শেষ থেকে শুরু শেষ পর্ব  || নন্দিনি চৌধুরী || SA Alhaj

শেষ থেকে শুরু শেষ পর্ব 
লেখিকা নন্দিনি চৌধুরী

আজকে সাদাফ আর মুগ্ধের বিয়ে।বিয়ের সব আয়োজন খুব ধুমধামভাবে করা হচ্ছে।সকাল থেকে মেহের ছুটাছুটি করছে সব ঠিকভাবে হচ্ছেকিনা।মুগ্ধ নিজের রুমে বসে আছে মনটা তার খুব খারাপ।আজ তার ভাইয়াকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।কান্না করছে মুগ্ধ।তার ভাইয়ের মতো ভাই সবাই পায়না।মুগ্ধের এতো কঠিন সময়েও মেহের মুখ ঘুরিয়ে নেয়নি।কত আগলে রেখেছে।সেই ভাইকে ছেড়ে কিভাবে সে থাকবে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।মেহের বোনের রুমে আসে বিয়ের বাকি জিনিশগুলো দেওয়ার জন্য।রুমে এসে দেখে বোনটা তার কাঁদছে।বোনকে কাঁদতে দেখে মেহের ভয় পেয়ে যায়।তাড়াতাড়ি বোনের কাছে এসে জিজ্ঞেশ করলো।

মেহের:চড়ুইপাখি কি হইছে তোর।কান্না করছিস কেন।
মুগ্ধ ভাইকে দেখে আর নিজেকে থামাতে পারলোনা হামলে পরলো ভাইয়ের বুকে।
মুগ্ধ:ভাইয়া আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আমি যাবোনা তোমাকে ছেড়ে।
মেহের বোনের কান্নার কারন বুজতে পারলো।সে নিজেও তো তার এই বোনটাকে ছেড়ে থাকতে পারবেনা।কিভাবে থাকবে তার এই বোনটাকে ছেড়ে খুব ভালোবাসে এই বোনটাকে সে।মেহের বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

মেহের:পাগলি একটা।তুই কি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছিস নাকি।তোর যখন মন চাবে তুই আমার কাছে আসবি।আর আমরাও তো যাবো তোকে দেখতে।কান্না করিস না চড়ুইপাখি।আমার যে তাহলে খুব কষ্ট হবে।দেখ ভাইয়ার দিকে তাকা।
মুগ্ধ ভাইয়ার দিকে তাকালো।মেহেরের চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।মেহের বোনের কপালে চুমু দিয়ে বলে,
মেহেরঃপ্রত্যেক মেয়েকেই তার নিজের বাড়ি ছেড়ে পরের বাড়ি যেতে হয়।এটাই নিয়ম রে।আমরা চাইলেও এই নিয়ম না মেনে পারবোনা।যদি এই নিয়ম না মানার সুযোগ থাকতো। তাহলে কোনো বাবা ভাই তার আদরের মেয়ে বা বোনটাকে অন্যের ঘরে দিতোনা।যেই মেয়েটাকে জন্মের পর থেকে তার বাবা মা লালন পালন করে তাকে একদিন অন্যের ঘরের ঘরনি করে পাঠিয়ে দেওয়া কত কষ্টের তা সেই বাবা মাই জানে।যেই ভাইয়া ছোট থেকে তার আদরের বোনের সাথে খেলে,খুনশুটি করে তাকে একদিন অন্যের ঘরে পাঠানো কত যন্ত্রনার তা সেই ভাইটাই জানে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুগ্ধ ভাইয়ের কথাগুলো শুনে চুপ করে থাকলো।তারপর মেহের বোনের চোখের পানি গুলো মুছে দিলো।
মেহেরঃএকটু পর বিয়ের জন্য তৈরি করবে তোকে।এখন আর কান্না করে পেত্নির মতো থাকিস না হু?।
মুগ্ধঃভাইয়া?।
মেহের বোনের কান্ড দেখে হেসেদিলো।একটু পর মুগ্ধকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে মেয়েরা আসলো।
ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে বসে আছে সায়মা।কাগজে বড় বড় করে লেখা আরিশ ইসলাম।হ্যা আরিশ তাকে ডিভোর্স দিয়েদিয়েছে।তাদের মধ্যকার আর কোনো সম্পর্ক নেই।আচ্ছা মুগ্ধের ও তো এভাবে কষ্ট হয়েছিলো তাইনা।আরিশ যখন তাকে ডিভোর্স দিয়েছিলো।সেদিন সায়মা হেঁসে ছিলো।আর আজ সেই পরিস্থিতিতে সেও পরলো।সায়মা কাপা কাপা হাতে সাইন করে দিলো।আজ থেকে তার নামের আগে জারজ,খারাপ,ডিভোর্সি তোকমা গুলো লেগেগেলো।সায়মা মুচকি হাসলো।
সন্ধ্যায়,,,,

