনবি না।’
‘আর তুইও পুতুলকে “তুমি” করেই বলবি। “তুই” শুনতে খারাপ দেখায়।’
সারাজ হাত ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে বলল,
‘ঠিক আছে, বলব। এখন খেতে দাও; খেয়ে আবার একটু অফিসেও যেতে হবে।’
রিতা বলল,

‘ঠিক আছে। তুই ডাইনিং এ গিয়ে বস, আমি খাবার আনছি।’
রিতা চলে যেতেই পুতুল ধীর পায়ে এগুতে নিলেই সারাজ তার ওড়না টেনে ধরে। তা দেখে লাজুক স্বরে পুতুল বলে উঠে,
‘ইশ! কী করছ, সারাজ ভাই? কেউ দেখবে তো।’
সারাজ চোয়াল শক্ত করে চাইল। ক্রূর হাসল পুতুল। সারাজের অত্যন্ত নিকটস্থ হয়ে দাঁড়াল। তারপর স্মিত সুরে বলল,
‘আগামী এক সপ্তাহ তোমাকে ভাই’ই ডাকব। এক সপ্তাহে দাঁড়ি উঠে যাবে না?’
সারাজ ক্ষিপ্ত সুরে বলে উঠল,

‘আজকাল খুব সাহস হয়েছে, না? ফাজিল মেয়ে, বেশি বাড়াবাড়ি করিস না।’
আরো একটু এগিয়ে এল পুতুল। সারাজ সতর্ক দৃষ্টিতে একবার আশেপাশে তাকাল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘এখন কেউ দেখছে না?’
‘দেখুক, আমি কাউকে ভয় পায় না-কি?’
নির্লিপ্ত শোনাল তাকে। সারাজের ভ্রু যুগলের ভাঁজ আরো দৃঢ় হলো। সন্দিহান কন্ঠে বলল,
‘কী চলছে মনে?’
পুতুল গন্ঠের স্বর আরো মিইয়ে বলল,
‘প্রেম।’

ফিচেল হাসল সারাজ। বলল,
‘রুমে চল। আমিও তোর মনের প্রেমকে একটু দেখি।’
সারাজ পুতুলের হাত ধরার জন্য উদ্যত হতেই পিছিয়ে যায় সে। অতঃপর জোরে শ্বাস টেনে গম্ভীর স্বরে বলে,
‘শুনো, তোমাকে আমি “ভাই” ডাকা বন্ধ করতে পারি, তবে একটা শর্ত আছে।’
ফের ভ্রু কুঁচকাল সারাজ। নিঃস্পৃহ সুরে বলল,

‘থাপড়িয়ে সব দাঁত ফেলে দিলে, শর্ত ব্যতিত’ই “ভাই” ডাকা বন্ধ হয়ে যাবে। দিব?’
কোমরে হাত রেখে কড়া চোখের দৃষ্টি সারাজের উপর বর্তিয়ে পুতুল বলল,
‘ঐসব হুমকি দুমকি তে কিছুই হবে না, সারাজ ভাই। আমার শর্ত না মানলে আমি অবশ্যই “ভাই” ডাকব। একশো বার বলব; হাজার বার বলব। এখন তুমি’ই ভেবে নাও, কী করবে।’
সারাজ স্বীয় সুপ্ত ক্রোধ দমিয়ে বলল,
‘ঠিক আছে। বল, কী শর্ত?’

খুশিতে চকচক করে উঠল পুতুলের ফরসা মুখ। ঝরঝরে আওয়াজে বলল,
‘রিসিপশনের পর আমাকে হানিমুনে নিয়ে যেতে হবে।’
সারাজ ফিচেল হাসল। বলল,
‘তোর তো দেখছি আর তর সইছে না।’
পুতুল সরু চোখে চেয়ে বলল,

‘হ্যাঁ, তো কী হয়েছে? তোমাকে দিয়ে তো ভরসা নেই। দেখা যাবে, রিসিপশনের পর অফিসের কাজ নিয়ে এত বিজি হয়ে যাবে যে তখন আর এসব মনেই থাকবে না।’
সারাজ জিজ্ঞেস করল,
‘তো, কোথায় যেতে চাচ্ছিস?’
পুতুল ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,
‘যেখানে যেতে চাইব, সেখানেই নিয়ে যাবে?’

‘চেষ্টা করব, বল।’
‘ভারতের আগ্রায়। তাজমহল দেখতে যাব।’
সারাজ পুতুলকে পাশ কাটিয়ে ডাইনিং এ গিয়ে বসল। পুতুলও এল তার পেছন পেছন। সারাজ জিজ্ঞেস করল,
‘ভিসা আছে তোর?’
‘ভিসা লাগবে না। ট্রেনে যাব।’
‘বাহ, সব ভেবে রেখেছিস দেখছি।’

‘হ্যাঁ, যাতে তুমি কোনো টাল বাহানা করতে না পারো।’
ক্ষুব্ধ চোখে চাইল সারাজ। বলল,
‘তুই না বললে এমনিতেও আমরা হানিমুনে যেতাম।’
পুতুল ফের গিয়ে তার পূর্বের স্থানে বসল। ড্রয়িং-কাম-ডাইনিং হওয়ায় ওখান থেকে বসেই সে বলল,
‘আচ্ছা, মেনে নিলাম তোমার কথা। এবার বলো, আমার বাসর রাতের গিফ্ট’টা আমার হাতে পুরোপুরি অর্পণ কখন করবে?’
সারাজের মনে পড়ল সেটা। বলল,
‘ও হ্যাঁ, তোর স্কুটি গ্যারেজে আছে। খাওয়ার পর বের করে দিব।’

খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে বাইরে এসে দাঁড়াল পুতুল আর সারাজ। পুতুল গেরেজের বাইরেই অবস্থান করছে। ভেতরে সারাজ। স্কুটিতে বসে নিজেই চালিয়ে বাইরে নিয়ে আসল সেটা। স্কুটি দেখে খুশিতে চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে পুতুলের। হালকা গোলাপী রঙের ভীষণ চমৎকার এই জিনিসটা। পুতুলের মারাত্মক পছন্দ হয়েছে। সে এগিয়ে এসে আপ্লুত সুরে বলল,

‘কী সুন্দর এটা!’
‘পছন্দ হয়েছে?’
পুতুল সারাজের পানে চেয়ে বলল,
‘এত সুন্দর জিনিস; পছন্দ না হয়ে উপায় আছে? আচ্ছা, আজ থেকে তবে এটা শেখানোর দায়িত্ব তোমার।’
ছোট্ট শ্বাস ফেলে সারাজ। বলে,
‘তা তো আমাকে নিতেই হবে।’
আরেকদফা খুশিতে মজে যায় পুতুল। সেই খুশির বহিঃপ্রকাশ করতে সে তার কোমল ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয় সারাজের কপোলে।

শেষটা সুন্দর সিজন ২ পর্ব ৩৭

(আগামীকাল বাসায় মেহমান আসবে। তখন বোধ হয় একটু ইররেগুলার হতে হবে

শেষটা সুন্দর সিজন ২ পর্ব ৩৯