সঞ্চারিণী পর্ব ৪৯+৫০+৫১

সঞ্চারিণী পর্ব ৪৯+৫০+৫১
আফনান লারা

-‘তাকে বুঝতে দেওয়া যাবেনা যে আমরা ঐ দালানে যাব ফলো করতে।স্বাভাবিক বিহেভ করবা।ঠিক আছে?’
শাওন পেছনে তাকিয়ে দেখলো মেধা উধাও।
এক ছুট লাগিয়ে ওকে মেইন দরজার ফটকে গিয়ে থামিয়েছে শাওন।সে যাচ্ছিল মিঃAকে ধরবে বলে।শাওন ওকে থামিয়ে শান্ত হতে বললো।সোফায় বসিয়ে দিয়ে কিছুটা ক্ষীণ গলায় জানালো আজ তারা আরিফার রুমে ঘুমাবে।ঐ রুমটা আকস্মিক আশা ব্যাক্তির জন্য ছেড়ে দেওয়া হলো।সে একা একা বসে শূন্য রুমটা দেখতে থাকুক,তার সময় নষ্ট হোক।শত্রুর সময় নষ্ট করতে যে কি আনন্দ তা এখন টের পাওয়া যাবে।শাওনের ওমন কথায় মেধার শান্তি হলোনা।বরাবরের মতন সে দ্রুতগামী।

কোনো কাজকে ফেলে রাখবার মতন মেয়ে সে নয়।যখনকার কাজ তখনই শেষ করে তারপর সে ঘুমাতে চায়।কিন্তু শাওন তার এই স্বভাবে তালা মেরে ওর হাতটা ধরে আরিফার রুমে চলে আসলো।আরিফা তখন দেয়ালিকা লাগাচ্ছিল।শাওন ওকে বললো আপুর কাছে গিয়ে ঘুমাতে।ভালো মেয়ের মতন সে চলেও গেলো সময় করে।শাওন দরজাটা লাগিয়ে মেধার সামনে এসে বসে বললো কাল সকাল থেকে কাজে লেগে পড়ে যেতে হবে।রেদোয়ানের কেসটাতে এখন এমন সময় এসেছে যে এভাবে ফেলে রাখা যাবেনা।রাখলেই মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে যাবে।হয় তারা মরবে,ধরা খাবে আর নাহয় একের পর এক অফিসারের বিপদ ঘনিয়ে আসবে কালক্রমে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেধা অবুঝের মতন তাকিয়ে প্রশ্ন করলো তাদের এখন কি করা উচিত তাহলে।শাওন স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে পড়লো পাশেই।চোখদুটো বন্ধ করে বললো,’এই হলো চড়ুই পাখি।দূরন্ত চড়ুই পাখি দেখেছো?নারীরা কিশোরী বয়সকালে ছটফটে থাকে।তাদের মায়ায় ধরা পড়ে যেতে হয়।ঠিক সেরকম চড়ুই পাখি যৌবনে অনেক শক্তিশালী আর বুদ্ধিতে পরিপক্ব হয়ে ওঠে।পটু হাত আর যন্তপাতি ছাড়া তাদের ধরা বড়ই মুশকিল।সে কি বলছি।একেবারে দুঃসাধ্যের সমান বলা চলে।রেদোয়ানের কেসের সাথে যুক্ত সব ব্যাক্তি ঠিক সেরকমই।একেকজনকে ধরতে আমাদের কতগুলো দিন নষ্ট করে আসতে হলো।এবার আরেকজন জুটেছে। না জানি তাকে খুঁজতে আবার কার মৃত্যুর অপেক্ষা করতে হয় কে জানে।তবে আমি এবার হাল ঢিলে করে ধরছিনা।শক্তপোক্ত হাতে ধরেছি।ভাত,ঘুম সব ছাড়া দিয়ে এই কেস আমি নিজ হাতে শেষ দেবো।

ভেবেছিলাম রেদোয়ানের কেস কাল সকালেই শেষ হয়ে যাবে।কিন্তু বোমা বিষ্ফোড়ণ ঘটিয়ে যে শেষ শত্রু এসে পাড়ি জমিয়েছে তাতে মনে হয় আরও কদিন সময় লাগবে।এটাই বুঝলাম এই ব্যাক্তি হলো মূল মাস্টারমাইন্ড।
আশার বাবার মৃত্যু!!,এ্যামিলি হত্যা,একের পর এক প্রমাণ লোপাট এই সব কিছুর পেছনে একমাত্র এই ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আছেন।নাহলে রকির কি সেই সাধ্য যে সে তার প্রেমিকা এ্যামিলিকে মারবে??
রকির চরিত্র ঢিলেঢালা হলেও সে যে নারীর শরীরের প্রেমে পড়ে সেই নারীকে মরার আগ পর্যন্ত ভুলবেনা।যেমন ধরো তুমি।

রকির যত অনিষ্ট সব তুমিই করেছো।তারপরেও দেখো লালসার চোখে তোমায় দেখছিল।ঘৃনাবোধ কাজ করছিলনা তার মনে।আমরা সবাই ভেবেছিলাম পথের কাঁটা সরাতে এ্যামিলিকে সে মেরেছে, এটা নোহাত বোকা বোকা কথা বলেছিলাম আমরা।সে এ্যামিলিকে মারেনি।বরং বাধা দিয়েছিল বটে।অন্তঃপুরের কথা তো আর আমাদের কানে আসবেনা!

