সঞ্চারিণী পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫

সঞ্চারিণী পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫
আফনান লারা

-‘মজা করার সময় না মেধা।রকি পালিয়েছে,আমাদের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেই আজ বাসায় ফিরতে হবে।’
মেধা হাত বাড়িয়ে শাওনের গাল টিপে ধরে বললো,’ওসব পরে।আগে প্রেম ভালবাসা তারপর যাকে ইচ্ছা তাকে ধরা যাবে।কোলে নিন না আমায়’
শাওন মেধার মাথাটাকে নিজের কোল থেকে সরিয়ে সে নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত দিয়ে ফেললো।মদ সেবনে তাকে নেশায় ধরেনা তেমন।এর আগেও ধরেনি।কিন্তু আজ মাথা ঘুরে উঠলো হঠাৎ।তাও নিজেকে শক্ত রেখে শাওন গান বের করে সবার দিকে ধরে হাত উপরে করতে বললো।

সেসময়ে মেধা শাওনকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,”বাদ দেন তো এসব’
শাওন এক হাতে ওকে সরাতে সরাতে সবার দিকে তাকাচ্ছে।কাউকে পালাতে দেওয়া যাবেনা।ওদিকে মেধা নিচে বসে পড়েছে।ঠিক সেসময়ে সাজিদ,মিলন ও এসে পড়েছে।বাসায় যারা যারা ছিল সবাইকে সব দিক দিয়ে আটকে ফেলা হলো।এখানে ঐ মেয়েটা ছাড়া কেউই রকির ওতোটা ক্লোজ না।জিজ্ঞেস করে তাই বোঝা গেলো।আর ঐ মেয়েটা যে রকির দলের তা বোঝা গেছে মেধার থেকে।মেধা শাওনের পা ধরে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করে বললো লাল চুলের মেয়েটা ওকে জোর করে জুস খাইয়ে দিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেয়েটা বললো রকি শুধু তাকে এই কাজটাই করতে বলেছিল।তার সাথে রেদোয়ানের কেসের কোনো সম্পর্ক নেই।শাওন এই কাজটা সাজিদ মিলনকে বুঝিয়ে দিয়ে পানির বোতল খুঁজে সোফায় এসে বসলো।তার শরীর খারাপ করছে।এতদিন নেশায় ধরেনি আর আজ নেশা ধরে বসেছে।
ওদিকে মেধা সুযোগ পেয়ে আরও দু গ্লাস সাবাড় করে নিয়েছে।শাওন বুঝতে পারেনি।সে পানি ভেবে আরেক প্রকারের মদ খেয়ে নিয়েছিল।দুজন এবার একেবারে নেশা করে বসে আছে।
একসাথে তারা এবার রকির বাসা ছেড়ে খালি পথে হেঁটে তাদের বাসার দিকে চললো।এই গলি শেষ হলেই তাদের বাসা।
অকারণেই হাসতে হাসতে হাঁটছে দুজন।

হুশ জ্ঞান সব হাওয়া।নিজেদের বাসা পেছনে ফেলে তারা হেঁটে চলেছে তো চলেছেই।ভাগ্যক্রমে তৃনা আপুর সামনে পড়লো দুজন।
বরের সাথে ঝগড়া করে তৃনা বাড়ি ফিরছিল।ওদের দেখে দুজনকে ধরে বাসায় নিয়ে আসলো সে।বাবা বাসায় নেই।
শাওনের রুমে তাদের দুজনকে ঢুকিয়ে কোনোরকমে দরজা বাহিরে দিয়ে লাগিয়ে দিলো তৃনা।মা আরিফাকে নিয়ে পাশের বাসায় গেছে মনে হয়।
দরজা খোলাই ছিল।তৃনা মাকে ফোন করতে করতে সোফায় গিয়ে বসেছে।

-‘আচ্ছা আমাদের আটকে রাখলো কেন?’
-‘কি জানি।মেধা আমার মনে হয় আমাকে সত্যি সত্যি নেশায় ধরেছে।তোমাকে পাঁচটা দেখছি।কোনটা আসল?’
-‘সামনেরটা।এই যে আমিইইইই’
শাওন দুহাত দিয়ে মেধার মুখ ধরলো।রশ্নির চেহারা ভাসছে চোখের সামনে।শাওন হেসে ফেলে বললো,’রশ্নি দেখো তোমায় আমি ছুঁতে পেরেছি।’
মেধা ব্রু কুঁচকে শাওনকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো,’আমি রশ্নি না।আসবেন না আমার সামনে।এত কিছুর ভেতরেও আপনি আপনার ভূতুড়ে প্রেমিকার নাম নিচ্ছেন।
আচ্ছা খারাপ লোক তো আপনি!!’

