সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

‘ এটা কি করলেন আপনি?চোখে দেখেন নি?’- রাগান্বিত কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল ছেলে টা।
শ্রেয়া থতমত খেয়ে গেল। সাফাই দেওয়ার ভঙ্গিতে আওড়ালো,
‘ আ’ম স্যরি। আমি খেয়াল করি নি যে আপনি এখানে ছিলেন। সত্যি একদম দেখতে পাই নি। ‘
ভেতরে ভেতরে ভীষণ অনুতপ্ত শ্রেয়া। কোন বেখেয়ালে যে কোনোদিকে না চেয়ে অমন করে কাপড় মেলতে গেল,যার দরুন পানি ছিটকে গিয়ে পড়ল লোক টার চোখে মুখে। এতে নিঃসন্দেহে যে কেউ ক্রুদ্ধ হবে। লোকটাও হলো। শ্রেয়া আবারও নিচু স্বরে মিনমিন করে বললো,

‘ আমি সত্যিই দেখতে পাই নি। ‘
‘ দেখবেন কি করে?চোখ আছে?দিন দুপুরে কানা। এক তো অন্যায় করেছে আবার অভিনয়ও করছে বেঁচে যাওয়ার জন্য। স্বা’র্থ’পর একটা। ‘
দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে উঠল লোক টা। শ্রেয়ার মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল। স্বার্থপর?সে কখন স্বার্থপর হলো?এত বড় মিথ্যে অপবাদ? অপ’রা’ধ করেছে বলে নত হলো অথচ লোকটা কি-না ওকে স্বার্থপর বলল?কিছু কড়া শব্দ শোনাতে চায় মন। তবুও নিজেকে সামলে যথেষ্ট নম্র গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ দেখুন আমি অভিনয় করছি না। সত্যি বলতে আমি অনুতপ্ত। আপনিই কথাটা বেশি ঘুরাচ্ছেন৷ সামান্য পানিই তো পড়েছে। মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় নি। এত রিয়েক্ট করারও কিছু নেই। ‘
শেষের বাক্য গুলো নিচু স্বরে বলতে গেলেও ভিতরে ভিতরে জন্মানো রাগের কারণে কিছুটা উঁচু হয়ে গেল। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো ছেলেটার।
‘ বেয়াদব মেয়ে। এখনই কমপ্লেইন করবো আমি এপার্টমেন্টের মালিকের কাছে। এত ভদ্র একটা লোক আপনার মতোন বেয়া/দব, অভ’দ্র মেয়েকে বাসা কেমন করে ভাড়া দিল!বড়দের সঙ্গে কি করে ব্যবহার করতে হয় সেই শিক্ষা টুকু হয়ত আপনার মাঝে বিদ্যমান নেই। ‘

‘ আমি বেয়া/দব? আপনার মধ্যে শিক্ষার অভাব মনে হচ্ছে আমার। তাই তো ঝগড়া লেগে গেলেন। ‘
‘ কি?আমি ঝগড়া করছি?মুখে মুখে তর্ক?’
হাত মুঠো করে ফেলল ছেলেটা, তা শ্রেয়ার দৃষ্টি এড়ালো না। ভয়ে শুষ্ক ঢোক গিলে সে। মেরে দেবে না তো আবার?ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ছেলে টা ওকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে দ্রুত বেগে প্রস্থান করলো। দুই অধর আপনা আপনি কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল ওর। নিশ্চুপে লোকটা কি অপমান করে গেল ওকে?হুট করেই শ্রেয়ার মস্তিষ্কে উদয় হলো এই গম্ভীরমুখো ছেলে টা কে?গত তিন বছরে ধরে এখানে থাকছে কই কখনও তো দেখে নি আগে। আচ্ছা প্রিয়ু যে বলল ক্ষীণ সময় পূর্বে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে ইনিই কি?ইউনিভার্সিটির একজন লেকচারার এত বদ’মে’জাজি, উগ্র হতে পারে?মনে মনে গালি দেওয়ার স্পৃহা জাগলেও তা দমিয়ে ফেলল শ্রেয়া।

সবগুলো কাপড় মেলে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এল। অচেনা লোক টার সঙ্গে তর্কে তর্কে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। এখন আবার নাস্তা বানাতে হবে৷ নয়ত না খেয়ে যেতে হবে ভার্সিটিতে। দরজা ভেজিয়ে গিয়েছিল যাওয়ার সময়। নরম হাতে ঠেলে ভিতরে ঢুকল। বালতিটা এক পাশে রেখে উঁকি দেয় প্রিয়ুর রুমে। মেয়েটা দিব্যি ফোনে হেসে হেসে কথা বলে চলেছে। দু’গালে লালের আস্তরণ স্পষ্ট লেপ্টে আছে এবং ঈষৎ গাঢ়। শ্রেয়সীর বুকটা ধ্বক করে উঠল। প্রেমের কি এত শক্তি? নিমিষেই মন টা ভালো করে দেয়। গালে লজ্জা মাখিয়ে দেয়। প্রিয়ুর এই সুখী সুখী চেহারা টা দেখলে হৃদয়ে অনাবিল প্রশান্তির ঢেউ খেলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কোথাও শূণ্যতায় কুঁকড়ে উঠে হৃদপিণ্ড। ঠিক তিনটা বছর আগে এমন করেই তো কারো জন্য নিজেকে লজ্জায় রাঙানোর স্বপ্ন দেখেছিল। কতশত আশায় বেঁধে ছিল নিজেকে। সুস্থ মস্তিষ্কের একজন জীবনসঙ্গী চাইল, কিন্তু নিয়তি!বিনিময়ে তচনচ করে দিল সব আশা,ভেঙে দিল ভালোবাসা পাওয়ার স্বপ্ন।

শ্রেয়া একবার ভাবল প্রিয়ুকে ডাকবে না কিন্তু পরমুহূর্তে প্রাচীরে সজ্জিত ঘড়ির কাটায় দৃষ্টি পড়তেই চক্ষু চড়কগাছ। হাতে আর মাত্র আধাঘন্টা সময় আছে। কখন কি করবে?ভার্সিটি পৌঁছাতেই সময় লেগে যাবে পনেরো মিনিট। উপায় না পেয়ে ডেকে উঠল রিনঝিনে স্বরে,
‘ প্রিয়ু!’
প্রিয়ু কানে মোবাইল ধরে রেখেই হাতের ইশারায় প্রশ্ন করলো। জবাবে অস্থির কন্ঠে বলে উঠল শ্রেয়া,
‘ আর মাত্র ২৯ মিনিট সময় আছে। কল টা কি এখন রাখা যাবে?তোর লেকচারার সাহেব কি আজ ভার্সিটি যাবেন না?’
শ্রেয়ার কথায় টনক নড়ল প্রিয়ুর। উত্তেজিত স্বরে বলে উঠল,

‘ আচ্ছা রাখছি। তুৃমিও ক্লাসে যাও,আমারও যেতে হবে।’
‘ শুনো,,!’– মোলায়েম স্বরে ডাকল ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি টা। প্রিয়ু সম্মতি দিয়ে শুধালো,
‘ বলো। ‘
‘ নিজের খেয়াল রেখো। সাথের মানুষ টারও। ‘
‘ এখন ও,,’
বলতে গিয়ে শ্রেয়ার উপস্থিতিতে বাক্যটা অসমাপ্ত থেকে গেল। শব্দ আঁটকে গেল কন্ঠনালিতে। শ্রেয়ার দিকে চেয়ে আমতা আমতা করে বললো,
‘ আমি আসছি, তুই যা। ‘

মৃদু হাসল শ্রেয়া। রুম ছেড়ে কিচেনে আসল। কম সময়ে যা বানানো যায়, তা-ই বানাবে। কোনোরকমে পেট ভরলেই হলো। হাতে নুডলস প্যাকেট নিয়ে অন্য হাতে একটা পেঁয়াজ তুলে নেয়। চপিং বোর্ডে রেখে মগ্ন হয়ে পড়ে কাটতে।
প্রিয়ু কিছুটা সময় নিল। ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি এখনও তার অর্ধসমাপ্ত বাক্য খানা পূর্ণ শোনার অপেক্ষায়। আশেপাশে চোরা দৃষ্টি মেলে বললো,
‘ ও এখন শুধু আপনার দেওয়া দ্বায়িত্ব না আয়ুশ,আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের চেয়েও বেশি। ধন্যবাদ আপনাকে এই মেয়েটার সন্ধান আমাকে দেওয়ার জন্য। নয়ত কখনও এমন বন্ধু পেতাম না। ‘
আয়ুশ ঠোঁট ছড়িয়ে বললো,

‘ ধন্যবাদের মতো শুকনো শব্দ নট একসেপ্টেড মিস প্রিয়ু। ভিন্ন কিছু ট্রাই করুন। ‘
প্রিয়ুর সমগ্র ওষ্ঠ জুড়ে লজ্জালু রেখা দেখা দেয়। বললো,
‘ আপনি এখানে প্রেমের ক্লাসে ব্যস্ত থাকবেন নাকি স্টুডেন্টও পড়াবেন লেকচারার আয়ুশ চৌধুরী? রাখলাম। ‘
আয়ুশকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়ু ঝটপট পা বাড়ালো কিচেনের দিকে। এই ফ্ল্যাটে ওরা দু’জন একা থাকে বিধায় দু’জনে মিলেমিশেই সব করে। অবশ্য কাজের বুয়া আসে,টুকটাক কাজ করে দিয়ে যায় কিন্তু তার হাতের রান্নার পানসে স্বাদ নিতে ইচ্ছুক নয় দু’জন।

প্রিয়ুকে আসতে দেখে শ্রেয়া তাড়াতাড়ি করে একটা বাটিতে নুডলস নিল। গরম গরম খাবার খেতে পারে না মেয়েটা। যেই মেয়েটা ওকে সুন্দরভাবে বাঁচতে পাশে এসে দাড়িয়েছে,রাস্তা থেকে এনে এই বিশাল ফ্ল্যাটে ঠাঁই দিয়েছে অবলীলায় তার একটু আকটু খেয়াল রাখা যায় ও যত্ন নেওয়া দোষের নয়। প্রিয়ুকে লেট লতিফ নামে সংজ্ঞায়িত করলে ভুল হবে না। মেয়েটার সবকিছুতে দেরী। তার প্রেমিক পুরুষ ঠিক যতটা পাংচুয়াল সে ঠিক ততটা এলোমেলো। একে অপরের বিপরীত। দুই মেরুর অধিবাসী। শ্রেয়ার সাক্ষাৎ হয়েছিল আয়ুশের সাথে প্রায় বছর দেড়েক পূর্বে। প্রিয়ু ও আয়ুশের সম্পর্ক টা সম্পর্কে উভয় পরিবারই অবগত। বরং পারিবারিকভাবেই ওদের বিয়ে ঠিক। অতঃপর কথা হতে হতে প্রণয়,দু’টো হৃদয়ের সন্ধি। এসব প্রিয়ুর কাছেই শুনেছে ও। প্রিয়ুর তরফ থেকে ভালোবাসার সূচনা টা প্রথম হলেও আয়ুশের পক্ষ থেকে এক বছর আগে প্রকাশ পেয়েছে। শ্রেয়া নিজ চক্ষে অনুভব করেছে মেয়েটার ছটফটানি আয়ুশ নামের মানুষ টার ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে।

এখনও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হতে হতে বাঁচে যখনই মনে পড়ে চট্টগ্রাম শহরে আসার প্রথম রাত টার কথা। প্রিয়ু না থাকলে জীবন টা বোধহয় আজ কোনো পতি/তা পল্লীতে কাটত নয়ত চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যেত। প্রতিনিয়ত জীবনের একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বিয়ে নামক সেই সম্পর্ক। এই সম্পর্কের জন্যই ঢাকা শহর ছাড়তে হয়,বেছে নিতে হলো অন্য এক কোলাহল মিশ্রিত শহর। শ্রেয়া চোখ বুঁজে সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ফেলে,মনের সাথে যুদ্ধ চালাল,
‘ অতীত কেন মনে করছিস শ্রেয়া?পিছুটান কেন?কেন এত দরদ উতলে উঠে মাঝে মাঝে ওই না দেখা পাগ/ল স্বামীর জন্য?তিনটা বছর শেষ। সেই সাথে অতীতে পড়ে আছে সেই মুহুর্ত টা,চাইলেও আর ফিরে আসবে না জীবনে। সঠিক পথে এগিয়েছিস তুই, ঘাড় বাঁকিয়ে চাস না আর। ‘

রাস্তায় আজ অটো রিকশার কমতি,অনটন দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝে এক দু’টো আসছে তাও লোকে পরিপূর্ণ। শ্রেয়া ও প্রিয়ু বেজায় বিরক্ত। কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এত তাড়াহুড়ো করে লাভ হলো না। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রায় দশ মিনিট চলে গেল। হাতে অবিশষ্ট আছে শুধু মিনিট খানেক সময়। প্রিয়ু আর স্থির থাকতে পারল না। একটু সরে আবারও কয়েক কদম এগিয়ে গেল রিকশা খোঁজার জন্য। শ্রেয়া ভ্রুঁ যুগল কুঁচকে তাকাল। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও দূর হতে রিকশা আসলে চোখে পড়বে,কিছুদূর হেঁটে গিয়ে শরীর বাঁকা করে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকলেও রিকশা এদিক দিয়েই যাবে। এত কষ্ট করে উঁকি দিয়ে দেখার মানে হয়?প্রিয়ুর বোকামিতে ভীষণ হাসি পাচ্ছে ওর। তবুও তা চেপে বললো,

