ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৩

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৩
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তানিশা কিচেন রুমে গিয়ে দেখে লিনা একা একাই রান্না করছে।সেজন্য তানিশা জিজ্ঞেস করলো,
শিরিন ভাবি কই?
লিনা জানালো শিরিন ভাবি তার বাপের বাড়ি গেছে।সেই কথা শুনে তানিশার বেশ খটকা লাগলো।এতো সকালে শিরিন ভাবি বাপের বাড়ি কেনো গেছে?

তানিশা তখন লিনাকে জিজ্ঞেস করলো, সে কিছু জানে নাকি?
লিনা বললো, না ভাবি, জানি না কিছু আমি।তবে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।কারন খালু জানও সেই সকাল থেকে বাসায় নাই।এদিকে আমান ভাই আজ এখনো অফিস যায় নি।আমাকে শুধু বললো, এক কাপ কফি রেডি করতে।আমিও করে দিলাম কফি।তারপর থেকে উনি ওনার রুমেই আছেন।
তানিশা লিনার কথা শুনে নিজেও বেশ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।কারণ আমানও তো নোমানকে নিয়ে কই যেনো যাবে।তাহলে হয়েছে টা কি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এদিকে নোমান শাওয়ার শেষ করে রেডি হয়ে বসে আছে তানিশার জন্য।কিন্তু তানিশা তো একটিবার রুমে আসছে না।সেজন্য নোমান তার রুম থেকেই তানিশা তানিশা বলে ডাকতে লাগলো।তানিশা সেই কথা শুনে সাথে সাথে রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দেখে নোমান একদম আকাশী কালারের একটা ফুল হাতা শার্ট আর তার সাথে গ্রে কালারের একটা প্যান্ট পড়ে রেডি হয়ে বসে আছে।ডাক্তার সাহেবকে বেশ হ্যান্ডসামই লাগছিলো।
তানিশা রুমে প্রবেশ করতেই নোমান তার হাত ধরে টেনে ইচ্ছামত কয়েকটা কিস করে বললো, কই ছিলে এতোক্ষণ? জানোই তো বাহিরে যাবো এখন?

তানিশা তখন বললো,হ্যাঁ বাহিরেই তো যাবেন।তা যাচ্ছেন না কেনো?
নোমান সেই কথা শুনে আরো কয়েকটা কিস করে বললো,এই জন্য যাচ্ছি না।বাহিরে যাওয়ার আগে বউকে একটু আদর না করলে হয় নাকি?
তানিশা সেই কথা শুনে বললো,আমার না আপনাকে চিনতে ভীষণ কষ্ট হয় এখন।আপনি কি সেই ভদ্র নোমান?যাকে আমি চিনতাম?

নোমান তখন তানিশার গলায় তার মুখ ডুবিয়ে বললো, হ্যাঁ ম্যাডাম!আমিই সেই নোমান।তাছাড়া বউ এর কাছে ভদ্র হলে চলবে নাকি?বউ এর কাছে যদি ভদ্রতা দেখায় তাহলে তো বউ তখন আফসোস করে করে বলবে,শালা আনরোমান্টিক বর একটা!কোন দুঃখে যে একে চয়েজ করেছিলাম?
এদিকে আমান সেই থেকে ওয়েট করে আছে নোমানের জন্য।নোমান বললো,দশ মিনিটের কথা সেখানে তো ২০ মিনিট হয়ে গেলো।কিন্তু আমানের আবার ভীষণ তাড়া আছে।সেজন্য সে আবার নোমানকে ডাকতে গেলো।কিন্তু রুমে ঢুকে সে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
নোমান আর তানিশা দুইজনই প্রেমের সাগরে ডুবিয়ে আছে।নোমান তানিশাকে ভালোবাসার স্পর্শে পাগল করে তুলছে আর তানিশা তা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে।

আমান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে এলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, ভাগ্যিস ওরা দুইজন দেখে নি।তা না হলে কি হতো তার?সে কিভাবে মুখ দেখাতো ছোট ভাইকে।
আমান তখন তার ঘড়ির দিকে তাকালো।হাতে তার সময়ও নাই।আর এদিকে নোমান আছে তার রোমান্স নিয়ে।আজ কপালে ওর কি আছে বুঝতে পারছি না।
না,এভাবে হবে না।অন্যভাবে ট্রাই করতে হবে।এজন্য আমান কল দিলো নোমানকে।কিন্তু নোমান মোবাইলের রিংটোন যেনো শুনতেই পেলো না।

