সঞ্চারিণী পর্ব ৪০+৪১+৪২

সঞ্চারিণী পর্ব ৪০+৪১+৪২
আফনান লারা

মর্গে এসে শাওন আর মেধা দুজনেই টেনসনে পড়ে গেলো এই ভেবে যে রেদোয়ানের লাশ গায়েব হয়েছে কেন।রেদোয়ানকে তো মেধা মেরেছিল তাহলে তার লাশ গায়েব করে রকির কি লাভ?কি বুঝাতে চাচ্ছে সে?
দুজনে সোজা এখন রেদোয়ানের বাসায় এসেছে।আচমকা একই সময়ে গিয়াস স্যারও এসে হাজির।যা বোঝা গেলো টিমের সবার উপর তিনি অসন্তুষ্ট । এখন পর্যন্ত কেসের কোনো বিহিত হলো না বলে তিনি খুব রেগে আছেন।অন্তত রকিকে ধরতে পারলেও মনকে বুঝাতে পারতেন খুনীকে ধরা হয়েছে।তাও হলোনা।

শাওন বললো সে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রকি বাংলাদেশের যে কোণায় থেকে থাকুক না কেন তাকে খুঁজে বের করে আনবে।
মেধা ও মাথা নাড়ালো।এখানে উপস্থিত কেউ জানেই না খুনী তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
শাওন টিম আকারে সবাইকে ভাগ করে দিয়েছে।ঢাকায় নুহাশ,নিতু মিলে জায়গায় জায়গায় খুঁজে বেড়াবে।ঢাকার বাহিরেও বাকিদের পাঠানো হয়েছে।শাওন আর মেধা ঠিক করে নিলো তারা সাভারে রকির বাসার উপর নজর রাখবে।হতে পারে সে ওখানেই এসেছে।কারণ রকি ঠিক সেটাই করে যেটা বাকিরা ভাবতেই পারে না।শাওনের বুদ্ধিতে তারা দুজন সাভারে রকির বাসায় এসে হাজির।একটা দোকানে অন্য পোশাকে দুজনেই বসে আছে।রকি আসলে ঝাঁপটে ধরবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দু তিনবার চা নাস্তা খাওয়া শেষ তাদের।মেধা শাওনের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আর ধৈর্য্য ধরতে না পেরে। এত রাত হয়ে গেলো রকির কেনো খবর নেই।শাওন ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর মেধার দিকে তাকাচ্ছে।মেধা কেমন যেন ব্যবহার করছে আজ।আগে গায়ে ঘেঁষে বসতো না আর এখন একেবারে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।হয়ত ঘুমের ঘোরে তার খবর নেই সে কি করছে।চোখ খুলেই নিশ্চয় এক ঝটকায় সরে যাবে।

এসব ভেবে তাচ্ছিল্য করে হাসলো সে।মেধার ঘুম ভেঙ্গে গেলো শাওনের শার্টের সাথে খোঁচা লেগে।
দুচোখ মেলতেই শাওনের থুঁতনি নজরে আসলো সবার আগে।ছোট ছোট দাঁড়ি লেপটানো থুঁতনির নিচের ভাগ।
মেধা ঘুম কাতুরে চোখে চেয়ে আছে সেদিকে।শাওন যা ভেবেছিল তার উল্টোটা হচ্ছে আজ।মেধা মুগ্ধতায় ডুব দিয়েছে আবারও।মুগ্ধতায় হারিয়ে শাওনকে সে গভীর চোখে পরোক করছে।এরই মাঝে হঠাৎ রশ্নির কথা মাথায় আসতেই ঠিক হয়ে বসলো সে।শাওন বিসকিট চিবোতে চিবোতে বললো,’কি?ঘুম শেষ?আর ঘুমাবেননা ম্যাডাম??

-“আমাকে আগলে রাখতে ভালো লাগছিল আপনার?তাহলে কোলেই নিন।
চেয়ারে বসে বসে কোমড়ে ব্যাথা হয়ে গেলো’
-‘এ্যাহ!মামার বাড়ির আবদার।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো?মুটকি একটা!’
-‘আমি মুটকি?’
-‘চুপ চুপ।ওটা রকি কিনা দেখো তো।ঐ যে ক্রস করলো মাত্র’
মেধা সামনে তাকালো।রকির মতন দেখতেই অনেকটা।বিদ্যুৎয়ের গতিতে সে চলে গেছে দালানের ভেতর।শাওন আর মেধাও ছুটেছে।তাদের আগেই রকি হুডি টেনে লিফটে উঠে গেছে।
শাওন আর মেধা দেরি না করে সিঁড়ি দিয়েই উপরে উঠা শুরু করেছে।