‘ চল হেঁটে যাই। ‘
প্রিয়ু হাল ছেড়ে সায় দিয়ে প্রতি উত্তর করলো,
‘ চল। ‘
দু’জনে কয়েক পা ফেলে সম্মুখে এগিয়ে যেতেই পিছন থেকে রিকশার টিংটিং আওয়াজে পরবর্তী কদম থমকে গেল মুহুর্তেই। শ্রেয়া বাড়ানো পা টা পিছিয়ে এনে ঘাড় ফিরিয়ে চাইল। এক আধবয়স্ক চাচা লাল লাল দাঁত দেখিয়ে মনের সুখে প্যাডেল ঘুরিয়ে এদিকেই আসছে। তৎক্ষনাৎ প্রিয়ু ব্যস্ত হাতে রিকশা থামানোর জন্য ইশারা করল। থেমে গেল রিকশা। চাচা হাসিমুখে বলে উঠলেন,

‘ আম্মারা যাইবেন?’
‘ হু,চাচা। ‘
‘ উইঠা পড়েন। ‘
প্রিয়ু রিকশায় উঠে দুই অধর প্রশস্ত করে প্রশ্ন করল,
‘ চাচা মনে হয় অনেক খুশি?’
নিমিষেই রিকশাওয়ালা চাচা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলেন। পুনর্বার সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ধরা গলায় বললেন,
‘ মনের দুঃখে হাসি পায় আম্মা। ‘
শ্রেয়া,প্রিয়ু থতমত খেয়ে যায় তাৎক্ষণিক। একটা মানুষের জীবনে ঠিক কতটা কষ্ট থাকলে এমনটা বলা যায়?শ্রেয়া ক্লান্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে জিজ্ঞেস করে,

‘ কি হয়েছে চাচা?’
‘ কি হয় নাই আম্মা?মাইডার লাইগ্গা শরীলডা পু’ড়ে। বিয়া দিলাম এক বছর হইলো। জামাইডা পাগল আছিল। গরীব মানুষ বিয়া দিয়া লাইছি। কাইলকা শুনি জামাইরে পায় না। পাগলের কি ঠিক ঠিকানা আছে?চইলা গেছে কই জানি!’
শ্রেয়ার অন্তঃকরণে দূর হতে একটা তীর এসে বিঁধে আকস্মিক। শিরা উপশিরায় কাঁপুনি ছুটে যায়। দেহটা অচল হয়ে পড়ে যেতে নেয় রিকশা থেকে। সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়ু সামলে নেয়। ভয়ার্ত,বিচলিত স্বরে বলতে থাকে,
‘ কি হলো শ্রেয়া?শরীর খারাপ লাগছে তোর?’

শ্রেয়া জবাব দিতে বরাবরই ব্যর্থ হলো। অভ্যন্তরে চলা যুদ্ধ বাহ্যিকভাবে প্রকাশ করতে চাইছে না সে। আজও তো প্রিয়ুকে বলা হয় নি তিন বছর আগের সেই সত্য। বলতে চায় না ও। চায় না ওই ধোঁ-কা মনে রাখতে। না চাইলেও মনের কোণে যেন কেউ ঘাপটি মেরে বসে আছে অদৃশ্য হয়ে। প্রতিনিয়ত চিৎকার করে জানায় সেই অচেনা কেউ –‘ তুমি কারো অর্ধাঙ্গিনী শ্রেয়া,সেই সাথে স্বা*র্থপর একটা মেয়ে তুমি। ‘ শরীর টা ঝাড়া দিয়ে উঠল তার। প্রিয়ু ফিরে যেতে চাইলে তাতে ঘোর আপত্তি জানায়।

ক্লাসের প্রায় অর্ধেক সময় অতিক্রম হয়ে গিয়েছে। শ্রেয়া ও প্রিয়ু দৌড়ে এলো। কোনোমতেই আজ ক্লাস মিস করা যাবে না। গত কয়েকদিন ধরে মিস হচ্ছে। সামনে পরীক্ষা। রিটেকের ঝামেলা পোহাতে সম্মতি নেই দু’জনের মধ্যে কারোই। তাই দু’জনেই ক্লাসের সামনে এসে উপস্থিত হলো। এখন যেই স্যারের ক্লাস তিনি আগে থেকেই বলে দিয়েছেন কেউ লেট আসলেও যেন পিছনের দরজা দিয়ে নিরবে,নিঃশব্দে প্রবেশ করে। অনুমতি ও নির্দেশনা থাকায় শ্রেয়া ও প্রিয়ু ঢুকতে গেল,তখনই হুড়মুড় করে শ্রবণগ্রন্থিতে পৌঁছাল ক্রুদ্ধ, ঝাঁঝালো,কাঠ কাঠ কন্ঠস্বর,

‘ স্টপ দেয়ার। ডোন্ট ট্রাই টু গেট ইনসাইড। ‘
কারো রোষপূর্ণ কন্ঠে দু’জনে ভ’য় পেল না। দেহ কাঁপল না। আপাতত দু’জনের মুখশ্রীতে কিঞ্চিৎ বিস্ময় এটা ভেবে তাদের বুড়ো স্যারের কন্ঠে এত তেজ এলো কেমন করে?এত ধারালো!তড়িৎ গতিতে সামনে তাকালো শ্রেয়া। সেই সাথে চেহারায় দৃশ্যমান হয় আকাশচুম্বী অবাকতা। এ যেন অবিশ্বাস্য! সকালে যার সঙ্গে কোমর বেঁধে ঝগ’ড়া করলো সেই কি-না ওদের লেকচারার। কেমনে?কি করে সম্ভব? শ্রেয়ার মাথা ঘুরছে।

‘ দুজনেই বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকুন ক্লাস শেষ হওয়া অবধি। ‘
শক্ত গলায় আদেশ প্রদান করে লোকটা আবারও অন্যান্য স্টুডেন্টের সাথে কথা বলতে লাগলেন। প্রিয়ু ও শ্রেয়া দাঁড়িয়ে রইল। স্থির থাকল ক্লাসের সমাপ্তি টানা পর্যন্ত। কিন্তু প্রিয়ু যেন ফুড়ফুড়ে মেজাজে আছে। তন্মধ্যে ক্লাস থেকে বেরিয়ে নতুন লেকচারার ওদের দিকে এগিয়ে আসে। কন্ঠে গম্ভীরতা এঁটে বললো,

‘ নাম?’
প্রিয়ু তড়তড় করে ব্যগ্র কন্ঠে প্রতুত্তর করলো,
‘ ও শ্রেয়সী,আমি প্রিয়ু। ‘
‘ আপনাকে ওনার নাম জিজ্ঞেস করেছি?’– বিরক্ত মিশ্রিত স্বরে বলে উঠল।
‘ না স্যার। ‘
‘ ক্লাসে যান। ফারদার লেট আসবেন না। ‘
পুনরায় আদেশ পেয়ে দু’জনে হাফ ছেড়ে যেতে নিলে আবারও ডেকে উঠে লোকটা,
‘ মিস শ্রেয়সী?’
কন্ঠ টা বড্ড গাঢ় শোনাল। হৃদযন্ত্র ক্ষীণ সময়ের জন্য স্পন্দনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। প্রিয়ুর কাছ থেকে সরে এসে শ্রেয়া আনতস্বরে বলে,

‘ জ্বী স্যার?’
‘ লক্ষ্মী মেয়ে হবেন বেয়া*দবি ছেড়ে। ভবিষ্যতে কাজে আসবে। বুঝেছেন?’
বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো শ্রেয়া। দিব্যি ঠাহর করতে পারে সকালের ঘটনার রেশ ধরেই এই বাক্যের উৎপত্তি। মাথা নাড়ালো ও। মুখে আওড়ালো,
‘ হু!’
‘ গুড। ‘
স্মিত হেসে ছোট্ট এই শব্দটি উচ্চারণ করে চলে গেল সেই মানুষ টা । নিস্তব্ধ রেখে যায় শ্রেয়াকে। প্রিয়ু পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ১

‘ নতুন লেকচারার এর নাম জানিস শ্রেয়া?’
শ্রেয়া আনমনে,মিহি স্বরে বললো,
‘ আমি কোত্থেকে জানব?’
‘ তূর্য চৌধুরী। ‘

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