সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৭

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৭
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

সেই ছোট্ট বেলা থেকেই শ্রেয়া এক নীরব কন্যা। নিশ্চুপ,চাপা স্বভাবের অধিকারীণি। মূলত বাবার প্রতি ভীতি টাই ওকে এমন করে তুলেছে। বিশেষ করে শৈশব কালে যখন খেলার সঙ্গীদের কাছ থেকে অবহেলিত হয়ে ফিরে আসত ওর ভিতরটা ঠান্ডা, শীতল হয়ে যেত। সেটা প্রস্ফুটিত হতো বাহ্যিক অংশেও। বাবার গর্জন শুনলে ও মাঝে মাঝে মা’য়ের পেটে মুখ গুঁজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকত। একটা শব্দও উচ্চারণ করতো না,শুধুই ভিজিয়ে দিত মায়ের আটপৌরে সুতি কাপড়টা। বিষাদে,অবহেলায়, হারানোর বেদনায়, তিক্ত মুহুর্ত, স্মৃতিতে ওর মন ধীরে ধীরে আরও ঠান্ডা হয়ে যায়। কখনও মায়ের মৃ-ত্যুর পর আপনজনের ছোঁয়া পায় নি সে। খোলামেলা,প্রাণবন্ত হয়ে মেশা হয় নি কারো সঙ্গে।

মা ব্যতীত অন্য কোনো আপন মানুষের স্পর্শ কেমন হয় সেটা আগে জানত না শ্রেয়া। কপাল গুণে রক্তের নাহলেও আপন হতে পেরেছে প্রিয়ুর। তবুও জড়তার রেশ রয়ে যায় অল্পস্বল্প, ঈষৎ। এখন অনেক আপনজন ওর। বাবা,আম্মা, দেবর,বেস্ট ফ্রেন্ড,ননদ,দাদি, রহিমা খালা সবাই আছেন৷ প্রাণের চেয়েও প্রিয় হয়ে ওঠেছে একটা মানুষ,যে সম্পর্কে ওর স্বামী। এত এত আপনজনের ভিড়ে ওর নিজেকে আর অসহায়, এতিম মনে হয় না। যারা যারা ওকে অপছন্দ করে,একদিন ওদের মনে ওর জন্য একটা সুন্দর জায়গা তৈরি হবে এটা ওর দৃঢ় বিশ্বাস।
‘ আমার বউ আমার সাথে এত মিষ্টি করে কথা বলে না কেন?মাঝে মাঝে বললেই পারে আপনি আমার স্বামী। দূরে দূরে কেন থাকেন?আদর করতে পারেন না?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পিছন থেকে ফিচেল,রসাত্মক কন্ঠস্বর তীক্ষ্ণ ভাবে বিঁধে শ্রেয়ার শ্রবণনালিতে। হাতের মোবাইল টা রেখে তড়িঘড়ি করে, ব্যতিব্যস্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ালো ও। তৎক্ষনাৎ চক্ষু ক্যানভাসে আঁকে সুন্দর একটা দৃশ্য। তূর্যর হাতে বকুল ফুলের মালা। এটা কই থেকে আসলো?কি মন মাতানো সুঘ্রাণ!বড্ড মাতোয়ারা হয়ে ওঠেছে নিস্তব্ধ কক্ষ টা। এই ঘ্রাণ টার সঙ্গে আধা ঘন্টা পূর্বেই তো ওর আর প্রিয়ুর সাক্ষাৎ হয়েছিল। ওরা যেই জায়গায় দাঁড়িয়ে গ্রোগাসে ভর্তা খেয়ে যাচ্ছিল সেখানেই অবস্থান বকুল ফুলের গাছ টা। কত অবলীলায় মধুর সৌরভ বিলিয়ে দিচ্ছিল সবাইকে। ও ভেবেই নিয়েছে চাচার ভর্তা বেশি বিক্রি হয় এই গাছের কারণেই। সুবাস লুফে নিতেই হয়ত মানুষ ভর্তার অজুহাতে মিনিটের পর মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু তূর্যর হাতে বকুল ফুলের মালা এলো কোত্থেকে? লজ্জায় প্রশ্ন করতে পারছে না সে। কিসব বললো সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তি। ওর কিছু বলার অপেক্ষাও করলো না তূর্য। কোমল হাত টা টেনে নিজের কাছে নিল। বকুল ফুলের মালা টা কব্জিতে জড়িয়ে দিতে মগ্ন হয়ে পড়লো। খুব যত্নের সাথে পড়িয়ে দিচ্ছে।

শ্রেয়া ফ্যালফ্যাল নয়নে চেয়ে রইল। ছোট্ট করে প্রশ্ন করে ব্যাঘাত ঘটালো তূর্যর কাজে।
‘ এটা কখন আনলেন?’
তূর্য বেজায় বিরক্ত হলো। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
‘ প্রশ্ন টা পরে করা যেত না?’
শ্রেয়া ভাবভঙ্গি আঁচ করে ধীমে স্বরে প্রতুত্তর করলো,
‘ এখনই জানতে ইচ্ছে হলো তাই। আপনি কি বিরক্ত হয়েছেন?’
‘ খুব। তোমাকে মা’রতে মন চাইছে। আমার রোমান্সের শ’ত্রু তুমি। কত যত্ন করে পড়াচ্ছিলাম,এখন বিঘ্ন ঘটিয়ে যত্নে ত্রুটি রেখে দিলে। ‘

অধরে হাসি ফুটে উঠলো শ্রেয়ার। ছোট ছোট বিষয়ে কত যত্ন মানুষ টার। ভিতরে প্রচন্ড ভালো লাগার পবন বইছে। একটা সময় ছিল চাইলেও কিছু পেত না,আর এখন না চাইতেই কত কিছু,কত সুখ পেয়ে যাচ্ছে। তূর্য মালাটা পড়িয়ে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
যেন অসাধ্য কাজ সাধন করেছে সে। ঠোঁটে প্রফুল্ল হাসি। নিঃশব্দ তা। হাত টা এখনও ধরে রেখেছে। বললো,
‘ এটা আসার সময় এনেছি। ‘
শ্রেয়া থ হয়ে গেল। অনতিবিলম্বে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কই আমি দেখি নি যে?’

‘ তোমার সব কেন দেখতে হবে?আমাকে দেখো। কাজল চোখে আমাকে দেখে চোখ দুটোকে ধন্য করো। ‘
দেখি তো আপনাকে। লুকিয়ে অনেক দেখি। আমার দেখা সুদর্শন পুরুষ আপনি।– কথাগুলো কন্ঠনালি মাধ্যমে বাহিরে এলো না। মনে পিঞ্জিরাবদ্ধ হয়ে থেকে গেল। তূর্য হাত টা ছেড়ে দিতে নিয়ে আবারও আঁকড়ে ধরলো। দুই ওষ্ঠের সন্নিকটে নিয়ে আসে বকুলে সজ্জিত হাত খানা। শ্রেয়ার অন্তঃস্থল থেকে থেকে তিরতির করে কাঁপছে। তূর্য নরম ত্বকে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। চোখের পলকে শিরশির করে উঠলো শ্রেয়ার সমস্ত অঙ্গ। সর্বাঙ্গে নিদারুণ কম্পন, আন্দোলন। দেহের তাপমাত্রা উষ্ণ।
তূর্য বকুল ফুলের ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে টেনে নিয়ে ভ্রুঁ উঁচিয়ে বলে উঠলো,

‘ জ্বর আসছে নাকি?দেহের তাপ বেড়ে গেল হঠাৎ?’
শ্রেয়ার সমস্ত বদন রক্তাভ। লালের প্রলাপ পড়েছে। মিহি কন্ঠে উচ্চারণ করে- ‘ তেমন কিছু না। ‘
কিঞ্চিৎ তফাত বোধহয় আর সইতে পারলো না তূর্য। শ্রেয়ার হাত টা নিজের বুকের বা পাশে রাখে। কোমর জড়িয়ে দেহ টা আঁকড়ে ধরে বুকের ভেতর। শ্রেয়া থমকে গেল। স্তব্ধ হয়ে পড়লো। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়লো হৃদস্পন্দন। তূর্যের বুকে অবস্থিত হাত টা বারংবার নড়চড় হচ্ছে। কাঁপছে।

তূর্য হালকা ঝুঁকে আসলো। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির স্পর্শ মাখলো শ্রেয়ার মসৃণ, কোমল গালে। সঙ্গে সঙ্গে শ্রেয়ার হাত টা তূর্যর গেঞ্জি খামচে ধরে। তূর্য মৃদু হাসলো। কোমরের বাঁধন কঠিন হতে কঠিনতর করে মিশিয়ে নিল চিকন দেহখানি। বললো,
‘ আমার সামান্য চুমুতে তোমার দেহের এত উত্তাপ। আগে জানতাম চুমুতে জ্বর ভালো হয়,আজ জানলাম চুমুতে জ্বর হয়। এটা অবশ্য নিব্বা নিব্বিদের জানা উচিত। নয়ত আজীবন ভাববে চুমুতেই বুঝি জ্বরের ওষুধ। ‘

শ্রেয়া ঠোঁট টিপে হাসে। তবে সেটা অগোচরে। তূর্য ওকে আঁকড়ে ধরে রেখেই কর্ণ পাতায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
‘ আমার পছন্দ টা পাল্টে গেল। তোমার পছন্দগুলো আমার চাওয়া হয়ে উঠলো। তোমাকে স্ট্রং করতে যেয়ে আমি দুর্বল হয়ে পড়লাম তোমার প্রতি। কিভাবে হলো এসব শ্রেয়সী?’
অন্তঃপুরে ঝড়ের শুরু। সেই ঝড়ের প্রচন্ড বেগ। সবকিছু নাড়িয়ে তুলছে। শ্রেয়ার দু ঠোঁট নড়ে উঠলো ,
‘ আমি,,।’

একটা বাক্যের শুরু হয়েছিল সবে। পুরোটা বলার আগেই তূর্য শান্ত,নরম কন্ঠে পুনর্বার বলে,
‘ আমি তোমাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরি?’
নিরুত্তর, হতবাক শ্রেয়া। ওর শরীর বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে আবদ্ধ। আর কতটুকু শক্তি প্রয়োগ করলে একদম ঢুকে যাবে ও তূর্যর বুকে?বুকের কাছ থেকে হাত সরিয়ে দু হাত আস্তেধীরে,মনে মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে ও তূর্যর পিঠে রাখলো। এতেই যেন সম্মতি লুকিয়ে আছে। নিমেষে আলিঙ্গন অত্যধিক গাঢ় হয়। সাহস সঞ্চয় করে একটা প্রশ্ন করলো শ্রেয়া,
‘ আমাকে স্ট্রং দেখার জন্যই সেদিন ফুলশয্যার রাতে ভালোবাসেন না বলেছেন তাই না?’
‘ এখনও কি বলেছি ভালোবাসি?’

তূর্যর নিরলস জবাব শুনে শ্রেয়া প্রতিবাদী কন্ঠে বললো,
‘ আমি বুঝে নিয়েছি। আমার হৃদয় থমকেছে। সেদিন রাস্তায় বলা কথাগুলোর মানে বুঝতে আজ আর ভাবতে হয় না আমার। ‘

তূর্য মুখ সরিয়ে এনে শ্রেয়ার মুখের দিকে তাকালো। ততক্ষণে মাথা নুইয়ে ফেলেছে শ্রেয়া। নিজের কথায় নিজেই আহাম্মক বনে গেল ও। তুখোড়,অনিমেষ নেত্রের চাহনি ও সহ্য করতে পারবে না। আই কন্টাক্ট সম্ভব নয় ওর পক্ষে। এই চাহনিতে ও হাজার বার লজ্জাবতী হবে। তবুও পারবে না চোখে চোখ রাখতে। মুহুর্তেই তূর্য তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
‘ অবশেষে বুঝলে। নয়ত ভেবেছিলাম বউ আমার সারাজীবন গাধী থাকবে। স্ট্রং না বানাতে পারি,গাধী শব্দটার ইতি তো টানতে পারবো। ‘
আনমনে কপাল কুঁচকে এলো শ্রেয়ার। প্রশ্ন করলো,
‘ স্ট্রং?’

তূর্য চিকন দেহ খানি বন্ধন মুক্ত করে দেয়। শ্রেয়ার হাত টা ধরে শোবার ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দায় নিয়ে আসলো। ওকে একটা টুলে বসিয়ে দিল সে। নিজে বসলো ওর সামনে হাঁটু গেড়ে। বললো,
‘ কোনো একদিন চৌধুরী বাড়ির বারান্দায় বসে বলেছিলাম আমি তোমাকে চাই না। সত্যিই সেদিন আমি কোনো দুর্বল শ্রেয়সী চাই নি। বউ হিসেবে তোমাকে আমার জীবনে ফিরিয়ে আনলেও,তুমি এসেছিলে আমার হৃদয়হরণকারী হয়ে। তোমার ছোট বেলার ছবি দেখেই প্রথম এক অসহনীয় অনুভূতি জাগে আমার মাঝে। অনুভূতির প্রখরত্ব এতটাই বেশি আমি সেদিনের পর তোমাকে চেয়েও ঘৃ-ণা করতে পারি নি। শুধু মনে হয়েছিল আমার তোমাকে চাই, জীবনে রেখে দেই তোমাকে। আর যেদিন জানলাম তুমিই আমার বউ তখন শুধু মাথায় আসে এত নরম চরিত্রের মেয়েটা কেন আমার হলো?ও যখন অন্যের কথায়,আচরণে কষ্ট পাবে আমি কিভাবে সহ্য করবো?অন্যকে জবাব দেওয়া শিখাতে হবে ওকে। জীবনটাকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে হবে যেন ও উপলব্ধি করে স্ট্রং হওয়া ছাড়া জীবনে টিকে থাকা দুর্বিষহ হয়ে যায়। যেমন আমার মা ওর ফিরে আসার পরও সরলতার সুযোগ নিয়ে, অসহায় ভেবে তাড়িয়ে দিল ওকে। তাহলে জীবনে ও সবসময় এভাবেই নিজেকে গুটিয়ে নিবে?অনেক চিন্তায় পড়ে যাই। ‘

তূর্য থেমে যাওয়াতে অশান্ত হয়ে পড়ে শ্রেয়া। লম্বা,লম্বা আঙুলের ফাঁকে নিজের ছোট ছোট আঙুল গলিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
‘ থামলেন কেন?’
‘ তুমি দুর্বলচিত্তের মেয়ে শ্রেয়সী। নিজের অধিকার ছি’নিয়ে নিতে জানো না তুমি। নয়ত কেমন করে পারতা অহমিকা ও আমার বিয়ে সহ্য করতে?একটা বার কাউকে বলেছো?বলো নি। প্রথম যেদিন জানলে আমিই তোমার স্বামী প্রিয়ুদের বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসলে চট্টগ্রাম। তারপর আমার আর অহমিকার বিয়েটা মেনেই নিচ্ছিলে। এটা কি তুমি ড্রামা পেয়েছিলে?এটা তোমার বাস্তব জীবন শ্রেয়সী।

ল’ড়াই করে বাঁচতে হয় এখানে। তাহলে তুমি তা না করে সবকিছু থেকে গুটিয়ে কেন নিচ্ছিলে নিজেকে?এমনকি তোমার ভিতরের প্রতিবাদী রূপ টা জাগানোর জন্য আমি নিজেকে ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করেছি। সেই রাতে তুমি কষ্ট পেয়েছো কতটুকু? তার থেকে বেশি আমি পেয়েছি। কারণ তোমার দুঃখগুলো আমারই। বিনিময়ে শুধু একটু স্ট্রং শ্রেয়সী চেয়েছিলাম। যে আমি না থাকলেও কখনও ভেঙে পড়বে না। ওই রাতে এতকিছু বলার একটাই মানে ছিল তুমি আমাকে যোগ্য জবাব দিবে। তোমার মা’য়ের উদাহরণ দিয়েছিলাম কারণ তুমি যেন ওনার মতোই মনের দিক থেকে শক্ত থাকতে পারো। আড়ালে ভালোবাসার যন্ত্রণা টা খুবই ভয়ং’কর। তাও সহ্য করেছি কেবল বলবে বলে আমাকে বউয়ের অধিকার দিন। কিন্তু তুমি নিজের অবলা রূপটা তেই সীমাবদ্ধ থাকলে। তুমিই জিতে গেলে৷ হে’রে গেলাম আমি। যদি পারতাম তবে নিউজপেপারে ছাপাতাম বউকে স্ট্রং করতে গিয়ে স্বামী নিজেই দুর্বল হয়ে গেল। একেই বলে সঙ্গ দো’ষে স্বভাব নষ্ট। ‘

শ্রেয়া স্তব্ধ, নির্বাক। তূর্য এত ভেবেছে ওর জন্য? আসলেই কেন পারে না ও নিজের অধিকার নিতে?এভাবে কি জীবন চলে?তূর্য যদি স্টেপ না নিত তাহলে আজ সে না, অহমিকাই তার জীবনে অর্ধাঙ্গিনী হয়ে থাকত। তূর্যর এত এত হেয়ালিপনাতে ভালোবাসা ছিল,ফুলশয্যার রাতে বলা একেকটা বাক্যতে ছিল ওকে স্ট্রং দেখার চাওয়া,প্রবণতা। তাহলে ইঁদুরের কামড়?শ্রেয়ার মন বললো,সেটা একটা চরম মিথ্যে ছিল লেকচারার সাহেবই দিয়েছিলেন। লজ্জায় তূর্যর বুকে ঢলে পড়লো ও। তূর্য পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। শ্রেয়া চুপটি করে বুকে মুখ গুঁজে রাখে। একমাত্র ওর ভিতরকার সত্তা জানে এ বুকে মুখ লুকাতে কতটা লজ্জা বিসর্জন দিয়েছে ও,এতে যদি ভালোবাসার মানুষ টা অল্পপরিমাণ শান্তি পায়।

তূর্যর অধর কোণে সুপ্ত হাসি। কন্ঠে ফিচলেমি,
‘ এখন কেন অধিকার খাটাচ্ছো?’
শ্রেয়ার নিঃসংকোচ উত্তর অত্যন্ত মৃদুস্বরে- ‘ কারণ স্যার আমাকে অধিকার খাটানো শিখিয়েছেন। ‘
তূর্যর গলায় রাগের আভাস। কিছুটা রেগেমেগেই আওড়ায়,
‘ ছাত্রীকে বুকে নেই না আমি। বউকে নেই। সরো আমার বুক থেকে।’
শ্রেয়া সরলো না,নড়লো না সামান্য পরিমাণ। চন্দ্র রোশনাই বিলীন করছে। অমানিশায় ডুবে থাকা বারান্দায় আসছে একটু আধটু আলো। কানে আসছে তূর্যর শা’সন মিশ্রিত কন্ঠস্বর,
‘ স্যার ডাকবে না আর। ‘

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৬

আয়ুশ ও প্রিয়ু বারান্দায় এসেছিল রাতের বাতাস উপভোগ করতে। কিন্তু চাঁদের আলোতে তূর্য শ্রেয়াকে দেখে ঝটপট রুমে ফিরে আসলো। প্রিয়ু অবশ্য উঁকি ঝুঁকি দিয়ে নিজেদের বারান্দা থেকে চুপি চুপি দেখতে চেয়েছিল কিন্তু আয়ুশের জন্য সকল চেষ্টা বিফলে। যতবার দরজার কাছে গিয়েছে আয়ুশ টেনে হিঁচড়ে ফিরিয়ে এনেছে। এখন এক আকাশ সমান আফসোস হচ্ছে প্রিয়ুর, মানুষ নাকি বারান্দা থেকে কত কপোত-কপোতীর রোমান্স দেখে অথচ ও আয়ুশের জন্য দেখতে পারলো না। লোকটা নিজে নিরামিষ, ওকেও বানাচ্ছে এমন। ক্ষেপে গিয়ে আয়ুশের বুকেই গুটিসুটি মে’রে রইল। মনে মনে বেশ তৃপ্তি পাচ্ছে ও। এটাও জানে,আয়ুশও পাচ্ছে। ভালোবাসা শেষ হলেও কখনও কখনও সম্মান রয়ে যায় এবং সেই সম্মান থেকে সৃষ্ট হয় মানুষ টার ভালো চাওয়া।

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৮