ছুটে এসে রকির ফ্ল্যাটে এসে দেখলো ব্যাটা দরজা বন্ধ করে ফেলেছে ওরা আসার আগেউ।শাওন বুদ্ধি করলো করিডোর যেখানে শেষ সেখানে যে বারান্দাটা আছে ওটা দিয়ে দুজনে রকির বাসায় ঢুকবে।মেধাও সাঁই দিলো।দুজনে বারান্দায় নেমে দরজার কাছে এসে দেখার চেষ্টা করলো রকি ভেতরে কি করছে।রকি টিভি অন করে পপকর্ণ ভাজতে রান্নাঘরে এসে চুলায় পাতিল বসিয়ে তাতে তেল নুন দিয়ে নাড়ছে আর আরেক হাতে থাকা ভুট্টাতে ফু দিচ্ছে।
শাওন ফিসফিস করে বললো,’বারান্দার দরজা তো ভেতর থেকে লক করা।তোমার কাছে ববি পিন আছে?’

-‘ববি পিন দিয়ে লক খুলেন?আপনি খুব ব্যাক ডেটেড।সরুন তো’
মেধা হাত ঘুরিয়ে দু তিনটা চাপ দিতেই দরজা খুলে গেছে।শাওন হা করে তাকিয়ে আছে দরজার দিলে।মেধা পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,’হেহে!!সঞ্চারিণীরা অনেক কিছু সঞ্চার করতে পারে।বুঝলেন?এখন চলুন।পেছন থেকে ধরবো রকিকে’

দুজন মিলে রান্নাঘরে এসে দাঁড়ালো গান তাক করে।কিন্তু সেখান থেকে রকি উধাও।তাড়াহুড়ো করে তারা ফ্ল্যাটের বাকি রুম গুলো সার্চ করতে গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই।
রকি একটা বুদ্ধি এঁটেছে শাওন আর মেধাকে ফ্ল্যাটে আটকে রাখতে বাসা থেকে বেরিয়ে বাহিরে দিয়ে লক করে গেছে।মেধা আর শাওন বারান্দায় এসে অসহায়ের মতন তাকিয়ে আছে সেই জায়গাটার দিকে যেটা দিয়ে টপকে তারা বারান্দায় পা রেখেছিল।লাফ দিয়ে আসা সম্ভব হলেও যাওয়া অনেক কঠিন মনে হচ্ছে।দুজনে এখন উপায় না পেয়ে ভাজা পপকর্ন নিয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে টিভি দেখছে।রকি কিরকম বোকাটা বানালো তাদের।

শাওন রেগে টিভির স্ক্রিনে রিমোট ছুঁড়ে মেরে বললো,”নিজেকে অফিসার বলতে ঘৃনা হচ্ছে।ট্রেনিংয়ে যেতে হবে আমায় যা বুঝলাম।এত বছর ধরে কেস সলভ্ করছি আর এখন এই কেসে এসে বারবার বোকা বনে যাচ্ছি।আশ্চর্য!!বিশ্বাস করো,একবার যদি ঐ রকিকে আমি পাই।তিলে তিলে শোধ নেবো।আমাকে অনেক খাটিয়েছে।’
মেধা পপকর্ন খেতে খেতে বললো,’লবণ বেশি দিয়ে ফেলেছে।এখন বলেন বের হবো কি করে?’

-“কেন?তুমি না সঞ্চারিণী?? সব দরজা খুলতে পারো।তো খুলো এই দরজা’
-“দিলাম তো কয়েকটা ঘুষি।তাও খুলছেনা আমি কি করবো?আপনি চেষ্টা করে দেখুন।আপনি না সিনিয়র অফিসার?’
-“আমি চেষ্টা না করে বসে আছি??একটা মানুষ ও ফোন ধরছেনা!কাকে কল করে বলবো আমরা বিপদে পড়েছি?’
-‘তাহলে আমি যাই রকির রুমে ঘুমাতে।আপনি বসে বসে কল করুন’
মেধা পপকর্ন খেতে খেতে রকির রুমে গিয়ে পাঁচ সেকেন্ড পর চেঁচিয়ে উঠলো।রকির রুমে পোকামাকড় ধরেছে ওর সবকটা বাসি কাপড়ে।
তেলাপোকা দেখে মেধা ভয় পেয়ে গেলেও নিজেকে শক্ত করে আবার বের হয়ে আসলো।শাওন এদিকে আসতে আসতে বললো,’লাশ গুলো ওখানে নাকি?’

