সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৩

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৩
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

শ্রেয়া মাথা উঁচিয়ে সদর্পে দাড়ানো পেয়ারা গাছ টার দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। বাগানের নিভু নিভু দীপ্তি ও চাঁদের রূপে বড় বড় পেয়ারা ভাসছে অক্ষিপটে। ভালোবাসা বোধ হয় এমনই হয়!প্রিয় মানুষ টা নেই অথচ তার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে দীর্ঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাস বিমোচন করছে খোলা প্রকৃতিতে কেউ আড়ালে, আবডালে। কি অতিদারুণ যন্ত্রণা! তাকে চাইলেও ছোঁয়া যাবে না, আঁকা যাবে না চক্ষু ক্যানভাসে শুধুই অনুভব করা সম্ভব। ছুঁয়ে দেখা যাবে তার পছন্দের জিনিসগুলো। শ্রেয়া এক্ষুণি ঠাহর করে হৃদয় মিলে গেলে স্পর্শের প্রয়োজন পড়ে না। দূর হতে দূরে, দু প্রান্তে থেকেও অনুভব করা যায় প্রিয় ব্যক্তিকে। হৃদয়ের মিলন ব্যতীত স্বামী, শশুর, শাশুড়ি, কারো সাথেই সুখে শান্তিতে থাকা পসিবল হয়ে ওঠে না। মনে মন মিললেই তো সুখ। আনতস্বরে,রয়ে সয়ে বললো,

‘ আমি আপনার গাছ থেকে পেয়ারা খেয়েছি বাবা। মিষ্টি ছিল খুব।’
নুরুল চৌধুরী ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করলেন। বললেন,’ জানি মা। আগে কাউকে অনুমতি দিতাম না। পরে একসময় না দিয়ে থাকতে পারলাম না। যার জন্য লাগালাম সে তো কখনও খেতে পারবে না তার চেয়ে অন্যদেরই খাওয়ার সুযোগ করে দিলাম। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শ্রেয়ার ভারী ভালো লাগছে শশুড় মশাইয়ের কথাগুলো। মনের বিষাদ কমেছে এসেছে অনেকটা। আষাঢ়ে প্রকৃতিতে শ্রাবণ হাওয়া বইছে যেন। আবছা আবছা অন্ধকারের নির্মল পরিবেশে মিশে যাচ্ছে ওদের তপ্ত নিঃশ্বাস। বহুদিন কথা বলার মানুষ পায় না ও। কখনো তো কেউ আদুরে ভঙ্গিতে কাছে ডাকে নি। যখন জানলো আজ কেউ ওকে নিজের কন্যার স্থান দিয়েছে মনটা কেমন আহ্লাদী হয়ে ওঠেছে। নুরুল চৌধুরীর বিষাদ মাখা বাক্যগুলোও মধুর লাগছে। ছোট্ট থেকে নিশ্চুপ স্বভাবের মেয়েটা হুট করে বাবার সান্নিধ্য পেয়ে কৌতূহলের সঙ্গে অধিকার খাটায়। নরম গলায় প্রশ্ন করলো শ্রেয়া,

‘ মায়া আম্মা ও তোহাশ ভাইয়ার ব্যাপারে আর বলবেন না বাবা?’
‘ কেন বলবো না মা?আজ আমার মেয়ের কাছে মনের সব জমানো কথা বলবো। বহুদিন হলো কথা শেয়ার করার মানুষ পাই না। ‘
মনের গভীর হতে অনুভূত হলো শ্রেয়ার এ পৃথিবীতে কথা শেয়ার করার মানুষের কত অভাব। দিনের পর দিন কথার ভারে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে কতশত মানব। মুখে না হোক মনে মনে একটা বিশস্ত মানুষ খোঁজে বেড়ায় তারা কিন্তু মিলে না। কেউ বুঝে না। বুঝতে বুঝতে বড্ড বিলম্ব করে ফেলে।

