সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ১৮

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ১৮
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

শ্রেয়া রুমে বসে খুঁত খুঁত করছে বিরতিহীন। নিচে যেতে জড়তা-সংকোচে ভুগছে। দর্পণ পানে আরো একবার কাজল মাখা আখিঁদ্বয় নিক্ষেপ করে প্রগাঢ় দৃষ্টে চাইল। এই নিয়ে ছয় পেরিয়ে সাত বার হলো নিজেকে পর্যবেক্ষণ করেছে। বারংবার অক্ষিপটে ভাসছে টকটকে লাল ওষ্ঠাধর,কাতান শাড়ি,মাথায়,কানে,হাতে,সিঁথিতে লাল গোলাপের অর্নামেন্টস। অতঃপর শাড়িটার আঁচল হাতে তুলে প্রিয়ু মাথায় ঘোমটা টেনে দিল।

শ্রেয়া হতবাক, স্তব্ধ। যে কেউ নিঃসন্দেহে তড়তড় করে উচ্চারণ করবে আজ হলুদ নয় বরং বিয়েটা বোধহয় ওর। এত লাল টুকটুকে কেন লাগছে?দুই গাল রক্তিম কেন এত পরিমাণে? ঠিক তিন বছর আগে যেমনটা লেগেছিল। বুকটা ধ্বক করে উঠল চোখের পাতা ফেলা মাত্রই,অতি সামান্য সময়ে। শঙ্কিত হয়ে প্রিয়ুর উদ্দেশ্যে বললো,
‘ আমি যাবো না,তুই যা। নয়ত এ শাড়ি খুলে অন্য একটা পড়ে যাই?’
প্রিয়ু চোখ রাঙিয়ে চেয়ে নিজের মাথার টিকলি খুলতে শুরু করল। আকস্মিক এমন কাজে চোখ ছানাবড়া শ্রেয়ার। প্রিয়ুর এক হাত ধরে বাঁধা প্রদান করলো। ব্যগ্র, অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস বলতে থাকে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কি করছিস?সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আচ্ছা আমি যাবো। এত জেদ কেন তোর?’
‘ কারণ শ্রেয়ু ছাড়া আমার কিছুই ভালো লাগে না। ‘– প্রিয়ুর নিরলস জবাব। ‘
তৎপর আলগোছে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে। মিনমিন করে বললো,
‘ তোকে কিন্তু শশুর বাড়ি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। ‘
শ্রেয়া নিচু কন্ঠে চিল্লিয়ে উঠলো। চাপা স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, ‘ কি?’
ভাবলেশহীন কন্ঠ প্রিয়ুর,’ কি আবার কি?মানুষ বোন থাকলে সঙ্গে নিয়ে যায় না?তো তুই আমার বোন,তোকে নিয়ে যাব। তাছাড়া ওটা তোর শশুর বাড়ি। যেতে কিসের দ্বিধা? ‘

‘ এটাই তো দ্বিধার আসল কারণ। নামে শশুর বাড়ি হলেও ওই বাড়ির মেহমান হিসেবে নিতেও তাদের ভীষণ অপরাগতা।’
‘ বউ সেজে যাবি। মেহমান হয়ে যাস না তাহলেই সমস্যার বিরাট সমাধান হয়ে গেল। ‘
শ্রেয়া সতর্ক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল কয়েক পলক প্রিয়ুর চেহারার আকৃতির দিক। সন্দেহাতীত কন্ঠে প্রশ্ন করে,
‘ তোর কথাগুলো আজ বড্ড এলোমেলো লাগছে। একবার বোন,মেহমান, বউ। এত অবিন্যস্ত কেন?’
‘ কেননা আজ স্বয়ং আমিই এলোমেলো। কি দেখলাম একটু আগে। কি সুন্দর একটা ছেলে চোখে পড়ল। গায়ে নীল পাঞ্জাবি,চোখে সানগ্লাস, ঠোঁট দুটো যেন চুম্বক। ইচ্ছে করছিল বেলকনি থেকে লাফ দিয়ে চুম্বন করে আসি। ‘
শ্রেয়ার চমকিত স্বর –‘ তোর কিন্তু কাল বিয়ে প্রিয়ু। চুপ!কেউ শুনলে কি বলবে?আয়ুশ ভাইয়া তোকে ফুটবল বানিয়ে খেলবে দেখে নিস। ‘