-‘না কিছুনা।আমি বরং সোফায় ঘুমাই’
-‘একদম না।
সোফায় আমি ঘুমাবো।তুমি গিয়ে রকির রুমে ঘুমাও’
-‘না।আমি মেয়ে বুঝেন না কেন।???
এত তেলাপোকার সাথে আমি ঘুমোতে পারবোনা।’
শাওন দরজা খুলে নিজে গিয়ে দেখলো সত্যি রুমটা থাকার উপযোগী না।
ওদিকে মেধা সোফায় শুয়ে পড়েছে।বাকি রুমটা লক করা।অনেক্ষণ চেষ্টা করেও রুম খুলতে পারলোনা সে।
মেধা আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে শাওন কি করে।শাওন কোনো উপায় না পেয়ে মেধাকে চাপিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লো লম্বা হয়ে।মেধা কিল মেরে বললো,’এসব কি??সরুন।এই টুকুন সোফায় আপনি আমার সাথে ঘুমাবেন?’

-‘আর উপায় নেই।আরেকটু যাও।আমি পড়ে যাব’
-‘পড়ুন।আমার কি’
শাওন মেধাকে ঝাপটে ধরে শুয়ে পড়লো।মেধা তার হাত দুটো নাড়াতে পারছেনা।মূর্তির মতন শুয়ে আছে সে।হাতে রশি না থাকার পরেও মনে হচ্ছে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।শাওন ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’ঝাপটে ধরার কারণ হলো আমি যেন পড়ে না যাই।অন্য কিছু ভাববেনা’
মেধা মাথা তুলে বললো,’কেমন অফিসার আপনি?কোনো কাজ পারেন না’
-‘তুমি পারো মনে হয়?ওহ তুমি তো খুনই করে বসে আছো।’
মেধা ফিসফিস করে বললো,’রশ্নি রেগে যাবেনা?এরকম যে শুয়ে আছেন?’
-“রাগ করলে আমার কিছু করার নাই।রাত অনেক হয়েছে।ঘুমানোটা আগে জরুরি।নাহলে কাল সকালে কাজ করার জন্য আমি সবল থাকবোনা’

দুজনে এখন একসাথে ছাদের দিকে চেয়ে আছে।শ্বাস নিশ্বাসের স্বল্প আওয়াজটাও শোনা যাচ্ছে স্পষ্টতায়।মেধা আড় চোখে তাকালো।শাওন ও।তারপর আবারও ছাদ দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো দুজন।
শাওন তার হাতটাকে মেধার মাথার উপর দিয়ে নিয়ে রাখলো।চাপা পড়ে ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল তাই।মেধার আরাম লাগলো তাতে।সে তখনকার মতন ঘুমিয়ে পড়েছে এই টুকুতেই।
তফাৎ হলো তখন শাওনের ঘাঁড়ে মাথা রেখেছিল আর এখন বুকে।শাওনের মনে হলো তার ও ঘুম আসছে।মেধা তার বুকে মাথা রেখেছে তা ভেবেই তার ও চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসছে।।

সারারাত দুজনে একই রকম ভাবে ছিল।একটুও নড়চড় হয়নি।সকাল সকাল শাওনের আগে ঘুম ভেঙ্গেছিল।নড়তে গিয়ে মনে পড়ে গেলো তার বুকের সম্পূর্ন জায়গা দখল করে রেখেছে মেধা।
মাথা তুলতে গিয়েও পারলোনা শাওন।
-‘মেধা ও মনে হয় জেগেছে।তবে চোখ খোলেনি।নড়াচড়া করছে।চোখ খুললেই আগের মতন সরে যাবে।তবে এখন যেই অবস্থায় আছে।সরতে গিয়েও পারবেনা যতক্ষণ না আমি সরবো’
মেধা চোখ খুলে শাওনকে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে বললো,’শীত করে’

শাওন অবাক হয়ে তাকালো।
-‘শীত করে মানে??মেধার কি অস্বস্তি হলোনা?আরও বলছে শীত করে।মানে কি করবো আমি?’
মেধা ভুল করে অবাক করার মতন কথা বলে বসেছে তা একটু পরেই টের পেয়ে গেছে।তাই চট করে উঠে পড়ে বললো,’না না।শীত করেনা আমার’
শাওন হাত বাড়িয়ে ছিল জড়িয়ে ধরবে বলে।মেধার মত পাল্টে গেছে বলে সেও সুযোগ বুঝে হাত দুটোকে স্বাভাবিক স্থানে এনে বললো,’ওহ।আমি দেখি নুহাশ ফোন ধরে কিনা।নাহলে তো আমাদের এই বাসাতেই থেকে যেতে হবে আজীবন ‘