রেগেমেগে মেধা ফুলদানি নিয়ে শাওনের গায়ে মেরে দিয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়েছে।শাওন কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে মেধার সামনে এসে সেও বসে গেলো।মুখ ঘুরিয়ে মেধাকে ভালো করে দেখে বললো,’বিশ্বাস করো!!আমি রশ্নিকেই দেখছি।সত্যি!’
মেধা এবার চড়ই মেরে দিয়েছে।শাওন গালে হাত দিয়ে চুপ করে আছে।রাগ দমিয়ে মেধা শাওনের দিকে মুখ তুলে তাকাতেই দেখলো শাওনের কপাল কেটে রক্ত ঝরছে।রাগান্বিত চেহারা এবার করুণ হয়ে গেলো তার।হাঁটু গেড়ে এগিয়ে এসে শাওনের কপালে হাত রাখলো সে।শাওন রশ্নি ভেবে মুচকি হাসছে শুধু।
মেধা ওর কপাল মুছে উঠে এলোমেলো ভাবে হেঁটে ড্রয়ার খুলে সব নিচে ফেলছে।কি খুঁজছে নিজেও জানেনা।ওদিকে শাওন দুষ্টুমি করে দরজাটাকে ভেতর থেকে লাগিয়ে ফেলেছে।তৃনা দরজা খুলতে গিয়ে দেখলো ভেতর থেকে আটকানো।সে পড়লো মহা চিন্তায়।বাবা মা কেউ ফোন ধরছেনা।দুই মাতাল মিলে কি কান্ডকারখানা করে বসে কে জানে।

মেধা টিস্যু নিয়ে শাওনের হাত ধরে ওকে বিছানায় বসিয়ে কপাল মুছে দিলো।শাওন এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওর দিকে।মুছা শেষে মেধা ওর পাশে বসে বললো,’রশ্নির নাম নেবেন না একদম ‘
শাওন মুখ এগিয়ে এনে ফিসফিস করে বললো,’আনলে কি হবে?’
-‘আবার কপাল ফাটাবো’

মেধাকে রাগাতে শাওন রশ্নি নামটা তিনবার বললো।মেধা এবার রাগ করে দরজার দিকে ছুটলো চলে যাবে বলে তখনই শাওন ওকে শেষ মূহুর্তে গিয়ে আটকে ফেলে বললো,’আচ্ছা তুমি রশ্নির মতন দেখতে মেধা।ঠিক আছে?’

-‘না ঠিক নেই।আমি শুধু মেধা’
শাওন মেধার খোলা চুলগুলোকে যত্ন সহকারে গুছিয়ে সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে চেয়ে রইলো নিশ্চুপ হয়ে।মেধা দাঁত কেলিয়ে শাওনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,আপনি আসলে অনেক ভালো।দেখে মনে হয় না আর কি।তবে ভালো।আমাকে ভালোবাসবেন অনেক যা বোঝা গেলো’
শাওন মেধাকে টেনে বিছানায় কাত করে ধরে বললো,’আই লাভ ইউ’
মেধা শাওনের চুলগুলোতে হাত রেখে বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,’রশ্নিকে?’
-‘না তোমায়’

-‘কি হলো তৃনা??তুই ওমন দরজা ধাক্কাচ্ছিস কেন?শাওন এসেছে নাকি?’
-“আরে মা আর বলোনা,ওরা দুজনে মদ খেয়ে এলোমেলো চলনে হাঁটছিল।আমি ধরে নিয়ে এসেছি।এখন ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে ফেলেছে’
-‘সেকি!!দুজনে মাতাল হলে তো সমস্যা।কি থেকে কি করে বসে।তোর বাবাকে ফোন দিয়েছিস?’
-‘বাবা ফোন তুলছেনা।আমার চিন্তা হচ্ছে অনেক।এদিকে ওরা কি না কি করে বসে। তাদের তো আর হুশ নেই’
-‘আমি বলি কি ওদের এমন করেই রেখে দিই।নেশা কেটে যাক’

মেধা শাওনকে সরিয়ে এক ছুটে বারান্দায় চলে এসেছে।হাসতে হাসতে বারান্দার রেলিং ধরে দুলছে সে।শাওন ও এসে পাশে দাঁড়ালো।
মেধা হাসতে হাসতে এমন অবস্থায় চলে গেলো যে হঠাৎ করে হাত ফসকে সে রেলিং পেরিয়ে নিচে পড়ে যাওয়া ধরলো।শাওন ওকে টান দিয়ে এদিকে নিয়ে আসায় দুজনে ফ্লোরে গিয়ে বসে পড়েছে এখন।
মেধার হাসি শেষ।বুকের ভেতরটায় ধরফর করছে।
ভয় পেয়ে গেছিলো সে।শাওনদের ফ্ল্যাট অনেক উঁচুতে বলে বারান্দায় দাঁড়ালেই গা শিউরে ওঠার মতন হাল হয় তার উপর রেলিং সেরকম সেফ না।
শাওন মেধার মলিন মুখটাকে ধরে ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো,”তোমাকে বলেছিলাম না কিণারায় যাবেনা।
আমার থেকে দূরে দূরে থাকো কেন ওমন?’

