শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৭ || নন্দিনি চৌধুরী || SA Alhaj

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৭
লেখিকা নন্দিনি চৌধুরী

আরিশের সামনে বসে আছে মেহের।আরিশ মাথানিচু করে বসে আছে।মেহের তাকিয়ে আছে আরিশের দিকে।এক বছরের অনেক চ্যাঞ্জ হয়ে গেছে আরিশ।আগের থেকে চেহারা ফেকাসে হয়ে গেছে।মেহের আসতে করে বলা শুরু করলো,
মেহেরঃতোমার সব সম্পত্তি আমার কাছে আছে।আমি সব গুলো সিল থেকে ছাড়িয়ে এনেছি।তুমি এগুলা এখন নিয়ে নেও আর নতুন ভাবে সব কিছু শুরু করো।
আরিশঃনতুন ভাবে!

মেহেরঃহ্যা নতুন ভাবে।তোমার সাথে যা হয়েছে সেটা আমি বদলাতে পারবোনা।আমার বোনকে আমি তোমার হাতে দিতে পারবোনা।মানছি তুমি ষড়যন্ত্রের স্বিকার ছিলে।কিন্তু আমার বোনকে তুমি অনেক অপমান করেছো কষ্ট দিয়েছো।পরোকীয়ার মতো পাপ কাজে জরিয়েছো।আর আমার বোন নিজেও কোনোদিন তোমার কাছে আসবেনা।এখন তার জীবনে সাদাফ আছে।সাদাফ মুগ্ধকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে।আমি চোখ বুজে সাদাফকে বিশ্বাস করতে পারি।আমার কিছু হয়ে গেলে সাদাফ আমার বোনকে আগলে রাখবে।তাই তুমি নতুন ভাবে শুরু করো চাইলে সায়মার সাথেই করতে পারো সেটা।যখন সায়মা জেল থেকে ছাড়া পাবে।তবে সেটা তোমার নিজের একান্ত ইচ্ছা।চাইলে অন্য কারো সাথে শুরু করতে পারো নতুন ভাবে।
আরিশ হালকা হেসে বলে,

আরিশঃনতুন করে শুরু করার কিছুই নেই ভাইয়া।আমি যা করেছি তার শাস্তি পেয়েছি।এতে আমার আফসোস নেই।আমার আফসোস এটাই আমি অন্যের কথা বিশ্বাস করে নিজের স্ত্রীকে অবিশ্বাস করেছি।হ্যা অবিশ্বাস করে পরোকীয়ায় জরিয়ে গেলাম।এটাতো আর আমি না বুজে করিনি।বুজেই করেছি আমি চাইলেই পারতাম সায়মার সাথে ইন্টিমেট না হতে কিন্তু আমি হয়েছি।এটা আমার ভুল অনেক বড় ভুল।আমি আমার স্ত্রীকে ছেড়ে দিলাম।সমাজের মানুষ ওকে অপমান করেছে তেমন আমিও করেছি।ওর কান্না সেদিন আমি আমলে নেইনি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমার ভালোবাসার খাত ছিলো তাইতো আমি অন্যের কথা মেনে নিজ স্ত্রীকে ছেড়ে অন্য কাউকে জীবনে এনেছিলাম।আজ যদি সত্য না সামনে আসতো আমি সায়মাকে নিয়েই থাকতাম।মুগ্ধের প্রতি আর ভুল বুজাটাই রয়েযেতো।আজ সত্য আমার সামনে সব জেনে এখন মুগ্ধের কাছে গেলে তা হবে কাপুরুষ এর মতো কাজ।কিন্তু অন্য দিকে সাদাফ তার ভালোবাসা একদম খাঁটি।তাকেও তো সায়মা ভুল বুজিয়েছিলো।কই সেতো মুগ্ধকে ভুলে অন্য কারো সাথে জরায়নি।মুগ্ধকে ভালোবেসেগেছে।আজ সত্যি সামনে আসাতে তার মুগ্ধ তার হয়ে গেছে।অথচ মুগ্ধ আমার স্ত্রী ছিলো সাদাফের কাজটা আমার করার কথা ছিলো আমি তা করিনি।