মেধা মাথা নাড়িয়ে রান্নাঘরে গেলো পানির খোঁজে।
শাওন নুহাশের সাথে কথা বলে ওকে আসতে বলে দিয়েছে।মেধা রান্নাঘর সব সার্চ করে এসে বললো,’এখানে মদ,আখরোট বাদাম ছাড়া খাওয়ার মতন কিছু নাই।’
-‘আখরোটই আনো।একে তো দাম বেশি।আরেকতো গুন বেশি’
মেধা ব্রু কুঁচকে বোয়ামটা শাওনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,’টেস্ট ও বেশি বাজে’
শাওন বাদাম মুখে দেওয়ার আগে রকির ওয়াশরুমে গেছে।ফ্রেশ হতে হবে আগে।

মেধা বারান্দায় এসে নিচে তাকিয়ে একবার দেখে পেছন ফিরতেই রশ্নি সামনে পড়লো।রশ্নির চুল কেমন স্যাঁতসতে হয়ে আছে যেন তাকে কেউ পানিতে চুবিয়ে এনেছে।মেধা ওর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক নয় বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাইলো।কিন্তু রশ্নি ওর পথ আটকে রেগে রেগে বললো,’তুমি চাও শাওন তোমায় জড়িয়ে ধরুক??তখন ওটা বললে কেন??শাওনকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চাও??এত সাহস তোমার?’
মেধা কোমড়ে হাত দিয়ে মাথাটা কাছে এনে বললো,’যদি বলি চাই কি করবে তুমি??কিছু করার আছে?ছোঁয়াবিহীন ভূত কোথাকার!

তুমি ফুঁ দিলে তো আমার চুল ও উড়বেনা।আসছে আমাকে হুমকি দিতে!!
শাওন স্যারকে আমার সেধে গিয়ে ইম্প্রেস করার দরকার নাই।যেমন করে বিয়ে হয়েছে তেমন করে একটা সময়ে বাচ্চার বাবা মাও হয়ে যাব আমরা।আমি ফিউচার নিয়ে এতো ভাবিনা।কারণ ফিউচারে যা হবে তা আগে থেকে ঠিক করা আছে।তুমি পারলে তোমার জানেমানকে বোঝাও।যেন আমি আয়নার সামনে দাঁড়ালে ক্যাবলার মতন চেয়ে না থাকে।আমি তন্দ্রিত থাকলে যেন মুগ্ধ হয়ে না তাকিয়ে থাকে।এমন করলে এক সময়ে দিওয়ানা হয়ে যাবে।বারান্দায় দাঁড়িয়ে নাচানাচি করলেও ঐ দিওয়ানাকে ফেরাতে পারবেনা তুমি”

রশ্নিকে এক গাদা স্পিচ দিয়ে মেধা রুমে ফেরত এসে দেখলো বাহিরে থেকে কাদের যেন কথা শোনা যাচ্ছে।নুহাশের গলা মনে হলো। এক ছুটে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো সে।
নুহাশ লোক লাগিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা চালাচ্ছে
শাওন ওয়াশরুমে থেকে চেঁচিয়ে বললো,’মেধা একটু এদিকে আসবে?’
মেধা সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই শুনতে পেলো গলার স্বর করুণ করে শাওন বলে যাচ্ছে রকিকে আমি কাঁচা চিবাবো।
মেধা আরেকটু এগিয়ে এসে বললো,’কেন ডেকেছেন?’
-‘কলে পানি শেষ।মুখে সাবান দিছিলাম’
-‘আইহাই!তাহলে কি করতাম?রশ্নি আপাকে ডাকবো?’
-‘ধুর! মজা করবানা।পানি এনে দাও’

হাসতে হাসতে মেধা রান্নাঘর থেকে এক বোতল পানি আনতে চলে গেছে।পানি ভর্তি কতগুলো বোতল দেখেছিল সেইখানে।শাওন চোখ একটু একটু খোলার চেষ্টা করে এদিকেই আসছে।
মেধা পানির বোতল এনে দেখলো শাওন এলোমেলো করে হেঁটে সেও এদিকে আসতেছে।
মেধা পানির বোতলটাকে উপরে তুলে বললো,’এই ধরুন ধরুন!’