‘ ওই,,ওই ব্যাটার কথাই তো বলছি রে। ‘
‘ ওহ্ আচ্ছা। ‘
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল শ্রেয়া। আবারও ঘরে হুড়মুড় করে নিজেদের আগমন ঘটিয়েছে প্রিয়ুর কাজিন দল। তবে একেকটার চোখের দৃষ্টি স্থির। বড়সড় হা করে সমস্বরে চিৎকার করে উঠল,
‘ আজ কি শ্রেয়া আপুকেও বিয়ে দিয়ে দিবা প্রিয়ু আপু?’
প্রিয়ু নড়চড়ে উঠল। নিজেকে ঠিক করে পা বাড়াতে বাড়াতে আওড়ালো,

‘ হ্যাঁ হ্যাঁ দিয়ে দিব। তোরা ওকে ধরে নিয়ে আয়। আমার চিন্তা করতে হবে না। আমি নিজ পায়ে হেঁটে হেঁটে চলে যাব। ‘
সত্যি সত্যিই প্রিয়ুর কথানুযায়ী সবকটা শ্রেয়াকে ধরে বেঁধে সিঁড়ি পর্যন্ত এনে হাজির করে। কোনোমতে ওদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দম ফেলে শ্রেয়া। মাথার ঘোমটা টা ঠিকঠাক আছে কিনা তা হাত দিয়ে পরখ করে নিল। গুটি গুটি পায়ে সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসে নিচে। প্রিয়ু ততক্ষণে সদর দরজা পেরিয়ে স্টেজ অভিমুখে। অন্যদিকে শ্রেয়ার অসহ্য লজ্জায় পুরো কায়ায় তরঙ্গ খেলে যাচ্ছে। নেত্রযুগল নিম্ন হয়ে পড়ছে ক্ষণে ক্ষণে। এই বুঝি অচেনা কোনো অতিথি জিজ্ঞেস করে বসল অত্যাধিক বিস্ময় সমেত, ‘ এই তুমি বুঝি বউ?’

অনিচ্ছা সত্ত্বেও পা দু’টো এক প্রকার জোর করে চালিয়ে বাহিরে আসল। আজ ঠেলাগাড়ি হতে মন চাইছে। কেউ যদি পশ্চাৎ হতে ঠেলত তবে বোধহয় খুব খুব বেশ হতো। ফলস্বরূপ শ্রেয়া এগিয়ে যেত এক পা এক পা করে। মনের জোরের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক হয়ে উঠত না তাহলে। আমাদের জীবনের চলার পথে কি শুধু দু’টো পা থাকলেই চলা যায়?যেমন করে গাড়ির চাকা থাকে,সেই চাকা দ্বারা দীর্ঘ লম্বা রাস্তা অতিক্রম করে এমনটা?উঁহু! গাড়ির ক্ষেত্রেও বিশেষ ভিন্নতা বিদ্যমান। পেট্রোল, তেল বিহীন সেই জড় বস্তুরও কোনো মূল্য নেই। মানুষের জীবনে পা থাকলেই চলে না,গায়ে শক্তি থাকতে হয় তার চেয়েও যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে মনের জোর। মনের জোর, ইচ্ছাশক্তিই কিন্তু মানুষকে উচ্চতার শিখরে পৌঁছে দেয়। একটা মানব কিংবা মানবী দেহের শক্তি খরচ করে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার ক্ষমতা রাখে না। প্রথম প্রয়োজন হয় মনের শক্তির। মনের জোরে দেহ চলে।

কিন্তু শ্রেয়া সেটাই খুঁজে পেতে ব্যর্থ। মনে হচ্ছে আবারও মেহরিমা সামনে এসে দাঁড়াবে বলবে অমন করে সেজে এসেছ কেন। নিজেরও সংকোচ লাগছে। তাই আর স্টেজের দিকে পা না বাড়িয়ে একপাশে, কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রইল। তবে রক্ষা হলো না। প্রিয়ুর আদেশে ওকে টেনেটুনে বের করে নিয়ে গেল সবগুলো। অগত্যা দু পা সচল না হয়ে পারল না। দুই পরিবারের মেহমানে পুরো বাগান ভরপুর। স্টেজের সামনে পাতানো চেয়ারে চেয়ারে বসে আছে চেনা-অচেনা চেহারার অনেক পুরুষ, মহিলা,বাচ্চা কাচ্চা। সবাই ওর দিকে কেমন ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছে।
বিশাল বড় স্টেজ। একপাশে আয়ুশ ও প্রিয়ুর স্থান, অন্যপাশে তূর্য ও অহমিকার। প্রিয়ু নিজের আসন ছেড়ে অন্য একটা চেয়ার এনে নিজেদের পাশে রাখল। আয়ুশকে নিচু গলায় বললো,

‘ তুমি চেয়ারে বসো না। আমি এখানে বসে শ্রেয়ার সাথে পিক তুলব। ‘
পাশে থাকায় শ্রেয়ার কর্ণ অব্দি বিনা বাঁধায় প্রত্যেক টা শব্দ পৌঁছাল। তৎক্ষনাৎ আঁতকে উঠে বলে,
‘ কি বলছিস তুই? পাগল হয়েছিস?ভাইয়া আপনি বসে থাকেন। আমি স্টেজে বসব না। নিচে গিয়ে বসব। একদম ওর কথা শুনবেন না। ‘
আয়ুশ স্মিত হেসে দাঁড়িয়ে পড়ল। আঁড়চোখে প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে বললো,’ বউ বললে সব কিছুতে রাজি। তুমি বসো। বউয়ের শখ তোমার সঙ্গে ছবি তুলবে। আমি নাহয় তোমাদের আমার মুঠোফোনে বন্দিনী বানায়। ‘

বলতে দেরি হলেও আয়ুশের মোবাইল বের করতে খুব একটা সময় লাগে নি। ইশারায় দু’জনকে একসাথে বসতে আদেশ করে। বাধ্য, সুবোধ বালিকা হয়ে উভয়েই বধূ রূপে বন্দিনী হয়েই গেল। তন্মধ্যে অপরপাশে বসানো হলো অহমিকাকে। ভারী মেকআপে অদ্ভুত সুন্দর ঠেকল তাকে শ্রেয়ার নজরে। হৃদয়স্থল যন্ত্রণায় ছটফট করতে আরম্ভ করলো। শুধু হলুদের সাজে দেখে এহেন অবস্থা তাহলে যখন তূর্য এসে অহমিকার পাশে বসবে কেমন করে সহ্য করবে সে?তার সহ্যশক্তির মাত্রা কম। খুবই ক্ষীণ। পানি পান করার বাহানা রটিয়ে উঁচু স্থান ত্যাগ করে ভূমিতে পা রাখল। জুতোর নিম্ন তলে পিষে যাচ্ছে সবুজ ঘাসগুলো। দ্রুত হেঁটে বাগানের মধ্যিখানে এসে থমকে গেল। নিস্তব্ধ হয়ে পড়ল চোখ জোড়া। সামনে মেহরিমা,রাশেদা,ত্রিহা ও তূর্য হেঁটে আসছে। তারাও কয়েক পা এসে থেমে যায়। রাশেদা ওর চিবুকে হাত রেখে মন্ত্র মুগ্ধের ন্যায় চেয়ে থেকে মায়াভরা কন্ঠে বলে ওঠে,

‘ তোকে কি সুন্দর লাগছে রে মা!মনে হচ্ছে তুই বউ। ‘
শ্রেয়া মেকি হাসল। লজ্জায় মাথা নত করল। পরক্ষণেই চোখ তুলে রিনঝিনে স্বরে বললো,’ ধন্যবাদ আন্টি এত সুন্দর একটা শাড়ি দেও,,’
বাক্যটা সমাপ্ত করার আগে একটা গমগমে,গম্ভীর স্বর যেন কন্ঠ চেপে ধরে। রাশভারী গলায় বলে,’ আন্টি সবাই অপেক্ষা করছে। এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে চলুন। নয়ত পরে সবাই ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাবে। ‘
‘ আরে হুম। তুমি একদম ঠিক বলেছো তূর্য। চলো, চলো। শ্রেয়া তুইও আয়। ‘
‘ আমি একটু পর আসছি। মোবাইলটা ঘরে রয়ে গেছে। ‘
‘ আচ্ছা। আমরা যাই। ‘

মেহরিমা তীক্ষ্ণ চক্ষে চেয়ে পা মিলাল সবার সাথে। তূর্য তাদের আগেই চলে গেল। শ্রেয়া প্রচন্ড বিস্ময়াহত হলো। লোকটা একটা বারও ওর দিকে চেয়ে দেখল না। কেন দেখবে?আজ সে কেবল অহমিকাকে দেখবে যে কিনা আগামীকাল চিরকালের নিমিত্তে তার বৌ হয়ে যাবে। অথচ ও নত মস্তকেও সারাক্ষণ মানুষ টার দিকেই চেয়েছে তীররেখা নজরে একরাশ মুগ্ধতা সহিত। সাদা পাঞ্জাবিতে শুধুই একজন শুভ্র পুরুষ দেখছিল ও। এক মুহুর্তের জন্য স্পৃহা হয়েছিল পাশে দাঁড়িয়ে কাউকে বলতে–‘ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করুন তো আমাদের একসাথে কেমন লাগছে?সাদা এবং লালের কম্বিনেশন, মোহনীয় না?’

কিন্তু হায়! এ যে কখনও হবার নয়,হবেও না। এক কৃষ্ণ বর্ণের রজনী পেরুলোই প্রকৃতিতে দ্যুতির বিচরণ, খেলার শুরু হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে প্রিয় মানুষের সন্ধি হবে অন্য এক রমণীর সাথে।
বুকে পাথর সমান ওজন কমানোর প্রয়াসে দীর্ঘমেয়াদি নিঃশ্বাস ছাড়ে শ্রেয়া। নেহাৎ ওইখান থেকে উঠে আসতে পেরেছে নয়ত চক্ষু কোল বেয়ে যে অশ্রুকণারা কপোল ছুঁয়ে চিবুকে বেয়ে গলা স্পর্শ করছে তা সবার চোখে চোখে বিঁধত। গটগট পায়ে ঘরে ঢুকে পানি পান করল। অনুষ্ঠান বাহিরে হওয়ায় ঘরে তেমন একটা কেউ নেই। তেমন একটা বললে ভুল। কেউই নেই। গানের তীব্র আওয়াজ আসছে।

শ্রেয়া শক্তিহীন দেহখানি সোফায় এলিয়ে চোখ বুঁজে পড়ে আছে। দু’দিকের কার্নিশ বেয়ে অবলীলায় গড়িয়ে যাচ্ছে জল। বুক ফেটে আর্তনাদ বাহিরে আসতে চাইছে। ভালো লাগছে না। অঢেল কষ্টে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। এই দুঃখের শেষটা কোথায়?কখনো কি সমাপ্তি ঘটবে নাকি অন্তিমকাল অবধি বয়ে বেড়াতে হবে?মাথা উঠিয়ে বসল। নেত্র মেলতেই হতবিহ্বল,বাকরুদ্ধ। যাকে কেন্দ্র করে,কল্পনা করে এত এত কষ্টের সৃষ্টি সেই ব্যক্তি সামনের সোফায় বসে আছে ভাবলেশহীন। দৃষ্টি হাতের লাল গোলাপের দিকে নিবদ্ধ। বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ফুলটা।
শ্রেয়া বিহ্বল কন্ঠে কিছু বলতে চাইল। হাত নাড়তেই চুড়ির আওয়াজে তূর্য ঝাঁঝালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ভড়কে গেল ও। এভাবে তাকানোর মানে বুঝল না। কোমরে হাত দিয়ে চেক করল শাড়ি সরে গেল নাকি। এই ব্যক্তি আবার লজ্জায় ফেলতে দক্ষ। কোনো কারণ না পেয়ে ভড়কে যাওয়া বজায় রেখে বলে উঠল,

‘ আপনি এখানে বসে আছেন কেন?’
‘ বউয়ের পালিয়ে যাওয়ার গল্পটা শোনার জন্য। ‘
তূর্যর চিরাচরিত কন্ঠের বাক্য কর্ণপাত হতেই শ্রেয়ার বক্ষস্পন্দন বেড়ে যায়। আমতাআমতা কন্ঠস্বর ওর, ‘ কি?’
‘ তুমি কি বউ?আর বউ হলে অনুষ্ঠান থেকে পালিয়ে এখানে এসে হাত পা ছড়িয়ে বসে কেন?’
‘ আমি বউ কেন হতে যাব?’
তূর্য সঠান হয়ে বসে। আনন্দপূর্ণ মেজাজে বলে,
‘ বউ নাহলে বউয়ের মতোন সেজেছো কেন?ছেলেদের ইমপ্রেস করার ধান্দা?’