আমি না স্বামী হতে পেরেছি না হতে পেরেছি ভালো মানুষ।মুগ্ধকে না পাওয়ার আফসোস নেই শুধু আফসোস থাকবে ওর কাছে মাফ চাইতে পারলাম না।আর সায়মার সাথে নতুন করে শুরু করার কোনো ইচ্ছা নেই।ওকে শুধু আম ঘৃণা করি।ওর সাথে এতোদিন ছিলাম সেটা ভাবলেই ইচ্ছা করে নিজের শরীর নিজে কেটে ফেলি।কিন্তু সেটা করতে পারিনা।আমার জীবনে আর কোনো নতুন শুরু করার ইচ্ছা নেই আমার।আমার জীবনে সব শেষ সেখান থেকে শুরু করার কোনো মানেই নেই।আমি যেভাবে এখন আছি সেভাবেই আলহামদুলিল্লাহ।বাকি জীবনটা একাই কাটিয়ে দিতে চাই।দুইবার বিয়ে নামক পবিত্র জিনিশটা নিয়ে হেলামি করেছি আর তা করতে চাইনা।

মেহেরঃসব বুজলাম।তোমার পারসোনাল লাইফে মাথা ঘামাতে চাইনা।তাহলে তুমি তোমার এই প্রোপার্টি গুলো নিয়ে নেও।আবার শুরু করো তোমাদের বিজনেস।
আরিশঃনা এই প্রোপার্টি আমি নেবোনা।এগুলা আপনি দান করেদিন কোথাও।আমার বাবা কোনো অনৈতিক কাজ করে এই ব্যবসা করেনি।সৎ থেকে করেছে।কিন্তু আমাদের ম্যানেজার আমাদের পিঠে ছুড়ি বসিয়েছ।আমার উচিত ছিলো সেদিক দেখা।কিন্তু আমি দেখিনি।অই সব পঁচা জিনিস খেয়ে কত লোক প্রান হারিয়েছে।আমার দরকার নেই এসবের আর।আমি নিজের যোগ্যতায় কিছু করবো।জানি আল্লাহ আমার উপর নারাজ।কিন্তু আমার বিশ্বাস আমি আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে যেতে থাকলে আল্লাহ মাফ করবেন।

মেহেরঃঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছা কিন্তু কোনোদিন যদি আমাকে প্রয়োজন হয় তাহলে জানিও।আমি তোমাকে সাহায্য করবো।আর হ্যা এই নেও মুগ্ধের বিয়ের কার্ড।জানি তুমি ভাবছো এটা তোমাকে দিচ্ছি কেন।তুমি এটা দেখে কষ্ট পাবে।কিন্তু একজন বন্ধু হিসাবে এসে দেখে যেতে পারো মুগ্ধকে।আসি আজকে।
আরিশঃজি আসসালামু আলাইকুম।
মেহেরঃওয়ালাইকুমুস সালাম।আল্লাহ হাফেজ।

আরিশ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে এক সপ্তাহ হয়েছে।জেল থেকে বেরিয়ে শুন্য পকেটে সে কি করবে জানেনা।তাই এক কাছের বন্ধুর কাছে যায়।সে আরিশের ব্যাপারে সব জানে।সেই বন্ধু আরিশকে নিজের কাছে থাকতে দেয়।আরিশ একটা কারখানায় শ্রমিকের কাজে জয়েন হয়েছে।এখন সে একদম সাধারন ভাবে জীবন ব্যয় করছে।যেই কারখানায় আরিশ কাজ করে সেই কারখানার মালিকের থেকে মেহেরের কম্পানির লেনদেন হয়।মেহের যখন জানতে পারে আরিশ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে তখন ওর সাথে কথা বলার জন্য খোজে কিন্তু পায়না।পরবর্তীতে এই কারখানায় আরিশের খোজ পায় তারা।এরপর আজকে মাহির কথা বলতে এসেছে আরিশের সাথে।

সাদাফ আর নুগ্ধ এসেছে বিয়ের কেনাকাটা করতে এর তিনদিন পর তাদের বিয়ে।সাদাফ মুগ্ধের জন্য সব খুটিয়ে খুটিয়ে নিচ্ছে।তার একটাই কথা তার মেহুরানীকে যেনো বিয়ের দিন কোনো কমতি না থাকে।কেনা কাটা শেষে কিছুক্ষন ঘুরেফিরে বাসায় আসে তারা।রাতে খাওয়ার টেবিলে মেহের আরিশের কথা গুলো জানায় মুগ্ধকে।মুগ্ধের খারাপ লাগছে আরিশের জন্য।কিন্তু তার কিছুই করার নেই।