এদিকে তানিশা রিংটোন শুনে বললো,এই,ছাড়ুন এখন।আপনাকে কে যেনো কল করেছে।
নোমান সেই কথা শুনে তার পকেট থেকে ফোনটা বের করলো আর তার ভাইয়ের নাম্বার দেখে বললো,ও মাই গড।সে তো একদম ভুলেই গেছে।এই বলে সে তানিশার ঠোঁটে হালকা করে ছুঁয়ে দিয়ে বললো, গুড বাই ম্যাডাম।আসছি আমি।এই বলে নোমান বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
নোমান রুম থেকে বের হতেই দেখে আমান রেডি হয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে।আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
–ভাইয়া চলো এখন। রেডি আমি।

আমান সেই কথা শুনে বললো, দশ মিনিটের কথা বলে কয় মিনিট লাগালি?নেক্সট টাইম ভেবেচিন্তে সময় বলবি।
নোমান তখন বললো সরি ভাইয়া।ভুলে গেছিলাম। কিন্তু আমরা এখন যাচ্ছি টা কোথায়?
–গেলেই বুঝতে পারবি।এই বলে আমান আগে গিয়ে গাড়িতে বসলো।তারপর নোমান পরে গিয়ে বসলো।আমানকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিলো।নোমান তা দেখে বললো, ভাইয়া এনি প্রবলেম?প্লিজ টেল মি।
আমান তখন তার দুই হাত নাড়িয়ে বললো, শুধু প্রবলেম না বিশাল বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

–কিসের বিপদ ভাইয়া?(এতোক্ষণে সিরিয়াস হলো নোমান)
–শিলা আত্নহত্যা করতে ধরেছিলো।সে এখন হাসপাতালে আছে।এ জন্য তোকে দায়ি করে আমার শশুড় মশাই মামলা করেছে।সেজন্য তোকে নিয়ে যাচ্ছি অফিসে।তোর একটা জবানবন্দি লাগবে।
নোমান তা শুনে বললো শিলা কেমন আছে?
–এখনো জ্ঞান ফেরে নি।বলা যাচ্ছে না কি হবে?
নোমান তখন বললো ভাইয়া শিলা যে হসপিটালে আছে সেখানে নিয়ে চলো।
–পাগল হইছিস তুই?ওখানে গেলে গন্ডগোল হয়ে যাবে।জিসান কিন্তু খুব ক্ষেপে আছে।
–বললাম তো নিয়ে চলো।যা হবার হবে।

আমান তখন বললো আগে অফিসের কাজটা সেরে আছি।পরে যাবো।বাবা আগেই আমাকে জিডি করে রাখতে বলেছিলো।ভাগ্রিস রেখেছিলাম।তা না হলে মারাত্মক বিপদ হয়ে যেতো আরো।
শিলার কথা শুনে নোমানের ভীষণ মন খারাপ হলো।সে বুঝতে পারছে না শিলা এরকম পাগলামি কেনো করছে?সে তো নিজের মুখে বলেছিলো তার কোনো আপত্তি নাই।তাহলে আজ সে কেনো বাস্তবতা বুঝতে চাইছে না।
আমান নিজেও ভীষণ টেনশনে আছে শিলাকে নিয়ে।সে পড়ে গেছে মহা বিপদের মধ্যে।একদিকে ভাই তো অন্যদিকে শালি।কারপক্ষ নেবে সে এখন?তবে সে সবসময় সত্যের পক্ষে থাকারই চেষ্টা করে।এখানে সে তার শশুড় মশাই এর দোষ টাই বেশি দেখছে।কারণ উনি তিলকে তাল বানিয়ে ফেলতে চাইছেন।

আমান নোমানকে ডাইরেক্ট অফিসে নিয়ে গেলো।এদিকে তায়েব চৌধুরী আগেই এসেছেন অফিসে।কারন মামলা টা বেশ জটিল।সেজন্য তায়েব চৌধুরীর ও নিজস্ব একটা জবানবন্দি লাগবে।কারণ তিনি যে নিজের থেকে নোমান আর তন্নির বিয়ে ঠিক করেছিলেন তার উপর জবানবন্দি নেওয়া হবে।