এ্যামিলির স্বাদ সে নিয়েছিল তাই কখনও ভুলেও ওকে মারতে চাইবেনা।রকি তো আশাকে মেরেছিল।আশাকে হয়ত সে ছুঁয়ে দেখেনি,হয়তবা ওমন চোখে দেখেনি।দেখলে আজ আশাও মরে থাকত না।
যাই হোক পেছনে লুকায়িত মানুষটাকে আমরা খুঁজে বের করবো’
এতবড় ভাষণ দেবার পরে শাওন দেখলো তার নতুন বউ নতুন বউয়ের ন্যায় ঘুমিয়ে পড়েছে।রাগ হলো কিছুটা কিন্তু মেধার ঘুমন্ত চেহারার রুপের সামনে সেটা চাপা পড়ে গেলো।ওর নরম গালে হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করলো।হাত বাড়িয়ে গালে স্পর্শ করেই আবার সরিয়ে নিলো শাওন।

মেধার মধ্যে এমন কি ছিল যে এতদিনের রশ্নি নামক ভ্রমটাকে যে ধুয়ে মুছিয়ে দিতে পারলো।অথচ মেধাকে সে আজ পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখলোনা।তাহলে এত কিসের টান তাদের মাঝে?
মেধার তুলোর মতন নরম গালটাকে ছেড়ে আজ চোখ আঁটকে গেলো সেই ঠোঁটজোড়ার ওপর যেটার দিকে আজ পর্যন্ত সে আগ্রহ নিয়ে তাকায়নি।তাকাতে চায়নি।নেশাগ্রস্থ হলে ঐ চোখের মায়ায় হয়েছে তবে ঠোঁট সে তো আজ নতুন করে দেখা।

ছেলেরা মেয়েদের ঠোঁট কেন দেখে??শুধুই কি দেখার জন্য দেখে?নাকি অধিকারবোধ আছে বলেই দেখে?
যদি তাই হয় তাহলে কি আজ সেই অধিকার ফলানো যাবে?মেধা কি রাগ করবে নাকি সাঁই দেবে??
সে তো ঘুমন্ত।তাকে জাগিয়ে তোলা দরকার নাকি না জাগিয়েই তার অগোচরে অধিকার খাটানো উচিত?
এ তো অন্যায় করা হবে তার সাথে।কিন্তু তাকে জানিয়ে এত বড় স্পর্ধার কাজ করতে হাত কাঁপে।ঠোঁট ছোঁয়াতে তো বুক কাঁপবে।ঠোঁট ও কাঁপতে পারে।

এতসব ভেবে মাথায় হাত রেখে শাওন বিছানা ছেড়ে আরিফার পড়ার টেবিলের কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালো।হঠাৎ এসব কি ভাবছে সে?এর কারণ কি।এতক্ষণ তো বেশ অফিসের কথা হচ্ছিল তাহলে মেধা সেসব ছাড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেওয়ায় বিষয়বস্তু পল্টি খেলো কেন?

টেবিলে হাত রেখে শাওন এক দৃষ্টিতে মেধার পিঠের দিকে চেয়ে আছে।জর্জেটের শাড়ী মানুষ কেন যে পরে!!!
মেধার গায়ে দেখে জর্জেটের শাড়ীকে সব চাইতে খারাপ মনে হচ্ছে শাওনের।তবে মেধা তার স্ত্রী আর সেই নারী জর্জেটের শাড়ী পরেছে ভেবে খারাপ শব্দটা উল্টে সহকারী বস্তুতে পরিণত হয়েছে।যেন শাড়ী বলে দিচ্ছে- ওহে শুনো!!আমি তোমার স্ত্রীর গায়ে পরিহিত শাড়ী। যে শরীর তুমি দেখছো তা একান্তই তোমার ব্যাক্তিগত।লজ্জা করোনা!!’

শাওন টেবিল খাঁমছে ধরে চোখ সরিয়ে নিলো।না জানি আজ মনের মধ্যে এ কোন ধরনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে।এ রুমে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবেনা।মেধা আমাকে পাগল করে দিতে জর্জেটের শাড়ী পরেছে বুঝতে পেরেছি আর অসময়ে ঘুমিয়ে পরা তার সংজ্ঞা!!ঘুম ভাঙ্গুক ওর!! কড়ায় গন্ডা সুদ তুলবো!’