-“আমি কে বলুন তো?’
শাওন মেধাকে চট করে কোলে তুলে নিয়ে বললো,’রশ্নি’
মেধার রাগ হলো।শাওনের গলা টিপে ধরে চেঁচিয়ে বললো,’আমি আপনার বউ।শুনতে পাচ্ছেন?আমি আপনার প্রেমিকা নই!আমি আপনার বউ বউ বউ!!
বিয়ে করা বউ ‘
শাওন হেসে দিয়ে ওকে বিছানায় নামিয়ে বললো,’আচ্ছা তুমি আমার বউ’

মেধার চোখে নেশার বৃষ্টি ঝরছে আজ শাওনকে দেখে।শাওন ওর পাশেই বসে একটা একটা করে শার্টের বোতাম খুলছে নিজের।মেধা ওকে খোঁচা দিয়ে বললো,’আমি কিন্তু মেধা’
শাওন মাথা ঘুরিয়ে চোখ মেরে বললো,’জানি!তুমি আমার বউ’
মেধা একটু পিছিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের মতন হেসে দিয়ে বললো,’সত্যি বলছি।আমি আপনার বউ মেধা।রশ্নি না কিন্তু!!ভুল করে ভুল করে ফেলবেননা যেন’
শাওন শার্টটা খুলে বিন ব্যাগের দিকে ছুঁড়ে মেরে বললো,’আমি আজ বেহুশে সেই কাজটা করবো যেটা আমার হুশে থাকাকালীন করা উচিত ছিল’

-‘শাওন শুনছিস??আগে বল তোরা ঠিক আছিস?মেধা ঠিক আছে তো?কিরে কথা বলিস না কেন?মা আমার না অনেক টেনসন হচ্ছে,বাবাকে কল করে বলোনা জলদি আসতে’
মা মুচকি হেসে টিভি দেখতে বসেছেন।তৃনা বাবাকে ফোন করতে গিয়ে দেখলো তার বিয়ে করা বরের একশোটা মিসড্ কল উঠে আছে।মুখে হাসি ফুটিয়ে নিজের রুমের দিকে চললো সে।
এদিকে মেধা আর শাওন মরার মতন ঘুমোচ্ছে পড়ে পড়ে।
প্রেম প্রেম ভাবনা ভেবে দুজনে শেষে ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল।প্রেম ভালোবাসা আর বাস্তব রুপ পেলো না।
মধ্য রাতের দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মেধার।নেশা পুরোটা না কাটলেও অনেকটাই কেটে গেছে।মাথায় হাত দিয়ে শাওনের দুটো হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে বিছানা ছেড়ে নিচে নামলো সে।

শাওনের উপর বিশ্বাস আছে।নিশ্চয় উল্টোপাল্টা কিছু করেনি আজ।
শাওনের ঐ ঘুমন্ত মুখটাকে দেখতে দেখতে মেধা রুমের এক কোণায় চলে আসলো।রশ্নিকে মন থেকে সরিয়ে শাওন নেশার মধ্যেও এমন ভুল করবেনা তা মেধার জানা ছিল।
এই ভেবে খুব খারাপ লাগছে।শাওন ওকে ছোঁয়নি বলে নাকি অন্য কিছুতে তা ভাবতেই এক অস্বস্তিকর অনুভূতি হচ্ছে মনের ভেতরটায়।

বারান্দার দিকে তাকিয়ে চোখ লাল হয়ে গেছে মেধার।রাত দুটো বাজে তখন।লাল টুকটুকে চোখে রশ্নিকে সামনে দেখতে পাচ্ছে সে।রশ্নির মুখে জয়ের হাসি।উল্লাস করছে সে।শাওন আজও ওকে ভালোবাসে তার প্রমাণ দিলো এই ভেবে তার খুশি ধরছেনা।মেধার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ।হেরে যাবার অশ্রু।
তবে সে তো কখনও চায়নি শাওন তাকে আপন করে নিক।তাহলে রশ্নির হাসিতে তার কষ্ট হচ্ছে কেন?
পিছোতে পিছোতে গিয়ে থমকে গেলো সে।রশ্নি সামনে নেই।চলে গেছে ততক্ষণে।