সাদাফ কে শেরোয়ানি পড়াচ্ছে রায়হান।সাদাফের মা এসে ওকে দইমুড়ি খাইয়ে দিয়ে গেছে।
সাদাফঃউফ ভাই একটু তাড়াতাড়ি করনা।
রায়হানঃতুই তো এমন করছিস মনে হচ্ছে তোর বিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।ভাবিকে দেখার অনেক সময় পাবি।এখন আগে আমাকে তোকে রেডি করতে দে।
রায়হান সাদাফকে রেডি করলো।তারপর সাদাফরা বেরিয়ে পরলো সেন্টারের উদ্দেশ্যে।
রাত ৮টায়,,,,

সাদাফরা এসে পরেছে সেন্টারে।রুহি সাদাফকে মিষ্টি মুখ করিয়ে ডুকায়।সাদাফ বেকুল হয়ে গেছে মুগ্ধকে দেখার জন্য।সাদাফকে নিয়ে স্টেজে বসানো হলো।কিছুক্ষনের মধ্য মুগ্ধকে নিয়ে আসা হলো।মুগ্ধকে দেখে সাদাফ আরেকদফা ক্রাশ।মুগ্ধকে একটা লাল রংএর লেহেংগা পরানো হয়েছে সাথে মেচিং গোল্ডের গহনা সাথে ভারি সাজ।মুগ্ধকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।মুগ্ধকে এনে সাদাফের পাশে বসানো হলো।কিছুক্ষনের মাঝে কাজী আসলো।কাজী এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।কাজী যখন মুগ্ধকে কবুল বলতে বলছিলো মুগ্ধের মুখ দিয়ে কেনো জানি কবুল শব্দটা আসছেনা।একটা জোরোতা কাজ করছে।একটা ভয় কাজ করছে।সাদাফ সেটা বুজতে পারলো।সাদাফ মুগ্ধের হাত ধরলো মুগ্ধ এতে চমকে গেলো।সাদাফ মুগ্ধের হাত ধরে বলা শুরু করলো,

সাদাফঃআমি জানি আজকে আমরা একটা পবিত্র সম্পর্কে বাধা পরছি।আজকের পর তোমার সব হাসি দুঃখ কষ্ট সব আমার।আজকের পর তোমাকে আমি কোনোদিন কাঁদতে দেবোনা।আমার জীবনে কেউ নেই তুমি ছাড়া।আমার জীবনে কোনো সপ্ন নেই তোমাকে ছাড়া।আমার কোনো অস্তিত নেই তুমি ছাড়া।আমি কিছু ভাবতে পারিনা তুমি ছাড়া।আমি কিছু লিখতে পারিনা তুমি ছাড়া।যদি কোনোদিন মরে যাই সেদিন আল্লাহর কাছে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।চাইবো সেদিন ও তোমাকে।তবুও তুমি ছাড়া আমি নিস্ব।তুমি যে আমার #শেষ_থেকে_শুরু।

সবাই সাদাফের কথা গুলো শুনে মুগ্ধ।কতোটা ভালোবাসলে মানুষ একটা মানুষকে এতোটা চায়।মুগ্ধ সাদাফের কথা গুলো শুনে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে কিছুটা সময় চুপ করে মুগ্ধ বলে,
মুগ্ধঃ আলহামদুলিল্লাহ কবুল,আলহামদুলিল্লাহ কবুল,আলহামদুলিল্লাহ কবুল।
কাজীঃসুবহানাল্লাহ।
এভার কাজী সাদাফকে কবুল বলতে বললো।সাদাফ জলদি জলদি কবুল বলে দিলো।সবাই তা দেখে হেসে দিলো।পাশ থেকে রায়হান বলে উঠে,
রায়হানঃআসতে আসতে তোর বউকে কেউ নিয়ে যাইতাছেনা।
সাদাফ রায়হানের কথায় লজ্জা পেলো।