শাওন দরজা খুলে বের হতেই তৃনা আপুর সামনে পড়লো।আপু যেন ওকেই ডাকতে এসেছিল এদিকে।ওকে দেখে বললো খেতে আসতে।মেধাকেও যেন ডেকে আনো এটা বলে সে চলে গেছে।শাওন পেছনে তাকিয়ে মেধার মুখ দেখে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো।তৃনা আপু অনেক কঠিন কাজের দায়িত্ব দিছে বলে মনে হচ্ছে।
মেধা এপাশ ওপাশ করতে করতে বিছানার কিণারায় চলে এসেছিল
শাওন ওকে দেখতে যেয়ে কিরকম একটা ভাবনায় ডুবে ছিল।মেধা যে কোণা থেকে ধপাস করে পড়তে পারে তা বুঝে উঠতে পারলোনা সে।

যেমন হওয়ার তেমনটাই হলো।মেধা ধুরুম করে নিচে পড়ে গিয়ে তার অসময়ে আসা ঘুম বাপ বাপ করে পালালো।কুনুই চেপে ধরে মাথা তুলে তাকালো সে।ততক্ষণে শাওনের ভাবনাও ভেঙ্গে সজাগ হয়েছে তার দেহ।মেধা রাগান্বিত হয়ে বললো,’দেখলেন না আমি কোণায় এসে শুয়েছি?কি দেখেন সারাদিন? আশ্চর্য ‘
শাওন ছুটে এসে ওর হাত ধরে উঠাতে উঠাতে বললো,’জানিনা আসলে একটা কিছু ভাবছিলাম বলে খেয়াল করতে পারিনি।ব্যাথা পেলে?’

-‘না আরাম পেলাম।খুব আরাম যে কোমড়ে ব্যাথা ধরে গেলো।কেমন স্বামী আপনি?হাতের ব্যাথায় একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর আপনি কিনা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন কতক্ষণে আমি দুম করে নিচে পড়বো?’
-“মোটেও না।আমি বললাম তো একটা কিছু ভাবছিলাম।বুঝে উঠার আগেই তুমি পড়ে গেলে।যা দেখলাম বিছানায় একটা বেড়া লাগাতে হবে।।ঐ যে ছোট বাচ্চাদের দেয় না সেরকম বেড়া’
-” ছাড়ুন ওসব!এটা আরিফার রুম।তার বিছানাটাও ছোট।এর কারণেই পড়ে গেলাম আমি।’
-“তৃনা আপু খেতে ডাকছে চলো ডিনার করবে’
-‘আমার খিধে নেই।আপনি খান গিয়ে।’

শাওন শুনলোনা।মেধার হাত ধরে নিয়ে গেলো ডিনার করতে।
মেধার ঘুমের সময় শাওন যে আজ তাকে দুচোখ খুলে দেখেছে তার কিঞ্চিত টের টুকু মেধা পায়নি।তবে শাওনের এরকম ইতস্ততবোধ দেখে কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে তার প্রতি।
শাওন এক চামচ খাবার মুখে দেয় আর এক নজর মেধার দিকে তাকায়।অন্যসময়ে ভুলেও তাকাতো না।গাপুসগুপুস করে শুধু খেতো সে।আশেপাশের খবর থাকতোনা তার।তাহলে আজ কি হলো মানুষটার?
তৃনা আপু নিজ হাতে আরিফাকে খাইয়ে দিচ্ছেন।মা বাবা সেই কবেই খেয়ে উঠে গেলো।বাকি রইলো তারা চারজন।
শাওনের চোখ ধরে গেছে এতবার উত্তর দক্ষিণ তাকাতে তাকাতে।শেষে মাঝ পথে খাওয়া থামিয়ে সে চললো আরিফার রুমের দিকে।

মেধা খেয়াল করলোনা।চুপচাপ নিজের খাবার খাচ্ছিল এমন সময়ে তৃনা মুখ তুলে বললো,’খেয়াল করেছো কিছু?’
-‘কি খেয়াল করবো?’
-‘শাওন কতবার যে তোমায় দেখেছে হায় আমি গুনেও শেষ করতে পারিনা।জানিনা ভাইটার কি হলো।তবে যাই হলো খুব ভালো হলো।আমরা তো তাই চাই।শাওন যেন মনের ভ্রমটাকে দূরে ঠেলে তোমায় আপন করে নিক।তা কি জাদু করলে শুনি?আমার বরটা কেমন নিরামিষ হয়ে গেছে।নুন হলুদ ছাড়া তরকারির মতন।একটা দুটো টিপস তো দিতো পারো আমায়’

-‘আমি নিজেও জানিনা কি জাদু করলাম যে পাথরে আজ ফুল ফুটিলো।নাকি সবই তোমার ভাইয়ের ছলনা?কাল সকাল অবধি দেখি তারপর টিপস লিখে দেবো নাহয়’
-‘এ্যাই!আমার ভাই ছলছাতুরি জানেনা।বড়ই সরল।’
-‘তা তো আমি জানি সরল নাকি অসরল!’
-‘তুমি বোন শোবার ঘরে যাও।ভাই আমার অপেক্ষা করছে তোমার’
মেধা তৃনা আপুর কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে ফ্রিজ থেকে মাল্টা বের করে কয়েক পিস করে কেটে হাতে প্লেট সাজিয়ে নিয়ে শাওনের সামনে দাঁড়ালো।শাওন আরিফার একটা খাতা পড়ছিল।মেধার হাতে মাল্টা দেখে বললো,’আমি টক খাইনা।একেবারে অপছন্দের ফল এটা।’

