শেষ থেকে শুরু পর্ব ২ || নন্দিনি চৌধুরী || ধারাবাহিক গল্প

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২
লেখিকা নন্দিনি চৌধুরী

প্রিন্সেস ডায়নার একটা উক্তি ছিলো,
“আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম সে আমাকে বাদে দুনিয়ার সবাইকে ভালোবেসেছিলো”
বারান্দায় দাঁড়িয়ে উক্তির কথাটা ভাবছে সাদাফ।সে জীবনে যাকে ভালোবেসেছিলো। সে তাকে ছাড়া দুনিয়ার সবাইকে ভালোবেসেছিলো।কিন্তু শুধু তাকেই ভালোবাসেনি।ভালোবাসবে কি করে সেতো শুধু চিনতো টাকা তাইতো তাকে ছেড়ে দিয়েছে।আচ্ছা সব ভালোবাসাকি বেইমান হয়।সবাইকি তার মতো টাকার পাগল হয়।এই টাকা থাকলেই কি তবে সব সুখ পাওয়া যায়। আজ সাদারফের কত টাকা সম্মান কই তার তো নিজেকে সুখি মনে হচ্চেনা।সে যার মাঝে তার সুখ খুজে পেয়েছিলো সেইতো তাকে দুঃক্ষের সাগরে বাসিয়ে দিয়েগেছে।

রাতের তারা ভোরা আকাশ দেখছে মুগ্ধ।চোখের পাতাগুলা ভিজে আছে।হয়ত কাঁদছিলো সে।এই কান্নাই হয়তো তার সারাজীবনের সজ্ঞী তার।আচ্ছা কি পাপের শাস্তি সে পাচ্ছে।যার কারনে তার জীবনে সুখ এসেও চলে যায়।ছোট বেলায় মা চলে গেলো সুখের দিন চলে গেলো।বড় হয়ে বিয়ে করে স্বামীর ঘরে গেলো সেখানেও সুখ সইলোনা।কেন হয় তার সাথে এমন।মুগ্ধ আপন মনে এসব ভেবে যাচ্ছে।আর বার বার চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে।
“প্রেম বীরহের দংশন হলে সেই দংশনের বিষ সুশে নেবার কেউ থাকেনা।বিশ্বাসে আঘাত হানলে সেই আঘাত কোখনো দূর হয়না”
[নন্দিনি]

রুহি মুগ্ধকে খাবার খেতে ডাকার জন্য রুমে এসে দেখে মুগ্ধ জানালা ধরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।রুহি আসতে করে মুগ্ধের কাছে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখে।মুগ্ধ পিছনে ঘুরে দেখে রুহি।রুহিকে জরিয়ে ধরে কান্নায় আবার ভেংগে পরে মুগ্ধ।
মুগ্ধ:ভাবিপু আমার সাথে কেন এমন হলো ভাবিপু।আমার কপালটা কেন এতো খারাপ।আরিশ কেন আমায় এভাবে ঠকালো।সায়মা যাকে আমি ছোট থেকে নিজের কোলে পিঠে করে মানুষ করলাম সে আমার সংসারটা নষ্ট করে দিলো।ভাবিপু কেন হলো আমার সাথে এমন।
রুহি মুগ্ধকে শান্ত করার চেষ্টা করছে আর বলছে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুহি:কাঁদিস না পাখি তুই কাঁদলে আমাদের যে অনেক কষ্ট হয়রে।এই দুনিয়ায় কেউ কাউকে ঠকিয়ে সুখি হতে পারেনা।একদিন না একদিন আল্লাহ তার শাস্তি তাকে দেয়।তোর সাথে যারা এরকম করেছে তারা ঠিক তাদের শাস্তি পাবে দেখিস।তুই কাঁদিস না ভাইয়া আমি আছি না তোর পাসে।
রুহি মুগ্ধকে শান্ত করে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলো।আজকে মুগ্ধের পছন্দের শুটকি মাছ,খিচুরি,আলুচোকা,আর মুরগি রান্না হয়েছে।মেহের আজকে নিজ হাতে বোনকে খাইয়ে দেবে।
মেহের:চড়ুইপাখি নে হা কর।
মুগ্ধ আজ এতগুলা বছর পর ভাইয়ের হাতে খাচ্ছে আনন্দে তার চোখে পানি চলে এসেছে।সেই ছোট বেলায় মেহের তাকে এভাবে খাইয়ে দিতো।দুই ভাই বোনের ভালোবাসা দেখার মতো ছিলো।
মুগ্ধ:ভাইয়া এখন তুমি হা করো।