অবশেষে হাজার বাধা বিপদ পেরিয়ে আজ সাম(সাদাফ মুগ্ধ) জুটি এক হলো।আজ তাদের ভালোবাসা বৈধ বন্ধনে আব্ধ হলো।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে মুগ্ধকে দেখে যাচ্ছে আরিশ।হ্যা নিজের মনের সাথে অনেক লড়াই করে অবশেষে হার মেনে আসলো সে একনজর মুগ্ধকে দেখতে।আরিশের চোখের কোণে পানি।আজ মুগ্ধ অন্য কারো হয়ে গেলো।আজকে থেকে মুগ্ধ সাদাফের।হ্যা এখন থেকে মুগ্ধ অনেক সুখে থাকবে।আরিশ চোখের পানিটুকু মুছে উল্টো পথে হাটা ধরলো।যাওয়ার আগে শেষবারের মতো মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বললো,
আরিশঃভালো থেকো মুগ্ধ।অনেক ভালো থাকো দোয়া করি।তোমার জীবন সুখে পরিপুর্ন থাকুক সেই আশা রাখি।সাদাফ তোমায় কোনোদিন কষ্ট দেবেনা আমি জানি।ভালো থেকো।

বিদায়ের সময় মুগ্ধ মেহেরকে ধরে কান্নায় ভেংগে পরেছে।মেহের ও বোনকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে।রুহির চোখেও পানি।ছোট মাহিরকে কোলে নিয়ে অনেক কান্না করেছে মুগ্ধ।হায় বিধাতার কি নিয়ম পরিবার পরিজন ছেড়ে চলে যেতে হয় এভাবেই।মুগ্ধকে অনেক কষ্টে গাড়িতে বসালো সাদাফ।তারপর চলেগেলো তারা।মেহের চোখের পানির মাঝেও হাসি রেখে বললো,
অবশেষে আমার বোন একটা সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ পেলো।আল্লাহ আমার বোনটা যেনো সুখে থাকে।আমিন।
সাদাফের রুমে,,,

সাদাফের কাজিনরা মুগ্ধকে বসিয়ে রেখে গেছে রুমে।মুগ্ধের বিয়ের শাড়ি চ্যাঞ্জ করিয়ে একটা গোলাপি শাড়ি সাথে কিছু কাচা ফুলের গহনা পরিয়ে দিয়েগেছে।গোলাপ রজনিগন্ধা দিয়ে বাসর ঘর সাজানো সাদাফ মুগ্ধের।সাদাফকে ওর কাজিনরা ডুকতে দিচ্ছেনা আগে টাকা দিবে তারপর ডুকতে দেবে বলেছে।তাই সাদাফ ওদের ১০হাজার টাকা দিয়ে দিলো।তারপর ডুকে পরলো রুমে।সাদাফকে আসতে দেখে কেমন নার্ভাস লাগছে মুগ্ধের।সাদাফ খাটের সামনে আসতেই মুগ্ধ খাট থেকে নেমে সাদাফকে সালাম করার জন্য পায়ে হাত দিতে নিলে সাদাফ থামিয়ে দেয় মুগ্ধ তাতে অবাক হয়।সাদাফ মুগ্ধকে নিজের বুকে নিয়ে বলে তোমার জায়গা পায়ে না তোমার জায়গা আমার এই বুকে।সাদাফ মুগ্ধকে ছেড়ে দিয়ে আলমারির কাছে গেলো।সেখান থেকে একটা খাম বের করে মুগ্ধের হাতে দিয়ে বললো,