বারান্দা থেকে চোখ হটিয়ে পেছনে তাকিয়ে শাওনকে দেখে কিঞ্চিত ভয় জেগে উঠলো মনে।সরে দাঁড়িয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে তাকিয়ে রইলো সে।শাওন এগিয়ে এসে বিন ব্যাগ থেকে নিজের শার্টটা নিতে নিতে বললো,”মাঝ রাতে কে কাঁদালো তোমায়?’
কথাটা বলে শাওন মাথায় হাত দিয়ে বললো,’আমার মাথা ছিঁড়ে আসছে।বেশি খেয়েছিলাম নাকি?তোমার কেমন লাগছে?’

মেধা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে শুধু।কিছু বলতে পারছেনা।শাওন শার্ট পরে নিয়ে পানি ঢেলে পানি খেয়ে মেধার দিকে এক গ্লাস বাড়িয়ে ধরলো।মেধা গ্লাসটা নিয়ে ছুঁড়ে মেরেছে।পাঁচ টুকরো হয়ে গেছে গ্লাসটা নিচে পড়ে।শাওন শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে ভাঙ্গা টুকলো গুলোর দিকে।মেধা চিৎকার করে বললো,’আমাকে মুক্তি দিচ্ছেন না কেন?’
-‘কিসের মুক্তি??’
-‘আপনি সবটা জানেন।শুধু শুধু আমি এখন সবটা বুঝিয়ে বলতে পারবোনা।ডিভোর্সটা দিয়ে রশ্নিকে নিয়ে যা খুশি তাই করুন।তাও আমাকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখবেননা।আমার জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছেন আপনি’
-‘আজব!আমি কি করেছি?’

মেধা রেগে হনহনিয়ে গিয়ে দরজা খুলে চলে গেলো।শাওন মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে এখনও।কি ঘটে গেলো কিছুই মাথায় ঢুকছেনা।ওদিকে মেধা একা একা ফাঁকা রোড দিয়ে বাসার দিকে চলে যাচ্ছে।শাওন দু মিনিট ধরে চুপ করে থেকে সেও ছুটলো।মেধা হেঁটে অনেকদূর অবধি চলে এসেছিল।শাওন ছুটতে ছুটতে অনেকক্ষণ পরে তাকে পেলো।সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়িয়েছে শাওন।
মেধা বিরক্ত হয়ে বললো,’কি??’
-‘কি মানে?এত রাতে কই যাও তুমি?

আমি তো কিছুই বুঝছি না।ক্লিয়ার করে বলো তাহলে হয়ত সমাধান দিতে পারবো’
মেধা শাওনের চোখে চোখ রেখে বললো,’বুঝেন না??আমি কি চাই?সত্যি বুঝেন না?’
শাওন রাস্তার দুপাশে এক নজর তাকিয়ে একটু খানি এগিয়ে এসে মেধাকে জড়িয়ে ধরলো ।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,’তোমার মুক্তি নেই’
-‘আপনি বোঝেন না আমার কেন কষ্ট হয়??আমি এমন জীবন চাইনি।সবসময় চেয়েছি একটা মানুষকে যে কিনা আমার জীবনসঙ্গী হয়ে আমায় আগলে রাখবে,ভলোবাসবে।আর আপনি যার থেকে কিনা আমি ভালোবাসা আশা করতে পারিনা বলে আমার কষ্ট হয়।কারণ আপনি আরেকজনকে ভালোবাসেন’
শাওন মেধার হাত ধরে বাসার দিকে আসতে আসতে বললো,’আবার আশা করো।এবার আর কষ্ট হবেনা’

-“মজা করছিনা আমি।’
-‘আমিওনা’
——-
শাওন মেধাকে বাসায় নিয়ে এসেছে।মেধা চেয়েছিল রাগ করে বাবার বাসায় ফিরে যাবে।কিন্তু শাওন যে মাঝপথে ওকে থামিয়ে আবার নিয়ে আসবে তা ভাবেনি সে।শাওন দরজা লাগিয়ে এসে ওর পাশে বসে বললো,’দেখো বিয়েটা কিন্তু তোমার সাথেই হয়েছে।’
-‘তো?’
-‘তো আমার ভালোবাসার ভাগের কৌটো সম্পূর্নটা কিন্তু তোমারই’
মেধা ভ্রু কুঁচকে বললো,’আপনি সে?? যে কিনা রশ্নিকে ভুলে আমাকে ভালোবাসার কৌটো দিয়ে দিবেন?এতদিনের এত প্রেম কই গেলো?’