মেহের ও মুগ্ধের হাত থেকে খেতে লাগলো।দুজন দুজনকে খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়ার এক প্রান্তে মুগ্ধ মেহেরকে জিজ্ঞেশ করে,
মুগ্ধ:আচ্ছা ভাইয়া তুমি আমাকে চড়ুইপাখি ডাকো কেন?
মেহের:কারন তুই চড়ুইপাখির মতো তাই।তোর চোখ দুইটা চড়ুইপাখির মতো।আর সারাদিন তুই চড়ুইপাখির মতো চুইচুই করিস হিহিহি।
মুগ্ধ:কি আমি চড়ুইপাখির মতো চুইচুই করি। আর তুমি কি হ্যা তুমি তো লেজ ছাড়া পাতি বানর। সারাদিন খালি লাফাও।
মেহের:বউয়ের সামনে আমার ইজ্জত এভাবে মেরেদিস না ধম্মে সইবেনা হু।
মুগ্ধ:ইসসস আইছে ভাবিপুও জানে তুমি লেজ ছাড়া বানর তাইনা বলো ভাবিপু।
রুহি:হুম একদম ঠিক বলেছিস পাখি।সারাদিন খালি এদিক সেদিক লাফালাফি করে।
মেহের:শেষে তুমিও।হায় জীবনটা বেদনা।?
মুগ্ধ ও রুহি:হেহেহেহে।

এভাবে দুষ্টুমি করে খাওয়া দাওয়া শেষ হলো তাদের তিনজনের।খাওয়া শেষ করে রুহি এক গ্লাস গরম দুধ খেতে দিয়ে মুগ্ধকে।মুগ্ধ দুধটুকু খেয়ে শুয়ে পরে।শরিলটা তার ভালো লাগছেনা বলে অল্পতেই চোখে ঘুম নেমে এলো।
মেহেরাব সাহেবের চোখে আজ ঘুম নেই।কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার জন্য।তার নিজের মেয়ের ঘর তার আরেক মেয়ে এভাবে ভেংগেদিলো এটা সে মেনেনিতে পারছেনা।হাজার হোক ছেলেমেয়ে দুটোকে সে খুব ভালোবাসে।ছেলেটা যে সেই পর হলো আজ ও তার সাথে ঠিক করে কথা বলেনা।মেয়েটা তার কাছে থেকেও না থাকার মতো ছিলো।অবশ্যো সেওতো মেয়ের তেমন খোজ খবর নেয়নি।আজ সায়মা তার মেয়ের জীবন্টা নষ্ট করে দিলো।সালমার এতে যেনো কোনো ব্রুক্ষেপ নেই।তার মেয়ে এতো নোংড়া একটা কাজ করলো আর সে কিছুই বল্লোনা।কি সুন্দর আড়ামে ঘুমাচ্ছে।মেহেরাব এখন বুজতে পারছে।আরিশের সাথে বিয়ে দিয়ে সে তার ওইটুকু মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে নিজ হাতে।সেদিন যদি সে রাজি না হতো আজ তাহলে তার মেয়েটার জীবন্টা এভাবে নষ্ট হতোনা।আজ হাহাকার করছে তার বুকের ভেতর।

রাত ৩টায় ঘরে ফিরেছে আরিশ।সারাত ডিস্কোতে ছিলো সায়মার সাথে।অনেক বেশি ড্রিংক করে এসেছে সে হাটতেও পারছেনা।তাই সায়মা তাকে নিয়ে এসেছে।আরিশকে বেডে শুইয়ে দিয়ে সায়মা তার পাশে বসলো আরিশের কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে আজ্ঞুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে আর বলছে,

সায়মা:বড্ডো বেশি বোকা তুমি আরিশ।তাইতো আমার পাতা জালে এভাবে পা দিলে।কি করবো বলো সয্য হতোনা তোমাকে অই মুগ্ধের সাথে।তুমি সবসময় মুগ্ধ মুগ্ধ করতে।শুধু তুমিনা ছোট থেকে সবাই ওই মুগ্ধকে চায়।আমাকে কেউ চায়না।তাইতো ওকে আমার সয্য হয়না।তাইতো আমি মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম ওকে কোনোদিন আমি সুখি হতে দেবোনা।আমার ইচ্ছেতেই তোমার বিয়ে হয়েছিলো ওর সাথে আর এখন আমার ইচ্ছেতেই তোমাদের আমি আলাদা করে দিলাম।অই বেচারিতো জানেইনা কিছু।ইসস কি কষ্টটাই না পাচ্ছে ও। এটাই আমি চেয়েছি।আর আমি সাকসেস্ফুল।
সায়মা আরিশকে ভালোভাবে রেখে চলে আসলো।এখনো তার বড় একটা কাজ বাকি যেটা করলে সে রকদম সাকসেস্ফুল।

সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেংগে যায় মুগ্ধের।উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নেয় সে।মনকে শান্ত রাখার একটা বড় ঔষধ হলো এই নামাজ।নামাজ পরলে মনটা একদম ভালো থাকে।শরিলটাও ফুরফুরা লাগে।মুগ্ধ উঠে রান্না ঘরের দিকে যায়।আজকে সে নিজ হাতে ভাইয়ের জন্য আলুরপরাটা আর আলুরদম বানাবে।মুগ্ধ সব জায়জোগার করে বানানো শুরু করলো নাস্তা।রুহি উঠে এসে মুগ্ধকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
রুহি:একি তুই রান্না ঘরে কি করছিস পাখি।
মুগ্ধ:নাস্তা বানাচ্ছি ভাবিপু।

রুহি:নাস্তা বানানোর জন্য আমি ফুলিতো আছি।তুই কেন কষ্ট করে এসব করতেগেছিস।
মুগ্ধ:উফ ভাবিপু কোনো কষ্ট না আমি ভাইয়ার জন্য বানাচ্ছি এগুলা।ভাইয়ার এগুলা অনেক পছন্দের।
রুহি:জানি কিন্তু তোর ভাই শুনলে রাগ করবেতো।যে বাসায় কাজের লোক থাকার পরেও তুই রান্না ঘরে আসছিস।
মুগ্ধ;কিচ্ছু হবেনা তুমি চিন্তা করোনা।
রুহি আর কিছু বলেনা সে জানে বলে লাভ নেই তাই সেও মুগ্ধকে হাতে হাতে সাহায্য করতে লাগলো।
নাস্তার টেবিলে আজ নতুন নাস্তা দেখে অবাক মেহের।কত বছর পর আলুরপরাটা আলুরদম দেখলো সে।এই খাবার গুলো মায়ের হাতের খুব প্রিয় ছিলো তার।মা চলে যাওয়ার পর আর এগুলা সে মুখে দিতোনা।রুহি বানাতে চাইলেও বানাতে না করতো।আজ এগুলা দেখে অনেক অবাক হয় সে।

রুহি:অবাক হবার কিছু নেই পাখি এগুলা তোমার জন্য বানিয়েছে।
মেহের:চড়ুইপাখি কেন রান্না ঘরে গেলি তুই বাসায় কাজের লোক আছেতো।
মুগ্ধ:কাজের লোক আছে আমিও জানি।কিন্তু আমি তোমাকে আমার হাতে এগুলা বানিয়ে খাওয়াবো বলেই বানিয়েছি।আমি জানি আম্মু মারা যাওয়ার পর থেকে তুমি এগুলা খাওনা।তুমার খুব পছন্দের খাবার এটা।
মেহের কিছু না বলে খাওয়া শুরু করলো।একদম মায়ের মতো করে বানিয়েছে মুগ্ধ।মাসাল্লাহ তার বোন শুধু দেখতেই মিষ্টি না হাতের সব কাজ ও তার মাসাল্লাহ।মেহের আজ অনেকদিন পর ভোরপেট নাস্তা করলো।খাওয়া শেষে মেহের মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বললো,

মেহের:কাল থেকে তুই কলেজে যাবি।আমি তোর জন্য নিউ কলেজে এডমিশোন করিয়ে দিয়েছি।আগামিকাল থেকে ক্লাস।
মুগ্ধ:কিহ কলেজ! এর ভিতর তুমি কলেজে এডমিশন করিয়ে দিয়ে এলে ভাইয়া। মাত্র তো ডিভোর্স হলো এখনি বাহিরে গেলে লোকে খারাপ ভাব্বে।
মেহের:So What!কে কি ভাবলো তাতে তোর মাথা ঘামাতে হবেনা। তোর এই ভাই যখন আছে তখন তোর টেনশনের দরকার নেই।আগামিকাল থেকে তোর ক্লাস এটাই ফাইনাল।
আ ভাইয়া,,,
ও ওও অস্তিটা বুজতে পেরে বোনের হাত দুটোআ ধরে বলে,

মেহের:যেখানে একটা শেষ হয় সেখানে থেকে ও নতুন শুরু হয়ে। #শেষ_থেকে_শুরু হয় নতুনআ কিছুর।তোর জীবনে আরিশের অধ্যার শেষ।এখন তোর জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু।তুই দুনিয়াকে দেখিয়ে দিবি ডিভোর্স হলেও সেই নারী সব পারে।কি পারবিনা চড়ুইপাখি।
মুগ্ধ:হুম ভাইয়া পারবো।
মেহের:এইতো আমার লক্ষ্যি বোন।

বিকালে রুহি আর মুগ্ধ একটু বাহিরে এসেছে মুগ্ধের কিছু দরকারি জিনিশ নিতে।তখন পাড়ার কিছু মহিলা মুগ্ধকে দেখে কানাঘুষা করা শুরু করলো বেস জোরেজোরেই বলতে লাগলো,
প্রথমজন:দেখছেন ভাবি অইজে রুহি ভাবির ননদ। শুনেছি কাল ডিভোর্স দিয়ে স্বামীকে ভাইয়ের এখানে এসেছে।কি মেয়ে দেখছেন স্বামীকে ছেড়ে ভাইয়ের কাঁধে এসে উঠেছে।
দ্বিতীয়জন:আরে ভাবি এসব মেয়েরা কি আর সংসারি হয় নাকি। দেখেন গিয়ে নিশ্চই কোনো বাজে কাজ করতো তাই স্বামী ছেড়ে দিয়েছে।

প্রথমজন:হ্যা ঠিক বলেছেন।এদের এই রুপ দিয়ে এরা শুধু ফাসাতে জানে সংসার করতে জানেনাকি।এই জন্যেইতো ডিভোর্সি।
মহিলা গুলোর কথা শুনে লজ্জায় ঘৃণায় মুগ্ধের চোখে পানি এসেগেছে।এই একটা বিষাক্ত দাগ যে তার নামের পাশে এসে লাগবে সে কল্পনাও করেনি।রুহি মহিলাগুলোকে কিছু বলতে যাবে তখন পিছন থেকে মেহের বলে উঠে,,
মেহের:আর আপনারা তো সমাজের সেই নর্দমার কীট যারা এই সমাজটাকে ধ্বংস করছে।
মেহের এত্তখন মহিলা দুটোর কথা চুপ করে শুনেযাচ্ছিলো রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে।মেহের আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসেছিলো মুগ্ধকে নিয়ে কেনাকাটা করতে যাবে বলে।বাসায় এসে ফুলির থেকে শুনে তারা এই একটু বাসার সামনে গেছে।মেহের সেখানে এসে দেখে এই অবস্থা।মেহের মহিলা দুটোর দিকে এগিয়ে এসে আবার বলতে লাগলো,

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১

মেহের:মিস শীলা শুনেছি আপনার মেয়ের দুই বিয়ে মানে প্রথম ঘর থেকে স্বামী তাড়িয়ে দিয়েছিলো অন্য একজায়গায় পরকিয়া ছিলো বলে।আর দ্বিতীয় বিয়ে দিয়েছেন যেখানে সেখানে শুনেছি স্বামীর আগের দুই বউ আছে।আর আপনি মিস লায়লা আপনার শুনেছি তিন বিয়ে।প্রথম দুই বিয়ে ভেংগেগেছে আপনার কুটনামির জন্য এরপর শুনেছি এক মুরাদটাকলাকে নাকি বিয়ে করছিলেন তার অগাধ সম্পদ দেখে।বর্তামানে আপনি সিংগেল মাদার কারন সেই স্বামীও আপনাকে ছেড়ে দিছে কি তাইনা।

এখন আমাকে আপনারা বলেন কোন ভিত্তিতে আপনারা আমার বোনকে এত বাজে কথা বলছিলেন।নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখছেন।শুনেন অন্যের গায়ে ময়লা লাগানোর আগে নিজের শরীর চেক করে নেবেন।কারন ময়লা আপনার গায়েই আগে লেগে আছে।ফারদার আমার বোনের সাথে এমন করলে আমি আপনাদের এই মহল্লা ছাড়া করতেও দুইবার ভাব্বোনা।আমার দুনিয়া আমার বোন।আর ওকে কেউ আঘাত করলে তাকে আমি ছাড়ে কথা বলবোনা।মাইন্ড ইট।
মেহের রুহি আর মুগ্ধের কাছে এসে ওদের নিয়ে চলে গেলো।আর অই দুই মহিলা লজ্জা অপমানে মাথা নিচু করে রইল।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ৩