সাদাফঃবউয়ের হাতে দেনমোহরের টাকা দিয়ে তাকে স্পর্শ করা উচিত।তাই আমি তোমাকে তোমার দেনমোহরের টাকা দিয়ে দিলাম।
মুগ্ধ সাদাফের হাত থেকে খামটা নিয়ে আলমারির কাছে গিয়ে সেখানে আবার রেখে দিয়ে আসলো।মুগ্ধ পিছনে ঘুরে দেখলো সাদাফ বারান্দায়।মুগ্ধ আসতে করে হেটে বারান্দায় গেলো।সাদাফের পাশে এসে দাঁড়ালো।আজকে আকাশে গোল একটা চাঁদ উঠেছে।চাঁদের আলো এসে পরছে সাদাফ মুগ্ধের উপর।হালকা বাতাস বইছে।সব মিলিয়ে ওয়েদারটা খুব রোমান্টিক।সাদাফ চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
সাদাফঃদেখো মেহুরানী আজকে আকাশে কত সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে।জানো আমার অনেক ইচ্ছা তোমার সাথে চন্দ্রবিলাশ করার।তুমি কি করবে আমার সাথে চন্দ্রবিলাশ।তুমি কি যাবে আমার সাথে মধুচন্দ্রিমায়।

সাদাফের কথা শুনে মুগ্ধের লজ্জা লাগছে।সে মাথা নাড়ায় যার অর্থ হ্যা সে যাবে।যেখানে যেতে চায় সাদাফ সেখানেই যাবে।সাদাফ মুগ্ধকে জরিয়ে ধরলো মুগ্ধ পরম আবেশে জরিয়ে ধরলো সাদাফকে।সাদাফ মুগ্ধের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।মুগ্ধ একটু কেঁপে উঠলো।সাদাফ এভার আসতে আসতে মুগ্ধের ওষ্ঠোধয় নিজের ওষ্ঠোধয়ের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো।এক আলাদা শিবরন বয়ে যাচ্ছে মুগ্ধের মাঝে।আলাদা ভালোলাগা শুরু করেছে তার মাঝে।সাদাফ মুগ্ধকে কোলে তুলে নিলো তারপর শুইয়ে দিলো বিছানায়।মুগ্ধের ঠোঁটে,গালে,গলায়,কাধে চুমু দিয়ে যাচ্ছে সাদাফ।আর মুগ্ধ প্রত্যেকবার কেঁপে কেঁপে উঠছে।সাদাফ মুগ্ধের শাড়ির আঁচলটা শরিয়ে দিলো।আজ সে মুগ্ধের মাঝে হারিয়ে যেতে চায়।আজ মুগ্ধ ও কোনো বাধা দিচ্ছেনা সাদাফকে।হারিয়ে যাচ্ছে দুজনে দুজনের ভালোবাসায়।পূর্নতা পাচ্ছে তাদের ভালোবাসা।তাদের ভালোবাসা দেখে দুহাত দূরে থাকা দেয়াল ও লজ্জা পাচ্ছে।

সকালে,
সকালে ঘুম ভাংগতেই মুগ্ধ নিজেকে সাদাফের বুকে আবিষ্কার করে।এক চাদরের নিচে দুজনে।মুগ্ধের খুব লজ্জা লাগে।সে আসতে করে উঠে বসে।নিচে পরে থাকা শাড়িটা গায়ে জরিয়ে ওয়াশরুমে যায়।শাওয়ার নিয়ে একটা লেবেন্ডার কালারের শাড়ি পরে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে।সাদাফ তখনো ঘুম।মুগ্ধ নিচে নেমে আসলো।নিচে এসে দেখে সাদাফের মা রান্না ঘরে কাজ করছে। মুগ্ধ কে আসতে দেখে তিনি মিষ্টি হাসি দেন।মুগ্ধ রান্না ঘরে আসাতে তিনি বলেন,
সাদাফের মাঃকিরে মা তুই রান্না ঘরে আসলি কেন।
মুগ্ধঃএমনি মা কেন আমি আসতে পারিনা।