শাওন হাত বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো।তার পারলোনা।মেধা খিলখিল করে হাসতে হাসতে হাত আরও উপরে তুলছে।শাওন রেগে গেছে অনেকটা।তাই মেধার কোটটা টেনে তাতেই মুখটা মুছে নিলো।মেধার হাসি বন্ধ।
মুখ মুছে ওর থেকে বোতলটা কেড়ে নিয়ে চলে গেলো সে।মেধা মূ্র্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়।নুহাশ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই শাওনের কথা জিজ্ঞেস করলো ওকে।
ভাবনার চত্বর থেকে বেরিয়ে মেধা জানালো ফ্রেশ হতে গেছে।

ওখান থেকে শাওন আর মেধা সোজা অফিসে চলে আসলো।শাওন নুহাশের সামনে মেধাকে ধমকাতে পারেনি।
চোখে সাবান ছিল আর সে মজা করার সময় ঐ সময়তাতেই পেলো।পুরো রাস্তায় মন চেয়েছিলো নুহাশকে সরিয়ে দু চারটা কিল বসিয়ে দিতে।
অফিসের বাকিরা জানিয়েছে রকিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শাওন একটা প্ল্যান করলো।মিডিয়াতে জানিয়ে দেবে রেদোয়ানের কেস স্থগিত।
এক মাসের জন্য এই কেস বন্ধ থাকবে।রকিকে বুঝতে দেওয়া হবে কেস শেষ।সবাই হার মেনে নিয়েছে।তারপর একদিন না একদিন সে তার বাসায় ফেরত আসবেই।কতদিন আর বাহিরে বাহিরে থাকবে।আর যদি না আসে।তার পরিবারের কাছে তো যাবে??

সব জায়গায় লোক রাখা হবে।আমরা হার মানলে সে ও হার মানবে।তবে সে ভাববে সে জিতে গেছে।
এটাই হলো আসল কথা।
শাওনের কথা মতন ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হলো রেদোয়ানের কেস বন্ধ।যেহেতু লাশ গায়েব এখন কোনো তদন্ত করা সম্ভব না। কেসটা স্থগিত হিসেবে রয়ে গেছে বাকিদের ভালোমতন বুঝিয়ে দেওয়া হলো।
এদিকে বাবা মা জেনে গেলো শাওন আর মেধা হানিমুনে যায়নি।বরং তারা অফিসের কাজে মন লাগিয়েছে।
বাবা তো রেগে আগুন।শাওন আর মেধা হোটেলে ফিরে এসে ভেবেছিল কাল পরশু বাড়ি ফিরে যাবে।কিন্তু এরপর বাবা মাকে কি জবাব দিবে তাই ভেবে ফিরে যাওয়ার কথা দু ধাপ চেপে গেলো।

মেধা একটা ভালোমতন সাদা সিধে থ্রি পিস নিয়ে গোসল করতে গেছে পাঁচ মিনিট হলো।।
-‘হ্যালো সাজিদ।কিসের জন্য ফোন করলে?’
-“স্যার রকির পরিবারের ঠিকানা পেয়ে গেছি।তাদের বাসাও ঢাকাতে’
-‘নাইস।এক্সাক্ট ঠিকানা বের করো।আমি এখন ব্যস্ত আছি’
-‘কেন?কি করছেন স্যার?রকিকে পেয়েছেন?’
-‘না।
অন্য কাজে বিজি।পরে কথা হবে’
শাওন মাথা নাড়াতেই হোটেলের রুম সার্ভিসের লোক শাওনদের রুমের পানির লাইন অফ করে দিলো।
শাওন দাঁত কেলিয়ে রুমে ফেরত চলে এসেছে।মেধা চেঁচাতে চেঁচাতে শাওনকে ডাকছে।শাওন আস্তে আস্তে স্লো মোশনে হেঁটে ওয়াশরুমের সামনে এসে মিষ্টি সুরে বললো,’কি হয়েছে মেধা??কিছু লাগবে?’
-‘উফ!!!হঠাৎ পানি বন্ধ হয়ে গেছে।একটু দেখেন না কি সমস্যা?? আমি সারামুখে গায়ে সাবান মেখে বসে আছি
কেমন লাগে এখন।’

শাওন দাঁত কেলিয়ে বললো,’আহারে! তাই?দাঁড়াও দেখছি কি হয়।’
শাওন একটু দূরে গিয়ে চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে ফোন টিপছে।মেধা তোয়ালে পেঁচিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে চোখ একটু খুলে বিছানার কিণারায় এসে টেবিল থেকে পানির বোতলটা নিয়ে মুখে পানির ছিঁটা দিয়ে কোনোমতে চোখের জ্বালা কমালো।
তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো শাওন এসেছে কিনা।শাওন যে তার বিপরীত পাশে বসে ফেসবুকে ফানি ভিডিও দেখছে তা সে জানেনা।
কারণ ভিডিওর সাউন্ড অফ রেখেছিল শাওন।

