সঞ্চারিণী পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮

সঞ্চারিণী পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮
আফনান লারা

গিয়াস স্যার প্রচণ্ড রেগে আছেন পুরো টিমের উপর।তিনি নিজের উপরও রাগ দেখাচ্ছেন এই ভেবে যে আসলেই রেদোয়ানের কেসটা এরকম অদ্ভুত কেন।চাইলেই সব সলভ হচ্ছেনা কেন।
কেসের কিছু বের হলোনা এর মাঝে দুটো লাশই গায়েব??
খুনি আসলেই কি করতে চাইছে?

এরকম খুনি বাপের জন্মে দেখেননি তিনি।দু তিনবার টেবিলে ঘুষি মেরে কপালে হাত দিয়ে চেয়ার টেনে বসলেন তিনি।
শাওন এবার উঠে দাঁড়ালো কিছু বলবে বলে কিন্তু তার আগেই গিয়াস স্যার ওর দিকে তাকিয়ে বললেন,’শাওন??তুমি তো এমন ছিলে না।আমি মুখ থেকে কথা বের করার আগেই তুমি খুনির নাম বলে ফেলতে আর এই কেসে তোমার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছেনা?আর কত মাস্টারপ্ল্যান করলে আমরা রকিকে পেয়ে যাব?’
-‘স্যার ঢাকাশহর তো ছোট না।আই থিংক আমাদের টিমের মেম্বার বাড়াতে হবে।এত কম মানুষ দিয়ে পুরো টাউন সার্চ করা অসাধ্যের মতন হয়ে আসছে’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘এমনিতেও টিমে অনেক মানুষ।তোমার টিম করতে ভুল হয়েছে।সবাই একা একা সার্চ মিশনে বের হবে।দুজন করে টিম করা যাবেনা।তাছাড়া বললেই তো আর টিম মেম্বার নিয়োগ দেওয়া যায়না।হাজারটা ট্রেনিং করিয়ে তারপর দেওয়া যায়।আমাদের কাছে এখন ওসবের টাইম আছে বলো?’

শাওন চুপ করে বসে আছে।হঠাৎ করে সেখানে মেধা এসে হাজির।শাওনের মন রাখতে শাড়ী বদলে অফিসের পোশাকে চলে এসেছে।শাওনের পাশে বসে গিয়াস স্যারের দিকে ঘুরে বললো,”রকি লাশ গুলোকে নিশ্চয় তার সাথে নিয়ে হাঁটছেনা??মর্গেই তো রেখেছে।নাহলে তে দূ্র্গন্ধে থাকা যাবেনা।আমাদের উচিত মর্গে মর্গে চেক করা।এমনও হতে পারে মর্গের জিনিসপাতি কিনে সে যেখানে থাকছে ওখানেই রাখছে।
আমাদের খুঁজে বের করতে হবে হসপিটাল ছাড়া আর কারা মর্গের জিনিসপাতি কিনতে দোকানে পাড়ি জমিয়েছিল।এতে করে রকিকে খুঁজতে বেশি সময় লাগবেনা আমাদের’
গিয়াস স্যার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,’সে যাই বলো! এটাও সহজ মনে হচ্ছেনা।তাও বসে থাকার চেয়ে এটা করে দেখা ভালো।’

মিটিং শেষে স্যার চলে যাবার পরেই শাওন মেধার হাত টেনে ধরে বললো,’তোমাকে না বলেছিলাম আজ কাজে এসো না।আমি আসছি তো।তোমার আসার কি দরকার ছিল?’
-“রকিকে আমি ভালো করে চিনি।আপনি চেনেননা।তাছাড়া আমিও তো এই অফিসের একজন।আমাকে তো আসতেই হতো।এখন কাজে লেগে পড়ুন।আলাদা হয়ে কাজে যেতে হবে’
শাওন মেধার হাত ছাড়লোনা।টেনে বাহিরে নিয়ে এসে বললো,’সবাই আলাদা গেলেও তোমায় আলাদা যেতে দেবো না।আমি তোমার সঙ্গেই যাব।’

সবার চোখ এড়িয়ে দুজনে আশেপাশের হসপিটালে এসে পৌঁছালো।মর্গের জিনিসপাতির এক ভাগ যায় বিভিন্ন ফরেনসিক ল্যাবে।তো সেখানে সাজিদ গেছে খবরাখবর আনতে।বাকি যে সোর্চ আছে ওসব খুঁটিয়ে দেখতে নেমেছে টিমের বাদ বাকি সদস্যরা।
সারাদিন খাটাখাটনি করে শেষে মিলন খবর বের করতে পেরেছে আর তা হলো ফার্মগেটের দিকে একটা ছোটখাটো হসপিটালের থেকে মর্গের জিনিসপাতি ক্রয় করা হয়েছে কদিন হলো।বেশিদিন হয়নি।আর সন্দেহজনক বিষয় হলো এটা ফরেনসিক ল্যাবের জন্য না,পার্সোনাল ইউজের জন্য কেনা হয়েছিল।
তাদের কাছে ডিটেইলস আছে যার কাছে তারা সেল করেছিল তার।
এবং দেখে জানতে পারলো কোথাকার কোন মিঃজলিল।
তার সম্পূর্ণ ঠিকানাও দেওয়া।

মিলন গিয়ে দেখলো এক বিজ্ঞানীর বাসা সেটা।তাই সে ফিরে চলে এসেছিল।বিজ্ঞানীর ছবি টিমের বাকিদের পাঠিয়ে সে অফিসে ফিরে এসেছে।মেধা ফোন চেক করে বিজ্ঞানীর ছবিটা দেখে রেখে দেওয়ার পর কি ভেবে আবারও দেখতে নিলো।দাঁড়ি না থাকলে সেম রকির মতন দেখতে লাগতো।
শাওন ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে নিজেও দেখার চেষ্টা করে চোখ বড় করে ফেললো।সবাইকে এলার্ট করে দিলো ঐ বাসার উপর নজর রাখতে।আজকে রকিকে ধরতেই হবে।

এটা রকিই বিজ্ঞানীর বেশে।এমন সাজ দিয়েছে যে একেবারে চেনাই গেলোনা।
মিলন সব জিজ্ঞাসা করে এতক্ষণ সময় ধরে রকির সামনে থেকেও ওকে চিনতে পারলোনা।
রকির বাসার চারদিকে ঘেরো করে ফেলা হয়েছে অল্প সময়ের ব্যবধানে।
শাওন আর মেধা ও এসে গেছে।কোনো শোরগোল না করে কলিংবেলে চাপ দিয়েছে শাওন।ঐ বিজ্ঞানীর কাজের লোক এসে দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলো কি চাই।

শাওন পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,’শুনলাম এই বাসায় একজন বিজ্ঞানী আছেন।তার সাথে একটু দেখা করতে চাই”
-‘উনি বাসায় নেই।একটা কাজে বাহিরে গেছেন”
শাওন গান ওর কপালে চেপে ধরে বললো,’চুপ চাপ ভেতরে চলো।সাউন্ড করবেনা’
বিজ্ঞানী উপরের তলা থেকে জিজ্ঞেস করলো কে এসেছে।শাওন গান তাক করে ধরেছিল বলে ছেলেটা নিচু স্বরে বললো,’ মেহমান এসেছে।আপনাকে চাইছে’
বিজ্ঞানী সাজে রকি নিচে নামলো।শাওনকে দেখে মনের ভেতর ভয় কাজ করলেও সে বুঝতে দিলোনা।বুক ফুলিয়ে শাওনের সামনে এসে দাঁড়ালো সে।কণ্ঠটাকে বয়স্ক করে বললো,’কে তুমি বালক?’
শাওন মুচকি হেসে কাম অন গাইস বলতেই সবাই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হাজির হলো।রকি বুঝে গেছে সে ধরা পড়েছে আজ।

ঢোক গিলে পালানোর পথ খুঁজতে লাগলো সে।মেধা এগিয়ে এসে ওর নকল দাঁড়ি টান দিয়ে ছাড়িয়ে ফেলেছে।
রকি তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,’তোমার সত্যিটা সবাইকে জানিয়ে দেবো নাকি এখন আমাকে যেতে দেবে?’
শাওন রকির গলা টিপে ধরে ওকে সোফার সাথে চেপে ধরে বললো,’তোমার কথার কোনো প্রমাণ আছে নাকি মিঃ রকি ওরপে আশার খুনী!!?’
-‘প্রমাণ আছে কিন্তু হাতে আসা বাকি।তার মানে তুমিও জানো???ও হো, তুমি তো জানবেই।তুমি হলে খুনীর হাসবেন্ড।ভয় করেনা তোমার?রাতে একসাথে ঘুমাও কি করে?’
শাওন রকির গলায় চাপ দিয়ে বললো,’ভয় কেন করবে?আমি তো আর নারী নির্যাতন করে বেড়াইনা
বরং বউরে খুব যত্ন করি।তাহলে সে হঠাৎ আমায় খুন করতে আসবে কেন?’

রকির গা জ্বলে উঠলো।মেধা চুপ করে তাকিয়ে আছে।সাজিদ আর মিলন ছুটে এসে বললো,’এরে কি করবেন স্যার?’
শাওন গলা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,”রিমান্ড রিমান্ড এন্ড রিমান্ড। পুরো ঘটনা তার মুখ থেকে বের করতে হবে আমাদের।ও হলো পুঁটি মাছ।অনেক কষ্টে ধরেছি তাকে।আর জীবনে হাত ছাড়া করা যাবেনা।তিলে তিলে মেরে যত কথা আছে সব বের করতে হবে।এ্যামিলিকে কিন্তু সে মেরেছে।রেদোয়ানকেও মেরেছে কিনা সন্দেহ’
রকি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মেধা শাওনের কোটের একটু অংশ খাঁমচে ধরে রেখেছে।মনে সংশয় জাগলো এই ভেবে যে সে তো খুনী। একদিন তাকেও ধরা পড়তেই হবে।তা ভেবে শাওনের কোটটা ছেড়ে দূরে চলে আসলো সে।বাসার বাহিরে।

হাত কাঁপছে।শরীর খারাপ করছে তার।শাওন রকিকে সাজিদের কাছে হস্তান্তর করে মেধার পিছি পিছু চলে আসলো।
মেধার হাত ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,’তুমি ঠিক আছো?’
-‘জানিনা কেমন যেন লাগছে।আচ্ছা আমার তো জেল হবে তাইনা?’
শাওন মেধাকে টেনে তাদের গাড়ীর সামনে এনে দরজা খুলে ভেতরে বসতে বলে বললো,’আমি ছাড়া কেউ জানবেনা এ কথা।।আর রকি এখন বলতে গেলে কেউ বিশ্বাস করবেনা ওর কথা।হেসে উড়িয়ে দেবে’
মেধা শাওনের হাত ধরে রেখেছে।ওদিকে রকি দূর থেকে ওদের দুজনকে দেখছে।মেধাকে এক রাতের জন্য নিজের করে পাবার ইচ্ছা তাকে ভেতর ভেতরে খেয়ে যাচ্ছে।

মেধাকে পাওয়া যে কত কঠিন তা প্রথমবার ঠকেই টের পাওয়া গেছে।মালদ্বীপে ওকে কিডন্যাপ করার পর মোক্ষম সুযোগ হাতে থাকলেও মিঃ A এর জন্য সব গেলো।
ওর কারণে সুযোগ পেয়েও ব্যবহার করা হয়ে উঠলোনা।আর এখন চোখের সামনে সব দেখতে হচ্ছে।এতদিন মেধাকে শুধু হুমকি দিচ্ছিল রকি।কারণ সে,এ্যামিলি রেদোয়ান মিলে আশাকে যে টর্চার করছিল তার পাকাপোক্ত প্রমাণ ছিল মেধার হাতে।তাই এত কাছে থেকেও মেধাকে ছোঁয়ার দুঃসাহস করা গেলোনা।আর এখন চেয়েও তা হচ্ছেনা।মেধাকে কাবু করাও এত সহজ না।তবে মেধার চাহনি তাকে পাবার ইচ্ছা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে
-‘যত যাই হোক না কেন মেধাকে একদিনের জন্য হলেও নিজের করে নিতে হবে।আমাকে সে চেনে না।
আর মিঃ A তো আছেই।আমাকে ঠিক এখান থেকে বের করিয়ে নেবে।’

রকির বিরুদ্ধে যে প্রমাণ ছিল সেটা শাওনের হাতে দিয়ে দিলো মেধা।শাওন মিডিয়ার সামনে দেখাবে বলে ঠিক করেছে।এদিকে রকির মুখ দিয়ে লাশ সম্পর্কে কোনো কথা বের হচ্ছেনা।তার বাসায় আশার লাশ পাওয়া গেলেও রেদোয়ানের লাশ পাওয়া গেলোনা।আর সে ভুলেও রেদোয়ানের লাশের ব্যাপারে কোনো কৈফিয়ত দিচ্ছেনা।
শাওন রেডি হচ্ছে রিমান্ড নিতে যাবে বলে।মেধা দূর থেকে দেখছে শাওন কি করে।
এক নাগাড়ে কয়েকটা ঘুষি মারায় রকির হাল খারাপ হয়ে গেছো।মেধা শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো।আশাকে তারা যে অত্যাচার করত তার কাছে এটা কিছু না।ঠিক সেরকম করে যদি অত্যাচার করত তাহলে প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যেতো।
শাওন রকির থুঁতনি টিপে ধরে মুখ তুলে বললো,’আশাকে যেমন করে টর্চার করতে সেরকম করবো নাকি?হাতুড়ি দিয়ে মারবো?’

মেধা ভেতরে এসে দাঁড়িয়েছে।রকি ওকে দেখতে পেয়ে যা এতক্ষণ ক,খ,গ,ঘ বলছিল তাও বলা অফ করে দিছে।
শাওন পেছনে তাকিয়ে মেধাকে দেখে পানির বোতল হাতে চেয়ারে বসলো।হাঁপিয়ে গেছে সে।রকিকে চেনা যাচ্ছেনা শাওনের হাতের মার খাওয়ার পর।
মেধা কাছে ঘেঁষে বললো রিমান্ড সে নিতে চায়।শাওন রাজি হলোনা কিন্তু মেধা তো তার কথা শোনার মতন মেয়ে না।
শেষে শাওন কাজটা ওকেই দিলো কিন্তু সে সহ থেকে গেলো ওখানে।
মেধা একটা লোহার টুকরো গরম করে নিয়ে এসে হাজির হয়েছে।শাওন ফোনে কথা বলছিল।মেধাকে এমন কাজ করতে দেখে ঠিক সময়ে এসে হাত আটকে ফেলেছে ওর।মেধা আর একটুর জন্য রকির গায়ে লাগিয়ে দিতো।শাওন ওকে থামিয়ে দূরে নিয়ে এসে বললো,’এমন করে রিমান্ড নেয়না।বাকিরা দেখলে গিয়াস স্যারকে বলে দেবে।পাগল হইছো তুমি??’

-‘হ্যাঁ আমি পাগল।আমি আশার পাশে থেকেও তাকে বাঁচাতে পারিনি।সেই চিন্তা আমাকে শেষ করে দিচ্ছে,তাকে যে কষ্ট দিতো তাকে তো মেরেছি।কিন্তু ও রয়ে গেলো।ও তো কম কষ্ট দেয়নি আশাকে।একে ও মারতে হবে আমার।ঠিক সেভাবে মারবো যেভাবে আশাকে প্রতিনিয়ত মারতো এরা মিলে!!’
শাওন মেধার হাত থেকে লোহাটা ফেলে ওকে রুমের বাহিরে নিয়ে এসেছে।একটা চেয়ারে বসিয়ে হাটু গেড়ে বললো,’আমি বুঝতে পারছি তোমার চোখে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে কিন্তু এভাবে নয়।তোমায় বুঝতে হবে আশেপাশে অনেকেই আছে যারা তোমার সত্যিটা জানেনা।আমি জানি।

তারা জানতে পারবেনা এটা।তার জন্য তোমায় মানিয়ে চলতে হবে।বাসায় ফিরে যাও এখন।আমি কাজ শেষ করে আসতে রাত হবে।প্লিজ গিয়ে একটু রেস্ট নাও।কদিন এসব থেকে দূরে থাকো।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
মেধা শাওনের কথা ধরে বেরিয়ে গেছে।শাওন রকির মুখ থেকে কথা বের করতে আবারও ঢুকলো রুমে।
মেধা বাসায় ফিরে শাওনের রুমে এসে অনেকক্ষণ বারান্দায় বসেছিল।সন্ধ্যা নামার পর রুমে ফেরত আসার সময় তার মনে আসলো রশ্নিকে সে একবারও দেখেনি এতক্ষণ সময়ে।তাহলে কি শাওনের কথাই সঠিক হলো???
তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে অথচ জানতোনা।রশ্নিকে দেখা দেখির উপর গিয়ে তারা বুঝতে পারলো বিষয়টা।
এতকিছুর মাঝেও মেধার মুখে হাসি ফুটে গেলো হঠাৎ।মুখে হাসি নিয়ে আলমারির সামনে এসে অনেকক্ষণ মিটমিট করে হেসে আলমারি খুলে শাড়ীগুলোতে হাত বুলালো।শাওনের বাবা মা দুজনে মিলে আলমারি ভর্তি শাড়ী কিনে সাজিয়ে রেখেছেন শুধুমাত্র মেধার জন্য।

মেধা শাওনের কথা ভেবে একটা মেরুন রঙের শাড়ী বেছে হাতে নিয়ে আলমারি আটকে চুপ করে থাকলো আবার।
শাওন তার জীবনের একজন হবে একদিন তা ভেবেই বুঝি শাওনের মনের ভ্রমটাকে সে নিজেও দেখতো??
এটা বুঝতে আজ এতদিন দিন লেগে গেলো তাদের।কপালে হাত দিয়ে মেধা লজ্জা পেয়ে গেছে।শাড়ীটাকে নিয়ে পরে এসে ফোন হাতে নিলো শাওনকে কল করবে বলে।
তখন তৃনা আপু ডেকে বললেন আটার পানি রেডি রেখেছেন মেধা যেন রুটি বানিয়ে ফেলে।সে আরিফাকে খুঁজতে যাবে।দুপুরে ভাত খেয়ে সামনের পার্কে ঘুরতে গেছিলো সে অথচ বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো এখনও আসার নাম নিচ্ছেনা।নিশ্চয় বান্ধুবীর সাথে তার বাসায় গিয়ে ভিডিও গেমস খেলছে।

শাওনকে কল না করে মেধা শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুজে রুটি বানাতে রান্নাঘরে ঢুকলো।আটা সব মিক্স করতে করতে মনে পড়লো তৃনা যাবার পর দরজা লাগায়নি সে।তাই ছুটে গেলো দরজা লাগাবে বলে।দরজা লাগাতে আসতেই শাওনের মুখোমুখি হলো সে।শাওন সেসময়ে অফিস থেকে ফিরে এসেছিল।
মেধা দাঁত কেলিয়ে চেয়ে রইলো ওর দিকে।শাওনের অবস্থা খারাপ।
কাউকে মারলে যে এরকম হাঁপিয়ে যাবার মতন অবস্থা হয় তা শাওনকে না দেখলে বোঝা যেতো না।
টাই খুলে কাঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে সে। মেধাকে এরকম ঢুলতে দেখে কপাল কুঁচকে বললো,’বর বাসায় ঢুকলে পানি এনে দিতে হয়’

-‘হাতে আটা দেখেননা?নিজে গিয়ে খান হুহ!’
কথাটা বলে মেধা কোমড় দুলিয়ে চলে গেছে।শাওন মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে রইলো।
দূরে মায়ের রুমের আয়নাটাতে এখান থেকে দেখা গেলো আসলেই তাকে মূর্তির মতন লাগছে।এমন মার এর আগে কাউকে মারেনি সে।রকিকে পানি দিয়ে ভেজালে তাকেও অর্ধেক ভিজতে হতো।
এতসব মারের একটাই লাভ হলো, রেদোয়ানের লাশ কোথায় তা জানা গেছে অবশেষে।
-‘কিন্তু মেধা এমন বিহেভ করলো কেন?আশ্চর্য! নিজেই তো এসে ঢুলছিল।আমি ভাবলাম তার মন ভালো।মেয়েদের মন ভালো দেখলে মন চায় ঝাড়ি দিয়ে রাগিয়ে দেই।আমিও তো ঠিক তাই করলাম।’

শাওন টাইটা নিচে ফেলে রান্নাঘরে এসে দেখলো মেধা আটা ঢেলে রুটি তৈরি করছে।
ওর পাশ থেকে পানির জগটা নিয়ে শাওন ঢকঢক করে পানি খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।জগের অর্ধেক পানি তার মুখের ভেতরে গেছে আর বাকিগুলো তার সারা গায়ে এসে পড়েছে।মেধা আড় চোখে তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।

শাওন ওর পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’ভেবেছিলাম বাসায় এসে দেখবো বিছানায় আধ মরা হয়ে শুয়ে থাকবে কিন্তু তোমার এমন রিয়েকশান মোটেও আশা করিনি।কাহিনী কি?’
-‘কাহিনী কি হবে?রাতের জন্য রুটি বানাচ্ছি।আমি ভালো বউ।
ঘরের লক্ষী হতে চাই…. আমি ঘরের লক্ষী হতে চাই!!!!’

-‘গান করতে হবেনা।আমাকে তো পানি দিলেনা।ড্যাং ড্যাং করে চলে আসলে।কার বউ হতে চাও তুমি?’
মেধা ব্রু কুঁচকে বললো,’ঘরে ঢুকে বউয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে হয়।জানেন না?আবার পানি আশা করে!!আগে নিজের কর্তব্য পালন করবেন তারপর বাকিসব’
-‘আমি হাসবো?হাসার সিচুয়েশনে ছিলাম?রকিকে এমন মেরেছি যে এখন তাকে নিয়ে সাজিদ হসপিটালে আছে।
আমার অবস্থা দেখো।রুটি বানিয়ে এসে হাত পা টিপে দেবে।চিত্তবিনোদন আর কি’

কথাটা বলে শাওন কোট হাতে চলে গেলো।মেধা খুন্তি হাতে নিয়ে বললো,’দেখাচ্ছি চিত্তবিনোদন ‘
শাওন গোসল করতে গেছে। মেধা তার রুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে দুলছে।শাওন চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে মেধাকে আবারও দুলতে দেখে বললো,’এটা চিত্তবিনোদন? ‘
মেধা মুচকি হেসে পা টিপে টিপে কাছে এসে আবারও দুলতে দুলতে বললো,’ চিত্তবিনোদন লাগবে?উলে শাওন স্যার রে আমার।দেখাচ্ছি চিত্তবিনোদন! ‘
হাতের মুঠোতে থাকা এক মুঠ আটা শাওনের মাথায় ছিঁটিয়ে মেধা ঐ রুম থেকে পালিয়েছে।শাওন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।

মেধা এরকম শয়তানি করবে তা সে জানতোনা।অন্য কিছু ভেবেছিল।ভেজা চুলে আটা দল পেকে গেছে।মেধাকে বকতে বকতে ওয়াশরুমে ফেরত যাবার আগে মনে পড়লো বাসায় তৃনা নেই,মা বাবাও নেই।তারা বাবা মার্কেটে গেছেন।
-‘তাহলে আজকে মেধার খবর আছে!’

মাথা থেকে আটা ঝাড়তে ঝাড়তে শাওন রুম থেকে বের হলো।মেধা শাওনের মায়ের রুমে গিয়েছিল।উনার সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখলো উনি নেই।পরে মনে আসলো তারা তো মার্কেটে গেছেন।তার মানে বাসায় সে আর শাওন একা।
জিভে কামড় দিয়ে রুম থেকে বের হতেই শাওনের সামনে পড়লো সে।
ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।শাওন দাঁত বের করে হেসে দিয়ে মেধার হাত ধরলো টেনে।
মেধা ধপ করে ফ্লোরে বসে গিয়ে বললো,’সরি সরি।আর মজা করবোনা।চা খাবেন?পানি খাবেন?’
শাওন মেধাকে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে এসে বললো,’আটার প্যাকেট কই রেখেছো?’

-“আর জীবনে মজা করবোনা রকির কসম।প্লিজ হাত ছাড়ুন।আমি তখন গোসল করেছিলাম।আর গোসল করতে পারবোনা।প্লিজ!! ‘
-‘আমাকে দিয়েও তো দুবার গোসল করাবে,তোমাকে কি করে ছাড় দেবো?আগে বলো আটার প্যাকেট কই?’
-‘জানিনা।ও হো আটা তো শেষ হয়ে গেছে’
-“তাহলে ময়দা দিই।উঠাতে কষ্ট হবে খুব।’

এটা বলে শাওন ময়দার প্যাকেট নিলো তাক থেকে। দাঁত দিয়ে প্যাকেট খুলে মেধার মাথায় ঢেলে দিলো সব।লম্বা করে একটা চিৎকার দিয়েও লাভ হলোনা।ময়দা সব তার গায়ে।
শুধু সেটানা।সবার শেষে ওর মাথায় পানিও ঢেলে দিয়েছে শাওন।
তারপর হাসতে হাসতে চলে গেলো।মেধা চুল থেকে ময়াদার আঠা টানতে টানতে মন মত বকলো শাওনকে। তারপর উঠে দৌড় লাগালো ওয়াশরুমের দিকে।
শাওন বারান্দায় এসে বড় করে শ্বাস নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।রশ্নি আসলেই তার মনের ভ্রম ছিল?
হয়তবা।

কত কথা কথাই না শেয়ার করত ওর সাথে।
-‘হুট করে সব বদলে যাবে তা ভাবতেই পারিনি।
কত ভালোবাসতাম ওকে।আজ যদি সে বেঁচে থাকত তাহলে আমাদের জীবনটা অনেক সুন্দর হতো।
আমার জীবনটা যদিও এখনও সুন্দর তাও নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের জীবনেই পেয়ে যাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।।
অন্য কাউকে তার জায়গাটা হয়ত কখনওই দেওয়া সম্ভব না তবে দেওয়ার চেষ্টা তো করা যায়।ঐ মানুষটাতো কোনো দোষ করেনি।’

মেধা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে একটা বড়সড় বালিশ খুঁজে শাওনের গায়ে ছুঁড়ে মেরে বললো,’আপনাকে আমি দেখে নেবো!!আমার যদি জ্বর হয় তো আপনি সামলাবেন।গিয়াস স্যার যেন কিছু না বলে সে দিকটাও আপনি দেখবেন বলে দিলাম।এরপর আমি আপনার মাথায় সুপার গ্লু ঢেলে দিব মনে রাখবেন।পারলে লিখে রাখুন।’
শাওন বালিশটাকে আগের জায়গায় রেখে বিছানায় এসে বসে পা লম্বা করে দিয়ে বললো,’নাও পা টিপার কাজে লেগে পড়ো।তোমার কাজ আমি করে দিছি তোমার তো উচিত ছিল আমি বলার আগেই করে দেওয়া।তা না করে আমাকে জ্বালিয়ে মারছো।’

-‘আমি জ্বালিয়ে মারছি?’
মেধা আর কিছু বললোনা।তৃনা আপুকে যে কথা দিয়েছিল তার মান রাখতে শাওনের পাশে বসে ওর পা টিপা শুরু করে দিয়েছে চুপচাপ।
শাওন চোখ বন্ধ করে ছিল বলে ওর চোখে ঘুম নেমে এলো।
মেধা দশ পনেরো মিনিট ধরে এক নাগাড়ে পা টিপার পর শাওনের কোনো নড়চড় না দেখে ওর পা থেকে হাত সরিয়ে একটু এগিয়ে এসে শাওনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

-‘কলিগকে অনেকেই বিয়ে করে শুনেছিলাম।আর এবার নিজের জীবনেও তা দেখে নিলাম।এখনও মনে হয় বিয়েটা এই তো কাল হলো।এভাবে একটা বন্ধনে আটকে গেলাম, সাথে পথে যে মানুষটা ছিল সেও দূরে চলে গেলো।
মনে হয় সব রেডি করা ছিল।বিয়েটার অপেক্ষায় ছিল সবকিছু।
কিন্তু রশ্নি হুট করে উধাও হয়ে গেলো তা মাথায় কেন ঢুকছেনা??’
শাড়ীর আঁচলটাকে গুটিয়ে আঙ্গুল দিয়ে গিট্টু করতে করতে বারান্দার দিকে ঘুরে বসলো মেধা।রশ্নি কি সত্যি আর আসবেনা কোনোদিন?

চুলায় চায়ের পানি রেখে এসেছে মনে পড়ায় মেধা ছুটে গেলো।চাপাতা দিয়ে মনে আসলো আরও একটা কথা।
রকির নজর আজ অনেক খারাপ লাগছিল।কিরকম ক্যারাক্টার লেসের মতন তাকিয়ে ছিল।কি চায় ও??
নির্ঘাত আমাকে চায়।শখ কত!!মন চায় গোপনে গিয়ে এটাকেও মেরে দিয়ে আসি।
হাতে চায়ের কাপ নিয়ে রকির কথা ভাবছিল মেধা, তখন কলিংবেলের আওয়াজ শুনে ছুটে আসলো দরজা খুলবে বলে।ভেবেছিল তৃনা আপুরা এসে পড়েছে।কিন্তু না
একজন ডেলিভারি বয় এসেছে।

মেধা চমাকলো কারণ পার্সেল ডেলিভারি সবসময় দিনে দেওয়া হয়।রাতে তো খাবার ছাড়া কেউ ডেলিভারি দেয়না।তাহলে কি খাবারের পার্সেল এটা?
সই করে পার্সেল চেক করলো কার নাম।কিন্তু সেখানে শুধু মিঃ A লেখা আর নাম্বারের জায়গায় একটা বিদেশী নাম্বার দেওয়া
কৌতূহল নিয়ে মেধা সোফায় এসে বসলো পার্সেলটা হাতে।প্যাকেট কেচি দিয়ে খুলে ভেতরে একটা কাগজের বক্স পেলো।সেটার ঢাকনা সরিয়ে যা দেখলো তাতে দৌড়ে পালানোর মতন অবস্থা।ছোটখাটো বোমা সেট করা।
কাউন্ট ডাউন হচ্ছে।৬০সেকেন্ড পর ফেটে যাবে।

কোনো লাল নীল সবুজ কিছুরই ওয়্যার নেই যে কেটে ফেলে বাঁচা যাবে।শাওন হাই তুলতে তুলতে এসে বললো,’মনে হয় না এখন ঘুম হবে।একটা বেয়াদব মশা এসে গালে কামড় দিয়ে ঘুমটাকে ভাগিয়ে দিয়েছে আরেক রাজ্যে।আজ আর ঘুম হবেনা।চা বানাচ্ছো?’
মেধা উঠে দাঁড়িয়ে বক্স নিয়ে এক দৌড় দিলো।
শাওন ঠিক বুঝতে পারলোনা।তবে মেধার এরকম দ্রুত গতিতে দৌড়ে যাওয়াকে সে স্বাভাবিকভাবেও নিলো না।সেও দৌড় দিলো।

মেধা ছুটেই যাচ্ছে।৬০সেকেন্ড শেষ হয়েছিল মেধা যখন দালানের নিচে পা রেখেছিল তখন।বোমাটাকে দালানের সামনে ছুঁড়ে মারতেই ফেটে গেছে সেটা।
ভেবেছিল কোনো বড়সড় বোমা হবে।তবে নেহাত ছোটখাটো বোমা ছিল।তারপরেও মেধার হাত জ্বলে গেছে।সে আহত অবস্থায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে দালানের সামনে এসে চেক করলো কারোর ক্ষতি হয়েছে কিনা।শাওন এসে এই অবস্থা দেখে চমকে গেলো।সব কিছু ফেলে মেধার হাত ধরে নিচে বসালো সে।মেধা আঁচল দিয়ে হাত চেপে ধরে বললো,’রকি কোথায়?’

-‘ও তো সাজিদ আর মিলনের আন্ডারে।এই কাজ তার হতেই পারেনা।
যে হালে তাকে রেখে এসেছি কথা বলতে ওর পাঁচদিন লাগবে’
-‘রকির পরে কোথাকার মিঃA হাজির হয়েছে।তারই পার্সেল এটা।’
শাওন গার্ডদের ডেকে ঝাড়ি দিয়ে বললো,’কতবার বলেছি ইন্টারকমে কল করে আমাদের আগে জানাবে যে পার্সেল এসেছে।ডেলিভারি বয়কে ঢুকতে দিয়েছো কেন?”
-‘স্যার আমি পানি খেতে গিয়েছিলাম।আমি থাকলে তাকে আপনাদের দরজা অবধি যেতে দিতাম না’
মেধা নিচে বসে হাত ঝেরে বললো,’বড়সড় বোমা না পাঠিয়ে এরকম নরমাল বোমা পাঠানোর মানে কি?’
-“তোমার কাছে এটা নরমাল বোমা মনে হয়?হাত দেখছো নিজের?বুঝলাম না এই ভিলেনের তোমার হাতের সঙ্গে কি শত্রুতা! ‘

-“মিঃ A কি রকির সাথের কেউ?ওর থেকে কথা বের করেন আগে।আবার কোন ঝামেলা এসে ঘাড়ে পড়লো!’
-‘ওঠো।হাত ধরো আমার’
মেধা হাত নাড়াতেও পারছেনা।নিজে নিজে ওঠার চেষ্টা করছে।শাওন বুঝতে পেরে ওকে কোলে তুলে নিতে গিয়ে দেখলো বাবা মা আর তৃনা আপু আরিফাকে নিয়ে হাজির।মেধার এমন হাল দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিছে সবাই মিলে।
বাবা এক ধমক দিয়ে বললেন,’ওরে কি আমরা চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাব??কোলে নে বেয়াদব কোথাকার!সব বলে কয়ে করাতে হয়”

ধমক শুনে শাওন তাড়াহুড়ো করে মেধাকে কোলে তুলে নিলো।
মা পেছন পেছন আসতে আসতে বললেন,’কেমন অফিসার তুই?নিজের বউরে বাঁচাতে পারিস না।’
-‘তোমার পুত্রবধূ ও তো অফিসার।সে নিজেকে বাঁচাতে পারেনা?বাক্সে বোমা আছে জেনেও আমাকে কিচ্ছু বললোনা।দৌড় দিয়ে দিলো সোজা’
মেধা মুখ বাঁকিয়ে চুপ করে থাকলো।বাসায় এসে শাওনকে কেউ ধরতেও দেয়নি।তিনজন মিলে মেধার হাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছে।শাওন দূর থেকে দেখছিল।এর ফাঁকে সাজিদকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো রকি কোথায়।সে জানালো রকি অজ্ঞান হয়ে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে।তাহলে এত বড় ষড়যন্ত্রের পেছনে কার হাত হতে পারে??
A দিয়ে কার নাম হয়?

মেধা সোফা থেকে নেমে শাওনের কাছে ছুটে এসে বললো,’আমাদের হয়ত রেদোয়ানের বিদেশে থাকা পরিবারের খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।ওদের মধ্যে কেউ প্রতিশোধ নিতে আসলো না তো?’
-‘তা কি করে হয়?রেদোয়ানকে তুমি মেরেছো এটা তো আমি আর রকি ছাড়া কেউ জানেনা। ‘

মেধার ফোন বাজছে।শাওন ফোন নিয়ে ওর হাতে দিলো।আননউন একটা নাম্বার।কানে ধরতেই ওপাশ থেকে শোনা গেলো সেই কণ্ঠ যেটা থেকে মেধাকে রেদোয়ানের কেসের শুরু থেকে ফোন করা হতো।মেধা ভাবতো এটা রকির গলা।কিন্তু রকি তো হসপিটালে।তাহলে এটা কে?
-‘কি ভাবছো??আমি রকি??রকি তো হসপিটালে।আমি তো মিঃA।কেমন লাগলো আমার এন্ট্রি ধামাকা?’
মেধা বিরক্ত হয়ে ফোনটাকে শাওনের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।শাওন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে বললো,’আহা তোমার বরকে ফোন দিলে কেন?’

সঞ্চারিণী পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫

শাওন চোখ বড় করে তাকিয়ে কল কেটে ব্যস্ত হয়ে গেলো রুমে লুকানো সিসি ক্যামেরা খুঁজতে গিয়ে।মেধা হাত নাড়িয়ে বললো,’কি খোঁজেন?’
-‘আঁচল ঠিক করো’
-‘কেন?
-‘যেটা বলছি করো’
মেধা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আঁচল ঠিক করে নিলো।জর্জেটের শাড়ী বলে খানিকটা আঁচল সরে গিয়েছিল।শাওন পুরো রুম ওলটপালট করেও কোনো ক্যামেরা পেলোনা।তাহলে কি করে জানলো লোকটা যে মেধা ফোন শাওনকে দিয়েছে।ফোন আবারও বাজছে।শাওন রিসিভ করতেই ওপাশের মানুষটার অট্টহাসি শুনতে পেলো।লোকটা হাসতে হাসতে বললো,’তোমাদের রুমে সিসি ক্যামেরা কেন রাখবো?তোমাদের একটা প্রাইভেসি আছেনা?আমি কিন্তু এতটাও খারাপ না আই মিন অশ্লীল না’

শাওন বারান্দার দিকে তাকিয়ে মেধার হাত ধরে বারান্দার আরেক পাশে নিয়ে দেয়ালে হাত রেখে বললো,’এবার বলো কি করছি আমরা?’
-‘কি আর করবা।রুম খুঁজে ক্যামেরা বের করার বোকামি করছো’
শাওব মুচকি হেসে ফোন রেখে বারান্দার দিকে চলে গেলো।তাদের দালানের পাশে এবং বিপরীত পাশে দুটো দালান।তার মানে ঐ মিঃ A এসব দালানের মধ্যে একটাতে আছে।পাশের টাতে তো নেই।সামনেরটাতে হবার চান্স সব চাইতে বেশি।
মেধা কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে বললো,’আপনার কি হয়েছে বলুন তো?’

-‘তোমাকে বললাম না আঁচল ঠিক করতে?’
-‘আশ্চর্য!! জর্জেটের শাড়ী তাই একটু সমস্যা করছে।সেফটিপিন লাগালে ঠিক হয়ে যাবে।আপনার এত জ্বলছে কেন?আপনি আমার হাসবেন্ড না?আমাকে তো স্লিভলেস ড্রেসেও দেখেছিলেন আপনি।তাহলে এখন এমন করছেন কেন?একদম আঁচল ফেলে দিব! জানেন আমি কি করতে পারি?’

শাওন রেলিং থেকে হাত সরিয়ে মেধার কানের কাছে আস্তে করে বললো,’মিঃA সামনের দালানে বসে আমাদের খেয়াল করছে মিসেস অতিরিক্ত!! ‘
মেধা চোখ কপালে তুলে আঁচল ধরে শাওনের পেছনে লুকিয়ে পড়লো সাথে সাথে।

সঞ্চারিণী পর্ব ৪৯+৫০+৫১