দেখতে দেখতে সাদাফ মুগ্ধের বিয়ের দিন চলে আসলো।আজকে ওদের গায়ে হলুদ।নেহের একমাত্র চড়ুইপাখির বিয়ে কোনো কিছুর কমতি সে রাখেনি।অনেক ধুমধাম করে অনুষ্টান করে বোনের বিয়ে দিচ্ছে সে।রুহি মুগ্ধের মায়ের রেখে যাওয়া গহনা গুলো সব মুগ্ধকে দিয়েছে।মুগ্ধ নিতে চাইছিলোনা কিন্তু রুহির একটাই কথা এই গহনা গুলায় মুগ্ধের অধিকার আছে মুগ্ধই নেবে এগুলো।অগ্যত্তা মুগ্ধ নেয় গহনা তবে সব নয় কিছু নেয় আর কিছু রুহিকে দেয় যদি মেয়ের অধিকার থাকে মায়ের গহনায় তবে ছেলের বউয়েরো রয়েছে তাতে অধিকার।

মুগ্ধকে একটা হলুদ লাল মিশানো শাড়ি পড়ানো হয়েছে।সাথে কাঁচা ফুলের গহনা পড়ানো হয়েছে।সাদাফ মুগ্ধের এক সাথে হলুদ দেওয়া হবে।স্টেজে এনে বসানো হয়েছে মুগ্ধকে।একটু পর সব গুলা লাইট অফ হয়ে গেলো।অন্ধকারে একজন এসে দাঁড়ালো তার উপর লাইট জ্বালানো হলো।লোকটা আর কেউনা সাদাফ।হলুদ রং এর পাঞ্জাবি পরেছে চুল গুলো স্পাইক করা।হাতে ব্লাক বেল্টের ঘড়ি।আর হাতে গিটার।গিটার বাজিয়ে গান ধরলো।

“Duya Bhi lagena Mujhey”
“Dawa bhi lagena mujhey”
“Jabse dil ko mere tu laga hein”
“Neend Raaton ki meri”
Chahat Baaton ki meri”
“Chain ko bhi mere”
Tune yu thaga hai”
“Jab saansey bharu mai”
“Band aankhey kru mai”
“Nazar tu yaar aayaa”
“Dil Ko karar aya”
“Tuj pe hein peyar aya”
“Pehli pehli bar aya O yaaraaaaaa”

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৬

গান গাইতে গাইতে মুগ্ধের কাছে চলে এলো তারপর গিটার রেখে পাশে বসে পরলো তারপর মুগ্ধের কপালে ভালোবাসার পরস দিয়ে দিলো।মুগ্ধ পরশ আবেসে তা গ্রহন করলো।এরপর সবাই সাদাফ মুগ্ধকে সবাই একে একে হলুদ ছুয়ে দিলো।অনেক আনন্দ করলো সবাই হলুদে।হলুদ শেষ হয়েছে রাত ১টায়।মুগ্ধ নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হলো।ফ্রেশ হয়ে এসে মুগ্ধ বিছানায় শুতেই ফোনে কল আসে।ফোন ধরে দেখে সাদাফ।মুগ্ধের মুখে হাসি ফুটে উঠে।
হুমায়ন আহমেদ স্যার বলেছিলেন,

“যখন কোনো মেয়ে কোনো ছেলের প্রেমে পরে। তখন সে সেই ছেলেটার চারপাশের সব কিছুর প্রেমে পরে। ”
মুগ্ধ সাদাফের প্রেমে পরেছে।তার সব কিছুর প্রেমে সে পরেছে।প্রেম নামক বিষে সে ধংসন হয়েছে।আর সাদাফ সেই বিষ সুষে নেবে তার ভালোবাসা দিয়ে।
মুগ্ধ ফোন রিসিভ করে বলে,

মুগ্ধঃআগামিকালই তো বিয়ে। আজকে এতোখন ছিলেন তাও বুঝি বউকে চোখে চোখে হারাচ্ছেন।
সাদাফঃমেহুরানী আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবোনা আমি কত খুশি।আজকের রাতটা পেরিয়ে গেলে কাল তুমি আমার হয়ে যাবে।পরের দিনের সকালটা আমি তোমার মিষ্টি মুখ দেখে নিদ্রা থেকে উঠবো।তোমার মুখের হাসি দেখে দিন শুরু করবো।নিজের সব ছোট বড় আনন্দ তোমার সাথে ভাগ করবো।অহ আল্লাহ আমার তো আর ধৈর্য্য হচ্ছেনা।ভালোবাসি আমার মেহুরানীকে অনেক ভালোবাসি।

শেষ থেকে শুরু শেষ পর্ব