মেধা তোয়ালেটা ঠিক করতে করতে দুপা এগিয়ে যাওয়ার সময় তার মনে হলো এখানে কেউ আছে।পাশে তাকিয়ে শাওনকে আচমকা দেখে চোখ কপালে উঠে গেছে ওর।শাওন ওর চেঁচানো শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো চেয়ার থেকে।দুজনে একজন আরেকজনে দেখে পাঁচ মিনিট চেঁচামেঁচি করে এরপর শান্ত হলো।মেধা বিছানার চাদর টেনে গায়ে পেঁচিয়ে বললো,’আপনি পানি অফ হয়েছে কিনা খবর জানতে যাননি?’
-‘ইয়ে মানে গেছিলাম তো।তারা বলছে তাদের পানির টাংকির সমস্যা। সময় লাগবে ঠিক হতে
ওহ হো এখানে বোতলে পানি ছিল বুঝি!(আমি তো দেখতেই পাইনি।দেখতে পেলে খেয়ে শেষ করে ফেলতাম পানি গুলো।প্রতিশোধ নেওয়াই জলে গেলো’)
-‘কিছু বললেন?’
-“না কিছুনা।আমি গিয়ে দেখি পানির কোনো খবর আছে কিনা’

শাওন যেতেই মেধা দরজা লাগিয়ে বসে রইলো চেয়ারে।’শাওনকে সন্দেহ হচ্ছে।এসব তার কাজ নয়ত?নিশ্চয় সকালের প্রতিশোধ নিতে এমনটা করেছে।দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা’
শাওন লোকদের বলে আবার পানির কলটা ওপেন করিয়ে হোটেলে ফিরে এসেছে।এটার জন্য তাকে টাকা দিতে হয়েছিল।কারণ একসাথে আরও পাঁচটা রুমের কল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অটোমেটিক।
নিজের কপাল নিজে চাপড়ে রুমে ফেরত আসলো সে।মেধা ওয়াশরুমে আবার গেছে।
শাওন বারান্দায় যেতে গিয়েও গেলো না।কারণ সে জানে বারান্দায় যাওয়া মানে রশ্নির হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।
তার চেয়ে বরং এখানেই বসে থাকা যাক।।

মেধা দারুণ একটা কারসাজী করবে বলে ভেবে রেখেছে।তবে সময় আসুক।
এখন সে যাই করতে যাবে শাওন তাকে সন্দেহ করবে অথবা প্রস্তুত থাকবে আগে থেকেই।সব কিছুর একটা সময় আছে।সেই সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
শাওন ফোনে কথা বলছিল বাবার সাথে।বাবা এতক্ষণ ধরে ঝাড়ছিল ওকে ঘুরতে না গিয়ে অফিসের কাজে মন দেওয়ায়।শাওন তার বকা শুনে চুপটি করে ছিল।বাবা শেষে বললেন তারা যেন বাসায় ফিরে আসে।
শাওন খুশিতে আটখানা হয়ে ফোন রেখে মেধাকে বলার জন্য উদ্যত হতেই ওকে এক নজর দেখে আটকে গেলো।
সাদা রঙের থ্রি পিসই তো পরেছিল মেধা তাহলে এরকম চোখ আটকে যাবার কি আছে তাতে।
শাওনের চাহনি দেখে মেধা বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো রশ্নিকে কোথাও দেখা যায় কিনা।ও কি এসব দেখছে?

শাওন কি সত্যি সত্যি প্রেমে টেমে পড়ে গেলো নাকি অন্য কিছু?
এই ছেলেটা আসলে কি চায়??
ভাবতে ভাবতে মেধা কাছে এসে শাওনের মুখের সামনে হাত নাড়তেই ও চোখের পলক ফেলে বললো,’কি?’
-‘সেটা তো আমি জিজ্ঞেস করবো যে কি হয়েছে।ওমন করে চেয়ে আছেন কেন?’
শাওন মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’তোমাকে সাদাতে দারুণ লাগে’
মেধা চোখ বড় করে শাওনকে ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,’আপনার শরীর ঠিক আছে তো?’
-‘হ্যাঁ।ওহ আচ্ছা।আমি আসলে….

ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।জাদু টোনা করছো নাকি??’
-‘এটাই সমস্যা।
ছেলেরা আমার জন্য পাগল হয়ে যায়, শেষে বলে জাদু টোনা।নিজের চোখ সংযত রাখুন।আসছে আমাকে দোষ দিতে।আপনার না প্রেমিকা আছে?’
-‘ওহ হ্যাঁ।তাই তো’
কথাটা বলে শাওন পাশ কেটে গিয়ে বিছানায় বসে পড়েছে।মেধা পিছনে তাকিয়ে বললো,’ডিভোর্স কবে দিচ্ছেন আমায়?’
শাওন মাথা তুলে অবাক হয়ে বললো,’ডিভোর্স চাই?’
-‘হুম চাই।আপনার আর রশ্নির মাঝে থাকতে চাইনা আমি।বিরক্তি লাগে।আমি ঠিক কোন ধরনের সম্পর্কে আছি বুঝতে পারিনা’

-‘আমিও।আচ্ছা ডিভোর্স যে দেবো,বাবা মা তো ত্যাজ্য করে দেবেন।সেই খবর জানা আছে?’
-‘কিছু করার নাই।জোর করে রাখা সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা আমার দ্বারা।
আমার এমন দিনগুলো অসহ্যকর মনে হয়।চেয়েছিলাম একজনকে যে কিনা ভালোবেসে আগলে রাখবে।’
-‘আমি তোমায় আগলে রাখিনা?’