-‘আপনাকে খেতেই হবে’
-‘জোর করছো নাকি আদেশ?’
-‘আদেশ না মানিলে জোর করিতে বাধ্য হবো বৈকি!’
শাওন এক পিস নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে মুখের কাছ থেকে নিয়ে এসে বললো,’না আমার দ্বারা এই অসাধ্য সাধন হবেনা’

-‘লবণ ছিঁটিয়ে দিয়েছি।টক কম মনে হবে।খেয়ে দেখুন না।নতুন বউ আবদার করছে তার আবদার তো স্বামীরা ব্যস্ত হয়ে পালন করে আর সেখানে আপনি তোয়াক্কাই করছেননা’
শাওন চোখ মুখ পূর্ব থেকে খিঁচিয়ে মাল্টা মুখে দিয়ে কারেন্টের শক খাওয়ার মতন নড়ে বসলো।মেধা হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়েছে।
শাওন খোসা ফেলে বললো,’রাত করে ঠাট্টা করতে ইচ্ছে হলো তোমার?আমি মাল্টার নাম নিয়েছিলাম?’
-‘টক টেস্ট করিয়ে দেখলাম আপনাকে রশ্নি ধরেছে কিনা।টক টেস্ট করিয়ে বোঝা যায় পাছে ভূতের ছায়া আছে কি নাই।বুঝলেন স্যার?’
-‘বোসো এখানে’

মেধা জানালার সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে দুষ্টুমির ছলে বললো,’বলুন শুনছি’
শাওন বিছানা থেকে নেমে মেধার পাশে এসে সেও হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।দুজন দুজনের চোখ দেখছে এখন।মেধা নড়েচড়ে বললো তার আর দাঁড়িয়ে থকা হবেনা।চোখে যে ঘুম এসেছিল ধপ করে পড়ে সে ঘুম চলে গেলেও আবার ফেরত চলে এসেছে।তাই সে এখন ঘুমোতে চায়
শাওন কি কিছু বলবে?নাহলে যে যেতো।

শাওন মেধার চোখের দিকে চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারলোনা।অথচ মেধার আশার আগ পর্যন্ত কত রচনা করেছিল পাঠ করবে বলে।এখন সেই রচনার ভূমিকা টুকু দিতে পারলোনা।শুধু বললো আচ্ছা ঘুমাও তাহলে।মেধা চলে গিয়ে শুয়ে পড়েছে।শাওন লাইট অফ করে ওর বিপরীত পাশে গিয়ে বসে থাকলো।দুজনে আজও অপরিচিত।
-‘পরিচিত হতে কি করতে হয়?জীবনে একবারই প্রেম করা হয়েছিল।তাও রশ্নির সাথে।এরপর আর প্রেমকে পুনরায় জাগানোর সাহস তার হয়নি।হবে বা কি করে।এতদিন তো রশ্নি ছিল।’

এক রাশ মন খারাপ চাপিয়ে শাওন পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছে।আরিফার রুমের ল্যাম্পশ্যাডে গোলাপি আলো জ্বলে।শাওন সেই আলোতে হাত উল্টে পাল্টে দেখছিল।তার হাত গোলাপি মনে হয়।হঠাৎ কানে শুনতে পেলো ফিসফিস করে বলা একটা বাক্য।
বাক্যটি ছিল এরুপ’আমি কি আপনাকে জড়িয়ে ধরতে পারি?’
শাওন মুখ ঘুরালোনা শুধু বললো, ‘নেশা বাড়াতে চাওও?’
আবারও ফিসফিস করে শোনা গেলো,’নেশা কি বাড়াবো?আপনি তো এমনিতেও নেশাগ্রস্থ হয়ে আছেন।আমি তো আগুনে তুষ ঢাললাম আর কি!’

শাওন হাত বাড়িয়ে মেধাকে টেনে কাছে নিয়ে আসলো তাও পেছনে তাকালোনা।মেধা ওর পিঠে মুখ ডুবিয়ে চুপ করে আছে।
নিরবতা এখানে শেষ হলোনা।শাওন মুখ ঘুরিয়েছে।মেধা চোখ মেলে তাকালো।
শাওনের শক্ত পিঠে মুখ গুজে রাখতে এতক্ষণ বেশ লাগছিল তার।শাওনটা কেন যে পিঠ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো।ভালো লাগার মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলো।তবে এখন যে পাশ করে শুয়েছে সেপাশ থেকে ভালো লাগা খোঁজার সময় এসেছে মনে করে মেধা হাতটা শাওনের বুকের উপর রেখে ক্ষীণ স্বরে জানালো সে শাওনকে পছন্দ করে।শাওন অবাক হলোনা।চুপ করে রয়ে গেলো ঠিক আগের মতন।যেন কথাটা সে বহুবার শুনেছে।মেধা ভাবলো শাওন হয়ত শুনতে পায়নি।তাই কথাটা সে আবারও বলে ফেললো।কিন্তু এবারও শাওন চুপ হয়ে আছে দেখে মলিন মুখে প্রশ্ন করলো কেন শাওন এমন নীরব হয়ে আছে।