শাওন উত্তরে কিছুই বলেনি।সোজা গিয়ে বারান্দার পর্দা টেনে দিয়ে রুমের লাইট অফ করে সে গায়েব।মেধা অন্ধকারে কিছু না দেখতে পেয়ে ফোন খুঁজে আলো জ্বালিয়ে বললো,’আপনি কই?’
কোনো জবাব না পেয়ে মুখ ঘুরাতেই শাওনের মুখের স্পর্শ পেলো সে।
ঠোঁট লেগে গেলো ওর গালের সঙ্গে।
মেধার মুখের কথা হাওয়া।শাওন আস্তে করে বললো ঘুমিয়ে পড়তে।দুজনে চুপ করে শুয়ে থাকলো।শাওন এত বড় সিদ্ধান্ত কাল আপন মনে ভেবে নিতে চায়।
আজ মেধার চোখে ঘুম নেই।মাথার ভেতরে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
শাওন কি ওকে এখন থেকে ভালোবাসবে??রশ্নিকে বাসবে না?তা কি করে হয়?

-‘মেধা ওরকম নড়তেছো কেন?ঘুম আসেনা তোমার?’
-‘মাথায় হাজারটা প্রশ্ন গিজগিজ করছে।কি করি ঘুম আসেনা’
-‘সব কিছুর উত্তর কাল পেয়ে যাবে।এখন শান্তিতে ঘুম দাও’
—-
তাও মেধার সে রাতে ঘুম আসলোনা।শাওনের এমন বদলে যাওয়া।আর এত বছরের প্রেম মূহুর্তে শেষ হবার মানেটা কি হতে পারে তার উত্তর বের করতে করতে চোখে আর ঘুম আসলোনা।ভোরে গিয়ে একটু ঘুম চোখ জুড়ে নেমে আসলো।

ঠিক সেসময়ে শাওনের ঘুম ভেঙেছে।
উঠে গিয়ে বারান্দার গ্লাসের এপাশে দাঁড়িয়ে বেশ অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে ছিল আজ।রশ্নির সামনে যেতে ইচ্ছে করছেনা।অথচ রশ্নির কোনো দোষ নেই।
মেধার ও না।শাওনের নিজেরও না।বিয়েটা সব এলোমেলো করে দিয়েছে।মেধা তার অধিকার চায়,রশ্নি ভালোবাসার প্রতিদান চায়,আর শাওন ভেবে পাচ্ছেনা তার ঠিক কি করা উচিত।শার্টের বোতাম গুলো লাগিয়ে রুমের বাহিরে এসে তৃনা আপুকে দেখলো চা খাচ্ছে সোফায় পা তুলে বসে।
সোজা গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে শাওন।তৃনা চায়ের কাপ রেখে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,’শরীর খারাপ?’

-“না।মন খারাপ’
-‘কেন?’
-‘আমাকে প্লিজ বলে দাও কি করা উচিত আমার।মেধা আমার বিয়ে করা বউ।ওকে ওর অধিকার দেওয়া উচিত আমার আর এদিকে রশ্নির দোষ নেই।তাকে কি করবো?’
তৃনা শাওনের হাত ধরে টেনে বসালো।শক্ত হয়ে ওর দিকে চেয়ে বললো,’রশ্নি তোর মনের ভ্রম।এটা বুঝতে পারলে দেখবি আশেপাশে রশ্নি নেই’
-‘ভ্রম না আপু।মেধাও ওকে দেখে’
-‘মেধা ওকে দেখে কারণ মেধা তোকে ভালোবাসে।তোর জীবনের একটা অংশ সে যার কারণে সে তোর সাথে সংযুক্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটাকে দেখতে পায়।ঠিক তোর মতন।এটা মেধার ও মনের ভ্রম।তুই দেখিস বলে সেও দেখে।
জিজ্ঞেস করলিনা যে তোর কি করা উচিত?

তবে উত্তরে আমি বলবো মেধাকে বেছে নেওয়া উচিত।কারণ বাস্তবে তোর কাছে মেধা উপস্থিত,রশ্নি নয়।
কষ্ট পেলে মেধার চোখের অশ্রু গড়িয়ে তোর শরীরে গিয়ে পড়বে কিন্তু রশ্নির অশ্রু তুই দেখতে পেলেও ছুঁতে পারবিনা।তোকে বুঝতে হবে বাস্তব আর কল্পনায় অনেক তফাৎ।মনের মধ্যে একটা মানুষকে পেম্পার করে বাস্তবের মানুষটাকে কষ্ট দেওয়া একটা অপরাধ।যেটা তুই করে আসছিস।আমি বলবো মেধাকে আপন করে নে।রশ্নি অনেক আগে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।ওকে অনেক বেশি ভালোবাসতি বলে সে তোর মনে জায়গা করে রেখেছিল এতদিন।যতদিন না তুই মন থেকে ওকে সরাবি ও তোর মনেই থেকে যাবে।কিন্তু এতে করে লাভটা কার হচ্ছে ভেবে দেখেছিস?