শ্রেয়া বুঝে পায় না এই লোক কথায় কথায় ধান্দা শব্দ ব্যবহার করে কেন?আর এটা ওর বেলায় কেন করে?ও কি ধান্দাবাজ মেয়ে? কিছু কঠিন কথা শোনাতে যেয়েও দমে যায়। নম্র স্বরে সাফাই দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
‘ আন্টি দিয়েছেন অর্নামেন্টস, শাড়ি টা। তাই ওনার দেওয়া জিনিস ফেলতে পারলাম না। আর প্রিয়ু এমন করে সাজিয়ে দিয়েছে। ‘
অকস্মাৎ তূর্য ঠান্ডা দৃষ্টিতে চেয়ে ফিচেল কন্ঠে বললো,
‘ আন্টি দিয়েছে? ‘
‘ হ্যাঁ। ‘– শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে জানায়।
পরমুহূর্তেই দেখে তূর্য ঠোঁটের কোণে সুপ্ত বাঁকা হাসি নিয়ে ওর নিকটে আসে। কানে গোলাপ টা গুঁজে দেয়। কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই বেরিয়ে গেল। হতভম্ব হয়ে রইল ও।

প্রিয়ু খবর পাঠিয়েছে তাড়াতাড়ি স্টেজে পৌঁছাতে। এখনই নাকি বিয়ে হবে। এটা শুনে কয়েক মিনিট,সেকেন্ড শ্রেয়া স্থবির হয়ে ছিল। ডিসিশন টা চৌধুরী বাড়ির সদস্যদের। সবার নয় কেবল তূর্য ও আয়ুশের। তাঁরা দু’জন আগেই সবার সাথে কথা বলে ঠিক করে রেখেছিল তবে প্রিয়ুকে জানানো হয় নি। মেহমানরা পর্যন্ত জানে না। আজ বিয়ের কার্য টা সম্পন্ন হয়ে যাবে,কাল সেই উপলক্ষে অনুষ্ঠান। শ্রেয়ার কাছে এটা খুব ইউনিক লাগল কিন্তু ম’রে যেতেও ইচ্ছে জাগছে। স্বামীর বিয়েতে উপস্থিত হতে যাচ্ছে। কখনও মানুষ টার বুকে মাথা রাখা হলো না।

সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি পর্বটা এলো না,হলো না সংসার গড়া। কেবল প্রিয়ুর জন্য যেতে হবে। মেয়েটা ওর জন্য অনেক করেছে। স্বার্থপর হলে চলবে না একদম। কিছু দিতে না পারুক, বিয়েতে অংশীদার হওয়া তো যায়! সেই চিন্তায় অটল থেকে দ্রুত পদে আসে। আসতে আসতে শুনতে পায় কাজী সাহেবের রসকষহীন স্বর,’ পাত্র-কনে তো রেডি। তাহলে বিয়ে শুরু করি। বাড়ির বড় ছেলেকে দিয়েই শুরুটা হোক। ‘
তাৎক্ষণিক শ্রেয়ার কর্ণধার হয় আরো একটা কন্ঠ। তূর্যর গম্ভীর স্বর,’ একটু অপেক্ষা করুন কাজী সাহেব,আমার বউকে আসতে দিন। ‘

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ১৭

এটুকু বলে সামনের দিকে তাকালো। শ্রেয়া পাথর হয়ে গেল নিমেষে। সবার মুখশ্রীতে অবাকতার ছাপ। দেখল তূর্য এগিয়ে এসেছে। দাঁড়িয়েছে ওর সামনে। ওর হাত ছুঁয়ে বললো,
‘ তোমার জন্য কাজী সাহেব দাঁড়িয়ে আছে, চলো। ‘

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ১৯