শাওন বললো সে জানে মেধা তাকে পছন্দ করে।মেধা আশানুরূপ বললো,’তাহলে উত্তর দিলেন না যে?’
-‘কিসের উত্তর শুনতে চাও?তুমি যেটা শুনলে খুশি হবে আমি সেটাই বলবো এখন।’
-‘আমি শুনতে চাই আপনার আমাকে নিয়ে কেমন অনুভূতি হয়?’
-‘তুমি যেমনটা অনুভব করো ঠিক সেটা।তবে আমার মনে হয় আমাদের দুজনের অনুভব যেটা হয়েছে বলে আমরা মেনে নিয়েছি তার চেয়ে একটু বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে যেটা কিনা আমরা আজও মুখে আনতে পারিনি।ছোটখাটো ভালোলাগার শক্তি এতটা নয় যে এতবছরের ভ্রমকে ধামাচাপা দিয়ে ফেলতে পারে কটাদিনেই।তুমি কি একমত এটার সাথে?’

মেধা চট করে উঠে বসে মাথা মাড়িয়ে সাঁই দিয়ে বললো,’আমিও তাই ভাবছিলাম।আসলেই কি আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছি?সেটাই যদি হয় তবে সেই মূহুর্তটা কখন ঘটেছিল বলতে পারেন?আমার মাথা কাজ করছেনা।মাথার তারে ঘুরপাক খাচ্ছে মিঃA এর ঝামেলা আর রকির ঝামেলা।মাঝে মাঝে রশ্নির গায়েব হবার কথাও তারে আটকা পড়ে।কিন্তু আপনার আর আমার ভালোবাসাটা কবে হলো তাই ভাবতে গিয়ে নিরাশ হয়ে যাচ্ছি’
-‘আমিও একই ধাপে আছি।তবে এই সময়টায় ভালোবাসা কখন হলো তা ভেবে নষ্ট করবার সময় না।এখন আমাদের উচিত…. ‘

মেধা মিটমিট করে হাসছিল।শাওনকে আজ অন্যরকম লাগছে।ধাঁধা কবে মিটমাট হবে তাই ভাবছে সে।এমন সময় হাসি পেয়ে গেলো।
অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হচ্ছে ক্রমশ।শাওন হাত দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো মেধা কেন হাসছে।মেধা হাসি দিয়ে মাথাটা শাওনের কোলে লুকিয়ে ফেললো চুপচাপ।শাওন ওর শুষ্ক চুলে হাত রেখে বললো,’তোমাকে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও বাঁচাবো।একজনকে হারাতে দেখেছি, তোমাকে হারাতে দেবোনা মেধা।কখনও হারিয়ে যেওনা।
এতবার ধাক্কা খেলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবোনা।

মেধা মাথা তুলে বললো,’সঞ্চারিণীদের কেউ ধরতে পারেনা।আপনাকে জানিয়েছি বলেই আপনি জেনেছেন আমার জীবনের সত্যিটা।যদি না জানাতাম আপনার সাধ্যে ছিলনা জানার।
আমি মনে করি একটা উত্তম কাজ আমি করেছি।মানুষ নামের পশু হত্যা করেছি।অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি।তবে তাকে হত্যা করা আমার মূল উদ্দেশ্য ছিলনা।পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এমনটা করতে হলো আমায়।আমার তো লক্ষ্য ছিল আশাকে বাঁচানো।কিন্তু আমি তা পারলাম না।যা পারলাম তা কল্পনাও করিনি কখনও।
তবে আশা নিশ্চয় খুশি হতো এটা জেনে।একজন অত্যাচারীর শেষ পরিণতি এটাই তো হওয়া উচিত।ভাববেন না।আমি কখনও হারিয়ে যাবনা।মেধাকে বন্দী করা এত সহজ নয়।এখন তো তার জীবনসঙ্গী ও আছে।তাকে উঁচুতে যেতে কে ঠেকাবে?’

-‘দেখো তুমি এটা ঠিক করোনি।আমাকে কেন নিয়ে আসলে?এবার সবাই আবার খুঁজতে লেগে পড়বে।শাওন যে চালাক।আবারও ধরবে আমায়।এবার প্রমাণ করে দেবে আমি রেদোয়ানকে মেরেছি।তুমি কি তাই চাও??আমাকে সবাই সন্দেহ করুক?’
-‘চুপ থাকো।মেধার অপরাধের কথা গোপন রাখতে শাওন যে দুদিন পর তোমায় মেরে ফেলবেনা তার গ্যারান্টি আছে তোমার কাছে??আমি ঐ মেধার মৃত্যু চাই।আর কিছু চাইনা।তার জন্য যদি শাওনকে মারতে হয় তো মারবো’
-‘মেধাকে মারবে বলতে যতটা সহজ বোধ হচ্ছে তোমার ততটাই কঠিন হবে কাজটা পূরণ করতে।ওরে তুমি চেনো না?আবার চেনাইতে হবে?’