সাদাফের মাঃনা রে মা আসতে পারিস।কিন্তু আজকে তো তোর বউ ভাত।আজকে রুমেই থাক।সাদাফকে গিয়ে উঠা।
মুগ্ধঃআচ্ছা।
মুগ্ধ রুমে চলে আসে এসে দেখে সাদাফ নেই।ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজে বুঝে সাদাফ শাওয়ার নিচ্ছে।একটু পর সাদাফ বেরিয়ে আসে।পরনে একটা টাউজার আর একটা ব্লু গেঞ্জি।মুগ্ধকে দেখে মুচকি হাসলো সাদাফ।মুগ্ধ সাদাফের হাসি দেখে লজ্জা পেলো।মুগ্ধ এসে চুল ঠিক করতে লাগলো আর সাদাফ পিছনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে লাগলো।একটু পর সাদাফ মুগ্ধকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।মুগ্ধ এতে একটু গাবরে গেলো।সাদাফ মুগ্ধের কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে আর মুগ্ধ কাপছে।
সাদাফ মুগ্ধকে কিস করছে ঘারে।ঠোঁটে কিস করতে গেলে দরজায় টোকা পরে।দুজনে তাড়াতাড়ি আলাদা হয়ে যার।সাদাফ গিয়ে দরজা খুলতে ওর কাজিনরা এসে ওকে ধাক্কা মেরে ঘরের বাহিরে পাঠিয়ে দিলো আর বললো “আর সন্ধ্যায় বউকে কাছে পাবা এখন সে আমাদের কাছে থাকবে।”সাদাফ গাল ফুলিয়ে চলে আসলো।আর মুগ্ধসহ বাকিরা হাসতে লাগলো।
সন্ধ্যায়,,

মুগ্ধকে একটা বেবিপিংকালারের গাউন পরিয়েছে সাথে মেচিং জুয়েলারি আর সাজ।মুগ্ধকে দেখতে একদম প্রিন্সেস লাগছে।সাদাফ কে একটা নেভিব্লু কালারের ব্লেজার পড়ানো হয়েছে।সাদাফকেও দেখে বিষন সুন্দর লাগছে।
মেহেররা এসেছে মুগ্ধ মেহেরকে দেখে জরিয়ে ধরে।একদিন পর বোনকে পেয়ে মেহের ও অনেক খুশি।মুগ্ধ মাহিরকেও কোলে নেয় আর আদর করে দেয়।মুগ্ধকে দেখতে সাদাফের সব আত্মিয় সজন এসেছে।
তাদের মধ্য সাদাফের বড় ফুপি যার মেয়েকে সাদাফের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো সে সবার সাম্নেই বলা ধরলো,
ফুপিঃকি গো সাদাফের মা শুনলাম ছেলের বউ নাকি আগে বিয়া করছিলো সেই ঘরের স্বামীর সাথে নাকি ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।বলি এমন মেয়ে কেন আনলে ছেলের জন্য ডিভোর্সি মেয়ে।আমার তো মনে হয় এর চরিত্রে সমস্যা আছে।নাহলে কি আগার স্বামী ছাড়তো।

মহিলার কথা শুনে মুগ্ধের চোখে পানি চলে আসলো।মুগ্ধ ভাবতে পারেনি সবার সামনে তাকে এভাবে অপমানিত হতে হবে।মেহের মহিলার কথা শুনে রেগে যায় তাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে সাদাফ বলে উঠে,
সাদাফঃমাফ করবেন বড় ফুপি কিন্তু আজ কিছু কথা না বললেই নয়।আপনি এসেছেন আমার স্ত্রীকে দেখতে তাকে দোয়া করতে।আপনার কুটিল মন দিয়ে দোয়া না আসলে করবেন না দোয়া। কিন্তু আমার স্ত্রীকে অপমান করার কোনো অধিকার আপনার নেই।হ্যা আমার স্ত্রী ডিভোর্সি তাতে কি হয়েছে।তার ডিভোর্স হয়েছে বলে তার চরিত্র খারাপ।কিন্তু কই একবার ও এটাতো ভাবেন না যে মেয়েটার স্বামী খারাপ হতে পারে।তাই ডিভোর্স হয়েছে।আপনাদের মাথায় শুধু আসে মেয়েরাই খারাপ।