-‘সেটা নয়।আপনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসেন।এরকম আগলে রাখার কথা আমি বলিনি।বলতে চাইলাম ভালোবাসলে একজনকে বাসুন।আরেকজনের প্রতি মোহ রেখে কি লাভ?’
শাওন চোখ বড় করে জিজ্ঞেস করলো মেধা মোহ বলতে কার প্রতি বুঝিয়েছে।
মেধা মুচকি হেসে আয়নার সামনে টুল এনে বসলো তার প্রশ্নটাকে এড়িয়ে।
আবারও ফোন এসেছে সাজিদের।রকি নাকি তার বাড়িতে পার্টি করছে আজ।কিসের আনন্দ করছে কে জানে।শাওন সঙ্গে সঙ্গে বললো সবাইকে পার্টি ড্রেসে, ফেক বায়োডাটাতে ঐ খানে পৌঁছে যেতে।তারাও আসছে।
মেধা লিপস্টিক লাগানোর আগেই শাওন ওর হাত ধরে ছুটলো দ্রুত গতিতে।
মেধা যেতে যেতে বললো,”আরে জিন্স আর কোট তো পরতে হবে।পার্টিতে মানুষ থ্রি পিস পরে?রকি সন্দেহ করবে’

-‘থ্রি পিস থাকলে বরং সন্দেহ করবেনা।’
-‘কই যাচ্ছি?’
-‘আজিমপুর’
-“মানেহহহ।ওখানে তে আপনার বাসা’
-‘সেটাই তো।রকি এত চালাক আগে জানতাম না।তার বাড়ি আমার বাড়ির এরিয়াতে আর আমি এতদিন পাগলার মতন তাকে খুঁজছিলাম’
-‘আমিও অবাক হলাম এটাতে।এরকম চালাক সে!!’

দুজনে আজিমপুরে এসে হাজির রকির বাসার বাহিরে।গেটে দুটো লোক দাঁড়িয়ে সবার হাতে মাস্ক দিচ্ছে।পার্টি মাস্ক।শাওন আর মেধা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে ঐ লোক দুটো ওদের চিনে ফেললে তো সব শেষ।
তাও আস্তে আস্তে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো তারা।অবাক করার বিষয় হলো ছেলে দুটো শাওন আর মেধাকে চিনেনি।ব্যস্ততার ভেতরে ওদের হাতে মাস্ক ধরিয়ে তারা পেছনের মানুষদের হাতে মাস্ক দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।শাওন আর মেধা বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে মুখে মাস্ক পরতে পরতে পার্টিতে ঢুকে গেছে।সবাই ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে এসেছে অথচ মেধা থ্রি পিস পরে এসেছে।

যার কারণে ওখানে থাকা রকির বন্ধুবান্ধবরা অন্য দৃষ্টিতে দেখছিল বিষয়টা।
শাওন মেধার হাত খপ করে ধরে সোফায় বসে পড়ে বললো,’রকিকে খোঁজো’
মেধা হাত ছাড়িয়ে বললো,’বসে থেকে খুঁজবো কি করে?আমি ভেতরে গিয়ে দেখে আসি বরং।হয়ত ভেতরের রুমে সে’
-‘একা যাবেনা।তুমি বসো, আমি যাচ্ছি’
শাওন উঠে গেলো দেখতে।মেধা এদিক সেদিকে চোখ বুলাতে যেতেই একজন ওয়েটারের সামনে পড়লো।ওয়েটারের মুখেও মাস্ক।আচমকা সামনে আসায় মেধা ঘাবড়ে গিয়েছিল তাও এক প্রকার বাধ্য হয়ে সে ওয়েটারের হাতের ট্রে থেকে জুসের গ্লাসটা নিলো।

দেখতে জুস হলেও ওটা ছিল মদ।আর ওয়েটার ছিল রকি।মেধাকে চিনতে পেরেছে সে।ভাবলো মেধা একা এসেছে এখানে।এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায়নি সে।মেধার সাথে থাকার মোক্ষম সুযোগ আর কি হতে পারে।
মেধা সোফায় বসতেই ওর পাশে একটা মেয়ে বসে বললো জুস খেয়ে নাচে যোগ দিতে।মেধা মানা করার পরেও মেয়েটা জোর করেই ওকে জুসটা খাইয়ে দিলো।রকি পাঠিয়েছিল মেয়েটাকে।
ওদিকে শাওন রকিকে ভেতরের রুমগুলোতে না পেয়ে আবার মেধার কাছে চলে এসেছে।এসে দেখলো মেধা জুসের গ্লাস হাতে ওকে ডাকছে।শাওন ওর পাশে বসতেই ওর হাতে গ্লাসটা ধরিয়ে দিয়ে মেধা বললো,”নিন। অনেক মজা এটা’

-‘রকিকে তো পেলাম না’
-“আরে পাবেন।জুসটা খান দেখবেন সে সামনে এসে গেছে।’
শাওন বুঝতে পারেনি মেধাকে নেশা ধরেছে।ওর জবরদস্তীতে সে নিজেও জুসটা সাবাড় করে নিলো।
এদিকে রকি শাওনকে দেখে জায়গা ছেড়ে পালিয়েছে।সাজিদ,নুহাশ আর বাকিরা সবে রওনা হলো রকির বাসার উদ্দেশ্যে।শাওন আর মেধা ইচ্ছে করেই একটু আগে এসেছিল।
সবাই যে যার মতন পার্টি ইঞ্জয় করছে।মেধা আর শাওনের চোখ গোল গোল ঘুরছে একসাথে।মেধা তো গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাওয়া শুরু করলো চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে।শাওন সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললো,’নাচো নাচো’
মেধা শাওনের হাত ধরে দাঁড় করিয়ে ওর গলায় হাত রেখে ফিসফিস করে বললো,’আপনি জানেন?’

সঞ্চারিণী পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯

-‘কি??’
-‘আমরা দুজনে নেশা করে ফেলেছি।রকি আবারও বেকুব বানিয়েছে আমাদের’
শাওন হাসতে হাসতে বললো,’আরে তাই তো আমি তো টেরই পাইনি সে জন্য বুঝি মাথা ঘুরছে?’
-‘একদম!!আমার তো ইচ্ছে করছে আবার বিয়ে করতে’
-‘কাকে?’
-“আপনাকেই!!’
দুজনে এবার হাসতে হাসতে সোফায় বসে গেলো আবার।মেধা শাওনের কোলে মাথা রেখে সোফায় পা তুলে শুয়ে পড়লো।শাওন ওর কানে ঠোঁট লাগিয়ে বললো,’জানো তোমায় শুধু ভালো লাগে।বিয়ের আগ থেকেই।জানিনা কেন।কিন্তু ভালো লাগে।প্রচুউউউউউর ভাল্লাগে।ইচ্ছে করে সারাদিন তাকিয়ে থাকতে’

-‘তো তাকান।আমি কি মানা করেছি?’
-‘করেছো মানে?তোমার দিকে তাকালেই তুমি রশ্নির কথা মনে করিয়ে দাও।তাই এখন আর চেয়েও তাকাইনা’
-‘আমার তো ইচ্ছে করে আপনাকে সকাল বিকাল মারতে।যে পরিমান রুঢ় আপনি!!!
আমার জীবনটা একেবারে খারাপ করে দিছেন’
শাওন মেধার গাল টেনে দিয়ে বললো,’কি দরকার ছিল নেশা করার?সব সত্যি বলে দিচ্ছি।মুখে লাগাম দিতে গিয়ে মনে হয় নেশা হাত ধরে রেখেছে।’

-‘আমার সত্যি কথা শুনবেননা?’
-‘শুনি’
-‘আমি চাইনা আপনি বারান্দায় গিয়ে ভূতটার সঙ্গে প্রেম করুন।আমি চাই আমার মোহতে ডুব দিয়ে আপনি আমার প্রেমে মগ্ন হয়ে যান।পারবেননা?এই শ্যাওলা!কথা বলেননা কেন??’
শাওন মেধার চুল মুঠোবন্দী করে ফিসফিস করে বললো,’আমাকে নেশা ধরেনি মিসেস অতিরিক্ত!!! নাটক করছি।জনসম্মুখে আমার হাতে মার খেতে না চাইলে তোমার এই নাটকের রেশ কমিয়ে দাও।নাহলে আজ রকিকে তো হারিয়েছি সাথে ওর সাঙ্গোপাঙ্গ দের ও হারাবো’
মেধা চোখ বড় করে বললো,’আমি সত্যি নেশা করে ফেলেছি।নাটক করছিনা।এই দেখেন এই গ্লাসে রয়ে যাওয়া এক ফোঁটা মদের কসম’

সঞ্চারিণী পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