শিলার বাবা তন্নি আর নোমানের বিয়ের কার্ড দেখিয়ে মামলা টা বেশ জটিল করে তুলেছেন।নোমানের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এখন,যে নোমান একজন বাজে স্বভাবের ছেলে।যার প্রধান কাজ হলো মেয়েদের কে প্রেমের ফাঁদে ফেলা,তারপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে চুটিয়ে প্রেম করা।কিন্তু বিয়ের সময় হলেই সে আর বিয়ে করে না।সেই ফাঁদে পড়েছে তন্নি আর শিলা।তন্নিকে বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর শিলাকে এনগেজমেন্ট পর্যন্ত।তন্নি নোমানের শোকে অনেক পাগলামি করে।শেষ পর্যন্ত তাকে জোর করে অন্যথায় বিয়ে দেওয়া হয়।কিন্তু সেখানে তন্নি সংসার করে না,ডিভোর্স দিয়ে চলে আসে।

তারপর নোমানের ফ্যামিলি তাকে আবার অন্য জায়গায় বিয়ে দেয়।তন্নি যেহেতু নোমানের ফুফাতো বোন হয় সেজন্য ঘটনাটা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।তারা সত্য টা স্বীকার করে না,সেজন্য আসল কাহিনী অপ্রকাশিত থেকে যায়।ঠিক এইভাবে শিলাকেও প্রতারিত করা হয়েছে।শিলা নরম স্বভাবের মেয়ে।সে এই প্রতারণা সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়।যার জন্য তার অবস্থা খুবই আশংকাজনক।এইরকম যে আরো কত মেয়ের জীবন নোমান নষ্ট করেছে যার প্রমাণ তাদের কাছে নেই। সেজন্য নোমানকে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।আর সবগুলো ব্যাপার তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে।

শিলার পক্ষের উকিল সামান্য ব্যাপারটাকে আরো অনেক বড় করেছে।বিভিন্ন মিথ্যা কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে নোটিশে।যে নোমানের সাথে শিলার শারিরীক সম্পর্কও হয়েছে।যার কারণে মেয়েটা আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
নোমান তার নামে এমন নোটিশ শুনে হাসবে না কাঁদবে সত্যি বুঝতে পারলো না।যে ছেলে ভুল করেও কোনো মেয়েকে টাচ করা তো দূরের কথা,ভালো করে কথা পর্যন্ত বলে নি সে নাকি দুশ্চরিত্রের ছেলে!তার সাথে নাকি একাধিক মেয়ের রিলেশন আছে!

নোমান তো জানে শিলার সাথে এরকম কিছুই হয় নি।সেজন্য সে সম্পূর্ণ টেনশন মুক্ত থাকলো।তবুও ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
আমান এবার একটা ফাইল বের করে প্রথমে নোমানের সিগনেচার নিয়ে নতুন করে আরেকটা জবানবন্দি নিলো।জবানবন্দি তে নোমান পুরো কথাগুলো লিখলো যা শিলা তাকে বলেছে।যা শুনে নোমান তানিশাকে বিয়ে করার সাহস পেয়েছে আর অনায়াসেই শিলার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছে।এখন শিলা সুস্থ হলে ওর জবানবন্দি অনুযায়ী নোমানের বিচার হবে।

সেজন্য নোমানকে আমান এখন বাসায় যেতে বললো।কারণ তার আর কাজ নেই।যখন দরকার পড়বে অবশ্যই ডেকে নিবে তাকে।নোমান সেজন্য অফিস থেকে বের হয়ে গেলো।কিন্তু সে বাসায় গেলো না।সে সোজা হাসপাতালে চলে গেলো যেখানে শিলা আছে।
নোমান হাসপাতালে গিয়ে দেখে হাসপাতালের করিডোরে শিলার মা,বাবা,জিসান আর শিরিন দাঁড়িয়ে আছে।সে জানে তাকে দেখলে সবাই ক্ষেপে যাবে তবুও সে সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।কারণ শিলা এখন কেমন আছে তা জানাটা তার ভীষণ জরুরি।