একটা মানুষ মারা গেলে আমরা ঠিক কতবছর তার স্মৃতি জড়িয়ে রাখি প্রতিদিন ধরে?
রশ্নিকে ভালোবাসতি,নিয়তি এক করেনি তোদের।এখানে না তোর দোষ আছে আর না রশ্নির দোষ আছে।বিশ্বাস কর!যে রশ্নিটাকে তুই অনুভব করিস সে আসল না।সে মারা গেছে।মন থেকে ভ্রমটাকে ঝেড়ে ফেল।মেধা তোকে ভালোবাসে যতদূর বুঝতে পেরেছি।’

তৃনার কথা শুনে শাওন তার রুমের দরজা একটু ফাঁক করে মেধার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।মেধা গভীর ঘুমে।
বুজে থাকা চোখ দুটো নড়ছেনা একটুও।হাত পা গুটিয়ে ঘুমায় সে।কি নিষ্পাপ!!
ও কি আমায় সত্যি ভালোবাসে?ধুর কি ভাবছি!
ভালোনা বাসলে কাল মাঝ রাতে রাগ করে বাসা থেকে চলে যেতো!!
মেয়েদের এই একটা সমস্যা!! ভালোবাসলে বলে না।তারা ভাবে আমরা বুঝে যাব।তারা জানেনা তাদের মুখ থেকে ভালোবাসি শুনলে আমরা পাগল হয়ে যাব।এটা জানলে হয়ত মেয়েরা যেদিন বুঝত তারা ভালোবাসে সেদিনই বলে দিতো।

শাওন কাছে এসে মেধার চুলে হাত লাগিয়ে ঘুরিয়ে ওর কান টেনে ধরলো হঠাৎ।মেধা হকচকিয়ে উঠে বসে পড়েছে।শাওন ব্রু কুঁচকে বললো,”যাও আমার জন্য চা বানিয়ে আনো’
মেধা চোখ ছোট করে আবারও বালিশ বুকে ধরে শুয়ে পড়ে বললো,’চিন্তায় ঘুমোতে পারিনি।একটু ঘুমাতে দেন।বরং আপনি গিয়ে চা বানিয়ে আনুন’
শাওন মেধার হাত ধরে হ্যাচকা টানে আবারও ওকে বসিয়ে দিয়ে বললো,’যাব নাকি রশ্নির কাছে?’
কথাটা শুনে মেধা বিছানা থেকে নেমে চুলে খোঁপা করতে করতে বললো,’আমি যাই চা বানাই আনি।আর কিছু খাবেন?’

মেধা চলে যাবার পর শাওনের মন চাইলো বারান্দায় যেতে।তখনই তৃনা আপুর বলা কথাগুলো মাথায় চলে আসলো।
-‘আচ্ছা রশ্নি কি সত্যি কষ্ট পাবেনা?নাকি তৃনা আপু আমাকে ওর থেকে সরাতে এমনটা বললো,কোনটা সত্য?’
বারান্দার গ্লাসে হাত রেখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর শাওনের মনে পড়ে গেলো মেধা কাছে না থাকলে রশ্নিকে তার দেখতে পাবার কথা।তাহলে কি এখন রশ্নি বারান্দায় নেই?
এসব ভেবে ভেবে গ্লাসটা সরিয়ে বারান্দায় পা রাখলো শাওন।কিন্তু রশ্নি নেই।
পিঠে কারোর হাতের নরম স্পর্শ পেয়ে শাওন হেসে দিয়ে বলতে গেলো রশ্নি এসেছো?
কিন্তু রশ্নির জায়গায় মেধাকে দেখলো সে।তারপরেও মুখ থেকে তার সেই হাসিটা গেলোনা তার।মনে হলো সে অবাক হয়নি মেধাকে দেখে।

মেধা চায়ের কাপটা রেলিংয়ের উপর রেখে বললো,’তৃনা আপু আগে থেকেই বানিয়ে রেখেছিল’
কথাটা বলে মেধা রেলিংয়ে উঠে বসে চায়ের কাপ নিলো চুমুক দিবে বলে।শাওন ব্রু কুঁচকে মেধার পিঠের পেছন দিয়ে হাত নিয়ে রেলিংয়ে রেখে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।মেধা চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে মুচকি হাসলো ।শাওন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’আর কখনও যেন এখানে তোমায় এভাবে বসতে না দেখি’