যেকোনো কিছুতেই মেয়েরা খারাপ।কিন্তু এর পিছনের কারনটা জানতে চাননা একবার ও।আপনারা মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু।কারো ভালো দেখলে গা জ্বলে।আপনার মেয়েকে বিয়ে করিনি বলে আপনি আমার স্ত্রীকে অপমান করলেন।আপনার মেয়ের আমার স্ত্রীর পায়ের নোখের যোগ্যতাও নেই।আর না আছে চরিত্র।সেসব দিকে না যাই সব চেয়ে বড় কথা ওকে আমি নিজের বোনের মতো দেখি।সাদিয়া আর ও আমার কাছে সমান।আশা করি নেক্সটে কোনোদিন আমার স্ত্রীকে নিয়ে উলটা পালটা কমেন্ট করবেন না।

সাদাফের ফুপি সাদাফের কথায় খুব অপমান বোধ করে।সাদাফের বাবাও কিছু কথা শুনিয়ে দেয় তাকে।অপমান লজ্জায় সে চলে আসে।মেহের আজ অনেক খুশি।হ্যা তার বোনকে সে সঠিক মানুষের কাছে তুলে দিয়েছে।সাদাফ তার বোনের যোগ্য স্বামী।পুরো অনুষ্টান মুগ্ধ আর কথা বলেনি চুপ করেই ছিলো।রাতে মুগ্ধদের বাসায় আসছে সাদাফ মুগ্ধ।মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে আছে।সাদাফ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মুগ্ধ বেলকোনিতে মন খারাপ করে দাঁড়ানো।সাদাফ গিয়ে মুগ্ধকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে কাধে মুখ রেখে বলে,
সাদাফঃআমার বউটার মন খারাপ কেন।

মুগ্ধঃআচ্ছা সাদাফ আমি কি আপনাকে বিয়ে করে আপনার জীবন নষ্ট করছি।আপনি তো আমার থেকে ভালো কাউকে লাইফে ডিজার্ব করেন।
কথাটা বলতে গিয়ে মুগ্ধের চোখ ভিজে গেছে।সাদাফ মুগ্ধকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
সাদাফঃহ্যা ভালোতো অনেক পাবো।কিন্তু সব ভালোতে কি তোমাকে পাবো।কে কি বললো তাতে আমার কিছু জায়আসেনা।আমি তোমাকে ভালোবাসি।লোকের কথায় কান দেওয়া আমার স্বভাব না।আর কোনোদিন বাহিরের কারো কথায় কাঁদবেনা।
মুগ্ধ সাদাফের বুকে মাথা রেখে বলে,
মুগ্ধঃভালোবাসি।
সাদাফঃভালোবাসি মেহুরানী।
৩বছর পর,,,,

কেটে গেছে অনেক সময়।বদলে গেছে অনেক কিছু।সেই সাথে অনেক সম্পর্ক বদলে গেছে।
সালমা বেগম জেলে থাকার দুই বছরের মাথায় হার্ট এট্যাক করে মারা যান।তার পাপ বোধ তাকে কূড়ে কূড়ে খাচ্ছিলো।সেই থেকেই তার হার্ট এট্যাক হয়েছে।সায়মা আর আগের মতো নেই।একদম চুপচাপ থাকে।একটা মরা লাশ হয়ে বেঁচে আছে সে।মায়ের মারা যাওয়ার পর আরো চুপচাপ হয়ে গেছে সে।
আরিশ নিজেকে ঘুছিয়ে নিয়েছে।যেই কারখানায় সে শ্রমিক ছিলো সেই কারখানার মেনেজার এখন সে।অকাল পরিশ্রম করে গেছে সে।কারখানার বসের মেয়ে তাকে ভালোবাসার আহ্নবান করেছে কিন্তু সেতা প্রত্যাখান করে দিয়েছে।তবুও মেয়েটি আশা করে একদিন আরিশ তাকে মেনে নেবে।আরিশ এখন মুগ্ধের কথা ভেবে কাঁদেনা,বরং সে খুশি মুগ্ধের খুশিতেই খুশি।
হাসান বাড়ি,

মেয়েকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে সাদাফ।মেয়েটা তার কেঁদেই যাচ্ছে।মুগ্ধ গেছে গোসল করতে।আর মেয়ে তার কান্না শুরু করে দিয়েছে।হ্যা সাদাফ মুগ্ধের এক মাত্র কন্যা আশফিয়া ইসলাম সাফিয়া।সাদাফের নামের সাথে মিলিয়ে নামটা রেখেছে তারা।৭ মাস বয়স তার মেয়ের।সাদিয়া আর রায়হানের একটা ছেলে হয়েছে।বয়স ২বছর।মেহেরের আরেকটা মেয়ে হয়েছে বয়স ১ বছর আর মাহির ৩ বছর।বেশ সুখেই আছে তারা সবাই।