‘ যেদিন থেকে বুঝার বয়স হলো সকাল,সন্ধ্যা অভ্যাস হয়ে উঠলো নিয়ম করে হাঁটার। প্রায় একাই হাঁটতাম। তারপর আমার পথের সঙ্গী হয় মায়া। মেয়েটা কিছু বলত না। চুপি চুপি পা ফেলত আমার সাথে। এ শহরে যখন নতুন আসে প্রায় কাঁদত। বলত,আমার ভয় লাগে নুরুল ভাই। কিছু চিনি না। খারাপ লাগে। আমার স্বভাব পুরোটাই বাজেয়াপ্ত করেছে তূর্য। বলতে পারিস আমি একদম ওর মতোন ছিলাম। মেয়েদের অতিরিক্ত ফ্যাসফ্যাস,অহেতুক কান্না,সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে দুর্বল দেখানো অপছন্দ ছিল আমার। আর স্বার্থপর মেয়েদের ঘৃ*ণার দৃষ্টিতে দেখতাম। প্রথম প্রথম মায়ার এসব আমার বিরক্ত লাগত। কত বার যে মে*রেছি মেয়েটাকে!বার বার বলতাম দুর্বল মেয়েদের আমার পছন্দ না। কিন্তু ও ছিল নাছোড়বান্দা। চলে গেল কিন্তু আফসোস ওকে শেষমেশ স্ট্রং হতে দেখলাম না। এতই দুর্বল ছিল অল্পতেই ছেড়ে চলে যায় আমাদের। তোহাশকে জন্ম দিতে গিয়ে মৃ*ত্যু হয় ওর। তবে একদিক থেকে ও জিতে গেছে জানিস?নিজের নিরব স্বভাবে হারিয়ে গেছে আমাকে। তুই কখনও দু বিনুনি করেছিস?মায়া করত। ভীষণ ভালো লাগত ওকে।

তোহাশকে রেখে চলে যায় মায়া। কত হাত জোর করে ওর বাবা মাকে মানিয়ে আমার বউ করে ঘরে তুলেছিলাম। মন শুধু বলত,মায়া থাকবে না,কিন্তু ওর মায়া শেষ নিঃশ্বাস অবধিও কাটবে না। হলো ও তাই। এখনও কাটে নি। তোহাশের মা মা বুলিতে এবং মায়ের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে চৌধুরী বাড়িতে আনি মেহরিমাকে। মেহরিমা মনের দিক থেকে খারাপ না। খারাপ হলে সৎ মা হয়েও বুকে আগলে নিত না তোহাশকে। নিজের সকল সুখ ত্যাগ করে সারাক্ষণ আমাকে জিজ্ঞেস করত,তোহাশ কিসে খুশি হবে,কি করলে হাসবে।

নিজের সন্তান গর্ভে নিয়েও জীবন বাজি রেখে তোহাশের প্রাণ রক্ষা করেছে। তূর্য তখন ওর গর্ভে। নয় মাসের গর্ভবতী হয়ে বাড়িতে কেউ না থাকায় তোহাশকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি তে মুখ থুবড়ে পড়ে মেহরিমা। ছেলেটার পেট ব্যাথা করছিল। কোনো ক্রমেই কমছিল না। আমাকে ফোন দেয় অনেকবার। আমার প্রতীক্ষায় না থেকে মেহরিমা নিজেই ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুট লাগায়। কিন্তু যেতে আর পারে না। উল্টো নিজে প্রাণ খোয়াতে বসে। তুই বল মা যেই মেয়ে সতীনের ছেলেকে নিজের গর্ভের সন্তানের চেয়ে অতি আদর যত্নে বড় করেছে সে কখনও ওই সন্তানের খারাপ চাইতে পারে?কখনও সতীনের ছেলে ভেবে অন্যায়,অবিচার করতে পারে?

নুরুল চৌধুরীর কাতর কন্ঠস্বরে রোদনের ছাপ বিশদ। শ্রেয়া নির্বাক,স্থবির। ও কি ভেবেছিল মেহরিমাকে,প্রকৃতপক্ষে সেই নারী কেমন বের হলো?ওনার মনটা হয়ত একদিনে কঠোর হয় নি,নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে।
‘ তোর মতোই এতিম একটা মেয়েকে ভালোবেসে গোপনে বিয়ে করে তোহাশ। মেয়েটার নাম আরিয়ানা। ওর গোপনে বিয়ে করার বিষয়টা আমাদের সবাইকে কষ্ট দেয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে জানায় এতিম বলে যদি পরিবার না মেনে নেয় তাই। যাক মেয়েটাকে সম্মান দিয়ে ওর চাচার বাড়ি থেকে নিয়ে আসি।

প্রথম ক’দিন সবকিছু ভালো কাটলেও হঠাৎ খেয়াল করলাম মেহরিমা প্রায় মনমরা হয়ে বসে থাকে। জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেয় না। আমি তো সারাদিন বাড়িতে থাকি না। তোহাশও আমার সাথে অফিসে থাকে। তূর্য ও আয়ুশও সারাদিন বন্ধুদের সাথে ঘুরেফিরে আড্ডা দেয়,ইচ্ছে হলে বিজনেসে একটু আধটু মনোযোগ এই আরকি!দিনে দিনে বুঝতে পারছিলাম সংসারে কিছু একটা নিয়ে অশান্তি হচ্ছে। তোহাশও মেহরিমার সঙ্গে ঠিকঠাক কথা বলে না। এড়িয়ে চলে। যেই ছেলে মায়ের হাতে খাওয়ার পাগল ছিল তাকেই দেখি একবার সকালে নাস্তার টেবিলে মেহরিমার বানানো খাবার স্পর্শ পর্যন্ত করলো না।

মা ও ছেলে একে অপরকে না দেখে থাকতে পারত না অথচ বিয়ের কয়েকদিনের মাথায় এমন মনোমালিন্য সন্দেহ লাগে আমার। পরে মায়ের কাছ থেকে জানি,আরিয়ানা নাকি সারাক্ষণ বলে ওর আপন শাশুড়ি নেই বলে মেহরিমা ওকে ভালো চোখে দেখে না,এতিম বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। খাবার খেলে নাকি খোটা দেয়। ওকে ঠিকমতোন ভার্সিটিতে যেতে দেয় না এগুলো বলে তোহাশের কাছে। এ নিয়ে আমার ও তূর্যর অনুপস্থিতিতে তোহাশ মেহরিমার সঙ্গে ঝামেলা করে। মায়ের চেয়ে অতিরিক্ত বিশ্বাস করে বসে বউ কে।

একটা ছেলের নিজের মা এবং স্ত্রী দু’জনের প্রতিই সম্মান, দায়িত্ব পালন করা উচিত। তাই বলে বিনা সত্য জেনে কারো পক্ষপাতিত্ব বা কষ্ট দেওয়া ঠিক না। আরিয়ানা এসেছে মাত্র কয়েকদিন কিন্তু মেহরিমাকে আমি বছরখানেক ধরে দেখেছি। যাকে এতিম, সহজ সরল ভেবে একটা সংসারের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলাম সেই মেয়েই তছনছ করে দিল সবকিছু। মা ও ছেলের মাঝে রক্ত,আপন পরের পার্থক্য টেনে আনে। মেয়েটা রূপে সুন্দর ঠিকি কিন্তু তোর মতো সুন্দর মনের হয় নি। ভাবত ছোট ছেলেকে সব দিয়ে দিব,বড় ছেলেকে সম্পত্তি কম দিব।

প্রত্যেক ঘরে যা হয় আরকি!আমাকে একবার বললেই হতো কিন্তু না বলে আমার পরিবারের ভাঙন ধরায়। মা, ছেলের বিচ্ছেদ ঘটায়। এভাবে চলতে চলতে ওদের বিয়ের তিন মাসের মাথায় একটা বড়সড় কান্ড ঘটে যায়। আরিয়ানার মিসক্যারেজ হয়। দো’ষ পড়ে মেহরিমার উপর। আরিয়ানা নাকি তোহাশ কে জানায় মেহরিমা খাবারে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে। খাওয়ার পরেই এমন হয়েছে। সেদিন বাড়িতে তূর্য সহ সকলে থাকায় একটা হুলস্থূল কান্ড বেঁধে যায়। আরিয়ানা কে হসপিটাল থেকে নিয়ে এসেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তোহাশ। মেহরিমাকে বলার সুযোগ না দিয়ে ঘৃ*ণার চোখে তাকিয়ে বলে,

সতীনের ছেলে বলে এমন করলেন?নিজের ছেলের বউ হলে পারতেন?তূর্যর বউয়ের সাথে এমন করবেন আপনি?বাচ্চা মে’রে ফেললেই নিজের অংশ ছেড়ে দিব ভাববেন না। কেন মা’রলেন আপনি আমাদের বাচ্চা টা কে নিকৃষ্ট মহিলা? বাচ্চাও সম্পত্তির ভাগ পেয়ে যাবে তাই?সহ্য হতো না আপনার?
আমি পেপার পড়া বন্ধ করে রুম থেকে এসে গম্ভীর স্বরে ডাকি কেবল তোহাশকে। ও সাথে সাথে আমাকে এমন একটা কথা বলে তক্ষুনি আমার হৃদপিণ্ড টা দু ভাগ হয়ে যায় মা। ভুলে যায় আমি সকল সুখ। ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে পড়ে আমার শরীর টা। কানে বাজে ওর কথাগুলো, ‘ আপনিও যোগ আছেন এই মহিলার সাথে। নয়ত এত শাসন করেন কিভাবে তিনি এ বাড়িতে। বুঝিয়ে দিলেন,বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলে দ্বিতীয় বউয়ের গোলাম হয়ে যায়। প্রথম বউয়ের সন্তানের কথা মাথায় থাকে না,দ্বিতীয় নারীর মোহে পড়ে। ‘

ওর সেই বিষাক্ত বাক্যগুলো শুনে আমি কিছু না বললেও তূর্য সহ্য করতে পারে না। যেই ভাইকে সম্মান করে এসেছে সব সময়, রাগে কষ্টে তার কলার চেপে ধরে। গর্জে ওঠে ছেলেটা। কিন্তু তোহাশ ওকেও দুমড়ে মুচড়ে দেয়। বলে,’ তুইও মিসেস মেহরিমার মতোই। আমাকে আরিয়ানা জানিয়েছে বাসায় একা পেলে ওকে কিভাবে রাগ দেখাতি,এতিম বলে অবজ্ঞা করতি। নিজের বউয়ের প্রাণ রক্ষা করতে হলে তোদের সাথে আর থাকা যাবে না। তাই বলে ভাবিস না আমার ভাগের সবটা একা ভোগ করবি। ‘

ব্যাস চলে গেল তোহাশ। আমি ওকে আটকায় নি। মেহরিমা চেষ্টা করেছে। তূর্যর একটাই ক্ষোভ আমার প্রতি কেন আমি ওকে আটকালাম না। ওর মতে,সন্তান ভুল করলেও বাবা মা কেন দূরে ঠেলে দিবে?নুরুল চৌধুরী কি তাহলে পারফেক্ট বাবা হতে পারে নি?এতো ইগো?কিন্তু আমি ওকে বুঝাতে পারি নি কিভাবে ভেঙেছে তোহাশ আমাকে। কখনও আর ওদের অশান্তির কারণ হতে চাই নি। আড়ালে খোঁজ রেখেছি। তূর্য প্রকাশ্যেই রাখে। আমি বুঝি ওকে। সে চাইছে তোহাশের মন থেকে মেহরিমার প্রতি ঘৃ*ণা দূর করতে,বুঝাতে এই পরিবার কখনও ওর খারাপ চায় নি। সৎ হলেই যে সবাই খারাপ তা না। আমার গম্ভীর, বদমেজাজি,রগচটা ছেলের ধৈর্য্য ধরে এই নিরব প্রচেষ্টা বরাবরই মুগ্ধ করে আমাকে। এক কালে কত মা’রপিট করতো। কারো কটু কথা তূর্য নিতে পারে না। দিন দুয়েক না কাটতেই বিচার আসত আমার কাছে। অথচ বড় ভাই কষ্ট দিলেও মুখ ফেরাতে পারে নি।

সংসার সুখে পরিপূর্ণ হতে পারে না?সব মানুষ এক মনের হতে পারে না?কারো কারো ভেতরকার রূপে এত হিংসার মিশ্রণ! মেহরিমা তোর প্রতি প্রথমবার পালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রুদ্ধ। ওর ভয় তুইও আরিয়ানার ন্যায়। তবে বিশ্বাস সেও বুঝে যাবে তোর মন টা। কষ্ট পাস না।
শ্রেয়ার দৃষ্টি পায়ের তলায় সারি সারি বেঁধে উঁচিয়ে থাকা দুর্বাঘাসগুলোর দিকে নিবদ্ধ। আমাদের সমাজে পার্থক্য মানুষ নিজেই গড়ে তুলে। বিষ ছড়ায় একটা ভালো সম্পর্ক দেখলে। সবাই এমন না আবার কেউ কেউ এমন। শ্রেয়া এখানে তোহাশের দো’ষ খুঁজে পেল। অন্ধবিশ্বাসে সে যে কত মূল্যবান মানুষদের হারিয়েছে তা হয়ত আজ হারে হারে টের পাচ্ছে। সকল নারী সংসার গড়ে না,কোনো কোনো নারী ভাঙে। তার বাস্তবচিত্তের উদাহরণ আরিয়ানা। নুরুল চৌধুরী বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন,

‘ চল। অনেক রাত হয়েছে। ঘুমাবি। ‘
ধরা কন্ঠে জবাব দেয় শ্রেয়া,’ জি বাবা। চলুন। ‘
নুরুল চৌধুরীর বুক টা ভার মুক্ত হলো যেন। নিঃশ্বাস ফেলতে আর কষ্ট হচ্ছে না ওনার। এখন মনটা শেষ বেলায় হলেও বড় ছেলের সান্নিধ্য চায়। সকল ভুল ঝোঁক ভুলে আবারও শক্তপোক্ত একটা পরিবার চান তিনি। দরকার পড়লে আরিয়ানার দু হাত জোর করে একটু মিলেমিশে থাকার দাবি করবেন। হয়ত মেয়েটা কিঞ্চিৎ হলেও পরিবর্তন হয়েছে। ওনার একটাই চাওয়া খাটিয়া টা দুই ছেলের কাঁধে উঠুক।

সমুখে একটা দুয়ার। সেই দরজা টপকিয়ে দেখা পাবে ও কাঙ্ক্ষিত মানুষ টার। মন টা ভীরু ভীরু। হাত একবার উঁচিয়ে তুলছে তো আবার নামিয়ে নিচ্ছে। শঙ্কায় বুকটা কেমন ফুলে ফুলে উঠছে। হাসফাস লাগছে সবকিছু। অপেক্ষা দীর্ঘায়িত করলো না শ্রেয়া। চেপে ধরলো কলিংবেল। সঙ্গে সঙ্গে দরজা টা খুলে যায়। সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটা ভ্রুঁ যুগল কুঁচকে তাকায় ওর দিকে। চাহনি তীক্ষ্ণ। ভীষণ ধারালো। এখনও কি রেগে আছেন তিনি?শ্রেয়া রিনঝিনে কন্ঠে বলে উঠলো কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে,

‘ একটা ডিম হবে?’
গম্ভীর কন্ঠের প্রতুত্তর আসে–‘ আদর হবে। চলবে?’
শ্রেয়া ভড়কে গেল। ওড়না মুচড়ে ধরতেই তূর্য ওকে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে। ধপাস করে লাগিয়ে দেয় দরজাটা। পরক্ষণেই সেটার সাথেই মিশিয়ে দিল শ্রেয়ার দেহ খানি। আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ ও। চোখ জোড়া উপরে তোলার পূর্বেই তূর্য বাঁকা হেসে বলে উঠলো,

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩২

‘ আমার বউ নিজের ঘরেই পাশের বাসার ভাবীদের মতো ডিম খোঁজছে। এখন কি আপনার ডিমই লাগবে?আদর কিন্তু ডিমের চেয়েও পুষ্টিকর। সো এটাই দিব নাকি আজও বাঁধা দিবেন?’

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৪