-‘থাক!ওরে তো আমি চিনিই!!!আমার মাথায় আগুন জ্বলছে।যতক্ষণ না মেধার লাশ আমার সামনে শুয়ে থাকবে ততদিন আমার ভেতরের আগুন নিভবেনা রকি ‘
-‘মেধাকে মারার আগে একবার আমাকে উপহার দিও।মেধা নামের উপহার’
-‘তোমার চরিত্র আর ঠিক হলোনা।তবে বেশ,তাই হবে।কিন্তু খাঁচার পাখিকে খাঁচায় আনবে কি করে??তাকে যে ঈগল পাহারা দিচ্ছে’
-‘তুমিও না ভাই!!মশা মারতে কামান রেডি করছো??পথে যত কাঁটা দেখবে উপড়ে ফেলতে থাকো।সবার শেষে মেধাকে রাখো তাহলেই তো হয়।

শাওন ঘুমিয়ে পড়েছে কয়েক মিনিট হলো।মেধা ওর দিকে চেয়ে ভাবছিল রশ্নির কথা।রশ্নি যে আর কখনও ফিরবেনা এমন কোনো গ্যারান্টি কি আদৌ আছে??শাওন চাইলেই রশ্নিকে আবার নিয়ে আসতে পারে।
-‘মাঝে মাঝে আশ্চর্য হতে হয় শাওন যার সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলতো ঠিক সেই মানুষটার সঙ্গে আমি নিজেও কথা বলতে পেরেছি,তাকে দেখেছি।আর এখন শাওন কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে বলে আমিও তাকে দেখছিনা।এটা ভ্রম নাকি অন্যকিছু তা তো জানিনা।

তবে আমি চাইনা সেই ভ্রম আবার ফিরে আসুক
জীবনটা যেমন চলছে তেমনই চলতে থাকুক।রেশারেশির দরকার নেই।’
নুহাশের কল এসেছে।শাওন ঘুমে বলে ফোনটা মেধাই ধরেছে।
নুহাশ জানালো রকিকে হসপিটাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,সাজিদ আর মিলনের চোখে ধোকা দিয়ে।
মেধা তৎক্ষনাৎ ফোন রেখে ছুটে গেলো তার রুমে।শাড়ী পাল্টে কোট পরে বেরিয়ে পড়তে হবে।আজকে যত কিছু হয়ে যাক না কেন রকিকে আগের জায়গায় এনে তারপর সে বাসায় ফিরবে।এই রকি অনেক বাড় বেড়েছে।নিশ্চয় নতুন শত্রু তাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে।একসাথে দুটোকে ধরতে হবে আজ।

শাওন এপাশ করে হাত বাড়িয়ে মেধার জায়গা শূন্য দেখে চট করে উঠে বসলো।চোখ ডলতে ডলতে পুরো রুমটাতে চোখ বুলিয়ে বিছানা ছাড়লো সে
মেধা কোথায় তা ভাবতে গিয়ে নিজের ফোনটাকে আরিফার টেবিলের উপর পেলো সে।ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখলো মেধা দরজা খুলে বেরিয়ে যাচ্ছে।শাওন ওর পথ আটকিয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে।মেধা সবটা বলতেই শাওন রেগে বললো,’তাই বলে এত রাতে তুমি একা চললে?মাথা ঠিক তো তোমার?

-‘একজন অফিসার আরেকজনের মুখ চেয়ে বসে থাকেনা।আমার যেটা দায়িত্ব সেটা তো পূরণ করতেই হবে।তাছাড়া আপনি খবর পেলে পরে আসতেনই।এরকম চিন্তার কি আছে?আমার হাত ছাড়ুন।আমাকে যেতে হবে’
-“শোনো!এখন তুমি শুধু অফিসার নও।আমার স্ত্রী।আমি জেনেশুনে তোমাকে বিপদের দিকে কিভাবে ঠেলে দিই?আমার জন্য পাঁচটা মিনিট অপেক্ষা করো।আমি তোমার সঙ্গে আসবো’
-‘বিপদ এর আগেও দেখেছিলাম।

নিজেকে বাঁচাতে পারি নি??পেরেছি।তাহলে এখন আপনার কিসের ভয়?’
-‘সবসময় পরিস্থিতি একই দিশায় চলেনা মেধা।বাচ্চামো করবানা।তোমাকে বললাম দাঁড়াও।আমি আসছি।শুধু গায়ের জামাটা বদলাবো।এরকম তাড়াহুড়োর কিছু নেই’
মেধা বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।শাওন ছুটে গিয়ে আলমারি থেকে অফিসের কোটটা নিয়ে পরতে পরতে থমকে গেলো।ঘাঁড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতে গিয়েও তাকালো না।হাত চলছে তার।কোটের বোতামে হাত বুলাতে বুলাতে একটা কথা চিন্তা করলো।সে আর মেধা তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে এটা নিশ্চয় পাশের বিল্ডিং থেকে আমাদের নতুন শত্রু লক্ষ করছে?

তাহলে আমরা কেন মাটি খুঁড়ছি?কেঁচো তো উপরেই আছে।কেউটে বের হবার আগে কেঁচোকে বদ করা যাক!!
কোটটা পরে শাওন মেধার সামনে এসে দাঁড়ালো।মেধা ছুটতে ছুটতে বললো,’রকিকে উদ্ধার করতে হবে।এমন ও হতে পারে নতুন শত্রু তার সার্থে ওকে মেরে দিলো।গিয়াস স্যারকে তখন কি জবাব দেবো আমরা?’
-‘মেধা তুমি সোজা হসপিটালে যাবে’
-“সেকি!আপনি যাবেননা?’
-‘আমার একটা কাজ আছে তুমি হসপিটালের দিকে যাও।আমি বাসার দিকে যাচ্ছি জরুরি কাজ মনে পড়েছে।’
-‘তাহলে আমার সঙ্গে এই রাস্তায় আসলেন কেন?’
-‘শর্টকাটে আবার যাব তাই।তুমি যাও।’

মেধা চলে গেলো।শাওন অন্য রোড দিয়ে তাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো আবার।তারপর সামনের দালানটায় ঢুকে গেলো।দরজা দিয়ে না গিয়ে বারান্দা থেকে যেতে হবে।বারান্দা যেন খোলা থাকে এই ভেবে তাদের বাসার ফ্লোরের ঠিক বিপরীত দালানটার ফ্লোরে এসে সে থামলো।বারান্দা চেক করে বুঝলো তাদের মত খোলামেলা তবে মোটা কাপড় দিয়ে তা ঢেকে রাখা।শাওন বারান্দার পাশে এসে নিচে তাকিয়ে ঢোক গিললো।পড়লে আর হাঁড়ও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।মোটা কাপড়টা একটুখানি সরাতেই সে রকিকে দেখে চমকে গেলো।তার মানে রকি এখানে আছে।যেমনটা ভেবেছিলাম সেটাই হলো।কিন্তু রকির সাথে যে থাকার কথা তাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে মনে হয়।তা নাহলে তীরে সে তরী ডোবার মতন হাল হবে।আজকে এর শেষ দেখে ছাড়বো।

রকি ল্যাংড়ার মতন হেঁটে এক সোফা থেকে অন্য সোফাতে গিয়ে বসছে।হাতে পপকর্নের বাটি।দশ পনেরো মিনিট পর পপকর্নের বাটি রেখে বারান্দার দিকে আসলো সে।মোটা কাপড়টা একটুখানি সরিয়ে শাওনদের বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলো।শাওন যে তার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল তা সে একটুও টের পায়নি।সিগারেট ধরিয়ে রেলিংয়ে হাত রেখে বললো,”মেধা দেখা দাও!!’
শাওনের মন চাইলো ওর মুখটা দুমড়ে মুছড়ে দিতে।তাও রাগটাকে দমিয়ে অপেক্ষায় রইলো এই কেসের আসল মুখের।রকি চলে গেছে সেসময়ে।গিয়ে আবার আগের মতন পপকর্ন খেতে খেতে টিভি দেখতে লাগলো।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও শাওন রকি ছাড়া আর কারোর দেখা পেলোনা।তার মানে বাসায় রকি একা এখন।তাহলে ঐ লোকটা কোথায় গেলো?এখানে তো তার থাকার কথা।’

-‘দেখো নুহাশ!!সিসি ক্যামেরায় ঐ লোকটাকে দেখা গেলো।ঐ যে ইয়েলো হুডি পরা’
-‘হুম দেখা তো যাচ্ছে তবে মুখটা স্পষ্ট না।গালে এত দাঁড়ি যে স্কেচ তৈরি করলেও আমরা সামনা সামনি তাকে দেখে চিনতে পারবোনা।’
-‘হাত দেখেছো সাজিদ??’

-‘হুম মেধা।এরকম ফর্সা হাত হয়তোবা রেদোয়ানের বংশের কেউ হতে পারে।
কারণ রেদোয়ান অনেক অনেক ফর্সা ছিল। তার পরিবারের কেউ এত কারসাজি করছেনা তো?রেদোয়ানের ভাই, বোন,বন্ধুবান্ধব কতজন হতে পারে সেই রেকর্ড আছে তোমাদের কাছে?’
মিলন হাত ভাঁজ করে কপাল কুঁচকে বললো,’রেদোয়ান যদি না মরে পলাতক হতো তাহলে আমি বলতাম ছবির এই লোকটা রেদোয়ান।কারণ বডি আর হাঁটাচলার স্টাইল বলে দিচ্ছে এটা রেদোয়ান।টিভিতে অনেকবার দেখেছিলাম তাকে’

মেধা তাচ্ছিল্য করে বললো,’তা কি করে হয়?এই কেসের মূল ভিক্টিম হলো রেদোয়ান নিজে।এখন সে আসবে কি করে?হয়ত তার বংশের কেউ হতে পারে।তার ভাই হতে পারে।দুই ভাইয়ের হয়ত হাঁটা চলা একই রকম।রেদোয়ান হবে কেন?রাত করে নেশা করেছো নাকি?
মনে মনে মেধা বললো,’আমি নিজে ওরে মেরেছি।ওর মরার সার্টিফিকেট টাও আমার লাগবেনা।মিলন যত ছাগল মার্কা কথা বলে!’

নুহাশের ফোন বাজলো।টিম নিয়ে সবাইকে ওর বাসায় আসতে বললো শাওন।নুহাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো অফিসে এত কাজ পড়ে আছে।তারা এখন শাওনের বাসায় যাবে কেন।শাওন বললো রকিকে পাওয়া গেছে।
সবাই চলে গেলেও মেধা গেলোনা।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বারবার করে দেখছে সে।মিলনের কথাগুলো কানে বাজছে তার।
নিজের মনকে শান্ত করে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস হাতে নিতেই সামনে স্টিলের পাতে একজনের প্রতিবিম্ব দেখে পেছনে তাকালো মেধা।কেউ একজন সরে গেলো।গ্লাস হাতে নিয়েই ছুটলো সে বাহিরের দিকে।একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে চলে যাচ্ছে।মেধাও তার পিছু নিলো।
অনেক রাত বলে হসপিটালে যেসব কর্মচারী ছিল সবাই শুয়ে পড়েছে নিচে বিছানা পেতে।অনেকটা নির্জন হয়ে আছে সব করিডোরগুলো।হসপিটালে ছিঁটানো এরোসলের গন্ধ আর ঠাণ্ডা পরিবেশে ভয়টা একটু বেশিই লাগছে।তাও ভয়কে তোয়াক্কা না করে মেধা লোকটার পিছু নিয়েছে।

-‘এই রকিরর মধ্যে কি সোনারুপা লুকিয়ে আছে?যতবার তারে ধরে আনি ততবার হাত ফসকে চলে যায়।বুঝলাম না রেদোয়ান বেশি কোটিপতি ছিল নাকি তার এই দূর সম্পর্কের ভাই কোটিপতি।পুরো কেস জুড়ে এর পিছু নিতে হয়েছে আমাদের সকলকে।ভাই একটু কও তো,রেদোয়ান কি সব সম্পত্তি তোমার নামে লিখে দিছে?নাকি ওর ফুলদানি গুলো তোমার নামে করে দিছে?তোমার এত দাম ক্যান বলোতো?’

সঞ্চারিণী পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮

রকি শাওনের হাতে দু চারটা ঘুষি খেয়ে আধ মরা হয়ে সোফায় বসে আছে।নুহাশের কথার জবাবে কিছু বললোনা।শাওন পায়ের উপর পা তুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’এর মুখ থেকে স্বরবর্ণ ও বের হবেনা এখন।বাক্যগঠন তো দূরে থাকুক।আমার এখন জানা দরকার দ্বিতীয় ব্যাক্তিটা কে যে ওকে আমাদের অফিসারদের চোখে ধুলো দিয়ে নিয়ে আসতে পারলো?
কত বড় গাধা ভেবে দেখেছো?আমার বাসার সামনের বাসায় রেখেছে তাকে।ভাবলো আমি এত সহজ একটা বিষয় হয়ত কল্পনা করতে চেয়েও করবোনা।

একটা কাহিনী মনে পড়ে গেলো।চোর যাতে বুঝতে না পারে স্বর্ন অলঙ্কার কোথায় লুকানো তাই সব একটা বক্সে পুরে বক্সটাকে মরিচের ডিব্বায় রেখে দিয়েছিল বাড়ির মালিক।চোর সারা বাসায় চুরি করে যাওয়ার সময় তার মনে পড়লো বউ বলেছিল বাসায় মরিচ শেষ।বাড়ি ফেরার সময় যেন মরিচ নিয়ে আসে তাই সে মালিকের ঘর থেকে মরিচের ডিব্বাটাও সাথে করে নিয়ে গেলো।
এখন কাহিনীটা সেরকম হয়ে দাঁড়ালো।তারা আমাদের বাসার সামনের বাসায় অবস্থান করলো আর ভাবলো আমরা হয়ত কল্পনাও করতে পারবোনা তারা আমাদের এত কাছে থাকতে পারে।হলো তো?অতি চালাকের গলায় দড়ি!! চালাক মরে পানিতে পড়ি!!!’

নুহাশ হাসতে হাসতে রকির পাশ থেকে পপকর্ণের বাটিটা নিয়ে শাওনের পাশে এসে বসলো।শাওন দরজার দিকে তাকিয়ে হাতের ঘড়িতে চোখ রেখেছে।চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো মেধা আসছেনা কেন।নুহাশ জানালো মেধা এখনই এসে পড়বে।
তাও শাওনের কেমন যেন ওর জন্য অনেক চিন্তা হলো।তাই সবাইকে রকির কাছে বসিয়ে সে বের হলো হসপিটালে যাবে বলে।

সঞ্চারিণী পর্ব ৫২+৫৩+৫৪