সাদাফ মেয়েকে কোলে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে রুমে আসলো।মেয়েকে নানা ভাবে শান্ত করার চেষ্টা করছে সে।একটু পর মুগ্ধ বেরিয়ে আসে।এসে এই অবস্থা দেখে হেসে দেয়।সাদাফ অসহায় ফেস করেন তাকায় তার দিকে।মুগ্ধ মেয়েকে কোলে করে খাইয়ে দেয়।মেয়েটা এখন ঠান্ডা হয়েছে।সাদাফের কোলে দিয়ে আয়নায় বসে চুল আচড়াচ্ছে আর বাবা মেয়েকে দেখছে।সাদাফ মেয়ের সাথে খেলছে।মেয়েটার বাবার কথা শুনছে আর হাত পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে হাসছে।
মুগ্ধ তাদের দিকে তাকিয়ে বলে,

আপনি সত্যি আমার জীবনে খুব স্পেশাল।আমার জীবনে সকল সুখ আপনি দিয়েছেন।আপনাতেই আমি আজ পরিপুর্ন।আপনি সত্যি আমার জীবনের #শেষ_থেকে_শুরু।
“মনেতে আকাশ হয়ে রয়েছো ছড়িয়ে,বলনা কোথায় তোমায় রাখি লুকিয়ে।থাকিজে বিভোর হয়ে শয়নে স্বপ্নে।যেওনা হৃদয় থেকে দূরে হারিয়ে,আমি যে ভালোবাসি শুধুই_তোমাকে।তুমি যে আমার প্রিয় #শেষ_থেকে_শুরু”।

আজকে ছুটির দিন।মেয়েকে ঘুম পারিয়ে রেখে রান্না করছে মুগ্ধ।আজকে সাদাফের পছন্দের খাবার রান্না করছে সে।মোরগ পোলাউ,ডিমের কোরমা,মাছের চপ বানাচ্ছে।সাদাফ রান্না ঘরে এসে মুগ্ধকে দেখে দুষ্টুমি করার ইচ্ছা হলো।সাদাফ আসতে করে মুগ্ধের পিছনে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলো।মুগ্ধ এভাবে আচমকা জরিয়ে ধরায় ভয় পেয়ে যায়।সাদাফ মুগ্ধের কাধে থুতনি রেখে কানার লতিতে ছোট ছোট চুমু দিচ্ছে।মুগ্ধের ভিতরে শিহরন কাজ করছে।মুগ্ধ তবুও নিজেকে সামলে সাদাফকে বললো,
মুগ্ধঃএখানে কি করছেন হুম।ঘেমে আছি আমি সেই মাঝে এভাবে জরিয়ে ধরলেন কেন।মেয়েতো ঘরে একা।
সাদাফঃউম মেয়ে ঘুমাচ্ছে।আর তোমার এই ঘাম জোরানো শরীরেও এক আলাদা মাদাকতা আছে।যা আমাকে টানে।

মুগ্ধঃহয়েছে হয়েছে এবার যান।আমাকে কাজ করতে দিন।
সাদাফঃ??হুহ
সাদাফ চলে আসে আর মুগ্ধ সাদাফের গাল ফুলানো দেখে হেসে দেয়।
রান্না শেষে গোসল করে সাদাফ মুগ্ধ খাবার খেয়ে নেয়।সাদাফের খুব ভালো লেগেছে তার পছন্দের খাবারগুলো রান্না করায়।খাওয়া শেষে মুগ্ধ মেয়েকে রুমে এসে খাওয়াচ্ছে।সাদাফ রুমে এসে বলে,
সাদাফঃচলো ঘুরে আসি।
মুগ্ধঃএখন