নোমানকে দেখামাত্র সবাই ভীষণ অবাক হলো।কিন্তু জিসান দৌঁড়ে এসে নোমানের শার্টের কলার চেপে ধরে বললো,তোর সাহস হলো কি করে এখানে আসার?
নোমান তখন বললো, আমার শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে কথা বল।আমি এখানে মারামারি করতে আসি নি।জাস্ট শিলার অবস্থা জানার জন্য এসেছি।
জিসান সেই কথা শোনামাত্র নোমানকে এবার জোরে করে এক ধাক্কা দিয়ে বললো,একদম পুঁতে ফেলবো তোরে আমার বোনের নাম উচ্চারণ করলে।
জিসানের ধাক্কা খেয়ে নোমান একদম দেয়ালের সাথে আঘাত পেয়ে মাটিতে পড়ে যায়।সে ভীষণ ব্যাথা পায়।সেজন্য নোমানের মেজাজ ভীষণ বিগড়ে গেলো।সে তখন রাগ করে নিজেও ধাক্কাতে ধাক্কাতে জিসানকে একদম দেয়ালে ঠেস দিয়ে নাক বরাবর ওকেও একটা ঘুষি দিয়ে বললো, বেশি তিড়িংতিড়িং করতেছিস কিন্তু তুই।কিছু বলছি না দেখে বেড়ি বাড়াবাড়ি করছিস।

ঘুষি খেয়ে জিসানের নাক একদম ফেটে গেলো।নাক দিয়ে রক্তও বের হলো।সে তখন আবার নোমানকে ধরতে এলে শিরিন এসে বাঁধা দিলো জিসান কে।আর নোমানকে বললো,নোমান তুমি কেনো এসেছো এখানে?চলে যাও তাড়াতাড়ি।
এদিকে শিলার বাবা দৌঁড়ে এসে নোমানের দুই গালে দুইটা জোরে জোরে থাপ্পড় দিয়ে বললো,হাসপাতালে কি মারামারি করার জন্য এসেছো?তোমার বিবেক দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।
নোমান তখন উচ্চস্বরে বললো, আংকেল আমি তো জাস্ট শিলাকে দেখার জন্য এসেছি।জিসানই তো মারতে এসেছে আমাকে।তো আমি কি চুপ করে থাকবো?

শিলার বাবা তখন ধমক দিয়ে বললো চুপ করো।কোনো কথা বলো না তুমি।তোমার দাদাগিরি বের হয়ে যাবে এক্ষুনি।তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি!নির্লজ্জ ছেলে কোথাকার।এই বলে শিলার বাবা থানাতে কল দিলো।আর তাদের জানিয়ে দিলো,নোমানের নামে মামলা করায় নোমান হাসপাতালে এসে মারামারি শুরু করে দিয়েছে।আমার ছেলে জিসানকে এট্যাক করেছে।সে এখন আহত। পুলিশ সেই কথা শুনে সাথে সাথে নোমানকে ধরার জন্য চলে এলো।
এদিকে নোমান এসবের কিছুই জানে না।সে তো হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সোজা বাসার দিকে যাচ্ছিলো।তবে সেও মাথায় ভীষণ আঘাত পেয়েছে।

তানিশা লিনাকে রান্নাবান্নায় হেল্প করছে।লিনা আর তানিশা মিলেমিশে কাজ করছে আর গল্প করছে।রান্নাবান্না মোটামুটি শেষ। সেজন্য লিনা বললো,ভাবি তুমি এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি বাকি টুকু সামলাচ্ছি।
–আচ্ছা ঠিক আছে। এই বলে তানিশা তার রুমে চলে গেলো।আর আরেকবার কল দিলো নোমানকে।কিন্তু নোমান এবারও রিসিভ করলো না কল।এর আগে তাকে আরো কয়েকবার দিয়েছিলো কল।সেজন্য তানিশা ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর সুন্দর একটা আকাশী কালারের সুতি শাড়ি পড়ে নিলো।তারপর মাঝখানে সিথি করে চুলগুলো খোলা রাখলো।আর নোমানের আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।
হঠাৎ তানিশার ফোনে কল বেজে উঠলো। সেজন্য তানিশা তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করলো কল টা।কল টা তানিশার এসিস্ট্যান্ট এর ছিলো।

–হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি খবর মায়া?
–ম্যাম!খুব এমারজেন্সি একটা পেশেন্ট এসেছে।
–কিন্তু আমি তো ছুটি নিয়েছি।সুলতানা মেম আছে না?
–হ্যাঁ আছে।কিন্তু উনি অন্য রোগী দেখছেন।খুব আরজেন্ট ম্যাম।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো, ওকে আমি দেখছি।এই বলে সে নোমানকে আবার কল দিলো।
কিন্তু নোমানের ফোন এবারও বিজি দেখাচ্ছে।সেজন্য তানিশা নোমানকে মেসেজ দিলো যে তাকে হাসপাতালে যেতে হবে এক্ষুনি।খুব এমারজেন্সি একটা পেশেন্ট আছে।

এই বলে তানিশা শাড়ির উপরই এপ্রোণ টা পড়ে নিলো।শুধু চুলগুলো একটু বেঁধে নিলো।তারপর লিনাকে বললো,যে সে হাসপাতালে যাচ্ছে।এই বলে তানিশা বাসা থেকে বের হলো।
কিন্তু বাসা থেকে বের হতেই তাহমিনা চৌধুরীর সাথে দেখা।তিনি মাত্র তন্নির বাসা থেকে ফিরলেন।তানিশার সাথে যে নোমানের বিয়ে হয়েছে তিনি এখনো জানেন না।
তাহমিনা তানিশাকে দেখে অন্য মুখ হলো।কিন্তু তানিশা বললো, আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?তন্নি ভালো আছে?

তাহমিনা চৌধুরী তানিশার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বললো,তুমি এ বাসায় কি করো?
তানিশা ভীষণ সংকোচ করছিলো।সেজন্য সে নীচ মুখ হয়ে বললো,আসলে আন্টি নোমানের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।।
তাহমিনা চৌধুরী যেনো সেই কথা শুনে কারেন্টের শকড খেলেন।তিনি তখন বললেন,নোমানের সাথে বিয়ে হয়েছে মানে?কি বলছো কি?

–হ্যাঁ আন্টি।আপনি বাসার ভিতর যান আন্টি।আমাকে এখন একটু হাসপাতালে যেতে হবে।পরে এসে বলছি।
এই বলে তানিশা হাসপাতালে চলে গেলো।তানিশা হাসপাতালে গিয়েই আগে অপারেশন রুমে ঢুকলো।কারণ রোগী কে অনেক আগেই বেডে শোয়ানো হয়েছে।সব রকম ব্যবস্থা আগেই করে রাখা হয়েছে।শুধু সবাই তানিশার অপেক্ষা করছে।

তানিশা অপারেশন শুরু করে দিলো।৩০-৪০ মিনিটে সে তার কাজ শেষ করলো।তারপর সে তার চেম্বারে চলে গেলো।
তানিশা চেম্বারে প্রবেশ করে আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো তারপর রোগীর জন্য প্রেসক্রিপশন লিখতে লাগলো।হঠাৎ আমান ফোন দিলো তানিশাকে আর নোমানের কথা জিজ্ঞেস করলো।কারণ নোমানের ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো, ভাইয়া ও তো আপনার সাথে চলে যাওয়ার পর এখনো বাসায় ফেরে নি।
–কি বলছো কি এসব?নোমান তো অনেকক্ষন গিয়েছে বাসায়।

তানিশা সেই কথা শুনে ভীষণ অবাক হলো।আমান ভাইয়া এসব কি বলছে?
তানিশার সাথে আমান কথা বলতেই হঠাৎ চারজন পুলিশ নোমান কে টানতে টানতে অফিসে নিয়ে এলো। কারণ নোমান আসতে চাইছিলো না।
নোমানের এ অবস্থা দেখে আমান পুলিশ চারজন কে ধমক দিয়ে বললো, কি হচ্ছে এসব?ছেড়ে দাও ওকে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩২

–কিন্তু স্যার?
–কিন্তু আবার কি?আমি বলছি ছেড়ে দিতে।
আমান তখন নোমানের কাছে গিয়ে বললো, কি হয়েছে আবার?তুই এখানে কেনো?
এদিকে তানিশা শুধু হ্যালো হ্যালো করছে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৩৪