-‘কেন?বাঁচাতে আসবেন না?’
-‘আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবোনা।নিজের উষ্কখুষ্ক চুল গুলোকে আঁচড়ে একটু মানুষ করো।তুমি না বাড়ির বউ?বাড়ির বউরা এমন থাকে?’
-‘আপনি আঁচড়ে দেবেন?শুনেছি রশ্নির চুল খুব সুন্দর করে বেনি করে দিতেন।অবশ্য তার সাথে কি করতেন সেসব হয়ত আশা করা ঠিক না তাও বলছি।না চাইলে থাক।আমি এই উষ্কখুষ্ক চুল নিয়ে আরও এক সপ্তাহ কাটিয়ে দিতে পারবো’
শাওন ঘুরে দাঁড়িয়ে দালানের নিচে তাকিয়ে বললো,’আগে গায়ের থ্রি পিসটা বদলে একটা শাড়ী পরে নাও।তোমাকে শাড়ীতে তেমন দেখা হয়না।আর আজ রেদোয়ানের কেসের জন্য তোমায় যেতে হবেনা।আমি গিয়ে ঘুরে আসবো’
-‘তাহলে শাড়ী পরে কাকে দেখাবো?’
শাওন মেধার হাত ধরে টেনে রেলিং থেকে নামিয়ে নিয়ে বললো,’আমাকে দেখানোর জন্য।’

শাওন চলে গেছে।মেধার ঠোঁটের কোণায় হাসি ভাসছে অনবরত।শাওনের হলো টা কি?জাদু নেমে গেছে নাকি??রশ্নির কথা কি আর মনে পড়েনা তার??
‘আজকে তাহলে আগুন ধরিয়ে দেবো মিঃশ্যাওলার মনে।আমাকে তো এখনও চেনেনা।’

শাওন আরিফাকে পড়তে বসিয়ে বাদাম খেতে খেতে নিজের রুমে ঢুকে আয়নার সামনে এসে নিজের চুলগুলোকে নাড়িয়ে বললো,’মেধা চিরুনি আনো।তোমার চুল ঠিক করে দেবো’
মেধার কোনো সাড়া না পেয়ে শাওন চিরুনি খুঁজে পেছনে তাকালো।মেধা চুলে ক্লিপ লাগাচ্ছে বিছানার কোণায় বসে।শাওন হা করে তাকিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।লাল টুকটুকে জর্জেটের শাড়ী পরে বসে চুলগুলোকে ঠিক করে এখন ক্লিপ লাগাচ্ছে সে।

শাওনকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’দেখুন সব নিজে নিজে করে ফেললাম।কেমন লাগছে বলুন এবার’
-‘বেশ ভালো।এবার গিয়ে তৃনা আপুকে নাস্তা বানাতে হেল্প করো যাও’
মেধা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো,’আর আপনি বারান্দায় যাবেন নাকি?’
-“নাহ।আমি একটু হাঁটতে যাব’
কথাটা শুনে মেধা খুশি হয়ে চলে গেলো তৃনার কাছে।শাওন জ্যাকেট হাতে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো জরুরি একটা কাজ শেষ করবে বলে।রকির বাসার সামনে কয়েকটা সুন্দর ফুলের দোকান দেখেছিল কাল।ওটা থেকে ফুল কিনবে মেধার জন্য।লাল শাড়ীর সাথে যদি পরনে ফুলের অংশবিশেষ থাকে তাহলে সেটা অনেক মানায়।
বলতে গেলে জোড়ায় জোড়ায় তৈরি।
মোট কথা শাড়ীর সাথে ফুলের নাম জুড়ে দেওয়া মানে সৌন্দর্য্যটাকে একসাথে জুড়ে দেওয়া।

-“জানো মেধা!!শাওন তোমায় অনেক অনেক ভালো রাখবে।’
-‘জানিনা কি হবে।তবে আমি উনার সব আবদার পূরণ করবো।মানে আমিও ভালো রাখার চেষ্টা করবো উনাকে।তার হুটহাট মন খারাপ থাকার অভ্যাসটা তাড়িয়ে ছাড়বো।’
তৃনা মেধার হাত ধরে বললো,’রশ্নিকে হারানোর পর অনেক খারাপ গেছে ওর দিনগুলো।এরপর রশ্নির ভ্রম তাকে অনেকটা সুস্থ করে তুললেও শরীরের দিক দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল শাওন।এমনকি এখনও অসুস্থ। তুমি হয়ত জানোনা।সে ঠিকমত খাওয়া -দাওয়া করেনা।কেমন যেন হয়ে গেছে।

ওকে একটু গুছিয়ে নিবে দেখবে শাওনকে তোমার সব চেয়ে আদর্শবান স্বামী মনে হবে।আমি যতদূর জানি শাওন তোমার প্রাপ্য অধিকারটা দিতে নাকচ করবেনা।শুধু সময়ের দরকার।সে আসলে রশ্নির জগৎ থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছে।তাই তাকে একা থাকতে দিও।নিজেই নিজেকে ঠিক করে নেবে।শাওন অনেক স্ট্রং।’
-‘জানি।।তবে আমার মনে হয় আমি পাশে থাকলে উনি এসব আরও সহজে ভুলে যেতে পারবেন’

হাতে ফুল ঘুরাতে ঘুরাতে শাওন রকির বাসাটা একবার দেখে নিলো।দেখে মনে হয় আর এই বাসাতে রকি পা রাখবেনা।সে জানত এই বাসায় রকি স্থায়ী না।
-‘ঐ দামড়াটাকে কোন কোণায় গেলে মুঠোর বন্দী করতে পারবো?
মাথা কাজ করেনা।জীবনে কোনো কেসে এত হয়রানিতে পড়তে হয়নি।
মেধার কারণে কেনো একশান নিতেও ভয় হচ্ছে।আমি চাইনা আমি বাদে আর কেউ জানুক রেদোয়ানকে মেধা মেরেছিল।

রকি তো জানে।ওকে ধরতে হবে।তবে সে প্রুভ করতে পারবেনা রেদোয়ানকে মেধাই মেরেছিল।তার পরেও রকিকে ধরতে হবে।শত্রু বাহিরে থাকলে যত বিপদ সব এগিয়ে আসবে।’
ফোন বাজছে।মেধার কল।শাওন রিসিভ করে মুচকি হেসে দুষ্টুমি করে বললো’পরে কথা বলছি।রশ্নি সামনে’
মেধার রাগ বেড়ে শেষ প্রান্তে চলে গেছে।বাসা থেকে বেরিয়ে ছুটলো শাওনকে খুঁজবে বলে।
শাওন পকেটে হাত ঢুকিয়ে সেও রাস্তায় নেমে পড়েছে।মেধা যে রেগেমেগে এদিকেই আসবে তা সে জানতো।
মেধা ছুটতে ছুটতে অনেকদূর এসে শাওনের দেখা পেলো।ওর কাছে এসে চেঁচিয়ে রাগ ঝাড়তে যেতেই শাওন ওর হাতের কুনুই ধরে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে চুলে ফুল লাগিয়ে দিলো।

সঞ্চারিণী পর্ব ৪০+৪১+৪২

মেধার রাগ গায়েব।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে।শাওনের হাসি পাচ্ছে তাও হাসিটাকে থামিয়ে একটু দূরে সরে বললো,’এত রাগ কিসের জানতে পারি?’
মেধা শাওনের দিকে ফিরে ফু্লে হাত দিয়ে বললো,’আমাকে রাগাতে ভাল লাগে আপনার?’
-“অন্নেককককক’
-‘তো কথা হয়েছে রশ্নির সাথে??কি কি প্রেম হলো আজ?’
শাওন বাসার দিকে হাঁটা ধরেছে মেধার কথার উত্তর না দিয়ে।
মেধা সাথে সাথে আসতে আসতে বললো,’সত্যি কি রশ্নি এসেছিল?বলেছিল কিছু?’
-‘সে আর আসবেনা’
-‘কেন?’

-“কারণ আমি আর তাকে নিয়ে ভাববোনা’
শাওনের কথা আর তৃনা আপুর কথা মিলে গেলো।তারপরেও মাথায় ঢুকছেনা শাওন এত জলদি বদলে যেতে আসলেই কি পারবে?
এটা ভেবে মনে ভয় জাগে।আবার ভালোলাগা।ফুলগুলোকে হাত দিয়ে ছুঁতেই ভালোলাগা জেগে উঠলো।
শাওন সব ভুল যেতে চাইলেও রশ্নি কি ভুলতে পারবে??
মেধা সামনে পেছনে রশ্নিকে খোঁজার চেষ্টা করলো।শাওন মাথা ঘুরিয়ে বললো,’আমি মন থেকে মুছে ফেললে তোমার মনে থাকার কথা না’

-‘কেন কেন?আপনার আর আমার মন তো এক না’
-‘এক নাকি আলাদা সেটা তো রশ্নিকে দেখবে নাকি দেখবেনা সেটার উপর নির্ভর করে।আমার অনুপস্থিতিতে যদি তুমি রশ্নিকে দেখে থাকো তাহলে ধরে নেবো আমার আর তোমার মন এক না।আর যদি না দেখো তাহলে তো বুঝবেই…..’

সঞ্চারিণী পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