সাদাফঃহুম এখন এখানে তোমার আর বাবুর কাপড় আছে রেডি হয়ে নেও।সাদাফ কাপড় দিয়ে নিজেও রেডি হতে যায়।মুগ্ধ ব্যাগটা হাতে নিয়ে দেখে সেখানে একটা লাল সাদা মিশানো শাড়ি মেয়ের জন্য সাদা একটা ফ্রোক হেয়ার ব্যান্ড মুগ্ধের জন্য চুড়ি চেইন আর বেলিফুলের মালা।মুগ্ধ মেয়েকে রেডি করে নিজেও রেডি হয়ে যায়।সাদাফ রুমে এসে তার দুই চোখের মণিদের দেখে সতব্দ হয়ে যায়।মা মেয়েকে অনেক সুন্দর লাগছে।সাদাফ মুচকি হেসে বলে”মাসাল্লাহ”আমার অর্ধাঙ্গিনী আর আমার ঘরের জান্নাতটাকে অপরূপ লাগছে।সাদাফ মেয়েকে কোলে নেয় তারপর তারা বেরিয়ে পরে।আজকে রিকশায় করে ঘুরবে তারা।কাশঁবাগানে এসেছে সাদাফরা।মুগ্ধের খুব ভালো লাগে কাশঁফুল সে তার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে কাশঁফুল গুলা।সাদাফ মেয়েকে কোলে নিয়ে ঘুরছে।সাদাফ মেয়ের সাথে আর মুগ্ধের সাথে অনেক ছবি তুলে।তারপর তারা একটা খেলনার দোকানে যায় সেখান থেকে সাফিয়ার জন্য খেলনা কেনে অনেকগুলো।

সন্ধ্যার পর তারা বাসায় ফেরে।ফ্রেশ হয়ে মেয়েকে খাইয়ে ঘুম পারায় মুগ্ধ।সাদাফ বাসায় এসে আবার জানি কোথায় গেছে।মুগ্ধ সাদাফের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
রাত ১২টা অপেক্ষা করতে করতে মুগ্ধ ঘুমিয়ে গেছে।ঘুম ভাংলে নিজেকে আবিষ্কার করে বেড রুমে।সে অপেক্ষা করতে করতে ডাইনিং রুমে ঘুমিয়ে গেছিলো।মুগ্ধ আসে পাশে তাকিয়ে পুরা রুম সাজানো।বেডের মাঝে ঘুমিয়ে আছে মেয়ে।মুগ্ধ উঠে বেলকোনিতে যাওয়া মাত্র সাদাফ তাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলে,
“হ্যাপি বার্থডে বাবুর আম্মু।”
সাদাফের হঠ্যাৎ জরিয়ে ধরা উইশ করায় ঘাবরে যায় মুগ্ধ।আজ তার জন্মদিন ছিলো তার তা মনেই ছিলোনা।সাদাফ মুগ্ধকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৭

সাদাফঃসবার কথা মনে থাকে কিন্তু নিজের কথা কেন মনে থাকেনা।আজকের দিনে আমার সাফিয়ার আম্মু এই দুনিয়ায় এসেছি।
সাদাফ মুগ্ধের দিকে ছুড়ি এগিয়ে দিলো মুগ্ধ কেক কেটে সাদাফকে খাওয়ালো।সাদাফ মুগ্ধকে খাওয়ালো।মুগ্ধ সাদাফের বুকে মাথা রেখে বলে,
ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য।
সাদাফ মুগ্ধকে জরিয়ে ধরে।
সাদাফঃ তোমাকেও ধন্যবাদ আমার জীবন খুশিতে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার জন্য।আমাদের সম্পর্কের পূর্নতা শুয়ে আছে অই বিছানার মাঝে।
মুগ্ধঃহুম ?।

সাদাফঃমুগ্ধ আজ আবার কি আমি তোমার মাঝে নিজেকে হারাতে পারি?
মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে লজ্জা পেয়েযায়।সাদাম চুপ থাকা সম্মতির লক্ষ্যন বুজতে পারলো।কোলে তুলে নিলো মুগ্ধকে।আজ আবার সাদাফ মুগ্ধের মাঝে ডুবে যাবে।আজ আবার পুর্নতা পাবে তাদের ভালোবাসা।
বেঁচে থাকুক এভাবেই ভালোবাসা।পুর্ণতা পাক সকল ভালোবাসা।?❤️

সমাপ্ত

(লেখাঃ নন্দিনি চৌধুরী ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন