সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

পৃথিবীতে কি এক নামের একটা মানুষই হয়?উঁহু!নাম এক হতে পারে তবে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন। কখনও এক হয় না৷ কি করে সম্ভব! জমজ ভাই কিংবা বোনদেরও এক নাম হয় না৷ তেমনই তূর্য চৌধুরী নামটা ওই ব্যক্তির না কেবল,আরো অনেকের হতে পারে। তাই নামটা শুনে তাকে নিজের স্বামী মনে করা বোকামি শ্রেয়া। চরম বোকামি। তিনি তো পা’গল ছিলেন,আর ইনি তোর ইউনিভার্সিটির লেকচারার, স্যার। কারো সঙ্গে কাউকে গুলিয়ে ফেলার মতোন মূর্খতা তুই করিস না। তোর পাশের ফ্ল্যাটের তূর্য লেকচারার, ওনি কোনো কালেই এমন পেশায় ছিলেন না৷ তোর জানামতে তিনি বাবার ব্যবসা সামলাতেন। এটাই তো বলেছিলেন মাদার বিয়ের আগের রজনীতে। শান্ত হো,অস্থির মনটা শীতল কর শ্রেয়া।

আপনমনে এসব বিড়বিড় করে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল শ্রেয়া। ভালো লাগছে না। কিছুতেই মিলছে না স্বস্তি। ‘ তূর্য চৌধুরী ‘ নামটা অভ্যন্তর এলোমেলো করে দিয়েছে। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তিন বছর পূর্বের বিয়ের আগের দিনের স্মৃতি হতে সবকিছু চক্ষুদ্বয়ে স্পষ্ট, স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় ভেসে উঠছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঠিক তিন বছর পূর্বে এতিমখানার বড় কদম গাছটার নিচে বসে সবার সঙ্গে আড্ডায় মত্ত ছিল শ্রেয়া। তখনই জাহানারা খাতুন এলেন। সকলে তাকে দেখে নিশ্চুপ, স্থবির হয়ে পড়ল। এতিমখানার সবাই ওনাকে ভয় পায় তা না। সম্মান করে খুব৷ ভালোবেসে মাদার বলে সম্বোধন করে তাকে। মাদার সকলের মাঝ থেকে শ্রেয়াকে ডেকে নিয়ে আসলেন একান্তে। সবার উৎসুক চাহনি তখন শ্রেয়াতেই নিবদ্ধ। কেউ কেউ আন্দাজ করে ফেলল কি বলবে তাকে। ভেবেই ছোটদের মনটা বিষন্নতায় ছেঁয়ে যায়। বর্তমানে এতিমখানায় বয়সে সবচেয়ে বড় বলতে শ্রেয়া-ই। শ্রেয়া ও মাদার কিছুদূর যেতেই সবার মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে যায় উক্ত বিষয়ে।

হাঁটার এক পর্যায়ে মাদার থামলেন এতিমখানার পিছন খনন করা বড় পুকুর পাড়ের কাছ টায়। এত সময় কন্ঠ টা ভরাট শোনালেও মোলায়েম করলেন এ মুহুর্তে,
‘ তুই তো জানিস এখানকার নিয়ম অনুযায়ী আঠারো বছর হলে, সাবলম্বী হলে নিজের রাস্তা নিজে মাপতে হয়?’
শ্রেয়ার মনটা কেঁদে উঠল। গলা ধরে এলো। কন্ঠে কম্পনের ছাপ,
‘ জানি মাদার। আমি কি আর এখানে থাকতে পারব না?চলে যেতে হবে?’
প্রকট অসহায়ত্ব মেয়েটার কন্ঠে। মাদার অতি সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
‘ যেতে হবে তোর। কোথায় যাবি?এতিমখানা টা আমার মালিকানায় হলে আমি তোকে সত্যি রেখে দিতাম । তবে তোর কর্মসংস্থানের একটা সুযোগ করে দিব। ‘

শ্রেয়া মাথা দুলিয়ে বলে,
‘ সমস্যা নেই মাদার। এত বড় পৃথিবীতে নিশ্চিত কোথাও না কোথাও ঠাঁই হবে আমার। যেমন করে বাবা-মার মৃ*ত্যুর পর এইখানে জায়গা পেয়েছিলাম। ‘
জাহানারা খাতুন কিয়ৎপরিমাণ ভাবলেন। ইতস্তত করে বলে উঠলেন,
‘ তোর জন্য একটা প্রস্তাব এসেছে শ্রেয়সী। ‘
‘ কেমন প্রস্তাব মাদার?’– শ্রেয়ার চমকিত স্বর।
‘ এই এতিমখানার মালিক চৌধুরী পরিবার এটা জানিস তো?’
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ ক’দিন আগে ফাতেমা চৌধুরী এলেন না?’
‘ বয়স্ক মহিলা টা?’

‘ হুম। সেদিন তোকে বেশ চোখে লাগে ওনার। পরের দিন ফোন দিয়ে জানান,ওনি তোকে চৌধুরী বাড়ির পুত্রবধূ রূপে নিয়ে যেতে চান। ওনার নাতির বউ হিসেবে। তুই কি বলিস?এটা তোর জীবনের ব্যাপার। তাই তোর মর্জিই প্রাধান্য পাবে। ‘
শ্রেয়া তৎক্ষনাৎ কিছু বলতে সক্ষম হলো না। মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল। চৌধুরী বাড়ি সম্পর্কে ব্যাপক শুনেছে এই এতিমখানায়। রোজই চর্চা হয় তাদের। সনামধন্য পরিবার। এই পরিবারের বউ হয়ে যাওয়া তাও একটা পরিবার হীন এতিম মেয়ের জন্য খুবই অদ্ভুত, আশ্চর্যজনক। শ্রেয়া শঙ্কিত নয়নে চাইল মাদারের দিকে। মাদার ওর নজর যেন পড়ে নিলেন,

‘ তুই ভাবছিস ছেলেকে দেখিস নি। এত বড় বাড়িতে বিয়ে কিভাবে কি?ছেলেটাকে আমি দেখেছি প্রায় দুই বছর আগে। ফাতেমা চৌধুরীর সাথেই এসেছিলেন এখানে। খুবই ভালো। এখন সিদ্ধান্ত তোর উপর। ‘
শ্রেয়া সময় নিল না। অনতিবিলম্বে লাজুক স্বরে জানালো,
‘ আমার জন্য যেটা ভালো হবে সেটাই করবেন মাদার। আমি রাজি। ‘

কেউ যদি জিজ্ঞেস করত এতিমদের জীবনে কিসের অভাব?তাহলে শ্রেয়া নির্দ্বিধায় বলতো– ‘ ভালোবাসার অভাব। ‘
একটা পরিবার, কারো ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ব্যাকুল শ্রেয়া। মাদারের এই প্রস্তাব যেন ওর খাঁ খাঁ করা হৃদয়স্থলে হিমের স্পর্শ মাখিয়ে দিল। স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করে শ্রেয়া। ভালোবাসা পাওয়ার স্বপ্ন। কারো অন্তরের অধিবাসী হবার শত কল্পনা জল্পনার সূচনা করে বসে। চৌধুরী বাড়ি থেকে ফাতেমা ও ত্রিহা চৌধুরী এসে পরদিনই আন্টি পড়িয়ে যায়। বলে যায় আগামীকাল গোধূলি শেষে বিয়ে হবে। সেই বিভাবরী নির্ঘুম কাটে শ্রেয়ার।

ভাবতে থাকে সারাজীবনের জন্য যেই মানুষটার বক্ষে বসবাস করবে সে ঠিক কেমন হবে?লজ্জায় মুখ ফুটে কাউকে বলতে অব্দি পারে নি। মানুষটাকে এক পলক দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করতে গেলেই বুকে দ্রিমদ্রিম শব্দ হতো, রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ বয়ে যেত,মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠত। মাত্র দু’দিনে প্রেম হয়?অনুরাগ জাগে হৃদয়ে?হয়ত!নয়ত কেন শ্রেয়া অচেনা,অদেখা,অজানা মানুষটাকে স্বামী ভেবে মন দিয়ে বসল?শুধু দু’টো দিন। এই দু’দিনে শ্রেয়ার হৃদয়ের রাস্তায় হাজারো,লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি অনুভূতিরা চলাচলে ব্যস্ত। সমস্ত অনুভূতি মিলে মানসপটে বারংবার লিখছিল ‘তূর্য ‘ নামটা। হ্যাঁ শ্রেয়া মাদারের মুখে শুনেছে ওর হবু স্বামীর নাম তূর্য,তূর্য চৌধুরী। ব্যাস,এখানেই জানা শোনার সীমারেখা টেনেছিল। আর জিজ্ঞেস করে নি কিছুই। লজ্জায় যে অতীব আড়ষ্ট ছিল মেয়েটা।

কথামতো পরেরদিন মাগরিবের নামাজের পরমুহূর্তে বিয়ের আয়োজন শুরু হয়। বিশেষ কিছু নয়,এতিমখানার মানুষজনদের জন্য বিভিন্ন পদের খাবারের ও সিধে সাধাভাবে বিয়ে। চৌধুরী পরিবারের সব মানুষ আসে নি। বিয়ের দিন ফাতেমা চৌধুরী, আয়ুশী ও ত্রিহা চৌধুরীই এসেছিলেন। সাথে এসেছিলেন সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা। কিন্তু শ্রেয়া তাকে দেখে নি। কেউ কেউ বললো কবুল বলেই নাকি তূর্য চলে গিয়েছে। বউ রেখে কবুল বলে চলে গেল,না দেখল বউয়ের চেহারা,আর না এলো নিজে সম্মুখে। এসব ভেবে প্রচন্ড খটকা জাগে শ্রেয়ার মনে। অভিলাষ হয় মাদারকে জিজ্ঞেস করার৷ কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে চৌধুরী বাড়িতে তো দেখা হবে তার স্বামীর সঙ্গে। মিনিট খানেকের মধ্যেই আবারও সহস্র আশা বুনে।

ক্রমাগত কলিংবেলের আওয়াজ কর্ণে পৌঁছাতেই পুরোনো স্মৃতিচারণ হতে ঝক্কি খেয়ে বেরিয়ে এলো শ্রেয়া। এ সময় কলিং বেল কে বাজাচ্ছে? বুয়া না তো?প্রিয়ু গোসলে গিয়েছে। তাই শ্রেয়া দরজা খোলার জন্য উঠে এলো। ধীর গতিতে হেঁটে এসে দরজা মেলতেই চোখ ছানাবড়া ওর। কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসবার উপক্রম। অপর পাশের মানুষটারও একইরকম দশা। দু’জনেই অবাকতার সমুদ্রে ডুবো ডুবো। অপর পাশের মানুষটার এর চেয়েও বেশি কিছু অনুভূত হলো কি-না তাতে সন্দিহান শ্রেয়া, তবে ওর বক্ষস্পন্দন ক্রিয়া প্রায় বন্ধ হবার জোগাড়। পুনরায় ওই তূর্যর কথা মাথা চারা দিয়ে উঠল। তূর্য এতক্ষণ চমকপ্রদ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলেও এখন দৃষ্টি স্বাভাবিক করলো। উজ্জ্বল ফর্সা চেহারায় জ্যোতি খেলে গেল তার। ঠোঁটের কোণে সুপ্ত হাসি নিয়ে বললো,

‘ তুমি আর আমি দেখি একই ঘাটের মাঝি। ‘
শ্রেয়ার মুখ হা হয়ে গেল। সোজা প্রশ্ন ওর,
‘ মানে?’
তূর্য হাত দিয়ে নিজের ফ্ল্যাট টা দেখিয়ে বলে,
‘ এই যে পাশাপাশি থাকি দু’জনে। ‘
শ্রেয়ার কপালে ভাঁজ পড়ল। আগ্রহহীন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠল,
‘ আপনি এখানে কেন স্যার?’
তূর্য ক্লান্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল। অতঃপর লহু স্বরে বললো,
‘ আদা হবে?একটু হলেই চলবে। ‘
‘ আমি কি আদা ব্যাপারী?’– শ্রেয়ার উল্টো প্রশ্ন।

মনে মনে ভীষণ রাগ আছে ওর তূর্যর প্রতি। কতটা নির্ম’ম,নির্দয় এই লোক!পুরোটা ক্লাস বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখল আজ। লজ্জায় ওর মাথা কাটা যাচ্ছিল। সেই জেদ টায় ব্যক্ত করে ক্ষান্ত হলো এখন।
তূর্যর চোখ লাল হয়ে এলো রাগের দাপটে। কত বড় বেয়া’দব মেয়ে!স্যারের সাথে এমন ব্যবহার। তাছাড়া প্রতিবেশী কিছু চাইলে এমন করে কেউ? ক্রোধান্বিত চাউনি নিক্ষেপ করে দৈবাৎ বলে উঠল,
‘ না। তুমি আদা ব্যাপারী হতে যাবে কেন?তুমি বেয়াদবের ওস্তাদ। বেয়াদব মেয়ে। ‘

কথাটা বলে হনহন করে নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেল তূর্য। শ্রেয়া ভয়ার্ত চোখে নিষ্পলক চেয়ে রইল। এত ঝাঁঝ!এখন মনে হচ্ছে ভুল করে ফেলল ও। এমন করা ঠিক হয় নি। দৌড়ে গিয়ে কিচেন রুম থেকে কয়েকটা আদা নিয়ে এলো। সময়ের কি পরিহাস!এতক্ষণ তূর্য ছিল ওর দুয়ারে,এখন ও সম্মানিত লেকচারার সাহেবের দরজার অভিমুখে দাঁড়িয়ে। একবার কলিংবেল চাপল,খুলল না। দ্বিতীয় বার চাপতে নিলে দরজাটা মেলে গেল। তূর্য গলায় তোয়ালে পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নির্বিকার অভিব্যক্তি তার। যেন শ্রেয়াকে দেখে চমকায় নি। দুর্বোধ্য হেসে বলে,
‘ আদা দিতে এসেছেন আদা ব্যাপারী?আসুন ভিতরে আসুন। ‘

শ্রেয়া ভড়কালো,স্তব্ধ হয়ে গেল। সতর্ক দৃষ্টি মেলে ভিতরে উঁকি দিয়ে চাইল। না,যাবে না। এই লোক কেমন করে বুঝল,ও আদা দিতে এসেছে?
‘ তোমার হাতে আদা দেখে বুঝেছি। মনে মনে কষ্ট করে এত গবেষণার প্রয়োজন নেই। কত গ্রাম আদা এনেছো?বেশি দরকার নাহলে নিতাম না। পরিমাণ টা বলে দাও পেমেন্ট করে দিব। ‘
শ্রেয়ার মনে হচ্ছে কেউ ওর মাথায় হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করছে। মস্তিষ্ক অচল হয়ে পরছে। কন্ঠে একরাশ বিস্ময় ঢেলে বললো,

‘ পেমেন্ট?’
তূর্যর নিরলস জবাব,
‘ কখনও শুনো নি শব্দটা?’
শ্রেয়া থমকালো। কিছু সেকেন্ডের স্তব্ধতা কাটিয়ে প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠল,
‘ কেন শুনবো না?আর আদা নিয়ে এসেছি বলে আপনার ভাব বেড়ে গিয়েছে?’
‘ ভাব বেড়েছে এটা বুঝতে পেরে যে, আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার কারণে তোমার পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কমতে পারে সেই ভয়ে আদা নিয়ে দৌড়ে এলে। ‘

‘ কি আমি?আপনি ভাবলেন কি করে?আর নাম্বার কাটার থ্রে’ট দিচ্ছেন আপনি?আপনি খুবই খারাপ, জ-ঘন্য শিক্ষক। ‘
তূর্য বাঁকা হেসে দুই পা এগিয়ে আসল। হতবাক হয়ে যায় শ্রেয়া। হৃদয়ের গতি নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে পড়ে। শরীর হেলিয়ে একটুখানি পিছিয়ে যেতেই তূর্য ঝুঁকে এলো। সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ খিঁচে ফেলল শ্রেয়া। তূর্য ওর ভয়মিশ্রিত মুখশ্রীতে দৃষ্টি বুলিয়ে হাতের আদাগুলো নিয়ে গলা ঝেড়ে বললো,

‘ ধন্যবাদ মিস,,।’
এতটুকু বলে থেমে গেল৷ জিজ্ঞেস করলো,
‘ মিস অর মিসেস?’
শ্রেয়া উত্তরে নিরব থেকে কয়েক পলক চাইল। শব্দহীন দৌড়ে চলে গেল নিজের ফ্ল্যাটে। তূর্য এক হাতে মাথার চুল টেনে আনন্দপূর্ণ মেজাজে ঘরে ঢুকল। অত্যন্ত শান্তি লাগছে এখন মেয়েটাকে বিব্রত করতে পেরে। তখন দরজার সামনে সুযোগ পেয়ে মেয়েটা যাচ্ছে তাই ব্যবহার করলো। এবার বুঝবে তূর্য চৌধুরী কি জিনিস এবং কত ধানে কত চাল।

বসার ঘরে ফোন বেজে চলেছে লাগাতার। তূর্য চা টা নামিয়ে ছেঁকে কাপে ঢেলে নিল। মাথা ব্যাথা টা তীব্র বেড়ে গিয়েছিল। এক কাপ রং চা দরকার ছিল খুব। নতুন আসায় সব ধরনের মশলা কেনা হয় নি। চা বানাতে গিয়ে দেখল আদা নেই। আদা কুচি বিহীন রং চা’য়ের স্বাদ যেন পানসে তার নিকট। চা’য়ের কাপে এক চুমুক বসিয়ে বসার ঘরে এলো। অনবরত বাজতে থাকা মোবাইলটা হাতে তুলে কলটা রিসিভ করলো। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠল,

‘ বল আয়ুশ। ‘
‘ কি করছিস ভাই?কখন ধরে কল করে যাচ্ছি। বড় চাচিও না-কি ফোন দিয়েছে। না পেয়ে আমাকে বলল ট্রাই করতে। ‘
তূর্য মোবাইল চেক করে দেখে মা নামে সেভ নাম্বার টা থেকে পাঁচটা কল এসেছে।
‘ চা বানাচ্ছিলাম। ‘
‘ তোর একা একা কষ্ট হচ্ছে না ভাই?একটা বুয়া রেখে দিস। রান্না বান্না করে যাবে। ‘
তৎক্ষনাৎ তূর্য তাচ্ছিল্যের সহিত বলে উঠল,

‘ বউ থেকেও আমি একা। নিজেকে ব্যাচেলর দাবি করতে হয়। স্ট্রেঞ্জ না আয়ুশ?’
অপর পাশ থেকে একটা শব্দও এলো না আর । মানুষটা হয়ত কিছুসময়ের জন্য থমকে গিয়েছে। তা বুঝতে পেরে তূর্য রাশভারি গলায় বললো,

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২

‘ কিভাবে জেনেছি অবাক হচ্ছিস?তোরা কি ভেবেছিস আমার কাছে সব লুকিয়ে যাবি?আমার বউ কোথায় আয়ুশ?কে সে?কেন লুকিয়েছিস আমার কাছে যে আমি বিবাহিত?আমার পাগল হওয়ার সুযোগ নিলি তোরা?’
তূর্যর কন্ঠস্বর বদলে গেল। ক্রোধ স্পষ্ট। নিমেষে দুই নেত্র রক্তিম হয়ে উঠেছে তার।

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৪